অপূর্ণতা পর্ব-৩৩+৩৪

0
944

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৩_৩৪

(৩৩)

আরিয়ানের ঘুম ভাঙতেই তার রাতের কথা মনে পরে যায়।এখন তার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।
এমন একটি কাজ সে কি করে করতে পারে।
এখন তার কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না।কি করেই বা এখন সে অদ্রিতার মুখোমুখি হবে?সে তো এখনো অদ্রিতাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। রাতে যা করেছে সব ঘোরের মধ্যে করেছে।সে এখন নিজেও বুঝছে না কিভাবে এততা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে যে নিজেকে কন্ট্রোল পর্যন্ত করতে পারেনি।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।তবে কি,,,
উফফ,,,আমি আর ভাবতে পারছি না।মাথাটা অনেক ধরছে।এইসব ভেবে নিজের ভিতরে এক ধরণের অপরাধ বোধ কাজ করছে তার।

অদ্রিতা টেবিলে খাবার রেখে ফ্রেস হতে রুমে যায়।
রুমে গিয়ে দেখে আরিয়ান ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছে।সে লজ্জায় আর আরিয়ানের দিকে তাকায় না।দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আরিয়ানও একনজর অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সে লজ্জা পাচ্ছে না বরং তার ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করছে। তাই সে টাই বেঁধে সেখানে আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিচে চলে যায়।অদ্রিতা ফ্রেস হয়ে রুমে ঢোকে। রুমের কোথাও আরিয়ানকে দেখতে পায় না।সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।সে দ্রুত নিচে নেমে আসে। সবাইকে নাস্তা বেড়ে দেয় আর সে নিজেও খেয়ে নেয়। সবাই খেয়ে যার যার কাজে চলে যায় আর আরিয়ানও খেয়ে একমুহূর্ত দেরি না করে অফিসে চলে যায়।

সারাদিন খুব ভালো ভাবেই কাটে অদ্রিতার। আরিয়ানের মা-বাবা অনেক খুশি অদ্রিতার মতো ছেলের বউ পেয়ে আর আজ অদ্রিতাও অনেক খুশি আরিয়ানকে নিজের করে পেয়ে।

কিন্তু আরিয়ান একটু খুশি না।তার আজ কোন কাজেই মন বসছে না।নিজের উপরেই এখন তার বিরক্তি লাগছে।অসম্ভব রাগ হচ্ছে নিজের উপর।মন চাচ্ছে মাথা চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। সে কি করে এমন একটি কাজ করতে পারে?

আরিয়ান আজ অনেক রাত করেই বাড়িতে আসে।কলিং বেল বাজাতেই অদ্রিতা দরজা খোলে দেয়। আরিয়ান কোন কথা না বলে সোজা উপরে উঠে যায়।অদ্রিতা মনে মনে ভাবছে, আজ আবার ওনার কি হলো?সকাল থেকে একবারও আমার সাথে বলেনি আর এখন এত রাত করে বাড়িতে এসেছেন। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অসম্ভব রেগে আছেন কিন্তু কেন?কাল রাতে তো সব ঠিকই ছিল।সে আর কিছু না ভেবে রুমে চলে যায়।রুমে যেতেই দেখে আরিয়ান ফ্রেস হয়ে শুয়ে আছে।সে আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে।আজ সে নিজেই আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে।কিন্তু আরিয়ান বিরক্ত হয়ে তাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় আর কিছুটা শান্ত ভাবেই বলে,,,,,,,,

আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।আর এত ভনিতা করাও আমার পছন্দ না তাই সরাসরিই বলছি,
আমি বুঝতে পারছি না কথাটা তোমাকে কীভাবে বলবো? দেখো অদ্রিতা আমি গতরাতে যা করেছি তা তোমাকে মেনে নিয়ে বা ভালোবেসে করি নি।তখন আমি এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ছিলাম।তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।আমি জানি আমি যা করেছি তা ক্ষমা করার মতো না কিন্তু তবুও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।সত্যি এটাই যে আমি এখনো তোমাকে মেনে নিতে পারিনি।প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।আমার থেকে দূরে থাকো।

আরিয়ানের কথা শুনে অদ্রিতা যেন আকাশ থেকে পড়লো।তার তো নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই তার ভাগ্যে সুখ লেখা নেই।তার মন ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেছে।
এইগুলো কি বলছে আরিয়ান।এখন সে কি করবে।কি করে মেনে নিবে এইসব।কাল নিজেই তো আমার এতটা কাছে এসেছিলেন। আমাকে ওনার অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলেন আর আজ বলছেন সব ঘোরের মাঝে করেছেন। আমি এখন কি করবো? তবুও সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বলে,

আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না।এই ধরনের মজা আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ আমার সাথে আর এই রকম করবেন না।আমি আর সহ্য করতে পারবো না।আমাদের মাঝে তো সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে,তাই না।প্লিজ মজা করা বন্ধ করুন।আমার আর এইসব মজা ভালো লাগছে না।

আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে,আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি মজা করছি। আর এইটা কোন মজা করার বিষয় না যে আমি মজা করবো।আমি সিরিয়াস।কোন মজা করছি না আমি।এতক্ষন যা বলেছি তার সবই সত্যি,,,,,,,

অদ্রিতা তবুও ভাবে ওনী হয়তো হয়তো মজা করছেন।নিজের মনকে স্বান্তনা দেয়।আর কিছু না ভেবে আরিয়ানকে জরিয়ে ধরে।

আরিয়ান অদ্রিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হঠাৎই তার গালে জোরে চর মারে।

আরিয়ানের মুখটা রাগে পুরো লাল হয়ে গেছে।তাই রাগে চিৎকার করেই বলে,কতবার বলেছি যে আমার কাছে আসবে না।তবুও বারবার আমার কাছেই কেন আসছো?তোমার কি কোন লজ্জা-শরম নেই। কেমন গায়েপড়া স্বাভাবের মেয়ে তুমি?একদম আমার ধারে – কাছে ঘেসবে না।বলছি তো কালকে যা করছি সব ঘোরের মধ্যে করছি।মন থেকে তোমাকে আমি মেনে নেই নি।এক কথা কত বার বলবো।Don’t touch me. Stay away of me.demit
.
..

চলবে,,,,,

(কালকে আমি গল্প দিতে পারবো না,,,,,তাই কেউ ওয়েট করবেন না)
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩৪

আরিয়ানের চর খেয়ে অদ্রিতা কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে।সে তো কখনোই আরিয়ানের কাছে যায়নি।তার কাছে স্ত্রী অধিকারও চায়নি।
আরিয়ানতো নিজের থেকেই তাকে কাছে টেনে নিয়েছিল তবে!আমিকি খেলনা নাকি যে যখন মন চাইবে খেলবে যখন মন চাইবে না ফেলে দিবে।
আরিয়ানের কথাগুলো তার কানে বাজছে।এখন নিজেকে সত্যিই তার বেহায়া বলে মনে হচ্ছে।
সত্যিই তো, সে কি করে ভাবলো তার মতো কালো মেয়েকে আরিয়ান মেনে নিবে।ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে।জীবনে সে কখনো এততা অপমানিত হয়নি যা আজ হয়েছে।এততা কষ্টও আর কোনদিন সে পায়নি।তবুও সে আরিয়ান কিছু বললো না।কিছুক্ষন ঐভাবে বসে থেকে বিছানা থেকে একটা কম্বল আর বালিস নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।আর এক মূহুর্তও সে আরিয়ানের সামনে থাকতে চায় না,,,,,,,,,

অদ্রিতা বেলকনিতে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
দরজা লাগানোর শব্দ শুনেই আরিয়ানের হুশ আসে।
রাগের মাথায় এই কথাগুলো বলা আর অদ্রিতাকে চর মারা আমার একদমই ঠিক হয়নি।আসলে তো দোষটা তো তারই। নিজেকে তার কন্ট্রোল করার প্রয়োজন ছিল। তাই সে বেলকনিতে গিয়ে অদ্রিতাকে কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু অদ্রিতা কোন কথা বলেনি। তাই আরিয়ানও আর কিছু না বলে বিছানায় এসে সুয়ে পরে,,,,,,,,

এখন ডিসেম্বর মাস,এমনেই প্রচন্ড শীত পড়ছে।
বেলকনিতে খোলা- মেলা পরিবেশে মনে হচ্ছে ঠান্ডাতা আরও দ্বি-গুণ বেশি লাগছে।তার উপরে সে ফ্লোরের উপরে পাতলা একটা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।
শীতে সারা শরীর তার থর থর করে কাঁপছে।কিন্তু সেদিকে তার বিন্দু পরিমাণ খেয়ালও নেই।অদ্রিতা তার গালে হাত দিয়ে অঝোরে কান্না করছে।সে স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবেনি তাকে এইসব সহ্য করতে হবে।এততা কষ্ট তার ভাগ্যে লিখা আছে।সে তো বেশি কিছু চায়নি।শুধু একটু ভালোবাসাই তো চেয়েছে।তবে কেন তার সাথে এইসব হচ্ছে?আসলে সব দোষ আমারই। কি করে আমি ভাবলাম আমার মতো কালো মেয়েকে ওনী মেনে নিয়েছেন।কি করে ভাবতে পারলাম ওনী আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছেন?ওনী তো ঠিকই বলেছেন।আমি কেমন মেয়ে,,,ছিঃ ছিঃ……… আমার এখন নিজের উপরোই ঘৃণা হচ্ছে। কি করে আমি ওনার কাছে গিয়েছি।ওনী না করা সত্বেও কি করে আমি ওনাকে জরিয়ে ধরলাম।অনেক হয়েছে আর নয়।আমি আর কখনো ওনার কাছে যাবো না।স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আমি কখনো ওনার সামনে দাঁড়াবো না।আল্লাহ কেন তুমি আমার সাথে এমন করছো?

যখন কখনো আমি ওনার কাছে স্ত্রী হওয়ার অধিকার ও মর্যাদা পাবো না তবে ওনার সাথে আমার বিয়েটা কেন হলো?জীবনে আমার আর কিছুই চাই না।আর কখনো আমি বিন্দু পরিমাণ সুখের আশা করবো না।সারা রাত বেলকনিতে সুয়ে কান্না করে,কান্না করতে করতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পরেছে তা মনে নেই। সকালে ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙে যায়।রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে,,, ওজু করে এসে নামাজ পরে নেয়।
নামাজ পরা শেষ হলে সে আর একমুহূর্তও রুমে থাকে না।সাথে সাথেই বাহিরে চলে যায়,,,,,,,,

বাহিরে এসে তার ভালো লাগছে না।আজ তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।এই প্রথম এমন হচ্ছে তার রান্না করতেও একদম মন চাচ্ছে না৷ তাই সে খালাকে ডাক দিয়ে বলে আজ সকালে রান্না করতে।

খালা অবাক হয়ে বলে, বউমনি তুমি কি অসুস্থ? কিছু হয়েছে তোমার।ম্যাডামকে ডাক দিব?

অদ্রিতা শান্ত স্বরে বলে, আমি ঠিক আছি।কিছু হয়নি,,,,

আমি তো প্রতিদিন তোমাকে বারন করি।তোমাকে রান্নায় সাহায্য করতে চাইলেও রাজি হও না।আজ নিজে থেকে বলছো রান্না করতে তাই জিজ্ঞেস করলাম।

অদ্রিতা বিরক্তির স্বরে বলে, এমনি আজ রান্না করতে মন চাচ্ছে না। আর কিছু না বলে সোজা বাগানে চলে যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি বেলকনির দরজা খোলা।তাই সে সাথে সাথেই বেলকনিতে চলে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানে অদ্রিতা নেই। পরে পুরো রুম খোঁজেও অদ্রিতাকে কোথাও পায় না।তাই সে নিচে রান্নাঘরে চলে যায়।মনে মনে ভাবে এইসময় তো অদ্রিতা সবসময় রান্নাঘরে থাকে তাই তাকে সেখানেই পাওয়া যাবে।কিন্তু রান্নাঘরে গিয়েও তাকে দেখতে পায় না সেখানে খালা রান্না করছে।পুরো বাড়ি খোঁজেও কোথাও যখন অদ্রিতাকে পায় না তখন আবার সে রান্নাঘরে যেয়ে খালাকে জিজ্ঞেস করে অদ্রিতাকে কোথাও দেখেছে কিনা?খালা একটু অবাক হয়,আরিয়ান বাবা তো কখনো বউমনি কথা জিজ্ঞেস করে না।তবে আজ হঠাৎ,,,,, তাই একটু অবাক হয়েই বলে,বউমনিকে বাগানের দিকে যেতে দেখিছি।

আরিয়ান বাগানে গিয়ে দেখে অদ্রিতা বাগানের এক পাশে বসে আছে। ফুল গাছগুলোর দিকে এক ধ্যানেই তাকিয়ে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। বাহিরে প্রচন্ড শীত পরছে।কুয়াশার কারণে ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তার উপরে অদ্রিতার গায়ে শুধু একটা সুতি শাড়ি পরা।কোনো গরম কাপড় নেই।মনে মনে বলছে,মেয়েটা পাগল নাকি।এই শীতে কে বলছে এত সকালে বাগানে বসে থাকতে?আরিয়ান আর কিছু না ভেবে সামনে গিয়ে অদ্রিতার গায়ে চাদরটা দিয়ে দেয় গায়ে কিছু দেওয়ার কারণে অদ্রিতার ভাবনার ছেদ পরে।সামনে তাকাতেই দেখে আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে।সেও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়,,,,,,,,

অদ্রিতা দাঁড়াতেই আরিয়ান ভালো করে তার দিকে তাকায়।তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখে গালে চরের দাগ এখনো আছে।কালো হয়ে গেছে।তার এখন নিজেই খারাপ লাগছে।এততা জোরে চরটা লাগবে সে বুঝতেই পারেনি।আসলে রাগের কারণে সে এমনটা করেছে।এখন বুঝতে পেরেছে রাগের বশে অদ্রিতাকে চর মারা তার ঠিক হয়নি।সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রিতা বলে উঠে,
.
..

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে