মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)

3
2086

মাফিয়ার_ভালোবাসা পর্বঃ ০৭(শেষ পর্ব)
– আবির খান

মায়ার আর আজ ঘুম হবে না। কারণ কাল কি হবে?? এই ভেবেই সে আজ তার ভালোবাসাসিক্ত রাতটা পাড় করবে।

কাল কি হবে??

শুভ আর রাফি গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

আবিরঃ বন্ধুরা কাজ হয়েছে। মায়া যে আমাকে ভালোবাসে রে। অনেক ভালোবাসে। এই মাফিয়াকেও আজ কেউ অনেক ভালোবাসে।

রাফিঃ কি বলিস দোস্ত!!! সত্যিই???

আবিরঃ হ্যাঁ দোস্ত। আমি বুঝে গেছি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।

রাফিঃ ওকে বলেছিস তুইও যে ওকে ভালোবাসিস??

আবিরঃ তার জন্যই কাল তোদের হেল্প লাগবে। কিরে শুভ করবি না।

শুভ কি যেন ভাবছে।

আবিরঃ কিরে বল। শুভকে ইঙ্গিত করে।

শুভঃ হ্যাঁ হ্যাঁ করবো। বল কি কি করতে হবে।

রাফিঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।

আবিরঃ ওইযে যে পার্কে আমি ওকে প্রথম দেখেছি না সেই পার্কে কাল বিকেল ৪ টায় ওকে প্রপোজ করবো। তোরা আমাকে সাহায্য করবি।

রাফিঃ আচ্ছা দোস্ত।

শুভঃ তাহলে বল কিভাবে কি করতে হবে??

আবিরঃ আগে বাসায় চল তার পর সব বলছি।

আবির, রাফি আর শুভ গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছে।

এদিকে,

মায়া বিছানায় শুয়ে আছে। আজ ওর খুব ভালো লাগছে। অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। মায়া একটু পর পর ওর ঠোঁট স্পর্শ করছে আর লজ্জা পাচ্ছে। মায়ার খুব উত্তেজনা ফিল হচ্ছে কাল কি হবে ভেবে। কারণ মায়া জানে কাল হয়তো আবির ওকে প্রপোজ করবে। কিভাবে কি করবে ভেবেই মায়ার মনে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। মায়ার চোখে কোনো ঘুম নেই। শুধু কালকের অপেক্ষায়।

আবিরের বাসায়,

আবিরঃ কি সব বুঝেছিস তো?? এভাবে সব করবি।

শুভঃ হুম বুঝছি দোস্ত। কালকে সত্যিই তোর জন্য একটা বড় দিন। দেখিস কাল তুই অনেক অবাক হবি। আমি এমন ভাবে সাজাবো যে মায়া ভাবিও অবাক হয়ে যাবে।

আবিরঃ কি বলিস দোস্ত!!সত্যিই?? আচ্ছা তোর যেভাবে ভালো লাগে সেভাবেই সাজাস। যাতে ওর পছন্দ হয়।

শুভঃ আচ্ছা।

রাফিঃ দোস্ত আমিও সাহায্য করবো।

আবিরঃ আচ্ছা করিস। তাহলে আমি যাই তোরা সব করিস৷ আর থ্যাংকস দোস্ত তোদের। তোরা না থাকলে আমি কিছুই না সত্যিই।

রাফিঃ ধুর বেটা। তুই আছিস বলেই আমরা আছি। কি বলিস শুভ??

শুভঃ হ্যাঁ দোস্ত। আবির না থাকলে আমরা কিছুই না। দোয়া করি যেন ওর কিছু না হয় কখনো।

আবিরঃ হুম সেই দোয়াই করিস। মরতে হলে তোদের সাথেই মরতে চাই। আর শোন কাল আমার যে অনাথাশ্রম আছে ওটায় ১০ লাখ টাকা পাঠায় দিস। ওরা আমার খুশিতে খুশি হোক।

শুভঃ আচ্ছা।

এরপর আবির, রাফি আর শুভ যে যার রুমে চলে যায়।

আবির ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু চোখে ঘুম নেই। মায়ার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু এখন কথা বললে মায়া বুঝে যাবে। তাই আবির চেয়েও ফোন দিতে পারছে না। মায়ার সেই মিষ্টি পরশ গুলো আবিরের খুব মনে পরছে। আর এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। আবির এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে যায়।

– কাজটা যেন ঠিক মতো হয়। ভুল হলে তোদের একটাকেও কিন্তু জিন্দা রাখবো না।

– জ্বি স্যার। হয়ে যাবে।

পরদিন বিকালে,

আবিরঃ দোস্ত তাহলে আমি যাই। দোয়া করিস যেন ও রাজি হয়।

রাফিঃ আরে অবশ্যই হবে। আর তুকে যা আজ লাহছে না। একদম ডার্ক প্রিন্স।

আবিরঃ ডার্ক প্রিন্স না ডার্ক মাফিয়া। হা হা।

রাফিঃ আসলেই।

আবিরঃ আচ্ছা শুভ কইরে??ওকে যে দেখছি না।

রাফিঃ আছে। তোর প্রপোজের জায়গা সাজাচ্ছে হয়তো।

আবিরঃ আচ্ছা তাহলে আমি যাই।

রাফিঃ আমাকে নিবি না??

আবিরঃ তুই গিয়ে কি করবি। আমরা না হয় একটু একা থাকলাম। শুভকেও না করছি থাকতে। আর পুরা পার্কটাই তো আমার আজ।

রাফিঃ আচ্ছা যাহ।

আবিরঃ আরে শুভ এসেছিস?? কাজ শেষ??

শুভঃ হ্যাঁ দোস্ত কাজ সব শেষ। এখন তুই তাড়াতাড়ি যাহ। আর ভাবিকে অবাক করে দে।

আবিরঃ থ্যাংকস দোস্ত।

আবির চলে গেলো।

শুভঃ দোস্ত আমার সাথে চল, তোর সাথে একটু কথা আছে।

রাফিঃ কি কথা বল।

শুভঃ আরে আগে বাইরে চল। তোকে একটা জিনিস দেখাবো। চল।

রাফিঃ আচ্ছা দোস্ত চল। এমনেও তোর সাথে এখন আর আগের মতো কথা হয়না। চল একটু ঘুরে আসি।

শুভঃ হুম চল।

শুভ রাফিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

পার্কে,

আবির মায়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সময় এখন ৩.৫০ মিনিট। শুভটা খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে জায়গাটা।

অনেক গোলাপের পাপড়ি দিয়ে মায়ার আসার রাস্তা বানিয়েছে। রাস্তার শেষে লাভ হার্ট বানানো। যেখানেও বিভিন্ন ধরনের ফুল আর গোলাপ দেওয়া। আবির সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।

আবিরকে যে আজ লাগছে না। ব্লাক প্যান্ট, ব্লাক সুট আর ব্লাক সু। একদম ডার্ক প্রিন্স। আবির মায়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আবির মায়াকে দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে যে মায়া আসছে।

মায়াও দেখছে আবিরকে। জায়গা দেখে মায়া অবাক হয়ে যায়। এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে মায়া অনেক খুশি হয়ে যায়।

আজ মায়া নীল শাড়ি পরেছে। চুল গুলো পিছনে ছাড়া। ঠোঁটে হাল্কা লিপিস্টিক। কপালে টিপ। চোখে কাজল। মায়া আবিরের বানানো গোলাপের পাপড়ির রাস্তা দিয়ে হেটে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

আবির মায়াকে দেখে যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। সাক্ষাৎ পরী যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীল পরী। মায়াকে দেখে আবির স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সব ভুলে গিয়েছে। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে মায়াকে দেখছে।

মায়াঃ খালি কি দেখবে নাকি কিছু বলবে?? হুম??

আবিরের ঘোর ভাঙে মায়ার কথায়।

আবিরঃ আমি জানি গো মায়া কাকে তুমি অনেক বেশি ভালোবাসো। এই যে নীল শাড়ি পরেছো। এটাতো আমার পছন্দের৷ হুম??

মায়া অনেক লজ্জা পাচ্ছে।

আবিরঃ তুমি যাকে অনেক বেশি ভালোবাসো সেও তোমাকে বলতে চায়,

আবির মায়ার সামনে হাটু গিরে বসে পরে। আবির মায়ার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল ধরে আর বলে,

আবিরঃ আমি জেনে গেছি মায়া তুমি আমাকে ভালোবাসি। আর আজ আমিও তোমাকে বলতে চাই, মায়া আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালো…..

হঠাৎ বিকট বিকট কয়েকটা শব্দ হলো। আবির ঠাস করে ফুল হাতে নিচে পরে গেলো। ৬টা গুলি লেগেছে আবিরের। সব পিছনে। আবির মাটিতে শুয়ে পরে। রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে আবিরের পিছন থেকে।

মায়া আবিরের এ অবস্থা দেখে পাগলের মতো কান্না করতে থাকে। আর আবির….আবির….আবির করতে থাকে। আবিরের জানটা এখনো আছে যায়নি।

আবির জীবনের শেষ মুহূর্তে শুধু একবার বলতে চায় মায়াকে ভালোবাসি। তাই রক্তাক্ত শরীরের সব শক্তি জুগিয়ে সেই রক্ত লাগানো ফুল গুলো তুলে যেই মায়াকে দিবে, ঠিক তখনই কেউ আবিরের হাতটা পা দিয়ে চেপে ধরে। সাথে পিষে যায় লাল রক্তে মিশ্রিত লাল গোলাপ গুচ্ছ।

মায়া আর আবির দেখে, পিস্তল হাতে শুভ দাঁড়িয়ে আছে। মায়া শুভর পা ঘরে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তা আর পারছে না।

শুভঃ কি বন্ধু কেমন অবাক হলি??বলেছিনা কাল তোদের অবাক করে দিবো। দিলাম তো। হাহা।

শুভ আবার বলতে শুরু করে,

শুভঃ তোর বোকা বন্ধু রাফি, ওকেও শেষ করে দিয়েছি। তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসে তাই ওকেও তোর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তোদের কেন মারলাম জানিস?? কারণ আজ থেকে আর মাফিয়া আবির খান আর নেই। শেষ তোর রাজত্ব। আজ থেকে শুধু মাফিয়া শুভ চৌধুরীর রাজত্ব চলবে। তোর গোলামী আমার পছন্দ না। তাই তোকে টপকে দিয়েছি। আর আজ থেকে তোর সব কিছু আমার। তোর মায়াকে কেন মারি নি জানিস?? যাতে তুই মরেও ওকে না পাস।

আবির অনেক কষ্টে জোরে মায়া বলে ডাক দিয়ে যেইনা বলবে ভালোবাসি শুভ আবিরের মাথা বরাবর গুলি করে দেয়। আর সাথে সাথে আবির এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। শেষ বারের মতোও বলতে পারেনি মায়া ভালোবাসি। মায়া আবিরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ আবিরের বুকে ঠাস করে পরে যায় মায়া। আর শুভ হাসতে হাসতে চলে যায়।

কিছু ভালোবাসার পূর্ণতা কোনোদিনই হয়না। হয়তো হওয়ারই ছিলো না।

সমাপ্ত।

কোনো ভুল হলে মাফ করবেন। ?

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে