প্রিয় বেগম পর্ব-৩৬ এবং শেষ পর্ব

3
1216

#প্রিয়_বেগম
#পর্ব_৩৬
লেখনীতে পুষ্পিতা প্রিমা

জাহাজ থেকে নেমে আসা হিমধূসের রঙের পাঞ্জাবিতে মোড়া এক সৌম্য দর্শন পুরুষকে রক্তে ভেজা ভয়ংকর রূপে দেখে নদীর ধারে বসতি গেঁড়ে বসবাস করা জেলেরা চেয়ে রইলো কৌতূহলী, অবাককর দৃষ্টিতে। তাদের সাথে তাদের স্ত্রী সন্তানও রয়েছে। মহিলাদের পড়নে ময়লা শাড়ি, বাচ্চাদের গায়ে ছেঁড়া জামা, জীর্ণশীর্ণ ঘরবাড়ি কপাল ভাঁজ করে পরখ করতে লাগলো শেহজাদ। জোরেশোরে বাতাস বইছে। সেই হাওয়ায় ওর নদীর জলে ধোঁয়া ভেজা মুখে ঠান্ডা হাওয়া লাগছে। নড়ছে গহন চুলের এলোমেলো হয়ে আসা ভাঁজ। পাঞ্জাবিতে ছিটকে পড়া রক্তের দাগ পানিতে মুছে দূর করা সম্ভব না। যদিও সে চেষ্টাও করেনি। কিন্তু এমনটাও ভাবেনি মানুষজন তাকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে। ডান কান থেকে শুরু করে কাঁধ হাত সবটাই রক্তে ভেজা। লা**শদুটো সেখানকার স্থানীয় লোকদের দিয়ে পুলিশের হেফাজতে রেখে এসেছে সাফায়াত।
রাত বাড়ছে। অপরূপার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনো অব্দি। শেহজাদ পণ করেছে আজ রাতের মধ্যে রূপাকে সে খুঁজে বের করবেই। কয়েকজন দক্ষ জাহাজের নাবিক ছড়িয়ে পড়েছে নদীর চারপাশে অপরূপার খোঁজে। সব নৌকা, জাহাজ, ট্রলার থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে শেহজাদের সৈন্যরা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। শেষে ভাবলো জেলেদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করা যাক। হতেই পারে রূপা সেখানে আছে।
কিন্তু ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকা জেলেরা তাদের দেখে পালাতে লাগলো। কথা বলতে চাইলো না। সৈন্যরা থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আমরা একটা যুবতী মেয়ের খোঁজ করছি। তার নাম অপরূপা। কেউ খোঁজ পেলে বলো। তাকে পুরস্কৃত করা হবে। ‘
তারা জানালো কোনো মেয়েকে তার দেখেনি। কিছু জানেনা। তাদের ভয় পাওয়া দেখে শেহজাদ তাদের ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে তারা চলে গেল দ্রুতপায়ে হেঁটে। যেন প্রাণে বাঁচলো। পলাশপুরের এদিকটাতে শেহজাদের তেমন আসা হয়নি। কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ। চারপাশে মাছ আর মাছের জাল থেকে আসা আঁশটে গন্ধ।
শেহজাদ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের জাহাজে উঠে পড়লো। সৈন্যরা কেবিনে গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। তারা বড্ড ক্লান্ত। শেহজাদ কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো উর্ধ্বমুখী হয়ে। হাতের আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত বিড়ির আগুন হাওয়ায় নিবুনিবু প্রায়।

সাফায়াত ক্লান্তদেহে তার পেছনে এসে দাঁড়ালো। বলল,

‘ ভাইজান একটু বসো। তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। ‘

শেহজাদ কাঠকাঠ স্বরে বলল,

‘ বসা যাবে না। তুমি বুঝতে পারছো না রূপা কেমন বিপদে আছে? আমার জন্য একটা মেয়ে প্রতিনিয়ত জীবনমৃত্যুর সাথে লড়ছে আর আমাকে তুমি বসতে বলছো? ‘

সাফায়াত আর কিছু বলল না। রূপা আদৌ কি বেঁচে আছে নাকি তলিয়ে গেছে অতল সমুদ্দুরে?
শেহজাদ অস্থিরচিত্তে বলল,

‘ আমার মনে হয় রূপা সাঁতার জানে। তাই ঝাঁপ দিয়েছে। ও বুদ্ধিমতী। ও অপঘাতে হারিয়ে যেতে পারে না। অন্তত আমি বিশ্বাস করিনা সাফায়াত। তোমার কি মনে হচ্ছে ও এভাবেই হারিয়ে যাবে? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ওকে ফিরতেই হবে।’

সাফায়াত ওর উৎকন্ঠিত মুখখানা দেখে মনে মনে বলল, তোমার বিশ্বাস তাকে ফিরিয়ে আনুক।
সাফায়াত ভেতরে চলে গেল।
জলযানটি রূপনগরের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে। চাঁদের কিরণ পড়ে নদীর জল চিকমিক করছে। শেহজাদ সেই জলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভাবলো বছর বছর খানেক আগের সেই সন্ধ্যারজনী যাকে ঘিরে তার জীবনে বসন্ত এসেছিল সে আজ তার হারজিতের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। বলা চলে তার মস্তিষ্কটাও মেয়েটা নিয়ন্ত্রণ করছে। দু দুটো মানুষের প্রাণ নিয়েছে সে আজ। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। ওই চোখদুটোতে যেখানে তার জন্য শুধুই সম্মান দেখতো। সেখানে সে বিশ্বাস, ভরসা, শান্তি আর একটু হলেও ভালোবাসার আঁচ দেখতে পেয়েছিল সেই রাতে। সন্তাপে, অনুশোচনায় মেয়েটা নিজেকে জাহির করতে সংকোচে ভুগছে। একটা ঘর, সংসার আর মনের পরিপূর্ণ মিলন ঘটার আগেই রূপা হারিয়ে যেতে পারেনা। তার দেয়া লাল শাড়ি পড়া বাকি। তার মুখে ‘ভালোবাসি’ শোনা বাকি। আরও বহুদূর পথচলা বাকি। তাকে মাঝপথে রেখে রূপার এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা ঘোর অন্যায়। এতবড় শাস্তি তার কাম্য নয়। রূপাকে ফিরতেই হবে। ভাবনার ফাঁকে হঠাৎই মনে হলো একটা শ্বেতরশ্মি এসে পড়লো মুখের উপর। ঝট করে বুঁজে আসা চোখ মেলতেই সাদা পোশাকে রূপাকে দেখতে পেল শেহজাদ। ঝকঝকে ঝালর আবৃত কপালের নীচে ছোট ছোট তৃণকেশের ভুরুগুলো নাচিয়ে মজাচ্ছলে মিটিমিটি হাসছে সে।

শেহজাদ চোখের দৃষ্টি কঠিন করে চিবুক শক্ত করে কটমট করে বলল,

‘ দু দুটো প্রাণ নিয়েছি তোমার জন্য। আর তুমি হাসছো?’

অপরূপা আবারও হাসলো। হাসতে হাসতে একদম নিকটে এসে বুক জড়িয়ে ধরলো। শেহজাদের মুখের নিকটে মুখ নিয়ে জোড়ালো শ্বাস টেনে বলল,

‘ ছিঃ রক্ত রক্ত গন্ধ। আপনি দেখছি ভীষণ পাষাণ পুরুষ। অথচ আমি আপনাকে প্রিয় স্বামী বলে আখ্যায়িত করেছি। ‘

বলতে বলতে শেহজাদের ধারাল গালে তার নরম গাল ছোঁয়ালো, ঠোঁট ছোঁয়ালো।
শেহজাদ দু’হাতে তাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক তখনি তার ভ্রান্তি দূর হলো। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল অচিরাৎ। এলোমেলো হয়ে এল সমস্ত ভাবনা। রূপাকে তার ভীষণ ভীষণ দরকার। ক্ষোভের তাড়নায় পাশের কেদারাটিতে জোরে লাতি বসালো সে। হুড়মুড়িয়ে ছুটে এল সৈন্যরা। শেহজাদ তাদের দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্তস্বরে বলল,

‘ তোমরা ঘুমাও। কিছু হয়নি এখানে। ‘

উদ্দেশ্য এখন শেরহাম সুলতানের মুখোমুখি হওয়া।
__________________

তটিনীর হাত চেপে নিজের কক্ষের দিকে তাকে টেনে নিয়ে গেল শেরহাম। কক্ষে ঢুকিয়ে তটিনীকে ছুঁড়ে ফেলে বলল,
‘ বেশি বাড়াবাড়ি করবি তো জানে মে*রে ফেলবো। চুপচাপ ঘুমা। আমাকে রাগাবি না। ‘

তটিনী দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল,
‘ তুমি জোর করে বিয়ে করে এখন আবার জোর কাটাবো আমার উপর? নির্লজ্জ লোক। ‘
শেরহাম রক্তচোখে তাকিয়ে বলল,
‘ রাত বেড়েছে। আমার মাথা গরম করবি না। তোর নিকাহ হয়েছে তুই ওই ঘরে কি করিস? তুই আজ থেকে এই ঘরে থাকবি। সবার সামনে আমার বউয়ের মতো থাকবি। আমার কাল পড়েছে তাই তোর মতো ফালতু মেয়েকে নিকাহ করতে হলো। নইলে তোকে গলা টি**পে মে**রে নদীতে ভাসিয়ে দিতে দুমিনিট লাগতো না। কাল আমার অভিষেক। নাটক না করে আমাকে ঘুমাতে দে। ‘

বলেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো সে। বোনদের সাথে প্রতিবারের মতো নিজকক্ষে শুয়ে পড়েছিল সে, শেরহামের কথা না শুনে। ঘুমও চলে এসেছিল। সেই ঘুম থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে শেরহাম তাকে নিয়ে এসেছে নিজের কক্ষে। এমন একজন নোংরা লোকের সাথে একঘরে থাকতে হবে ভেবেই বমি পেল তার। এমন একটা অ**মানুষের সাথে রাত কাটানোর চাইতে তার মৃত্যু হলো না কেন? ‘

শেরহাম বিছানায় হাত পা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তটিনীর গা জ্বালা করলো। ইচ্ছে করলো বালিশ তুলে চাপা দিয়ে দমবন্ধ করে মেরে ফেলতে। সবাই শান্তি পাবে। সে না হয় বন্দি হবে। তারপরও সবাই তো শাম্তিতে থাকবে। যে-ই ভাবা সেই কাজ। পাশ হতে বালিশ তুলে শেরহামের মুখের উপর সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরতেই শেরহাম তাকে সরানোর চেষ্টা করলো। তটিনী চেপেই ধরলো। আজ মেরেই ফেলবে সে। কাল সকালে শেহজাদ ভাই এসে জানবে শেরহাম সুলতান মারা গিয়েছে। সে সাদা ধবধবে শাড়ি পড়ে আনন্দ উল্লাস করবে। ভাবতে ভাবতেই বলিষ্ঠ হাতের থাবার ধাক্কায় খাট থেকে দূরেই ছিটকে পড়লো তটিনী। হাড়গোড় আর ঠিক থাকার কথা নয়। ব্যাথা যন্ত্রণা চেপে রাখলো সে। শেরহাম তেড়ে এসে আঙুলের সাহায্যে তটিণী-র গাল চেপে ধরে বলে,

‘ তোর স্পর্ধা দেখে রীতিমতো অবাক হচ্ছি। তুই জানিস তুই কার সাথে যুদ্ধ করছিস? তোকে আমার দরকার নয়ত এক্ষুণি তোকে মেরে পুঁতে ফেলতে আমার দু মিনিটও লাগবে না। ‘

তটিনীর চোখ বেয়ে ব্যাথা, যন্ত্রণার জল গড়াতে লাগলো। শেরহাম তাকে ছুঁড়ে ফেললো। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো বিছানায় গিয়ে। তটিনী ঘুমালো ঠান্ডা মেঝেতে। স্বপ্নে দেখলো শেরহামের মৃত্যু। আজ থেকে তার লক্ষ্য সেটাই। শয়নেস্বপনে তার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য একটাই। শেরহাম সুলতানের মৃত্যু। ভয়ংকর মৃত্যু।

________________

বমির পর বমি। একনাগাড়ে মেয়েটা বমি করে যাচ্ছে। সব সবুজ রঙের তিতা পানি। মেয়েটার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বয়স্কা আর অল্পবয়স্কা মহিলাদুটি অপরূপাকে শুইয়ে দিল পুনরায়। তার শরীর কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে কি কি যেন বিড়বিড় করছে সে। কিছুক্ষণ আগেও ডাকাতের হাতে পড়বে বলে পালাতে চাচ্ছিলো। বকবক করে বলছিল তাকে ধরতে এলে হাত কেটে ফেলবে বলে। আর হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ আগে যে লোকগুলো এল তাদের ডাকাত ভেবে মেয়েটার খোঁজ দেয়নি তারা। কারণ মেয়েটি তাদের বারণ করেছিল।
নদীর কিনারায় জাল নিয়ে মাছ শিকারে গিয়েছিল বয়স্কার মহিলাটির স্বামী সন্তানরা। সেখানে এই মেয়েটা কোথাথেকে ছুটে এসে জাল আঁকড়ে ধরে বাঁচানোর জন্য সাহায্য চাইলো আধমরা হয়ে। তারা সবাই মিলে টেনে তুলতেই মেয়েটা অচেতন হয়ে গেল। যখন চেতন ফিরলো তখন সবটা খুলে বললো সবাইকে। তারা তাকে সাহায্য করলো। ভেজা পোশাক পাল্টে একটা শাড়ি পড়িয়ে দিল কোনোমতে। এরপর মেয়েটার বমি শুরু হলো। এখনো পর্যন্ত বমি থামছে না। গা কাঁপিয়ে জ্বরও এসেছে। বয়স্কা মহিলাটি তার পাশেই কাঠ জ্বালিয়ে দিয়ে কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো। কপালে ঘনঘন হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার হাতে চুড়ি, নাকে দুল। তুমি কি বিবাহিতা? তোমার সোয়ামির নাম কি? ‘

অপরূপা কাশতে কাশতে বুকে হাত চেপে ধরলো। মহিলাটি তার পিঠের পেছনে হাত ঠেকিয়ে বসাতেই অপরূপা বলল,

‘ সম্রাট। আমি সম্রাটের বেগম। ‘

তারপরেই মহিলাটির কোলে ঢলে পড়লো সে। শীতে তার গা কাঁপছে। চোখদুটো লালবর্ণের হয়ে এসেছে জ্বরের প্রকোপে। অল্পবয়স্কা মহিলাটি আগুনে আরও কয়েকটা কাঠ ফেলে দিল। অপরূপা নেতিয়ে পড়লো। ঝাপসা ঝাপসা চোখে দুচোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারে সেই মানুষটাকে দেখলো।
মানুষটা তার নিকটে এসে পরম যত্নে তার শরীরটা তুলে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে উষ্ণ চুম্বনে ভরিয়ে দিল সর্বাঙ্গ। অপরূপা উম খুঁজে পেল কাঠপোড়া আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠতেই। যেন সে স্বামীর বক্ষমাঝে।

___________________________

শেহজাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে মহলের সকলেই জেগে উঠলো। ভোররাত তখন। সকলেই মরার ঘুমে ঢলে পড়েছিল। কারো খাওয়াদাওয়া হয়নি রাতে। সকলেই একরাশ চিন্তা নিয়ে শুয়েছিল। চোখ লেগে এসেছে। শেহজাদের গলার আওয়াজ শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সকলে। শেরহাম ঘুমঘুম চোখে উঠে এসে শেহজাদের মুখোমুখি দাঁড়াতেই শেহজাদ কোনো কথা না বলে শেরহামকে ঠেলে দেয়ালে চেপে ধরে বলল,

‘ তুমি ছলনা করেছ আমার সাথে। আমি সেখানে রূপাকে পাইনি। কেন এমন করলে? ‘

শেরহাম গা ঝাঁড়া মেরে বলল,

‘ ছাড় আমাকে। আমি কি করব তোর বউ পালালে? তোরা আমার দুটো লোককে মেরেছিস। তোদের আর ছাড় দেব না আমি। ‘

শেহজাদ ওর শরীর দু’হাতে আঁকড়ে ধরে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মেরে বলল,

‘ তোমার জন্য রূপা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। তোমার জন্য হয়েছে সবকিছু। তুমি ওকে ওখানে না নিয়ে গেলে ওর কিছুই হতো না। আমার হাতেই তোমার মৃত্যু লেখা আছে। তোমাকে নিস্তার দেব না আমি। ‘

শেরহাম খেঁকিয়ে উঠে তার সৈন্যদের বলল,

‘ এই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বন্দি কর ওকে। ‘

শেহজাদের সৈন্যরা এগিয়ে আসতেই শেরহাম তার সৈন্যর হাত থেকে তলোয়ার নিয়ে শেহজাদের গলায় ধরে বলল,

‘ সকলেই তলোয়ার ফেলে দে। নইলে রক্তারক্তি চলবে। নামা। ‘

সকলেই অস্ত্র নামিয়ে ফেললো। শেরহাম আদেশ দিল সকলকে আটক করতে। শেহজাদের সৈন্যদের আটক করা হলো। শেহজাদ শেরহামকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘ তোমার ধ্বংস সন্নিকটে। তোমার খুব খারাপ হবে।’

‘ খারাপ তোর হয়েছে। তোর বউ মরেছে। বেচারি আমার কাছে থাকলে কতই না ভালো থাকতো। ‘

‘ চুপ করো। ও ফিরবে। তুমি ওর কিচ্ছু করতে পারবে না। ‘

‘ এই ওকে বাঁধ। ‘

সৈন্যরা গিয়ে তার হাত বেঁধে দিল। সাফায়াত এগিয়ে এসে বলল,

‘ কি হচ্ছে এসব? বড় ভাইজান শেহজাদ ভাইজানকে ছাড়ো। এসব ভালো হচ্ছে না। রূপাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। দয়া করো। ‘

শেহজাদ গর্জে বলল

‘ সাফায়াত দয়া চাইবে না ওর কাছে। ‘

খোদেজা, শাহানারা সকলেই ছুটে এল। এসেই শেহজাদকে দেখে কান্না জুড়ে দিল। রাতে শেরহাম তটিনীর সাথে কিভাবে ভয় দেখিয়ে নিকাহ করেছে শাহাজাহান সাহেব আর শেরতাজ সাহেবকে বন্দী করলো সবটা খুলে বললো। সাফায়াত শেরহামের কলার চেপে ধরে বলল,

‘ শেষমেশ তটিনীকেও? আপনি মানুষ? ‘

শেরহাম ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

‘ তোকে আমার দরকার। নইলে তোকেও বন্দি করতাম। চুপ থাক। এই ওকে সরা। ‘

সৈন্যরা সাফায়াতকে সরিয়ে নিয়ে গেল।

শেহজাদের হাতে হাতকড়া পড়ালো শেরহামের সৈন্যরা। অন্ধ কুঠুরিতে নিয়ে যাওয়ার সময় শেহজাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ তোমার এই আনন্দ উল্লাস বেশিদিন থাকবে না। ‘

শেরহাম বলল,

‘ তুই দেখবি অভিষেকের পর। ‘

শেহজাদকে নিয়ে যাওয়ার পর খোদেজা ঢলে পড়লো। সায়রা সোহিনীরা সবাই ছুটে এসে ধরলো। খোদেজা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল,

‘ হায় খোদা। কোন পাপের ফল দিচ্ছো? শেষমেশ আমার শেহজাদকেও বন্দি হতে হলো। ‘

_____________

প্রায় সপ্তাহখানেক পরের এক শুক্রবার সন্ধ্যা। মহা অভিষেকের দিন। মহামান্য ব্যক্তিবর্গরা আসতে পারবেন না জানিয়েছেন তাই সবকিছু পিছিয়েছে শেরহাম। তাছাড়া শেহজাদ সুলতানের লাপাত্তা হওয়ার বিষয়টিকে অবসর উপলক্ষে বিদেশ ভ্রমণের কথাটাও বিশ্বাস করাতে সহজ হয়েছে এ কয়দিনে।
সুলতান মহলের আঙিনা অভিষেক উপলক্ষে লোকসমাগমে ভরপুর। ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের শব্দে মাতোয়ারা পরিবেশ। সিংহদ্বার সাজানো নানানরকম বাতি দিয়ে। অতিথিদের অশ্বগুলি পরপর দাঁড়ানো। মোমবাতি দিয়ে সাজানো প্রাঙ্গনের একটাপাশ নাচনেওয়ালীদের হাতে বন্দি। ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চারা ছোটাছুটি করছে আনন্দে। নগরের মানুষ দলে দলে আসছে উপহারসামগ্রী নিয়ে।
ভোরে শাহজাহান সাহেব আর শেরতাজ সাহেবকে মুক্তি দিয়েছে শেরহাম। তাদের না দেখতে পেলে শেরহামকে নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। শেহজাদের প্রাণের ভয় দেখিয়ে আপাততপক্ষে সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছে সে।
শেরতাজ সাহেব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শয্যা থেকে উঠতে পারছেন না। শাহজাহাব সাহেব সন্তানশোকে কাতর। উনি সভায় থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। জানেন না শেরহাম তা হতে দেবে কিন।

দলে দলে লোকজন আর মহামান্য ব্যক্তিবর্গরা আসা শুরু করলো। শেরহামের লোক সামাদ শেহজাদের স্বাক্ষরিত অঙ্গীকার পত্র সকলকে পড়িয়ে শোনালো। সকলেই শ্রবণ করলো। অনেকেই সহজেই মেনে নিল। অনেকেই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারলো না। সম্রাট এভাবে না জানিয়ে অবসর নিল?

দলে দলে উপঢৌকন হাতে নতুন সম্রাটকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা আবালবৃদ্ধবনিতার মাঝে মহলের সিংহদ্বারে পা রাখলো শাড়ির উপর সাদা ওড়না জড়ানো এক রমণী। তার ধারালো তীক্ষ্ণ চোখ অদ্ভুত বিস্মিত চোখে চারপাশ দেখছে। তন্নতন্ন করে খুঁজেও রূপনগরের সম্রাটকে সে দেখতে পায় না।

প্রথম পরিচ্ছেদ সমাপ্ত………

সকলেই মতামত জানাবেন। শেয়ার দেবেন।

3 মন্তব্য

  1. ঔষধ লেখিকা আপু,,,,,, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ তাড়াতাড়ি দেন,,,,,,,,,, এমন গল্পের জন্য অপেক্ষা করা তো বড্ড কষ্টের,,,,,,,,,, প্লিজ প্লিজ প্লিজ তাড়াতাড়ি দেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে