blind love পর্ব ৬

1
2611

#Blind_Love পর্ব-৬
#লেখায়ঃপ্রজাপতি(নুসরাত মনিষা)

১৫ বছর আগে।।
–“সাত মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে একা একা ডাক্তারের কাছে পাঠিয়ে আবার অনুরোধ করছো সবার কাছে মিথ্যা বলতে?লজ্জা করে না তোমার?আমি পারব না।”ফোনে পলি এতটা চেঁচিয়ে কথাটা বললো যে আশেপাশে সবাই ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো।
–পলি,প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো।তুমি একা ডাক্তার দেখাতে গিয়েছো আম্মু-আব্বু জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না।একটা জরুরি কাজে আটকে গেছি।(তালহা ফোনের ওপাশ থেকে অনুরোধের সুরে বলছিলো)
–ও আচ্ছা!!কাজটা জরুরি আর আমি ফেলনা?
–তুমি সবচেয়ে বেশি জরুরি। আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে।ঠিক আছে? আজকে যে কেসের জন্য এসেছি তা অনেক বেশি হাইপ্রোফাইল।তুমি যদি আমাকে বাঁচিয়ে দাও তবে তোমাকে এর ডিটেইলস রিপোর্ট দিব কাভারের জন্য।
–সে তো তুমি সব চ্যানেলকেই দিবে।
–আরে না।বললাম না কেসটা হাইপ্রোফাইল।তাই লিক হওয়া নিষেধ।
–তাহলে আমাকে কেন দিবে? নিয়ম বিরোধী কোন কাজ তো তুমি করো না।কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
–আরে রহস্য-টহস্য কিছু না।এই অপরাধটা ছোট ছোট বাচ্চাদের অর্গানট্রেফিকিং এর।আর ঘটনাটা ঘটেছে শহরের বড় একটা হাসপাতালে।তাই আমি চাই জনগণ সবটা জানুক। মানুষরূপি জানোয়ারগুলোকে চিনে রাখুক।প্লিজ টিম নিয়ে চলে এসো।
–ব্যাপারটা বাচ্চাদের তাই মাফ করলাম।ঠিকানা পাঠিয়ে দাও। এই অবস্থায় আমি তো আর প্রেজেন্ট করতে পারবো না, দেখি কাউকে মেনেজ করে নিয়ে আসছি। রাখি এখন।
বলে ফোন কেটে দিলো পলি।
–প্রথম বাচ্চা?(পলির পাশে বসা মহিলাটি জিজ্ঞেস করলো)
–হ্যাঁ। আপনার?
–আমার দ্বিতীয় এর আগে একটা ছেলে। আমার স্বামীর খুব মেয়ের শখ।ও নাকি মেয়ে হলে সবচেয়ে খুশি হবে।
–কোথায় উনি?(পলি)
–আপনার উনার মতো কাজে আটকে গেছে।
–These Husband and their work.এদের কাজ কখনো শেষ হয় না।
–কিন্তু কাজটাও তো আমাদের জন্যই করে।তাই আমারা সাপোর্ট করি।
–তা যা বলেছেন ভালোবাসার কাছে সব হেরে যায়।(পলি)
–হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়।ভালোবাসার শিকলে আমরা বন্দি।এই শিকলটাও আবার ভালো লাগে।
–Sacrifice,Craziness,Blindly trust..Things we do for love..
— কথাটা ভালো লাগলো।
কম্পাউন্ডার পলির নাম ডাকতেই ও ভিতরে গেলো।বেরিয়ে ওই মহিলাকে আর দেখতে পেল না।
হাসপাতাল থেকে অফিসে গিয়ে টিম তৈরি করে নিউজ রিপোর্ট করতে গেলো।
কেসের বিস্তারিত তালহার কাছ থেকে ফোন করে জেনে নিয়েছে।
রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সাথে সেই নিউজটাই দেখছিলো তালহা৷

নিউজ বাংলা
সিটি হাসপাতালের বড়ো ডাক্তার আশফাকের মুখোশ খুলে গেলো।ফ্রি চেকআপের নামে সাকসমিথোনিয়াম ক্লোরাইড ড্রাগ ব্যবহার করে বস্তির গরীব বাচ্চাদের অসুস্থ করতেন তিনি। তারপর চিকিৎসার নামে করে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বের করে দেশে-বিদেশে পাচারের মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়ে তোলে আশফাক। এরমধ্যেই বেশ কয়েকটি বাচ্চা মারা গেলে পুলিশের নজরে আসে এই হাসপাতাল। তারপর তদন্তের মাধ্যমে এ.সি.পি. তালহা ও তার সদস্যরা ডাক্তার আশফাক ও তার সহযোগীদের হাতে নাতে গ্রেফতার করেন।

–আমি তিন মাস ধরে ফাঁদ পেতে পুরো রেকেটটাকে ধরলাম আর তুমি পাঁচ মিনিটে সব বলে দিলে।
–তুমি লেট লতিফ হলে আমি কি করব?
–তা যা বলেছো বউমা। আমার পুরো বংশে এমন আলস কেউ নেই। শুনেছি ছেলেরা মায়ের মত হয়।(হাসতে হাসতে কথাটা বললো পলির শ্বশুর)
–একদম আমাকে এর মধ্যে টানবে না ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। (রেগে গিয়ে বললো পলির শ্বাশুড়ি।
তখনই তালহার ফোন রিং হলো।ফোন রিসিভ করে কথা বলতেই ওর মুখটা কালো হয়ে যায়।
–কি হয়েছে?(পলি)
–ডাক্তার আশফাক আত্মহত্যা করেছে।
–কি বলো এতো লোক থাকতে কিভাবে?
–জানি না। তবে আমার মনে হয় কোন ড্রাগের ওভার ডোজে। ডাক্তার হিসেবে সে জানত কতটা কিভাবে নিলে মরে যাবে।
–হুম। নিজের পাপের শাস্তি সে পেয়েছে। তুমি মন খারাপ করো না।
এভাবেই কেটে যায় আরও কিছু দিন। সাড়ে আট মাসে আবার চেক-আপে যায় পলি।
ফিরে এসে দেখে দরজা খোলা।তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কেউ গলা কেটে দিয়েছে। তারা সদ্য জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করছিলো। হতভম্ব হয়ে পরে পলি। দৌড়ে ভেতরে আসতেই কেউ তার পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পলি দেখে এটা আর কেউ নয় সেইদিনের সেই মহিলা যার সাথে তার ডাক্তারের চেম্বারে আলাপ হয়েছিল ।পলি ছুরির আঘাত সহ্য করতে পারলো না। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো।
কারও ক্ষতি করলে নিজেরও ভালো হয় না। ওই মহিলা বাড়ি থেকে বের হবার সময় রক্তের উপর পিছলে উপুড় হয়ে পড়ে গেল। টেবিলের ভাঙা কাঁচ পেটে ঢুকে যায়।

বতর্মান
–এরপর কি হয়েছিলো তালহা?
–বাড়ি ফিরে আমি সবাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখি। মহিলাটিকে চিনতে পারি যে তিনি ডাক্তার আশফাকের স্ত্রী আইরিন।সেদিন মানবতার খাতিরে আমার মা-বাবার খুনিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারি নি। আর আমি হারিয়েছিলাম আমার মা-বাবাকে।
–উনি জেল থেকে ছাড়া পেলেন কিভাবে?
–না ছাড়া পায় নি।সুস্থ হওয়ার পর সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।এরপর ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
–হুম বুঝতে পারলাম উনার এমন হওয়ার কারন।
–কি?
–ভালোবাসা।।
–মানে? ঠিক বুঝতে পারলাম না।
–তালহা, আমরা ভালবাসি, বিশ্বাস করি।কিন্তু সবসময়ই ঐ মানুষটা ভালো না খারাপ তা বিচার করি।যদি ঐ মানুষটার মধ্যে অমানবিক বা খারাপ কিছু পাই তবে তা বদলাতে চেষ্টা করি,সে না বদলালে তাকে ছেড়ে চলে যাই।একজন ব্যক্তি নিজে যতই খারাপ হোক না কেন অন্য একজন খারাপ মানুষকে ভালোবাসতে পারে না। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মায় যারা ভালো কিংবা খারাপ বিবেচনা না করে ভালোবাসার মানুষকে অন্ধের মতো ভালোবাসে।যেমন আইরিন তার স্বামীকে ভালবাসে।কার ভাগ্য খারাপ আমি জানিনা, তবে আইরিনের স্বামী অপরাধী না হলে আইরিনের এই ভয়ংকর রূপ প্রকাশ পেতো না।কিন্তু তার স্বামীর মৃত্যুর পর তার হিংস্রতা প্রকাশ পায়।ওর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর পর সে সম্পূর্ণভাবে অপ্রকৃতস্থ হয়ে যায়। তাই তার স্বামী যত বড় অপরাধীই হোক না কেন তার চোখে সে নিরপরাধ। আর আপনি যত ভালো মানুষই হোন না কেন আইরিনের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জীব আপনি।কারণ আপনার জন্য সে তার ভালবাসা হারিয়েছে। তার স্বামী যে সন্তানকে সবচেয়ে বেশি চেয়েছিলো তাকে হারিয়েছে।
–এটা কি কোন রোগ?
–হ্যাঁ।এটার সাইকোলজির ভাষায় একটা নাম আছে Love Disorder।এই রোগের অনেক ধরন আছে,তার মধ্যে একটা ধরন হলো”Blind Love”। এই রোগে যারা আক্রান্ত তারা যতক্ষণ ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকে ততক্ষণ স্বাভাবিক থাকে কিন্তু দূরে গেলেই ভয়ংকর হয়ে উঠে।
–চিকিৎসা কি এর?
–পৃথিবীতে অনেক প্রকার মানসিক রোগ আছে যার কোন চিকিৎসা নেই।এই রোগটা তেমনই।
–চিকিৎসা নেই কিন্তু শাস্তি আছে (বিড়বিড় করে বললো তালহা)
–কি বললেন?
–কিছু না। কিন্তু ফারাবির তো এই রোগ নেই। তাহলে সে এতো হিংস্র কেন?
–আইরিনের মতো মানসিক বিকারগ্রস্ত মায়ের কাছে সে একা বেড়ে ওঠেছে । তার মা তাকে কারও সাথে মিশতে দেয় নি। তাই নৃশংসতা তার মন-মস্তিষ্ক বলতে পারেন রক্তবিন্দুতে মিশে গেছ। সোজা বাংলায় ফারাবি ছোটবেলা থেকেই একটা বদ্ধ উন্মাদ তৈরি হয়েছে।আর দিন দিন তার উন্মাদনা বৃদ্ধি পেয়েছ।সত্যি কথা বলতে,এটা ওর মায়ের অন্ধ ভালোবাসার ফল।
–সে কি তার ছেলেকে ভালোবাসে না?
–আইরিনের মতো মানুষ শুধু একজনকেই ভালোবাসে। তার ছেলেকে স্বামীর অংশ হিসেবে আগলে রেখেছে মা হিসেবে ভালোবাসে নি।তবে তার সেই অনাগত সন্তান জীবিত থাকলে হয়তো স্বামীর পর কাউকে ভালবাসাতো।
–ভালোবাসা এমনো হয়?
–হয়। হাজার প্রকারের ভালোবাসা হয় তার মধ্যে এটা একটা ধরন।চোখ বন্ধ করে অন্ধের মতো ভালোবাসা।
–এবার সময় এসেছে। আইরিনের নিজের অন্ধ ভালোবাসার ফল ভোগ করার।যে অন্যায় সে করছে তার শাস্তি সে পাবেই। (তালহা দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললো)

সিফাত দৌড়ে দৌড়ে করিডোরে এলো।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
–স্যার ডাক্তার ডাকছে। ম্যাডামের জ্ঞান ফিরেছে আর তোয়া’রও কিন্তু…
–কিন্তু কি ওদের জ্ঞান ফিরে এসেছে আমার আর কি চাই বলো?চলো এক্ষুনি।
–স্যার,আপনি যান আমি ম্যাডামকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসছি৷
–ঠিক আছে। সাবধানে,যেও। (বলে তালহা আই.সি.ইউ’র দিকে গেলো)
তালহা চলে গেলো।

–তোয়া এখন কেমন?(ফাতিমা)
–বেশি ভালো না ডাক্তার বলেছে সম্ভাবনা কম। কিন্তু মেয়েটার অসম্ভব মনের শক্তি তাই লড়ছে। দেখুন জ্ঞানও ফিরেছে। কিন্তু কতক্ষণ থাকবে জানি না।
–হুম। চলুন যাওয়া যাক।

চলবে—-?

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনির মতো রোগটাও সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তাই এটা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবেন না।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে