ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৪

2
4844

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

বই জমা দিয়ে খুব এক্সাইটেড হয়ে কেবিনের দরজাটা একটু ফাঁক করতেই যা দেখলাম তাতে আমার পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে গেলো।দম বন্ধ হয়ে আসল।

কারণ আমি দেখলাম একটি সুন্দরী মেয়ে স্যারের দু হাত ধরে কিছু বলছে।তারপর স্যারও মেয়েটির হাতের উপর তার হাত রাখল।আর সাথে সাথেই মেয়েটি স্যারকে জড়িয়ে ধরল।

এর থেকে বেশি দেখার শক্তি আমার ছিলো না।মাথার ভেতরটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।

দরজাটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে একবার জোড়ে শ্বাস নিলাম।তারপর ওখান থেকে খুবই দ্রুত হাটতে লাগলাম।
পিয়নের সাথে ধাক্কা লেগে তার হাতের কাগজের স্তুপটা পড়ে চারদিকে ছড়িয়ে যেতে লাগল।আমাকে হয়ত পিছন থেকে চেচিয়ে কিছু বলছে।

কিন্তু আজ আমার কোনোদিকেই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আমার পৃথিবী যেনো থমকে গেছে।সবকিছু যেনো শব্দহীন হয়ে গেছে।
আর এই শব্দহীন পৃথিবীতে ভেতর থেকে কিছু ভেঙে যাওয়ার বিকট আওয়াজ কানে আসছে।

কোনো দিকে কোথাও না থেমে বাসায় পৌছে সোজা শাওয়ারের নিচে দাড়ালাম।সব গুলো পানির লাইন একসাথে ছেড়ে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে একটি জোরে চিৎকার দিলাম।চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রুর বন্যা বয়েই যাচ্ছে।

আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি স্যারকে ভালোবাসি।শুধু ভালোবাসি না প্রচন্ড ভালোবাসি।

কি অদ্ভুত!ভালোবাসার অনুভূতি অনুভব হলো তো তাও আবার মন ভেঙে।

সেদিন মোবাইল থেকে সিমটা বের করে দু টুকরো করে ফেললাম।যেই প্রাইভেট টা পড়তাম সেটা বাদ দিয়ে দিলাম।তমার সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখলাম না।যাতে শুভ্র স্যার তমার থেকেও কিছু না জানতে পারে।তমা আমার বাসাও চিনে না।

আচ্ছা শুভ্র স্যার আমার সাথে এমন কেনো করল?অবশ্য সে তো আমাকে কখনো বলেও নি যে সে আমাকে ভালোবাসে।তাহলে আমাদের ভেতর এতদিন যা হল তা কি ছিল?আসলেই সব ছেলেরা একরকমই হয়।

ভালোবাসায় এত কষ্ট কেনো?

যদি জানতাম ভালোবাসলে এত কষ্ট পেতে হয়।তাহলে কখনোই ভালোবাসতাম না।
খুবই ভালো হতো যদি ভালোবাসায় আমাদের নিজেদের হাত থাকতো।

আর আমি কলেজে যাই নি।পরীক্ষার আগে আগে বাবাকে দিয়ে অ্যাডমিড কার্ড ম্যানেজ করে আনিয়ে নিলাম।
যে কলেজে আমাদের সিট পরেছে সেটা অনেক বড়।আমার সিট পরেছে দোতলায়।বোরকা পড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শুরু করলাম।সবকিছু অনেক কড়া।স্টুডেন্ট আর কলেজের ডিউটিরত টিচার ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
ভাইয়া বাইকে করে দিয়ে যেত, আবার নিয়ে আসত।

শেষ পরীক্ষার দিন পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই দোতলা থেকেই দেখলাম শুভ্র স্যার গেট দিয়ে জোর করে ঢুকে চারপাশে চোখ বুলিয়ে কি যেনো খুব তন্ন তন্ন করে খুজছে।

আমি পিলারের আড়ালে গিয়ে স্যারকে দেখতে লাগলাম।চুলগুলো এলোমেলো,মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে,চেহারা শুকিয়ে মলিন হয়ে আছে।

ইচ্ছে করছে ছুটে স্যারের সামনে যাই।আমার শরীর থরথর করে কাপঁতে লাগল।

যখন কেউ বুঝতে পারে যে সে কাউকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে এবং সেই অনুভূতি বোঝার পরে প্রথম সেই মানুষটিকে যখন চোখের সামনে দেখতে পায়,তখন যেই অনুভবটা হয় তা ভাষায় প্রকাশের বাইরে।

আমি ততক্ষণ পিলারের আড়ালে দাড়িয়ে রইলাম যতক্ষণ পর্যন্ত না গার্ড রা এসে স্যারকে জোর করে বাইরে নিয়ে গেল।স্যার বারবার গার্ড দের অনুরোধ করে যাচ্ছে কিন্তু তারা মানছে না।

সেদিন বাসায় এসে সেই যে কান্না শুরু হল আর থামার নাম নেই।সারারাত নির্ঘুম কান্না করেছি।

সেদিনই স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল।
তারপর ধীরে ধীরে সময় বইতে লাগল।

সে বছরই বাবার বদলি হওয়াতে আমরা ফরিদপুর থেকে আমাদের হোমটাউন ঢাকায় এসে পড়লাম।

আমি এখন ঢাকার একটি ভার্সিটিতে অনার্স দ্বিতীয়  বর্ষে পড়ি।
এই আড়াই বছরে অনেক কিছু হয়ে গেছে।বড় আপুর বিয়ের পর এই প্রথম একটি মেয়ে বাবু হয়েছে।
বাবা রিটায়ার্ড করেছে।ভাইয়াও একটি চাকরি পেয়ে বিয়ে করে একটি দুষ্টু মিষ্টি ভাবী এনেছে।

আর এখন আমি একটি বিশাল রুমের মাঝখানে ফুলে ফুলে সজ্জিত একটি বেডে বসে আছি, বধূ বেশে।

অনার্স ২য় বর্ষে উঠতে না উঠতেই মা আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেল।এখন বিয়ে না দিলে নাকি আর ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না।
আর তখনি এই সম্বন্ধ টা আসলো।আর বাসার সবাই পাগল হয়ে গেল।
শহরের বড় নামকরা বিজনেসম্যানের একমাত্র ছেলে।বাবার সাথে সেও এখন বিজনেসে যোগ দিয়েছে।তারপর আর কি যতপ্রকার ইমোশনাল ব্লাকমেইল আছে সব করে আমাকে রাজি করাল।আমি না করতে পারলাম না কারণ বাবার শরীরও তখন খুব অসুস্থ হয়ে পরেছিল।

তাই ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়ে ভেবে নিলাম জীবনে কোনো কিছুই তো আর মনমতো হলো না তাই সেই লিস্টে না হয় আরেকটি নামও উঠল।

আমি ছেলেকে এখনও দেখি নি।দেখার ইচ্ছেও ছিল না।
বিয়ের দুইদিন আগে ভাবী আমায় এসে বলল,সুপ্তি তোর বর তো দেখি হেব্বি হ্যান্ডসাম।আমরা তোর বিয়ের সপিং করতে গিয়েছিলাম,সেখানে এসেছিল।এত সুন্দর ছেলে আমি জীবনেও দেখি নি।আমার যদি এখন তোর ভাইয়ের সাথে বিয়ে না হত আমি তোর বরের উপর ক্রাশ খেতাম।

ভাবী সবসময়ই এমন মজা করে।কিন্তু ভাবীর এই কথা শুনে আমার তমার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।আর সাথে শুভ্র স্যারের কথাও।যেদিন স্যার প্রথম আমাদের ক্লাসে আসল।

অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি।কিন্তু আমার মনে কোনো অপেক্ষা নেই তার আসার।তার নামটাও এখনো জানি না।

হঠাৎ রুমে কারো প্রবেশ করার অনুভূতি হল।খটখট শব্দে বুঝতে পারলাম সে দরজার ছিটকানি লাগাচ্ছে।
আমি আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকাতেই আমার মাথা ঘুরিয়ে উঠল।

সে ছুটে এসে আমার কপালে অনেক সময় নিয়ে একটি গভীর চুম্বন করল।আমি কেঁপে উঠলাম তার ছোঁয়ায়।

আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
তা না হলে এটা কিভাবে সম্ভব আমি তো দেখছি যে আমার সামনে………….

চলবে,,

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে