প্রেমানন্দোল পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

1
1131

#প্রেমানন্দোল-১৭/শেষ পর্ব
#তাসনিম_তামান্না

” আপনি কি আমার আধার জীবনের এক ফালি ভালোবাসার আলো হবেন যা দিয়ে আমার চারিপাশ আলোয় আলোকিত করে রাখবেন। আমার পথ চলার সঙ্গী হবেন? আমি আপনাকে চাই। খুব করে চাই। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে না দেখলে আমার দমবন্ধ হয়ে আছে ভিষণ কষ্ট হয়।”
মৃধা বিস্ময়ে চুপসে গেছে। তার কি উত্তর দেওয়া উচিত সেটা সে বুঝে উঠতে পারছে না। কাল দ্বিধা কথা বিশ্বাস করে নি কিন্তু আজ স্বচ্ছ যে এভাবে প্রোপ্রজ করবে মৃধার সেটা কল্পনার বাহিরে ছিল। মৃধার শব্দ গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মৃধা এতোক্ষণে তার দফারফা করে ফেলত। স্বচ্ছ কে এমন কিছু করতে বা বলতে পারছে না কেনো? স্বচ্ছ কি তার অনুভূতি? মৃধাকে চুপ থাকতে দেখে স্বচ্ছ বলল
” কিছু তো বলো। আমি তোমার মুখ থেকে কিছু শোনার অধির অপেক্ষায় আছি ”
মৃধা এতোক্ষণে মুখ খুললো।
” এটা কখনো হওয়ার নয় ”
মৃধা দাঁড়ালো না আর দ্রুত পায়ে রিকশায় উঠে বসে চলে গেলো। মৃধার বড্ড কষ্ট হচ্ছে বুকের মধ্যে আর একটু সময় থাকলে বোধ হয় কেঁদে দিতো। স্বচ্ছ কাঠ ফাটা রোদে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রোদে পুড়লো। শরীরের থেকে মনটা যে তার বড্ড পুড়ছে। যে ছেলের জন্য মেয়েরা শরীর বিলিয়ে দেয় তাকে কি-না একটা মেয়ে রিজেক্ট করে চলে গেলো। তার ভালোবাসা ফিরেও দেখলো না? স্বচ্ছের বড্ড জিদ হলো মনে মনে বলল ” আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ খারাপ মানুষটা হবো। তুমি আমার না হলে কাউকে হতে দিবো না মনে রেখো। মৃধা শুধু স্বচ্ছের! তার জন্য যা করতে হয় তার সবটা আমি করবো ”

দ্বিধা আজকাল স্বাধীনের বুকে ছাড়া ঘুম হয় না। স্বাধীনের বুকের মধিখানে আসটে পিসটে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই। প্রথম প্রথম ঘুমের ভান ধরে বুকে মাথা রাখতো স্বাধীন ব্যাপারটা ধরতে পেরে দ্বিধাকে পচিয়ে রাখছিল না দ্বিধা রেগে তারপরের দিন আর স্বাধীনের বুকে মাথা রাখে নি স্বাধীন জোর করে দ্বিধাকে বুকে টেনে বলেছিল ” সমস্ত আমিটাই আপনার ”
” তাহলে এমন ভাব দেখালেন কেনো? ”
” ভাব কেমন করে দেখায়? আপনার মত ঘুমিয়ে? ”
” আমি কিন্তু চলে যাবো ”
স্বাধীন কিছু না বলে দ্বিধাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছিলো ভালোবাসার চাদরে।
রাত গভীর চারিদিকে নিকষ কালো রঙের ঘুটঘুটে অন্ধকারে শেয়াল কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। মানুষ জন ঘুমে বিভর হয়ে আছে।
স্বাধীন দ্বিধা ঘুমে বিভোর এই মধ্যেরাতে হাঠাৎ স্বাধীন ফোন বেজে উঠলো। স্বাধীন সহ দ্বিধার ঘুম ভেঙে গেলো। স্বাধীন ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর। ঘুম ঘুম চোখে ফোন কানে দিতেই ঘুম কর্পূরের মতো উড়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে বলল
” কোন হসপিটালে? ”
হসপিটালের কথা কানে আসতেই দ্বিধার মনে ভয় ডুকে গেলো। স্বাধীন ফোন রেখে থম মেরে বসে আছে। দ্বিধা অধৈর্য হয়ে বলল
” কার কি হয়েছে কিসের হসপিটাল? বলুন আমাকে ”
” দ্বিধা স্বচ্ছের গুলি লেগেছে ”
কথাটা বলে স্বাধীন দ্বিধাকে জাড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো। দ্বিধা থমকে গেলো। স্বাধীনকে শান্তনা দিয়ে বলল
” এখন আপনি কাঁদছেন কেনো? এই সময় আপনার শক্ত থাকতে হবে ভেঙে পড়লে চলবে না। চলুন উঠুন স্বচ্ছের কাছে যেতে হবে। মনে বল আনুন স্বচ্ছের কিছু হবে না ”
স্বাধীন উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো। দ্বিধা বাসার সকলকে বিষয়টা জানালো।

হসপিটালের গিয়ে মৃধাকে বসে কাঁদতে দেখে দ্বিধা অবাকে শীর্ষে পৌঁছে যায়। দৌড়ে মৃধার কাছে যায়।
” তুই এখানে? ”
দ্বিধাকে দেখে মৃধা দ্বিধাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
” গু-লি লাগার পরে ওনি আমাকে ফোন দিয়েছিল ‘ভালোবাসি’ বলতে তারপর আর কিছু শুনতে পাই নি পরে হসপিটাল থেকে ফাস্ট কল লিস্টে ছিলাম দেখে আমাকে ফোন দেয়। আমি এসে তোদের ফোন দিতে বলি ”
স্বাধীন সহ স্বাধীনের বাবা-মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মৃধার দিকে।
ওটি থেকে স্বচ্ছকে বের করতে দেখে স্বাধীন এগিয়ে যায় ডক্টরের কাছে
” ডক্টর স্বচ্ছের কানডিশন কেমন? ”
” ভয়ের কিছু নেই হাতের বাহুতে আর পায়ে লেগেছে তো অনেক ব্লাড লস হয়েছে দূর্বল ওনি জ্ঞান ফিরবে কিছুক্ষণ পর ”
” থ্যাংকিউ ডক্টর ”
স্বাধীন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল
” হ্যালো আমি স্বাধীন স্বচ্ছের ভাই কাইন্ডলি জানাবেন আসল ঘটনাটা কি? ”
জাহিদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো বোনের এমন বেপরোয়া ভাব কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার বোন শেষে কি-না একটা সন্ত্রাসী কে ভালোবাসালো? স্বাধীনের কথায় ধ্যান ভাঙলো বলল
” ওনি বিভিন্ন বে-আইনী কাজের সাথে যুক্ত এটার জন্য ওনি আজ আমাদের হাতে হাতে নাতে ধরা পড়েছে পালাতে গিয়েছিল তাই আমরা সুট করতে বাধ্য হয়েছি ”
স্বাধীনের এসব শুনে বড্ড কষ্ট হচ্ছে বলল ” আপনারা ওকে এরেস্ট করছেন? ”
” জী ওনি সুস্থ হলেই ওনাকে লকাবে নিয়ে যাওয়া হবে ”
স্বপ্না ছুটে এসে জাহিদের কলার ধরে বলল
” তুমি আমার ভাইয়াকে কেনো সুট করেছ? মানছি ভাইয়া অন্যায় করেছে তাই বলে এভাবে ভাইয়াকে সুট করবে? ”
জাহিদ কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। যান্ত্রিকের মতো বলল
” এটা আমার ডিউটির মধ্যে পড়ে। ”
স্বাধীন পাশে চেয়ারে বসে পড়লো। স্বাধীন স্বপ্ন আর জাহিদের ব্যাপারে একটু হলেও যানে দ্বিধায় আজ ঘুমানোর আগে স্বাধীনকে বুঝিয়ে বলেছে স্বাধীন প্রথম প্রথম অমত করে রাগারাগি করলেও দ্বিধা মানিয়ে নিয়েছে তাই সেদিকে আর বিশেষ মন দিলো না।
স্বচ্ছের জ্ঞান ফিরলে সকলে দেখা করতে গেলেও মৃধা কাঠ হয়ে বসে রইলো। মৃধাকে একা পেয়ে জাহিদ বোনের পাশে বসে বলল
” আমি কিন্তু এমন সন্ত্রাসীকে আমার বোনের জীবন সঙ্গী হিসাবে চাই নি ”
মৃধা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ভাঙাচোরা গলায় বলল
” বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি যে কি ভাবে? নিজেও জানি না ভাইয়া ”
” স্বচ্ছের কয়েক বছর জেল হয়ে যাবে ”
মৃধার বুক ফেটে কান্না আসলো বলল
” ভাইয়া আমি বাসায় যাবো ”
—–
স্বচ্ছ আগের থেকে বেশ অনেকটায় সুস্থ আজ স্বচ্ছকে কোটের রায় দেওয়া হবে। এতোদিনে একটাবারের জন্য ও মৃধা দেখতে যায় নি। স্বচ্ছ চাতক পাখির মতো পথ চেয়ে থাকতো। মৃধা আজ কোটে গেলো। সকল সিদ্ধান্তের পর ঘোষণা হলো ” স্বচ্ছের কয়েক বছরের জেল ”
মৃধা আজ কাদলো না। স্বচ্ছকে নিয়ে যাবার সময় স্বচ্ছের কাছে গিয়ে বলল
” আপনার সব পাপ ধুয়ে শুদ্ধ হয়ে আসবেন আমি আপনার জন্য আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি অপেক্ষায় থাকবো ”
সমাপ্ত

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে