এর বেশি ভালবাসা যায় না পর্ব-৪+৫

0
1274

::::এর বেশি ভালবাসা যায় না ::::

পর্ব::(৪)

Written::Ar Limat

৩য় পর্বের পর থেকে

– আমাকে মাফ করে দিবেন ভাইয়া, আগে জানতাম না আপনারা দুজন দুজনকে ভালোবাসতেন.. তাহলে কখনোই এর মাঝে আসতাম না। আঘাত করার জন্য দুঃখিত. । ছোটো ভাই ভেবে মাফ করে দিবেন. … ছলছল চোখে কথাগুলো বললো রাজ .. তারপর এক দৌড়ে নিজের ক্লাসরুমে চলে গেলো। আকাশ আর রনি দুরে দাড়িয়ে এতোক্ষন সবটাই দেখেছে। রাজের পিছনে তারাও ক্লাসে গেলো জলদি…
..
– রিয়া., তুমি আমাকে ভালোবাসো কখনো তো বলো নি? জানো, আজ আমি অনেক খুশি.. I am So happy রিয়া..
রিয়া কিছু বলছে না, এখনো রাগে তার শরীর কাঁপছে। মিম বললো..
– মিথ্যে কেন বললি রিয়া? তুই তো কাউকেই ভালোবাসিস না, সেখানে নেহালের কথা কেন বললি..?
– নেহালের কথা তখন না বললে ওই ছ্যাচড়া ছেলেটা আমাকে শান্তি দিতো না। অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে। এইবার শিক্ষা হয়েছে। আশা করি আর কোনোদিন ভালোবাসার দাবী নিয়ে আমার সামনে ভুলেও আসবে না।
– এইটা কিন্তু তোর বাড়াবাড়ি। জানি ছেলেটা তোকে একটু বেশিই জ্বালায়.. কিন্তু এটা পেতেও ভাগ্য লাগে. । কয়জনের কপালে জোটে এইরকম ভালোবাসা? ছেলেটা তোকে সত্যিই ভালোবাসে রে..
– তোর নীতিবাক্য তোর পকেটে ভরে রাখ..
নেহালের দিকে তাকিয়ে রিয়া বললো..
– নেহাল , আমাকে ভালোবাসতে তোমার কোনো আপত্তি আছে?
– কি বলছো তুমি রিয়া.. আপত্তি থাকবে কেন?
তুমি তোমার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে , তোমাদের .. টাকা পয়সা, বাড়ি – গাড়ির কোনো অভাব নেই..তাছাড়া তুমি আমার স্বপ্নের রানী তোমাকে ভালোবাসতে আমার কেন আপত্তি থাকবে …
– Ok done …আজ থেকে তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড ..
কথাটা বলেই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো রিয়া। নেহাল যেনো এখন চাদ হাতে পেলো.. ।
..
ক্লাসের এক কোনায় একটা বেঞ্চে বসে মুখ ভার করে মাথা নিচু করে বসে আছে রাজ । আকাশ আর রনি তার সামনের বেঞ্চে রাজের দিকে মুখ করে বসে আছে। আকাশ বলছে..
– কি শয়তান মেয়রে বাবা, এতোগুলো মানুষের সামনে এভাবে তোকে অপমান করতে পারলো.. । ইচ্ছে করছিলো গিয়ে থাপ্রাই.. হুহ..
রাজ কিছু বলছে না। রনি বলতে লাগলো..
– বেশ হয়েছে। ওর এটাই প্রাপ্য ছিলো। কতো করে বুঝিয়েছি যে তোকে ভালোই বাসেনা তার পিছনে বেহায়ার মতো এভাবে পরে থাকিস না… নাহ, সে যাবেই। এবার প্রেম করার সাধ মিটেছে তো তোর? বেশ রেগে কথাগুলো বললো রনি ..
রাজ ঘুমটি মেরে বসে আছে ।সে যেন কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছে । নিজের অজান্তে কেঁদে ফেললো। রনি ও কেদে দিলো।
– তুই এইবার কান্না থামাবি নাকি, কার জন্য কাদছিস তুই? যে তোর ভালোবাসার কোনো মুল্যই দিলো না তার জন্য? সে তো নতুন প্রেমিক পেয়ে সুখেই আছে.. তাহলে তুই কেন এতো কষ্ট পাচ্ছিস? কাঁদতে কাঁদতে রনি বলতে লাগলো।
রাজ এইবার মাথা তুলে রনির দিকে তাকালো।
– কাদছিস কেন তুই?
– কাদবো না তো নাচবো? তুই কেন কাদছিস? কার জন্য কাদছিস? কে না কে তোকে যা তা বললো সেটা শুনে তোর কাঁদতে হবে?
আরে জীবনটা তোর। এটাকে তোর মতো সাজিয়ে নে। জীবনটাকে ঠিক কর। ভালোবাসার জন্য তোকে কারো পিছনে পরে থাকতে হবে না, ভালোবাসাই তখন তোকে খুজে নিবে দেখে নিস।
রাজ রনি কে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কেদে দিলো ।আসলে ছেলেটা এত কষ্ট নিতে পারছে না কাঁদতে কাঁদতে বললো..
– তোরা এতো ভালো কেন রে? এতো ভালোবাসিস কেন আমায়? এতো ভালোবাসা কি আমার কপালে সইবে? ছেড়ে যাবি না তো আমাকে?
– চড় খাবি একটা বলে দিলাম।
– দেনা, আরেকটা গাল বাকি আছে তো.. । একটাতে চর দিলে নাকি বিয়ে হয়না,জানু তো , এতোটুকু বলেই রাজ থামলো.. তারপর কি ভেবে আবার বললো.. Sorry রিয়া তো একটাতেই দিলো। তুই আরেকটা দিয়ে পুরো করে দে।
… রাজের কথায় আকাশ আর রনি হেসে দিলো। রাজ ছলছল চোখেই মুচকি হাসলো। নাহলে যে ওদের মন খারাপ থাকবে।
– তুই হটাৎ জানু ছেড়ে রিয়া বললি যে? (আকাশ )
– কি করবো বল, তখন তো ও আমার ভালোবাসা ছিলো, তাই ভালোবেসে জানু ডেকেছি, কিন্তু এখন ও অন্যকারো ভালোবাসা। তাই এই নামে ডাকার অধিকার আমার আর নেইরে ..
– মন খারাপ করিস না রে.. আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
– হুম..
..
পরেরদিন আর ভার্সিটিতে গেলো না রাজ … সেদিন কলেজ থেকে ফিরে সোজা ছাদে চলে গেলো সে । খায়নি কিছু। সারারাত কেঁদেছে ছেলেটা । কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তার ভালোবাসা অন্য কারো হয়ে গেলো।। বাবা মা কেউই তাকে সেদিন রুম থেকে বের করাতে পারেনি। এমনকি আজ সর্ব প্রথম সে সিগারেট খেলো ।শুনেছে সিগারেট খেলে নাকি কষ্ট দূর হয় কিন্তু এক পেক সিগারেট শেষ করে ফেললো তবুও কষ্ট টা কমলো না
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বাবা মায়ের সামনে গেলো রাজ ..
– রাজ , কাল কি হয়েছিলো তোর?
– কিছু হয়নি মা, তোমরা খামোখা টেনশন করছো।
– তাহলে রাতে খেলিও না, এতো করে ডাকলাম, কথা বলিস নি কেন?
– ঘুমিয়ে গেছিলাম আব্বু।
– কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে বল। আমাদের তো তোকে নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে ।
– বাদ দাও.. খিদে পেয়েছে। খাবো..
– হুম আয়..
রাজ ওর বাবা মায়ের সাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো। ব্রেকফাস্ট করে রাজের আব্বু অফিসে চলে গেলেন আর মা .. নিজের রুমে।
রাজ নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো…
ছাদের কর্নারে একটা চেয়ার পাতা… চেয়ারটায় বসে ফোনের কন্টাক্ট নাম্বারে চোখ বুলাচ্ছে। তখনই সামনে জানু নামে সেইভ করা নামবারটা চলে আসলো। কিছুক্ষন নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে থাকলো রাজ । তারপর নাম্বারটা ডিলিট করে দিলো সে। থাকলে যদি কখনো মনের ভুলে রিয়াকে বিরক্ত করে। নাহ, সে আর রিয়ার কাছে ছ্যাচড়া হতে চায়না।
চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে রাজের । পানিগুলো বার বার নিজের হাতে মুছে নিচ্ছে, তবুও পানি বাধ মানছে না। আকাশটা ও আজ কালো অধারে ঢেকে যাচ্ছে। মেঘ জমেছে খুব। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। তখন ই একটা গান মনে পড়লো রাজের ,,,,,,,,,,, ,,,,,,
<<<<<কত মেঘের রোদ্দুরে এ জীবন আমারʼʼʼ বুক পকেটে লুকিয়ে রাখি দুঃখ যে অপার >>>>>

<<<<<কতটা চোখের জলে হয় নোনা সমুদ্দুর 'ʼʼʼ হারিয়ে যাবো এই আমি দূর বহু দূর >>>>>>

<<<<<<কষ্ট গুলো থাক আমারি হয়ে পরাজয় ʼʼʼʼʼ জানেই জানুক এ রিদয় >>>>>>>

রাজ চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। তখনই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলো.. যাক ভালোই হলো.. বৃষ্টির পানিতে তার চোখের পানিগুলোও ধুয়ে যাবে। কেউ বুঝতেও পারবে না তার চোখের ভাষা। প্রায় দুঘন্টা একনাগাড়ে বৃষ্টি হলো.. আর এই দুইঘন্টা রাজ ছাদেই বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলো। যখন বৃষ্টি কমলো.. তখন নিচে এসে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে শুয়ে পরলো সে। এই গরমেও খুব ঠান্ডা লাগছে আজ রাজের । কম্বলটা টেনে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো সে।
..
টানা এক সপ্তাহ জ্বরে ভগেছে রাজ … । তাই এই সাতদিনে ভার্সিটি যেতে পারেনি সে। ট্রীটমেন্টের কোনো ত্রুটি রাখেনি রাজের বাবা মা একমাত্র ছেলেকে যে তারা অন্নেক বেশি ভালোবাসে । আকাশ আর রনি দুদিন দেখা করে গেছে। … ..
আজ ভার্সিটি যাবে রাজ । অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হবে, ক্যাম্পাস টা দেখবে ভাবতে খুশি লাগছে রাজের । পরক্ষনেই সেদিনের কথাটা মনে পরতেই মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু নাহ, এইসব নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না।রনি তো তাকে বলেছে নিজের লাইফ টা নিজের মতো করে সাজাতে। তাই করবে রাজ । পিছনের সব কিছু ভুলে গিয়ে আজ থেকে তার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবে সে।
..
৯:৩০ মিনিট ..
ভার্সিটির বড় বট গাছটার নিচে বসে কথা বলছে নেহাল আর রিয়া। নেহাল বকবক করছে কিন্তু রিয়ার তেমন কোনো রেসপন্স পাচ্ছে না সে।
তখনই তমা আর মিম এসে উপস্থিত হলো সেখানে.. তমা বললো..
– hello guys … কি খবর?
– ভালো, তোর কি খবর? (রিয়া )
– আমি সবসময়ই ভালো থাকি … (তমা)
– আচ্ছা রিয়া, রাজের কোনো খোঁজ নিয়েছিস? ছেলেটাকে সেদিনের পর থেকে ক্যাম্পাসে আসতে দেখিনি। কোনো বিপদ হলো না তো..? (তমা )
– ও মরে যাক, ওর মতো ছেলের মরে যাওয়াই ভালো (নেহাল )
– তাহলে একাই রাজত্ব করতে পারবে তাইতো? (তমা )
– ম মানে?
– তুতলাবে বে না, তোমার জন্যই সব হয়েছে। অন্যের ক্ষতি করে নিজে কখনো সুখী হতে পারবে না দেখে নিও … ভালোবাশো তো ওর টাকা পয়শা কে, মাঝখান থেকে ওই বোকা ছেলেটাকে কাদালে .. ওর দুর্বলতার সুযোগ নিলে .. সেদিন তুমি যদি সিনক্রিয়েট না করতে তাহলে আজ এমন হতো না, তুমিতো তো জানতএ ছেলেটা কতো সহজ সরল, তাই রিয়া কে উস্কানি দিয়েছিলে … সুযোগ নিয়েছিলে .. । ভাবতেই ঘৃণা লাগে তুমি আমাদের ফ্রেন্ড . বেশ রেগে গিয়ে কথাগুলো বললো তমা । আর নেহাল তখনই
রাগ দেখানো শুরু করে দিলো..
– রিয়া , দেখেছো? ও কিসব বাজে কথা বলছে?
রিয়ার রক্ত তখন মাথায় উঠে গেলো। আচমকাই তমার গালে একটা চড় বসিয়ে বলতে লাগলো..
– নেহাল যদি লোভী হয়, তুই তো মীরজাফর। আমাদের সাথে থেকে ওই ছ্যাচড়া ছেলের উকালতি করছিস? আমার ও ভাবতে অবাক লাগছে তুই আমার বন্ধ….
লাগবে না তোর মতো ফ্রেন্ড আমার। যা আমার চোখের সামনে থেকে।
– যাচ্ছি, তবে শুনে রাখ, একটা সামান্য লোভী ছেলের উস্কানিতে যে ভালোবাসাকে চিনতে পারেনা, একটা লোভী ছেলের উস্কানীতে যে এতোদিনের বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারে, সে কখনো বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।
আমি চলে যাচ্ছি, ভালো থাকিস বলবো না.. কারণ তুই কখনো ভালো থাকতে পারবি না। পস্তাতে হবে তোকে, খুব পস্তাতে হবে। হুহ.. তমা ওদের কাছ থেকে চলে গেলো। নেহাল বেশ খুশি.. । কারণ একমাত্র তমা ই ছিলো তার বিরোধী। এখন সেও চলে গেছে। এখন পথ ক্লিয়ার। একটা শয়তানী হাসি দিলো সে।
..
রিয়া নিচের দিকে মুখ করে বসে আছে.. এমন সময় পাশে একটা হাসির আওয়াজ আসলো তার কানে.. তাকিয়ে দেখলো.. আকাশ ,. রনি আর রাজ । সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো সে। বেশ বিরক্ত হয়ে একা একাই বলতে লাগলো… এই চলে এসেছে, এইবার আবারও আমার হাড় মাংস জ্বালিয়ে ছাড়বে।।
রিয়া মুচকি হেসে আবারও রাজের দিকে তাকালো.. রাজ নিশ্চয়ই রিয়ার কাছে আসবে। যে পাজী ছেলে , আসবেই না কেন? .. কিন্তু নাহ, রিয়াকে পাশ কাটিয়ে রাজ চলে গেলো নিজের ডিপার্টমেন্টের সামনে। বেশ অবাক চোখে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে রিয়া. … যে ছেলেটা রিয়ার একটা নিশ্বাসের শব্দ পেলে তার কাছে ছুটে আসতো, সে কিনা আজ এতোদিন পর এসেও একটাবার তার দিকে তাকানোর প্রয়োজন ও মনে করলো না? … বিষয়টা খুব হার্ট করলো রিয়াকে। তারপর নিজেই নিজেকে শান্তনা করে বলতে লাগলো..
– ধুর, কি ভাবছি আমি, ওকে তো আমি ঘৃণা করি. প্রচন্ড ঘৃণা করি…. Just I হাতে হের্…
..
রাজ নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে .. কিন্তু পারছে না। রিয়ার সামনে দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে হাসিখুশিতে আসতে গিয়ে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো তার… তাও অসম্ভব ভাবে পেরেছে সে। একটা ক্লাস করে ক্যাম্পাসে গিয়ে একা একা বসে আছে রাজ । ক্লাস করতে ইচ্ছা করছে না তার…
আশেপাশে অনেকেই আছে তার। সবাই যে যার মতো আড্ডা দিতে ব্যস্ত.. এই এতো এতো ব্যস্ততার মাঝে রাজ ই একা ভাবনার জগতে আছে। রাজ এদিক সেদিক তাকালো… কিছুটা দুরে রিয়া বসে আছে নেহালের সাথে । চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। আবারও চোখ দুটো ছলছল করছে তার। চোখগুলোকে যথাসম্ভব কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু না চাইতেও চোখগুলো বার বার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। রিয়া বেশ হাসিখুশি আছে নেহালকে নিয়ে। হেসে হেসে কথা বলছে নেহালের সাথে। হয়তো নেহাল কে নিয়ে খুব সুখেই আছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।।
নাহ, এখানে আর থাকতে পারবে না সে। বাসায় চলে যাবে। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে.. নাহ না, ভাবতে পারছে না সে। রিয়ার থেকে নিজেকে যথেষ্ট লুকিয়ে ভার্সিটি থেকে বের হতে যাচ্ছে … এমন সময় পিছন থেকে রনির গলা শুনা গেলো…
– রাজ , ওই রাজ .. কোথায় যাচ্ছিস?
রনির কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো যেতে লাগলো।
রাজ কে ক্লাসে দেখতে না পেয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে আশেপাশে খোজলো সে। হটাৎ দেখতে পেলো রাজ চলে যাচ্ছে। তাই সামনে এগুতে এগুতেই জোরে ডাকলো সে রাজকে।
..
রিয়া নেহালের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো। হটাৎ ই রাজের নামটা শুনে বুকে ধক করে উঠলো.. রনির দৃষ্টি অনুযায়ী গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাজ চলে যাচ্ছে… আচমকাই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। নেহাল ব্যাপারটা খেয়াল করলো..
– কি হয়েছে রিয়া? (নেহাল )
– রাজ আমাকে খুব এড়িয়ে চলছে। কখনো এইরকম করেনি ও আমার সাথে। আনমনেই বললো রিয়া.। নেহাল রেগে গেলো রিয়ার কথায়। রেগে গিয়ে বললো..
– তুমি এখনো ওই ছেলেকে নিয়ে পরে আছো? আমাকে সামনে রেখে ওর কথা ভাবছো?
রিয়ার ধ্যান ফিরলো.. নেহাল কে বুঝাতে লাগলো সে…
– না মানে, রাগ করোনা প্লিজ… ভুল করে ওর কথা বলে ফেলেছি, সবসময় জ্বালাতো তো তাই। আর ওকে তো সহ্যই করতে পারিনা, তাই ওর কথা ভাবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। শেষ কথাটা বেশ কঠিন গলায় বললো রিয়া। নেহাল খুশি হয়ে বললো
– ঠিক তো?
– হুম…১০০%
..
দিন যেতে লাগলো…
রাজ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আগের রাজ আর এখনকার রাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যদিও মনের মধ্যে সব কষ্ট চাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করছে সে।
..
রাতে রিয়া বাসায় ফিরে সোফায় বসলো.. । রিয়ানর মা রিয়ার পাশে এসে বসলো। রিয়াকে যথেষ্ট ক্লান্ত দেখাচ্ছে। রিয়ার মাথায় হাত রেখে মা বললো..
– কিছু হয়েছে রিয়া ?
মায়ের কথায় কিছুটা হতচকিত হয়ে উঠলো রিয়া। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো..
– কক কই না তো, আমার আবার কি হবে মা?
– কিছুদিন ধরে তোকে খুবই আনমনা দেখছি, কি হয়েছে বল আমাকে?
– কি যে বলো মা, আমার আবার কি হবে, তুমি খামোখাই চিন্তা করছো।
– কিছু না হলেই ভালো বাবা.. । চল খাবি..
– হুম, খাবার রেডি করো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রাতের খাবার সেরে রুমে গিয়া শুয়ে পড়লো রিয়া। কেন জানি কিছুই ভালো লাগছে না তার। ভালো না লাগার কারনটাই খোজে পাচ্ছে না সে। । এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো তার। রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে না, তাও করলো। তা নাহলে নেহাল হয়তো রাগ করবে।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে কানে ধরে কথা বলা শুরু করলো সে..
– হ্যালো নেহাল ..
– কি করছো রিয়া?
– এইতো শুয়ে আছি। তুমি?
– শুয়ে আছি। খেয়েছো?
– হুম। আচ্ছা কেন ফোন করেছো?
– কেন ফোন করেছি মানে? রিয়া, আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড । আমি যখন তখন তোমাকে ফোন করতে পারি.. তাইনা?
– Oh sorry … আসলে একটু আনমনা হয়ে গেছিলাম।
– হ্যাঁ … ইদানীং তুমি খুবই আনমনা, আমি তো এখন পুরোনো হয়ে গেছি, ন্যাকামো করে বললো নেহাল .. 🙃
– এই ছিঃ ছিঃ
এইসব কেন বলছো। তোমাকে আমি ভালোবাসি, আর ভালোবাসা কি কখনো পুরোনো হয়? কথাটা রিয়া নেহালকে বললো ঠিকই.. কিন্তু বলে আবার ভাবতে লাগলো.. “আমিকি নেহাল কে সত্যিই ভালোবাসি? না না, আমিতো রাজের কাছ থেকে মুক্তি পেতে আর রাগের মাথায় ওকে ভালোবাসার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এখন কি হবে? এই ছেলেটা যে আমাকে সত্যিই ভালোবাসে। এখন যদি আমি মানা করি, তাহলে তো ও কষ্ট পাবে। … মাথা ঘুরছে রিয়ার। কি হবে এখন।
– কি হলো রিয়া? হারিয়ে গেলা নাকি?
হটাৎ নেহালের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো রিয়া।
– না না, বলো..
– বলছিলাম কি, কিছুদিন পর আমার বার্থডে। – তাই? কই বলোনি তো…
– এইতো বললাম..
– তোমার বার্থডে কবে?
– এইতো… সামনের শুক্রবার ..
এখন বলো বার্থডে তে আমাকে কি গিফট দিবা?
– এই বোকা, গিফট কি কেউ চেয়ে নেয়? আর কি দিবো সেটা এখনো ডিসাইড করিনি। মাত্রই তো খবর পেলাম। সময় হোক, গিফট পেয়ে যাবা…
– হুম.. গিফট টা কিন্তু খুব দামী কিছু দিতে হবে। নাহলে আমার ফ্যামিলির সামনে আর ফ্রেন্ড সার্কেলের সামনে আমার মাথা কাটা যাবে বলে দিলাম…
এখন রাখি, bye …
– হুম..
নেহাল ফোনটা রেখে দিলো। রিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে, গিফট তো গিফটই … সেটা দামী হোক আর কমদামী। তাই বলে সে এভাবে বলবে?
মনে হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে রিয়ার।

<<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>>

পর্ব::(৫)

Written::Ar Limat

আর একদিন পর নেহালের বার্থডে .. তাই দুদিন ধরে নেহাল ভার্সিটি যাচ্ছে না আর রিয়াকেও যেতে দিচ্ছে না। শুধু রিয়াকে নিয়ে ডিসকাস করে কিভাবে পার্টি এরেঞ্জ করবে, কিভাবে বার্থডে স্পেস সাজাবে… কাকে কাকে ইনভাইট করবে… আর একটা কথা তো রিয়াকে বলবেই … সেটা হলো .. রিয়া তাকে কি গিফট করবে সেটা মনে করিয়ে দেওয়া। গিফটের ব্যাপারটায় রিয়া বেশ বিরক্তই হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাও মুখ বুঝে সব সহ্য করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যের পরে নেহাল তার সব ফ্রেন্ড সার্কেল, আর ফ্যামিলি নিয়ে বার্থডে স্পেসে উপস্থিত হলো..
একটা কমিউনিটি সেন্টারে জমকালো পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সবাই খুব ইঞ্জয় করছে। রিয়া এখনো পার্টিতে জয়েন করেনি। সেদিকে নেহালের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে পার্টি ইঞ্জয় করছে। রাত ১০ টায় কেক কাটা হবে। এর আগে সবাই যে যার মতো ফুর্তি করবে। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। দশটা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি.. রিয়া এখনো সেখানে উপস্থিত হয়নি। নেহাল কেইক কাটার প্রিপারেশন নিচ্ছে…এমন সময় রিয়া এসে উপস্থিত হয় সেখানে। রিয়াকে দেখে নেহালের মুখেও হাসি ফুটলো।
নিজে গিয়ে অভ্যর্থনা জানালো রিয়াকে..
..
– এতো দেরী হলো কেন তোমার?
– ওই জ্যামে আটকা পরেছিলাম।
– ওহ, আমার গিফট কোথায়? তোমার হাত তো দেখছি খালি… আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই আমাকে কতো দামী দামী গিফট করলো আর তুমি খালি হাতে এসেছো.. ? উল্টো দিকে ঘুরে বেশ রাগী গলায় কথাটা বললো নেহাল …
রিয়া কিছুটা অবাক হলো নেহালের কথায়। তারপর ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো সে। নেহাল কে অবাক করে দিয়ে নেহালের অনামিকা আঙ্গুলে রিং টা পরিয়ে দিলো সে। নেহাল আচমকায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। সকলের সামনে রিয়াকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো..
– তুমি আমার জন্য এত দামি গিফট আনলে ? আমিতো ভাবতেই পারছি না কেউ আমাকে এতো দামী একটা ডায়মন্ড রিং গিফট করবে। I am so happy .. I love you baby …
I am proud of you …
– ছাড়ো নেহাল .. এখানে অনেকেই আছে.. আর তোমার কেইক কাটার সময় হয়ে গেছে।
– হুম চলো..
নেহালের একপাশে রিয়া দাড়ালো.. আর রিয়ার পাশে নেহালের একটা মেয়ে ফ্রেন্ড দাড়ানো। রিয়া তাকে চিনে না। অন্য পাশে বাকিরা দাড়িয়ে আছে..
সবাই নেহাল কে ঘিরে দাড়ালো… নেহাল কেইক কাটলো
কেক কাটতেই সবাই নেহাল কে উইশ করতে লাগলো. রিয়া একটা কেকের টুকরো হাতে নিয়ে নেহালের মুখে পুরে দিয়ে বললো..
– Many Many happy returnees of the day dear…
– Thank you so মাচ..
নেহাল একটা কেকের টুকরো হাতে নিয়ে রিয়ার দিকে এগুতে লাগলো। রিয়া.হা করতেই পাশে দাড়ানো মেয়েটার মুখে কেকটা পুরে দিলো নেহাল।
রিয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। ব্যাপারটা তার জন্য মারাত্মক অপমানজনক। সেদিকে নেহালের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে সবার সাথে ফুর্তি করছে। সে রাতে নেহাল অনেক ড্রিংকস ও করেছে। রিয়াকেও করতে অনুরোধ করেছে সে। কিন্তু রিয়া তখনই চলে আসলো নিজের বাসায়। এইসব ড্রামা তার ভালো লাগছে না। নিজেকে আজ যথেষ্ট ছোট মনে হচ্ছে তার।
..
আরো দুইদিন পর নেহাল ভার্সিটিতে এলো। এই দুইদিন রিয়া না নেহালের সাথে যোগাযোগ করেছে আর না যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। অবশ্য নেহাল কয়েকবার রিয়াকে ফোনে ট্রাই করেছে। কিন্তু পায়নি।
রিয়া মন খারাপ করে ভার্সিটির বড় গাছটার নিচে বসে আছে। এমন সময় মিম এসে তার পাশে বসলো..
– হাই দোস্ত… কি খবর?
– এইতো ভালো। তোর কি খবর? আজকাল তোকে দেখা যায়না… ভার্সিটিতে আসিস না কেন?

– না এমনিতেই .. । যাইহোক ভালোই আছিস তাহ‌লে।
– হুম.. কিন্তু তুই ভালো নেই।
– কি করে বুঝলি?
– ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি দোস্ত… তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারি সব। কি হয়েছে বল? দেখি কিছু করতে পারি কিনা..
– আরে কি যে বলিস। কিছু হয়নি।
– বলবি না তো, আচ্ছা চাপ দিবো না। চল ক্লাসে যাই।
– নারে, ক্লাস করার মুড নেই। তুই যা।
– okk …
..
মিম চলে গেলো। রিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। এমন সময় নেহাল এসে ওর পাশে বসেই হাত জড়িয়ে ধরলো…
– কি হয়েছে রিয়া.. ? একটা ফোন দিচ্ছো না, আমার ফোন ও রিসিভ করছো না। anything wrong?
– এখানে কেন এসেছো? তোমার ওই বন্ধু কোথায়?
– কোন বন্ধু?
– ওইযে, পার্টিতে যাকে পেয়ে আমাকে ভুলেই গিয়েছিলা?…
– ওহ, রিনির কথা বলছো..
– রিনি নাকি অন্যকেউ সেটা জানার প্রয়োজন আমার নেই।
– ওলে বাবালে, আমার রিয়া বাবু দেখছি রাগ করেছে। sorry .. আসলে ওইদিন সবাই উপস্থিত ছিলো.. সেখানে তোমাকে নিয়ে এতো মাতামাতি করলে সবাই কি ভাবতো বলো?.
– তাই ওই মেয়ের সাথে মাতামাতি করেছো?
– ম মানে?
– কিছুনা , বাদ দাও…

..
নেহাল সেখানে বসে ছিলো। রিয়া কোথায় যেনো গিয়েছে নেহাল কে পাচ মিনিটের কথা বলে … প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেলো এখনও আসছেনা। নেহাল উঠে দাড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো।
রাজ সবেমাত্র কলেজে ঢুকেছে। আজ খুব লেইট হয়ে গেছে বেচারর। তারাহুরো করে আসতে গিয়ে আচমকাই নেহালের সাথে ধাক্কা খেলো সে। রাজ মাথা উচু করে sorry বলতে যাবে তখনই দেখলো নেহাল কে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বললো..
– Sorry, আমি দেখতে পাইনি।
-নেহাল কলার চেপে ধরে দেখতে পাও নি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করেছো?
– মানে? বললাম তো আমি দেখতে পাইনি। আমি দুঃখিত …
– হুহ… কিরকম বেহায়া ছেলেরে বাবা , কেমন বাবা মা জানি জন্ম দিয়েছে। পরের ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার জন্য আর কতো নাটক না জানি করবে। খুব অপমানজনক ভাবে কথাগুলো রাজ বললো নেহা।
বাবা মাকে নিয়ে কথা বলায় প্রচন্ডভাবে রেগে গেলো রাজ .. শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে নেহালের বুকে দুটি দিলো ঘুষি বসিয়ে দিলো । ছিটকে দুরে গিয়ে পরলো নেহাল । রিয়া ফিরছিলো নেহালের কাছে, তখনই দেখতে পেলো রাজ নেহাল কে মেরেছে। মাথার রক্ত গরম হয়ে গেলো তার। দৌড়ে নেহালের পাশে এসে দাড়ালো…
– কি হয়েছে নেহাল ?
রিয়াকে দেখে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো নেহাল অভিনয় কারে
কয় ।
খুব ই মন খারাপ করে বলতে লাগলো..
– রিয়া, তুমি চলে যেতেই ওই ছেলেটা আমার কাছে এসে আমাকে শাষাতে লাগলো। আমি নাকি ওর ভালোবাসা তোমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি… । আমি কতো করে বললাম আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি… কিন্তু ও বার বারই আমাকে শাসাতে লাগলো। গালি দিতে লাগলো। আমি যখন বললাম আমাদের ভালোবাসা কেউ আলাদা করতে পারবে না তখন সে আমাকে সজোরে আঘাত করলো ।…
কথাট বলেই নেহাল আবারও কাদার অভিনয় করতে লাগলো।
রাজ একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কিভাবে পারে, একটা ছেলে এ আরেকটা ছেলের নামে এতো বড় মিথ্যা অপবাদ দিতে?
..
রিয়া বেশ রাগী চোখ করে রাজের দিকে এগুতে লাগলো। রাজ খুব ভয় পেয়ে ঢোক গিলছে বারবার। আচমকাই রাজের দুই গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় দিলো রিয়া। রাজ আবারও ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকলো রিয়ার দিকে। রিয়া বলতে লাগলো..
– কখনোই আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিস নি, এখন কেউ আমাকে ভালোবাসে সেটাও চাস না তুই? তুই কেমন রে ? কারো ভালো থাকা টা কেন তোর ভালো লাগেনারে? ঘৃণা লাগে তোকে দেখলে। ছিঃ।।
রাজ রিয়ার কথায় কোনো প্রতিবাদ করলো না। মাথা নিচু করে চলে গেলো সেখান থেকে।
নেহাল একটা শয়তানি হাসি দিলো।
রিয়া নেহালের দিকে ঘুরে তাকে সামলাতে লাগলো। নেহাল আবারও ন্যাকা কান্না শুরু করে বলতে লাগল.
– আমাকে তুমি ভুলে যাও রিয়া… । তা নাহলে ওই ছেলে তোমাকে আর আমাকে দুজনকে মেরে ফেলবে।
– ওর হাত ভেঙ্গে দিবো আমি, যদি আর কখনো ওকে আমাদের আশেপাশে দেখি। আমাকে চিনেনা ও,. । কঠিন গলায় বললো রিয়া।।।
এমন সময় রিয়া কে কেউ আচমকাই নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠাস ঠাস করে দুইগালে চারটা চল দিলো.. তারপর নিজের গালেও নিজে নিজেই দুটো চর দিলো আকাশ .. । ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে নেহাল আর রিয়া। আকাশ এর চোখ দিয়ে যেনো রাগে রক্ত ঝরছে। নেহাল বলে উঠলো..
– তোর কতো বড় সাহস? জুনিয়র হয়ে সিনিয়র এর গালে হাত তুললি?
রিয়া নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যার গায়ে আজ পর্যন্ত কেউ হাত তুলেনি আজ তার জুনিয়র একটা ছেলে তাকে থাপ্পড় দিলো?
..
– প্রথমেই মাফ চাচ্ছি রিয়া আপু । নিজের গালে থাপ্পড় দিয়েছি সিনিয়র আপুর গায়ে হাত উঠানোর জন্য। আর সিনিয়র আপুর গায়ে হাত তুলেছি বাধ্য হয়ে।
– মানে? কি বলতে চাইছো তুমি? তোমার সাহস হলো কিভাবে আমার গালে, এই রিয়া চৌধুরীর গালে থাপ্পড় দেওয়ার? ঝাঁজালো কন্ঠে বললো রিয়া।
– প্রথম কারণ হলো.. আপনি বিনা কারণে একটা ছেলেকে কষ্ট দিয়েছেন। বার বার দিয়েই যাচ্ছেন, আর দ্বিতীয় কারণ, আপনি কোনো যাচাই না করেই, সত্যটা না জেনেই নিরপরাধ কে শাস্তি দিয়ে যাচ্ছেন। খুব তো বড়াই করেন, আপনি নাকি রিয়া চৌধুরী। আপনাকে বশ করা এতো সহজ না, তো আজ আপনি এতোটাই বশীভূত হয়ে গেছেন ন্যায় অন্যায় আপনার চোখে পরছে না, just নিজের রাগটা ওই রাজের উপর ঝারছেন। কি করেছে কি বেচারাটা ? আপনার কি কোনো ক্ষতি করেছে সে? হ্যাঁ মানছি, ও কোনো এক সময় আপনাকে জ্বালাতো, বার বার ভালোবাসার দাবী নিয়ে আসতো.. আর বার বারই আপনি ওকে যাচ্ছেতাই করে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বলতে পারবেন কি, সেদিনের পর থেকে এক মুহুর্তের জন্য আপনার কাছে এসেছে ও? ইনফ্যাক্ট আপনার দিকে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না, আর আপনি, . সেই আপনিই ওকে আবারও বিনা কারণে মারলেন? আপনি কি মানুষ?
– বিনা কারণে মারিনি, ও নেহাল কে অপমান ।।

-ব্যাস ব্যাস রিয়া চৌধুরানী
– ও নেহাল কে অপমান করেনি, বরং আপনার ওই নেহাল ছেলে টাকে অপমান করেছে।
– কি বলতে চাও তুমি? আমি নিজের চোখে দেখেছি ও নেহাল কে থাপ্পড় মেরেছে।
– কেন মেরেছে সেটা দেখেছেন?
– নেহাল সবটা বলেছে আমাকে।
– মিথ্যা বলেছে। আপনি তো অন্ধ, তাই আপনাকে আরও অন্ধে পরিনত করতে চাচ্ছে আপনার ওই তথাকথিত প্রেমিক নেহাল ।
– মুখ সামলিয়ে কথা বলো..
– সত্য কথা বলতে এই আকাশ কোনো দিন পিছপা হয়নি, আর হবেও না।
আরে, ছেলেটার লেইট হয়ে যাওয়ায় না হয় তারাহুড়া করে আসতে গিয়ে নেহালের সাথে একটু ধাক্কাই লাগিয়ে দিয়েছিলো, এটাই কি তার অপরাধ? আর এর জন্য নেহালের কাছে নিজে থেকে সে sorry ও বলেছে, তারপরও আপনার ওই তথাকথিত প্রেমিক নেহাল ওকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছে। শুধু অপমান করেই ক্ষান্ত হয়নি, ও রাজের বাবা মা, ইনফ্যাক্ট ওর জন্ম তুলে কথা বলেছে। তাই এইটা সহ্য করতে না পেরে রাজ নেহালকে আঘাত করেসে ।
রিয়া আকাশের কথায় শুধু অবাকই হচ্ছে । আকাশ আবারও বলতে লাগলো..
– যে ছেলেকে এতো অপমান করার পরেও মুখ তুলে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখেনি সে আজ হটাৎ কেন এতো কঠোর হয়ে নেহাল কে থাপ্পড় দিলো সেটার আসল কারনটা জানতে একবারের জন্যও কি আপনার ইচ্ছা হয়নি? ওই মিথ্যাবাদী নেহাল যা বললো তাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হলো? ছিঃ.. আপনার দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
..
হনহনিয়ে আকাশ সেখান থেকে চলে গেলো। রিয়া কঠোর ভাবে নেহালের দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো..
– ও যা বলে গেলো তা কি ঠিক?
– না মানে, ও ও মিথ্যা বলছে বিশ্বাস করো..( তুতলাতে তুতলাতে বললো নেহাল )
– আকাশ একদম সত্য কথা বলেছে.. । পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো..
রিয়া আর নেহা দুজনই কারো এই কথায় পিছনে ফিরে তাকালো..
..
To be Continue …

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে