সোনার সংসার পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

1
2179

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#অন্তিম পর্ব

বাবার সামনে অপরাধীর মত বসে আছি।বাবা সবটা জেনে গেছে যে আমি এখানে এসেছি।পাশেই আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই বসে আছে,শরীফও আছে কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই।

“তুমি কী এতকিছুর পরও এখানে থাকতে চাও,নাকি আমার সাথে বাড়িতে ফিরবে?”

“ফিরব চিরদিনের মত এ বাড়ি থেকে চলে যাব কিন্তু তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উওর চাই।”

শরীফের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম,আমি আবারও বলে উঠলাম,,,

“একটা সম্পর্কে কী বাচ্চা হওয়াটা খুবই জরুরি?ভালবাসার কী সেখানে কোন মূল্যই নেই?তিন বছর প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম আমরা।আমার পরিবার পরিজন সব ছেড়ে তোমাকে আপন করে নিয়েছিলাম।আর তুমি শুধু একটা বাচ্চার জন্য আমাকে এ বাড়ি থেকে সরিয়ে দিলে!”

শরীফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,তার পাশেই শয়তানি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার শ্বাশুড়ি।হঠাৎ আমার শ্বশুর মশাই বলে উঠলেন,,,

“শরীফ যে তোমাকে বৃহত্তর কোন স্বার্থে এ বাড়ি থেকে সরিয়েছে সেটা তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।আর আমার মতে বাচ্চা না হওয়াটা কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি নয়,ভালবাসাটাই একটা সম্পর্কের মূল বিটা।যদি ভালবাসার কোন দাম না থাকত তবে পৃথিবীতে এত সংসার ভেঙ্গে যেত না বাচ্চা থাকা স্বত্বেও।”

“তুমি চুপ করো ত,এত জ্ঞান দিতে কে বলেছে তোমাকে?অপয়াটা বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে এতেই শুক্কুর আলহামদুলিল্লাহ।” (শরীফের মা)

“মা,সাদিয়াকে একদম অপয়া বলবে না।সাদিয়া অপয়া নয়।আর সাদিয়া এ বাড়ি থেকে কোথাও যাবে না।” (সজীব)

“অপয়াকে অপয়া বলব না ত কী বলব?এই মেয়ে এই সংসারে আসার পর থেকে একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।আমার ছেলেটা বাবার সুখ পাবে না,ত এমন মেয়েকে কেন আমি আমার বাড়িতে রাখব?”

“মা একদম চুপ করো,এতক্ষণ তুমি অনেক কথা বলেছো কিন্তু আর মানতে পারছি না।অপয়া যদি কেউ হয়ে থাকে তবে সেটা তুমি!”(শরীফ)

শরীফের কথা শুনে সবাই অবাক,মাকে কেউ এভাবে বলে।শরীফের মার চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু শরীফ সেসবে পাত্তা না দিয়ে বলে উঠল,,,

” এতক্ষণ ভেবেছি চুপ করে থাকব,আমি মুখ খুললে আমার মায়ের ক্ষতি।কিন্তু তুমি ত মা না একটা রাক্ষসী যে নিজের ছেলের বাবা হওয়ার সুখ কেড়ে নিয়েছো।একটা মা হয়ে আরেকটা মেয়ের মা হওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছো।”

“তুমি এসব কী বলছো আমার মা হওয়ার ক্ষমতা তোমার মা কেড়ে নিয়েছে মানে কী?”

“হে হে তোমার মা হওয়ার ক্ষমতা আমার মা নষ্ট করে দিয়েছে।আর তোমাকেও জানে মেরে ফেলতে চেয়েছে।আমি সবটা জানতে পারি যখন আমার মা আর চাচি মিলে তোমাকে ঐ বন্ধ ঘরে বন্ধি রেখেছিল তখন।তোমাকে মেরে ফেলার যড়যন্ত্র করছিল তারা,আমি ওদের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সবটা শুনতে পাই।যে আমার মা আর চাচি মিলে তোমার মা হওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।তাই সেদিন রাতে তোমাকে আমি এ বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলি তোমার গাড়ে ইনজেকশন পুস করে।আর তোমাকে হসপিটালে রেখে আসি,তোমার মাকে সবটা জানাই যাতে উনি তোমাকে নিজের কাছে রাখতে পারে।কারন তুমি তোমার বাবার বাড়িতেই সেফ থাকবে।এখন হয়ত তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে আমি হসপিটালে না রেখে তোমাকে তোমার বাড়িতেই ত পৌঁছে দিতে পারতাম কিন্তু সেটা কেন করি নি?তার পিছনের কারন হল তোমার বাবা,কারন তোমার বাবা আমার সাথে তোমাকে দেখে ফেললে কখনও মেনে নিত না।আর তোমাকে সেফলি রাখতেও পারতাম না।তাই আমি তোমার মার সাথে যোগাযোগ করে তোমাকে হসপিটালে রেখে আসি।আর তোমার সমস্ত খবর তোমার মার থেকে নিতাম আমি।”

শরীফ কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছিল কিন্তু তারপরও শরীফ নিজেকে শক্ত রেখে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামে।সবার চোখে রাগ+পানি,কারন কোন মা যে এতটা নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে জানা ছিল না।শরীফ আবারও বলে উঠে,,,

“আমার মা আমার ভালো না চাইতেই পারে কিন্তু আমি আমার মাকে ভালবাসি।তাই মাকে কিছু বলব না আমি,আমার ভালবাসাকে মা মেনে নিতে পারে নি।তাই আমি আমার ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে আজ এক বছর পর আবারও চলে যাব।মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এতদিন কিছু বলতে পারি নি কিন্তু আজ আর পারছি না,চলো আমার সাথে।”

কথাটা বলেই শরীফ আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার হাত ধরে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে সেদিন কেউ আমাদের থামাতে পারে নি।

ছয় মাস পর,,,

জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছি আমি,দৃষ্টি আমার বাইরে খেলা করা কয়েকজন বাচ্চার উপরে।তখন শরীফ আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠল,,,

“আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা কী ভুল কোন সিদ্ধান্ত?”

“একদমই নয়,এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।আমি মা হতে পারব না,আর তুমিও বাবা হতে পারবে না।আর এখানের বাচ্চা গুলোরও কোন বাবা মা নেই।এখান থেকে যদি একটা বাচ্চাকে মা-বাবার স্নেহ,ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখতে পারি তবে আল্লাহ তায়া’লা আমাদের উপর খুশিই হবে।”

আমার কথাশুনে শরীফ আমাকে তার বুকে আগলে ধরে।সেদিন আমরা বেরিয়ে আসার পর আর কারো সাথে কোন যোগাযোগ করি নি।শরীফকেও ক্ষমা করে দিয়েছি আমি,কারন শরীফ যা করেছে সেটা ত ভুল কিছু করে নি।যা করেছে সবটা আমার ভালোর জন্যই করেছে।আর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা বাচ্চা দত্তক নিব।আমার সংসারটা সোনার সংসারে পরিনত করব নতুন করে।

আমার মা হওয়ার ক্ষমতা হয়ত নষ্ট করা হয়েছে কিন্তু এমন হাজারও মেয়ে আছে যারা মা হতে পারে না বলে তাদের সোনার সংসার ভেঙ্গে যায়।তারা তখন কিছু করতে পারে না কারন তারা তাদের স্বামীকে সন্তান সুখ দিতে পারবে না বলে নিজেকে সরিয়ে ফেলে চুপচাপ।
এই একই সমস্যা যখন কোন পুরুষের হয় তখন এমন কিছুই হয় না।তখন মেয়েদের নানা ভাবে বুঝানো হয় তারা যাতে মানিয়ে নেয়।তেমনটা কী ছেলেরা মানিয়ে নিতে পারে না?
একটা মেয়ে যখন মা হতে পারবে না জেনে ডিপ্রেশনে ভুগে তখন কী তার স্বামীর কর্তব্য নয় তার পাশে থেকে তাকে সুস্থ করে তোলা,নাকি তার দায়িত্ব পিতৃ সুখ পাওয়ার জন্য আরেকটা বিয়ে করা?
বাচ্চা ত আল্লার দান জিনিস,আল্লা না চাইলে ত কিছু করার নেই।কিন্তু এই একই যুক্তি মেয়েদের ক্ষেত্রে কতভাগ খাটে যতটা ছেলেদের ক্ষেত্রে খাটে?
মেয়ের সমস্যা থাকলে আরেকটা বিয়ে করো সেই মেয়ে তোমাকে বাচ্চা দিবে।বিয়ে হয় কী শুধু বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্যই,যে বাচ্চা না হলে বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে?
মেয়েরা কী কোন বাজারে বিক্রি করা আলু,পেয়াজ,পটল,যতক্ষন এসব ভালো থাকবে ততক্ষণ দাম থাকবে আর নষ্ট হলেই ফেলে দিবে।তেমন কী বাচ্চা হলেই মেয়েটার দাম থাকবে,আর বাচ্চা জন্ম দিতে না পারলে নষ্ট জিনিস যেমন ফেলা দেয়া হয় তেমন ফেলে দিবে?অহরহ দেখতে পাচ্ছি মেয়ের মা হওয়ার ক্ষমতা না থাকলেই ডিভোর্স।আর ছেলের বাবা হওয়ার ক্ষমতা না থাকলে নানা রকম যুক্তি দেয়া হয়।সম্পর্কে বাচ্চা না হওয়াটা কোন সমস্যা না যদি সে সম্পর্কে ভালবাসার জায়গাটা খাটি আর শক্তপোক্ত হয়।বাচ্চা হওয়াটাই যদি সম্পর্ক মজবুত করার চাবিকাঠি হত তবে এত সংসার ভাঙ্গত না বাচ্চা থাকার পরও।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(একদম কাঁচা হাতের লেখা আমার,তাই সবটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি,,,গল্পটা বাস্তব আর কল্পনা মিশ্রত।কিন্তু আমার যেটা মনে হয় সেটাই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরলাম।জানিনা কতটা সফল হয়েছি,ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।যাই হোক সবাই ভালো থাকবেন,আর জানাবেন গল্পটা কেমন হয়েছে সবাইকে ধন্যবাদ আর অনেক অনেক ভালবাসা রইল।

আল্লাহ হাফেজ🥰)

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে