হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part 20

0
4108
হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া part 20

হারিয়ে যাওয়া, পথ খুজে পাওয়া part:20

লেখা –সুলতানা ইতি

 

ঘুম আর হলো না,নির্ঘুম রাত্রির মধ্যে আর ও একটি রাত যোগ হলো,

মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন এর সুমধুর কন্ঠে আযানের সুর ভেসে আসছে, আর শুয়ে থাকতে পারবো না যাই বারান্দায় গিয়ে একটু বসি,

আনুশা কি ভাবে অন্ধকার থেকে আলোতে পরিনত হয় সারা দুনিয়া সেটাই দেখছে, এতো সুন্দর সকাল আবছা আলো আবছা অন্ধকার,, কি যে মনোরঞ্জন করা দৃশ্য। উফ কি বলবো অনেক দিন হয়েছে সূর্য উঠা দেখিনা আজ দেখবো,কতো গুলো দিন বিদেশের বুকে কাটাতে হয়েছে,
এতো সুন্দর দেশ ছেড়ে থেকেছি,,

আনুশার প্রকৃতি দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কখন যে আটটা বেজে গেছে সেই দিকে কোন খেয়াল ছিলো না,আজ অন্নি আমায় ডাকতে আসেনি কেনো তা হলে কি রাতের ব্যাপারটা নিয়ে অন্নি রেগে আছে,,যাই ফ্রেস হয়ে গিয়ে দেখি কি অবস্থা, অন্নির

আনুশা: ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে,কিরে অন্নি এতো বেলা হয়ে গেলো আমাকে ডাকতে যাসনি কেনো

অন্নি: উহ কি সখ উনার প্রতিদিন আমি গিয়ে ডেকে দিবো,রাগ দেখানোর সময় তো এগুলা মনে থাকে না(মনে মনে বল্লো)না এমনি অনেক রাতে শুয়েছিস তো তাই আর সকাল সকাল ডাকতে যাইনি

আনুশা: ওহ তাই বল,তাড়া তাড়ি রেডি হও আজ অফিসে অনেক কাজ আছে,
অন্নি: আমি রেডি,

আনুশা: তা হলে খেয়ে নে আমি গিয়ে গাড়িতে বসছি

সুমি: তুই তো কিছুই খেলিনা আনু

আনুশা: আর খাবো না আপু,গেলাম, মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস

অন্নি: খাওয়া শেষ করি তাড়া তাড়ি নইলে ম্যাম রেগে যাবে

আনুশা: অন্নি আসতে লেইট হচ্ছে,ততক্ষনে আমি ল্যাপটপ টা নিয়ে অফিসের কাজ গুলো সেরে ফেলি,এ কি মেইল এসেছে কখন,ও রাতে,,,যাই হোক আগে চেক করি কি এসেছে, মেইল চেক করে তো আনুশা মাথায় বাজ পড়লো

অন্নি: কিরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেনো, কি হইছে

আনুশা: কন্সট্রাকসান সাইডে যে কাজ চলছিলো সেখানে কিছু লোক জামেলা করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে
অন্নি: এখন কি হবে

আনুশা: তুই অফিসে যা আমি এদিক টা সামলে নিবো,

অন্নি: আমি ও তোর সাথে যাবো তুই একা পারবি না

আনুশা: অহ অন্নি কেন বুঝিস না আজ অফিসে ম্যানেজার সিলেক্ট করার ইন্টার্ভিউ,, তোকে এখানে দরকার, তুই এদিক সামলা, আমি সাইডে দেখছি

অন্নি: ঠিক আছে কোন প্রব্লেম হলে আমাকে জানাস কেমন

অন্নি আলাদা গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে গেলো

সারা দিন আনুশা আর অন্নির খুব ব্যাস্ত সময় কেটেছে, অন্নি অফিস শেষ এ বাসায় এসে দেখে আনুশা এখন ও ফিরেনি, অন্নির খুব চিন্তা হতে লাগলো, বার বার ফোন করছে কিন্তু আনুশা ফোন ধরছেনা দেখে অন্নির টেনশন আর ও বেড়ে গেলো

আনুশা: যাক সব কাজ ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে একটু সময় লেগেছে বাট কোন ব্যাপার না,

মা মনে হয় টেনশন করছে আমার জন্য,অন্নিকে ফোন করে বলি আমি আসছি,একিইইই অন্নির এতো গুলো কল এক সাথে নিশ্চয় বাসায় সবাই আমার জন্য টেনশন করছে আর দেরি করা যাবে না এক্ষনি যেতে হবে,

ড্রাইভার যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি ড্রাইভ করুন,
আর ও ১ ঘন্টা লেগে গেলো আনুশার বাসায় পৌছাতে,

অন্নি: ঐ তো গাড়ির শব্দ শুনা যাচ্ছে আনুশা এসেছে

সুমি: আমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি

আনুশা: বাসায় ডুকে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে,মনে হচ্ছে আমি কোন ভিন গ্রহের প্রানি,কি হলো তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো

আনুশার আম্মু: তুই ফোন ধরছিলি না কেনো কতো টা চিন্তা হচ্ছিলো তোর জন্য

আনুশা: উহ মা আমি এখন আর ছোট আছি বলো,,এতো চিন্তার কি আছে কাজে গেছি কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবো

সুমি: হুম বুঝেছি আপনি এখন অনেক বড় হয়েছেন সবার মুরুব্বী, এখন আসেন খেতে বসেন

আনুশা: হুম সারা দিন কিচ্ছু খাইনি খুব খিদা পেয়েছে,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি

অন্নি: খিদা লাগবে না তোর তো কাজ করার সময় নিজের দিকে কোন খেয়াল থাকে না,

আনুশা: অন্নির কথায় কান দিলাম না ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম অন্নি ও খাচ্ছে আমার সাথে,,অন্নি কাকে সিলেক্ট করলি ম্যানেজার পদে

অন্নি: করেছি একজন কে, ফাইল নিয়ে এসেছি,জানতাম তুই দেখতে চাইবি তাই,,ফাইল টা তোর রুমেই রাখা আছে দেখে নিস

আনুশা: ওকে,,,,
খাওয়া শেষ করে রুমে গেলাম,রুমে যেতেই টেবিলে রাখা ফাইল এর দিকে নজর পড়লো, ফাইলটা খুলে দেখতে লাগলাম,একটা জায়গাতে এসে চোখ টা আটকে গেলো,,

তানভীর মাহমুদ নাহিয়ান,,এই নাম টা খুব পরিচিত লাগছে,কে হতে পারে কে, দূর মনে পড়ছেনা কেনো ক্লিয়ার করে, কোথায় যেন শুনেছি,উফফ আর ভাবতে পারছি না মাথা টা খুব ধরেছে কি যে করি, যেই হোক না কেনো আমার কি আমি আর ভাববোনা, আজকে ওষুধ খেয়ে ঘুমাবো, যথারিতী ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো আনুশা

সকালবেলা অন্নি ভাবছে আনুশা এখন ও ঘুম থেকে উঠছে না কেনো মিটিং এর কথা কি আনুর মনে নেই নাকি যাই আমি ঘুম থেকে জাগিয়ে দিই

অন্নি: এই আনুশা আনুশা উঠ,দেখ ৮:৪০ বেজে গেছে, আজ।মিটিং আছে তো

আনুশা: আড় মড় ভেংগে উঠলাম কাল রাতে ঘুমের ওষুধ টা ভালো একটা ঘুম উপহার দিয়েছে আমাকে

অন্নি: আনু তুই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিস তাই না

আনুশা: কি করবো বল ঘুম আসতেই চায় না,,তাই বাধ্য হয়ে খেয়েছি

অন্নি: আনু তোর পাস্ট তোকে এখন ও তাড়া করে তাই না না

আনুশা: অন্নির কথা শুনেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেলো তানভীর মাহমুদ নাহিয়ান, কে এই ছেলে,নামটা যেন খুব পরিচিত

অন্নি: কোথায় হারিয়ে গেলি তুই, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে

আনুশা: উহ হুম এই তো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি,,আনুশা ফ্রেস হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো

অন্নি: কিরে নাস্তা না খেয়েই যাবি

আনুশা: সময় নেই রে,তাড়া তাড়ি আয়

অন্নি : এই নে আন্টি খাবার প্যাক করে দিয়েছে,অফিসে খাবি, চল

অফিসে গিয়ে আনুশা,অন্নি কে বল্লো কাল যাকে এপয়েন্ট করেছেন উনি আসেনি এখন ও

অন্নি: ম্যাম এসে পড়বে, নতুন তো একটু তো ভুল হবেই,

আনুশা: অন্নি আপনি মিটিং এর জন্য সব রেডী করুন,আর মিঃ সানি কখন আসবে

অন্নি: ম্যাম উনি সাড়ে দশটার মধ্যে চলে আসবে উনি আসার আধ ঘন্টা পর মিটিং শুরু করলে কেমন হয়

আনুশা: ওয়েল, কাজের যেন গাফিলতি না থাকে,এই ডিল টা আমি কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চাই না

অন্নি: ইয়া ম্যাম

মহনা: ম্যাম আসবো

অন্নি: ইয়া এসো

মহনা: আমাদের নতুন ম্যানেজার মিঃ তানভীর মাহমুদ নাহিয়ান,,,উনি অফিসে এসে গেছে,

আনুশা: ও এসে গেছে, উনাকে পাঠিয়ে দিন

মহনা: ওকে ম্যাম

অন্নি: ম্যাম আমি তা হলে যাই মিটিং এর সব এরেঞ্জ করি

আনুশা: ওকে

আনুশা আজকের মিটিং ফাইল গুলো আবার দেখছি,অন্নি সব দেখেছে তবু ও আরেকবার দেখে নেয়া ভালো,

এমন সময় কেউ নক করলো ভিতরে আসার জন্য,আনুশা না তাকিয়ে বলে দিলো ইয়েস কামিন

ম্যাম আমি আপনার কম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে আজই জয়েন করলাম

আনুশা: ওও বলে,আনুশা তার দিকে তাকিয়ে বিরাট একটা শকড খেলো,,,,,,আপনিইইইইইই

তানভীর : আনুশা তুমিইইইইইই,দু জন,দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই

কিছুক্ষন পর,তানভীর এর ঘোর কাটলো,আনুশার চিৎকারে,

আনুশা: অন্নি, অন্নিইইই

অন্নি: ধড় পড় করে ক্যাবিনে ডুকলো,ম্যাম কি হয়েছে, আপনি রেগে আছেন কেনো

আনুশা: এই লোকটা এখানে কি করছে,,কেনো এসেছে” হোয়াই এন্সার মি”

অন্নি: ম্যাম উনি তো আমাদের কম্পানির ম্যানেজার,আর কালকে উনি সিলেক্ট হয়েছে

আনুশা: উনি কি করে সিলেক্ট হয়,

অন্নি: কি করে সিলেক্ট হয় মানে একটা লোক তার সব যোগ্যতা থাকা সত্তেও সে সিলেক্ট হবে না

আনুশা: না হবে না,

অন্নি: প্লিজ মিঃ তানভীর আপনি এখন আসুন আমি ম্যাম এর সাথে কথা বলছি

তানভীর কিছু না বলে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে গেলো

অন্নি: আনু তোর কি হয়েছে বলবি,,তুই কি উনাকে ছিনিস

আনুশা: কি বলবো অন্নিকে এখন,তানভীর যে আমাকে ভালোবাসে আর আমি চাই না এই ভালোবাসাতে জড়াতে,,এতো গুলো বছর দূরে ছিলাম হে আল্লাহ এ তোমার কেমন লিলা,বার বার একটা মানুষ এর সাথে আমার কেনো দেখা করিয়ে দিচ্ছো,কেনো আমার সাথে এমন হয়

অন্নি: আনু বোন আমার চুপ করে আছিস কেনো বল,দেখ তুই তোর মনের কথা না বললে আমরা বুঝবো কি করে, তানভীর, এক মিনিট আনু,এই কি সে তানভীর নয় তো যে ছেলেটা তোকে কলেজে এ অনেক লাইক করতো,তুই একদিন বলেছিলি,আমাকে আমি ভুলে গেছি,বলনা আনু

আনুশা: হুম অন্নি এই সেই তানভীর, কিন্তু ও আমার অফিসে ই কেনো জয়েন করলো

অন্নি: ছেলেটার সব দিক খুটিয়ে দেখলাম,অনেক ব্রিলিয়েন্ট, আমাদের কম্পানির জন্য এমন লোক ই দরকার তাই নিয়েছি

আনুশা: কিন্তু এখন কি হবে আমি ওকে আমার চোখের সামনে দেখতে পারবো না

অন্নি: আমি তোর পিএ তোর যাবতীয় সব কিছু তো আমি দেখবো,ও হলো ম্যানেজার , ও তার মতো কাজ করবে এতে তোর ক্ষতি কি,বল

আনুশা: মনে মনে অন্নি তো ঠিকই বলেছে,আর তা ছাড়া ওকে এখন বের করে দিলে ও ভাববে আমি এর প্রতি দূর্বল হয়ে যাবো,এই ভয়ে বের করে দিয়েছি, না আমি এমন টা করবো না

অন্নি: ঠিক আছে তুই যখন চুপ করে আছিস,তখন ওকে আমি চলে যেতে বলি

আনুশা: না,, ও কাজ করবে ওর মতো আমি আমার মতো,বের করে দিতে হবে না

অন্নি:?????????????????

to be continue

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে