ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৪+১৫

2
3714

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৪
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

একদিন বিকেলে সপিংমলে গেলাম।কিছু টুকটাক কেনাকাটা করতে।আমি একাই এসেছি।
সেখানে হঠাৎ তমার সাথে দেখা।
তারপর আমার মন খুশিতে ভরে উঠল এতদিন পর নিজের বেস্টুকে সামনে দেখে।আমি ছুটে গিয়ে তোমার নাম ধরে ডাকলাম।
তমাও আমাকে দেখে এক পলকের জন্য খুশিতে ঝিলিক মেরে উঠল কিন্তু পরক্ষনেই ওর চেহারায় খুশির বদলে রাগ ভীড় করল।
ও পিছনে ফিরে হাঁটতে লাগলো।আমি ছুটে গিয়ে ওর পথ আগলে ওর হাত ধরে বললাম,তমা আমাকে প্লিজ মাফ করে দে।
তমা ওর হাত ছাড়িয়ে বলল,আমাকে চিনিস তুই? অদ্ভুত তো?
আমি উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম,তমা এরকম বলিস না।
I am sorry…
তমা বলল,আর কি বলবো সুপ্তি,তুই এমন কেনো করলি?কথা নেই বার্তা নেই একদম উধাও।আর এখন তোর আমার কথা মনে পড়েছে।

আমি তমাকে ধরে কেঁদে ফেললাম।
বললাম,তমা তুই জানিস না আমার কিছু
সমস্যা ছিল।
তমা বলল,এমন কি সমস্যা থাকতে পারে যে তোকে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া লাগে।আমার কথা না হয় বাদই দিলাম।তুই জানিস শুভ্র স্যারের কি অবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
পাগল হয়ে গিয়েছিল, পাগল।
রাত ১টা বাজে আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে শুধুমাত্র জানার জন্য যে আমি তোর কোনো খোঁজ পেয়েছি কিনা।আমি তো শুনেছি স্যার এর পর থেকে ভালোভাবে ক্লাসও নিতো না।অন্যমনষ্ক হয়ে থাকত।আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় প্রতিদিন তোকে খুঁজে বেরিয়েছে।তার কিছুদিন পরই স্যার কলেজ ছেড়ে দেয়।স্যার তোকে কত ভালোবাসে!  আর তুই!
এতটা নিষ্ঠুর তুই কি করে হলি?
তমার কথাগুলো চুপ হয়ে শুনছিলাম।শেষের কথাটা শুনে বললাম,শুভ্র স্যার তোকে বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে?
তমা আমাকে ধরে বলল,সব কথা কি বলে দিতে হয়?

তমাকে অবশেষে অনেক কষ্টে মানাতে পারলাম।
যখন ও শুনলো আমার সাথেই স্যারের বিয়ে হয়েছে তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
ভাগ্যিস বিয়েটা স্যারের সাথেই হয়েছে।
তোকে শেষমেষ না পেলে হয়ত স্যার পাগলই হয়ে যেত।
তারপর জানলাম তমারও একবছর হলো বিয়ে হয়েছে আর এখন ও প্রেগনেন্ট।তমার ফোন নাম্বার আর অ্যাড্রেসও এনেছি।

গাড়িতে বসে বসে তমার কথাই ভাবছি।সবার চোখেই আমি দোষী।সবাই আমাকেই দোষ দিচ্ছে।
কিন্তু আমি আমার কথা আর কাউকে বলতে পারছি না।
তমা স্যারকে নিয়ে যা যা বলল তাকি সত্যি!
ও আবার কোনো ভুল বুঝে নি তো?
যদি ভুল নাই হয়ে থাকে তবে আমি সেদিন যা দেখেছিলাম তার কি মানে ছিল? স্যারের আমার প্রতি এত রাগ থাকা সত্ত্বেও আমার কতটা খেয়াল রাখে যত্ন করে,কেনো?
আমারও স্যারের প্রতি কত রাগ,অভিমান জমা আছে,কিন্তু স্যারের সামনে গেলেই সব যেনো কোথাও উধাও হয়ে যায়।ইচ্ছে করে সেসব নিয়ে না ভাবতে।কিন্তু সেদিনের দেখা দৃশ্যও আমার পিছু ছাড়ছে না।
আমার চোখে দেখা কি করে ভুল হতে পারে?
প্রশ্নের উত্তরগুলো স্রোতের বিপরীত পেয়ে আমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি।যখনই এসব নিয়ে ভাবি আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে থাকে।

বাসায় পৌছে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম।কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে,অনেক ক্লান্ত।
আচ্ছা এই ক্লান্তিটা কি শরীরের নাকি মনের।
ভালো লাগছে না।আমার এগুলো নিয়ে ভাবতে আর ভালো লাগছে না।তাই ভাবনা ছেড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।

কতক্ষণ ঘুমিয়ে রইলাম জানি না।মাথায় কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম।চোখ খুলতেই দেখলাম একটি উদ্বিগ্ন মুখ।
শুভ্র স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যাসা করল,সুপ্তি,শরীর খারাপ লাগছে?এই অসময়ে ঘুমিয়ে রয়েছো?
আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম রাত আট টা বেজে গেছে।
ওহ নো! এতক্ষণ ঘুমিয়েছি।মাগরীবের নামাযটাও
বাদ গেল।আমি উঠে বাথরুমে চলে গেলাম।
বের হয়ে দেখি স্যার রুমে নেই।

কিছুক্ষণ পর এশার নামাযের সাথে মাগরীবের কাযা নামাযও আদায় করে নিচে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি সামিয়া আর মা কি নিয়ে হাসাহাসি করছে আর চা খাচ্ছে।
মা আমাকে দেখে ডেকে বসতে বলে হাতে এক কাপ চা তুলে দিল।আর বলল,ভালো লাগছিলো না তাই এই অসময়েই চা বানিয়ে খাচ্ছি।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এখন একটু ভালো লাগছে।
শুভ্র স্যারকে কোথাও দেখছি না।আমার কৌতূহলি চোখ বারবার এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে।
মা হয়তো বুঝতে পারল তাই বলল,শুভ্র ছাদে আছে,নাহিদ এসেছে,ওর সাথেই কথা বলছে।

তারপর আমার হাতে চায়ের ট্রে ধরিয়ে দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিল।
আমি চায়ের ট্রে হাতে দরজার কাছে আসতেই আমার কানে আসল শুভ্র স্যারের গলা।স্যার বলছে,নাহিদ,বিয়ের আগের আর পরের অবস্থাকে
একসাথে গুলিয়ে ফেলিস না।
বিয়ের পরে অনেক পরিস্থিতিতে তোর ভালো না লাগলেও তোকে তা হ্যান্ডেল করতে হবে।কারণ তখন সেটা তোর দায়িত্বের মধ্যে পরবে।এখন তুই যেমন ইচ্ছা রিয়েক্ট করতে পারিস কিন্তু তখনও যদি এমন করিস তাহলে সেটা তোদের দুজনেরই বাঁধবে।
সম্পর্কগুলোর মধ্যে প্রশ্ন উঠে আসবে।

তাদের এই কথার মাঝেই আমি ট্রে হাতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমাকে দেখে তারা দুজনেই চুপ হয়ে গেল।
আমি তাদের সামনের টি টেবিলে ট্রে রেখে চা দিলাম হাতে।নাহিদ ভাইয়া বলছে,আরে ভাবী যে!
ভাবী আপনিও বসেন।
আমি বললাম,না থাক আপনারা কথা বলুন।
বলে চলে আসলাম সেখান থেকে।

সকালে মা,বাবা,সামিয়ে আবার নানু বাড়ি চলে গেলো।মাকে ডাক্তার দেখাতে।নানু বাড়ির পাশেই নাকি কোন ডাক্তার আছে ভালো।বেশ কিছুদিন সেখানে বেড়িয়েও আসবে।

একটু পর স্যারও অফিসে চলে গেল।আমি এই বড় বাড়িতে একা হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ ছাদে হাটাহাটি করলাম,টিভি দেখলাম,তারপর রান্নাটাও সেরে ফেললাম।
দুপুরের একটু পরই স্যার এসে পড়ল।আমি বাসায় একা আছি তাই তাড়াতাড়িই এসেছে।সে ফ্রেস হয়ে আসলে আমি তাকে খেতে দিলাম।
স্যার খাবার মুখে দিয়েই আমার দিকে তাকালো।
আমি জানি স্যার কেনো তাকিয়েছে কারণ আমি আজ খাবারে একটু বেশি ঝাল দিয়েছি।
স্যার তাকাতেই আমি কানে হাত দিয়ে মুচকি হেসে ঠোঁট নাড়িয়ে নিঃশব্দে বললাম,স্যরি….
স্যার বলল,শুধু আজকের জন্যই।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



সন্ধ্যার দিক দিয়ে আকাশে কালো মেঘ করে ঢেকে গেল।মনে হয় খুব বৃষ্টি হবে।স্যার সোফায় বসে ছিল।আমার মনে পড়ল ছাদে কিছু জামাকাপড় আছে।আমি দৌঁড়ে ছাদে গেলাম।
তাড়াতাড়ি জামা কাপড় তুলতে না তুলতেই ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি নেমে পড়ল।আমি জামা কাপড় নিয়ে দৌড়ে গেলাম।শাড়ি পড়ার কারণে বেশি জোরে দৌড়াতেও পারছি না।আমি আংশিক ভিজে গেছি। তবে মাথা ভালোই ভিজেছে।

রুমে এসে দেখি স্যার এখনো সোফাতেই বসে রয়েছে।বৃষ্টির সাথে সাথে বাতাসের বেগও আছে।
আমি টাওয়েল তুলে নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো সামনে এনে মুছতে লাগলাম।
হঠাৎ খেয়াল করলাম শুভ্র স্যার আমার দিকে কেমন যেন তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে।আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই স্যার হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে
উঠে গিয়ে বাইরে চলে গেল।

সেদিন রাতে ঘুমানোর সময় স্যার আর আমাকে জড়িয়েও ধরলো না।বারবার এপাশ ওপাশ করছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি স্যার সোফায় ঘুমিয়ে রয়েছে।
আমি বাথরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে রইলাম।আমি স্যারের স্ত্রী।আমার উপর তার পুরো অধিকার আছে।স্যার তো চাইলে জোরও করতে পারত।
কিন্তু স্যার তা কখনই করে নি।কেন জানি না যখনই স্যার আমার কাছে আসে তখনই আমার মাথায় সেই দৃশ্য ভেসে উঠে।

একটু আগেই স্যার অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেছে।
আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছি দারোয়ান চাচা লাঠির ওপর ভর দিয়ে ঝিমিয়েই যাচ্ছে।ঝিমুতে ঝিমুতে যখনই মাথা লাঠি থেকে সরে যেতে নেয় তখনই ধড়মড়িয়ে জেগে চারপাশে চোখ বুলায়।
আমি আজ পর্যন্ত যত দাড়োয়ান দেখেছি সবাইকে শুধু ঝিমাতেই দেখেছি।
প্রাচীরের বাইরে চোখ পরতেই দেখলাম একটি আমার বয়সের শাড়ি পরা মেয়ে রেগে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।
আর তার পেছনে পেছনে একটি ছেলে হোন্ডা হাত দিয়ে টানতে টানতে করুণ মুখে কি যেন বলছে।হঠাৎ ছেলেটি হোন্ডা থামিয়ে মেয়েটির সামনে এসে কান ধরে দাঁড়াল।মেয়েটি থেমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তারপর একটি লাজুক হাসি দিয়ে ছেলেটির কান থেকে হাত ছাড়িয়ে দিল।ছেলেটিও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইকে উঠে মেয়েটিকে ইশারা করতেই মেয়েটি বাইকে দু হাত দিয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরল।তারপর তারা চলে গেল।কি সুন্দর দৃশ্য।মনে হয় দুজনের নতুন বিয়ে হয়েছে।খুনসুটি পর্ব চলছে।কত ভালোবাসা তাদের মধ্যে।

আচ্ছা আমার আর স্যারের সম্পর্কের ভবিষ্যত কি?
এতদিন ধরে বিয়ে হয়েছে তবুও আমাদের ভেতর
কিছু স্বাভাবিক নেই।আমরা এখনও আর পাচঁটা স্বামী স্ত্রীর মতন হতে পারি নি।এখনও আমাকে ছুঁতে মন চাইলেও সে পারে না।
আমাদের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আমাদের সম্পর্কে কি ভালোবাসা আছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই……………

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১৫
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

আমাদের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আমাদের সম্পর্কে কি ভালোবাসা আছে?
এসব ভাবতে ভাবতেই অনেক বেলা হয়ে গেল।
স্যার দুপুরে ফিরে আসল।দুজনে খাওয়া দাওয়া করে বসে আছি।
হঠাৎ স্যার বলল,সুপ্তি চট করে রেডি হয়ে নাও এক জায়গায় যাবো।ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে তো আমি সেই খুশি।
তাড়াতাড়ি একটি কচুপাতা রঙের শাড়ি পরে নিলাম।স্যার আজকে ব্লাক টি শার্টের উপর একটি ব্রাউন কালারের জ্যাকেট পড়েছে।যার হাতা সামান্য উপরে তুলে রেখেছে।সানগ্লাসটা সামনের টি শার্টের বুকে ঝুলিয়ে রেখেছে। সাথে অ্যাশ কালারের জিন্স।হাতে দামী ব্রান্ডেড ঘড়ি।পায়ে হোয়াইট কেডস।

স্যার আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে নিতে নিতে বলল,কি ম্যাডাম,আমাকে নিরীক্ষণ করা হয়েছে তো এবার চলুন বেড়িয়ে পড়ি।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে মুখটা ঠিক করে বেড়িয়ে পরলাম আগে আগে।আর স্যার একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে পেছনে পেছনে আসতে লাগল।

আমি গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম স্যার আসছে কিনা দেখার জন্য।পিছনে
তাকিয়ে আমার চোখ আবার আটকে গেলো।
স্যার বাইরের সিড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নামছে তার চুলগুলো হালকা উড়ছে।শেষের সিড়িটায় পা রাখতে রাখতে সানগ্লাস টা টি শার্ট থেকে বাম হাত দিয়ে টেনে বের করে চোখে পরেই আমার দিকে তাকিয়ে
মিষ্টি হাসি দিল।
আমার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠল তার এত সুন্দর হাসি দেখে।
আমি তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়লাম।
নাহ্ এত তাকিয়ে থাকা যাবে না।আমি মেয়ে হয়ে এত তাকিয়ে থাকবো কেনো?
এমনিতেই একবার লজ্জা পেলাম।স্যার কি আজ কোনো অডিশন দিতে যাচ্ছে? না হলে একেবারে হিরোদের মতো এতো সুন্দর লাগছে কেনো!

স্যার আমার পাশের গাড়ির দরজা খুলে একহাত গাড়ির দরজার উপর আর আরেকহাত রুফ টপে রেখে ঝুঁকে বলল,বের হয়ে আসুন ম্যাডাম।আজ কারে করে যাব না।আমি জিগ্যাসা করলাম,তাহলে কি দিয়ে যাব?
স্যার হাত দিয়ে সামনে ইশারা করল। তাকিয়ে দেখি খুব সুন্দর একটা বাইক।
দেখে বললাম,আপনি বাইকও চালান।
স্যার হেসে জবাব দিল,কলেজে থাকতে প্রচুর চালাতাম।এখন অনেকদিন ধরে চালানো হয় না।
স্যার গিয়ে সেখানে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে আমাকে ঘাড় নাড়িয়ে ইশারা করল বসার জন্য।
আমি আস্তে আস্তে উঠে বসলাম।
স্যার কি আজ আমাকে মারার প্লান করেছে।এমনিতেই তাকে এত সুন্দর দেখায় আমার বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়ে গেছে আর এখন আবার বাইকে এত কাছে!
আমি বসেছি তো ঠিক আছে কিন্তু বুঝতে পারছি না স্যারের কাঁধে হাত রাখব কি না।খুবই লজ্জা লাগছে।কেনো কে জানে?
আমি দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে লজ্জায় হাত দিয়ে কানে সামনে থাকা চুলগুলো গুঁজে চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে হাত তার কাঁধে রেখেই দিলাম।
স্যার বাইকের মিররে আমার দিকে তাকিয়ে একটা
মুচকি হাসি দিয়ে চালানো শুরু করল।

স্যারের কাঁধে হাত রাখায় আমার মনে হচ্ছে আমি কারেন্টের প্লাগে হাত রেখেছি।শরীর দিয়ে যেন ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে। স্যারের চুলের ঘ্রাণটাও আমার নাকে আসছে।
আচ্ছা স্যার কি শ্যাম্পু ব্যবহার করে? যে এত সুন্দর ঘ্রাণ।জানলে আমিও একটু দিতাম।

স্যার একটি ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাইক চালাচ্ছে।চারপাশে সবুজ গাছপালা,কি সুন্দর হিমশীতল হাওয়া আর আমি বসে আছি শুভ্র স্যারের পেছনে সবকিছু মিলিয়ে একটা দারুন অনুভূতি।ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বল তো”টাইপ।

স্যার একটি লম্বা ব্রিজের উপর বাইক থামালো।
আমি নেমে ব্রিজের নিচে পানি দেখছিলাম।
কি সুন্দর নদীর পানি! হালকা হালকা ঢেউ হচ্ছে মাঝেমধ্যে।খুব বাতাস এখানে।চুলগুলো ঠিক রাখতে পারছি না,বারবার সামনে এসে পড়ছে।
তাই এক হাত দিয়ে সামনের চুল কানে গুঁজে ধরে রাখলাম আর উপুর হয়ে নিচে তাকিয়ে পানি দেখছিলাম।
স্যার আমার পাশে এসে ব্রিজের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত গুঁজে বলল,কি ভালো লাগছে?
আমি ভুরু নাচিয়ে খুশি হয়ে বললাম,খুউবব।

ব্রিজটা অনেক বড় সাইড দিয়ে ভেন গাড়ি করে অনেক জিনিস নিয়ে এসেছে।তাকিয়ে দেখলাম আমাদের মতো আরও অনেকেই ঘুরতে এসেছে।
স্যার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,আজ তুমি চুড়ি পরো নি?
আমি হাতের দিকে তাকিয়েই অবাক হলাম।
সত্যিই তো! স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চুড়ি পড়ার কথা একদমই মনে ছিল না।
হঠাৎ স্যার আমার হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে একটি ছোট্ট ভেনগাড়ির সামনে নিয়ে আসল।
আমি তাকিয়ে দেখলাম সেখানে অনেক রঙের চুড়ি আছে।
স্যার তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল সব চুড়ি।তারপর তার মধ্যে থেকে লাল রঙের কিছু কাঁচের চুড়ি নিয়ে আমার হাতে পড়িয়ে দিতে লাগল, খুব যত্ন করে।আমি শুধু স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি।আর স্যার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে পড়াচ্ছে।
হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ পরায় নিচের ঠোঁটটা হালকা কামড়ে ধরে ভুরু নাচিয়ে ইশারা করল,কি?
আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলে চোখ নিচে নামালাম।
চুড়ি পড়ানো শেষে স্যার আমাকে জিগ্যাসা করল,
কিছু খাবে?
তখনই দেখলাম আমাদের সামনে দিয়ে হাওয়াই মিঠাইআলা যাচ্ছে কাঁধে এত্তগুলা হাওয়াই মিঠাই ঝুলিয়ে।

আমি লাফ দিয়ে স্যারকে বললাম হাওয়াই মিঠাই খাবো।স্যার একটা কিনে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিল।আমি পেয়েই তাড়াতাড়ি খেতে শুরু করলাম।
কিন্তু বাতাসের কারণে সব আমার নাকে মুখে লেপ্টে যাচ্ছে। সেই অবস্থাতেই খেতে খেতে বললাম,স্যার আপনি খাবেন না?
স্যার আমার নাকে ঠোঁটে  লেগে থাকা হাওয়াই মিঠাই হাত দিয়ে সরাতে সরাতে মুচকি হেসে বলল,সত্যি খাবো?
আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলাম।

খাওয়া শেষে আবারো আমাদের চলতে লাগল বাইকের লং ড্রাইভ।স্যার বাইকটা হঠাৎ থামাতেই দেখলাম আমরা আমাদের বাড়ির সামনে আছি।
আমি বাইক থেকে নেমে অবাক হয়ে বললাম,স্যার এখানে হঠাৎ?
স্যার বাইক থেকে নেমে বলল,আরে শ্বশুরবাড়ি এসেছি।হঠাৎ আবার কি?বলেই আমার গাল টিপে দিল।
আমি স্যারের পেছন পেছন গেলাম।

আমাদের দেখে তো সবাই মহাখুশি।ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমরা যে আসবো তা সবাই আগের থেকেই জানে।তার মানে স্যার শুধু আমাকেই বলে নি।রান্নাঘর থেকে বাহারি রান্নার সুগন্ধ বের হচ্ছে।বাবা আর ভাইয়া স্যারের সাথে সোফায় বসে গল্প করছে।আমি চট করে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি মা
আর ভাবী ধুমছে রান্না করছে।অবশ্য রান্না প্রায় শেষের দিকে।

একটুপর কলিংবেল বেজে উঠতেই হলে গিয়ে দেখলাম স্যার একটি ছেলের হাত থেকে এক গাঁদা জিনিস নামাচ্ছে।আমার পেছন পেছন ভাবীও এসেছে।কাছে গিয়ে ভালো করে দেখতেই আমার চোখ চড়কগাছ!সব পদের ফল,মিষ্টি,দই,রসমালাই,জুস,আইসক্রিমের পাঁচটা বড় বড় বক্স,চকলেট আরও কত কি!
মনে হচ্ছে বাজার বসে গেছে।
ভাবী বলে উঠল,শুভ্র এত কিছু আনার কি দরকার
ছিল?
স্যার মুচকি হেসে বলল,ভাবী কি যে বলেন।শ্বশুরবাড়ি এসেছি সামান্য কিছু আনবো না তো কি করব।

স্যার আমার বেডে বসে আছে আর আমি আইসক্রিম খাচ্ছি চেয়ারে বসে।হঠাৎ ভাবী একটা নক করে ভেতরে এসে সোফায় বসে আমাকে একটা চোখ রাঙানি দিয়ে বলল,একা একা বসে খেয়ে যাচ্ছিস।শুভ্রকে খেতে দেস নি কেনো?
আমি মুখ ফুলিয়ে বাটি সাইডে রেখে দিলাম।
স্যার হেসে বলল,থাক থাক ভাবী আমি খেলে আবার আপনার ননদের কম পড়ে যেতে পারে।
একাই পাঁচ জনের টা খায়।আমি তো রাগে ফায়ার!আমাকে পেটুক বলা!

আর ভাবী দাঁত কেলিয়ে হেসেই যাচ্ছে।তারপর বলল,শুভ্র তুমি কতদিন পর আসলে বলো তো?
স্যার বলল,ভাবী কাজের অনেক চাপ থাকে।
ভাবী বলল,সু্প্তিকে তো মাঝেমাঝে পাঠিয়ে দিতে পারো।
স্যার মুখে একটা সিরিয়াস ভাব এনে বলল,আর বলবেন না ভাবী! আমি সুপ্তিকে অনেকবার বলেছি যে সুপ্তি,আমি তো যেতে পারি না তুমি গিয়ে বেড়িয়ে এসো।কিন্তু ও এটা শুনলেই কান্না শুরু করে দেয়।বলে আমি যেদিন যাব সেদিনই যাবে।আমাকে ছাড়া এক রাতও বাইরে থাকতে চায় না।
স্যারের কথা শুনে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরল,আমি এতটা অবাক হলাম।
আমার মুখ হা হয়ে গেল।সামনে তাকিয়ে দেখি ভাবীর মুখ আমার থেকেও ডাবল বড় হা হয়েছে।
একটা খরগোশ সেখানে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারবে।চোখ গুলো যেন যেকোনো সময় খুলে বাইরে চলে আসবে।
ভাবী খরগোশকে ঢোকার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি মুখটা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে বলল,
কিরে সুপ্তি, এগুলো কি শুনছি? বিয়ের আগে তো,বিয়ে করব না,বিয়ে করব না,বলে গীত গাইতি আর এখন এমন জামাইপাগল হয়ে গেছিস।
বলে ভাবী মুখ টিপে হাসতে হাসতেই চলে গেলো।
আমি রাগে চোখ মুখ কুচকে স্যারের দিকে তাকাতেই স্যার একটা চোখ টিপ মারল।
কিছু বলতে যাবো তার আগেই বাইরে খাবার জন্য
ডাক পড়ল।

ডাইনিং টেবিলে বসে আমি আরামে খেয়ে যাচ্ছি।খাওয়া প্রায় শেষের দিকে।
শুভ্র স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্যার অসহায়
চোখে একবার আমার দিকে একবার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছে।
তার উপর এখন খাওয়া নামের অত্যাচার চলছে,অতি মাত্রায়।আর এই অত্যাচারটা নির্ভুল ভাবে চালাচ্ছে আমার একমাত্র ভাবী।মাঝে মাঝে মাও যোগ দিচ্ছে।প্লেটে খাবারের পাহাড় জমিয়ে রেখেছে।
খাওয়া শেষে আমি উঠতে লাগলাম।
স্যার আমার উঠে পড়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে আরও অসহায় ভাবে তাকিয়েই রইল।মনে হয় কিছু এক্সপেক্ট করছে আমার বলার।আমি আবার একটু দয়াশীল কিনা তাই তার এক্সপেক্টেশন না ভেঙে বললাম,একি ভাবী তোমাদের জামাইয়ের প্লেট এমন খালি কেনো?
ভালো মতো আদর যত্ন করে খাওয়াও।দেখো, আমাকে ঐ বাড়িতে গিয়ে আবার খোটা না শুনতে হয়।

বলেই মুখে হাত দিয়ে অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।ভাবী আমার উৎসাহ পেয়ে আরও দ্বিগুণ ভাবে নেমে পড়েছে খাওয়াতে।আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে।স্যারের অসহায় মুখটা দেখার মত।বেশ হয়েছে!আমাকে এতদিন জ্বালিয়েছে ঐ ফলপল খাইয়ে।আবার আজ ভাবীর সামনে আমার মান সম্মানের ফালুদা বানিয়ে কি মিথ্যাটাই না বলল।এতদিন পর আমি সুযোগ পেয়েছি।এবার বুঝুক মজা।

একটুপর রুমে ঢুকেই চোখের সামনে আরেকটা হাসির কান্ড দেখলাম।শুভ্র স্যার পান্জাবীর উপরের বোতাম না খুলেই পড়তে নিয়েছিল আর সেটা এখন অর্ধেক মাথায় আটকে রয়েছে, তাই স্যার ছটফট করে যাচ্ছে।আমি অনেক চেষ্টা করে মুখ টিপে হাসি চাপাতে গিয়েও হাসি ফক করে বেড়িয়ে গেল।
তাড়াতাড়ি আবার হাসি চেপে স্যারের সামনে গিয়ে বোতামটা খুলে দিতেই স্যার মাথা বের করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিন্তু নিচে তাকাতেই মুখটা আবার করুন হয়ে গেল।
আমি আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না।খিলখিল করে হেসে দিলাম।স্যার কোনো বাড়তি জামা কাপড় না আনায় স্যারকে বাবার পান্জাবী পড়তে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু বাবার পান্জাবী না দিয়ে তো ভাইয়ারটাও দিতে পারত? সেসব কথা না ভেবে বরং হাসির কথাটাই ভাবি।স্যারের গায়ে বাবার পান্জাবীটা সাংঘাতিক ঢোলা হয়েছে।স্যারকে দেখতে পুরো কার্টুনের মত লাগছে।

আমি মুখে হাত দিয়ে হেসেই যাচ্ছি হঠাৎ স্যার পান্জাবী খুলে খালি গায়ে আমার কোমড়ে হাত দিয়ে একদম কাছে টেনে নিল।স্যারের উন্মুক্ত বুকের সাথে মিশে আমার হাসি একদম থেমে গলা শুকিয়ে আসল।স্যার আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,খুব হাসি পাচ্ছে তাই না?
আমাকে তখন খাবার টেবিলে অপদস্থ করে মনে করেছো পার পেয়ে যাবে?

আমি স্যারের কথা শুনে একটা ঢোক গিললাম।
হঠাৎ স্যার আমাকে খুব গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে একটা গভীর করে চুমু খেল।
আমি কেঁপে উঠে একহাত দিয়ে শাড়ি আরেকহাতে স্যারের পিঠ খামছে ধরলাম।

আমাকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করল ভাবী।দরজায় কড়া নেড়ে ক্রমাগত ডাকছে।স্যার আমাকে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিলে আমি দরজা হালকা খুলে দাঁড়ালাম।
ভাবী বলল,এই নে ধর তোর ভাইয়ের টি শার্ট।তখন ভুল করে তোর ভাইয়ের পান্জাবী মনে করে বাবার পান্জাবী দিয়ে দিয়েছিলাম।এই বলে ভাবী চলে গেলো।
আমি টি শার্টটা লাজুক চোখে না তাকিয়েই স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।স্যার একটা মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আমার কেমন যেনো খুবই লজ্জা লাগছে স্যারের দিকে তাকাতেও পারছি না।

রাতে আমি আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু ঘুমের চোখেই বুঝতে পারলাম স্যার আমার কপালে একটি ভালোবাসার পরশ দিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।

আমাদের বাসা থেকে তার পরেরদিন সকালেই চলে আসলাম। দুপুরের পর কতক্ষণ ধরে আমি বেডে বসে কাচুমাচু করে যাচ্ছি আর স্যার মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখে যাচ্ছে।
আমি কতক্ষণ ধরে স্যারকে বলে যাচ্ছি একটু স্টার প্লাস দিতে কিন্তু দিচ্ছেই না।রিমোট টা যদি একবার হাতে পাই।
হঠাৎ আমি পেট ধরে ন্যাকাতে লাগলাম।স্যার উদ্বিগ্ন মুখে রিমোট রেখেই উঠে পড়ে আমার কাছে এসে দাঁড়াল।আর আমি এক ছুটে রিমোট হাতে নিয়ে স্যারকে হাত তুলে দেখালাম।
স্যার কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়াও বলে আমার পিছনে দৌড়াতে লাগল।আমি বুঝে গেছি স্যার রেগে গেছে আজ ধরতে পারলে আর রক্ষে নেই।তাই আমিও ছুটে যাচ্ছি।
পুরো ঘরময় আমরা ছুটে বেড়ালাম।স্যার আমাকে অবশেষে ধরতে পারল যখন আমরা ছাদে চলে আসলাম।
আমার হাত দুটি পেছনে নিয়ে শক্ত করে ধরে ধমক দিয়ে বলল,বেশি চালাকি শিখছো না?
আমি বলছি,স্যার ছাড়ুন প্লিজ।ব্যাথা লাগছে।
স্যার এবার আমাকে ছেড়ে বলল,কানে ধরো।
আমি মুখ ফুলিয়ে বুকে হাত গুঁজে অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম,ইশ! বললেই হল,যখন তখন শুধু কানে ধরো।
আমি ধরবো না।
স্যার আবার চোখ রাঙানি দিয়ে বলল,ধরবা না।
আমি আগের থেকেও দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম,
না।
বলা শেষ হতে না হতেই স্যার আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঠাস করে সুইমিংপুলের পানিতে ফেলে দিল।আমি পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি,হাত পা ছোটাছুটি করছি।
স্যার আমার এই অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে সেও পানিতে ঝাপ দিল।আর আমি স্বাভাবিক ভাবে সাতঁরে অন্য সাইড দিয়ে উঠে গেলাম।স্যার আজ দ্বিতীয় বার হতভম্ব হয়ে পানিতে দাড়িয়ে রইল।আমি তাকে বললাম,সাঁতার আমি পারি।দেখলেন তো কিভাবে আপনাকেও পানিতে নামালাম।সুপ্তির সাথে লাগতে আসলে এমনই হয় বলে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে আসলাম।

রাতে আমি অ্যাকুরিয়ামটা বিছানার কোনায় রেখে
উপুর হয়ে শুয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে মুখ রেখে মাছদুটির খেলা দেখছিলাম।
হঠাৎ স্যারও আমার পাশে আমারই মতো শুয়ে পড়ে মাছদুটির দিকে তাকিয়ে বলল,এগুলোর কোনো নাম দাও নি সুপ্তি?
স্যারের কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।সত্যিই তো মাছদুটিকে আমি এখনো কোনো নাম দেই নি কেনো?এতদিন ধরে আমার কাছে আছে।
এতবর ভুল আমি করলাম?
স্যার আবার চোখ দিয়ে ইশারা করে জিগ্যাসা করতেই আমি মুখ গোমড়া করে মাথা নাড়িয়ে না করলাম।
স্যার একটা মুচকি হেসে বলল,থাক আমি এদেরকে নাম দিয়েছি।আমি উৎসুক হয়ে জিগ্যাসা করলাম, কবে?
স্যার বলল,তোমাকে দেওয়ারও আগে।
আমি এবার চরম উত্তেজনা নিয়ে বললাম,কি নাম?
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,শুভ্র সুপ্তি।
তার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে
মাছদুটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারা কি পরম আনন্দে একে অপরের পিছনে ছোটাছুটি করছে।
আমি আবার স্যারের দিকে তাকালাম।স্যারও আমার দিকে আবেগী চোখে তাকিয়ে বলল,মনে  কর এরা আমাদের মনের একটা অংশ।
দেখো তো এই শুভ্র সুপ্তি এখন আমাদের কি করার ইশারা করছে।
আমি মাছেদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাছ দুটো একে অপরের মুখে মুখ লাগিয়ে রেখেছে।
আমার গাল একেবারে লাল হয়ে গেল লজ্জায়।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
স্যার আমার অবস্থা দেখে মাছদুটির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
আমি আবার ধীরে ধীরে স্যারের দিকে তাকালাম।
স্যারের দৃষ্টি এখনো মাছের দিকে।
হঠাৎ আমার কি হল জানি না আমি খুব ধীরে ধীরে স্যারের গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।
স্যার যেন বিদ্যুতের থেকেও বেশি চমকে আমার দিকে তাকালো।
আমি এক লাফ দিয়ে উঠে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।কম্বলের কোনা মুখে চেপে ধরে বালিশে মুখ আধো মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে এখনো লজ্জা পেয়েই যাচ্ছি।
আর স্যার যে এখনো আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা আমি বেশ বুঝতে পারলাম।

তার পরের দিন দুপুরের পরে আমি বেডে শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি।খুবই বোরিং লাগছে।
আর স্যার ধ্যানমগ্ন হয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে
আছে।এমন কি দেখছে ল্যাপটপে আমারও দেখতে ইচ্ছে হল।একটু পর ফোন বাজতেই স্যার রিসিভ করে বাইরে চলে গেল।আমি উঠে গিয়ে ল্যাপটপটা অন করতেই আমার মনে হল আমার বুকে যেন কেউ সজোরে আঘাত করলো।ল্যাপটপের স্কিনে স্যার আর সেই মেয়েটার ছবি।

দুজনে পাশাপাশি বসে আছে।আমার চোখ দিয়ে একটি বড় অশ্রুর ফোটা গড়িয়ে পরতে না পরতেই
স্যার রুমে চলে আসল।আমি তাড়াতাড়ি……….

চলবে,,

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে