প্রাক্তন পর্ব-০৮

1
1976

প্রাক্তন 🖤

লেখাঃ সাকিব সাদমান

পর্বঃ ০৮

বাড়িতে শুধু বলি ছেলেটা সব সত্য স্বীকার করেছে। তাই ধাক্কা না সামলাতে পেরে জ্ঞান হারায়।

আমি হাসপাতালে পৌঁছে যাই। ছায়ার রুমে প্রবেশের সাথে সাথেই কেউএকজন আমার গাল দুটা লাল করে দিল।

চড়টা এতই জোরে লেগেছে যে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাই। আমি পড়ে গিয়েই ভাবতে থাকি কে আমাকে মারতে পারে?

এমন সম্পর্ক তো কারো সাথে এখানের নেই। সিরিয়াস অবস্থার কথা বলে আমাকে ডেকে আনলো। আর উল্টো আমারই সিরিয়াস অবস্থা করে দিল।

তবে এটা তো সেই হারামিটা নয় আবার? মনে মনে চিন্তা করি।

উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই আবারও গালে আরেকটা চড় পড়ে। এইবার সাথে একটি ছেলের কন্ঠও ভেসে আসছে।

শালা এখানে এসেছিস একবারও বলার প্রয়োজন মনে করলি না? সেই তো চার বছর আগে দেবদাস হয়ে একা থাকা শুরু করলি। আর আমাদের বন্ধুত্বের কথা তো তুই ভুলেই গেছিস। (ছেলেটি)

কথাটা শুনা মাত্রই বুঝে গেলাম এ আর কেউ নয় বরং রাকিব। কারণ এভাবে চড় শুধু আমাকে ওই মারতো। আর যেহেতু বন্ধুত্বের কথা তাহলে শতভাগ নিশ্চিত এখন।

ছায়া ছেড়ে যাওয়ার পর নিজেকে একা থাকতেই শিখেছি। একা একাই ছিলাম। যদিও এমনটা না হলেও পারতো। কিন্তু নিজের জেদের কাছে নিজের মন সেদিন হার মেনেছিল।

মারছিস ভালো কথা? তবে এত জোরে মারার কি আছে? (আমি)

ওরের বাবা!! বাবুটা ব্যাথা পাইছে। আসো একটু আদর করে দেই। (রাকিব)

বলেই আরো একটা বসিয়ে দিল। আমি যতটা অন্যায় করেছি তার কাছে এই আঘাতগুলো হয়তো অল্পই। কারণ রাকিব ও আমি ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি।

আর সেই আমিই শুধু নিজেকে কষ্ট দিতে গিয়ে সাথে আরো অনেককে কষ্ট দিয়েছি। তাইতো আজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মারটা সহ্য করছি।

বিয়ে করলি? বাচ্চার বাবাও হয়ে গেলি। জানালি না? ভাগ্যিস আমার নেটওয়ার্ক এখানে ছিল নাহলে কিছুই জানতে পারতাম না। (রাকিব)

এক মিনিট এক মিনিট!!! বিয়ে করেছি? আমার বাচ্চাও হয়েছে? মজা নিচ্ছিস? (আমি)

ওমা মজা নেওয়ার কি আছ? ছায়া তর বউ না? ছায়ার সন্তান তর সন্তান না? ওহহহ এখন নিজে আবারও সব লোকাতে চাচ্ছিস? (রাকিব)

দাঁড়া দাঁড়া!! কে বললো ছায়া আমার বউ? (আমি)

দেখতো এই ডাক্তারকে চিন্তে পারিস কিনা? (রাকিব)

সেখানে উপস্থিত একজন মেয়ে ডাক্তারকে দেখিয়ে বললো। তার চোখগুলো আমার কাছে খুবই পরিচিত কিন্তু মনে করতে পারতেছি না।

কিছুক্ষণ ভেবে তারপর জবাব দিলাম,

কে রে? তর কোন আত্মীয় নাকি? (আমি)

ভাইয়া দেখছিস বলছিলাম আমার কথা উনার মনে নেই। তুই না বাজি ধরেছিলি। এখন আমার টাকা দে। (মেয়েটি)

করুন ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,

তুই সত্যিই চিনতে পারতেছিস না? (রাকিব)

কেন জানি না তার আওয়াজটা আমার পরিচিত লাগছে। তাও যন মনে করতে পারতেছি না। খুবই কাছের একজন ছিল হয়তো।

হঠাৎই মনে পড়ে যায়। মুখে হাসি অজান্তেই ফুটে উঠে। আর অস্পষ্ট ভাবে নামটা উচ্চারণ হয়ে যায়।

মুমু….. (আমি)

নামটা বলার সাথে সাথেই মুমুর মুখে একটা হাসি ফুটে। আর বাজি জেতার খুশিতে রাকিব উরাধুরা নাচতে থাকে। তবে মূহুর্তেই মুমু ছায়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে যায়।

আরেহ মুমু? প্রথম দিন থেকেই তোমার চোখগুলো চেনা চেনা লাগতেছিলো। তবে ছোটবেলার সেই মুমু এত সুন্দর ও স্মার্ট হয়ে গেছে কখনো কল্পনাতেই আসেনি। (আমি)

হ্যা আর কত কি বলবেন? আমি তো প্রথম দিনই চিনেছিলাম। তবে দেখতে চাইছিলাম আমার কথা আপনার মনে আছে কিনা? বাই দ্যা ওয়ে কনগ্রেচুলেশন আপনার কন্যা সন্তানের জন্য। (মুমু)

মুমু ও রাকিব আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলতে পারি? বাইরে কোথায় নিরব পরিবেশে? (আমি)

চলেন আমার কেবিনে বসে কথা বলি। (মুমু)

সবকথার মাঝেও এক জোড়া চোখ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার মনে কিছু প্রশ্নের ঢেউ চলছে। সেও কিছু বলতে চাচ্ছে হয়তো!!

তবে সেদিকে খেয়াল না করে রাকিব ও মুমুর সাথে কথা বলতে চলে গেলাম। কেবিনে যাওয়ার পর।

কি বলবেন? যার জন্য নিরব পরিবেশ প্রয়োজন? (মুমু)

আপনি? এতটাই পর করে দিলে এখন!! যাই হউক সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয় শুনেছিলাম আজ দেখেও নিলাম। তাহলে তুমিই রাকিবকে বলেছো আমার কথা। আর এই বিয়ে বাচ্চার কথা? (আমি)

যা সত্যি ততটুকুই তো বলেছি। কোন ভুল বলেছি কি? (মুমু)

নাহ্!! তুমি ভুল বলোনি সবই সঠিক বলেছো। তবে সেটা শুধু স্বপ্নে আকা সত্যিটা। বাস্তব হলো সে এখন অন্য কারো স্ত্রী ও সন্তানের মা। (আমি)

মানে কি বলতে চাচ্ছিস? তাহলে তুই ওকে নিয়ে আসলি? সব কিছু ব্যবস্থা করে দিলি এসব? (রাকিব)

অদ্ভুত? একটা মানুষ একটা মানুষের সাহায্য করতে পারে না? আমিও সেটাই করেছি মনে কর (আমি)

শুন সে চলে যাওয়ার পর থেকেই একা ছিলাম। আর এখানে আমার জন্য পাত্রি দেখতে আসে। সেখানেই স্টেশনে তার সাথে দেখা। তার স্বামীর সাথে হয়তো থাকে না কোন সমস্যার কারণে। তারপর সবটাই খুলে বললাম ওদের৷

বড়ই অদ্ভুত!! তবে রহস্য থেকেও যেন আবার নেই। (মুমু)

সেটাই। (আমি)

তবুও ওর সাথে তর একবার হলেও সরাসরি কথা বলা দরকার। দেখ ওর মুখ থেকে সত্যটা কতটুকু জানা যায়। শুন তর মুখে তর জীবনের কোন গল্প বললে তুই নায়ক আর ভিলেন তর প্রাক্তন। আবার সেই একই গল্প তার কাছে শুনতে চাইলে তুই ভিলেন সে নায়িকা। তাই তর ওর কথাগুলো শুনতে হবে। (রাকিব)

হুম শুনবো। কিন্তু ওর অবস্থাটা একটু ভালো হউক তারপর। তাছাড়া আজ রাতেই ওর মুখের কথাগুলো জানবো। যখন ওর বাবা চলে যাবে। (আমি)

সেটাই ভালো। তবে ভুলটা আমারও ছিল। না জেনেই যা চোখে দেখেছি সেটাই বলেছি। আসলে যা দেখা যায় তা সবসময় হয় না। (মুমু)

সমস্যা নেই। তোমার সাথে তো আজ প্রায়ই ১২বছর বা ১৪ বছর পর দেখা হলো। তোমার জীবন সম্পর্কেও জানবো চিন্তা কর না। তবে তোমার স্বামী কথা তো কিছুই বললে না? (আমি)

আমার কথাটা শুনে সে হাসতে লাগলো। তার এই অদ্ভুত হাসি দেখে মোটেও অবাক হয়নি। কারণ এখনো সেই আগের মতোই হাসতে জানে সেটা দেখে বিস্মিত হয়েছি।

আমি এখনো বিয়ে করিনি। কারো অপেক্ষায় আছি। রাকিব ভাইয়ে কি খবর? (মুমু)

ওমা তোমরা এতদিন যোগাযোগ করেছো আর এটা জানো না? ও তো আমার খালাতো বোন ইশরাতের উপর লাইন মারছে। শীঘ্রই বিয়ের প্রস্তাব দিবে শুনলাম। (আমি)

আপনা…..(মুমু)

আর কিছু বলতে দেয়নি ওকে। আমিই বললাম,

আর একবার আপনি বললে আর কথাই বলবো না। উঠে চলে যাব এখান থেকে। (আমি)

ওকে বাবা সরি সরি। আর বলবো না। কিন্তু তোমার বোনের সাথে লাইন মারে যেনেও চুপ থাকার কারণ? (মুমু)

দেখো ও আমার বন্ধু। ওরা যখন একে অপরের প্রতি দূর্বল হতে থাকে। তখন ও ইশরাতের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কারণ ইশরাত আমার বোন। আর ও জানে বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে গেলে হয়তো বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। ও যদি খারাপ হতো তাহলে এত দিন হাত পা ভেঙে দিতাম। (আমি)

হুম সেটাও কথা। (মুমু)

তারপর পুরাতন সবার সাথে অনেকক্ষণই আড্ডা দেই। দিতে দিতে বিকেল হয়ে যায়। ছায়া মোটামুটি সুস্থ তাই আমি ওর সাথে কথা বলার সিধান্ত নেই।

আর মুমুর সাথে মুমুদের বাসায় যায় রাকিব। আমি ছায়ার কাছে যাওয়ার জন্য হাঁটতে থাকি।

মুমু ও রাকিব দু’জনেই আমার ছোটবেলার বন্ধু। যদিও মুমু আমাদের বয়স ও ক্লাসের দিক থেকে ছোট ছিল। তবে আমাদের তিনজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং খুব ভালো ছিল।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকার সময়ই মুমুর বাবার চাকরির জন্য ওরা চলে যায়। মুমু রাকিবের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নাম্বার নিয়ে গিয়েছিল। আমারটাও ছিল।

তবে ভার্সিটি উঠে ছায়ার সাথে পরিচিয় ও সম্পর্ক শুরুর পর সবই যেন আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তাই হয়তো মুমু আমাকে আর খুঁজে পায়নি।

আর আজ এতবছর পর দেখা। কতটাই না পরিবর্তন হয়ে গেছে।

ভাবতে ভাবতে ছায়ার কেবিনে এসে যাই। ছায়া ওর সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেছে। সুন্দর লাগছে দু’জনকেই।

বাইরে থেকেই নক করে বলি,

আসবো? (আমি)

তোমার আসতে আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে? (ছায়া)

তুমি অন্যের স্ত্রী। তার উপর একজন মেয়ে মানুষ। আমি পুরুষ হয়ে তোমার কাছে সরাসরি এভাবে চলে আসতে পারি না। (আমি)

ওহহ!! দেখো আমার মেয়েটা কত সুন্দর হয়েছে।আমি তো ভেবেছিলাম ওর মুখ দেখতেই পারবো না।(ছায়া)

এখানে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি তোমার কাছে থেকে। (আমি)

কথাটা শুনে দু’জনেই নিরব হয়ে যাই।

চলবে……

বিদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে