মনোহরা পর্ব-০২

1
1343

#মনোহরা
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃনির্মলা

ইশাঃ বড় আন্টি তুমি শুধু শুধু খাবার আনতে গেলে কেনো আমি তো ভাইয়াকে বলেছি আমি খাবো না দুপুরে( মুখটা গোমড়া করে বললাম)

আন্টি আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমে বিছানার উপর বসে বললেন
বড় আন্টিঃ চুপ চাপ এখানে এসে বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।আর হ্যাঁ আমি কোন না শুনতে চাই না ভুলে যেও না আমি তোমার শাশুড়ী হই শাশুড়ী মায়ের কথা শুনতে হয়। (গম্ভীর ভাব নিয়ে)
আমি বড় আন্টির মুখ থেকে এমন কথা শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে পেলেটা হাতে নিতে চাইলাম।কিন্তু বড় আন্টি সাথে সাথে পেলেটা সরিয়ে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ উহু,,,, আমি খাইয়ে দিচ্ছি

আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।বড় আন্টি এক লোকমা ভাত মাখিয়ে আমার গালে তুলে দিলেন।আমি খাবার টা গালে নিয়ে খেতে লাগলাম।তখনই বড় আন্টি বলে উঠলো

বড় আন্টিঃশান কে তুই খুব ভয় পাস তাই না।

উনার কথা শুনতেই আমি ভিষম খেলাম।সেটা দেখে বড় আন্টি পানি গ্লাসটা আমার হাতে দিলেন। আমি ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলাম।
বড় আন্টিঃ কি হলো ঠিক আছিস তো
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম ঠিক আর কোথায় আছি বড় আন্টি তোমার ছেলের সাথে বিয়ে হবার পর থেকে আমার জীবনের সব কিছু যেনো কেমন হয়ে গেছে।এসব ভাবছিলাম ঠিক তখন বড় আন্টি আর এক লোকমা ভাত গালের কাছে ধরলো আর বলল
বড় আন্টিঃ নে হা কর
আমি বড় আন্টির হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম
ইশাঃ বড় আন্টি আমার আর খেতে ইচ্ছা করছেনা।
বড় আন্টি তবুও আমাকে জোর করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে দিলো। আর শান ভাইয়ার ব্যাপে অনেক কিছু বলল উনি কেমন, কি খেতে পছন্দ করে, কি গান শুনতে ভালোবাসে, আরও অনেক কিছু সেগুলোর কিছু কিছু আমি জানি আর বাদবাকি আজ জানলাম।আমি বুঝতে পারলাম না আজ হঠাৎ বড় আন্টি এসব আমাকে বলছে কেনো।কারন উনার ব্যাপারে আন্টি কারও সাথে শেয়ার করেন না।তাই আমি ফট করে জিজ্ঞেস করলাম
ইশাঃ বড় আন্টি তুমি হঠাৎ উনার ব্যাপারে এত কথা আমাকে বলছো যে
বড় আন্টি হেসে দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ না জানলে তুই বুঝবি কি করে শানের কি পছন্দ।আর তুই তো ওর বউ তোকে সবটা জানানো আমার দায়িত্ব
আমি কিছুটা অভিমানের সুরে বললাম
ইশাঃ বয়েই গেছে তোমার ছেলের বিষয়ে জানতে 😏
বড় আন্টি শুধু আমার কথায় হাসলো।আমি মনে মনে ভাবলাম আমি উনার তা জানতে যাবো কেনো উনি কতটুকু জানে আমার বিষয়ে।যখনই দেখা হতো তখন বকা, ধমক ছাড়া কখন কথাই বলতো না। এমন একটা ভাবে থাকতো আমি যেনো তার চিরো শত্রু।
বড় আন্টিঃ নে এবার বিশ্রাম কর, আর হ্যাঁ কাল কিন্তু আমাদের সাথে ঢাকায় যাচ্ছিস
ইশাঃ কেনো!!! (না জানার ভাব করে)
বড় আন্টিঃ কেনো আবার কি ছেলেটা তো আমার বাড়ি ফিরছে কেনো তুই জানিস না তোর সাথে কথা হয় নি
ইশাঃনা
বড় আন্টি মাথায় হাত দিয়ে বলল
বড় আন্টিঃ ইস ও বোধয় তোকে surprise দিতে চেয়েছিলো
আমি মনে মনে বললাম তোমার ছেলের সাথে গত দুই বছর আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি ওর সাথে কখনও কথা বলি না আর বলবই বা কেনো আমার এখনও সেদিনের কথা মনে আছে।
বড় আন্টিঃযা হবার তা হয়ে গেছে।তুই ওকে বুঝতে দিসনা যে তুই সবই জানিস।একটু না জানার ভান করিস মা ছেলেটা তাহলে surprise টা দিতে পারবে।
ইশাঃহুম
বড় আন্টিঃ আচ্ছা মা আমি এখন যাই রাতে তোর ব্যাগ গোছানোর সময় আমাকে ডাক দিস আমি তোকে সাহায্য করে দেবো
আমি বড় আন্টির দিকে হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললাম
ইশাঃ ঠিকাছে।

বিকালে আমি বসার ঘরে এসে দেখি ভাইয়া সোফার উপর বসে গেইম খেলছে। আমি ওর পাশে বসে টিভি অন করে কাটুন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ করে ভাইয়ার ফোনে কল আসলে সেটা দেখে ভাইয়া বলে উঠলো
জিসানঃ এ বাবা শান ফোন করেছে
আমি একটু আড়চোখে ওর দিকে তাকালাম। তারপর আমি আমার কাটুন দেখায় মন দিলাম
ফোনে….
জিসানঃ হুম জামাই বলেন কি খবর শুনলাম পরশু আসছে
ওপাশ থেকে
শানঃ ধুর শালা এসে কি করবো তোর বোন তো আমাকে পাত্তাই দেয় না
জিসানঃ হুম
শানঃ একবার দেশে আসি তোর বোনকে এমন টাইট দিবো জীবনের ভুলবে না তোর বোন
জিসানঃ হুম
শানঃ কি তখন থেকে হুম হুম করছিস
জিসানঃ আরে আশেপাশে লোকজন তাই জবাব দিতে চাইলেও দিতে পারছি না
আমি ভাইয়ার মুখ থেকে এমন কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালাম
শান হেসে দিয়ে বলল
শানঃ পাশে আছে নাকি
জিসানঃ হুম দিবো
আমি এত সময় ওদের কথা মন দিয়ে শুনলাম।যখন ভাইয়া বলল ফোনটা আমাকে দিবে আমি হুড়মুড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম।সেটা দেখে ভাইয়া শান ভাইয়াকে বলে উঠলো
জিসানঃ চলে গেছে
শানঃ কে ইশা
জিসানঃ হুম, আচ্ছা ও তোকে এত ভয় পায় কেনো, না মানে সব কাজিনদের সাথেই তো ও ভালোভাবে কথা বলে কিন্তু তোর সাথে বলতে চায় না কেনো।

শান মনে মনে ভাবতে লাগলো গত দুই বছর তুমি আমাকে বড্ড জ্বালিয়েছো ইশা পাখি এবার আমি আসছি দেশে তোমাকে আমার প্রেমের দহে এ পুড়াবো তখন বুঝতে পারবে আমার কতটা কষ্ট হয়েছিলো।
জিসানঃ কি রে চুপ কেনো
জিসানের ডাকে শানের হুস ফিরলো তারপর বলল
শানঃ হুম,,,, সেটা তোর বোন কে জিজ্ঞেস করবি।
জিসান হেসে দিয়ে বলল
জিসানঃ তোর কি মনে হয় ও বলবে উহু।যে তোর নাম শুনে পালিয়ে যায় সে আমাকে তোর ব্যাপারে কথা বলবে হতেই পারে না।
শানঃ আরে বলবে বলবে তুই চিন্তা করিস না

ওদিকে
ভাইয়ার কাছ থেকে এসে আমি সোজা রান্নাঘরে গেলাম দেখলাম মা পিঠা বাচ্ছে বড় আন্টি আর আঙ্কেল এর জন্য। আর ফোনে কথা বলছে। আমি মায়ের পাশে দাড়িয়ে বললাম
ইশাঃ মা ( নরম সুরে)
দেখলাম মা ফোনে কথা বলছে।মা আমার দিকে তাকিয়ে ফোনে বলতে লাগলো
ইশার মাঃ নেও তোমার মেয়ে এসেছে কথা বলো,
ইশার বাবাঃদেও
ইশার মাঃ নে তোর বাবার সাথে কথা বল
আমি মায়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বললাম
ইশাঃ hi বাবা
ইশার বাবাঃ hi মামনি কি করছো খাওয়া দাওয়া করছো
ইশাঃ হুম,,, তুমি করছো বাবা
ইশার বাবাঃ হুম মামনি, শুনলাম কাল নাকি তোমার শাশুড়ী আর শশুড় এর সাথে ঢাকায় যাচ্ছো।
ইশাঃ হুম
ইশা বাবাঃ ভালো ভাবে গিয়ে আমাকে ফোন করো মামনি
ইশাঃ হুম কবে আসবে তুমি বাবা
ইশার বাবাঃ এই তো খুব তাড়াতাড়ি আসবো শান বাবা আসুক আগে দেশে তারপর।ঠিকাছে মা এখন রাখি পরে কথা বলি
ইশাঃ হুম
এই বলে বাবা ফোনটা রেখে দিলো।আসলে আমার বাবা ব্যবসার কাজে সিলেটে থাকে। আর আমরা গ্রামে থাকি। মাসে একবার বাড়িতে আসে দুই তিন দিন থেকে আবার চলে যায়।
আমি হাত বাড়িয়ে মাকে ফোনটা দিয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ মা!!!!!
মা ফোনটা আমার কাছ থেকে নিতে নিতে বললেন
ইশার মাঃ বলে ফেলো
ইশাঃ বলছি যে তোমরাও চলো
মা আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো
ইশার মাঃ কেনো
ইশাঃ না মানে সবাই গেলে ভালো হতো না এই জন্য
মা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিয়ে বলেন
ইশার মাঃ যা গিয়ে ব্যাগ গোছা আমি আসছি।

আমি মুড অফ করে ঘরে চলে গেলাম।

সকালে……
খুব সকালে আমরা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।তারপর কয়েক ঘন্টা মধ্যে পৌঁছে গেলাম।বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই অহনা আপু দরজা খুলে দিলো।আমাকে দেখতে পেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে জোরিয়ে ধরলেন তারপর বললেন
অহনাঃ কেমন আছো ভাবি
ইশাঃ ভালো তুমি কেমন আছো আপু
অহনা আপু আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
অহনাঃ ভালো আছি ভাবি।
আমার পিছন থেকে বড় আন্টি অহনা আপুকে বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ আরে অহনা মেয়েটাকে আগে ঘরে তো ডুকতে দে
অহনা আপু জিব্বা কামড় দিয়ে বলল
অহনাঃ ওহ sorry sorry আসো ভাবি ভিতরে আসো
আমরা সবাই ভিতরে ঢুকলাম।অহনা আপু আমার হাত ধরে সোফার কাছে নিয়ে বসিয়ে দিলেন তারপর নিজেও বসলো।এটা দেখে বড় আন্টি বলে উঠলো
বড় আন্টিঃ অহনা ইশা মাকে নিয়ে সোফায় বসে পড়লি কেনো যা তোর ঘরে নিয়ে যা
অহনাঃ মা plz একটু গল্প করি না ভাবির সাথে কতদিন পর দেখা।
বড় আন্টিঃ আহ্ অহনা মেয়েটা journey করে এসেছে। আগে ওকে একটু fresh হতে দে।
অহনাঃ ঠিকাছে (মুখটা কালো করে)
অহনা আপুকে এমন ভাবে মুখ কালো করতে দেখে আমি আপুর কানের কাছে গিয়ে বলে উঠলাম
ইশাঃ আপু চলো তোমার রুমে ওখানে গিয়ে গল্প করি
আমার মুখ থেকে অহনা আপু এমন কথা শুনে হুট করে বসা থেকে উঠে বলল
অহনাঃ চলো চলো
আমরা দুজন উপরে গেলাম।বড় আন্টি আর আঙ্কেল ও তাদের রুমে গেলো।এ বাড়িটা বেশ বড় আমাদের বাড়ির থেকে। দুইতলা বাড়ি। তো আমি আর অহনা আপু দুজনে তার রুমে গেলাম।বেশ কিছু সময় গল্প করলাম।তারপর fresh হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম।তারপর সবাই মিলে এক সাথে গল্প করলাম। এ বাড়ির সবাই আমাকে ভিষন ভালোবাসে। বিশেষ করে বড় আন্টি আর অহনা আপু আঙ্কেল ও বাসে। এনাদের সাথে সারাদিন আমার ভালোই সময় কাঁটলো। রাতে সবাই এক সাথে খাবার খেয়ে। যে যার রুমে গেলো।আমি আর অহনা আপু তার রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে আমি অহনা আপুকে বললাম
ইশাঃ আপু তোমার একটু ফোনটা দিবে মায়ের সাথে কথা বলবো
অহনাঃ ইস এটা আবার বলা লাগে নাকি ওই তো বিছানার উপর নিযে নেও ভাবি।
আমি বিছানার থেকে ফোনটা নিলাম তারপর মায়ের নম্বরে কল দিলাম।কিন্তু দেখলাম কল যাচ্ছে না। আমি ফোনটার হাতে নিয়ে অহনা আপুকে বললাম
ইশাঃ কল তো যাচ্ছে না
অহনা আপু আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল
অহনাঃ ও হো নেটওয়ার্ক নেই এক কাজ করি ছাদে যাই
ইশাঃ এত রাতে
অহনাঃ হুম কেনো ভয় পাও ভাবি
ইশাঃ না মানে
অহনাঃ আহ্ চলো না
ইশাঃ ঠিকাছে
দুজনে ছাদে গেলাম।ছাদে গিয়ে মাকে কল করে মায়ে সাথে কত সময় কথা বলে। কিছু সময় ছাদে বসে দুজনে গল্প করলাম।তারপর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

সকালে…………
বরাবরই আমি ঘুম থেকে দেরি করে উঠি তাই আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।উঠতে বেশ দেরি হলো।সবাই প্রায় রেডি হয়ে গেছে।আমি কোন রকম একটা হালকা গোলাপি কালারের সালোয়ার পরে চুলটা কোন রকম brush করে বেড়িয়ে গেলাম সাজ গোজ ছাড়া এমনিতেও আমি সাজি না তেমন একটা।দেখলাম সবাই আমার জন্য wait করছে আমি দেড়ি না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। আঙ্কেল আর একটা গাড়িতে গেলো আর আমি বড় আন্টির অহনা আপু একটা গাড়িতে গেলাম।কারন শান ভাইয়ার সাথে আরও একজন আসছে তাই দুটো গাড়ি নিতে হয়েছে। এক গাড়িতে সবাইকে ধরবে না তার জন্য।

[[[[ওকে তো অনেকেই এটা বলেছেন inter 1st year এর মেয়ের ১৬ বছর হয় কিভাবে।আপনাদের সাথে এসব বিষয়ে তর্ক করে লাভ নেই। কারন এব বিষয়ে যদি কিছু লিখতে যাই যে গল্পটা লিখছি তার থেকেও বড় হয়ে যাবে।যাই হোক কথা বাড়াতে চাই না আমার যদি বয়স বেপারটা লেখা ভুল হয়ে থাকে। তাহলে ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই। আমি ওর বয়স ১৮ দিলাম।আর Inter 2nd yearএ পড়ে এটা দিলাম। আর হ্যাঁ ক্লাস নাইনের পড়ার সময় বিয়ে হয়েছে ওটা টেন ক্লাস করে দিলাম ]]]]

চলবে……

1 মন্তব্য

  1. Inter second year মানে class 12 , class 12 এ পড়া একটা মেয়ের বয়স 18 !!! like seriously!!! , আমি 16 তে class 12 এ পড়তাম । গল্পের নায়িকা ফেল-টেল করেছে নাকি ??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে