এর বেশি ভালবাসা যায় না পর্ব-০৬

1
1120

☪☪<><>এর বেশি ভালবাসা যায় না<><>☪☪

পর্ব<>(৬)

Written::Ar Limat

– আকাশ একদম সত্য কথা বলেছে.. । পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো..
রিয়া আর নেহাল দুজনই কারো এই কথায় পিছনে ফিরে তাকালো..
রিমা আর মিম একসাথে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। রিয়া তাদের দেখে কিছুটা অবাকই হলো..
– রিমা , তুই কখন এলি? আর মিম , তুই তো ক্লাসে গিয়েছিলি তাইনা?
-হ্যাঁ গিয়েছিলাম ক্লাসে। কিন্তু ক্লাসে তোরা কেউই নেই তাই ভালো লাগছিলো না। তাই চলে এলাম। এসেই রিমার সাথে দেখা হলো।
আর বেরিয়ে আসাটা ভালোই হলো। কারো সত্যিকারের রুপটা দেখতে পেলাম। নেহাল কে ইঙ্গিত করে কথাটা বললো মিম ।
– বুঝলাম… কিন্তু তোরা কিভাবে বললি আকাশ যা বলেছে তাই ঠিক?
– দেখ রিয়া.. তুই আমার জানের দোস্ত। আমি জানি তুই রাজকে সহ্য করতে পারিস না। কেন সহ্য করতে পারিস না সেটা তোর ব্যপার। তুই ওকে অপছন্দ করতি বলে আমিও ছেলেটাকে অবজ্ঞা করতাম। কিন্তু বিশ্বাস কর.. আজ ছেলেটার কোনো দোষ ছিলো নারে। আমরা সবটা নিজের চোখে দেখেছি দুর থেকে। (রিমা )
– কি দেখেছিস তোরা?
-আকাশ যা বলেছে তাই দেখেছি। ছেলেটা তারাহুড়ো করে আসতে গিয়ে নেহারলের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। তার জন্য ছেলেটা ক্ষমাও চেয়েছে নেহালের কাছে। কিন্তু নেহাল , ও ছেলেটাকে যা খুশি তাই বলে অপমান করেছে। ইনফ্যাক্ট ওর জন্ম আর বাবা মাকে নিয়েও কথা বলেছে। এমন অবস্থায় তুই কি করতি বল? নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকতি না? রাজ তাই করেছে, এমন কথায় সে রেগে গিয়ে নেহাল কে একটা থাপ্পড় দিয়েছে। আর তুই? তুই কিনা?..
এতোটুকু বলে রিমা থামলো.. রিয়ার শরীর রাগে থরথর করে কাঁপছে।
রিমা আবারও বলতে লাগলো..
– আজ নিজের চোখে দেখলাম নেহালের ক্যারেক্টার, ও যে এমন ক্যারেক্টারের ছেলে আমার জানা ছিলোনা। ও একটা বিশ্রী মন মানুষিকতার ছেলে । আর যে এইরকম একটা বিশ্রী মনের ছেলের কথায় উটাবসা করে, তার কথার সত্যতা যাচাই না করে অন্যের উপর জুলুম করে, তার মন মানুষিকতা আরো বেশি বিশ্রী। বেশ রেগে কথাগুলো বললো রিমা ..
.
মিম বললো..
– দেখ রিয়া, জীবনটা একান্তই তোর। তোর জীবনটা তুই কিভাবে সাজাবি, কার সাথে শেয়ারিং, কেয়ারিং করবি সেটা একান্তই তোর ব্যাপার। কিন্তু বন্ধু হিসেবে তোকে কিছু উপদেশ দিতেই পারি আমরা, সেটা মানা, না মানা তোর ব্যাপার।
রিয়া আড় চোখে মিমের দিকে তাকালো। কিছু বললো না। মিম আবারও বলতে লাগলো..
– কারো সাথে জীবন কাটাবার স্বপ্ন তুই দেখতেই পারিস.. কিন্তু তার ব্যাকগ্রাউন্ড তোর অবশ্যই জানা দরকার। নেহাল সম্পর্কে তুই কতোটুকু জানিস তা আমি জানি না, তবে কারোর উপর রাগ দেখিয়ে এক মুহুর্তে নিজের জীবনটা অন্ধকারে ফেলে দিসনা। এটা তোর কাছে আমার অনুরোধ রইলো।
.. রিয়া এখনো চুপ করেই আছে।
– আমরা এখন যাই রে.. ভেবে দেখিস আমার কথাটা একবার।
রিমা আর মিম চলে গেলো। রিয়া নিজের জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে আছে।
..
নেহাল ওর থেকে কিছুটা দুরে দাঁড়ানো। রিয়া রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে নেহালের দিকে খুবই কঠোরভাবে এগুতে লাগলো। নেহাল বারবার ঢোক গিলছে আর পিছনে যাচ্ছে.. ।
হটাৎ করে রিয়া আবারও নিজের জায়গায় দাড়িয়ে গেলো। সেখানে দাড়িয়েই চোখের পানি ছেড়ে দিলো সে। নেহাল অবাক হয়ে আlরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রিয়া বলতে লাগলো..
– কেন করলে এমন নেহাল ? আমিতো তোমাকে ভালো বেসেছিলাম। তারপরও কি এমনটা করা খুব জরুরী ছিলো? এমনিতেই ওর প্রতি অনেক অন্যায় করেছি আমি, তার উপর আজ আমাকে ওর কাছে আরও বড় অপরাধী করে দিলে?. এমনটা না করলেও পারতে নেহাল …
ছলছল চোখে কথাগুলো বলে রিয়া সেখান থেকে চলে গেলো।
নেহাল অবাক দৃষ্টিতে রিয়ার চলে যাওয়া দেখছে। বেশ অবাক হচ্ছে সে নেহাল কে কিছু না বলায়… ।
তারপর নেহাল একা একা আপনমনেই বলতে লাগলো..
– রিয়া মনি , আমি এমন কেন করলাম সেটা তুমি বুঝবে না। আমি স্পষ্ট তোমার চোখে রাজের প্রতি দুর্বলতা দেখতে পাই। আর রাজ ও তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। এমন অবস্থায় তোমাদের এক হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি নেহাল তো তা হতে দিতে পারিনা। এই নেহাল কে বাদ দিয়ে ওই রাজ তোমার অঢেল টাকা – পয়সা, সম্পদের রাজত্ব একাই করবে সেটা আমি হতে দিবো না। আমি চাই রাজ তোমার থেকে অনেক দুরে চলে যাক, তোমাকে ঘৃণা করুক.. যাতে কখনো সে তোমার কাছে ফিরে না আসে, তাইতো এমন করলাম রিয়া সোনা..
কথাগুলো মনে মনে বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলো নেহাল । তারপর সেও চলে গেলো।
..
রাজ ক্লাসের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলো পানিতে টলমল করতে তার।
আকাশ আর রনি এসে দাড়ালো রাজের পাশে। সেদিকে রাজের কোনো খেয়াল নেই। সে একমনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশ রাজের পিঠে হাত রাখলো। রাজের ধ্যান ভাংলো.. তারাতা‌ড়ি চোখের পানি মুছে ওদের দিকে তাকালো।
– তোরা কখন এসেছিস?
– তুই যখন এসেছিস তখনই এসেছি।
– কই, আমিতো তোদের দেখিনি।
– তোর পিছনে ছিলাম। দেখবি কিভাবে?
– ওহ..
– তুই এমন কেনরে রাজ ?তুই তো একটা ছেলে কেন অন্যের করা লাঞ্ছনা সহ্য করিস? কেন প্রতিবাদ করিস না?. তুই না আমাদের বন্ধু , তাহলে তুই কেন প্রতিবাদী হলি না?
– কেন, আমি আবার কি করলাম?
– একদম লুকানোর চেষ্টা করবি না বলে দিলাম। আমি সবটাই দেখেছি। আর এর উচিৎ শিক্ষাও দিয়ে এসেছি ওই রিয়াটা কে । ওই রিয়া এখনো এই আকাশ কে চিনে না। চিনলে এই আকাশের বন্ধুকে এভাবে সবসময় অপদস্থ করতো না।
– কি করেছিস তুই রিয়ার সাথে?
– তোর সাথে যা করেছে, সেটা সুদে আসলে ফেরত দিয়ে এসেছি। চোখমুখ শক্ত করে কথাগুলো বললো আকাশ ..
– মানে, কি করেছিস ওর সাথে তুই? এমনিতেই ও আমাকে ঘৃণা করে, তারউপর তোরাও যদি ওর সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করিস তাহলে তো ওর কাছে আমি আরও ঘৃণিত হয়ে যাবো রে।
– থাপ্পড় খাবি একটা, ও তোকে ঘৃণা করলো নাকি খারাপ বললো সেটা তুই কেন ভাববি…
নিজের খেয়ে অন্যের গরু চড়াবি কেন?
বেশি কথা বলবি না, ক্লাসে চল।
– হুম চল..
..
রাতে রিয়া ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বারবারই রাজের কান্নাভরা মুখটা তার চোখে ভাসছে। সেই সাথে রিমা আর মিমের বলা কথাগুলোও কানে বাজছে তার। কি করবে বুঝতে পারছে না রিয়া।
কিন্তু সে বেশ বুঝতে পারছে রাজের সাথে সে অন্যায় করেছে। ..
আজকাল রাজ আমাকে খুব এড়িয়ে চলছে, আমার দিকে তাকায়না পর্যন্ত। তাহলে কি রাজ আমাকে এখন আর ভালোবাসে না? ভাবতেই বুকে ব্যাথা অনুভব হলো তার। পরক্ষণেই আবার ভাবলো..
– আমার কেন এইরকম অনুভূতি হচ্ছে। আমিতো নেহাল কে ভালোবাসি। যদিও রাগের বশে ওকে ভালোবেসেছি, কিন্তু বেসেছিতো। তাহলে রাজ আমাকে ভালোবাসলো কি বাসলো না, সেটা ভেবে কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি?
অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে রিয়ার মনে। কিন্তু কোনো কিছুরই উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সে।
নানান কথা কল্পনা, জল্পনা করতে লাগলো রিয়া। এমন সময় পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেলো সে। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো মা দাড়িয়ে আছে।
– মা, তুমি এতো রাতে, এখানে?
– হুম.. তুই সেই কখন থেকে ছাদে এসে বসেছিস। রাতে খাস নি পর্যন্ত। কিছু হয়েছে কি তোর?
– আমার আবার কি হবে?. তুমি খামোখাই টেনশন করছো।
– কিছু না হলেই ভালো। এখন নিচে আয়। খেয়ে ঘুমাবি। অনেক রাত হয়ে গেছে।
– তুমি যাও মা, আমি আসছি।
– আসছি বললে হবে না। এখনই আয়। মেয়েরা এত রাত পর্যন্ত ছাদে থাকলে কেমন দেখা যাই চল তোকে খাইয়ে আমি ঘুমাবো। তোর বাবাও ঘুমিয়ে গেছে।
– হুম চলো..

রাত বাজে ১:৩০..
এখনো ঘুম নেই রাজের চোখে। সেই কখন থেকে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে। কিন্তু ঘুম তার চোখে ধরা দিচ্ছে না। নিজের মনে নিজে ভাবছে..
– অনেক কষ্টে তোমাকে ভুলতে চেয়েছিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলাম। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েও গেছিলাম আমি। তাও আবার কেন আমাকে অস্বাভাবিক করে দিলে। কেন আমাকে আবারও কষ্ট দিলে? আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমাকে এতো ঘৃণা করতে হয় তোমার?

নিজের অজান্তে কান্না করে দিছে রাজ । নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে তার।
..
পরেরদিন আর ভার্সিটিতে যায়নি রিয়া। সারাদিন ঘুমিয়েছে আর বিকেলে গিয়ে ছাদে বসেছে। ছাদে বসামাত্রই ফোনে কল এলো রিয়ার …
ফোনের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রিসিভ করলো সে।
– হ্যাঁ বলো.. কল দিয়েছো কেন?
– রাগ করে আছো সোনা?. sorry .. মাফ করে দাও আমাকে।
– বাজে কথা রাখো। ফোন করেছো কেন সেটা বলো।
– এখনো রেগে আছো? অবশ্য রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমাকে মাফ করো বাবু। আমি ভেবেছিলাম ওই রাজ ছেলেটা তোমাকে ইম্প্রেসড করতে চেয়েছে। তোমাকে খুব ভালোবাসি। তাই ভয় হয়েছিলো যদি ও তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয় তাই এমন করেছিলাম। তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো না সোনা। মনে হয়েছিলো যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি, তাই এমন করেছিলাম। মাফ করে দাও বাবু…
– আচ্ছা ঠিকআছে, তবে আর কখনো এমন করোনা নেহাল । আমাকে ওর কাছে আর অপরাধী করোনা।
– আচ্ছা সোনা।
– এখন রাখছি। bye
– ok bye …
রিয়া ফোনটা কেটে দিলো। ওইদিকে নেহাল বসে বিজয়ের হাসি দিলো। তার অভিনয় করে বলা কথাগুলো কাজে দিয়েছে।
..
রিয়া বসে ভাবছে নেহালের কথাগুলো ..
ওতো ঠিকই বলেছে, কে চায় তার ভালোবাসাকে অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাক। নেহাল তো ওর ভালোবাসা নিজের করে রাখার জন্যই এমন করেছে। ও তো কোনো অন্যায় করেনি। যার ভেতর হারানোর ভয় আছে সেই তো সত্যিকারের ভালোবাসতে জানে। নেহাল আমাকে হারানোর ভয়ে এইরকম করেছে। ও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই এমন করেছে। ও কোনো অন্যায় করেনি। নাহ… নেহাল ই ঠিক..
মিম আর রিমা ভুল। আমি শুধু শুধু ছেলেটাকে ভুল বুঝেছি। কিন্তু আর নাহ.. আর কখনো নেহাল কে ভুল বুঝবো না আমি। ওর ভালোবাসা দিয়েই জীবনটা আমি সাজিয়ে নিবো।
..
To be Continue …

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে