অন্যরকম সাড়া | গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০

1
1973

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০

ছোটগল্পঃ #অন্যরকম_সাড়া
লেখনীতেঃ #নাফীছাহ_ইফফাত

‘আকসা, আজ রাতে রাহীর বার্থডে পার্টি আছে। যাবি না?’

কলেজ ক্যাম্পাসে চুপচাপ বসেছিলাম। তখন আমার ক্লাসমেট রিমি আমার পাশে বসে কথাটা বললো। আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘কিসের পার্টি?’

‘বার্থডে পার্টি। জানিস, আজকে জম্পেস খাওয়া-দাওয়া হবে। আর শোননা, আরও একটা খবর আছে।’ রিমি আমার খুব কাছে এসে বললো শেষ কথাটা।

আমি একটু সরে বসে বললাম,
‘খবরটা কি?’
‘পার্টিতে না ইয়ে আনা হচ্ছে। ইস! আমি না কখনো খাইনি। আজকে প্রথম খাবো।’ একচোখ টিপ বললো রিমি।

‘ইয়ে কি?’ ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি।
‘হুইস্কি, বিয়ার ঐসব আর কি! বুঝিস না? আজকে তো খেলা হবে।’ খুশিতে চোখ চিকচিক করছে রিমির।

আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এরপর ধীর কন্ঠে বললাম,
‘ঐসব খাওয়া হারাম। জানিস না?’
‘আরে ধুর! এই আধুনিক যুগে এসে এসব হারাম-টারাম মানলে চলে? লোকে কি বলবে? খ্যাত ডাকবে সবাই।’

‘ইহকালে খ্যাত ডাকবে বলে পরকালের কথা ভুলে যাবি?’
‘ধ্যাৎ! এজন্যই তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। সবসময় সবকিছুতে পরকাল, গুনাহ এসব নিয়ে আসিস।’

আমি কিছু না বলে মুচকি হাসলাম। রিমি বলতে লাগলো,
‘তোকে এজন্যই সবাই খ্যাত ডাকে। সবসময় বোরকা-নিকাব করে বসে থাকিস। কারো সাথে কথা বলিস না। জাস্ট একটা সেকেলে মেয়ে তুই। আমি যে কেন তোর সাথে কথা বলতে আসি? ধ্যাৎ!’

‘আচ্ছা মানলাম। তোর ইচ্ছে না হলে এরপর থেকে আর কথা বলিস না আমার সাথে। তবে এখন একটা গল্প বলি। শুনবি?’
‘তোর গল্প মানে তো সেই পরকাল, দোযখ, গুনাহ এসবই।’
‘না, এসব না। অন্যরকম গল্প।’

‘বল শুনি। বলে উদ্ধার কর আমাকে।’ বিরক্তমুখে বললো রিমি।

আমি বলা শুরু করলাম,
‘এই গল্পটা আমি একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম। দুটো মেয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিল। ওরা জমজ বোন। জমজ হলেও দুজনের চালচলনে বিস্তর ফারাক। একজন টপ-জিন্স পরে তো অন্যজন বোরকা-নিকাব করে সবসময় নিজেকে ঢেকে রাখে। তো ওরা যেতে যেতে হঠাৎ জ্যামে আটকায়। পাশেই ছিল ডাস্টবিন। ডাস্টবিন দেখে প্রথম বোন, যে অনেক পর্দা করে সে ওদিকেই গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছিল। আর দ্বিতীয় বোন, যে মডার্ন সে নাক ছিটকে ড্রাইভারকে বকাবকি করতে লাগল নোংরা জায়গায় গাড়ি থামিয়েছে বলে।
প্রথম বোন মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো, ডাস্টবিনের পাশে অনেক অনেক পঁচা-বাসি খাবার পড়ে আছে। তারমধ্যে একটা প্যাকেটও ছিলো, যেটার মুখ শক্ত করে বাঁধা। কিছু কাক সেই প্যাকেট খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলো, কিন্তু কিছুতেই প্যাকেটটা খুলতে পারছিলো না। এত খাবার রেখে কাকগুলো বারবার সেই প্যাকেটের দিকেই যাচ্ছিলো। কারণ তাদের আগ্রহ জন্মেছে প্যাকেটের ভেতরের জিনিস দেখার। এতকিছুর মধ্যে প্যাকেটটাই ওদেরকে কৌতুহলী করে তুলছিলো। কিন্তু ওরা শেষমেশ প্যাকেটের মুখ খুলতে পারেনি। অবশেষে ওরা হাল ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খাবারগুলো কুড়িয়ে খেতে লাগলো।

রিমি উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো,
‘তারপর?’

‘গল্পটা আপাতত শেষ।’ আমি বললাম।
‘এটা কোনো গল্প হলো? কাক আর ডাস্টবিন, তারমধ্যে প্যাকেট।’ খুব বিরক্ত হয় রিমি।

‘গল্প শেষ হয়েছে, কথা শেষ হয়নি আমার। বাকি গল্প তো আমি শেষ করবো।’ হাসিমুখে জবাব দিলাম আমি।
‘ঠিক আছে, বল।’

‘এই গল্প থেকে আমি যেটা শিক্ষা পেয়েছি সেটা তোকে বলি। শোন আমার মতে, এই পৃথিবীটা হলো সেই ডাস্টবিন। যেখানে অনেক নোংরা জিনিস মানে নোংরা মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেই নোংরা জিনিসের মধ্যে আবার প্যাকেটটার মতো ভালো কিছু জিনিসও নিশ্চয়ই আছে। যেটা সবার আড়ালে থাকে বিধায় তার প্রতি বড়জোর আগ্রহ জন্মায়, কিন্তু সেই আড়ালের জিনিসটা ধরা বা দেখা বাকিদের সাধ্যের বাইরে। যেহেতু নোংরা মানুষের মধ্যেই আমাদেরকে বসবাস করতে হবে সেহেতু আমরা যদি সেই প্যাকেটে থাকা জিনিসগুলোর মতো নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারি তাহলে কেউ আর আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। বড়জোর আমাদের প্রতি তাদের কৌতুহল জন্মাতে পারে, এর বেশি আর কিছু তারা করতেই পারবে না।

‘মানেটা কি? প্যাকেটের মধ্যে থাকা জিনিসের সাথে আমাদের কি সম্পর্ক?’

‘সহজ ভাষায় বলি, আমরা যদি পর্দা করে চলি, নিজেকে সবসময় সব গুনাহ থেকে আড়ালে রাখি, আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলি তাহলে আমরা সবদিক দিয়েই নিরাপদ।’

‘মানে তুই বলছিস, পর্দা করলেই আমরা নিরাপদ? তাহলে পর্দা করা মেয়েগুলো ধর্ষন হয় কেন?’

‘তারও কারণ আছে। তুই দেখবি, যারা পর্দা করে চলে, সবসময় নিজেকে আড়ালে রাখে তাদের দিকে ছেলেদের নজর পড়ে খুবই কম। যারা বেপর্দা ঘোরাফেরা করে ওদের দিকেই ছেলেদের নজর বেশি থাকে। আমাকে দেখ, আমার সাথে কোনো ছেলে কথা বলতে আসে?’
‘না তো। তুই ব্যাকডেটেড বলেই আসে না।’
‘ব্যাকডেটেড বলিস আর যাই বলিস সুযোগ পেলে ওরা ঠিকই আসতো। আমি ওদেরকে সুযোগ দিই না এবং কেউ কথা বলতে আসলেও আমি এড়িয়ে যাই বলে কেউ আমার কাছে আসে না।’

‘তাহলে ধর্ষন হয় কেন সেটা তো বল?’

‘প্রথমত, কিছু উলঙ্গ মেয়ে আছে যাদের পোশাকের ঠিক নেই। বেশিরভাগ ছেলেরা এমনিতেই খারাপ মনোভাব নিয়ে থাকে এবং তারা প্রতিনিয়ত খারাপ, অশ্লীল কাজ করে বেড়ায়, অশ্লীল ভিডিও দেখে। তাই ওদের দৃষ্টিও সবসময় নোংরাই থাকে। তো ওরা যদি সরাসরি ওরকম কিছু দেখতে পায় ওরা নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবে না?’

‘তারমানে তুই মেয়েদের পোশাককে দায়ী করছিস?’ রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠে রিমি।

‘পোশাককে দায়ী করছি না তো। ছেলেমেয়ে উভয়েরই দোষ আছে এতে। ছেলেদের উচিত তাদের দৃষ্টি সংযত করা। আর মেয়েদের উচিত নিজেকে রাস্তায় খোলামেলা উপস্থাপন না করে পর্দা করে চলা।’

‘ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা নাহয় পর্দা করবে। অন্য ধর্মের লোকেরা কি করবে তাহলে? ওরাও কি আমাদের মতো পর্দা করবে?’

‘কোনো ধর্মে বলা নেই যে কেউ রাস্তায় অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করতে পারবে বা নিজের শরীর দেখিয়ে বেড়াতে পারবে।’

রিমি চট করে রেগে গেল। ও দাঁড়িয়ে বললো, ‘এ্যাই, তুই না হুজুরনী? এত অশ্লীল ভাষা অকপটে বলছিস কি করে?’

‘তোকে বোঝানোর জন্য বলছি। তাছাড়া আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। পুরোটা শুনে মন্তব্য করবি, তার আগে না।’

রিমি চুপচাপ আমার পাশে বসলো। আমি আবার বলতে লাগলাম,
‘দ্বিতীয়ত, যে মেয়েটা পর্দা করেছে সে হয়তো পুরোপুরি পর্দা করেনি এবং ছেলেটাও অবশ্যই নিজের লোভ সামলাতে পারেনি। ইসলামে বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নেই। ইসলাম একটি সুশৃঙ্খল জীবন ব্যবস্থা। তাই একজন পরিপূর্ণ পর্দা করা নারী কখনো ধর্ষিত হয় না। কক্ষনো না।’

‘বললেই হলো?’
‘তুই নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখিস। যারা পূর্ণাঙ্গ পর্দা করে এবং সম্পূর্ণ আল্লাহর রাস্তায় চলে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে সে কখনো ধর্ষিত হতে পারে না। স্বয়ং আল্লাহ তাকে সবকিছু থেকে হেফাযত করে।’

‘আচ্ছা বইন তুই থাক তোর পর্দা, ওড়না, আল্লাহ নিয়ে। আমার অনেক কাজ আছে। আমি গেলাম।’

আমি আর কিছু না বলে রিমিকে যেতে দিলাম। সে মুহুর্তেই আমার সামনে থেকে বিরক্ত মুখে চলে গেল।

পরদিন রিমি নিজেই আবার আমার বাসায় আসলো। আমি ওকে বসতে বলে বুয়াকে বললাম, নাস্তা দিতে।

রিমি এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেছে। বুয়া তখনো নাস্তা নিয়ে আসেনি। আমি আবার ডেকে বললাম নাস্তা দিতে। বুয়ার জবাব, সে আপাতত অন্যকাজে ব্যস্ত। এখন নাস্তা দিতে পারবে না।”

এটা শুনে রিমি বললো,
‘ভারী বেয়াদব তো তোদের বুয়াটা। মালিকের কথা তো শোনেই না বরং মুখের ওপর কথা বলে। বড্ড ফাঁকিবাজও মনে হচ্ছে।’

আমি হেসে বললাম, ‘আমাদের মতোই।’
‘মানে? আমরা কি চাকর? আমাদের মতো কি বলছিস?’ রিমি যেন আকাশ থেকে পড়লো।

‘আমরা তো চাকরই। আল্লাহর গোলাম, মানে চাকর। আমরা কি আল্লাহর বিধানগুলো পালন করি? আল্লাহর বলে দেয়া কাজগুলো করি?’

রিমি চুপ করে থাকলো। আমি বললাম,
‘আল্লাহ আমাদেরকে এই পৃথিবীতে গোলাম হিসেবে পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর আমরা কি করছি? কাজে ফাঁকি দিচ্ছি না? অন্যকাজের নাম করে ইবাদতে ফাঁকি দিচ্ছি না? নামাজের সময় ক্লাস, কোচিংয়ের নাম করে নামাজ মিস দিচ্ছি না? আমরা নামাজ পড়ার সময় পাইনা অথচ রাতভর পার্টি করার সময় পাই, চ্যাটিং, ফোন-কলস, গেইমস খেলার সময় পাই। যে রাতে স্বয়ং আল্লাহ তায়া’লা প্রথম আসমানে নেমে আসেন আমাদের আর্জি পূরণ করবেন বলে সেই রাতে আমরা মদ, গাঁজা খেয়ে পার্টি করতে ব্যস্ত কিংবা দুনিয়ার রং-তামাশায় ব্যস্ত। আমরা ফাঁকি দিচ্ছি না আমাদের মালিককে?’

রিমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। আমি আবার বলতে লাগলাম,
‘আমরা বারবার ভুলে যাই এই দুনিয়াটা আমাদের স্থায়ী ঠিকানা না। আমাদের স্থায়ী ঠিকানা তো আখিরাতে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদতই সেদিন আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে পারবে। সেদিন ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গোপনে-প্রকাশ্যে কৃত সবধরনের কাজের হিসাবই নেয়া হবে। সেদিন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

রিমি হঠাৎ আমার হাত ধরে বললো,
‘দোস্ত, আমার এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যিই অনেক ভুল করে ফেলেছি। এবার কি করবো আমি?’

‘আমাদের কাজের লোকেরা সামান্য ভুল করলে আমরা তাদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা বোধ করি না। অথচ আমরা কতশত ভুল করি, কতবার আল্লাহর নিষেধ করা পথে চলি। এতকিছুর পরও কি আমাদের মালিক আমাদেরকে কোনো শাস্তি দিয়েছেন? তিনি তৎক্ষণাৎ কোনো শাস্তি দেন না বরং সুযোগ দেন। আল্লাহ সারাক্ষন আমাদেরকে ক্ষমা করার অপেক্ষায় থাকেন। বান্দা যদি তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে তবে তিনি ক্ষমা করে দেন। তাঁর ক্ষমা তুলনাবিহীন। তিনি বলেন,

“এবং আমি অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।” ( সূরা তা-হা, আয়াত-৮২। )

রিমি অত্যন্ত নরম সুরে বললো,
‘আমি ক্ষমা চাইলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন তো আল্লাহ?’
‘নিশ্চয়ই দিবে। বললাম না আল্লাহর ক্ষমার কোনো তুলনা হয় না।’

‘দোস্ত, তোকে এতোদিন আমি সত্যিই অনেক ভুল বুঝেছি। আর সবসময় ভুল পথে চলেছি। আমি কখনো নামাজ পড়ি না, ইবাদতও করি না। সবসময় হেলায় ফেলায় নামাজের সময়টা পার করে দিতাম।’

‘ইহকালে মানুষের নিজের কল্যাণের জন্যও ইবাদত করা প্রয়োজন। ইবাদত করলে শুধু সওয়াবই পাওয়া যায় না। জীবনটাও আনন্দে ভরে থাকে।’ মুচকি হেসে জবাব দিলাম আমি।

‘আজকে আমার সত্যিই নিজেকে ডাস্টবিনের সেই ছড়ানো-ছিটানো আবর্জনা মনে হচ্ছে রে। আর তুই সেই শক্ত করে বাঁধা প্যাকেটটা, যাকে শত চেষ্টা করেও কেউ ছুঁতে পারে না।’

সেদিনের পর থেকে রিমি পুরোপুরি বদলে গেল। চ্যাটিং-ড্যাটিং, পার্টি ছেড়ে মশগুল হল আল্লাহর ইবাদতে। এর মাঝে একদিন আমি রিমিকে ফোন দিলাম। তখনো এশার আযান হতে মিনিটকয়েক বাকি। আমি ফোন দিতেই ও সালাম দিয়ে কুশলাদি জানতে চাইলো। খানিকক্ষণ কথা বলার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম,
‘কি করছিস তুই?’
‘এই তো, নাস্তা বানাচ্ছি।’

‘আচ্ছা, বানানো শেষ নাকি সবে শুরু করেছিস?’
‘না, প্রায় শেষ। আর কয়েকটা বাকি আছে।’

ওর কথা শেষ হতেই আযান হলো। ও বললো,
‘এখন রাখি, পরে কথা হবে। আযান হচ্ছে তো। নামাজ পড়ে আসি।’
‘নাস্তা বানানো শেষ নাকি?’
‘আর দুটো বাকি। ওগুলো নামাজ শেষে বানাবো।’
‘দুটোই তো। বানিয়ে যাবি নাহয়।’

রিমি আমাকে কুরআনের আয়াত শোনায়,
‘সেসব নামাযী ধ্বংস যারা তাদের নামাযে অমনোযোগী।’ (সূরা মাউন; আয়াত: ৪-৫)

‘নামাজ আগে, তুই বলেছিলি কিন্তু একদিন।’ মুচকি হেসে বলে রিমি।

আমিও হেসে ফোন নামিয়ে রাখি। এর ঘন্টাখানেক পর রিমির ফোন থেকে আবার ফোন আসে। আমি রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে রিমির মায়ের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমি চিন্তিত গলায় বললাম,
‘আন্টি, কিছু হয়েছে? রিমি কোথায়?’

এরপর আন্টি যেটা বললো তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। রিমি সিজদাহরত অবস্থায় মারা গেছে।

পরদিন রিমির দাফনকার্য সম্পন্ন হলো। এরপর বাসায় ফিরে আমি ভাবতে লাগলাম গতকালের ঘটনা। রিমি চাইলেই বাকি দুটো নাস্তা বানিয়ে তারপর নামাযে যেতে পারতো। কিন্তু ও আযানের সাথে সাথে নামাজে গিয়েছিল। ওর মৃত্যু এভাবে আল্লাহর কাছাকাছি গিয়েই হলো? আল্লাহর ডাকে সাথে সাথে সাড়া দিয়েছিলো বলেই হয়তো ওর মৃত্যুটা আল্লাহর সাথে কথোপকথনের সময়েই হলো। আল্লাহকে ও যতটা ভালোবেসেছে তারচেয়েও বহুগুণ বেশি ভালোবেসে আল্লাহ ওকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। আমার মনে হতে লাগলো আমার চারপাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে,

‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠা করেছে এবং যাকাত দিয়েছে তাদের জন্য পুরস্কার তাদের প্রভুর কাছে।’ (সূরা বাকারাহ; আয়াত নং-২৭৭)

~ সমাপ্ত

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে