আড়ালে ভালোবাসি পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

1
1939

#আড়ালে_ভালোবাসি
#অন্তিম_পর্ব
#নন্দিনি_চৌধুরী

রাত ৩টা,

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। দূর আকাশের পানে তাকিয়ে আছে সে। ঘোনো কালো বাদলে পুরা আকাশ কালো হয়ে আছে। ঠিক আকাশের মন যেমন কালো হয়ে আছে।রুমে ঘুমিয়ে আছে জুঁই সারারাত সেও ঘুমায়নি।একটু আগেই ঘুমিয়েছে মেয়েটা।আকাশ হাতে একটা চিঠি এই চিঠিটা পরে আকাশ আজ নিজেকে আর ও অপরাধি ফিল করছে।হ্যা এটা মিতুর দেওয়া সেই চিঠি।যা আকাশ এতোদিন পড়েনি প্রথমে রেগে পড়েনি কিন্তু পরে পড়ার ইচ্ছা হলেও কোনো এক অজানা কারণে পড়া হয়নি।কিন্তু আজ সে চিঠিটা পড়েছে মিতুর সব না বলা কথাগুলা সে জেনেছে।

বেস কিছুক্ষন আগে,

আকাশ তার আলমারি খুলেছে উদ্দেশ্য সে শাওয়ার নিবে। কান্না করার কারনে মাথা ব্যাথা করছে তার।নিজের জামা বের করতে গিয়ে একটা ফাইল নিচে পরেগেলো।আকাশ ফাইলটা উঠাতে গিয়ে দেখলো ভিতর থেকে একটা খাম বের হয়েছে।আকাশ খামটা খুলে দেখে চিঠি।আকাশের মনে পরে যায় এটা মিতুর সেই চিঠি।আকাশ তাড়াতাড়ি চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করে।

প্রিয় আকাশ,
তুমি যখন এই চিঠিটা পাবা তখন আমি কোথায় আছি তুমি সেটা জানবেনা।আর আমি এটাও জানি হয়ত তুমি এই চিঠিটা পড়বেনা।কিন্তু যদি পড়ে থাকো তাহলে আমি তোমায় বলতে চাই তুমি আমার খুব প্রিয় মানুষ ভালোবাসার মানুষ।জানিনা আদৌ আমি তোমার প্রিয় কিনা।কারন যতবার তোমার কাছে কাছি গেছি ঘৃণা ছাড়া কিছু পাইনি।আচ্ছা আকাশ ভালোবাসা কি অন্যায়?কাউকে ভালোবেসে পেতে চাওয়া কি ভুল?জানো আকাশ জীবনে কোনোদিন কাউকে এতোটা পাগলের মতো চাইনি যতটা তোমায় জীবনে চেয়েছি।কত শত ছেলে প্রপোজ করতো। তাদের ফিরিয়ে দিতাম শুধু তোমার কথা ভেবে।আকাশ ভালোবাসি তোমাকে এতোটা ভালোবাসি যে তোমাকে অন্যের সাথে দেখার মত সয্য আমার নেই।তাইতো স্নেহাকে আমার দুচোখের বিষ মনে হতো।নিয়াজের সাথে মিলে আমি যাই করেছি শুধু তোমায় পাওয়ার আশায়।দেখো তোমায় পেয়েও গেছিলাম কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাক যে জোর করে কোনোদিন আর যাইহোক ভালোবাসা হয়না।জানো আকাশ ইদানিং শরীল খুব খারাপ লাগছিলো দেখে ডাক্তারের কাছে যাই।ভেবেছিলাম হয়ত আমাদের সম্পর্ক এভার ঠিক হবার জন্য কেউ আসছে।কিন্তু না কপালে এত সুখ তো আমার নেই ডাক্তার আমাকে রিপোর্ট দিয়ে জানায় আমি কোনোদিন মা হতে পারবোনা।জানো আকাশ খুব কষ্ট হচ্চিলো চিৎকার করে কান্না করছিলাম কিন্তু ভাবিনি একদিনেই দুটো ধাক্কা আমায় পেতে হবে বাচ্চা না হবার শোক পেতে না পেতেই তুমি এসে আমাকে ডিভোর্স দিলে।বের করে দিলে বাড়ি থেকে।এই বৃষ্টির রাত হয় সবার জন্য মধুর আর আমার জন্য হলো কাল।আমি বুজতেপারছিলামনা কি করবো গেলাম নিজের বাড়িতে কিন্তু সেখানেও ঠাই হলোনা।বাবা ভাইয়া তাড়িয়ে দিলো।জানিনা এখন আমি কি করবো তবে তোমায় মুক্ত করে দিলাম।তবে আকাশ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।মরে যাবো হয়ত খুব শিগ্রি।স্নেহাকে বলো পারলে আমায় মাফ করে দিতে।ওর সামনে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার।তুমিও পারলে মাফ করো আমায়।আর
পরিশেষে ভালোবাসি আকাশ খুব ভালোবাসি।

আকাশ চিঠিটা বসে পরলো।সে যে কত বড় পাপ করছে সে আজ বুজতে পারছে।সে তো দিব্বি এখন আবার জুঁই কে বিয়ে করলো কিনতি মিতু।মিতু আজ পাগল প্রায়।আজ মেয়েটার এই অবস্থার জন্য শুধু সে দায়ী।ক্ষমার যোগ্য নয় সে।

জুঁই আকাশের জন্য খাবার হাতে নিয়ে এসে দেখে আকাশ ফ্লোরে বসে আছে মাথা নিচু করে।জুঁই খাবারের প্লেট টেবিলে রেখে আকাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখে আকাশের হাতে চিঠি।জুঁই চিঠিটা আকাশের হাত থেকে নিয়ে পড়ে।আকাশ জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে জুঁই কাঁদছে আকাশ আসতে করে বলে উঠে,

এতো গুলা বছর চিঠিটা আমি পড়িনি। আজ পড়ে বুজতে পারছি আমি যে কত বড় অন্যায় ওর সাথে করেছি।আমার কোনো ক্ষমা হয়না।

জুঁই:মিতু আপুর কষ্টের পরিমান আমরা কেউ বুজতে পারবোনা।এত কষ্ট ওকে তুমি না দিলেও পারতে আকাশ।আজ মনে হচ্ছে আমাদের বিয়েটা না হলেই ভালো হতো।মিতু আপুর জীবন শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু আমরা সুখে থাকবো।এটা কোনোদিন হতে পারেনা কোনোদিন না।

জুঁই উঠে চলে গেলো খাটে সেখানে বসেই কেঁদে যাচ্ছে সেও।সে তো চায়নি ৩য় কেউ হয়ে থাকতে।আজ নিজেকে ৩য় কেউ মনে হচ্চে।

আকাশ উঠে বেলকোনিতে গেছে।আজ আর তার ঘুম হবেনা।

বর্তমানে,

আকাশ:আমি যা করেছি তার কোনো ক্ষমা আসলেই নেই।কিন্তু আল্লাহ প্লিজ মিতুকে সুস্থ করে দেন।মেয়েটা আর কত কষ্ট পাবে।

সকালে,

স্নেহা আর তার মা মিলে রান্না ঘরে কাজ করছে। সকালের নাস্তা বানাচ্ছে স্নেহা আর তার মা সব ঠিক করে দিচ্ছ্র।

খাবার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছে তখন আরাফ মিতুত ব্যাপারে সব কিছু জানালো।

জাফর:খুব খারাপ হয়েছে মেয়েটার সাথে।
ইকবাল:যাই করেছে মেয়েটা কিন্তু খুব বেশি তার শাস্তি সে পেলো।
মোতালেভ:এখন ওর কি হবে?
আরাফ:ট্রিটমেন্ট এর কোনো কমতি রাখিনি আমরা। এই চার বছর সব কিছুই করেছি আমরা ওর জন্য। কিন্তু ওর ভিতরেই হয়ত ঠিক বাঁচার ইচ্ছা আসছেনা। তবুও রোহান ওকে নিয়ে আগামিকাল অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে।আমাদের শেষ আসা ওখানে ট্রিটমেন্টে যদি কিছু ইম্প্রুভ হয়।পুরাপুরি আশা করিনা তবে কিছুটা আশা রাখি।
জাফর:ভালো হয়ে যাক মেয়েটা এই দোয়া করি।
ইকবাল:হ্যা আল্লাহ ওকে সুস্থ করে দিক।
মোতালেভ:আকাশ কোথায় জুঁই?
জুঁই:জানিনা বাবা সকাল উঠে দেখি ও রুমে নেই ভেবেছিলাম হয়ত গার্ডেনে অখানেও দেখি নাই জানিনা এখন কই।

🤍

আকাশ বসে আছে রোহানের সামনে।সে আজ আবার এসেছে মিতুর সাথে দেখা করতে।

আকাশ:রোহান আমি মিতুর সাথে একটু দেখা করতে চাই।
রোহান:কি কারনে আমি তো বুজতে পারছিনা তুমি দেখা করতে চাচ্ছো।তোমার তো মিতুর কাছে কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না।
আকাশ:প্লিজ রোহান আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি আমার বিশ্বাস আমি ওর কাছে মাফ চাইলে ও হয়ত কিছুটা ইম্প্রুভ করবে।
রোহান:তোমার মাফ চাওয়া না চাওয়া সমান।মিতু তো এখন নরমাল না যে তুমি মাফ চাইলে সে মাফ করলো।
আকাশ:প্লিজ রোহান ট্রাই টু আন্ডারস্টেন্ড।
রোহান:মিতুকে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।তুমি চাইলে এখন দেখা করতে পারবে।জেগে থাকা অবস্থায় ওর কাছে কাউকে যেতে দেওয়া যাবেনা।
আকাশ:ওকে।

রোহান আকাশকে মিতুর রুমে নিয়ে আসলো।মিতু ঘুমিয়ে আছে।চেহারায় মলিনতা।চোখের নিচে দাগ পরে গেছে।আকাশ আসতে করে মিতুর পাশে বস্লো।ওর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বল্লো,

আকাশ;I am sorry mitu.আমাকে ক্ষমা করে দেও আমি সত্যি অনেক বড় অপরাধ করেছি তোমার সাথে।আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।জোর করে জেদের বসে তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য আজ এই অবস্থা।আসলেই আমি ভালোনা খুব জঘন্য মানুষ।আমাকে মাফ করে দিও।প্লিজ ভালো হয়ে যাও।তোমার জন্য যে সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।আমার মন সেটা বলছে।প্লিজ ভালো হয়ে যাও।আমি যে নিজেকে কোনোদিন মাফ করতে পারবোনা।প্লিজ ভালো হয়ে যাও।

কথা গুলো বলে আকাশ চোখের পানি মুছে উঠে দাড়াঁলে।রোহান তখন দরজার সামনে দাঁড়ানো।আকাশ এসে রোহানের কাধে হাত রেখে বল্লো,

আকাশ:যেই দায়িত্ব নিতে চাচ্ছো তা সারাজীবন পালন করো।
রোহান:ইন্সাল্লাহ ওকে আমি ভালো রাখবো।আমার বিশ্বাস ও একদিন ভালো হয়ে যাবে।
আকাশ:আসি সাবধানে যেও।
রোহান:হুম

আকাশ বাসায় আসলো সন্ধ্যায় সারাদিন বাহিরে কাটিয়েছে সে। নিজেকে বড্ডো অপরাধি লাগছে।বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।আজকে একবার ও সে জবার মুখোমুখি হয়নি।আকাশ নিজের রুমের বেলকোনিতে বসে সিগারেট ধরালো।সিগারেটের ধোঁয়ায় মিথ্যা শান্তুি খুজে বেরাচ্ছে সে।

‘মাফ চেয়ে এসেছিস মিতুর থেকে?’

আকাশ:হুম তুমি কখোন আসলা ভাইয়া?

আরাফ:সিগারেটে যখন মত্ত ছিলি তখনি আসছি ওটা ফেল।

আকাশ সিগারেটটা ফেলে দিলো।

আরাফ:যা হয়েছে তা বদলানো যাবেনা।তুই একসাথে ডূঈটা মেয়েড় জীবন বরবাদ করেছিস। প্রথম নেহা তুই বন্ধুত্বর হাত বাড়ালেও সে ভেবেছে তুই তাকে ভালোবাসিস। পরে সে জানলো তুই ভালোবাসিস না সেই কষ্টে আর অপমানে মেয়েটা মারা গেলো।ওর পর মিতুর স্নেহার প্রতি রাগ জেদের কারনে বিয়ে করলি তার যখন জানলি ও দোষী ছেড়ে দিলি ওকে।আর আজ সেও প্রায় মরার পথে গেছিলো তবে আল্লাহ ফিরিয়ে দিয়েছে তবে অর্ধ পাগল হয়ে গেছে সে।স্নেহার কথা বাদ দিলাম কিন্তু জুঁই আশা করি জুঁইকে কোনাও ভাবে আঘাত দিবিনা তুই।

আকাশ:হুম চেষ্টা করবো।
আরাফ:চেষ্টা না করতেই হবে।
আকাশ:হুম ভাইয়া।

আরাফ আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রাতে জুঁই রুমে এসে দেখে আকাশ নেই।জুঁই বেলকোনিতে গিয়ে দেখে আকাশ বসে আছে।জুঁইকে এসেছে দেখে আকাশ জুঁই এর দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আকাশ:জুঁই এদিকে এসে বস।
জুঁই আকাশের কথা মতো ওর কাছে গিয়ে বস্লো।
আকাশ:আমি জানিনা তুই আমাকে কি ভাবছিস হয়ত ভাবছিস আমি কেন মিতুর সাথে এমন করলাম। কেন ওকে ছাড়লাম। কিন্তু জুঁই বিশ্বাস কর আমি যদি জানতাম এরকম কিছু হবে তাহলে আমি এরকম করতাম না।আমি ইচ্ছা মিতুকে কষ্ট দিতে চাইনি।কিন্তু তবুও সব উলোট পালোট হয়েগেছে।আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি।চার বছর আগে স্নেহার সাথে করা অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খেতো। আর আজ আবার চার বছর পর মিতুর সাথে করা অন্যায় আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্লিজ জুঁই তুই ছেড়ে যাসনা।আমি একদম একা হয়ে যাবো।প্লিজ যাস না।

জুঁইকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো আকাশ।জুঁই পরম আদরে আগলে নিলো আকাশকে।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,

জুঁই:আমি কোথাও যাবোনা তোমাকে ছেড়ে।আমি তোমার পাশেই আছি সারাজীবন।মরণ ছাড়া কেই তোমার থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবেনা।তুমি তোমার অপরাধে অনুশুচনা করেছো।আমি জানি তুমি ইচ্ছা করে কিছু করোনি।দেখো মিতু আপু একদম সুস্থ হয়ে যাবে ইন্সাল্লাহ।

আকাশ:জুঁই আমরা কি সব নতুন করে শুরু করতে পারি?
জুঁই:মানে?
আকাশ:একটা হ্যাপি ফ্যামিলি কি হতে পারি আমরা?
জুঁই আকাশের কথা শুনে বুজতে পারলো আকাশ কি বলতে চায় তাই জুঁই লজ্জা পেয়ে বল্লো,
জুঁই:তোমার যা ইচ্ছা তুমি যেটা চাও সেটাই হবে।
আকাশ:সত্যি মানে তুই রাজি?
জুঁঁই: হুম
আকাশ জুঁইকে জরিয়ে ধরলো আর জুঁই ও আকাশের বুকে মাথা রাখলো।

৩বছর ৫ মাস পর…….

নিজের রুমে জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে একজন। বাহিরের সুন্দর পরিবেশটা দেখছে সে। একটা হালকা নীল কালারের টপস পরা মেয়েটা দেখতে অনেক ভালো লাগছে।

মেয়েটা বাহিরে তাকিয়ে ছিলো এমন সময় পিছন থেকে একজন তাকে জরিয়ে ধরলো,

মেয়েটা ভালোই বুজতে পারছে কে এটা তাই ওভাবে থেকেই বল্লো,

মিতু:আজ এত জলদি আসলা রোহান?
রোহান:হুম আমার মহারানী আর প্রিন্সেস এর কথা খুব মনে পরছিলো তাই চলে আসলাম।
মিতু:পাগল একটা আর বেবির মাত্র দু মাস হইছে। আর তুমি এখনি সিওর কেম্মে এটা মেয়ে হবে হুম।
রোহান:আমি জানি মেয়েই হবে আমার বউটার মতো কিউট একটা মেয়ে।
মিতু:উম আমার তো মনে হয় ছেলে হবে আমার হেন্ডসাম বরের মতো দেখতে।
রোহান:উহু মেয়েই হবে দেখে নিও।
মিতু:উহু না না না ছেলে হবে ছেলে হবে ছেলে হ…
মিতুকে আর কিছু না বলতে দিয়ে রোহান ওর ঠোঁট জোরা দিয়ে মিতুর ঠোঁট জোরা দখল করে নিলো।

কি ভাবছেনতো মিতু কিভাবে ভালো হলো চলেন বলছি,,,।

মিতুকে দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে এনে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়।এখানে বেস্ট ডাক্তাররা মিতুকে ট্রিটমেন্ট করে।বেস্ট সাইকোলজির কাছে ওকে নেওয়া হয়।আসতে আসতে মিতু কিছুটা ডেবলোপ করে তবে মিতু আগের সব সৃতি হারিয়ে ফেলে।কাউকে তার মনে থাকেনি।রোহান এক নতুন মিতুর সৃষ্টি করে এরপর।তবুও মাঝে মাঝে মিতু প্যানিক করে।তবে এখন সে অনেকটা ঠিক আছে।রোহান মিতুর বাবা মাকে জানালে তারা মিতুকে মেনে নেয় অমেক তো দূরে রেখেছিলো মেয়েকে আর রাখতে পারেনি কাছে টেনে নেয় মেয়েকে।মিতুকে আকাশের কথা কিছু জানানো হয়নি।আকাশ পুরাপুরি তার মেমোরি থেকে মুছে গেছে।মিতু এখন একজন সফল ফেশনডিজাইনার।মিতু আর রোহানের বিয়ে হয়েছে এক বছর হলো।রোহান মিতুকে অনেক আগলে রেখেছে।কোনো কষ্ট তাকে পেতে দেয়নি।মিতু সুস্থ হবার পর রোহান আরাফকে জানায়।তবে আরাফ ইচ্ছা করে দেখা করেনি সএ চায়না মিতুর আবার কোনো ক্ষতি হোক।মিতু এখন প্রেগন্যান্ট মিতুকে এখানে এনে রোহান ওর সব চিকিৎসা করে। গাইনি ডাক্তার দেখালে সে জানায় প্রপার ট্রিটমেন্ট করলে মিতু ঠিক হয়ে যাবে আর মা হতে পারবে।তবে একটু রিস্ক হবে।রোহান ওর ট্রিটমেন্ট করায় আর বেস এরপর প্রেগন্যান্ট হয় মিতু।এইত তাদের সুখের সংসার চলছে এভাবেই।

বাংলাদেশ…….

তিনবছরের একটা মেয়ের পিছনে খাবার নিয়ে ছুটছে স্নেহা। মেয়েটা তার অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে একটুও খেতে চায়না।তুলতুল ছুটছে সে খাবেনা তার ডিম আর দুধ খেতে একদম ভালো লাগেনা।

স্নেহা:তুলতুল দাড়াঁ মা একটু খেয়ে নে।
তুলতুল:না আম্মু আমি এগুলা খাবোনা এগুলা পচা।
স্নেহা:মা একটু খেয়ে নেও বাবাই আসার সময় অনেক গুলা চোক্লেট চিপ্স নিয়ে আসবে।
তুলতুল:সত্যি আম্মু?
স্নেহা:হুম এখন এই ডিমটা খেয়ে নেও।
তুলতুল ভালো মেয়ের মতো ডিমটা খেয়ে চলে গেলো খেলতে।

জুঁই ছেলেকে খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে নিচে এসে দেখে স্নেহা আর কাকিরা মিলে রান্না করছে।জুঁই ও তাদের সাথে যোগ দিলো কাজে।

জাফর হাসান মারা গেছে এক বছর হলো।জাফর হাসানের মৃত্যুতে সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। দুই ভাইয়েত মৃত্যুতে বাকি দুই ভাই আর বোন খুব ভেংগে পরেন।স্নেহা ও অনেক কেঁদেছিলো জাফর হাসানের মৃত্যুতে। এই মানুষটাও তো তার বাবা ছিলো একদম নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে তাকে।জাফর হাসান তার মৃত্যুর আগে আরাফ আকাশকে বলেছিলেন তারা যেনো আর না চলে যায়। তারা যেনক এই দেশেই থাকে।জাফর হাসান এর কথা রাখতে আরাফ আকাশ আর দেশ ছেড়ে যায়নি তবে মাঝে মাঝে দরকারে যেতো আবার চলে আসে।আকাশ জুঁই এর সম্পর্ক একদম ঠিক তাদের একটা ছেলে হয়েছে দুই মাস বয়স ছেলের।নাজমা বেগম স্ট্রোক করেছেন তাই এখন তিনি আসতে পারেনা তবে রিতু রাতুল আর তাদের ছেলে মেয়ে আসে।জুনায়েদ নিতু ফিরে এসেছে।জুনায়েদ নিজের বিজনেস করছে চাকরি ছেড়ে।ভালোই চলছে তাদের সংসার।

নুয়াজ কে জেল থেকে ছাড়া হয়েছে এক বছর আগে তাকে ৫বছতের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিলো আর রাহাতের ৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।নুয়াজ জেল থেকে ছাড়া পাবার পর স্নেহার সাথে একবার দেখা করে মাফ চায় এরপর আর আসেনি স্নেহার সামনে।আরাফ কথামত এতগুলা বছর নুয়াজের বাবা মায়ের দেখা শুনা করছে।এখন সে নুয়াজের জন্য একটা চাকরিও খুজে দিয়েছে। কিন্তু নুয়াজ সেটাউ অমত জানিয়েছে সে জানিয়েছে সে নিজ যোগ্যতায় কিছু করবে।নুয়াজের ভালোবাসার মানুষটার অন্য একজায়গায় বিয়ে হয়েগেছে।নুয়াজ অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটা চাকরি পেয়েছে।তার ও বিয়ে হয়ে গেছে এখন।

রাতে,,,,,,

জুঁই আরহামকে (জুঁই আকাশের ছেলে)ঘুম পাড়িয়ে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ ফিরেছে বেশকিছুক্ষন হলো ফ্রেশ হতে গেছে সে।জুঁই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।আকাশ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে জুঁই বারান্দায়।পেছন থেকে গিয়ে জুঁইকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগল্প

আকাশ:কি করছে আমার বউটা?
জুঁই:কিছুনা।
আকাশ:উম খেয়েছো?
জুঁই:না তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আকাশ:আচ্ছা চলো আজ আমি অন্য কিছু খাবো।দুষ্টু হেসে বল্লো আকাশ।
জুঁই আকাশের কথার মানে বুঝে লজ্জা পায় আর বলে,
জুঁই:দূর কিজে বলোনা যাওতো।
আকাশ:না না আজ যাচ্ছিনা কতদিন হইছে আদর করিনা বউটাকে।
জুঁই:আ….

আর কিছু বলতে দিলোনা জুঁইকে কোলে তুলে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো আকাশ।আজ আবার ভালোবাসার রং মাখিয়ে দেবে জুঁইকে।

অন্যদিকে,,,,,

স্নেহা আর আরাফ ছাঁদে দাঁড়ানো। তুলতুল ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগে।স্নেহা আরাফের সাথে গল্প করছে।

স্নেহা:সব ঠিক হয়ে গেছে অবশেষে।মিতু সুস্থ হয়ে গেছে এখন ওর নিজের একটা সংসার হয়েছে।আকাশ এখন জুঁইয়ের সাথে হ্যাপি।সব ঠিক হয়ে গেছে।
আরাফ:হুম রোহান পেরেছে মিতুকে সুস্থ করতে।তো এখন আমরাও কিছু ঠিক করি।
স্নেহা:মানে?
আরাফ:তুলতুলের জন্য কাউকে আনি।😁
স্নেহা:কাউকে আনতে হবেনা এম্নেই এসে গেছে।
আরাফ:মানে দাঁড়াও দাঁড়াও মানে তুমি….
স্নেহা:হুম🙈🙈।
আরাফ স্নেহাকে জরিয়ে ধরে বলে ভালোবাসি।
স্নেহা আরাফের বুকে মাথা রেখে বলে ভালোবাসি।

পূর্ণতা পেলো সব ভালোবাসা।এভাবেই বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।

_________ #সমাপ্ত ___________

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে