স্বপ্নীল ৬৮

4
2040

স্বপ্নীল
৬৮
লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে বধু বেশে বসে আছে নীল।কী অপরুপ লাগছে নীলকে।নাকে নোলক,মাথায় টিকলি।হাত দিয়ে ছুয়ে দেখছে।এই সাজ তো স্বপ্ন জন্য সাজতে চেয়েছিল।এই সাজে স্বপ্নর সামনে যেতে চেয়েছে।ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস।আজ সে বঊ সেজেতে। অথচ এই সাজ অন্য কারো জন্য।দুফোঁটা চোখের জল পড়ে,নীলের হাতের উপরে।

কালকে সারারাত স্বপ্ন কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল।ভোর হওয়ার আগেই নীল জোরে করে স্বপ্নমে বের করে দেই।তখন দেখেছে স্বপ্ন’র সেই চাহনি।হৃদয় ভাঙা সেই চাহনি ছিল।তখন শেষ বারের জন্য ঝাপটে ধরেছিল।শেষ বারে জন্য স্বপ্ন তার কপালে চুমু খেয়েছে।অজান্তেই নীলের হাত কপালে চলে যায়।আর কখনো স্বপ্ন তাকে এই জায়গা ভালোবাসা পরশ দিতে পারবে না।কখনো না।

আলমারি ড্রয়ার থেকে বিষের শিশি বের করে।এবার ও চোখ বড় বড় করে বোতলের লেখা ‘ বিষ’ তাকায়।সে তো মরতে চায়নি।সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছে।স্বপ্নকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছে।তা যদি না হয়।তাহলে বেঁচে থেকে কী লাভ হবে।কার জন্য বাঁচবে।তার বাবা, দাদা যদি জেদ দেখাতে পারে তাহলে যে কেন পারবে না।তাদের শরীরে রক্তই বইছে নীলের শরীর।সে পারবে।আজকে তার নিজের রাগ,জিদকে তার বাবা, দাদার জেদকে হার মানাবে।হারতে হবে তাঁদেরকে।নীলের জিদের কাছে।যেদিন প্রথম তার বাবা তাকে ব্ল্যাক মেইল করেছে।সেদিনে ঠিক করেছে নিয়ে মনে মনে।সে এমন কিছু করবে।যাঁরা এই পরিস্থিতি তৈরী করেছে।তাঁরা যেন একদিন কেঁদে বুক ভাসাক।তাঁরা চাইছে তাকে বিয়ে দিয়ে তার স্বপ্নকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।সেই কষ্ট স্বপ্ন কে একা পাবে কেন।সেই কষ্ট তার বাবা, দাদাকে পেতেই হবে।চরম ভাবে পেতেই হবে।২০ বছরে আগের সেই ঘটনা আবার ঘটবে।২০ বছর আগে তাদের প্রিয় একজন কে হারিয়েছে।আবার সেই ২০ বছর পর তাদের প্রিয় একজনকে হারাবে।

আর কোনো কিছু চিন্তা করেনি নীল।ঢক ঢক করে বিষ পান করে।বিষের প্রভাবে তীব্রভাবে পেট জ্বলছে।দাঁতে দাঁত চেপে সেই যন্ত্রনা সহ্য করছে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা থেকে এই যন্ত্রনা তার কাছে কিছুই নয়।
ধপাস করে খাটে পড়ে যায়।দু, হাত দুদিকে প্রসারিত করে পড়ে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যই নীলের সব কিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।চোখ বন্ধ করা আগে।স্বপ্ন হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে।নীলের মুখে হাসি ফুটে।অস্পষ্ট সুরে বিড়বিড় করে বলল,
-” বাবা, দাদু।তোমাদের নীল তোমাদের কে হার মানিয়ে দিয়েছে।আমার ভালোবাসাকে তোমাদের কাছে হার মানতে দিই নি।আমার ভালোবাসা জিতেছে।ভালোবাসি সুরওয়ালা।ভালো থেকো।”
বন্ধ হয়ে গেছে নীলের দু চোখ।হৃদস্পন্দন চলা বন্ধ হয়েছে।নীল নামের সেই উড়নচণ্ডী আর ফিরবে না।সে চলে গেছে না ফেরা দেশে।

প্রাচ্য বাধ্য হয়ে আসছে নীলের ঘরে।বড় আব্বু তাকে খুব করে ধমকিয়েছে যখন সে বলেছে নীলকে নিয়ে আসতে পারবে না স্টেজে।বোন কে আনতে গেলে বোনের কালচে চোখ দুটো তার আগে নজর যেতে।এই কয়দিন চেহারা বেহাল দশা করেছে নীল।বোনের ফ্যাকাসে মুখটা দেখলে প্রাচ্যর বুক কেঁপে উঠে। এসব ভাবতে ভাবতে নীলের রুমে আসে।রুমের দরজা ভিজানো ছিল।হালকা ধাক্কা দিতে খুলে যায়।নীলকে এভাবে হাত, পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই অবেলা বিছানায় শুয়ে থাকতে অবাক হচ্ছে।নীলের পাশে বসে ডাকতে চেয়ে আঁতকে যায়।নীলের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।নীলের পাশে পড়ে আছে বিষের শিশি। হাত বাড়িয়ে হাতে নেয়।
প্রাচ্য খুব জোরে একটা চিৎকার দেই।সেই চিৎকারে।মির্জা বাড়ির প্রতিটা ইট কেঁপে উঠে।সবাই ছুটে আসে। সমুদ্র সবার আগে ছুটে এসে বলল।
-” এভাবে চিৎকার দিলি কেন?”
প্রাচ্য কাঁপা কাঁপা হাতে সবাইকে শিশিটা দেখায়
এটা বলে নীলের দিকে তাকায়।স্বপ্ন ভাবেনি নীল এই কাজ করবে।নীলের মত সাহসী মেয়ে কখনো এই কাজ করতে পারবে না।যা দেখছে সব ভুল।সমুদ্র বলল,
-” নীল।”
মির্জা বাড়ির একটা টঙের দোকানে বেঞ্চিতে বসে বসে চোখে জল ফেলছে।হুঠাৎ করে তার খুব অশান্তি লাগতে শুরু করেছে।বুকের ভিতরে জ্বালা পোড়া করছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে হাস ফাস করতে থাকে।যেন তার প্রান ভ্রমরা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।হ্যাঁ যাচ্ছে তো।তার প্রান ভ্রমরা নীল তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।তখনই গ্রামের মানুষ সবাই ছুটতেই দেখতে পায়। কেউ কেউ বলছে মির্জা বাড়ির মেয়ে বিষ খেয়েছে।স্বপ্ন আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ছুটছে।তার নীলের কিছু হয়নি তো।তার নীলটা বড্ড জেদী।যদি জেদ বশে নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলে।না, স্বপ্ন ভাবতে পাচ্ছে না।
কিছু পথ যাওয়ার পর স্বপ্ন নিস্তেজ হয়ে পড়ে।শরীর শক্তি নেই।যে দৌড়িয়ে মির্জা বাড়িতে যাবে।সব শক্তি যেন অসাড় হয়ে আসছে। হাটু ভেঙে পড়ে।সে চিৎকার করে বলতে থাকে,” আমায় যেতে হবে!”
আবার উঠে দাঁড়ায়।দৌড়াছে সে। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ভ্যানের সাথে ধাক্কা খায়। লুটিয়ে পড়ে।কপাল কিছুটা কেটে গেছে।গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।ভ্যান ওয়ালা স্বপ্ন কাছে,আসতেই স্বপ্ন উঠে আবার দৌড়ায়।ভ্যান ওয়ালা স্বপ্ন এমন কান্ড অবাক হয়।সে ভেবেছে হয়তো এই ভদ্রলোক তাকে দুয়েকটা কথা শুনাবে।তা না, এই ভদ্রলোক উন্মাদের মত ছুটছে।ভ্যান ওয়ালা দেখতে পায়।ভদ্রলোক আরেকটু সামনে যেতে আরেকটা ভ্যানের সাথে ধাক্কা খাওয়া আগেই সেই ভ্যান ওয়ালা ভ্যান থামিয়ে

পনেরো মিনিট রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। বিপদের সময় পথ যেন আগায় নায়।অবশেষে মির্জা বাড়িতে ঢুকে।কেউ নেই।সবার কান্না অওয়াজ শুনা যাচ্ছে।স্বপ্ন’র বুকের ভিতরে মোচড় দিচ্ছে।ছুটে যায় স্বপ্ন।নীলের রুমে।নীলের নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসে আছে সমুদ্র।স্বপ্ন বলে উঠল” নীল”
সবাই চোখ তুলে স্বপ্নের দিকে তাকায়।স্বপ্ন এলো পায়ে এগিয়ে এসে সমুদ্র সামনে বসে।
।নীলের মুখখানা দেখে। নাক, মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
-” এভাবে নীলের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে কেন।ও কী আবাদ দুষ্টুমি করছে নাকি।”
প্রাচ্য বলল,
-” নীল বিষ খেয়েছে স্বপ্ন।আর বেঁচে নেই নীল।আমাদের নীল আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।অনেক দূরে চলে গেছে।
চট করে নীলকে কোলে তুলে নেয়।
-” মজা করছিস!
প্রাচ্য অসহায় চোখে বলল,
-” আমি কোনো মজা করছি না,স্বপ্ন।নীল আর আমাদের মাঝে নেই।আর কখনো ফিরে আসবে না।আর কখনো দুষ্টুমি করে কাউকে জ্বালাবে না।”
স্বপ্ন চিৎকার দিয়ে বলল,
-” না,আমার নীল মরতে পারে না।আমার নীল বেঁচে আছে।ও দুষ্টুমি করছে সবার সাথে।”
এটা বলে নীলে গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
-” এই নীল চোখ খুলো।তোমার স্বপ্ন চলে এসেছে।আর দুষ্টুমি করতে হবে না”
বন্ধুরা সবাই স্বপ্ন পাগলামি দেখে কেঁদে দেয়।স্বপ্ন বলল, ” এই দেখো! নীল, তোমার স্বপ্ন তোমার সামনে।এবার চোখ খোলো।আর দুষ্টুমি করতে হবে না।”
নীলের কোনো পরিবর্তন না দেখে এবার স্বপ্ন নীল বলে আকাশ ফাটানো চিৎকার দেয়, ” নীল!”অসহায় চোখের সমুদ্র দিকে তাকায়।স্বপ্ন সমুদ্র এই চাহনি পড়ে ফেলেছে।
সঙ্গে সঙ্গে পাজকোলে তুলে নেয়।
-” আমার নীলকে আমি ডাক্তার কাছে নিয়ে যাবো।নীল মরতে পারে না।”
স্বপ্ন নীলকে কোলে নিয়ে ছুটছে। তার পিছু মির্জা পরিবারে সবাই ছুটছে। পুরো মির্জা পুরের জন গন ছুটছে।এই নীল এই মির্জাপুর মাতিয়ে রাখত।আর সেই নীলের এই অবস্থা।সবাই দৌড়তে দৌড়াতে হয়রান হয়ে গেছে।কিন্তু স্বপ্ন’র ভালো লাগছে।সে তার প্রেয়সী নিয়ে এই টুকু পথ কেন হাজার মাইল পথ ছুটতে পারবে।স্বপ্ন বলে,
-” কিচ্ছু হবে নীল।আমি তোমাকে ডাক্তারে কাছে নিয়ে যাবো।তোমার স্বপ্ন থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে পারে না।”
নীল হাত গুলো দুলছে।স্বপ্ন দৌড়ানোর সাথে সাথে।
সমুদ্র গাড়ি নিয়ে বের হয়।স্বপ্ন পথ আটকে দাঁড়ায়। গাড়ির দরজা খুলে দেয়।স্বপ্ন নীলকে নিয়ে উঠে বসে গাড়িতে।সমুদ্র জানে নীল বেঁচে নেই।তাঁরা যখন রুমে ঢুকেছিল।তখনই মৃত ছিল।নীলের নিশ্বাস, হার্ট বিট, বন্ধ হয়ে গেছে।কিন্তু তার এই উন্মাদ বন্ধুকে এসব বললেই লাভ হবে না।তাই তো স্বপ্নকে সায় দিচ্ছে।তার বিশ্বাস ডক্টর যতক্ষণ পর্যন্ত নীলকে মৃত বলবে না ততক্ষণ পর্যন্ত স্বপ্ন বিশ্বাস করবে না
-” এই সমুদ্র, নীলের শরীর এত শীতল কেন?”
স্বপ্নের কথায় হুস ফিরে। কী বলবে স্বপ্নকে? তাই চুপ হয়ে গেল।
জেলাসদর হাসপাতালে নীলকে আনা হয়।স্বপ্ন ডাক্তার ডেকে পুরো হাসপাতাল মাথা তুলে ফেলে। ডাক্তার নীলের নাভ চেক করে বলল,
-” রোগী আরো দু ঘন্টা আগেই মারা গেছে।”
এই কথা শুনার সাথে সাথে স্বপ্ন চিৎকার করে।সেই চিৎকার মাটি যেন কেঁপে উঠেছে।আকাশ,পাতাল যেন কেঁদে দেই স্বপ্ন’র বুক ফাটানো চিৎকার শুনে।।

★★★
প্রাচ্য ধূসরকে ফোন করে সব জানায়।এই কয়দিন কাজ থাকা ধূসরকে সিলেট যেতে হয়েছে।তাই সবটা ফোনে শুনেছে। কয় ঘন্টা আগে ঢাকা এসে পৌঁছেছিল।এই ঘটনা শুনে সে আর থাকতে পারেনি ফোন দেওয়ার সাথে সাথে ছুটে চলে এসেছে। স্বপ্ন বাবারা চলে এসেছে। নীল দেহটা রাখা হয়েছে মির্জা বাড়ির সামনে।শায়লা, সোহাগী, রোকেয়া কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।তাদের আদুরের কন্যা মৃত্যু।মেনে নেওয়া কী সহজ? রোকেয়া আহাজারি করে বিলাপ করে কান্না করছে।তিনি কাকে আর ধমকাবে, কাকে আর শাসন করবে।কাকে বলবে, নীল তুমি বড্ড বেড়ে গেছো।তোমার শায়েস্তা করতে হবে।” কাকে এই কথা বলবে।তার কোল খালি করে চলে গেছে। তিনি উঠে দাঁড়ায়।শ্বশুড় আর স্বামির মুখোমুখি দাঁড়ায়।
-” মাথা নিচু করে রেখেছো কেন? মাথা তুলো।এটাই তো চেয়েছিলে।খুশি হয়েছো। তাহলে মুখ এমন গোমড়া কেন? হাসো।হাসো। আচ্ছা তুমি হাসবে না। আমি বরং হাসি।”
এটা বলে তিনি হাসতে থাকে।হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।শায়লা আর সোহাগী দৌড়িয়ে আসে।বড় ভাবিকে ধরতে নিলেই রোকেয়া তাদের ঝামটা মারে।রোকেয়া উঠে দাঁড়ায়।এবার শ্বশুর কে বলল,
-” সারাজীবন নীলকে আহ্লাদ দিয়ে মানুষ করেছেন।কষ্ট ছুতে দেন নি।আর সব চেয়ে বড় কষ্ট আপনি দিয়েছেন বাবা।
নীলের দেহটার দিকে আঙুল তাক করে বলল,
-” নীলের ভালোবাসার মানুষের থেকে আলাদা করতে গিয়ে সব চেয়ে বড় কষ্ট আপনি দিয়েছেন।তাই আমার মেয়েটা সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না বলেই চলে গেছে।আজীবনের জন্য চলে গেছে।সারাজীবন কেন এত আহ্লাদী পণা করেছে।যদি আপনাদের কারণেই নীলকে মরতে হয়।যেদিন জন্ম নিয়েছে যেদিন কেন গলা টিপে মেরে ফেলেননি।তাহলে আজকে এত কষ্ট হতো না।” তিনি শ্বশুর পায়ের কাছে বসে পড়ে।বিলাপ করতে

করতে বলল,” আব্বা, আব্বাগো।আমার নীল এনে দিন।আমি পারব না নীলকে ছাড়া কে থাকতে।ও যতই দুষ্টুমি করুক পুরো মির্জা ভিলা মাতিয়ে রাখতো।দেখেন আব্বা, নীল চলে না যেতে যেতে।কেমন যেন গুমট হয়ে গেলে মির্জা ভিলা। মির্জা ভিলায় যে নীলকে খুব প্রয়োজন।আপনি আমার মেয়েকে এনে দিন।আপনাদের জন্য আজ আমার মেয়ে শান্তির ঘুম দিচ্ছে।ওকে জাগিয়ে তুলুন।”

এবার তিনি উঠে দাঁড়ায়।চোখের জল মুচে।স্বামী শ্বশুর কে বললেন,” আপনারা দুজন খুনি।আপনারা আমার নীলের খুনি।খুনি আপনারা।আপনাদের কাউকে ছাড়ব না আমি। কাউকে না।”
এসব বলতে বলতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সবাই ধরে রোকেয়া ঘরে নিয়ে যায়।শাহেদ এসে শামিমকে বলল,
-” শান্তি হয়েছিস শামিম। চেয়ে দেখ নীলের দিকে।কত হবে বয়স।এই বয়সে নীলকে চলে যেতে হচ্ছে।নীলের মৃত্যু একমাত্র কারণ তুই।তোর জন্য আজকে নীলের এই অবস্থা।তোর কারণে আমার স্বপ্নের জীবন থেকে তার ভালোবাসা হারিয়ে গেছে।আমি যদি শিখার খুনি হই।তাহলে তুই তোর মেয়ের খুনি।প্রতিহিংসা আগুনের তোকে অন্ধ করে ফেলেছে।তুই আমার ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে ফেলেছিস।তুই খুনি শামিম।”
চলে যায় তিনি।শামিম বসে পড়ে।কানে বিধঁছে স্ত্রী বলা খুনি শব্দটা।কখনো ভাবি নি ২০ বছরের আগের ঘটনা আবার ঘটবে।সত্যি সে প্রতিহিংসা বসে নিজের বড় ক্ষতি করে ফেলেছে।কথা আছে অন্যের ক্ষতি করতে গেলে নিজের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।সেটা শামিমের ক্ষেত্রে হয়েছে।
স্বপ্ন তাকিয়ে আছে নীলের মুখের দিকে।কালকে রাতে নীল তাকে ঝাপটে ধরে শুয়েছিল।নীলের মাথাটা তার কোলে ছিল চোখের অশ্রুবিন্দু ঝরে পড়ছে। স্বপ্ন উঠে দাঁড়ায়।শামিমের সামনে বসে।স্বপ্নকে দেখে চোখ তুলে তাকায়।তার চোখ পানি ছলছল করছে।স্বপ্ন বলল,
-” জানেন আংকেল। নীল কে এত করে ডেকেছি? একবারও সাড়া দিচ্ছে না।ওকে একটু ডেকে তুলুন।ওর সাথে আমার কথা আছে।ওকে ডেকে তুলুন আংকেল।আমার সহ্য হচ্ছে না।নীল কেন এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছে।আংকেল।”
চিৎকার দেয়।আবার আকাশ,মাটি,গাছপালা কেঁপে উঠে স্বপ্ন’র চিৎকারে।তাঁরা যেন কাঁদছে।খুব কাঁদছে।প্রকৃতির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে স্বপ্ন জন্য।তাঁরা মেনে নিতে পাচ্ছে না স্বপ্ন’র চোখের পানি।স্বপ্ন’র কান্না দেখে তাদের বুকফেটে যাচ্ছে।
স্বপ্ন বলল,
-” শুধু আপনার জন্য আমার নীল চলে গেছে না ফেরা দেশে।আপনার জন্য।আমাদের ভালোবাসা আপনি যদি মেনে নিতে তাহলে আজ নীল এই পরিনিতি হতো না।হতো না।”
উঠে ছুটতে থাকে।নীলের মাথাটা তার কোলে নিয়ে বলল,
-” এই নীল।উঠো।তোমরা স্বপ্ন চলে এসেছে।তোমাকে নিয়ে যাবে।একবার শুধু উঠো।উঠো না নীল।নীল!”
গগনবিহারী চিৎকার। এই চিৎকার এখানে উপস্থিত থাকার সবার মন কেঁপে উঠে।স্বপ্ন সাথে সাথে সবাই ডুকরে কেঁদে উঠে।
★★★
নীলের দিকে তাকিয়ে আছে সমুদ্র।এই তো তার দুষ্টুবোন।আজকে আর সে দুষ্টুমি করছে না।খুব শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। সে যতবার মির্জাবাড়িতে আসত।অনেক গুলো চকলেট আনতো।এনে লুকিয়ে রেখে বলত।তাঁর জন্য কিছুই আনা হয় নি।এটা শুনে নীল কান্না করা ভান করে।তাঁর নামে সবার কাছে বিচার দিত।তার পর সমুদ্র চকলেট বক্স বের করে দিলে।গালে চুমু খেয়ে বলত।” আমার বেষ্ট ভাইয়া!” আজকের পর কেউ এরকম করবে না।আজকে পর কেউ বলবে না “লাভ ইউ ভাইয়া! আমার বেষ্ট ভাইয়া।” কেউ বলবে না।হারিয়ে গেছে সে।কান্না ভেঙে পড়ে সমুদ্র।আজ তার মনে হচ্ছে সে মরে যেত।কিচ্ছু করতে পারেনি বোনের জন্য।ভাবতেই পারেনি নীল এমন করবে।নীলের মত সাহসী মেয়ে এই কাজ করবে।

তৃণ প্রাচ্যকে ধরে রেখেছে।প্রাচ্য কান্না করছে।তার আদুরে ছোট বোনটা মারা গেছে
মেনে নিতে পারছে না।তৃণ চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে প্রাচ্য’র মাথায় উপরব।।এই দুষ্টু মেয়েটার সাথে সাজেকে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছে।কতটা দুষ্টুমি করেছে।আর সেই মেয়েটার নিথর দেহটা পড়ে আছে।

ধূসর ভাবতে আছে স্বপ্ন কী হবে।সে জানে ভালোবাসা না পাওয়া কষ্ট।আর স্বপ্ন তো ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে।স্বপ্ন কী করে সহ্য করবে।এই কষ্ট সহ্য করার যে খুব কষ্ট।খুব কষ্ট।

তামিম নীলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।এই বোনটা মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। সে সিগারেট খেলে। দাদু কে বলে দিবে বলে তার কাছ থেকে টাকা নিত।কে তাকে থ্রেড দিয়ে টাকায় আদায় করবে।কে করবে? কে? এই বোনটা আজকে চিরদিনের জন্য রেখে আসবে।চিরদিনের জন্য।নীল বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠে তামিম।

নীল যদি রোদকে ওই আইডিয়াটা না দিতো।তাহলে আজকে সে সমুদ্রকে পেতে না।হ্যাঁ, আইডিয়া যতই খারাপ হোক।সে সমুদ্রকে পেয়েছে।নীলের জন্য।আজ সেই মেয়েটা শান্তির নিদ্রায় গেছে।

কাঁদছে আপন জন, কাঁদছে গ্রামের মানুষ।কাঁদছে সবাই।নীলের মৃত্যু শামিম তার ভুল বুঝতে পেরেছে।নইলে সে বুঝতে পারত না।মানুষের জীবনে কিছু কিছু ক্ষেতে বড় কিছু ধাক্কা প্রয়োজন হয়।তাহলে বুঝতে পারে সে কত ভুল করেছে বা করতে চলেছে।

আতর গোলাপ সুগন্ধি লাগিয়ে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রেখেছে নীলকে।নীলের খাটিয়া
মির্জা বাড়ির সেই কদম ফুল গাছের নিচে রাখা হয়েছে।স্বপ্ন তার পাশে বসে আছে।নীলের গালে হাত দিয়ে বলল,
-” এই নীল, উঠ না।তোমার স্বপ্ন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।কথা বলো না কেন নীল।তুমি জানো। তুমি কথাটা না বললে আমার খুব কষ্ট হয়।খুব কষ্ট হয়।অনেক ধরে তোমার সাথে কথা বলছি।একটা কথা বললে না তুমি।আজকে কেন এত চুপ করে আছো।”
শাহেদ স্বপ্ন কাঁধে হাত দেয়।স্বপ্ন বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” বাবা।তুমি নীলকে বলো আমার সাথে কথা বলতে।নীলের এই নিরবতা আমি মেনে নিতে পাচ্ছি না।”
-” শান্ত হো বাবা।”
-” কি শান্ত হবো।আমার নীল কথা বলছে না।তোমরা বলছো শান্ত হতে।” এটা বলে আবার নীলের পাশে বসে।সে বলল,
-” তুমি খুব খারাপ নীল।কথা দিয়ে কথা রাখলে না।আমার হাত ধরে চলবে বলে আমায় ছেড়ে চলে গেলে।আমায় একা রেখে কেন চলে গেলে? তুমি ছাড়া এই দুনিয়াতে স্বপ্ন নিঃস্ব। কি করে বাঁচব আমি নীল।কি করে বাঁচব? কেন এই কাজ টা করলে? এই কাজ টা না করে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলতে।তাহলে আমি এত কষ্ট পেতাম না।তবু জএই একই পৃথিবী নিশ্বাস নিতে পারতাম দুজনে।একবার কী তোমার বুক কাঁপল না? একবার কী তোমার এই স্বপ্ন কথা মনে পড়ল না।কী করে বাঁচব তুমি হীন?”
উন্মাদের মত বিলাপ করতে থাকে।সে আবার বলল,
-” তুমি আগে থেকে প্ল্যান করেছি।আমায় একা রেখে চলে যাবে।তাইতো ওভাবে আমায় বিয়ে করলে। আমি এতোটা বোকা কালকে তোমার বলা কথাএকফোঁটা ইঙ্গিত বুঝতে পারিনি।কেন এমন করলে?”

আলতো করে নীলের গালে হাত দিয়ে বলল,এই নীল তুমি না বলেছো আমায়।আমায় বিয়ে করবে। আমাদের প্রথম ছেলে হোক বা মেয়ে হোক।তার নাম রাখবে স্বপ্নীল।আমাদের দুজনের নাম একত্র করে একটা নাম বানিয়েছিলে।আমাদের সন্তানের নাম রাখার জন্য।তাহলে কেন চলে যাচ্ছে।আমাকেকে একটা স্বপ্নীল গিফট না করেই চলে গেলে।”
উন্মাদের মত বকতে থাকে।
বন্ধুরা মুখ চেপে কান্না করছে বন্ধুর কান্না দেখে।রোদ সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরেছে।সে বলল,
-” আমার আর সহ্য হচ্ছে না।কেন আল্লাহ তায়ালা এমন করলে? স্বপ্ন মত ভালোমানুষের সাথে এতটাই খারাপ হলো কেন? ”
স্বপ্ন চোখ যায় নীলের নাকে তুলা দেওয়া,কানে তুলা দেওয়া। সে গুলো খেলে ফেলে দিয়ে বলল,
-” এগুলো কে দিয়েছে? আমার কদমফুলের কী কষ্ট হচ্ছে না নিশ্বাস নিতে।এসব আজে বাজে জিনিস দেবে না কেউ।”
সমুদ্র এসে বলল,” এগুলো দেওয়া প্রয়োজন আছে এখন।”
সমুদ্রকে ধমকিয়ে স্বপ্ন বলল,” প্রয়োজন আছে মানে।এগুলো দিলে তো নীলের দম আটকে যাবে।তুই কী চাস আমার নীল দমকে আটকে মরে যাক।”
স্বপ্ন কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। স্বপ্ন কাঁধে হাত দিয়ে বলল,” অনেক্ষন হয়েছে তো।এবার নীলকে নিয়ে যেতে হবে।”
-” না,আমার নীলকে আমি কোথাও নিতে যেতে দিব না।আমার নীল ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে উঠে আমায় খুঁজবে।খুঁজে না ফেলে আমায় উপরে রেগে যাবে।”
-” নীল আর কখনো উঠবে না।তোর ডাকে আর সাড়া দিবে না।নীল চির নিদ্রায় গেছে।”
-” চুপ কর।কি সব বলছিস?আমার নীল উঠবে।আমায় সুর ওয়ালা বলে ডাকবে।”
পাগলামী করছে। সীমাহীন পাগলামি করছে স্বপ্ন।কেউ বোঝাতে পাচ্ছে না।স্বপ্ন একই কথা।নীল ঘুমাচ্ছে।ঘুম থেকে জাগবে।নীলের খাটিয়ে নেওয়া সময় হয়ে গেছে।কিন্তু স্বপ্ন কিছুতে খাটিয়ে ছাড়বে না।নীলকে কোথায় নিয়ে যেতে দিবে না।কিন্তু স্বপ্ন তার কদম ফুল নিয়ে যেতে দিবে না।সবাই মিলে স্বপ্নকে ধরে রাখে।তারপর শাহেদ ডাক্তার কে ফোন দেই।ডাক্তার এসে স্বপ্নকে ইনজেকশন পুশ করে দেয়।
স্বপ্নকে ঘুম পাড়িয়ে দেই।এইটা না করলে নীলকে নিয়ে যেতে দিবে না,স্বপ্ন।তাই সমুদ্র বাধ্য হয়ে এমনটা করেছে।

সমুদ্র, তামিম,তার বড় আব্বু,তার চাচা কাউকে নীলের খাটিয়ে ধরতে দেয়নি। যাদের জন্য তাদের প্রানকে আজকে চিরদিনের জন্য রেখে আসবে।তাদের খাটিয়ে ধরা অধিকার নেই।
পিতার কাছে সব চেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে।সন্তানের খাটিয়া কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া।সন্তানের দেহ বহন করা সেই ক্ষমতা কোনো পিতার নেই।এখন তার আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে তার সন্তানের খাটিয়া তাকে ধরতে দেয়নি।তার এখন মনে হচ্ছে তার কেন মরণ হয়নি এই দিন দেখার আগে।তার কারণে হয়েছে।

একজন সারাজীবনে জন্য চিরনিদ্রায়য় চলে গেছে।আরেক জন্য সাময়িক জন্য নিদ্রারত। তাদের ভালোবাসার করুন পরিণিত হয়েছে।দুটি দেহের মিলন না হোক।দুটি অন্তরে, দুটি মনে মিল অবশ্যই হয়েছে।স্বপ্নের পৃথিবীতে নীল আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেহর মৃত্যু হলে ও আত্নার মৃত্যু হয়নি।দুটি হৃদয়ের আত্না এখন বেঁচে আছে।

সমাপ্ত।

এই গল্পটা কাল্পনিক। এই গল্পের কোনো বাস্তবতার ছিঁটেফোঁটা ও নেই।কল্পনার রঙ তুলি দিয়ে একেছি এই স্বপ্নীল গল্পটা।তাই বাস্তবের সাথে মিল খুঁজবেন না।কল্পনিক ভেবেই পড়বেন।
আশা করছি আজকে নিরব পাঠিকারা তাদের মতামত জানাবেন।কেমন হয়েছে বলবেন।আজ যদি কেউ সমালোচনা করতে চান।তাহলে করতে পারেন।উন্মুক্ত আছে।আপনাদের জন্য।আপনাদের সমালোচনা থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পারব।

গল্পা লেখার আগেই আমি শেষে কী হবে ভেবে তারপর গল্প লেখি।এই গল্পের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
জানুয়ারি এক তারিখে এই গল্পটা শুরু করেছি।
দীর্ঘ ৫ মাস ধরে যারা আমার পাশে থেকেছেন গল্পটা পড়েছেন।উৎসাহ দিয়েছেন।তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সবাইকে ইদের শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক

4 মন্তব্য

  1. Thank you di for gift best story ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ Your next story for waiting

  2. Thank you di for gift best story ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ ❤️ Your next story for waiting ???????????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে