Contract_marriage   part: 17

0
3429

Contract_marriage
part: 17

writer-Jubaida Sobti
আবির ও নিলার পিছু পিছু ড্রইং রুমে গেলো।
দাদী : আরে নিলা কই যাচ্ছিস?
নিলা কিছু বলে উঠার আগেই আবির দাদীকে বলে উঠে…
আবির : দাদী নিলার নাকি তার মামা মামীর কথা খুব মনে পরছে। তাই তাদের দেখতে যাচ্ছে।
দাদী : (নিলার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে) ও তবে কয়দিনের জন্য যাচ্ছিস?
নিলা কিছু বলে উঠার আগে আবির আবার ও….
আবির : দাদী আমি বলেছি এতো যখন মনে পরছে তাহলে তোমার যতোদিন ইচ্ছা ততোদিন থেকে এসো।
দাদী : ও তা তবে ভালো করেছিস। কিন্তু তুই যাবি না?
আবির চুপ করে আছে…..কি বলবে বুঝতে পারছে না।
নিলা : না দাদী অনার অফিসে অনেক কাজ আছে তাই অনি যেতে পারবে না। তাই না আবির?
আবির : (নিলার দিকে তাকিয়ে) হুম!
দাদী : আরে অফিসের কাজতো সারাজীবন থাকবে। কিন্তু বউ নিয়ে ঘুরার সময় কিন্তু এই দিনগুলো।
হাত থেকে চলে গেলে দিন গুলো কিন্ত আর ফিরে আসে না।
নিলা : ( দাদী ভাবী… আবিরের মা…বাবা সবাইকে বিদায় জানিয়ে বের হচ্ছে।)
বাবা : আরে নিলা তুমি একা কোথায় যাচ্ছো….
নিলা : না বাবা আমি যেতে পারবো…
বাবা : এটা কেমন কথা… আবির! তুই হা করে দেখছিস কি। যা নিলাকে পৌছে দিয়ে আয়।
আবির : জি! বাবা।
আবির আর নিলা গাড়িতে উঠলো। আবির গাড়ী চালাচ্ছে। নিলা জানালা খুলে রাতের বাতাসের সাথে বাহিরের প্রকৃতি দেখছে।
কিছুক্ষণ পর পর রাস্তার ল্যাম্প গুলোর হলুদ আলো নিলার মুখের উপর এসে পরছে। চোখের নিচে ভেজা ভেজা কাজল লেপ্টানো। কি মায়াবী তার চোখ।
চুল গুলো উড়ে এসে কিছুক্ষণ পর পর মুখের উপর পরছে।নিলা বিরক্ত হয়ে চুলগুলো কাধের একপাশে নিয়ে যায়।
আর একপাশ কাধ পুরাটা খালি হয়ে যায়।
নিলা কিন্তু অধিক ফর্সা একবার চিমটি কাটলেই যেন ঐ জায়গায় রক্ত জমে লাল হয়ে যাবে।
আবির কোণা চোখে কিছুক্ষন পর পর নিলার দিকে তাকায়।
আবির : নিলা তুমি কি আমাকে ভুলে যাবা?
নিলা আবিরের দিকে তাকালো…
আবির : না মানে এটা বলছি যে…এতোদিন একসাথে ছিলাম আমরা মনে থাকবে তো আমার কথা।
নিলা : (মনে মনে নিজেকে ভুলে যেতে পারি আবির কিন্তু আপনাকে ভুলার মতো সাহস আমার নেই।)
আবির : কি হলো কিছু বলবানা?
নিলা : আপনি হয়তো জানেন না ড্রাইভিং করার সময়… শুধু ড্রাইভিং রুলস follow করতে হয়।
আবির : আপনি হয়তো জানেন না… আমি স্টানার। so স্টানারদের ড্রাইভিং করার সময় রুলস follow করার প্রয়োজন হয় না।
নিলা : আপনার বাবা জানে আপনি এসব করেন।
আবির : হা হা হা হিটলার যদি জানতো…. বাড়িতে রাখতো নাকি আমায়…
নিলা : তার মানে আপনি আপনার পরিবারকে ধোকার উপর ধোকা দিয়েই আসছেন।
আবির : (একটু রেগে) এটা ধোকা না নিলা… it’s my hobby…
আমাকে নিকাম্ম্য বলে তাই না। কারন আমি কিছুই করিনা। যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা হতে দেয়নি। বাবা শুধু নিজের কথায় ভাবে..এসব স্টান করার চেয়ে তার ব্যবসায়ে হাত বাড়ালে নাকি তার ব্যবসায়ে লাভ হবে।
নিলা! আমার একবার স্টানে যতটাকা একদিনে আমি ইনকাম করবো ঐ টাকা বাবা একমাসে ইনকাম করে। Anyway forget it.. এসব আর বলে কি লাভ।
নিলা : হে কিন্তু এটাই আপনার জীবন ঝুকির উপর তাই হয়তো করতে দেইনি।কারন আপনার জীবনের প্রতি দয়া হয়তো আপনার নেই কিন্তু আপনার পরিবারের তো আছে।
ঠিক বলেছেন আপনার বাবা শুধু নিজের কথায় ভাবছে। তাই আপনার বাবার টাকা শুধু আপনার বাবাই খরচ করছে। পকেটে চার-পাচঁটা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ঐ বাবার টাকা কে খরচ করছে।
আপনার ঐ স্টান করার জন্য রেসিং কার আর বাইকের জন্য টাকা কোথা থেকে আসছে।….
. (একটু হেসে নিলা) আমি ও পাগলের মতো কাকে বুঝাতে চলছি…যে কিনা শুধু নিজের সার্থ চিনে। যে কিনা নিজের পরিবারের কথা কখনো ভাবেও নি। আপনার মতো বড়লোকের ছেলেরাই পারে এসব বলতে।
আবির রাগে খুব জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো…
নিলা : এইখানে আপনার কার স্টান চলছে না এতো জোরে গাড়ি চালানোর প্রয়োজন নেই।
আবির চুপ করে আছে নিলা ও চুপ করে আছে। দুজন দুজনকে আর কিছু বলছে না। নিলার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে।
নিলা এবং আবির এসে পৌছালো….
নিলার মামা মামীতো অবাক পুরা… এইসময় তাদের এভাবে আসা…
মামী : আরে আবির আসো ভেতরে আসো…কিভাবে আসা হলো..আমাদেরতো ভুলেই গিয়েছো…
শ্রেয়া : (হেসে হেসে) মা আবির ভাইয়া নিলা আপুকে পেয়ে গিয়েছে.. আপু এখন ভাইয়ার সাথেই থাকে… তাই এখন আর এইখানে আসার কি দরকার মনে করে…. তাই না ভাইয়া?
আবির : না মামী তেমন কিছু না…আসলে ব্যস্ততার কারনে আসতে পারিনি।
হাই শ্রেয়া!
শ্রেয়া : হ্যালো……
নিলা তার মামী এবং শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো..
মামী : কি হলো নিলা কাঁদছিস কেনো..
নিলা : চোখ মুছে… অনেকদিন হলো.. মামী তোমাদের দেখিনা তাই…
মামী আর নিলা ভেতরে গেলো।
মামী : নিলা একটা ফোন দিয়ে আসতি।জামাইটা এসেছে ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা করা ও হয়নি। আগে বলে দিতি সব রান্না করে রাখতাম।
নিলা : মামী কিছু হবে না… বাসায় কতো কিছু রান্না করে কিন্তু অনি তেমন কিছু খায়না যে কোনো একটা দিয়েই খায় শুধু।
মামী : চুপ! না খেলে ও এভাবে দেওয়া যায় নাকি।তুই যা আবিরের পাশে গিয়ে বস আমি ততোক্ষনে রান্না করেনি।
নিলা : মামী আমিতো এসেছি তোমাদের সাথে কথা বলতে।
মামী : নিলা!! আবির এভাবে একা বসে থাকবে নাকি যা… জিদ করিস না।
মামী ড্রইং রুমে গিয়ে আবির তুমি বসো হে… নিলা তুই ও বস এইখানে।
শ্রেয়া তুই আয় আমার সাথে
আবির : না মামী আমিতো নিলাকে দিতে এসেছি। আমি চলে যাবো।
মামী : চলে যাবা মানে! কতোদিন পরে এসেছো জানো… বসো এইখানে।তোমার মামা জানলে এভাবে খালি মুখে চলে গিয়েছো তাহলে অনেক রাগ করবে। তুমি বসো অনি ও এক্ষুনি চলে আসবে।
আবির : আরে না মামী সমস্যা নেই।অন্য একদিন আসবো আবার।
আবির অনেক জোর করে চলে আসার জন্য কিন্তু নিলার মামী আর শ্রেয়া আবিরকে আসতে দেইনা।
নিলার মামা ও আসে রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে।
রাতে আবির বাসায় চলে আসে।
মা : আবির তুই কি খেয়ে এসেছিস।
আবির : হে মা! মামী খাওয়া ছাড়া ছাড়ছে না।
মা : ভালোই তো করেছে। আচ্ছা নিলা কবে আসবে?
আবির : মা! আমি খুব টায়ার্ড… ঘুম পাচ্ছে এখন যায়।
আবির চলে আসে… রুমে।
রুমে আসার পর আবিরের হঠাৎ নিলার কথা অনেক মনে পরছে।
আবির : (ভাবছে) আমার কেনো এতো…মনে পরছে অর কথা।
এখন থেকে আমার পুরা রুম আমার… শান্তি এখন আমার লাইফ।
নিলা ও নেই তারা ও নেই।
কিন্তু নিলা এভাবে না গেলে পারতো…নিলার সাথে তো আমার বিয়ে হয়েছে…
আরে চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে… এমনিতেও চলে যাওয়ার কথা।
ঐ দিকে নিলা তার রুমে কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে…..
মামী : নিলা কি হয়েছে এভাবে কাঁদছিস কেনো বলবি? নিলা আমার কসম সত্যি করে বল কি হয়েছে?
আবির কিছু করেছে তুকে?
নাকি তোর শাশুড়ি কিছু বলেছে।
নিলা : ( ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদেই চলছে)
মামী গিয়ে নিলার মামাকে ঢেকে আনে।
মামা : নিলা দেখ তুই যদি আমাদের না বলিস তাহলে আর কাকে বলবি।
বল কি হয়েছে আবির কিছু করেছে?
নিলা : মামা মামীকে সব খুলে বলে।
মামা আর মামী পুরা অবাক।দুজনেই কেঁদে দেই।তারা নিলার সাথে এটা কেমনি হতে দিলো…
বড় ঘর থেকে নিলার জন্য প্রস্তাব আসায় তারা একবার ও ভেবে দেখেনি….নিলার জন্য এই বিয়ে পারফেক্ট নাকি…. না…
মামা : নিলা তুই আর ঐ ঘরে যাবিনা যা করার এখন আমি করবো…
আবিরের সাথে ও আর কথা বলবিনা।
আবির সকালে ঘুম থেকে উঠলো…কেমন যেন খালি খালি লাগছে রুমটা।
যাক ফ্রেস হয়ে নিচে গেলো।
আবিরের বাবা দাদী ভাবি ভাই…মা সবাই আজ একইসাথে ড্রইং রুমে বসে আছে…
চেহেরা দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা অনেক টেনশনে আছে।
আর হিটলার এর চেহেরা হিংস্র প্রাণির মতো টলমল করছে যেন আমাকে সে এখনি খেয়ে ফেলবে।
আবির : কি হয়েছে সবাই এভাবে বসে আছো কেন? মা নাস্তা দাওতো খুব খিদে পেয়েছে।
বাবা : সব কিছু বন্ধ তোর আজ থেকে…এই ঘরে থাকা ও বন্ধ। আমার তো লজ্জা করছে তুকে আমার ছেলে মনে করতে।
আবির : আরে… কি করেছি সেটাতো বলো?
দাদী : কি করেছিস আবির! তুই নিলার সাথে এমন কেমনি করলি। তুই ঐ তারা মেয়েটার জন্য এভাবে বিয়ে করেছিস? বিয়েটা কি পুতুল খেলা ইচ্ছা হলো তো
খেলেছিস না হলো তো ছুরে ফেলে দিয়েছিস।
বাবা : মা ওকে এতোকিছু বুঝিয়ে লাভ নেই চলে যেতে বলো এইখান থেকে।
দাদী : ( আবিরের বাবার কাছে গিয়ে) ছেলে মানুষ কচি মন এখনো….তাই ভুল করে ফেলেছে। বুঝিয়ে বল এভাবে গরম না হয়ে।
বাবা : আরে মা আর কতো বুঝাবো তুমি বলো ছোট বেলা থেকেই ওকে এভাবে ছাড় দিয়ে দিয়ে তুমি খারাপ করেছো…
কিন্তু আজ ও একটা মেয়ের জিবন নিয়ে খেলা করছে।
মেয়েটির মামা আমাকে ফোন দিয়ে কি কি বলেছে জানো…. লজ্জায় তো আমার নাক কাটা গিয়েছে।
(বাবা একটু কাদো কাদো ভাবে)
মা নিলাকে ওর মামা আর দিবেনা বলেছে। না দেওয়ারি কথা যদি আমার মেয়ের সাথে এমন হতো তাহলে আমরা ও ঠিক এমনটা করতাম।
কয়েকদিনের মধ্যে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবে বলেছে।
আবির : কি! ডিভোর্স পেপার! কিন্তু কেনো….
বাবা : তুই আর কথা বলবি না যা এইখান থেকে বেরিয়ে যা।
ভাবী : বাবা মাথা ঠান্ডা করে কাজ করুন সবাই একসাথে এমন করলে তো চলবে না। আবিরকে বের করে দিলে তো কাজের সমাধান হবে না।
বাবা : ঠিকাছে তাহলে ওকে বলো নিলাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে।
যদি পারে ঐদিন ওকে বাড়িতে আসতে বলো।
আর যদি না পারে তাহলে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হতে বলো….
ভাবী : আবির! যা নিলাকে গিয়ে নিয়ে আয়। তুই বুঝিয়ে বললে নিলা চলে আসবে দেখিস।
আবির কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসে।
কিছু বুঝতে পারছে না ঝামেলার উপর ঝামেলা।
নিলাকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া হিটলার আবার বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।
আবির নিলাদের বাসায় গেলো…
নিলার মামা আবিরকে দেখে খুব রেগে যায়।
মামা: কি জন্য এসেছো এইখানে।
আবির : মামা আমি নিলার সাথে একটু কথা বলতে চায়।
মামা : নিলা এইখানে নেই। যাও এইখানে আর আসবা না। নিলার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেনা।
আবির চলে আসে নিলাদের বাড়ির গেইটের বাহিরে।
মাথায় কিছু কাজ করছে না কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে নিলাটা একবারো বারান্দায় আসেনি।
হঠাৎ তার মনে পড়লো শ্রেয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখা যাক।
আবির শ্রেয়াকে ফোন দিলো…
আবির : শ্রেয়া প্লিজ আমাকে নিলার সাথে একটু দেখা করিয়ে দাও।
শ্রেয়া : কিন্তু ভাইয়া বাসায়তো বাবা আছে।
আবির : শ্রেয়া প্লিজ যেভাবেই হোক….প্লিজ একটু ট্রাই করে দেখো।
শ্রেয়া : আচ্ছা একটা কাজ করেন আপনি বাড়ির পিছনের দরজার ঐদিকে আসেন।
আবির শ্রেয়ার কথা মতো পিছনের দরজার ঐদিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষন পরে শ্রেয়া এসে দরজা খুলে আবিরকে ভেতরে ঢুকালো।
শ্রেয়া : ভাইয়া আস্তে আস্তে আসেন বাবা ড্রইং রুমে আছে। আপু রুমেই আছে। শুনেন ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েন আর দেরি করিয়েন না রুম থেকে বের হওয়ার আগে আমাকে ফোন দিয়েন।
আবির : আচ্ছা ঠিকাছে।
আবিরকে শ্রেয়া রুমে ঢুকিয়ে দিলো নিলা আবিরকে দেখে পুরা অবাক।
নিলা : আপনি এইখানে কেনো এসেছেন? আর মামা জানে? আপনি ভেতরে কেমনি এসেছেন?
আবির : নিলা প্লিজ চেঁচিয়ো না। আমাকে শ্রেয়া মেনেজ করে ঢুকিয়েছে। নিলা তুমি আমার সাথে বাসায় চলো প্লিজ। বাবা দাদী ভাবি মা…সবাই টেনশন করছে।
নিলা : হ্যাঁ করুক… তাতে আমার কি…
আর আমি আপনার সাথে কেনই বা যাবো
আমি আপনার কি…
আপনি আমার কি বা হন যে আপনার সাথে যাবো…
আবির : নিলা দেখো ফাইজলামো করিও না চলো তোমার মামা না দেখার আগে বেড়িয়ে পড়ি।
নিলা : ( একটু হেসে)আজব তো….আপনার সাথে আমি কেনো….যাবো
আবির নিলাকে কিছু বলতে চেয়ে ও বলেনি।
নিলা বুঝতে পেরে… আবির! আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন?
আবির নিলার দিকে তাকিয়ে আছে…আর মনে মনে ( নিলা তোমাকে তো আমি নিয়ে গিয়েই ছাড়বো আজ হোক বা কাল হোক)
চলবে…..

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে