স্বপ্ন?পর্ব_৫২ (অন্তিম_পর্ব)

2
926

স্বপ্ন?পর্ব_৫২ (অন্তিম_পর্ব)
#অনামিকা_সিকদার_মুন

.
.
.
জানলা ধরে উদাস হয়ে দাড়িয়ে আছে অনু । ওর এখনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে । একটা ঘোরের মধ্যেই বিয়েটা হয়ে গেল । আল্লাহ পবিত্র কালাম পড়ে নীলের সাথে সত্যি এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে ও । পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র বন্ধন । যে এতদিন শুধু প্রেমিক ছিল আজ থেকে সে স্বামী । কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে সম্পর্কের নামটাই পুরো পাল্টে গেল । নীল ওর বাসায় চলে যাবে । কালকের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে নিশিকে ভাবী সাথে অনুকে বউ করে নিয়ে যাবে । বিদায় নেওয়ার জন্য অনুর রুমে আসে নীল ।
নিশি নিঝুম মাহি আযানের সাথে বাহিরে বসে আছে । ওর খুশির সীমা নেই । বাঁধ ভেঙে ওর খুশি উপচে পড়ছে । খুব বেশি চিন্তায় ছিল অনুকে নিয়ে । এখন সেটা কমে গেছে । কারণ বোনটা যে ওর সাথেই থাকবে । আর নিজের ভালোবাসাকেও ওর বোনটা জীবনসঙ্গী করে পেল । কিন্তু বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি এমন হলো যে এই মাঝরাতেই নীল অনুকে বিয়ে করতে পাগল হয়ে গেল । উত্তরটা একমাত্র নিঝুমই দিতে পারবে । কিন্তু এখন নিঝুমের সাথে কথা বলতে কেমন সংকোচ বোধ হচ্ছে । বলতে গেলে লজ্জা লাগছে । যত যাই হোক কাল থেকে যে এই মানুষটার সাথে নতুন আরেক সম্পর্কে বাধা পড়বে নিশি । সেটা মনে পড়তেই লজ্জা আরো চেপে ধরছে নিশিকে । আবার সবটা না জানা পর্যন্তও শান্তি পাবে না । তাই লজ্জা লাগা সত্বেও নিচু স্বরে নিঝুমকে জিজ্ঞেস করল,
—হঠাৎ নীল এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল?
নিশির কথা শুনে নিঝুম নিশির দিকে তাকায় । তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—সেটা নীলই ভালো জানে ।
নিশি আবার কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল তার আগেই আযান বলে উঠল,
—তার আগে এটা বল, তুই এত আস্তে কথা বলতিছিস এটা কেমনে সম্ভব?
নিশি চোখ রাঙিয়ে তাকালো আযানের দিকে । আযান ফিসফিস করে বলল,
—শাকচুন্নি তার রূপে ফিইরা আসছে রে ।
মাহি তখন আযানকে চিমটি কাটে । নিশি আযানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—সময় আমারও আসবো । বুঝাবো নে তখন ।

নীল অনুর রুমে ঢুকে দেখল অনু জানলা ধরে বাহিরের দিকে উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে । নীল নিঃশব্দে অনুর পাশে গিয়ে দাড়ালো । নীলের আগমন টের পেলেও চুপ করেই রইলো অনু । নীল অনুর কাঁধে আলতো করে হাত রাখে । নীলের শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠে অনু । অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাড় করালো নীল । অনু মাথা নিচু করে আছে । নীল অনুর মাথায় ওড়না তুলে ঘোমটা দিয়ে দিল । অনুর নিচু করে রাখা মুখ দু’হাতের মাঝে নিয়ে উঁচু করল । অনু নীলের দিকে না তাকিয়ে দৃষ্টি নিচের দিকেই স্থির রাখল । অনুর মুখটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো নীল । চোখের পাতা, ঠোঁট কাঁপছে অনুর । লাল ওড়নায় সৌন্দর্য যেন আরো বেড়ে গেছে । খুব বেশি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে । পৃথিবীর সব সুন্দর যেন অনুর মুখেই ভর করেছে আজকে । আগেও তো কত দেখেছে এই মুখটা । কিন্তু আজকের সৌন্দর্যটা যেন ভিন্ন । হয়তো এটাই বিয়ের বন্ধন । অনেকক্ষণ মুগ্ধ নয়নে অপলক অনুকে দেখার পর নীল বলতে শুরু করে,
—অনু জানো আমার কাছে ভালোবাসা মানে কি?
অনু কোনো উত্তর দিল না । নীল অপেক্ষা না করে বলতে লাগল,
—তুমি! যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তখনও জানতাম না তোমায় এত ভালোবাসবো । জানতাম না আমার নিঃশ্বাসটা তোমার নাম নিবে প্রতিমুহুর্তে । তুমি আমার পৃথিবী না অনু । কিন্তু আমার পৃথিবীর সেই অংশ যাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ । তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতাম ঠিক তবে সেটা হতো বেঁচে থেকে মৃত্যুর শামিল ।
এতটুকু বলে নীল অনুর হাত ধরে বুকের বা পাশে রাখল । অনু নীলের কথা শুনে রীতিমত কাঁপছিল । যখন নীলের বুকের উপর হাত রাখে তখন যেন ওর হৃদস্পন্দন আরো দ্রুত গতিতে দৌড়াতে লাগল । নীল আবার বলতে লাগল,
—অনুভব করতে পারছো অনু? আমার প্রতিটা স্পন্দন আমি তোমার নামে লিখে দিয়েছি যেদিন বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি । আমার বুকের পাজরের হাড় দিয়ে যদি উপরওয়ালা তোমাকে সৃষ্টি না করতেন তাহলে তুমি দূরে যেতে পারতে । আটকাতে পারতাম না আমি বা অন্য কেউ । কার ভাগ্যে কি আছে সেটা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন । তুমি তার উপর ভরসা রেখে সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে…. কেন দূরে যেতে চেয়ে ছিলে বলো? তোমার অতীতে তোমার কোনো হাত নেই অনু । সেটা তোমার ভাগ্য ছিল । তোমার অতীত নিয়ে আমিও জানতে চাই না কিছু । তোমাকে আমি আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎতে চাই । শুধু এই দুনিয়াতে না মৃত্যুর পরের জীবনেও তোমাকে চাই । তোমাকে আমি প্রতিটা মুহুর্তে চাই । ঘুমের মাঝে তোমাকে নিয়েই স্বপ্ন বুনি আমি । আমার সকল স্বপ্ন পূরণে আমি তোমাকে এবং তোমাকেই চাই । কি করে ভাবলে অনু? কি করে এমন ভাবলে? শুধুমাত্র এতটুকুর জন্য তুমি আমার আকাশ থেকে বিলীন হবে? আর আমি তোমাকে যেতে দিব! কোনোদিন না ।
কথাগুলো বলতে বলতে নীলের কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো । অনু আর নীরব থাকতে পারে নি । অনুভূতিরা ওকে জেঁকে ধরে । ফুঁপিয়ে উঠে অনু । নিজেকে আর সামলে রাখতে পারল না । আছড়ে পড়ল নীলের বুকে ঠাঁই পেতে । নীলও অনুকে জড়িয়ে নেয় । টপটপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়ার ওর নয়নজোড়া থেকেও । অনুর আড়ালেই তা মুছে নেয় নীল । কান্নার আশ্রয় খুঁজে পেয়ে দ্বিগুণ গতিতে অনুর অনুভূতিগুলো ঝড়ে পড়তে লাগল অশ্রু হয়ে । নীল অনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
—কথা দাও আর কোনোদিন আমার থেকে দূরে যেতে চাইবে না? প্রমিস মি অনু…..
অনু হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে মাথা দু’দিকে হেলিয়ে বলল,
—যাব না । কোনোদিন যাব না দূরে । প্রমিস ।

তারপরের দিনগুলো খুব সুন্দর ছিল । সেদিন অনুর বাসা থেকে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে ফেলে নিঝুম । বাবা-মায়ের আপত্তি ছিল যদিও । কারণ চাইলেই তো হুট করেই সব করা যায় না । কিন্তু নিঝুম সব সামলে নেয় । অনু নীলের বিয়ের কথাটা গোপনই থাকে । সকালে অনু নীলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয় । আর সন্ধ্যায় বিয়ে । দু’ভাইয়ে একই সাজে একই পিরিতে বিয়ে হয় । নিশি আর অনুর সাজটাও ছিল একই । সব ছিল স্বপ্নের মতো । হ্যাঁ, স্বপ্ন কিন্তু এটা জেগে দেখা স্বপ্ন । নিঝুমের ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই স্বপ্নটা সত্যি হয়েছিল ফুলসজ্যার রাতে । নিজের রুমে ঢুকে যখন নিশিকে স্বপ্নের সেই সাজে দেখেছিল একমুহুর্তের জন্য ভাবনা শূণ্য হয়ে গিয়েছিল নিঝুমের । আরও অবাক হয়ে গেছিল যখন নিশি স্বপ্নের মতোই ওর মাইন্ড রিড করে কথা বলছিল । আচমকা সেই ভালোবাসে আক্রমণ করাটাও বাদ পড়ে নি । সবটা মিলে গিয়েছিল । স্বপ্ন হয়েছিল সত্যি ।

হসপিটালের করিডোরে মাথা নিচু করে বসে আছে নিঝুম । নিশিকে ওটিতে নেওয়া হয়েছে আধঘন্টা আগে । চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে নিঝুমের । নিশিকে ওটিতে নেওয়ার আগে নিশি পাগলের মতো কান্না করছিল । আর বলছিল, যাই হয়ে যাক ওর বেবিটাকে যেন বাঁচানো হয় । ও যদি মারা যায় তাহলে অনুর কাছে দেওয়া হয় । অনু যেন ওর বাচ্চাটাকে দেখে রাখে । ওটিতে নেওয়ার আগে নিশি নিঝুম আর অনুর হাত খামচে বার বার এই একটা কথাই বলেছিল । নিশির কান্না দেখে নিঝুম কথা বলতে ভুলে গিয়েছিল । বোবা হয়ে গিয়েছিল । একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওর বেবীর দরকার নেই । বেবী নিবে না । যেকোনো ভাবে হোক নিশিকে বাঁচাবে । কিন্তু নীল আর অনু নিঝুমকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে বুঝিয়ে ।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


নিঝুমের কাঁধে হাত রাখলো নীল । মাথা উঠিয়ে নীলকে দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে উঠে নিঝুম । বলে,
—নীল আমার স্বপ্নকন্যা…
আর কিছু বলতে পারল না নিঝুম । ওর সব কথা আটকে গেল নিশিতেই । শুধু কথা বলে গেল অশ্রুরা । ওটি থেকে ডাক্তার বের হতেই দৌড়ে ডাক্তার কাছে গেল নিঝুম । পিছে নীল আর অনু । ডাক্তার নিঝুমকে দেখেই বলে উঠল,
—পেশেন্টের অবস্থা খুব ক্রিটিকাল । ব্লিডিং হচ্ছে প্রচুর । আর শরীরে পর্যাপ্ত ব্লাডও নেই । ব্লাড লাগবে । আমাদের ব্লাড ব্যাংকে পেশেন্টের প্রয়োজনী ব্লাড নেই । জলদি ডোনার খোঁজো নিঝুম । নাহলে পেশেন্টকে বাঁচানো যাবে না ।
নিঝুমের মাথা যেন পুরো আকাশটাই ভেঙে পড়ল । এসব কি বলছে উনি! নিঝুম ব্যালেন্স হারিয়ে পড়েই যাচ্ছিল । কিন্তু নীল ধরে ফেলে । এর মধ্যে অনু বলে,
—আপির সাথে আমার ব্লাড গ্রুপ মিল আছে । আমি দিতে পারবো ।
অনুর কথার জবাবে ডাক্তার বলল,
—দুই ব্যাগ ব্লাড লাগবে । তোমার থেকে এক ব্যাগের বেশি নেওয়া যাবে না ।
অনু ব্যস্ত হয়ে বলল,
—বাকি এক ব্যাগের ব্যবস্থা এর মধ্যে করা হবে । আগে আপনি আমার থেকেই ডোনেট করুন ।
—আচ্ছা তুমি আসো আমার সাথে ।
এর মধ্যে নীল কোনো কথা বলার সুযোগই পেল না । নিঝুমও নির্বিকার । অনু যাওয়ার আগে নীলকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । তারপর আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গটগটিয়ে চলে যায় ।

ঘন্টা দেড়েক পরে ওটির লাইট অফ হয় । একজন নার্স বেরিয়ে আসে । নার্সের কোলে একটা বাচ্চা । ছোট্ট বাচ্চার ওঁয়া ওঁয়া কান্নার শব্দে করিডোরের জানলার কাছ থেকে দৌড়ে আসে নীল । ততক্ষণে নার্সটা নিঝুমের কোলে ওর বাচ্চাটাকে দিয়েছে । নীল এসে নিঝুমের পাশে দাড়ায় । নার্সটা তখন বলে,
—আপনার মেয়ে হয়েছে । আর বাচ্চার মাও সুস্থ আছে ।
আনন্দে তখন নিঝুমের চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে । ছোট্ট ছোট্ট আঙুলগুলো ধরে চুমু খেল নিঝুম । খুশিতে নীলের চোখও অশ্রুসিক্ত । হঠাৎ নীলের মনে পড়ল অনুর কথা । টেনশনে সব গুলিয়ে ফেলেছিল । আরো যে একব্যাগ ব্লাড লাগত তার যোগার করতে না পেরে ডাক্তারকে যখন জানিয়েছিল তখন ডাক্তার বলেছে তার প্রয়োজন নেই । নীলের টনক নড়ল । নার্স চলে যাচ্ছিল তখন পেছন থেকে নীল তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে অনুর কথা । তখন নিঝুমেরও খেয়াল হয় । দু’ভাই-ই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । নার্স ডাক্তারের সাথে কথা বলতে বলে চলে যায় । হঠাৎ কোনো অজানা কারণে নীলের বুকের ভিতর ধুক করে উঠল । নীল ব্যস্ত হয়ে ছুটল ডাক্তারের চেম্বারের দিকে । নিশির অপারেশন যেই ডাক্তার করছে সে নিঝুমদের ফ্যামেলি ডাক্তার । নীল ডাক্তারের কাছে গিয়ে সোজা বলতে শুরু করল,
—আংকেল অনু….
নীলের বাকি কথা আর বলতে হলো না । কারণ তার আগেই তাকে থেমে যেতে হলো ।
—নীল একটা কথা তোমাদের না জানিয়েই করা হয়েছে । যদিও সেটা তোমার ওয়াইফেরই জন্য ।
ডাক্তারের কথা শুনে নীলের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল । বুকের ভেতরের ধুকধুকানি বাড়তে লাগল। পেছনে নিঝুমও এসেছিল নীলের সাথে । নিঝুম জিজ্ঞেস করল,
—আংকেল প্লিজ একটু ক্লিয়ার করে বলুন ।
নিঝুমের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার বললেন,
—তোমার ওয়াইফ নিশিকে বাঁচাতে দুই ব্যাগ ব্লাডের প্রয়োজন ছিল । অনুর থেকে একব্যাগ নেওয়া হয় । কিন্তু যখন তোমরা আরেক ব্যাগ জোগাড় করতে পারোনি তখন….
নীল পুরোটা শোনার ক্ষমতা হলো না । ধপ করে সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়ে । নিঝুম দৌড়ে এসে ধরে নীলকে । ডাক্তার নীলকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল,
—বি স্ট্রোং মাই বয় । আমরা তোমার ওয়াইফকে বলছিলাম । কিন্তু ও রাজি হয়নি । তোমাদের জানাতে নিষেধ করে । নিশির ব্লাড গ্রুপ এ বি নেগেটিভ । শুধু মাত্র অনুর সাথে মিলেছিল । ওর থেকে দুই ব্যাগ ব্লাড নিতে রাজি হয়নি কারণ এতে ওকে বাঁচানো রিস্ক । কিন্তু ওর পাগলামিতেই সব করতে হয়েছে । এখন ওর অবস্থা খারাপ । বাঁচবে….
আর কোনো কথা নীলের শোনা হলো না । কারণ তার আগেই ও ছুটে গেছে অনুর কাছে । অনুর কাছে এসে দেখলো অনু মৃতপ্রায় । নীল পাগলের মতো অনুর কাছে গিয়ে ওকে জাপটে ধরল ।
—অনুও… চোখ খোলো… অনু..
নীলের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে অনুর মুখের উপরে । অনু পিটপিট করে চোখ খুলল । নীলের গালে দূ্র্বল হাতটা রাখল । স্মিত হেসে বলল,
—বাবু কোথায়? ওকে একবার নিয়ে এসো প্লিজ ।
তখনই নিঝুম এসে দাড়ালো দরজায় । অনুর বলা কথাটা শুনে দ্রুত অনুর কাছে গিয়ে দাড়ালো । নিচু হয়ে বাবুকে অনুর পাশে রাখল । অনু বাবুর হাতটা ধরল শুধু । একটু হেসে বলল,
—বিভাবরী… আমার বাচ্চাটার নাম বিভাবরী রেখ ভাইয়া প্লিজ ।
নিঝুম কিছু বলতে পারল না ।
অনু নিঝুমকে উদ্দেশ্য করে আবার বলল,
—আপিকে বলো না কিছু । সারাজীবন নিজেকে দোষী করে রাখবে ও তাহলে ।
একটু থেমে আবার বলল,
—আমি অনেক লাকি নীল । শেষ নিঃশ্বাসটা প্রিয় জনদের সাথে পেয়ে আমার ভালোবাসার বুকেই ত্যাগ করবো । এই কথাটা আমি খুব কম বলেছি । কিন্তু আজ আবার বলতে ইচ্ছে করছে । আই লাভ ইউ নীল । আই লাভ ইউ…. আই…
বাকি কথা আর নলা হলো না অনুর । তার আগেই….

ডায়েরীটা বন্ধ করে ফেলল বিভাবরী । বাকিটুকু পড়ার সাহস আর ওর নেই । বুকে চেপে ধরল ডায়েরীটা । হু হু করে কাঁদতে লাগল বিভা ।
রাতের অমানিশা কেটে গিয়ে আস্তে আস্তে আলোর দিশা ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে । চারপাশে নীরবতার মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ঘুমন্ত নগরীর সবার কানে যাচ্ছে না । নীলের হাতে একটা নীল ডায়েরী । এটা অনুর দেয়া ওকে প্রথম উপহার । আজ অনু নেই আঠারো বছর । কিন্তু নীলের বুকের ক্ষতটা আজও কাঁচা । যেখান থেকে চুইয়ে পড়ছে রক্ত । আজ আবার আরেকটা কবিতা লিখল অনুকে উৎসর্গ করে,

“তুমি এসেছিলে রাত হয়ে
আমার শহরে,
চাঁদের বাঁধ ভাঙা হাসি,
উছলে পড়া জ্যোৎসনার মতো ঝড়েছিলে
দু’চোখে স্বপ্ন হয়ে ।
ঘুম ভাঙা রাতে
নীরব একাকিত্বের মাঝে
খুঁজে পেয়েছিলাম তোমায়
স্বপ্নপুরীর দেশে ।

স্বপ্নপুরী থেকে তুমি
ভালোবাসার বৃষ্টি হয়ে ঝড়লে আমার ভুবণে ।

লুকোচুরি খেলার ছলে
কেন লুকোলে আড়ালে?
আড়ালে আড়ালে থেকে আজ কেন হারালে?
কিছু দীর্ঘশ্বাস!
নির্জনে বসে কান পেতে শুনি
আমার-ই দীর্ঘশ্বাস!
আর বলি,
তোমায় আমি দেখিনি
হ্যাঁ, তোমায় দেখিনি |
কারণ তুমি এসেছিলে স্বপ্ন হয়ে,
ফিরে গেছো সেই #স্বপ্নেই….. ”
.
.
.
???সমাপ্ত???
.
(আজ আর চলবে না । সমাপ্তি টা এখানেই । প্লিজ কেউ বকবেন না । ? স্টোরিটা সুন্দর করে সাজাতে চেষ্টাও করেছি আমার সবটা দিয়ে । ? আমার পছন্দের গল্পগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম । কতটা গুছিয়ে লিখতে পেরেছি জানি না। ?
আমি আগেই ক্লু দিয়ে রেখেছিলাম । নীল স্বপ্নে অনুকে দূরে সরে যেতে দেখেছিল ।
যাই হোক যারা গল্পটার সাথে থেকেছিলেন, আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ দিব না। তাদের জন্য অবিরাম ভালোবাসা❤ রইল । কেমন হয়েছে জানাবেন ।
আশা করি সামনেও এভাবেই পাশে থাকবেন।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন
হ্যাপি রিডিং?)
.

<strong><span style=”color: #0000ff;”>এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।</span></strong>
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের <span style=”color: #000000;”>জন্য</span> থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

<span style=”color: #800000;”><strong>গল্পপোকার এবারের আয়োজন</strong></span>
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

<span style=”color: #ff0000;”>◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা</span>
<span style=”color: #ff0000;”>◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।</span>

<span style=”color: #0000ff;”>আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন:</span> <a href=”https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share” target=”_blank” rel=”noopener noreferrer”>https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share</a>

<a href=”https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share”><img class=”size-medium wp-image-26878 aligncenter” src=”https://golpopoka.com/wp-content/uploads/2020/05/20200510_052045-300×300.jpg” alt=”” width=”300″ height=”300″ /></a>

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে