মনোহরা পর্ব-২৩

0
953

#মনোহরা
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃনির্মলা

ইশাঃ ক… কি…. কি হয়েছে আপনার আপনি এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেনো??

শান ইশার কাছে এসে ইশার দুই সাইডে নিজের দুই হাত রেখে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা সেটা দেখে ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। শান বুঝতে পারলো ইশা ভয় পাচ্ছে তাই সে তার চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটাকে একটু দমিয়ে ভারী গলায় বলল
শানঃ তোমার ফোন কোথায়??
বলেই ইশার দিকে তাকিয়ে পড়লো।ইশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
ইশাঃ এ…. এ….খানে… কোথাও আছে
শানঃ ফোনটাকি আমি তোমাকে এখানে ওখানে রাখার জন্য দিয়েছি (কথাটা জোরে বলল শান)
ইশাঃ না (নিচু সুরে)
শানঃ তাহলে, তুমি জানো আমি তোমাকে কত বার ফোন করেছি
ইশা শানের থেকে চোখ সরিয়ে নিচে দিকে তাকিয়ে বলল
ইশাঃ না
শান আর কিছু বলল না নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে দেয়ালে একটা ঘুষি মারলো। তারপর সেখান থেকে শান চলে গেলো।আর ইশা সেখানে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলতে লাগলো।

ছেলের বাড়ির থেকে লোকজন চলে এসেছে।কিন্তু উনি সেই আমার উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছেন আর আসার নামই নিচ্ছেন না মা বার বার উনার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন আমি তার কথার উওর দিতে পারি নি ।আমি বার বার দরজার দিকে তাকিয়ে উনার আসার অপেক্ষা করছিলাম।ঠিক তখনই আমার শাশুড়ী মা বলে উঠলেন
শানের মাঃ ইশা মা যাও অহনাকে নিয়ে এসো
ইশাঃ জী,,, মা
বলেই আমি উপরে চলে গেলাম ।

এদিকে ইশা অহনার রুমে চলে যাবার পর পর
শান বাড়িতে ঢুকলো।শানের মা শানকে দেখে কাছে গিয়ে বলল
শানের মাঃ কি রে শান বাড়িতে এসে আবার কোথায় চলে গিয়েছিলিস
শানঃ বাহিরে মা একটু কাজ ছিলো।বাবা এসেছে?
শানের মাঃ নারে আসতে দেড়ি হবে।তুই চল ওদের সাথে কথা বল
শানঃ হুম

আমি অহনার রুমে গিয়ে দেখি অহনা মুখটা গোমড়া করে বসে আছে।আমি ওর পাশে গিয়ে বসতে বসতে বললাম
ইশাঃ কি হলো মন খারাপ??
অহনাঃ হুম
ইশাঃ কি হয়েছে ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে তোমার
অহনাঃ না জিসান আমার ফোন ধরে নি
বলেই অহনা কান্না করে দিলো।আমি অহনাকে শান্ত করার জন্য বললাম
ইশাঃ কান্না করো না অহনা, আমি দেখছি কি করতে পারি। এখন চলো মা তোমাকে ডাকছে উনারা এসে গেছে৷
অহনাঃ না আমি যাবো না
ইশাঃ please অহনা ছেলে মানুষি করো না।তুমি যদি এখন নিচে না যাও তাহলে সবাই কি মনে করবে।

কোন রকম জোর করে অহনাকে নিচে নিয়ে গেলাম। ছেলে এখনও আসে নি পরে আসবে। তবে ছেলের বাবা, বোন, আর ফুপি এসেছে।ছেলের মা আসেনি সে খুব অসুস্থ বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না।অহনাকে তাদের সামনে বসিয়ে দিয়ে আমি সামনে তাকায়ে দেখলাম উনি বসে আছেন। উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি তাড়াতাড়ি করে উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। অহনাকে বসতেই ছেলের ফুপি বসা থেকে উঠে অহনার কাছে এসে বসলো আর বলল
ছেলের ফুপিঃ মেয়ে তো দেখতে ভালোই তবে গায়ের রং টা একটু চাপা (অহনার থুতনি ধরে এপাশ ওপাশ করে বলল)

এটা শুনে সবার কেমন মনে হলো বলতে পারবো না। আমার ভিষন খারাপ লাগে।কারন অহনা আপু মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট সুন্দর তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে সে অনেক ভালো মনের মানুষ। ছেলের ফুপির মুখ থেকে এমন কথা শুনে ছেলের বাবা সাথে সাথে বলে উঠলো
ছেলের বাবাঃ আজ কাল কেউ এসব দেখে নাকি এখানে এসে বস।
ছেলের ফুপিঃআহ্ ভাইজান মেয়ে দেখতে এসেছি সব কিছু খুটিনাটি দেখতে হয় না।

~~~কিন্তু ফুফি আমিএসব দেখতে চাই না~~
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এমন একটা কথা বলে উঠলো। আমরা সবাই পিছনে ফিরলাম।দেখলাম একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।পরনে তার সাদা শার্ট, ব্লু জিনস, চোখে চশমা।আমি দেখে বুঝে গেলাম এটাই ছেলে।অহনাও একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।ছেলেটা ভিতরে আসতে আসতে বলল

অয়নঃ অহনাকে আমার মায়ের অনেক পছন্দ তাই আমি চাই না এসব নিয়ে কোন কথা হোক।তাছাড়া বাবা তো ঠিকই বলেছে আজ কাল কি কেউ এসব দেখে।
বলেই অয়ন অহনার দিকে তাকালো।দেখলো অহনা মাথা নিচু করে আছে।
ছেলের বোনঃ ভাইয়া তুই একদম ঠিক বলেছিস । আর ফুপি তুমি একটু বেশি বলছো।
ছেলের ফুপিঃ হুম আমি তো বেশি বলি( রেগে বলল)
শানের মাঃ দেখুন আপনারা নিজেদের মধ্যে রাগা রাগি করবেন না
ছেলের বাবাঃ না আপা এতে রাগা রাগি কি আছে যেটা সত্যই সেটা বলা উচিত। কিরে এদিকে এসে বস।
ছেলের ফুপি ফুসতে ফুসতে উঠে দাড়িয়ে ছেলের বাবা আর বোন এর পাশে গিয়ে বসলো তখনই উনি বলে উঠলেন
শানঃ দেখুন অহনা আমাদের অনেক আদরের। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ এমন কিছু বলবেন যাতে আমাদের খারাপ লাগে।
অয়নঃ না ভাইয়া আর কেউ উনার ব্যাপারে কিছু বলবে না কথা দিলাম (বলেই একবার অহনার দিকে তাকালো)

অহনা আর অয়নের বিয়েটা পাকাপাকি হয়ে গেলো পরশুদিন বিয়ে। খাওয়া দাওয়া করে অয়নের বাড়ির লোকজন চলে গেলো।মা আর উনি তাদের একটু এগিয়ে দিতে গেলো। আর এদিকে এটা শুনে অহনা রুমের দরজা আটকে কান্না আরম্ভ করলো। আমি কতসময় ওর দরজা নক করলাম কিন্তু ও খুললো না।আমি ভাবলাম না আর বসে থাকলে চলবে না।আমাকেই কিছু একটা করতে হবে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ভাইয়ার সাথে আমি নিজে কথা বলবো।তাই রুমে গিয়ে ফেনটা নিয়ে ভাইয়াকে কল করলাম।দুটো রিং বাজতেই ওপাশ থেকে
জিসানঃ hello
ইশাঃ hello ভাইয়া আমি ইশা
জিসানঃ হ্যাঁ ইশা বল কেমন আছিস
ইশাঃ ভালো তুমি
জিসানঃ ভালো
ইশাঃ ভাইয়া তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে
জিসান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বলল
জিসানঃ জানি আমি তুই কি বলবি
ইশাঃ সবই যখন জানো তাহলে হয়তো এটাও জেনেছো অহনার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
জিসানঃ হুম জানি শান মাএ ফোন করে বলল
ইশাঃ ভাইয়া তুমি বুঝতে পারছো না অহনা আপু কতটা কষ্ট পাচ্ছে।অহনা তোমাকে খুব ভালোবাসে ভাইয়া
জিসানঃদেখ ইশা এখন কষ্ট পাচ্ছে বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে
ইশা তার ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো আর বলল
ইশাঃ বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে মানে তুমি সব মেনে নিচ্ছো
জিসানঃ হ্যাঁ মেনে নিয়েছে আর ওকে বল সবটা মেনে নিতে বারবার জেনো আমাকে ফোন করে ডিস্টাপ না করে। কাল আমার একটা ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে মাথা ঠান্ডা না রাখলে দিতে পারবো না রাখছি bye। (ভারী গলায় বলল)

বলেই জিসান ফোনটা কেটে দিলো। ইশা তার ভাইয়ের থেকে এমন ব্যবহার আশা করে নি।সে ভেবেছিলো জিসান হয়তো এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। জানলে হয় তো জিসান তার ভালোবাসার কথা সবার কাছে শিকার করবে। কিন্তু ইশার সেটা ভুল ধারনা ছিলো। ইশা হঠাৎ অনুভব করলো তার পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছে। পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো শান তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ইশা শানকে দেখে ভয় পেতে লাগলো কারন শান তার আর জিসানের কথা শুনে নেয় নি তো সেট ভেবে। শান ইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল
শানঃ কি হয়েছে দাড়িয়ে আছো কেনো তুমি, আর এখনো চেঞ্জ করো নি কেনো কত রাত হয়ে গেছে ঘুমাবে না নাকি সারা রাত এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে।
শানের এমন স্বাভাবিক কথায় ইশা বুঝতে পারলো শানের রাগটা কমেছে। আর এত সময় তার আর জিসানের কথা শোনেনি তাই সে বলে উঠলো
ইশাঃ হ্যাঁ চেঞ্জ করবো তার আগে অহনার রুম একটু গিয়ে আসি তারপর
শানঃ কেনো এত রাতে ওর ঘরে কি???
ইশাঃ একটু দরকার ছিলো
শানঃ ঠিকাছে যাও তাড়াতাড়ি চলে আসবে
ইশাঃ হুম
বলেই ইশা সেখান থেকে অহনার রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো অহনার রুম এখনও আটকে রেখেছে। সে দরজা নক করে ডাকতে লাগলো
ইশাঃ অহনা দরজা একটু খোলো কথা আছে
বলার সাথে সাথে অহনা দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলতেই অহনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে চোখ থেকে এক নাগাড়ে জল পরছে।আমি দ্রুত ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে অহনা দিকে তাকাতেই অহনা বলে উঠলো
অহনাঃ আমি জানি তুমি কেনো এসেছো ভাবি জিসান একটু আগে আমাকে মেসেজ করে ছিলো।আর সব টা বলেছে।
কথা বলেই অহনা আমার কাছে এসে আমাকে জোরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো

লেখায় ভুল হতে পাড়ে একটু বুঝে পড়বেন ধন্যবাদ]]]

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে