ভালো লাগে ভালোবাসতে-পর্ব ১২

3
1815

#ভালো লাগে ভালোবাসতে
#পর্ব-১২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে আমি আর সাফা কফি খাচ্ছি।নাহ!কফি শুধু আমি খাচ্ছি আর সাফা গালে হাত দিয়ে কফি সামনে নিয়ে বসে আছে।সে আজ বিরহের অতল সাগরে ডুবে আছে।কাল রাতে সাফার ব্রেকআপ হয়েছে।এই নিয়ে পাঁচ বার হল।প্রত্যেকবার ব্রেকআপের কারণ হয় তামিম ভাইয়ার সাফাকে আফা ডাকা।ওদের দুজনের ভেতর ঝগড়া শুরু হলেই নাকি ভাইয়া শুধু সাফাকে আফা বলে ঝগড়া করে।এইবার সাফাও তামিম ভাইকে খালু বলে ডেকেছে।প্রত্যেকবারের মত এবারও আমি চেহারায় সিরিয়াস ভাব এনে ওদের ব্রেকআপ হিস্টরি শুনে যাচ্ছি।অথচ পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।কিন্তু হাসিটাকে তো কন্ট্রোলে আনতেই হবে,বেস্ট ফ্রেন্ডের পঞ্চম প্রেম বিচ্ছেদ বলে কথা।
-‘সুপ্তি,বলতো এবার আমি ঠিক করেছি কিনা!সবসময় ঝগড়া হলেই আফা বলে ডাকবে কেনো!আমিও বলে দিয়েছি খালু।এবার একেবারে ফাইনাল ব্রেকআপ।’

আমি চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখে হাত দিয়ে হাম দিয়ে বললাম,’কতবার ব্রেকআপ করলে ঠিক ফাইনাল ব্রেকআপ হয় আমাকে একটু বলতো?’

-‘তুই কি আমার সাথে মজা করছিস।আমি কিন্তু সিরিয়াস!’

-‘কতো সিরিয়াস তা আমার জানা আছে!এখনই তো তামিম ভাই আসবে আর ধেই ধেই করে তার সাথে নাচতে নাচতে চলে যাবি!ছেলেদের না অতো পাত্তা দিতে হয় না।পাত্তা দিলে এদের ভাব বেড়ে যায়।’

সাফা আমার কথা কিছুক্ষণ হা করে শুনে বলল,’তুই কি নিদ্র ভাইকেও পাত্তা দেস না?’
আমি একটু ভাব নিয়ে আয়েশ করে বসে বললাম,’অফকোর্স দেই না।সেই তো আমার পেছন পেছন ঘুরে,আমাকে কখনো দেখেছিস তার পেছনে ঘুরতে!’

মনে মনে আল্লাহর কাছে একশবার মাফ চেয়ে নিলাম এত বড় মিথ্যা কথা বলার জন্য।নিদ্র আমার পেছনে ঘুরবে কি আমাকেই তো আদেশ দিয়ে ডেকে নিয়ে তার পেছনে ঘুরায়।আর সেই ধলা লম্বুশকে পাত্তা না দিয়ে আবার উপায় আছে!ধমক দিয়েই তো কান ঝালাপালা করে দিবে।

সাফা মনোযোগ সহকারে আমার কথা শুনে যাচ্ছে।আজকে নিজেকে পুরো জ্ঞান বিশারদ মনে হচ্ছে।তাই চেহারায় জ্ঞানী ভাবটা আরেকটু টেনে এনে বললাম,বুঝলি সাফা,ছেলেদের না সবসময় হাতের মুঠোয় রাখতে হয়।আমিও তো তাই করি।নাহলেই দেখবি অন্য আরেকজনকে ধরে নিয়ে এসেছে।’

-‘তাই নাকি সুপ্তি!তোমার হাত তো দেখি অনেক বড়!আমার মত ছয় ফুট লম্বা মানুষকেও হাতের মুঠোয় ভরতে পারো।’

পেছন থেকে নিদ্রর গলার আওয়াজে আমি ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম।একটু ঢোক গিলে কাচুমাচু করে পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখি নিদ্র আমার চেয়ারের উপর দুই হাতের ভর দিয়ে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি জোর করে মুখে একটা হাসি টেনে বললাম,’আমি তো এমনিতেই সাফাকপ এক্সামপল দিচ্ছিলাম।সিরিয়াস কিছু না।’
সাফা বলতে লাগল,’আরে তুই তো এইমাত্রই বলছিলি নিদ্র ভাইকে তুই পাত্তা……
আমি চোখ গরম করে সাফাকে বাকি অংশটুকু বলা থেকে আটকালাম।এরইমধ্যে আগমন ঘটলো তাদের পুরো গ্যাংয়ের।ভার্সিটি থেকে বের হয়েও তারা এখনো ভার্সিটির টান ছাড়তে পারেনি।সপ্তাহে এক দুইবার আসবেই।আর যখন আসবে সব ফ্রেন্ডরা মিলে যোগাযোগ করে একসাথেই আসবে।তামিম ভাইকে দেখে সাফা একটা মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।তামিম ভাইও তাই দেখে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।
পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে নিদ্র বলল,’কিরে আজকে নিউ লাভবার্ড দের আবার কি হল?’
সোহেল ভাই বলে উঠল,’এরা অলরেডি পাঁচ বার ব্রেকআপ করে ফেলেছে আর তুই এদের নিউ লাভ বার্ড বলছিস।’
-‘এখনো তো সিক্স মানথও হয়নি।তো এদেরকে নিউ বলবো না তো আর কি বলবো!’
তারপর তামিম ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,’কিরে দোস্ত,তুই কি বিয়ের আগে ব্রেকআপের সেন্চুরি করে রেকর্ড গড়ার ধান্দায় আছিস নাকি?’
নাঈম ভাই বলে উঠল,’দোস্ত ঐ দায়িত্ব আর তামিমের কষ্ট করে নিতে হবে না।আমার প্রিয়তমা অলরেডি সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে সঁপে নিয়েছে।উঠতে বসতে ব্রেকআপ!’
নাঈম ভাইয়ার কথা শুনে তানিয়া আপু তার হাতে একটি জোড়ে চিমটি কেটে বলল,’পটর পটর তো ভালোই করতে পারো,কাজের কাজ তো করছো না।একসপ্তাহের মধ্যে যদি তোমার পরিবারকে আমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে না পাঠাও তাহলে দেইখো তোমারে কি করি!বুড়ি হইয়া বইসা এনার জন্য অপেক্ষা করছি আর এই ছোট্ট খোকা এখনো মার সামনে কোনো কথাই বলতে পারে না!’
তাদের দুজনের কান্ডে আমরা সবাই হেসে দিলাম।
নিদ্র একটু নকল আফসোসের সুরে বলে উঠল,’তোরা যাই বলিস আমি কিন্তু এবার সাফার পক্ষে,পার্টনারের মুখে ভাইয়া,আফা শুনতে যে কেমন লাগে আমি বুঝি।’
সাফা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে নিদ্রর দিকে তাকালো।আমি চোখ কুঞ্চিত করে রইলাম।
তামিম ভাই বললো,’আরে আমি তো ওর নামের সাথে আফা ডাকতে ভালো লাগে তাই বলি।আর ও যে আমাকে খালু বললো তার বেলায়!’
আমি খিলখিল করে হেসে বললাম,’ভাইয়া আপনারা আগে কোন সম্পর্কে নিজেদের বাঁধতে চান তা ঠিক করুন।গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড থেকে আপনাদের অন্য সম্পর্কেই দেখি বেশি ইন্টারেস্ট।’

নিদ্র বলল,’সাফা,তুমি একটা কাজ করো তোমার জন্য তোমার একমাত্র ভাবীর বাড়ি থেকে যে তার খালাতো বা মামাতো সামথিং এমনই কোন বিয়ের প্রস্তাব এসেছে সেটা এক্সেপ্ট করে ফেলো।বয়সে তো তামিমের সে বড় ভাই হবেই তাই তামিমের যে তোমার এতো আফা ডাকার শখ সেটা না হয় ভাবীর পরিবর্তে ও ডাকতেই পারে!’

নিদ্রর কথায় সাফাও উৎসাহিত হয়ে তামিম ভাইকে চোখ ঘুরিয়ে বোঝাল ও তাই করবে।
তামিম ভাই সাফার হাত ধরে উঠিয়ে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,’শালা,তুই কি আমার বন্ধু নাকি শত্রু!এখানে থাকলে তুই দেখি আমার প্রেমের বারোটা বাজিয়ে দিবি।’
এই বলে তামিম ভাই সাফাকে নিয়ে বাইরে চলে গেল।তানিয়া আপু হাসতে হাসতে নিদ্রকে বলল,
-‘নিদ্র মামু তুমি তো দেখি প্রেম জোড়া লাগানোয় বড্ড এক্সপার্ট হয়ে গেছো।’
নিদ্র একটু নকল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,’হুম,নিজেরটা পারি না তাই অন্যেরটাই না হয় করি।’
কথাটি শুনে আমার পিত্তি জ্বলে গেল।নিশ্চয়ই ঐ মেয়েটাকে নিয়ে আফসোস করছে!

তারা দলবেঁধেই আবার চলে গেল প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে দেখা করতে।তাদের রেজাল্ট এখনো বের হয়নি।সবাই এখনো বিন্দাস ঘুরছে।শুধু নিদ্রই এক্সাম শেষ হওয়ার পাঁচ ছয় দিন পরেই অফিসে জয়েন করেছে।খুব রেসপন্সিবল ছেলে কি না!

তারা সবাই চলে গেলে আমিও একটু ওয়াশরুমে গেলাম।বের হওয়ার মুখে আমার এক বছরের সিনিয়র রুমা আপুর সাথে দেখা।সে আমার হাতে একটা সাদা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল,’এটা একটু নিদ্র ভাইকে দিয়ে দিও।তুমি তো তার সাথে বেশি থাকো।সময় বুঝে দিয়ে দিও কিন্তু!’
কথাটি বলে সে ব্লাশ করতে করতে চলে গেল।আমার আর নিদ্রর বিয়ের কথা আমার ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ জানে না।সবাই শুধু জানে আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু কার সাথে হয়েছে সেটা সবারই অজানা।অতঃপর কৌতুহলকে দমিয়ে রাখতে না পেরে আমি খামের ভেতর হাত ঢুকাতেই বেরিয়ে এলো একটি চিঠি।চিঠিটি পুরো পড়ে আমার চোখ ছানাবড়া।এতো দেখি খাঁটি বাংলা ভাষার প্রেমপত্র।আমিই হয়তো প্রথম নারী যাকে কিনা তার স্বামীর প্রেমপত্র বিলি করার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে।চিঠির ভেতর নিদ্রকে সে তার জান,প্রাণ,কলিজা,গিলা,ফ্যাপসা সবই বানিয়ে ফেলেছে।রাগে আমার সর্বাঙ্গ দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল।ইচ্ছে করছে এই চিঠিটা কুঁচি কুঁচি করে ছিড়ে বাথরুমের কমোডে ফেলে দেই।আমার বরকে প্রমপত্র দেওয়া!আর তাও নাকি দেবো আমি!কচু দেবো!
এই জন্যই তো সুন্দর ছেলে বিয়ে করতে চাইনি।চারপাশে মধুমক্ষিকার মতো সব ভনভন করে উড়ে।একেই বলে কপাল,যা চাইবো না তাই হবে।কে বলেছিল তাকে এত সুন্দর হতে।একটু কম সুন্দর হলে কি হতো!
চিঠিটাকে ব্যাগে ভরে আমি হনহনিয়ে ক্যান্টিনে ফেরত আসলাম।বাড়ি যাওয়ার পথে এটাকে পঁচা পুকুরে ফেললে তবেই আমার শান্তি।
ক্যান্টিনে এসে দেখি এখনও সাফা ফেরত আসেনি নিশ্চয়ই এখনও প্রেম করছে।সোমা আপুকে আসতে বলেছিলাম কিন্তু তার ক্লাস আছে আসতে পারবে না।এখন আমি একা একা বসে কি করব!আমার তো আর প্রেম করার মতো কেউ নেই!
গালে দুই হাত দিয়ে বসে ভাবছিলাম।হঠাৎ নিদ্র এসে আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলো।চোখ থেকে কালো সানগ্লাসটা খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,’কি হয়েছে এমন পেত্নীর মতো মুখ করে রেখেছো কেনো।’
আমি মনে মনে বললাম,’হ্যাঁ,আমি তো পেত্নীর মতোই এখন লাগবো আর ঐ মেয়ে হলো অপ্সরা!’
-‘তোমার সব ক্লাস শেষ হলে তোমাকে আজকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।’

আমি চমকে উঠে বললাম,’ডক্টরের কাছে!আজকে আমার এক্সট্রা ক্লাস আছে।’
-‘হ্যাঁ,ডক্টরের কথা শুনলেই তোমার এক্সট্রা ক্লাস শুরু হয়ে যায়।এক্সট্রা ক্লাস থাকলে সেটা বাদ দিয়ে দাও তোমার এক্সট্রা ক্লাস আমি পরে নিয়ে নেব।’
আমি বিরক্তিতে কপাল ভাঁজ করে রইলাম।

সোমা আপু হঠাৎ এসে নিদ্রকে বলল,’আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,ভালো আছেন।’
নিদ্র হেসে সালামের জবাব নিয়ে বলল,’আমার ভালো থাকার খবর পরে শুনো,তুমি যার খবর জানতে এসেছো সে এখন সেকেন্ড ফ্লোরে।’
সোমা আপু মুচকি হেসে যেতে উদ্যত হলে আমি বললাম,’তুমি না বললে তোমার ক্লাস আছে।এখন এসেছো কিভাবে।’
সোমা আপু কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে গেল।আমি পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললাম,’এখন আবার কই যাও?’
নিদ্র আমাকে থামিয়ে ধমক দিয়ে বলল,’এই তুমি সবসময় কাপলদের প্রেমে ডিস্টার্ব করতে চাও কেনো?’
আমি তার মুখ ফুলিয়ে রইলাম আর মনে মনে কটমটিয়ে বললাম,’হ্যাঁ,এখন আমার জন্য ঐ মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারছে না যে তাই আমাকে ডিস্টার্ব মনে হচ্ছে!’

-‘যাও আমাকে একটু বাদাম এনে খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াও তো!’

-‘পারবো না!আমি কি আপনার বাদামের খোসা ছাড়ানোর জন্যই জন্ম নিয়েছি যে সবসময় আমাকেই খোসা ছাড়াতে হবে।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে গিয়ে বলুন।’
কথাটি বলেই জিভে কামড় দিলাম।সত্যি সত্যিই যদি এখব ঐ মেয়ের কাছে চলে যায়!
পরক্ষণেই গলা নরম করে বললাম,’আচ্ছা আমি আনতে যাচ্ছি।আপনি বসুন।’
চেয়ার ছেড়ে উঠতেই মনে হল আমি ভার্সিটি আসার সময় গেটের কাছে আসতেই নিদ্রর নামে অফিস থেকে একটা সাদা এনভেলাপ এসেছিলো।সে বাসায় না থাকায় আমাকেই রিসিভ করতে হয়।আমিও তাড়াহুড়োর জন্য ব্যাগে নিয়ে চলে এসেছি।আমি ঘুরে ব্যাগ থেকে এনভেলাপটা বের করে তার হাতে দিয়ে দিলাম।তারপর চলে গেলাম বাদাম আনতে।
ফিরে এসে দেখি নিদ্র খামের ভেতরের কাগজটা মেলে আনমনে তাকিয়ে মুখটা থমথমে করে রেখেছে।
আমি গিয়ে বললাম,’কি হয়েছে?’
সে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বিষন্ন মুখে বলল,’তোমার কি সত্যিই কিছু যায় আসে না?একটা মেয়ে তোমার হাজবেন্ডকে লাভ লেটার দিল আর তুমিও তাকে দিয়ে দিলে!’
কথাটি বলে সে কাগজটি টেবিলের উপর রেখে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আহত মুখে চলে যেতে লাগল।
তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে একঝাঁক উদাসীনতায় আমার মন ছেয়ে গেল।আমি তাকে চিঠিটি দিতে চাইনি।তবুও….

এই প্রথম হসপিটালে আসলাম একা একা।এমনিতে আমাকে ধরে বেঁধে তারপর হসপিটালে আনতে হয়।হসপিটালে আসতে আমার একদমই ভালো লাগে না।নিদ্রকে হসপিটালে আসা নিয়ে অনেক ঘুরিয়েছি।সে আমার উপর রাগ এবং বিরক্ত,হসপিটালে আসা নিয়ে ঘুরানোর জন্য আর সেদিনের সেই চিঠির জন্য।কথা বলে ঠিকই কিন্তু মুখটা ভার করে।তাই তাকে আর না রাগানোর জন্য আমি নিজে নিজেই গাড়ি নিয়ে চলে এসেছি চেকআপ করাতে।সব চেকআপ শেষে হসপিটাল থেকে বের হচ্ছি ঠিক তখনই একজনের ধাক্কা খেলাম।আমার ধাক্কা লাগায় তার হাতের ব্যাগ খুলে সব কিছু পড়ে গেছে।আমি দ্রুত স্যরি বলে তাকিয়ে দেখলাম মিথি আপু।আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে সে ফ্লোর থেকে সব উঠাতে লাগল।আমিও আবার স্যরি আপু বলে পড়ে থাকা জিনিস উঠিয়ে দিতে গেলাম।কিন্তু সে আমার হাত ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়ে সবকিছু উঠিয়ে নিল।আমি আবারো বললাম,’স্যরি আপু,আমি আসলে দেখতে পারিনি।’
সে খুব রুক্ষ স্বরে বলল,’থামো তো,এসব নাটক আমার সামনে করতে আসবে না।’
-‘আপু আমি সত্যি ইচ্ছে করে করিনি।’
-‘হ্যাঁ,তুমি তো ইচ্ছা পূরণ করো শুধু বড়লোক সুন্দর ছেলেদের ফাসানোর জন্য।’
তার কথায় আমি খুবই অবাক হলাম।বললাম,
-‘আপনি এভাবে আমার সাথে কথা বলছেন কেনো?’
-‘কেনো বলছি এখন কিছুই বুঝতে পারছো না।এরকম ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে তুমি নিদ্রকেই পটাতে পারবে আমাকে না।তোমার জন্য আমি নিদ্রকে পেলাম না।নিদ্র তো কোনো মেয়েদের দিকেই ফিরে তাকাতো না।তোমার থেকেও তো আমি ডাবল সুন্দর তবুও আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করলো না।বিয়ে করলো কি না তোমাকে!কি জাদু করেছো একটু বলো তো।এখনকার জুনিয়র মেয়েরা তো আবার অনেক ফাস্ট।তোমাদের মতো মেয়েরা তো ভার্সিটিতে আসার আগেই বড়লোক সিনিয়রদের পটানোর একেকটা ধান্দা আয়ত্ত করে আসে।’

-‘কিছু মানুষের মন মানসিকতা যে কতটা নিচ আর জঘন্য হয়ে থাকে সেটা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না।শুধুমাত্র আপনি সিনিয়র বলে আপনাকে রেসপেক্ট করে কিছু বলছি না।’
কথাটি বলে আমি দ্রুত পায়ে গাড়ির কাছে চলে আসলাম।সে পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,’তোমার এত বড় সাহস আমার সাথে এভাবে কথা বলো।তোমাকে তো আমি প্রথম থেকেই উচিত শিক্ষা দিয়ে দিতাম যদি না শুধু নিদ্র তোমাকে ভালোবাসতো!’

গাড়ির দরজা অর্ধেক খোলা অবস্থায় আমি থমকে গেলাম তার শেষোক্ত কথাটি শুনে।এক মুহুর্তের জন্য মনে হল মাথাটা যেনো হ্যাং হয়ে গেল।আবারো পিছনে ঘুরে দেখলাম মিথি আপু এতক্ষণে চলে গেছে।তারপর কিভাবে কিভাবে বাড়ি আসলাম তার কিছু মনে নেই।বারবার মনে হচ্ছে আমি কিছু ভুল শুনলাম না তো!
কেমন যেনো স্তব্ধ হয়ে রয়েছি।ড্রাইভার চাচার ডাকে চমকে উঠে দেখি বাড়ি ফিরে এসেছি।ধীর স্তব্ধ পায়ে রুমে আসতেই দেখি নিদ্রর পড়ার টেবিলে,আশেপাশে বইয়ের স্তুপ এলোমেলো হয়ে রয়েছে আর তারপাশে রহিমা খালা মুখে কাপড় বেঁধে পুরবো বইগুলো ঝাড়ছে।
আমাকে দেখে রহিমা খালা কাছে এসে বলল,’ভাবী সাব দেহেন নিদ্র ভাইজান পুরান বইখাতা সব নামাইছিলো যেগুলা লাগবো না হেগুলি বাইর করার লেইগা।অহন হের মোবাইলে অপিস থিকা ফোন আইসে দেইখা তাড়াতাড়ি চইলা গেছে।আপনি এহন দেইখা রাহেন আমি গেলাম।’
আমি এসব দেখবো কি!আমি তো নিজেই এখন ঘোরের মধ্যে আছি।সেই ঘোরের মধ্যে থেকেই হঠাৎ চোখে পড়ল বইয়ের স্তুপের মাঝে একটি নীল রঙের ডায়েরি।কৌতূহল বশত সেটাকে টেনে বের করে ডায়েরির পাতা চোখের সামনে খুলে ধরলাম।সেখানে সুন্দর গুটি গুটি হাতে কালো কালিতে লেখা……….

চলবে,,

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে