মনোহরা পর্ব-২২

0
976

#মনোহরা
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃনির্মলা

ইশাঃ এটা কার ফোন দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনার তাহলে কার ফোন। আর এটা বলিশের নিচে কেনো ছিলো।সত্যি করে বলুন
(এক বারে এত গুলো কথা বলে ইশা দম ছাড়লো)
এদিকে শান ইশার মুখ থেকে এতগুলো কথা শুনেও শান স্বাভাবিক গলায় জবাব দিলো
শানঃ এই ফোনটা আমার বউ এর
ইশা কিছুসময় চুপ থেকে তার বলল
ইশাঃ মানে আমার????
শান এবার মজা করে বলল
শানঃ আমি কি তোমার কথা বলেছি। বলেছিতো আমার বউ এর কথা

বলেই শান বিছানার কাছে যেতে নিলেই ইশা শানের গেঞ্জি তার ডান হাত দিয়ে খামচে ধরে বলল
ইশাঃ আমি তো আপনার বউ তাই না (রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল)
শান এভাবে ইশাকে রেগে যেতে দেখে মনে মনে হাসতে লাগলো।আর ভাবলো ইশাকে আর একটু জালানো যাক তার জন্য সে বলে উঠলো
শানঃ আমি কি সেটা বলেছি
বলেই ইশার হাতটা তার গেঞ্জির থেকে সরিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ইশা শানের এমন ব্যবহার দেখে বলে উঠলো
ইশাঃ মানে কি বলতে চান আপনি?
বলেই শানের দিকে তাকাতেই দেখলো শানের চোখ বন্ধ করে বিছনায় শুয়ে আছে।ইশা মনে মনে ভাবতে লাগলো উনি ঘুমিয়ে গেলেন আমার প্রশ্নের উওর না দিয়ে। ঠিকাছে এখন ঘুমিয়েছেন তো কি হয়েছে কাল সকালে উনাকে আমি ভেবেই ইশা বিছানার অপর পাশে গিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। রাগে তার ঘুমই আসছে না। তবুও চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে ঠান্ডা করতে লাগলো ঠিক তখন শানের হাসির শব্দ শুনতে পেলো ইশা।ইশা দ্রুত চোখ খুলে শানের দিকে তাকাতেই দেখলো শান বিছানার উপর বসে হেসে যাচ্ছে। ইশা রাগে কটমট করতে করতে উঠে বিছানায় বসে বলল
ইশাঃ আপনি হাসছেন কেনো
শান হাসতে হাসতে বলল
শানঃ তো হাসবো না তোমার কথা শুনে যে কেউ হাসবে
ইশাঃ তাই না

বলেই ইশা শানকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে শানের উপর উঠে বসলো আর বলতে লাগলো
ইশাঃ দেখেন একে তো তখন থেকে জালিয়ে যাচ্ছে তার উপর এখন হাসা হচ্ছে আপনাকে না আমি
আর কিছু বলতে পারলো না ইশা। শান ইশাকে ধরে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের সমস্ত ভার ইশার উপর ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো
শানঃ বউ তো আমার একটাই সেটাও তুমি
ইশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো সেটা দেখে শান ইশাকে বলে উঠলো
শানঃ আচ্ছা sorry এখন বলো আমাকে এর জন্য কি শাস্তি দিতে চাও
ইশা মানের দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ কোন শাস্তি দিতে চাই না ছাড়ুন তো ঘুমাবো (অভিমানের সুরে)
শানঃ কিন্তু আমি তো শাস্তি নিতে চাই।

বলেই শান ইশাকে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে নিয়ে গেলো।

সকালে…….
ঘুম থেকে উঠে দেখি উনি পাশে নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯টা বাজে।কিন্তু এত সকালে উনি কোথায় গেলেন। ঠিক তখনই washroom এর দরজা খুলে উনি বের হলেন। আমার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন
শানঃ good morning
আমিও তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম
ইশাঃ good morning কি ব্যাপার আজ এত সকাল সকাল উঠে কোথায় যাবেন
উনি রেড়ি হতে হতে উওর দিলেন
শানঃ অফিসে যাবো
ইশাঃ ও আচ্ছা
বলেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠে washroom এর দিকে যেতে নিলেই উনি বলে উঠলেন
শানঃ আচ্ছা ইশা শোন দাড়াও
উনার ডাকে আমি দাড়িয়ে গেলাম তারপর উনার দিকে ফিরে বললাম
ইশাঃ কি বলেন
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন
শানঃ আজ অহনা দেখতে আসছে তো তুমি একটু অহনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলো

উনার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি কিছু সময় জন্য থমকে গেলাম।উনি আবার ও বলে উঠলেন
শানঃ কি হলো ইশা বুঝতে পেরেছো।দেখো আমিই বলতাম কিন্তু মা বললো তোমাকে বলতে তুমি কি একটু বলবে।
আমি কিছু না বলেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। উনি সেটা দেখে বলে উঠলেন
শানঃ ঠিকাছে যাও fresh হয়ে নেও আমি অফিসে বের হচ্ছি
ইশাঃ হুম
আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম।কারন অহনা তো জিসান ভাইয়াকে ভালোবাসে সেকি এসব,,, নাহ আর কিছু ভাবতে পারলাম না আমি। washroom এ চলে গেলাম একে বারে গোসল করে বেড়িয়ে। চেঞ্জ করে নিয়ে সোজা নিচে চলে গেলাম।

আজ সারাদিন বাড়িতে কাজ হয়েছে। ছেলের বাড়ির থেকে লোক আসবে বলে সব কিছু নতুন করে সাজানো গোছানো হচ্ছে। সব কাজ লোকদের দিয়ে করানো হচ্ছে। কিন্তু টুকটাক কাজ মা করছে তার সাথে সাথে আমিও কিছু কাজ করে দিলাম। কাজের মাঝে হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেলো অহনাকে তো এ বিষয়ে কিছু বলা হয় নি।উনি তো আমাকে বলতে বলেছিলেন। তাই আর দেড়ি না করে আমি উপরে চলে গেলাম অহনার রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম দরজা আটকানো আমি নক করলাম। সাথে সাথে অহনা দরজা খুলে দিলো আমি ভেতরে ঢুকেতে ঢুকতে বললাম
ইশাঃ কি হলো অহনা দুপুরের পর থেকে রুমে বসে আসো বেড় হও নি কেনো
অহনা আচমকা আমার হাত ধরে টেনে দরজাটা আটকে দিলো।তারপর আমাকে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো।আমি অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম সে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু সংকচে বলতে পারছে না। ঠিক তখনই অহনা বলে উঠলো
অহনাঃ এসব কিসের তোরজোর চলছে ভাবি
ইশাঃ অহনা আসলে আজ তোমাকে দেখতে আসবে
অহন ফট করে দাঁড়িয়ে আমার থেকে দুইকদম দূরে গিয়ে বলল
অহনাঃ কি বলছো তুমি দেখতে আসবে মানে
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম
ইশাঃ আমাকে তো সেটাই বলা হয়েছে অহনা
অহনাঃ কে বলেছে তোমাকে
ইশাঃ তোমার ভাইয়া
অহনাঃ ভাইয়া কিন্তু ভাবি আমি এখন বিয়ে করতে চাই না কারন আমি……
কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো অহনা ইশা সেটা বুঝতে পেড়ে বলে উঠলো
ইশাঃ জানি আমি
ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে অহনা কিছুটা চমকে গেলো আর বলল
অহনাঃ কি জানো তুমি
ইশা অহনার কাছে এগিয়ে আসতেই। অহনা সেটা দেখে ইশার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো ইশা অহনার কাছে গিয়ে বলল
ইশাঃ তুমি আমার ভাইয়াকে ভালোবাসো তাই না।
ইশার মুখ থেকে এমন কথা শুনে অহনা ইশার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
অহনাঃ তুমি কি করে জানলে
ইশা স্বাভাবিক গলায় বলল
ইশাঃ জেনেছি কিন্তু কিভাবে জেনেছি সেটা না হয় না জানাই থাক অহনা।এখন তুমি বলো কি করতে চাও
অহনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আর বলল
অহনাঃ আমি তোমার ভাইকে খুব ভালোবাসি। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই না।
ইশা অহনার কাছে গিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল
ইশাঃ আরে বোকা নাকি তুমি কান্না করছো কেনো ওরা তো তোমাকে শুধু দেখতে আসছে।বিয়েটিয়ে তো সেই পড়ের ব্যাপার তো চিন্তা করো না।
ইশার কথায় অহনা কিছুটা শান্ত হল। ইশা অহনাকে একটা পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বলল
ইশাঃ জিসান ভাইয়াকে বলেছো এসব
অহনা গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল
অহনাঃ না আসলে আমি এসবের কিছু জানতাম না তবে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।
ইশাঃ ও ঠিকাছে কোন ব্যাপার না আমি ভাইয়াকে ফোন করে সব বলে দিবো।
অহনা পানির গ্লাস থেকে পানি খেতেই যাচ্ছিলো কিন্তু ইশার বলা কথা শুনে একটা ভিষম খেলো আর কাঁশতে লাগলো।সেটা দেখে ইশা বলে উঠলো
ইশাঃ ইস দেখছো ভিষম খেলে। একটু সাবধানে পানি খাবে তো নাকি
অহনাঃ ভাবি please তুমি ওকে কিছু বলো না যা বলার আমি বলবো
ইশাঃ আচ্ছা।

সন্ধ্যায়…………
সারাদিনও তার রুমে গেলো না ইশা।অহনাকে একে বাড়ে তৈরি করে। তারপর রুমে গেলো শাড়ি পাল্টাতে। রুমে ঢুকে কাবার্ড থেকে একটা লাল কালারের শাড়ি বেড় করে washroom এ চলো গেলো চেঞ্জ করতে।চেঞ্জ করে washroom থেকে বেড়িয়ে দেখলো শান বিছানার উপর বসে আছে। তার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। ইশা সেটা দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো উনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমি আবার কি করলাম।সারাদিনই তো কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তেমন কিছু করেছি বলে তো মনে হচ্ছে না।

ইশা এসব শানের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো। শান বিছানা ছেড়ে উঠে ইশার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসতে লাগলো।ইশা শানকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে ঢোক গিললো আর পিছতে লাগলো।পিছতে পিছতে দেয়ালে তার পিঠ ঠেকলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
ইশাঃ ক… কি…. কি হয়েছে আপনার আপনি এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো।

লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে