প্রেমের পাঁচফোড়ন? পর্ব_৭২(শেষ পর্ব)

4
3012

প্রেমের পাঁচফোড়ন?
পর্ব_৭২(শেষ পর্ব)
#Writer_Afnan_Lara
?
আমি শাহরিয়ার শান্ত আজ আগস্ট ৬তারিখ,২০২০সালে #########কে বিয়ে করতেসি,এরপর থেকে আমি ওর লাইফে দখল দিব না,স্বামীর অধিকার ফলাবো না,ওকে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দিব,এই বিয়ে শুধু নামেই বিয়ে হবে
আমি শাহরিয়ার শান্ত #####কে রেখে কখনও দ্বিতীয় বিয়ে করবো না
———–
সাইন
শাহরিয়ার শান্ত
.
সো কিউট তো!!!আরিয়ান!!দেখে যাও আমি কি পেয়েছি
.
আরিয়ান বাথরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে হিয়ার হাত থেকে ফটো ফ্রেমটা নিয়ে চেয়ে রইলো
তারপর হেসে দিয়ে বললো “দারুন শর্ত তো,তাও আবার ফটো ফ্রেমে বাঁধায় করা,কোথায় পেলে তুমি??”
.
আরে আমি খাটের তলায় পরিষ্কার করতে গিয়ে পেলাম
শর্তটা দেখে এত হাসি পেলো সাথে ইন্টারেস্টিং লাগলো,আচ্ছা আরিয়ান এটা নিয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করলে কেমন হয়??আজকে আমাদের চ্যানেলে যে শো আছে সেটাতে এটা পেশ করা যায় না?
.
বেস্ট হবে,তবে এটা কারা লিখসে বা কার সেটা তো আমরা জানি না!তুমি শো তে কি বলবে?সব তো উল্লেখ করতে হবে!স্পেশালি যে লিখসে তার নাম আর যে সই করছে তার নাম
.
এখানে শর্ততে যে সাইন করছে সে নিশ্চয় মেয়েটার হাসবেন্ড??তার নাম শাহরিয়ার শান্ত!
.
যে লিখসে তার নাম কি?
.
হু,তার নাম তো জানা দরকার,কারণ শাহরিয়ার শান্ত যাকে বিয়ে করবে বলেছে সেই নাম টাতে আর পুরা ফ্রেমে রঙ জাতীয় কিছু একটা পড়ে আছে,তাই নামটা একটুও বুঝা যাচ্ছে না,,আমি অনেক কষ্টে ফ্রেমটার লেখাগুলো বুঝলাম, রঙ পড়লো তো পড়লো একেবারে মেয়েটার নাম দুবার লেখা ছিল সে নামের উপরই পড়তে গেলো
প্রতিবেদন তো একজনের নামে হবে না তার উপর আমরা তো জানিও না তারা শর্তটা কেন লিখেছে,তারা এখন কেমন আছে,শর্ত ভেঙ্গেছে কিনা বা শর্তটা ফ্রেমে বাঁধায় করলো যখন তার মানে তাদের মাঝে এখন ভালোবাসাটা ঢুকে গেসে,ইস কি জোসসসস,আমরা মন চাচ্ছে সব তথ্য বের করতে
.
এই যে হিয়া ম্যাডাম,রিপোর্টার থেকে এবার ডিটেক্টর হবেন নাকি??
.
রাখো তুমি,নিশ্চয় আমাদের আগে এরা এই বাসায় থাকতো,যাওয়ার সময় রেখে গেসে হয়ত,আমি খবর নিয়ে আসতেসি
.
আরে হিয়া দাঁড়াও,কফি বানিয়ে দিয়ে যাও,হিয়া?
.
হিয়া বের হতে হতে বললো “জান! তুমি কফি বানালে আমার জন্যও বানাইও,উম্মাহহহহ”
.
আরিয়ান মুখ বাঁকা করে কফি বানাতে গেলো
হিয়া মালিকের বাসায় গিয়ে দেখলো উনারা বাসায় নেই,তালা ঝুলছে
মন খারাপ করে বাসায় ঢুকতে যেতেই হিয়ার মনে পড়লো সামনের ইউনিটের ওরা তো কিছু হলেও জানতে পারে
জলদি গিয়ে কলিংবেল বাজালো সে
একজন গোলগাল চেহারার লোক দরজা খুললেন,তার পেট ১কিলোমিটার জুড়ে
হিয়া দাঁত কেলিয়ে উনার ভুড়ি থেকে চোখ উঠিয়ে বললো
.
ভাইয়া!আপনি কি বলতে পারেন আমাদের আগে এই ফ্ল্যাটে কে ছিল??
.
লোকটা হাতে থাকা চিকেন ফ্রাই খেতে খেতে বললো “হুম!! ৪জন টিচার থাকতো,পাশেই একটা স্কুল আছে সেখানের টিচার ছিল তারা,এখানে ম্যাচের মত থাকতো,বেশি থাকেনি,২মাসের মত ছিল”
.
হিয়া মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই আবার ফেরত আসলো
আচ্ছা ভাইয়া তাদের আগে কে ছিল জানেন??
.
না সেটা তো বলতে পারবো না,কারণ আমি যখন এসেছি তখন এই ফ্ল্যাট খালি ছিল তার কয়েক মাস বাদেই টিচারগুলো থাকতে এসেছিলো
.
ওহ,আচ্ছা আমাকে ঐ টিচারের গুলোর মধ্যে কারোর নাম্বার দিতে পারবেন??
.
হুম,একজনের নাম্বার দিতে পারবো,সে আমার ছেলেকে টিউশনি করাতো,নাম হলো রাকিব,ওয়েট নাম্বার দিচ্ছি
লোকটা হাতে থাকা চিকেন ফ্রাই শেষ করে ডাইনিং থেকে আরেকটা চিকেন ফ্রাই নিয়ে রুমের ভেতর চলে গেলেন,ফোন এনে ঘেঁটে ঘেঁটে নাম্বার বের করে দিলেন হিয়াকে
হিয়া সাথে সাথে সেই নাম্বারে কল করলো,রিসিভ করলো না কেউ
গাল ফুলিয়ে বাসায় এসে সোফায় বসলো সে
আরিয়ান ওকে কফি দিয়ে ওর পাশে বসে টিভি নিয়ে বসলো
কিছুক্ষন বাদেই সেই নাম্বার থেকে কল আসলো
হিয়া খুশিতে এক চিৎকার দিয়ে রিসিভ করলো সাথে সাথে
এমন জোরে চিৎকার করলো যে আরিয়ান মুখ থেকে পুরুত করে কফিই ফেলে দিলো
.
হ্যালো হ্যালো
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
হাই,আপনি কিছুক্ষন আগে আমাকে কল করেছিলেন?
.
হ্যাঁ,আপনি কি রাকিব?
.
জি,কি হইসে?
.
আপনি কি শাহরিয়ার শান্তকে চেনেন??
.
আমি তো অনেক শান্তকেই চিনি,তবে শাহরিয়ার শান্তকে চিনি না,কেন বলুনতো?
.
ওহহ,আপনি যে গুলশানে কিচিরমিচির নিবাসের ৪র্থ তলায় থাকতেন তার আগে এখানে কারা ছিল সে ব্যাপারে কিছু জানেন?
.
না তো,আমি ওখানে যাওয়ার আগে ফ্ল্যাটটা খালি ছিল
.
ওহ,আচ্ছা আপনি কি কোনো ফটো ফ্রেম পেয়েছিলেন এই ফ্ল্যাটে?
.
আসলে আমরা ৪টা খাট এনে রেখেছি,ব্যস প্রতিদিন কাজ শেষ করে সেই খাটে শুয়ে পড়তাম,রুমে আর কিছু আছে নাকি নাই সে ব্যাপারে জানতাম না
.
ওহ,ফাইন,থ্যাংক ইউ
.
হিয়া মন খারাপ করিও না তো,এক কাজ করো তুমি এই ফ্রেমটা নিয়ে শো তে লাইভ হইও,শাহরিয়ার শান্ত যেখানেই থাকুক দেখতে পেলে কল করবে নিশ্চয় ?
.
হুম বাট যদি শো এর টাইমে সে টিভি না দেখে?
.
ভাগ্যে থাকলে তার সাথে আমাদের মিট হবে না থাকলে হবে না
.
আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে এত কিউট একটা শর্ত লেখা মেয়েটির নাম কি!
.
তবে এটা বলতে পারি ছেলেটা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে,তা না হলে তাকে না ছোঁয়ার শর্তে সাইন তো করলো আবার এটাও মানলো যে সে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না
.
মেয়েটাও ওকে ভালোবাসে তা না হলে লাস্টের শর্তটা দিতো না
.
হুম সেটাই
.
আচ্ছা রেডি হয়ে নাও,অফিস যেতে হবে আমাদের,তুমি কি শো টা ঠিকভাবে করতে পারবে?
.
পারবো,অবশ্যই,আমি এই দুজনকে খুঁজে বের করবোই
.
পাগলি বউ আমার
.
দুজনে রেডি হয়ে অফিসে আসলো,,হিয়া ছটফট করতেসে কখন সে শো টা শুরু করবে
অবশেষে অনেক প্রতিক্ষার পর শো এর টাইম হলো
হিয়া একটা টপস পরেছে সাথে জিন্স,টপসের উপর ওড়না গলায় পেঁচিয়ে সে রুমে ঢুকেছে হাতে তার ফ্রেমটি
অফিসের বসের অনুমতি নিয়ে সে আজ এই শো টা করবে
.
সিটে বসে মুখে হাসি ফুটালো
.
হ্যালো everyone!!! কেমন আছো তোমরা??নিশ্চয় ভালো??
আজ আমি একটা কাপলের প্রেমকাহিনী নিয়ে আলোচনা করবো!!পুরো শো টায় থাকবে একটা ইন্টারেস্টিং থিম
তার মধ্যে নায়কের নাম হলো শাহরিয়ার শান্ত

একটা ৬বছরের বাচ্চা ছেলে সোফায় বসে বসে শো টা দেখতেসে,তার ডান হাতে কোকাকোলা আর বাম হাতে পটেটো ক্রেকার্স
শাহরিয়ার শান্ত নামটা শুনে সাউন্ড বাড়ি নড়েচড়ে বসে ইয়া বড় এক চিৎকার দিলো
আব্বুউউউউউউউউউউউ
.
কি হইসে!!!কি হইসে!!ব্যাথা পাইসো?আহান্ত? পড়ে গেছো??কোথায় লেগেছে?ঝাল লাগছে?পানি খাবা?
.
আরে না আব্বু!!বলতে তো দিবা,টিভিতে দেখো তোমার নাম বললো
.
উফ!তাই বলে এত জোরে চিৎকার করবা?শয়তান ছেলে কোথাকার!!
কই কি বলসে?
.
বলসে শাহরিয়ার শান্তর প্রেমকাহিনী বলবে
.
কিহহ!শুনো বাংলাদেশে বহুত শাহরিয়ার শান্ত আছে শুধু আমি না
কথাটা বলে শান্ত চলে যেতে নিতেই থেমে গেলো,একটা লাইন শুনে
চমকে টিভির দিকে তাকালো সে
হিয়ার হাতে সেই ফটো ফ্রেমটা,এক দেখাতেই চিনে ফেলেছে সে
হিয়া শর্তটা পড়ে বলতেসে
শান্তর চোখে পানি এসে গেলো,,আহান্তর পাশে সোফায় বসে রিমোট নিয়ে সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো সে
.
একটাই আফসোস কাহিনীতে নায়িকার নামটা স্পষ্ট নয় বলে আমি আপনাদের নায়িকার নামটা বলতে পারতেসি না,তবে শাহরিয়ার শান্ত?আপনি যদি এই শো টা এখন এই মুহূর্তে দেখতেসেন তাহলে প্লিস কল করুন,১৬৭৮৯০নাম্বারে
আমরা আপনাকে আর আপনার ওয়াইফের সাথে পরিচিত হতে চাই,আপনার ওয়াইফের নাম জানতে চাই
.
শান্ত হেসে পাশে তাকিয়ে দেখলো আহান্ত ফোন নিয়ে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত ফোন হাতে নিলো কল করার জন্য তার আগেই হিয়ার শো তে অন্য একজনের কল আসলো
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে চেয়ে রইলো টিভির দিকে
.
হ্যালো??শাহরিয়ার শান্ত??আপনি কি শান্ত বলতেসেন?
.
না,আমি তার স্ত্রী আহানা ইয়াসমিন বলতেসি
.
ওয়াওওওওও,আপনি এখন কোথায়?আপনি কি আমাদের শো দেখতেসিলেন??আপনি কি এখন আমাদের শো তে আসতে পারবেন?
.
আব্বু দেখসো?আম্মু টাইম পায় না বলে আমাকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যায় না আর এখন এই শো দেখতেসিলো আবার এখন কথাও বলতেসে
.
শান্ত মুখে হাত দিয়ে হাসতেসে,হাসি থামিয়ে আহান্তকে নিয়ে বাসা লক করে বেরিয়ে গেলো সে
.
আচ্ছা আমি আপনাদের শো তে আসতেসি
.
শান্ত আহান্তকে নিয়ে সেই শো তে আসলো,হিয়া তো লাফাচ্ছে শান্তকে দেখে
.
এ বুঝি আপনার আর আহানার ছেলে?
.
হ্যাঁ
.
আচ্ছা আহানা কই তাহলে,আপনাদের সাথে আসলো না?
.
আহানা ওর চাকরিতে,সে একজন প্রাইমারি স্কুলের টিচার,এখন সে স্কুলে তাই সেখান থেকে আসতে দেরি হচ্ছে,আপনাদের শো টা মেবি টিচার্স রুমে থেকে টিভিতে দেখতেসিলো
.
আর আপনি কি জব করেন?
.
হাহা,আমি তো সেই স্কুলের হেডমাস্টার,আসলে আমরা যতই দূরে থাকার চিন্তাও করি না কেন
শুরু থেকেই আল্লাহ আমাদের এক সাথে রেখেছে আর এখন ও আমরা একসাথে
আমার ছেলে আজ বাসায় একা বলে আমি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে এসেছিলাম
.
এক্সিউজ মি!আমি কি আসতে পারি??
.
আহানা?
.
জি
.
হিয়া দৌড়ে এসে আহানাকে জড়িয়ে ধরলো
আই এম সো হ্যাপি,আমি তোমাকে আর তোমার পুরো পরিবারকে দেখতে পেলাম,আমি এটা চিন্তাও করতে পারিনি তোমাদের আমি খুঁজে পাবো!!!
.
আপনি এই ফ্রেমটা কই পেলেন?
.
সেটা বড় কাহিনী
আগে এটা বলো তোমরা কি গুলশানের কিচিরমিচির নিবাসে থাকতা আগে?
.
হ্যাঁ,,কয়েক মাস আগেই আমরা নতুন বাসা নিয়েছি তাই ঐ ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে চলে এসেছিলাম
.
এই ফ্রেমটা সেখানে রয়ে গেসিলো,আমি আজ পেলাম
.
এটার মধ্যে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে,অনেক খুঁজেছি এটা!
কথাটা বলে আহানা ফ্রেমটা হাত দিয়ে মুছলো
.
হিয়া বললো”এত রঙ পড়লো কেন এটায়??আমি তোমার নামটা জানার জন্য জাস্ট পাগল হয়ে গেসিলাম”
.
এই যে এই পুচকু আছে না?সে ছোট থেকেই রঙ দিয়ে আকিবুকি করে,বড় হয়ে আর্টিস্ট হবেন,একদিন আঁকাআঁকি করতে গিয়ে আমাদের এতদিনের স্মৃতির উপর রঙ ঢেলে দিয়েছিলেন!
.
কি পুচকু??এত দুষ্টু কেন তুমি?
.
আরে ওর জন্যই আজ আমরা আমাদের এই স্মৃতি আবার ব্যাক পেয়েছি
শো টা ও নিজেই দেখতেসিলো
.
তাহলে তো তোমাকে গিফট স্বরুপ কিছু দিতে হয়,কি নিবা বলো আহান্ত
.
আমি বেশি গিফট চাই না,জাস্ট চিপস,চকলেট,কোক(কোকাকোলা,আইসক্রিম,)এগুলা দিলেই আই এম ডান!
.
শান্ত হেসে ওর গাল টেনে দিলো
.
হিয়া আর আরিয়ানর সাথে ভালো কিছু সময় কাটিয়ে ৩জনে বাসায় ফিরে আসলো
আহানা জানালার পাশে চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা পরীক্ষার খাতা চেক করে যাচ্ছে,ক্লাস ওয়ানের খাতা
শান্ত ফ্রেমটা নিয়ে বসে আছে আর মাঝে মাঝে টিভির দিকে তাকাচ্ছে আর আহান্ত বই খাতা নিয়ে বড় বড় চোখ করে লেখাগুলো রেখে দৃশ্য গুলো দেখে যাচ্ছে
.
ল্যান্ডলাইনের ফোন বাজতেসে
.
আহান্তর কানে আওয়াজ আসতেই ১সেকেন্ড ও দেরি না করে গিয়ে ফোন ধরলো
.
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,কে???কে কল করেছে,??নাম বলো,আমি শাহরিয়ার আহান্ত বলছি!
.
তোমার পুরো নাম বলতে হবে না হান্ত!
.
মাইশা তোমাকে না বললাম আমাকে হান্ত বলবা না,আমার নাম আহান্ত!
.
আঙ্কেলের নাম শান্ত,তোমার নামে আরেকটা অক্ষর বাড়িয়েছে কেন সেটাই বুঝি না,এত বলার মুড নাই আমার,আমি হান্তই বলবো,তো শুনো হান্ত!!শান্ত পাপা টু আর আহানা মাম্মাম টু কে ফোন দাও আমার মাম্মাম কথা বলবে
.
আচ্ছা দিচ্ছি,আম্মুউউউউ!রুপা মামনির ফোন!
.
আসতেসি
.
হ্যালো রুপা বল!
.
আমরা কাল যে পিকনিকে যাবো সব রেডি করছিস তো??কাল শুক্রবারে তোকে আর শান্ত ভাইয়াকে ফ্রি পাবো আবার কবে পাবো কে জানে
.
হ্যাঁ রেডি আমরা,কাল সকাল সকালই এসে পড়িস তোরা
.
ওকে!
.
আহানা ফোন রেখে আহান্তের তাকিয়ে চোখ রাঙাতেই সে চলে গেলো পড়তে
.
আহানা রুমে এসে আবারও কাজ করতে বসলো তবে এখন মন বসতেসে না আর
.
শান্ত ফ্রেমটা ল্যাম্পশ্যাডের টেবিলে সাজিয়ে রেখে আহানার কাছে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো
.
কোথাই ভাবলাম কাল একটু ঘুমাবো সারাদিন তা আর হলো কই,নওশাদের জ্বালায় আর থাকা যায় না,এখন রেডি হয়ে নাও,কাল তো সময় পাবো না তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার
.
হুম!আমি তো ভুলেই গেসিলাম
.
দুজন মিলে রেডি হয়ে আহান্তকে নিয়ে হসপিটালে আসলো,আহানার রক্তের পয়েন্ট চেক করে ডাঃরোস্তম হাসলেন,মুখ তুলে বললেন”এখন সব ঠিক আছে,আমি বলেছিলাম কোর্সটা শেষ হলে আপনার শরীরে নিজ থেকেই রক্ত উৎপন্ন হবে,আর বারতি রক্ত দিতে হবে না
আমি খুব খুশি আমি একজনকে সুস্থ করতে পেরেছি,আজও আমার সেদিনের কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে,৬টা বছর হয়ে গেছে
সেদিন আহান্তকে দুনিয়ায় আনার পর আমরা সবাই ভেবে বসেছিলাম আহানা মারা গেছে,পরেই ওর নাড়ি চেক করে আমার বুক কেঁপে উঠলো,সচল দেখে আমরা সবাই মিলে আহানাকে সেদিন আল্লাহর রহমতে বাঁচিয়ে নিয়েছিলাম
শরীরে রক্ত এত কম ছিলো আহানার আমরা মাথায় বিশাল ভারী টেনসন নিয়ে আহানার চিকিৎসা করেছিলাম
আমাদের ভয় হয়েছিল শুধু এই ভেবে যে শেষ মুহূর্তে কিছু হয়ে না যায়
আর শান্ত!আহান্তকে আপনার হাতে দিতেই আপনি ওর মুখের দিকেও তাকাননি,আহান্তকে নওশাদের হাতে দিয়ে আপনি আহানা আহানা বলে শুধু চিৎকার করে যাচ্ছিলেন
আহানা চোখ খুলেছে ঠিক পরেরদিন সকালে
তার বাচ্চাকে মায়ের থেকে আলাদা রাখতে হয়েছিলো বলে আহান্তকেও ট্রিটমেন্ট দিয়ে রেখেছিলাম সেদিন
শান্ত আহান্তকে কোলে নিয়েছে ঠিক তখন যখন আমরা ওকে জানিয়েছি আহানা এখনও বেঁচে আছে
এরকম miracle খুব কম হয়,অনেক অনেক দোয়ার ফলেই হয়ত এটা সম্ভব হয়েছে সেদিন
আহানা চোখ খুলে সেদিন সবার আগে তার আহান্তকে খুঁজেছে,তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলেছে”শান্ত আমি পেরেছি!!”
.
সত্যি রেকর্ড করে রাখা উচিত ছিল আমাদের!!এখন তো কোর্স করানো হয়ে গেছে, অনেক বছর ও কেটে গেছে,আহান্তর বয়স এখন ৬বছর চলে
এখন আপনারা ১০০%সিউরিটি নিয়ে আবারও বাবা মা হোন,কোনো সমস্যা হবে না
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো

পরেরদিন সবাই মিলে একটা পিকনিক রিসোর্টে আসলো
আহানা আর শান্ত একটা গাছের সাথে লাগানো সিটে পা দুলিয়ে বসে কথা বলছে
রুপা আর নওশাদ হাঁটতেসে দূরের একটা চিকন রাস্তায়
আর আহান্ত আর মাইশা গোল হয়ে বসে আছে একটা কার্পেটের উপর,কার্পেটটা ঘাসের উপর
মাইশা একটা বার্গার খেতে খেতে হঠাৎ ঠাস করে আহান্তের গালে চড় বসিয়ে দিলো
আহান্ত গালে হাত দিয়ে চেয়ে আছে বোকার মত
তারপর গাল ফুলিয়ে ব্রু কুঁচকিয়ে মাইশার চুল টেনে দিয়ে বললো”মারলা কেন?”
.
তুমি একা একা গোটা একটা ক্যাটবেরি বাবলি শেষ দিচ্ছো!!আমাকে একটুখানিও দিচ্ছো না!
.
তাই বলে চড় মারবা??তোমার পুতুলের বিয়ে কি করে হয় আমিও দেখে নিব,চুল ছিঁড়ে দিব তোমার পুতুলের,তখন তোমার পুতুল বেলু বেলু চেহারা নিয়ে বিয়ে করবে
.
শান্ত আহান্ত আর মাইশার কান্ড দেখে হাসতেসে
মাইশা আহান্তর থেকে কয়েক মাসের ছোট
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে ওর কোমড় ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো
.
এই যে মেয়ে শুনো!!তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই
.
ইন্টারেস্ট নেই?
.
না তো!!একটুও না
.
দুটো আছে
.
দুটো?
.
একটা ঘাসের উপর বসে মাইশার সাথে ঝগড়া করতেসে আরেকটা…..
আহানা শান্তর হাত নিয়ে নিজের পেটের উপর রাখলো
“আরেকটা এখানে”
.
শান্ত হা করে সিট থেকে নেমে গেলো
.
কি বললে!!!!!
.
কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছিলো আমি প্রেগন্যান্ট
আজ সিউর হয়ে জানালাম
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো
“এই যে মেয়ে শুনো! এখনও তোমার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই”
♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥♥
(গল্পটা তৈরি করতে বাস্তব থেকে অনেকটাই নিয়েছি,শেষটাও!
বাস্তবে সুখ দুঃখ মিলিয়েই সবটা,সবার জীবনেই কষ্ট আছে আবার সুখ ও আছে
শুধু কষ্ট নিয়ে জীবন হয় না
আবার শুধু সুখ দিয়েও জীবন হয় না
এ দুটো মিলিয়েই জীবন!
আহানা শান্তর “প্রেমের পাঁচফোড়ন”
অনেক অনেক রেস্পন্স পেয়েছি,ইনশাল্লাহ কোনো একদিন প্রেমের পাঁচফোড়ন সিজন ২আসবে,তবে আজ থেকে নতুন একটি গল্প আসবে
এটাও বাস্তবতা নিয়ে,থাকবে বাস্তবতা আর মিষ্টি প্রেম,সাথেই থাকবেন)

4 মন্তব্য

  1. Just amazing chilo story ta.ato story ami porechi, kintu amon type story first time porlam. Santo r moto life partner kono meyer jobone thakle soto badha par kora ta kono problem bole mone hobe na. Thank you so much for the story.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে