মেঘের আড়ালে রোদ ২ পর্ব-১৫

0
75

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#সিজন_2
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন।
মহুয়া ফিরে এসেছে নিজের শহরে আজ এক সপ্তাহ হয়েছে ।
অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হতেই আলভি দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
মহুয়া আলভিকে কোলে নিয়ে বললো বাসা থেকে জেনো বের না হয়, আজ আসতে একটু দেরি হবে।
আলভি মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো।
মহুয়া আলভিকে রাবেয়া বেগমের কাছে দিয়ে বের হয়ে গেল।

______________

ছোঁয়া আমেনা বেগমের সাথে নাস্তার কাজে সাহায্য করে রান্না ঘর থেকে বের হতেই হালিমা বেগমের সামনে পরলো। হালিমা বেগম কে দেখেও না দেখার মতো সাইড কাটিয়ে উপরে চলে গেল।

হালিমা বেগম চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার যাওয়ার দিকে।
আজ এক সপ্তাহ হয়েছে বিয়ে হয়েছে এখনো ছোঁয়া একবারও হালিমা বেগমের সাথে কোনো কথা বলেনি, উনার দেওয়া গহনা, শাড়ি কিছু ছুঁয়েও দেখেনি। ওর সব কিছু আমেনা বেগমের সাথে ছোট একটা ক্লিপ প্রয়োজন হলেও আমেনা বেগমের কাছে চলে যায়।
এদিকে নির্জন থাকে অন্য রুমে ছোঁয়া থাকে অন্য রুমে। হালিমা বেগম বার কয়েক চেষ্টা করেছে ছোঁয়ার সাথে কথা বলার কিন্তু ছোঁয়া বার বার এরিয়ে চলছে।

আমেনা বেগম হালিমা বেগম কে এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে.?
হালিমা বেগম চোখের পানি মুছে বললো,’ আমার ছেলেটা আমার শাস্তি পাচ্ছে। ‘
আমেনা বেগমঃ সবটা ঠিক করে নে,বসে শান্ত মাথায় কথা বল সব আগের মতো হয়ে যাবে।
হালিমা বেগমঃ সব ঠিক হলেও একটা দাগ ত থেকে যায়।

আমেনা বেগমঃ চেষ্টা করে দেখ নিরুর মন অনেক নরম। তুই ত জানিস নিরু আমাদের কতো ভালোবাসে।

হালিমা বেগম কিছু একটা ভেবে নিজের রুমে চলে গেল।

ছোঁয়া রুমে আসতেই দেখলো নির্জন ছোঁয়ার রুমে।
ছোঁয়াঃ তুই এখানে কেন!.?
নির্জনঃ আমি আমার বউয়ের কাছে আসতে পারি না.?
ছোঁয়াঃ পারমিশন ছাড়া কারো রুমে প্রবেশ করতে নেই সেটাকি জানিস না..?
নির্জনঃ বউয়ের রুমে আসতে আবার পারমিশন লাগে.? আমার বউয়ের রুমে আমি যখন ইচ্ছে আসতে যেতে পারি।
ছোঁয়া বিছানার কাপড় গুলো আলমারিতে তুলে রেখে পেছন ফিরতেই দেখলো নির্জন ওর পেছনে দাঁড়িয়ে।
ছোঁয়াঃ সামনে এমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন.? সর!
নির্জন এক হাত আলমারিতে রেখে অন্য হাতে ছোঁয়ার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,’ পাক্কা গিন্নী গিন্নী লাগছে,এলোমেলো চুল..
আর কিছু বলার আগেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ চুপপ! সামনে থেকে সর,এইসব সিনেমার ডায়লগ দিতে তোকে কেউ বলেনি।
নির্জন বিরক্ত হয়ে বললো,’ তুই এতো আনরোমান্টিক কেন.?’
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,’ আচ্ছা আমি আনরোমান্টিক!.? ‘
নির্জনঃ হ্যাঁ সাথে নিরামিষ একটা বউ..
ছোঁয়া এক ঝটকায় নির্জন কে নিজের জায়গায় নিজে নির্জনের জায়গায় চলে গেল। এক হাত আলমারিতে অন্য হাত আলতো করে নির্জনের গাল ছুয়ে গলায় নেমে আসলো।
নির্জন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
ছোঁয়া ধীরে ধীরে নির্জনের দিকে এগিয়ে গেল কিন্তু নির্জন ওর থেকে অনেকটা লম্বা হওয়াই উকি দিয়েও লাভ ইচ্ছে না।
নির্জন ইচ্ছে করে নিজের মুখ আরও উঁচুতে তুলে নিল।
ছোঁয়া নির্জনের পায়ের উপর ভর দিয়ে গলায় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে নিচু করতে চাইলো নির্জন মুচকি হাসছে।
ছোঁয়া রেগে তাকাতেই নির্জন ছোঁয়ার কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ছোঁয়ার মনে হচ্ছে সে এখন অন্য একটা জগতে আছে যেখানে শুধুই ছোঁয়া আর নির্জন আর কেউ নেই,কোনো কষ্ট, দুঃখ কিছু নেই শুধু আছে দুচোখে অফুরন্ত ভালোবাসা।
ঠোঁটে ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হলো ছোঁয়া। সে কি করছে.? নির্জনের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছটফট শুরু করলো কিন্তু নির্জন ছাড়লো না। পাঁচ মিনিট পর নির্জন ছেড়ে দিতেই ছোঁয়া হাঁপাতে শুরু করলো দেহে প্রাণ ফিরে পেলো৷ হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে দৌড় দিলো৷ এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

ছোঁয়ার অবস্থা দেখে নির্জন হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরলো। পরক্ষনে নিজেও ঠোঁটে হাত বুলিয়ে বললো এটাই প্রথম….

_______________

নিরুপমার সামনে বসে আছে হালিমা বেগম।
টলমল চোখে নিরুপমার হাত ধরতেই অবাক হয়ে নিরুপমা বললো,’ কি হয়েছে ভাবি.? সব ঠিক আছে ত.? আপনি কাঁদছেন কেন.?’
হালিমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লো।
নিরুপমা ভয় পেল, হঠাৎ কি হলো উনার.?
হালিমা বেগম নিরুপমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,’ আমাকে ক্ষমা করে দেন আপা,আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে, আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে আমার করা ভুলগুলো। প্লিজ আপনি ফিরে আসুন আমি আর নিতে পারছি না।আমার আপনাদের সাথে এমন করা ঠিক হয়নি, আমি কথা দিচ্ছি এমন ভুল আর কখনো হবে না। আমি আপনার পায়ে ধরছি।

নিরুপমাঃ আল্লাহ ছিঃ ছিঃ এমন করবেন না ভাবি,আপনি আমার বড়। আর বড়রা ভুল করতেই পারে এভাবে বলে নিজেকে ছোট করবেন না।
হালিমা বেগমঃ তাহলে তুমি চলো আমার সাথে।
নিরুপমাঃ আমি অনেক আগেই সব ভুলে গেছি, তুমি তোমার ভুলগুলো বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক।আমি এখানে ভালো আছি। আমার তোমার উপর কোনো রাগ,অভিমান নেই। এখন ত আমরা বেয়াইন বেয়াইন সব ঝামেলা শেষ শুধু আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো।
হালিমা বেগম আবার কান্না শুরু করলেন। আজ উনি কিছুতেই নিরুপমা কে ছাড়া বাড়িতে যাবেন না।

______________

সন্ধ্যায় বাড়িতে আসলো মহুয়া। বাড়িতে আসতেই কেমন একটা অন্যরকম অনুভব হলো।

বাড়ির ভেতরে পা রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফ আলভিকে খাইয়ে দিচ্ছে।
মহুয়াঃ আপনি!.?
সবাই দরজার দিকে তাকালো।
মিম ভয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।

আলভি ভয়ে আহনাফের থেকে দূরে সরে গেল।

আহনাফ স্বাভাবিক ভাবেই এসে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ তোমাকে অনেক মিস করেছি, মনে হলো এই মুহূর্তে জড়িয়ে না ধরলে আমার দেহ থেকে আত্মা বেরিয়ে যাবে,আমি জেনেশুনে কিভাবে নিজেকে শেষ করতে পারি বলো!.?
মহুয়া ফ্রিজ হয়ে গেছে, একদম জমে গেছে গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।

আহনাফ মহুয়াকে ছেড়ে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে আসলো। একটা শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,’ খেয়ে নাও ভালো লাগবে, ভীষণ গরম পড়েছে তার উপর অফিস করে এসেছো।’
মহুয়াঃ এইসব কি নাটক হচ্ছে!.? আর আপনি এমন আচরণ কেন করছেন.?
আহনাফঃ এইসব ভাবার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে আগে শরবত খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
মহুয়া শরবতের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেল।

মহুয়া যেতেই আড়াল থেকে মিম বেরিয়ে এসে বললো,’ প্রথম ধাপ সাকসেসফুল। ‘
আহনাফছেলের গাল টেনে বললো,’ আব্বু কেমন দিলাম বলো’
আলভি কিছু না বুঝে ভ্যাঁ করে কান্না করে দিল।

আহনাফ ভয়ে কানে হাত দিয়ে বললো,’ সরি বাবা এই দেখো আব্বু কানে ধরে উঠবস করছি তাও চুপ হয়ে যাও না হয় তোমার আম্মু এখনি ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবে।
আলভি চুপ হয়ে গেল।
আহনাফ গালে হাত দিতে গিয়ে হাত সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওহ্ সরি বাবা আর তোমার কিউট গালে হাত দিব না, এখন আমি আমার দ্বিতীয় প্লেন শুরু করি।’

মহুয়া নিচে এসে চারপাশে দেখলো কেউ নেই। হঠাৎ রান্না ঘরে শব্দ হতেই মহুয়া রান্না ঘরে গিয়ে অবাক হলো।
আহনাফ আলভিকে উপরে বসিয়ে নিজে কি জেনো বানাচ্ছে আর আলভিকে গল্প শোনাচ্ছে। আলভি থেমে থেমে খিলখিল করে হেঁসে উঠছে সাথে আহনাফ ও হাসছে।
মহুয়া চুপচাপ তাকিয়ে রইলো বাবা ছেলের এই সুন্দর মুহূর্ত গুলোর দিকে।

আহনাফের চোখ পড়লো মহুয়ার উপর।
আহনাফঃ এসেছো তুমি, আজ আমি নিজেই হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি,সব কিছু তোমার পছন্দের।
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ আপনি রান্না করেছেন.? আপনি ত কোনটা লবন আর কোনটা চিনি সেটাই বুঝেন না।
আহনাফ হেঁসে বললো,’ তোমার জন্য সবকিছু শিখে গেছি।’
মহুয়ার মুখ বন্ধ হয়ে গেল,এই ছোট ছোট কথাগুলোতে কি থাকে.? মহুয়া কেনো এভাবে থমকে যায়!

আহনাফ আলভিকে কোলে নিয়ে এসে মহুয়ার হাত ধরে টেবিলে বসিয়ে দেয়,এক এক করে সব খাবার সামনে রাখে।
মহুয়া অবাকের উপর অবাক হচ্ছে! সব কি সত্যি নাকি সে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে..?

মহুয়া প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো আহনাফ ওর পছন্দের সব খাবার সাজিয়ে দিয়েছে। কি হচ্ছে এইসব.? সব কেনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে!

মহুয়া একটু খাবার মুখে দিয়ে বললো,’ সত্যি আপনি রান্না করেছেন.? ‘
আহনাফঃ হুম সারাদিন লাগিয়ে তোমার জন্য।
মহুয়াঃ খুবই জঘন্য হয়েছে এইসবও মানুষ খায়!

মহুয়া হাত ধুয়ে উঠে যেতে নিলে আহনাফ হাত ধরে বললো,’ এটা ভালো হয়নি অন্যটা খেয়ে দেখো।’
মহুয়াঃ প্রথমটায় এতো জঘন্য বাকিগুলো কেমন হবে জানা হয়ে গেছে, ভাত সবগুলো টিপে দেখতে হয় না একটা দেখলেই বুঝা যায় বাকিগুলো কেমন!..
আহনাফ কিছু খুঁজে পেল না কি বলবে!..

মহুয়া আলভিকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেল।

রাতে ছাঁদ থেকে নেমে আলভিকে খুজতে লাগলো মহুয়া।
আহনাফ পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ আমাকে খুঁজছ.? ‘
মহুয়াঃ আপনাকে কেন খুজবো.? কেনো এসেছেন এখানে.? কি চাই আপনার.?
আহনাফঃ শুরুতেও তোমাকে শেষেও তোমাকে চাই। তোমার জন্য এসেছি,আমার ছেলের জন্য এসেছি।
মহুয়াঃ খবর্দার ভুলেও আমার ছেলে বলবেন না। আলভি শুধু আমার ছেলে।
আহনাফঃ ঠিক আছে তোমার আমার দুইজনের ছেলে।
মহুয়াঃ শুধুই আমার।
মহুয়া আলভিকে আহনাফের থেকে নিতে চাইলে আলভি আহনাফ কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
মহুয়া রেগে গেল।
আহনাফঃ তুমি এতো ছোট একটা বাচ্চার উপর রাগ দেখাচ্ছ!.?
মহুয়াঃ আপনি রুম থেকে বের হোন।
আহনাফঃ আলভি আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না।
মহুয়াঃ ত.?
আহনাফ আমতা আমতা করে বললো,’ আজ না হয় আমরা..’
মহুয়াঃ চুপপ! আমাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে সব শেষ। কাল সকালে নিজের বাড়ি ফিরে যাবেন।
আহনাফঃ আমি ত সাইন করিনি।
মহুয়াঃ কিন্তু আমি করে দিয়েছি।

আহনাফ মহুয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’ আমি জানি তুমিও করনি ‘

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে