মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৬

1
1811

মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৬
– আবির খান

রাত ১১.৫৫ মিনিট,

মায়ার বাসার সামনে আবির, শুভ আর রাফি। আবির ড্রোনটা ফ্লাই করে যেইনা মায়ার রুমের দিকে নেয় আর যা দেখে তা দেখে আবির বিষন্ন হয়ে যায়। মায়া ফোনটা সামনে নিয়ে অঝোর ধারায় কান্না করছে। আবির আর নিতে পারে না মায়ার এই কান্না। আবির ড্রোনটা নামিয়ে শুভর কাছে দিয়ে ওদের চলে যেতে বলে।

শুভঃ দোস্ত যাই করিস সাবধানে। আমরা ওদিকে আছি।

আবিরঃ আচ্ছা।

আবির পাইপ বেয়ে অনেক কষ্টে মায়ার ২ তালা বারান্দায় উঠে। ভাগ্য ভালো দরজাটা খুলা ছিলো। আবির আস্তে করে ভিতরে ঢুকে যায়। মায়া এতটাই কান্নাসিক্ত ছিলো যে আবিরের অস্তিত্ব পর্যন্ত টের পায়নি। আবির মায়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মায়া হঠাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে আতকে উঠে। মায়া ঘুরে তাকিয়ে দেখে আবির। আবির এখনও মায়াকে জড়িয়ে ধরে আছে৷ মায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু এতোটা না।

মায়াঃ ছাড়ো আমাকে ছাড়ো। উফফ ছাড়ো বলছি।

আবিরঃ তুমি কি চাও আমি সত্যিই তোমাকে ছেড়ে দেই??

মায়াঃ…..

আবিরঃ কি হলো বলো??

মায়াঃ আমার কাছে এসেছো কেন?? ওই মেয়ের কাছে যাও। কান্না জড়িত কণ্ঠে।

আবির মায়াকে ছেড়ে ওর রুমের দরজাটা আটকে দিয়ে ওর সামনে বসে।

মায়াঃ একি দরজা লাগালে কেন??

আবিরঃ রোমাঞ্চ করবো তাই। হা হা।

মায়াঃ কিইইই!!! চোখ বড় করে।

আবিরঃ কিছুনা। এখন বলো এভাবে কাদছিলে কেন?? আর সেদিন এভাবে চলে গেলে কেন??

মায়াঃ জানি না। তুমি আমার কাছে আসছো কেন ওই মেয়ের কাছে যাও। আমিতো দেখতে ভালো না। ওই মেয়ে ভালো। ওর কাছেই যাও। অভিমানী কণ্ঠে।

আবিরঃ উমমম….কোথায় যেন একটু পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে। মনে হচ্ছে কারো হৃদয় পুড়ে যাচ্ছে।

মায়াঃ কই কারো কিছুই পুড়ছে না। কিছুটা লজ্জা পেয়ে।

আবিরঃ যার হৃদয় পুড়ছে সে দেখি আবার লজ্জাও পাচ্ছে। বাবাহ। হাহা।

মায়া মাথা তুলে আবিরের দিকে তাকায়। মায়াবী ওই দুচোখের কোনার অশ্রুতে ভরা।

আবিরঃ তো বলো, তোমায় ছেড়ে ওই মেয়ের কাছে যাবো?? তুমি চাও আমি চলে যাই??

মায়া আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। ভালোবাসার মানুষটা যদি অন্যকারো কাছে এভাবে চলে যেতে চায়৷ তাহলে তা কি আর মানা যায়। মায়া চাপা কান্নায় ভেঙে পরে।

আবির মায়ার কাছে গিয়ে এবার ওকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের সাথে। মায়ার কান্নার ভেগ আরো বেরে যায়।

আবিরঃ হয়েছে আর কেঁদো না। এসেছিতো। এই যে তোমার কাছে। কতটা কষ্ট পেয়েছি জানো। তুমি ওভাবে ওদিন আমার কথা না শুনেই চলে আসলে কেনো??

মায়াঃ….. কাঁদছে।

আবিরঃ কথা না শুনে এভাবে নিজেকে একা করে থাকায় আমার ইগোতে লাগে। তাই আর তোমার খবর নেইনি। তুমিতো একবার ফোনও দিতে পারতে।

মায়া আবিরের বুকে মাথা রেখেই কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,

মায়াঃ তুমি মেয়ে নিয়ে হাসাহাসি করবে। আমি কষ্ট পাবো। আমি কান্না করবো। আর আমিই আবার ফোন দিবো??

আবিরঃ আচ্ছা সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এই কান্না, এই কষ্ট, এই নিজেকে একা করে ফেলার কারণটাতো বুঝলাম না। বলতো এর কারণ কি?? মজা করে।

মায়া এখন বেশ লজ্জা পাচ্ছে। আসলেই তো এর কারণটাতো একটাই। মায়া আবিরকে ভালোবেসে ফেলেছে।

মায়াঃ হুহ। বেটা বুঝেনা যে আমি ওকে ভালোবাসি। ওকে অন্য কারো কাছে দেখে যে আমি সহ্য করতে পারিনি। তাই… মনে মনে।

আবিরঃ আচ্ছা বলতে হবে না। তুমি কি জানো?? যার জন্য মানে যে মেয়েটার জন্য আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে আসলে সেই মেয়েটা কে??সেই মেয়েটা আমার কি হয়??

মায়া আবিরের বুক থেকে মাথা তুলে চিন্তিত ভাব নিয়ে জিজ্ঞাসুক ভঙ্গিতে আবিরের দিকে তাকায়।

আবিরঃ ও আমার কাজিন। মানে আমার মামাতো বোন। আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। অনেক বছর বিদেশে ছিলাম তাই আমাকে পেয়ে খুশিতে হাসাহাসি করছিলো। ও আমার আপন বোনের মতো। আর আমি ওর বড় ভাইয়ের মতো। বুঝছো বোকা মেয়ে। একবার দাড়াতে। অন্তত আমার কথাটা একবার শুনে যেতে, তাহলে কি আর এতো কিছু হতো??

মায়া কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না। বড় ভুল করেছে সে। আবিরকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু তা না করে বোকার মতো অভিমান করে বাসায় বসে ছিলো। মায়ার এখন খুব খারাপ লাগছে। মায়া আড় চোখে অপরাধীর মতো আবিরের দিকে তাকাচ্ছে।

আবিরঃ ও মায়াবতী এভাবে তাকিও না। মরে যাবো যে। হা হা।

মায়াঃ কেনো??

আবিরঃ তোমার ওই মায়াবী চোখের চাহনি আমার মনে যে প্রেমের ডাক দেয়।

মায়াঃ তা দেও না কেনো সেই ডাকের সারা। আস্তে করে বলল।

আবিরঃ কিছু বললে??

মায়াঃ সরি। ভুল হয়েছে। মাথা নিচু করে।

আবির মায়ার থুতনিতে হাত দিয়ে ওর মুখটা তুলে আবিরের দিকে করে। আর বলে,

আবিরঃ কাউকে ভালোবাসো??

মায়া আবিরের এরকম প্রশ্নে আশ্চর্য হয়ে যায়। মায়াতো আবিরকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন কি করে বলবে। মায়া আবিরের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আবির মায়ার থুতনি থেকে হাত সরিয়ে ওর দু গালে হাত রাখে। মায়া আবিরের স্পর্শে কেপে উঠে। মায়া আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আবিরও মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজনের মাঝে দূরত্ব খুবই কম। হয়তো সামান্য একটু ধাক্কা ওদের সব দূরত্ব দূর করে দিবে।

আবিরের গরম নিশ্বাস মায়ার মুখের উপর পরছে। মায়া পাগল হয়ে যাচ্ছে এই অনুভূতিতে। মায়া আবিরকে এতো কাছ থেকে কখনো দেখেনি। আবিরের চোখগুলো অনেক সুন্দর লাগছে মায়ার কাছে। ছেলেদের ঠোঁটও যে গোলাপি হয় তা আবিরকে না দেখলে মায়া জানতোই না। আবিরের ফরসা মুখটা যেন মায়াকে টানছে।

এদিকে আবিরও মায়াকে এতোটা কাছে পেয়ে ওর রূপের বাহারে হারিয়ে যাচ্ছে। কি সুন্দর তার মায়াবী চোখগুলো। বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো যেন মায়ার চোখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘন কালো চুলের মাঝে মায়ার মায়াবতী মুখটা যেন আজ অন্যরকম লাগছে। আবির পাগল হয়ে যাচ্ছে মায়ার রূপের মেলা দেখে। সবচেয়ে বেশি আবিরকে আকর্ষিত করছে মায়ার সুন্দর কারুকার্যিত ঠোঁটদ্বয়।

আবির আর মায়ার মাঝে এখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। শুধু একে অপরকে দেখছে আর অজানা অনুভূতিতে হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ আবির নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠে,

আবিরঃ আচ্ছা তোমার কিছু বলতে হবে না। কারণ তোমার ওই চোখ দুটো কিন্তু বলেদিয়েছে তুমি কাউকে অনেক বেশি ভালোবাসো। আর কাকে ভালোবাসো তাও বলেদিয়েছে।

মায়াঃ কাকে?? আস্তে করে বলল।

আবির মায়ার আরো একটু কাছে গিয়ে ওর গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। খুব টানছে ওই ঠোঁট গুলো। মায়াও কোনো এক অজানা অনুভূতিতে ওর চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে। আবির দেখে মায়ার ঠোঁটগুলো কাপছে। আর ওর চোখগুলো বন্ধ হয়ে আছে। মায়াকে এ অবস্থায় যা লাগছে না। যেন একটা পরীর মতো। আবির আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। নিজের প্রথম ভালোবাসাকে ভালোবাসার প্রথম পরম স্পর্শে ভরিয়ে দেয়। ওরা দুজন হারিয়ে যায় অন্যরকম এক অনুভূতিতে।

অনেকক্ষন পর আবির ফিল করে বিন্দু বিন্দু জল ওর ঠোঁটের কাছে এসে পরছে। আবির চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মায়ার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে। আবির ঠাস করে মায়াকে ছেড়ে দেয়। দুজনের হাপিয়ে গিয়েছে। মায়া অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। আর কাঁদছে।

আবির মায়াকে ঘুরিয়ে ওর দিকে ফিরায়। আবির দু হাত দিতে মায়ার চোখের সব অশ্রুগুলো মুছে দেয়। আর বলে,

আবিরঃ কাল ৫ মিনিট সময় হবে তোমার?? তাহলে বলতাম তুমি কাকে ভালোবাসো।

মায়া লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,

মায়াঃ হবে। বলেই মায়া লজ্জায় নিচে তাকায়।

আবিরঃ আমি অপেক্ষায় থাকবো সেখানে, যেখানে আগে অপেক্ষায় ছিলাম।

আবির হঠাৎ মায়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে বারান্দা দিয়ে বেড়িয়ে যায় মায়া কিছু বলার আগেই। মায়া ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের যাওয়ার পথের দিকে।

মায়ার আর আজ ঘুম হবে না। কারণ কাল কি হবে?? এই ভেবেই সে আজ তার ভালোবাসাসিক্ত রাতটা পাড় করবে।

কাল কি হবে??

চলবে….?

কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে