গল্প:-দুই_বধূ_এক_স্বামী পর্ব:-(১১,,শেষ)

2
4686

গল্প:-দুই_বধূ_এক_স্বামী পর্ব:-(১১,,শেষ)
লেখা:-AL Mohammad Sourav
!!
দুই মেয়ে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতেছি আর দুই বউ দাঁড়িয়ে আছে! চিন্তা করছে বাপের বাড়িতে যাবে নাকী এখানে থেকে যাবে। তখনি খেয়াল করেছি তসিবা আর মীম দুজনে পিছু পিছু আসতেছে! কি হলো তোমরা যাও যেখানে যেতে চেয়ে ছিলে? তখনি আব্বা আম্মা এসেছে।

আম্মা:- কিরে সৌরভ তোর কুলে দুই মেয়ে কেনো?

আমি:- ওরা এখন থেকে আমার কাছে থাকবে। মীম আর তসিবা দুজনে যেতে চেয়েছে ওদের বাপের বাড়িতে।

আম্মা:- কেনো?

আমি:- সেইটা জিজ্ঞেস করতেছি কিন্তু দুইজনের একজন কিছু বলতে রাজি নয়। তাই আমার দুই মেয়ে রেখে দিয়েছি আর ওদেরকে বলছি চলে যেতে।

আব্বা:- মীম আর তসিবা কি হয়ছে বলো?

মীম:- তেমন কিছুইনা আমি তো এই বাড়িতে আসার সময় বলেছি যে ছয় মাস পরে চলে যাবো মিশুকে নিয়ে।

আব্বা:- তসিবা তুমি বলো তোমার সমস্যা কি হয়ছে?

তসিবা:- মীম আমাকে কোনো কাজ করতে দেয়না সব কাজ মীম করে নেই। সবার কাছে মীম বেশি ভালো হতে চাই তাই আমি চেয়েছি চলে যাবো মীমকে তারর সংসার ফিরিয়ে দিবো।

আম্মা:- আচ্ছা তোমরা না প্রানের বান্ধবী! মীম তুমি সৌরভের সূখের চিন্তা করে তসিবাকে বিয়ে করতে রাজি করিয়েছো যাতে করে তসিবা সৌরভকে সূখে রাখে।

মীম:- হ্যা করিয়েছি আর সৌরভ সূখে থাকবে বলে তো আমি চলে যাচ্ছি।

আম্মা:- আচ্ছা মীম তুমি কোথায় যাবে বলো? সৌরভের কাছ থেকে দূরে গিয়ে তুমি সূখে থাকতে পারবে? যদিও তোমাদের ডির্ভোস হয় তাহলে তো আবার কাওকে না কাওকে বিয়ে করতে হবে। তাহলে এখানে থাকলে সমস্যা কি?

তসিবা:- মীম তুই এখানে থাক আমি চলে যাচ্ছি! আমি চাইনা তোদের জীবনে কাটা হয়ে থাকতে।

আম্মা:- তসিবা তোমার আবার কি হলো? তুমি কোথায় যাবে তাহলে তোমার মেয়ে সংসার এসবের কি হবে? মীম তোমাকে সূখে দেখার জন্য তার ভালোবাসার মানুষটাকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছে আর তুমি কিনা মীমের সাথে এমন ব্যাবহার করো। তোমার তো মীমের সাথে ভালো ব্যাবহার করা উচিত। ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে যায় তা বলা যায়না এখন আমি যা বলি তোমরা তা মানবে?

আমি:- আম্মা আমার কিছু কথা আছে?

আম্মা:- তুই চুপ থাক কোনো কথা বলা লাগবেনা মানুষ দুই বউ নিয়ে সংসার করতেছে। সৌরভ আমি মনে করি তুই মীম আর তসিবার সাথে সংসার কর মাঝে মাঝে ঝগড়া হবে দিন শেষে আবার মিলে যাবে এইটা জীবন আর সংসার।

তসিবা:- সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমনটা আর কোনো দিন করবোনা। আমার বুঝা উচিত ছিলো মীমের প্রতি আমি অনেক অন্যায় করেছি মীম তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।

মীম:- আরে বোকা ভুল তো আমার হয়ছে তোর সাথে যদি ঝগড়াটা না করতাম তাহলে এমনটা হয়ত না তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।

আমি:- আম্মা আব্বা তা কি করে সম্ভব? দুই দিন পর ওরা ঝগড়া করবে আর এভাবে সংসার করা যাবেনা।

আব্বা:- কেনো যাবেনা? আমি যেভাবে বলি সেইভাবে আজ থেকে মীম আর তসিবা তোমরা সৌরভের সাথে আর বাড়ির কাজ করবে কেমন?

মীম:- ঠিক আছে আপনি যা বলবেন তাই হবে।

তসিবা:- আমিও রাজি আছি আপনি যা বলবেন তাই হবে।

আব্বা:- এখন থেকে বাড়ির কাজ এক সাপ্তাহ মীম করবে এর পরের সাপ্তাহ তসিবা করবে এভাবে চলতে থাকবে যতদিন তোমরা বেচে থাকবে। এক সাপ্তাহ তসিবা অফিসে দুপুরে খাবার নিয়ে যাবে এর পরের সাপ্তাহ মীম খাবার নিয়ে যাবে। সৌরভ অফিসে যাওয়ার সময় মীম এক সাপ্তাহ এগিয়ে দিবে এক সাপ্তাহ তসিবা। আর এভাবে এক সাপ্তাহ করে সৌরভের সাথে কোথাও ঘুরতে গেলে এমন ভাবে ভাগ করে ঘুরতে যাবে। যদি তোমরা মিলে মিশে যেতে চাও তাহলে যেতে পারবে কিন্তু নিয়ম ভাঙা যাবেনা। আর হ্যা বাকী রইলো সৌরভ কার সাথে থাকবে এইটা তোমরা মিলে সিদ্যান্ত নিয়ে নিও কেমন? (তখনি তসিবা বলে)

তসিবা:- তাহলে এক সাপ্তাহ আমার সাথে আর এক সাপ্তাহ মীমের সাথে থাকবে ওনি। (তসিবার কথা শুনে আব্বা আম্মা মুচকি হাসতেছে)

আম্মা:- মীম কি রাজি আছো তসিবা যা বলছে সেই ভাবে থাকতে?

মীম:- সৌরভ আমার সাথে থাকতে হবে না! তসিবা সাথে থাকবে সৌরভ আমাকে শুধু স্ত্রীর অধিকার টুকু দিয়ে রাখলে হবে। আমার যে স্বামী আছে এইটা সবাই জানলে আমি খুশি আর তসিবা এতটা চালাক নয় কিছুটা বোকা টাইপের আমি আজ থেকে আর কোনো সময় এসব নিয়ে ঝগড়া বা রাগ করবোনা কথা গুলি বলে মীম তসিবাকে জড়িয়ে ধরেছে।

তসিবা:- নাহ তা হয় নাকী তুই সব সময় আমাকে সেক্রিফাইস করবি কেনো? এখন থেকে আমরা মিলে মিশে থাকবো! আব্বাজান আম্মাজান আজ থেকে আমাদের বান্ধবীদের মাঝে কোনো ঝগড়া হবেনা! আর এই বাড়িতে কোনো রকম অশান্তি তৈরি হবেনা।

আব্বা:- খুশি হলাম তোমাদের কথা শুনে।

আম্মা:- অল্প কিছুদিনের জীবন নিয়ে কেনো এত ঝগড়া বিবাদ রাগ অভিমান কি দরকার এসব করা। যেহেতু এখন তোমাদের দুজনের ভাগ্যে একটা মাত্র স্বামী তাহলে ওকে নিয়ে সূখে থাকার চেষ্টা করো। দেখবে তোমরা সবচেয়ে সূখি কাপল হবে।

মীম:- হ্যা আম্মাজান আপনি ঠিকই বলেছেন! সৌরভ দাও আমার মেয়ে দাও বলে মিশুকে মীম কুলে নিয়েছে।

তসিবা:- দেন আমার মেয়ে দেন বলে তানুশাকে তসিবা কুলে নিয়েছে।

আমি:- সব তোমরা ঠিক করেছো যদি ভুলে যাও তাহলে দুজনের কপালে খারাপি আছে বলে দিলাম।

মীম:- মানে কি বলতে চাও তুমি?

তসিবা:- কি খারাপি আছে?

আমি:- যদি কেও কোনো রকম ঝগড়া করো তাহলে আমার মেয়ে রেখে সোজা বাপের বাড়িতে চলে যাবে। আর সারা জীবনের জন্য আমার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে কথা গুলি বলে রুমে এসেছি। কিছুক্ষন পর তসিবা এসেছে।

তসিবা:- আজ থেকে তো আপনি মীমের রুমে থাকবেন তাহলে আমার রুমে কি করছেন?

আমি:- মানে?

তসিবা:- আব্বাজান কি বলছে মনে নেই?

আমি:- তোমরা দুই বান্ধবী মিলে আমাকে পাগল করে ছাড়বে। তখনি মীম এই রুমে এসেছে।

তসিবা:- মীম আমার কোনো দোষ নেই আমি এখুনি সৌরভকে তোর রুমে পাঠাচ্ছিলাম।

মীম:- দূর বোকা আমি এই জন্য আসিনি। এসেছি সৌরভকে কিছু কথা বলতে। সৌরভ তোমাকে বলি তোমার যাকে ভালো লাগবে তার কাছে থেকো। তুমি চাইলে তসিবার সাথে থাকতে পারো আমি কিছুই বলবোনা কারন তোমাকে আমি ছয় বছর পেয়েছি আর তসিবা মাত্র তো ১ বছরের কিছুটা বেশি সময় পেয়েছে। আমি চাই তুমি সূখে থাকতে তাই তোমার যার সাথে থাকতে ভালো লাগবে তার কাছে থেকো কেমন।

তসিবা:- হ্যা আমিও বলি আপনার যার সাথে থাকতে ভালো লাগবে তার কাছে থাকবেন কেমন।

মীম:- আচ্ছা আমি এখন যাই মিশু উঠে যাবে।

আমি:- মীম শুনো?

মীম:- হ্যা বলো?

আমি:- তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছো আজ বড্ড বেশি ইচ্ছে করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে তুমি ধরবে আমাকে জড়িয়ে বলে দুই হাত বারিয়ে দিয়েছি। তখনি মীম দৌরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আমিও মীমকে জড়িয়ে ধরেছি। আমাদের দুজনের কান্ড দেখে তসিবা পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

তসিবা:- সামনে তো যায়গা নেই তাই পেছন থেকে আমি জড়িয়ে ধরেছি। এমন ভাবে আমাদের ভালোবাসবেন কেমন।

আমি:- কে বলছে সামনে যায়গা নেই মীমকে হাত ছেরে তসিবাকে সামনে নিয়ে এসেছি। এখন থেকে তোমাদের দুজনের স্থান হলো আমার বুকে বলে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছি। এভাবে আমার দুই বউকে নিয়ে চলছে সংসার। আমি যা কল্পনা করিনি তাই হয়ছে কখনো ভাবিনি আমি দুই বিয়ে করবো কিন্তু ভাগ্যের কাছে আমি পরাজিত। মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝগড়া আর ভালোবাসার মাঝে আজ দেখতে দেখতে চার বছর চলে গেছে তানুশা আর মিশু এখন বড় হয়েছে ওদের দুজনের চেহারা মনে হয় একজনের। চিন্তে অনেক কষ্ট হয় কোনটা মিশু আর কোনটা তানুশা তবে মীম আর তসিবা ঠিকই চিনে ওদের মেয়ে কার কোনটা। নিচে বসে আছি তখনি মীম আর তসিবা এসেছে।

মীম:- সৌরভ মিশু আর তানুশাকে স্কুলে ভর্তি করাবো তুমি চলো আমাদের সাথে।

আমি:- এখন যাবে?

তসিবা:- হ্যা আমরা তো রেডি আছি যাওয়ার জন্য।

আমি:- ঠিক আছে চলো। দুজনকে নিয়ে আর দুই মেয়ে নিয়ে স্কুলে গেলাম। স্কুলে গিয়ে স্যারের সাথে কথা বলে সব কিছু ফাইনাল করেছি। ওনি আমার দুই মেয়ে দেখে অভাক হয়ে গেছে।

স্যার:- আপনাদের দুই মেয়ের মা আলাদা কিন্তু মেয়েদের চেহারা এক হলো কি করে?

আমি:- ওরা জমজ বোন তবে মা আলাদা।

স্যার:- মানে?

আমি:- দুই মেয়ের মা হচ্ছে ও (তসিবাকে দেখিয়ে দিয়েছি) আর ওনি এক মেয়ে নিজের করে নিয়েছে দুজনকে দুই মায়ের ঠিকানা মত ভর্তি করেন। দয়া করে আর কিছু জানতে চায়েন না প্লিজ।

স্যার:- ঠিক আছে নেন ফরম পুরুন। যখন ফরম পুরুন করেছে তসিবা আর মীম তখন স্যার দেখে অবিভাবকের বাবার নামের যায়গা দুই ফরমে আল মোহাম্মদ সৌরভ লিখা।

স্যার:- বাহ ভালো তো আপনাদের দুই জনের স্বামীর নাম এক নামিই।

মীম:- আমাদের দুজনের স্বামী তো একজনি যে আমাদের সাথে বসে আছে ও তো আমাদের দুজনের স্বামী। (তখনি স্যার আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছে)

স্যার:- মানে?

তসিবা:- মানে ও হচ্ছে আমাদের স্বামী! আমরা দুই বান্ধবীর একজনকে বিয়ে করেছি।

স্যার:- আপনারা মেনে নিয়েছেন কি করে? আর আপনারা এতটা মিল কি করে? দুই বউয়ের মাঝে কোনো ঝগড়া হয়না?

মীম:- ঝগড়া হবে কেনো? আমারা আমাদের সংসার নিয়ে অনেক সূখে আছি।

তসিবা:- আমরা আমাদের মেয়েকে ভর্তি করাতে এসেছি সংসারের ব্যবপারে আলোচনা করতে না।

স্যার:- আচ্ছা মিস্টার সৌরভ আপনাকে একটা কথা বলবো?

আমি:- হ্যা বলেন?

স্যার:- দুই বউ নিয়ে এত সূখে সংসার কি করে করছেন? আমার তো একটার প্যারা বাচিনা! কিছুটা মন্ত্র শিখিয়ে দিবেন ভাই।

আমি:- মন্ত্র শিখেও লাভ হবেনা যদি কপালে সূখ না থাকে তাহলে এক বউের যন্ত্রনা যতেষ্ট আর সুখ থাকলে দুই বউয়ের ভালোবাসা পাওয়া যায়। সবই কপাল যা সবার ভাগ্যে থাকে না।

স্যার:- হ্যা তা একদম ঠিক বলছেন নেন এখানে সাইন গুলি করে দেন।

আমি:- দেন! সাইন করে দিয়েছি। তসিবা মীম দুজনে আমার দুই হাত ধরে বেরিয়ে এসেছে স্যার দেখে এক চুমুকে গ্লাসের পানি সাভার দিয়েছে। আমরা বাসায় চলে এসেছি এভাবে চলছে আমাদের তিনজনের ভালোবাসা আর সংসার। কপালে সূখ থাকলে দুই বউ নিয়ে সূখে সংসার করা যায়। আর যদি কপালে দুঃখ থাকে তাহলে এক বউ নিয়ে হাজারো ঝগড়া আর যন্ত্রনা তৈরি হয়। ছোট ছোট ঝগড়া আর রাগ অভিমানের মধ্য দিয়ে চলছে আমার দুই বউয়ের সাথে সংসার। আর দুই মেয়ে নিয়ে হাসি খুশি ভাবে কাটছে আমার বাবা মায়ের জীবন।
!!
কিছু কথা:- এইটা ছিলো একটা গল্প আর কিছুনা। তবে বাস্তবে অনেক কারনে দুই বিয়ে করতে হয়। আপনারা যারা আমার গল্পটা পড়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আর হ্যা গল্পটা এখানে শেষ করেছি কেমন লাগলো আপনারা সবাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন প্লিজ। ভালো থাকবেন সবাই আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আবারো নতুন কোনো গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো ইনশাল্লাহ এই আশা রাখছি।
…………………………সমাপ্তি……………………………..

2 মন্তব্য

  1. অনেক ভালো হয়েছে দিদি গল্পটা আর এখান থেকে কিছু শিখেছি Thanks you Elder sister for best story gift Next story post I will waiting for new story Thank you u Thank u many many thanks ❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️????????????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে