অতন্দ্রিলার_রোদ (পর্ব : ৮ – প্রকৃতির প্রতিনিধি)

3
1407

#অতন্দ্রিলার_রোদ
পর্ব – ৮ : (প্রকৃতির প্রতিনিধি)

লেখা : শঙ্খিনী

“শুনুন!”, অন্যরকম গলায় অতন্দ্রিলা বলল।
রোদ বলল, “হুঁ, বলো।”
“আমাকে বলা হয়েছে এ বাড়িতে আমার কিছু প্রয়োজন হলে আপনাকে জানাতে। আমি কি জানাতে পারি?”
“অবশ্যই পারো।”
“আমার একটা নকশিকাঁথা প্রয়োজন?”
রোদ ভ্রু সামান্য কুঁচকে বলল, “কি প্রয়োজন?”
“নকশিকাঁথা! নকশিকাঁথার সূক্ষ্ম সেলাইয়ের স্পর্শ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার ঘুম আসেনা। ছোটবেলায় অবশ্য দাদি আমার জন্যে নকশিকাঁথা সেলাই করতেন। কিন্তু এখন তার বয়স হয়েছে, চোখে ভালো দেখেন না। তাই সেলাইও করতে পারেন না। সেজন্যে এখন বাইরে থেকে কিনতে হয়।
তো! জোগাড় করতে পারবেন তো?”

রোদ মুগ্ধ হয়ে অতন্দ্রিলার কথাগুলো শুনছিল। বেশ সুন্দর করেই একটা বিষয় বর্ণনা করতে পারে মেয়েটা। ইরা এটা পারতো না। কথা বলার মাঝে বারবার থেমে যেত সে।

রোদ বলল, “অবশ্যই পারবো অত।”

অতন্দ্রিলা বেশ অবাক হলো। লোকটা এত সহজে তাকে অত ডাকল কি করে!

অতন্দ্রিলা কঠিন গলায় বলল, “শুনুন, আপনি আমাকে অত ডাকবেন না। আমার পুরো নাম অতন্দ্রিলা। হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ আছেন যাদের আমি পছন্দ করি। শুধু তারাই পারবে আমাকে অত ডাকতে। কখনো সুযোগ হলে খেয়াল করে দেখবেন, আমার নিজের বড় বোনও আমাকে অত ডাকে না। কারন আমি তাকে পছন্দ করি না।”
“তো কি বলে ডাকে?”
“আপা চেষ্টা করে আমাকে কিছু না ডাকতে। বেশির ভাগ সময় তিনি আমাকে ‘এই শোন’ বলে সম্বোধন করে।”
রোদ আহত গলায় বলল, “ঠিকাছে। তোমার নকশিকাঁথার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”
“অনেক ধন্যবাদ।”

আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। রোদের ইচ্ছা ছিল সারাটাদিন ঘরে বসেই কাটিয়ে দেবে। কিন্তু যেই ইচ্ছা ভঙ্গ করে রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল।
বেশ রাগ হচ্ছে তার। রাগ হওয়ার কারনটা অতন্দ্রিলা।
এত রূপবতী মেয়ে, কি মিষ্টি গলার স্বর, সে কি করে বলে, “আমাকে অত ডাকবেন না। আমার পছন্দের মানুষেরাই আমাকে অত ডাকতে পারে।” সে কি ভেবেছে, অত ডাকতে পছন্দের মানুষ হতে হয়।
তাকে অত ডাকার অনেকগুলো কারণ আছে।

অতন্দ্রিলা নামটা বেশ বড়, উচ্চারণটাও কঠিন। তাই রোদ তাকে ‘অত’ বলে সম্বোধন করেছে। এটা একটা কারণ হতে পারে।
আবার অতন্দ্রিলা এখন তার স্ত্রী। প্রায় এক সপ্তাহ হলো রোদ তাকে বিয়ে করেছে। তাই স্বামী হিসেবে ডাকনাম ধরে ডাকতেই পারে রোদ।

রোদ বাড়ি থেকে যাওয়ার পর পরই ফিরোজা অতন্দ্রিলার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেন।
চিঠিটা বেশ পুরনো। চার বছর আগে লেখা হয়েছে। চিঠির প্রেরক ইরা।

অতন্দ্রিলা বেশ আন্দাজ করতে পারছে চিঠিতে কি লেখা। শাশুড়ির সামনে ইরার চিঠি পড়ার কোনো অর্থ নেই। তাই অতন্দ্রিলা সেটা নিয়ে বারান্দায় এল। চিঠিটা এমন –

প্রিয়তমেষু,
তুমি অতি হৃদয়বতী একটি মেয়ে। হৃদয়বতী বলছি কারন, তুমি রোদের অতীত জানার পরেও তাকে বিয়ে করেছ। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি ইরাবতী। বর্তমানে বসে আছি হসপিটালের বেডে। আমার কাছে বেশি সময় নেই আমি বুঝতে পারছি। আর কয়েকদিন পর আমার অপারেশন হবে। তাই আগেভাগেই তোমাকে এই চিঠি লিখে রাখছি।
আমি জানিনা আজ থেকে কত দিন, কত মাস কিংবা কত বছর পর তুমি আমার এই চিঠি পড়ছ। আমি এও জানিনা, তুমি কোন পরিস্থিতিতে রোদকে বিয়ে করে। নিজের ইচ্ছায় নাকি চাপের মুখে পরে। যে সময়ে, যে পরিস্থিতিই থাকো না কেন তোমাকে কয়েকটা কথা বলা দরকার। সেগুলোই বলছি।
আমি চলে যাওয়ার পর হয়তো রোদ আমাকে কখনোই ভুলতে পারবে না। সারাটা জীবন হয়তো আমার চলে যাওয়ার কষ্টটা বয়ে বেড়াবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস তুমি পারবে ওকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে। দয়া করে ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। দেখবে একদিন ও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। তুমিই একদিন হবে ওর পৃথিবী। শুধু একটু সবুর করো।
আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, একদিন তোমাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে। তোমাদের মেয়ের নাম দিলাম ‘রাত্রি’। নামটা পছন্দ না হলে রাখার দরকার নেই। কিন্তু ও সবসময় আমার কাছে রাত্রি হয়ে থাকবে, ইরার রাত্রি।
আরও একটা কথা, জীবনে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নগুলো পূরণ না করেই মরে যেতে হচ্ছে। রোদ আমার সেই স্বপ্নগুলোও পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু তুমি যদি পারো, তাহলে দয়া করে আমার স্বপ্নগুলো পূরণ কোরো। কি সেই স্বপ্নগুলো , তা তোমাকে এ বাড়ির প্রকৃতিই বলে দেবে। আমি আর না-ই বললাম।
ভালো থেকো, রোদকে ভালো রেখো। তাহলে আমিও ভালো থাকবো।
ইতি,
ইরাবতী।

পড়া শেষ করে অতন্দ্রিলা চিঠিটা ভাঁজ করে যত্নসহকারে আলমারিতে তুলে রাখল।

ইরার ছবিটার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল, “তুমি যদি এখন এখানে থাকতে, তাহলে নিশ্চই আমাকে ধমক দিয়ে বলতে তোমাকে ‘তুমি’ করে ডাকতে। তাই আমি এখন থেকে তোমাকে তুমি করেই ডাকবো। তোমার কথার মধ্যে একটা অস্পষ্টতা ছিল। তোমার স্বপ্নের কথা এ বাড়ির প্রকৃতি আমাকে বলবে কি করে? প্রকৃতির কান আছে না মুখ? যাইহোক ব্যাপার না, আমি ঠিকই খুঁজে বের করবো তোমার স্বপ্নগুলো। তুমি চিন্তা কোরো না বুবু।”

ইরার হাতের লেখা গোটা গোটা, লেখার ধরনও সুন্দর। এই মানুষটার নির্ঘাত ডাইরী লেখার অভ্যাস ছিল। আর সেই ডায়রীতেই হয়তো ইরা তার স্বপ্নগুলো লিপিবদ্ধ করে রেখেছে।
অতন্দ্রিলা জরিনাকে খরব দিল। জরিনা আজকাল আনন্দেই আছে। এ বাড়িতে আসার পর আফার জন্যে কফি বানানো ছাড়া তেমন কোনো কাজই করতে হয়নি তাকে।

জরিনা ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে বলল, “আফা, ডাকছেন আমারে?”
“হুঁ।‌ একটা কাজ করবো, তোমার সাহায্য লাগবে।”
“সাহাইয্য আবার কি আফা? কামে আপনের হাতই দেওন লাগবো না, সব আমার ওপরে ছাইরা দেন!”
“সব কাজ তোমার ওপরে ছেড়ে দিতে পারতাম যদি তুমি শিক্ষিত হতে। আমরা এখন এই বুকসেলফের সমস্ত বইগুলো নামাবো। একটা ডায়রী খুঁজতে হবে।”
“কি কন আফা! এতডি বই নামাইবেন কেমনে? ডায়রী লাগবো, খালাম্মারে কইলেই তো হয়!”
“ওনাকে বলতে হবে না। চলো তো জরিনা কাজ শুরু করি। রোদ সাহেব চলে এলে তো আর পারবো না।”
“আফা! এত আয়োজন কইরা ভাইজান আপনেরে বিয়া করছে, আফনে তারে সাহেব ডাকেন কেন? আফনে কি তার অপিসে কাম নিসেন?”
অতন্দ্রিলা বিরক্ত গলায় বলল,“ইচ্ছা হয়েছে, তাই ডাকি। তুমি চাইলে তুমিও ডাকতে পারো। ডাকবে?”

জরিনা এবং অতন্দ্রিলার কাজ খুব একটা কঠিন হলো না। প্রথম তাকের বইগুলো সরাতেই পেছনের দিকে পেয়ে গেল একটা ডাইরি। ডাইরির কভারে লেখা ‘২০১৬’।

অতন্দ্রিলা ডাইরিটা খুলল। বেশির ভাগ মানুষ ডাইরি লেখা শুরু করলেও কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেয়। ইরাও তার ব্যতিক্রম নয়।
ডাইরির প্রথম কয়েকটা পাতা ছাড়া সম্পূর্ণ ডায়রি ফাঁকা।
ইরার লেখার ধরন একটু ভিন্ন। প্রতিটা পাতায় সে দিনে কি কি করেছে তা তিন-চার লাইনে লেখা।

ডায়রির প্রথম পাতা এরকম –

৩।২।১৬
আজ ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছি।
আবহাওয়া ভালো ছিল।
রান্না করেছি কাঁচা টমেটো দিয়ে কৈ মাছ।
ঠিক করেছি বাগানে গোলাপ ফুলের গাছ লাগাবো।
রোদ বাড়িতে তাড়াতাড়ি ফিরেছিল।

প্রথম পাতা থেকেই বোঝা যায় এই মানুষটার জীবনের মুখ্য বিষয়গুলো ছিল সময়মতো ঘুম থেকে উঠা, রান্না করা এবং রোদ। এছাড়াও তিনি হয়তো প্রচুর স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন।

অতন্দ্রিলা পাতা উল্টায়, পরের পাতাটা এমন –

৪।২।১৬
রাতে ভাঙা ভাঙা স্বপ্ন দেখেছি।
বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল।
ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি।
সারাদিন আকাশে মেঘ ছিল, রাতের দিকে বৃষ্টি হয়।
রোদ আজ আবারো সিগারেট খেয়েছে, ওর এই ব্যাপারটা এখনো ঠিক করতে পারলাম না।
রান্না করিনি, বিরক্ত লাগছিল।

অতন্দ্রিলার ধারনা রোদের সিগারেট খাওয়াটা ইরার বিরক্তির কারণ ছিল না। বিরক্তির কারন ছিল ঠিকমতো ঘুম না হওয়া।

পরের পাতা –

আজকে সকাল জুড়ে একটা প্ল্যান করলাম। প্ল্যানটা হলো, একটা স্কুল করবো। শান্তিনিকতনের মতো আবাসিক স্কুল। সেখানে থাকবে না কোনো বাঁধা-ধরা সিলেবাস, না থাকবে পড়ার চাপ। বাচ্চারা খেলতে খেলতে পড়বে, খেলতে খেলতে শিখবে। পরীক্ষায় বাচ্চারা যদি নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে একটি রাজারানীর গল্পের মাধ্যমেও ব্যাখ্যা করে তাও তারা নম্বর পাবে। পরীক্ষায় বাচ্চাদের উপস্থাপনের ভঙ্গি মুখ্য ব্যাপার নয়। বাচ্চারা আসলেই পড়ার বিষয় বুঝতে পরলো কিনা, সেটা মুখ্য বিষয়। আমার স্কুলের নাম হবে ‘ইরাবতীর ইশকুল’। নামটা সুন্দর না, কিন্তু আমার পছন্দ হয়েছে।

অদ্ভুত তো! এই পাতায় কোনো তারিখ নেই, দিনে কি কি করলো তাও নেই। আছে শুধু একটি সুন্দর পরিকল্পনার কথা।

রোদ বাড়িতে ফিরল বেলা চারটায়।
হাসিখুশি ভঙ্গিতে অতন্দ্রিলার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “এই নাও তোমার নকশিকাঁথা।”
অতন্দ্রিলা হাত বাড়িয়ে বলল, “ধন্যবাদ আপনাকে। তখন এমন হুট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন কেন? আমার কথায় রাগ করে?”
“তেমন কিছু না।”
“কেউ আমার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে আমি কিন্তু বুঝতে পারি। এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে।”
“কেমন অভিজ্ঞতা?”
“বাবা আমার ওপর রাগ করে মাসে দুই থেকে তিনবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার ফিরে আসতেন। এখন আমি নেই, মা আছে। তাই বাবা নির্ঘাত মায়ের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে বেরিয়ে যাবেন।”
“১×২×৩=৬ আবার ১+২+৩=৬। গুণফল এবং যোগফল এক মানেই যে দুটো এক জিনিস তা কিন্তু নয়, কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে। তেমনি তোমার বাবার বেরিয়ে যাওয়ার এবং আমার বেরিয়ে যাওয়ার কারনও কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।”
“বাহ্! অংকের মাধ্যমে কঠিন ব্যাপারকে সহজ করে বলাটা ভালো লাগলো তো। আচ্ছা যাইহোক, এখন আপনি খেতে আসুন। প্রচণ্ড ক্ষুদা পেয়েছে, আপনার জন্যে না খেয়ে বসে আছি।”
“কেন? তুমি খেয়ে নিলেই পারতে।”
“আমি খাইনি তার কারন আছে। আপনি আমার ওপর রাগ করে বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমার নিশ্চই উচিৎ হবে না এই পরিস্থিতিতে আপনাকে রেখে খেয়ে ফেলা। আমার উচিৎ হবে আপনার রাগ ভাঙিয়ে আপনাকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসা। এবং আমি তাই করলাম।”

অতন্দ্রিলার রান্না ভালো, বেশ ভালো। তবে ইরার মত ভালো নয়। কিন্তু ভালোমত শিখতে পারলে ইরাকেও ছড়িয়ে যেতে পারে সে।
আজ রান্না করেছে সরিষা বাটা দিয়ে মুরগি। রেসিপিটা অতন্দ্রিলার জানা ছিল না। তাই রান্নার সময় অসংখ্য বার ফোন করতে হয় শায়লাকে।
শায়লা এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেন, “মেয়েরা বিয়ের আগে মায়ের কাছ থেকে রান্না শুনে শুনে খাতায় লিখে রাখে। অবশ্য তোর সেটা করার সময় কোথায়? রেসিপিগুলো লিখে রাখলে আলতুফালতু প্রতিবেদন লিখবে কে?”
অতন্দ্রিলা শীতল গলায় বলে, “বিয়ের আগে মায়ের আছ থেকে শুনে শুনে খাতায় রান্না লিখে রাখে সেইসব মেয়েরা, যারা সর্বক্ষণ মাকে কাছে পায়।”

রোদ নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছে। অতন্দ্রিলার ইচ্ছা করছে তার সঙ্গে গল্প করতে। তাও আবার গাণিতিক গল্প, কিন্তু গল্প করার মত ঘনিষ্ঠতা বোধ হয় তাদের মধ্যে নেই।

রোদদের বাড়ির সামনের বাগানটা প্রকাণ্ড। বাগান বললে ভুল হবে, সেটা আসলে বাজার। বিশাল বাগানের একদিকে শাক সবজির গাছ, অন্যদিকে চৌবাচ্চায় চাষিত মাছ। অতন্দ্রিলার কথা, “বাগান হলো ঘুরে বেড়াবার জায়গা, মন খারাপ থাকলে একা বসে কিছুটা সময় কাটাবার জায়গা। এখানে বাজার খুলে রাখবার কোনো অর্থ হয় না।”
তিন জন মালি এবং দুজন মালিনী দল বেঁধে সকাল সকাল চলে আসে গাছগুলোর পরিচর্যা করতে।

আজ ভোরে অতন্দ্রিলা একজন মালিনীকে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়ে গোলাপের চারা কিনতে।
লাল, হলুদ, সাদা এবং কালো গোলাপ মিলিয়ে ২৭টি চারা কেনা হয়েছে, টব কেনা হয়েছে, জৈব সার কেনা হয়েছে।

চারাগুলো রোপন করার সময় একজন মালিনী এল অতন্দ্রিলাকে সাহায্য করতে।
মালিনী চিন্তিত গলায় বলল, “ম্যাডাম আপনি এগুলো লাগাতে পারবেন না। আমাকে দিন আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।”
অতন্দ্রিলা বলল, “অনেক ধন্যবাদ। আমি একাই পারবো।”
“কিন্তু ম্যাডাম এতগুলো চারা লাগাতে আপনার অনেক কষ্ট হবে।”
“ম্যাডাম ম্যাডাম করছো কেন? আমি তোমাকে চাকরি দেইনি, আবার তোমার চাকরি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই। কাজেই আমাকে আপা ডাকলেই চলবে। আর এই চারাগুলো রোপন করার দায়িত্ব একজন আমাকে দিয়েছেন, শুধুমাত্র আমাকে। তাই কাজটা আমাকেই করতে দাও।”

মালিনী হতাশ মুখে চলে গেল।

অতন্দ্রিলা সাবধানে চারাগুলো রোপন করছে।
টবে প্রথমে কিছুটা গাছের মাটি দিতে হয়, এরপর সেই গাছের মাটির ওপর কিছুটা সার মাটি।
২৭ টা টবের জন্যে এভাবে মাটি প্রস্তুত করা ধৈর্য্যের ব্যাপার, অতন্দ্রিলা যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল মানুষ।

রোদ অতন্দ্রিলার পাশে এসে দাড়িয়েছে। অতন্দ্রিলা তাকে খেয়াল করেনি। তাই অতন্দ্রিলার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে রোদ কাশল।
কাশির শব্দ শুনে অতন্দ্রিলা তার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার কাজ শুরু করল।

অতন্দ্রিলা ক্ষীণ গলায় বলল, “আচ্ছা আপনি কেমন মানুষ? আপনার স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল এই বাগানে গোলাপ ফুলের গাছ লাগানোর। কিন্তু সেটা তিনি করে যেতে পারেননি। তাই বলে আপনিও এতগুলো বছরে গোলাপ গাছ লাগাননি কেন?”
রোদ আহত গলায় বলল, “আমি জানি না ইরার এই অসম্পূর্ণ ইচ্ছা সম্পূর্ণ করে তুমি কি প্রমাণ করতে চাইছ। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রেখো, তুমি কিন্তু কখনোই ওর জায়গাটা নিতে পারবে না।”
“ইরাবতীর অসম্পূর্ণ ইচ্ছাগুলো আমার সম্পূর্ণ করার উদেশ্য আপনাকে খুশি করা বা তার জায়গা দখল করা, এই চিন্তাচেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারন আমি ইরাবতীর অন্যান্য সকল স্বপ্নগুলোও পূরণ করবো।
“কেন জানতে পারি?”
“আমি প্রকৃতির প্রতিনিধি। আমাকে প্রকৃতি পাঠিয়েছে ইরাবতীর ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে।”

(চলবে)

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে