হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 19

0
3338
হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 19
হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 19

হারিয়ে যাওয়া, পথ খুঁজে পাওয়া part:19

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আনুশা আর অন্নি মামার বাড়িতে পৌছে গেলো

আনুশা: মনে মনে এই বাড়িতে ছোট বেলার কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে,, ভাবতেই চোখের কোনে এক বৃন্দু পানি এসে জমা হলো

অন্নি: আনুশা তো বাড়িটা দেখাতে ব্যাস্ত, যাই আমি দরজা টা নক করি,
দরজায় নক করার অনেক পরে দরজা খুলে দিলো আনুশার মামাতো বোন প্রিয়া

প্রিয়া: কে আপনি?
রাতের বেলা আর অনেক দিন হয়ে যাওয়াতে অন্নিকে প্রিয়া চিনতে পারছে না এমন নয় যে অন্নি এই বাড়িতে আসেনি কোন দিন,

আনুশা এতোক্ষনে দরজার সামনে এসে দাড়ালো

আনুশা: প্রিয়া আমি তোর আনু আপু

প্রিয়া: আনু আপু তুমি ভিতরে আসো, জানো বাবা তোমাদের জন্য চিন্তা করতে করতে সে যে বিছানায়য় পড়েছে আর উঠার শক্তি হয়নি

আনুশা আর অন্নি ভিতরে গিয়ে বসলো, আনুশা এই দিকে সেই দিকে তাকিয়ে ঘরটাকে লক্ষ করেছে,এক সময় অনেক পরিপাটি ছিলো এই ঘর,এখন কেমন এলো মেলো হয়ে আছে

আনুশা: মামা কি ঘুমাচ্ছে? আর মামি কই

প্রিয়া: মা আছে বাবার কাছেই আছে ডেকে দিচ্ছি দাড়া

অন্নি: আনু কিছু বুঝলি

আনুশা: কি বুঝবো বল

অন্নি: তোর মামির অহংকার, এখন আর আগের মতো নেই,থাকলে বাড়িটার এই অবস্থা হতো না

আনুশা: থাম তো তুই মামি আসছে বুঝতে পারলে প্রব্লেম আছে,,

আনুশা মামিকে সালাম করলো

মামি: আনুশাকে বুকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো,, সেদিন যে তিনি অনেক বড় ভুল করেছিলো আনুশা আর তার মাকে বের করে দিয়ে তার জন্য আজ তিনি অনুতপ্ত,,

আনুশা: কি বলবো মামি কে বুঝতে পারছি না, অনেক কস্টে মামিকে থামালাম

মামি: তোর মাকে নিয়ে আসিসনি কেনো,এখন ও নিশ্চুয় আমার উপর রেগে আছে

আনুশা: মা আপনাদের কথা সব সময় বলে,রেগে থাকলি কি আর বলতো,মামি মামার সাথে কথা বলবো

মামি: হুম আয় আমার সাথে,
আনুশা তো মামাকে দেখেই অভাক একদম বিছানার সাথে মিশে গেছে,

মামা : কাপা কাপা গলায়, আনু তুই এসেছিস

আনুশা: মামার কাছে গিয়ে বসলো,মামা তুমি কি করে বুঝলে আমি এসেছি,আমি তো কোন কথা বলিনি,

মামা: বুঝবো না ছোট বেলা থেকে তোকে এই বুকে আগলে রেখে বড় করেছি, তুই যখন তোর মার সাথে এই বাড়িতে আসিস তখন তোর বোনেরা বড় ছিলো সব বুঝতো,আর তুই খুব ছোট ছিলি,কোন কিছুই বুঝতিস না,,তার পর তোকে ছোট থেকে বড় করলাম,তবুও তোর কতো অভিমান মামার উপর তাই না এই জন্য ই তো এতো গুলো বছর চোখের দেখা ও দেখতে আসিস নি

আনুশা: মামার কথা গুলো শুনছি বলুক উনি,অনেক বছরের কষ্ট জমা হয়ে আছে বুকের ভিতর,কিন্তু মামাকে এই রকম বিছানায় পড়ে থাকতে দেখতে পারছি না আমি,কালই আমার সাথে ঢাকায় নিয়ে যাবো ডাক্তার দেখালে ভালো হয়ে ঊঠতে ও পারে

মামা: কিরে চুপ করে আছিস কেনো কিছু বল

আনুশা: কেনো এখানে এসেছি সব কথা মামাকে বললাম

মামা: শফিক আর ভালো হইলো না,,না বুঝে না শুনে ভাগ্নিদের জীবনটা আমি শেষ করে দিলাম

আনুশা: এমন করে বলবেননা মামা,,এই টা আমাদের ভাগ্য,

মামা: আমার তো কি অবস্থা দেখতেই পারছিস, আজ অনেক বছর বিছানার সাথে আমার সম্পর্ক এই বিছানা ছাড়া আর কোথায় ও যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই

আনুশা: মামি আপনি ও এখানে আছেন একটা কথা বলি কাল মামা আপনি প্রিয়া আমার সাথে ঢাকায় চলুন,সেখানে মামার চিকিৎসা হবে,ভালো ডক্টর দেখালে মামা ভালো হয়ে যাবে

মামি: তুই তোর মামাকে নিয়ে যা আমি যাবো না

আনুশা: তা বললে আমি শুনছি না আমি সবাইকে নিয়ে যেতে চাই

তার পর আনুশা অন্নি কে নিয়ে ঘুমাতে গেলো,প্রিয়া আর অন্নির বক বক শুনতে শুনতে আনুশার ঘুমটাও ভালো হয়নি

সকাল বেলা আনুশা অন্নি কে নিয়ে বড় আপুর বাসায় গেলে,,

বৈঠক বসলো সেখানে মুরুব্বী দের সিন্ধান্ত হলো শফিক বউ চালানোর যোগ্য নয়,বউ এর বোন যখন বউকে নিয়ে যেতে চায় তা হলে নিয়ে যাক,,,

শফিক সবার কথা শুনে নিজের ভুল বুঝতে পারলো,সবার কাছে ক্ষমা ছেয়ে নিলো সে আর কখন ও খারাফ পথে যাবে না,,তবুও তার ছেলে মেয়েরা যেন মা হারা না হয়,

আনুশার শফিক এর কথা পছন্দ হয়,,আনুশা মুরুব্বী দের বল্লো উনি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন উনাকে আরেকটা সান্স দেয়া উচিৎ,,

গ্রামের সব মুরুব্বী আনুশার কথায় শুনে খুশি হলো

,সব ঠিক করে আনুশা মুরুব্বীদের সম্মুখে বোনের জামাইর হাতে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দিলো যেন। business শুরু করতে পারে তার বোন কে যেন ভালো রাখতে পারে,শফিক এখন টাকা নিতে নারাজ তবুও আনুশা বুঝিয়ে বলে দিলো

সব ঠিক ঠাক ভাবে করে আনুশা মামা মামি প্রিয়াকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হলো

ঢাকায় পৌছানোর পর
আনুশার আম্মু ভাই, ভাবি, ভাইজী সবাইকে দেখে তার আনন্দ যেন ধরছেই না,,

অন্নি: আনুশা এই দিক টা তো হলো, অফিস থেকে ফোন এসেছে জরুরী ভাবে ম্যানেজার ছেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো মহনা,এখন কি করবি

আনুশা: ঠিক আছে আমি অফিসে যাচ্ছি তুই থাক এখানে সবার সাথে

অন্নি: আমি থাকবো মানে আমি এখানে থেকে কি করবো

আনুশা: মামাকে কোন ডক্টর দেখালে ভালো হবে, কি করতে হবে তুই এগুলা দেখ
অন্নি: ওকে, তবে তাই হোক

আনুশা অফিসে চলে আসলো, অফিসটা এখন ও নিজের পছন্দে সাজায়নি,অন্নি যেমন সাজিয়েছে তেমন ই আছে,,যদি সাজটা আমার পছন্দ হয়নি,তবুও অন্নি কষ্ট পেতে পারে এই জন্য চেঞ্জ করতে ইচ্ছে করছে না

নিজের কেবিনে এসে বসলাম,,

মহনা: ম্যামম এর সামনে যেতে আমার ভয় লাগে,এই দিকে অন্নি ম্যাম ও আসেনি,কি আর করা যাই নক করি আগে,

আনুশা: কামিন,

মহনা: ম্যাম ইন্টার্ভিউ ডেইট টা কখন দিবো?

আনুশা: কালকে দিয়ে দিন,,কেননা পরশু একটা মিটিং আছে সো সময় হবে না আর

মহনা: ওকে ম্যাম

তার পর অফিসের কাজে মন দিলাম,সব কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে লেইট হয়ে গেলো, আজকে অন্নির ভাষণ শুনতে শুনতে আমার প্রান যাবে,যদি ওকে সাথে নিয়ে আসতাম তা হলে এতো কাজ একা আমাকে করতে হতো না, যাই হোক বাসায় যাই

অন্নি: নাহ আজ আমি আর আনু কে কিচ্ছু বলবো না,

আচ্ছা আনুকে জানতে হবে ও কি সত্যি আর কোন দিন বিয়ে করবে না,
কি জানি বাপু,ওর জন্য তো আমার বিয়ে টা ও হচ্ছে না,আমি আমার বিয়ের কথা বললে যে ভাবে রেগে যায় না জানি নিজের বিয়ের কথা শুনলে কি করবে

আনুশা: দরজায় কলিং বেল বাজালাম,সুমি আপু দরজা খুলেছে,,যাক ভালোই হলো

সুমি; আয় তোকে খেতে দিচ্ছি সবাই ঘুমিয়ে গেছে

আনুশা: আপু খিদা নেই খাবো নারে তুই শুয়ে পড়,

সুমি আপু চলে গেলো ঘুমাতে, আর আমি আসলাম আমার রুমে,

ঘুম আসবে না জানি,সেই পাঁচ বছর আগে থেকেই চোখের ইচ্ছে হলে ঘুমের। পরীকে বসতে দেয়,ইচ্ছে না হলে দেয় না,
আমার সব কিছু পালটে গেছে ডায়েরী লিখার অভ্যাস টা পাল্টাতে পারিনি,রোজই কোন না কোন বিষয় নিয়ে ডায়েরী লিখা হয়,,আজ ও ডায়েরী টা নিয়ে লিখতে বসলাম

অন্নি: যা ভেবেছি তাই হলো তুই ঘুমাবি না জেগে জেগে ডায়েরী লিখবি তাই না

আনুশা: তুই এখানে এতো রাতে, তুই ঘুমাসনি কেনো

অন্নি: আমি ঘুমিয়ে ছিলাম,দরজায় বেল ভাজতে শুনে বুঝলাম তুই এসেছিস তাই,আচ্ছা আনু তুই ডায়েরী লিখিস কেনো

আনুশা: মানে এই টা কি ধরনের প্রশ্ন, আমার ইচ্ছে আমি লিখি

অন্নি: সেটাই তো কার জন্য লিখিস,তুই তো ঠিক করে রেখেছিস জীবনে আর সংসার করবি না বিয়ে করবি না তা হলে এতো কিছু কার জন্য

আনুশা:?????অন্নিইইইই এতো রাতে তোর সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না

অন্নি: এই রে আবার রেগে গেলো পালাই,আমি এখান থেকে

আনুশা: (মনে মনে)অন্নি তুই আমার সব ছেয়ে কাছের বন্ধু আমার কষ্ট গুলো খুব কাছে থেকে দেখেছিস,তবু ও কেনো আমাকে এই সব কথা রাগিয়ে দিস,আমার অতিতকে মনে করিয়ে তুই কি সুখ পাস বলতো

অন্নি: বাবাহ নিজের রুমে চলে এসেছি এই ভালো নইলে আনু আমাকে খেয়ে নিতো আচ্ছা ওর সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলবে কে আন্টি তো আমাকে বলতে বলেই খালাস,উনার মেয়েকে যে এই ব্যাপারে কথা ছোঁয়ানোই যায় না,

কি করি এখন,এই দিকে বাবা আমার বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে আমি বিয়ে করে পেল্লে আনুশার কি হবে,ওতো বড্ড একা,
দূর এতো কিছু ভেবে কাজ নাই আমি ঘুমাই

আনুশা: ঘুম যেন আসতেই চায় না,অন্নি এসে ডায়েরী লিখার মুড টা নষ্ট করে দিলো,বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি ঘুম যেন আসতেই চায়না,,উফফ ভালো লাগছে না আর

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে