সেই তুমি পর্ব-০১

1
8039

#সেই_তুমি?
#পর্ব_০১
#Tabassum_Kotha

সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। সাদা বিছানা চাদরের বেশ খানিকটা লাল হয়ে গেছে আমার রক্তের দাগে। শরীরে অসম্ভব রকম যন্ত্রণা হচ্ছে, ব্যথায় একপ্রকার কাতরাচ্ছি। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে গত দুই ঘন্টা যাবত আমার শরীরটাকে খুবলে খাচ্ছে তুর্য। একটা জীবন্ত লাশের মতো শুধু দেখেই গেলাম নিজের সতীত্ব হরণ হওয়া।
আমি হীর, অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। সদ্য ১৮ বছরে পা রেখেছিলাম, দুচোখ ভরে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম। এক নিমিষেই আজ সব শেষ হয়ে গেলো। কিছুই করার ছিল না আমার, কি করতাম। তুর্য যেমন লম্বা তেমনি সুঠাম দেহি, তার সামনে আমি একটা মাছির মতো। ঠিকই তার শক্তির কাছে পেরে উঠতে পারলাম না, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ধস্তাধস্তি করেও শেষ রক্ষা আর হলো না।
দুচোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় পানি পরছে, ভিষন কষ্ট হচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি না, কিন্তু তুর্যর সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। চোখে ঝাপসা দেখছি, মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছি। হ্যাঁ সেটাই ভালো এই অসহ্য যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না আমি।

বেশকিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙতেই বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করলাম। মাথাটা উঁচু করে তাকাতেই দেখি তুর্য আমার বুকে মাথা রেখে আমার উপরই ঘুমিয়ে আছে। রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে,, বেটা কতো বড় খচ্চর আমার উপর শুয়ে আছে। ইচ্ছে হচ্ছে লাত্থি মেরে নিচে ফেলে দেই কিন্তু শরীরে একবিন্দু শক্তিও অবশেষ নাই। বহুকষ্টে তুর্যকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে কোনো রকম উঠে বসলাম। যেই শাড়িটা পরে আজকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম সেই শাড়িটা দুই টুকরো হয়ে নিচে পরে আছে। শাড়ি আর ছেড়া ব্লাউজটা দেখেই চোখ ভিজে গেলো আমার। তুর্যর গায়ে থেকে চাদর টা টেনে নিয়ে কোনোরকম শরীরে পেচিয়ে নিলাম। হাটতে ভিষন কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে শরীর টুকরো টুকরো হয়ে বিছিয়ে পরবে এখনি।কোনো মতে ওয়াশ রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চাদরটা সরাতেই আতকে উঠলাম। সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। কামড় আর আঁচড়ের জায়গা গুলোতে বের হওয়া রক্ত শুকিয়ে গেছে। ধর্ষণ বুঝি একেই বলে। আগে শুধু শুনেছি আজ নিজের বেলায় অভিজ্ঞতাটাও হয়ে গেলো। দুচোখ বেয়ে নোনাজল পরছে,, মুছার এইবিন্দু ইচ্ছেও নেই। চোখের পানির মাধ্যমে ধর্ষিতার কলঙ্ক না ধুলেও, কষ্ট হয়তো কিছুটা কমবে। প্রায় একঘন্টার মতো সময় নিয়ে নিজেকে ভালোমতো ধুয়ে গোসল শেষ করে, ওয়াশরুমে রাখা বাতরোবটা পরে বের হলাম। বের হতেই দেখি অসভ্যটা খাবার সেন্টার টেবিলে রাখছে। আমাকে দেখেই একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বললো,

— আমার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ তো নিজে হাতে সাবান দিয়ে ঘসে ঘসে ধুয়ে এলে, এখন পুলিশে কেস ফাইল করবে কিভাবে?

তুর্যর কথায় আমি অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছি, বলে কি? নিজেই নিজেকে পুলিশে দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু কথাটা তো ঠিকই বলেছে, বোকার মতো সব প্রমাণ শেষ করে এলাম। এখন নিজেই নিজের কপাল চাপরাচ্ছি।

— কি চিন্তা করছো এতো? এখন এতো ভেবে লাভ নেই, এখানে এসে বসো।
বলেই আমার হাত ধরে টান দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো তুর্য।

–বাতরোব টা খুলো।

তুর্যর কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।

— কি হলো শুনতে পারছো না? বাতরোব টা খুলো কামড়ের জায়গাগুলো তে মলম লাগাতে হবে।

— না, আমি বাতরোব খুলবো না।

— কেনো?

— আপনার সামনে আমি কিভাবে খুলবো, নিচে কিছুই পড়ি নি।

— হয়তো ভুলে গেছো কিছুক্ষণ আগে তোমার সবটাই আমি দেখে নিয়েছি।

তুর্যর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি আকাশ থেকে পরছি,, এই মানুষটা কি আদোও মানসিক ভাবে সুস্থ আছে নাকি পুরোই তারছিড়া। কিছুক্ষণ আগে আমাকে এতোটা টর্চার করে এখন আবার নিজেই মলম লাগাতে চাইছে। নিজে নিজেই বিরবির করছিলাম তখনই টান দিয়ে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বাতরোব টা খুলে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলো তুর্য। আমি এখনও হা হয়ে আছি আর তুর্য আমার ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। এতোক্ষণে ভালো করে খেয়াল করলাম লোকটাকে। মাত্রারিক্ত ফর্সা লোকটা, ছেলেদের এতো ফর্সা হতে নেই,, বড় চুলগুলো বার বার চোখের উপর এসে পরছে। ঠোঁট দুটো একদম গোলাপী রঙের। সৃষ্টিকর্তা যেনো অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছেন উনাকে। এজন্যই হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ।

— ওমন হা করে কি দেখছো? খেয়ে ফেলবা নাকি?

তুর্যর কথা শুনে আবারো আমার চোখ বড় হয়ে গেলো। খানিকটা লজ্জাও পেলাম বটে। কিছু না বলে মুখটা বন্ধ করে মাথা নিচু করে নিলাম। গোসল করে বের হওয়াতে ভেজা চুলের পানি আমার শরীরে পরছে। ঔষধ লাগাতে লাগাতে তুর্যর হাত থেমে গেলো। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম, একদৃষ্টিতে আমার বুকের ঠিক মাঝখানের তিলটার দিকে তাকিয়ে আছে। তুর্যর চোখে এক অদ্ভুদ নেশা লেগে আছে। এই একদিনেই তার দৃষ্টি আমার কাছে অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে। ভিতরা টা দুমরে মুচরে যাচ্ছে। বারবার কয়েকঘন্টা আগের দৃশ্যগুলো মনে পরছে। কয়েকঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমার জীবনটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। একটা মেয়ের অহংকার তার সতীত্ব, সেটাই আমি হারিয়ে ফেললাম।

দুঃখবিলাস করছিলাম তখনই আচমকা তুর্য আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে আমার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নিলো। আচমকা এমনটা হওয়াতে কিছুই বুঝতে পারলাম না, যতোক্ষণে বুঝলাম অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। দুহাত দিয়ে তুর্যর বুকে কিল ঘুষি যা পারছি দিচ্ছি কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তুর্য আরো শক্ত করে ধরলো আমাকে। এখন আমি আর নরতেই পারছি না। অসহায় হয়ে চোখে পানি ছেড়ে দিলাম। তুর্য মনের সুখে আমার ঠোঁট দুটোর স্বাদ নিচ্ছে। কিন্তু এইবার তুর্যর কাছে আসাটা হিংস্র মনে হচ্ছে না। কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি ভালোবেসে অনেক আদর করে কিস করছে। কিন্তু আমার এগুলো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো কিছুক্ষণ এভাবেই থাকার পর তুর্য আমার ঠোঁট দুটো ছেড়ে দিয়ে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। হাতের বাঁধন আলগা হতেই আমি তুর্যকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম। এই লোকটার স্পর্শ আর সহ্য করতে পারছিলাম না আমি। উনার প্রতিটা স্পর্শ আমাকে আবারো সেই আমানবিক অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

তুর্য আহত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো আমার দিকে, এই চাহনিতে না জানি কতো কষ্ট লুকিয়ে আছে। তুর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা আর সম্ভব হলো না। কেনো জানি না বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। তুর্য নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। খাবার মাখিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো তুর্য।

— মুখ খুলো, খাবার খেয়ে পেইন কিলার খেতে হবে।

তুর্যর কথায় আবারো অবাক না হয়ে পারলাম না। উনি কেমন মানুষ এই ধারণাটাই হচ্ছে না আমার। এতো কেয়ার করছে আমার যে বিশ্বাসই হচ্ছে না কিছুক্ষণ আগে এই লোকটাই আমাকে তুলে এনে জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এককথায় যাকে বলে ধর্ষণ করেছে। আমি মুখ না খোলাতে তুর্য জোর করে খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।

— সরি জোর করে খাবার ঢুকানোর জন্য। কিন্তু তোমাকে পেইন কিলার টা খাওয়ানো প্রয়োজন, নাহলে শরীরে ব্যথা করবে।

— শরীরের ব্যথাটাই বুঝি চোখে পরলো? আমার জীবনে যে ঝড় নিয়ে এলেন সেটা?

— তুর্য আহমেদ চৌধুরীর সাথে একটা রাত কাটানোর জন্য মেয়েরা লাইন লাগিয়ে বসে থাকে, নিজে থেকে ধরা দেয়। আর সেই তুর্য আহমেদ চৌধুরী নিজে তোমাকে আপন করে নিয়েছে। তোমার তো নিজেকে নিয়ে প্রাউড ফিল করা উচিত।

— আপনি যেমন আপনার কাছে ধরাও দেয় তেমন মেয়েরাই,, কিন্তু আমি ওসব মেয়েদের মতো নই।

— আমি কেমন?

— মানে?

— এইযে বললে আমি যেমন তেমন মেয়েরাই আমার কাছে আসে। তো আমি কেমন একটু বলো।

— আপনি একটা চরিত্রহীন লোক। আপনি একটা মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে এনে ধর…
আর কথা বের হলো না মুখ দিয়ে,, কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে গলায় এসে আটকে গেছে।

— হুম। আমি চরিত্রহীন আর তুমি? তুমি কি ধোয়া তুলসীপাতা? তোমার আসল রূপটা আর কেউ না জানলেও আমি জানি। আর তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ধর্ষণ করেছি? তুমি তো সবকিছু জেনেও কিছুই জানো না। আমার প্রতিটি স্পর্শ বৈধ ছিল। তোমাকে অবৈধভাবে আমি স্পর্শও করবো ভাবলে কি করে।

তুর্যর এই কথার প্রেক্ষিতে কি উত্তর দেওয়া যায় আমার জানা নেই। উনি আমার সম্পর্কে এতো বাজে মন্তব্য করছেন। কিন্তু উনি তো আমাকে চিনেন না তাহলে কেনো এসব কথা বললেন?

তুর্য আমাকে খাইয়ে পেইন কিলার খাইয়ে দিলেন। সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছি, তুর্য আলমারি থেকে টিশার্ট বের করছেন। এতোক্ষণ শুধু একটা ছাই রং এর টাওজার পরা ছিলেন। তুর্যর জিম করা বডি তারওপর থেকে ফর্সা শরীর, যেকোনো মেয়েকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এতো সৌন্দর্য দিয়ে কি হবে যেখানে চরিত্রই ঠিক নেই। একটা মেয়ের এতো বড় সম্মানহানী করার আগে একবারও চিন্তা করলো না।

— তোমার এখন বাসায় যেতে হবে। নাকি আমার মোহে পরে গেছো?

— কিভাবে যাবো শাড়ি-ব্লাউজ তো আপনি ছিড়ে ফেলেছেন। বাতরোব পরে বাসায় কিভাবে যাবো?

— বাতরোব পরে যেতে হবে না, এই শাড়িটা পরে নাও। যা যা লাগবে সবই এখানে আছে।

— আপনি বাইরে যান।

— কেনো?

— বারে আপনার সামনে শাড়ি পরবো নাকি আমি?

— তোমার আর কিছু বাকি নেই যা আমি দেখি নি তাই আমার সামনে তোমার লজ্জা না পেলেও চলবে।

— গা জ্বালানো কথা বন্ধ করবেন আপনি? লজ্জা নাই আপনার তাই না?

— গেট রেডি। ফাষ্ট।

অর্ডার দিয়েই তুর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শাড়িটা হাতে নিয়ে রুমটা একটু পর্যবেক্ষণ করলাম। বেশ বড় একটা রুম, আসবাবপত্রগুলো অনেক দামি আর ক্লাসি। দেখেই মনে হচ্ছে খুব সখ করে সাজিয়েছে রুমটা। খাটের পাশের টেবিলে তুর্যর একটা ছবি ফ্রেমে রাখা। তার মানে বাড়িটা এই শয়তান লোকটার। বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে বাড়িতে যেতে হবে জলদি। তাই চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে শাড়িটা পরে নিচে নেমে গেলাম। নিচে নামতেই আমি আরো আশ্চর্য হলাম।

চলবে..

1 মন্তব্য

  1. আমি গল্পের লেখকের সাথে কথা বলতে চাই।
    অথবা এ ব্লগের মালিকের সাথে কথা বলতে চাই,লেখকের সাথে কথা বললে বেশি ভালো হই।আমার হোয়াটস আপ নাম্বার ০১৫৭৫১৯১৩৭৩

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে