হ্যাকারের লুকোচুরি সিজন ২ পর্ব-১৯ ২০ ও সমাপ্ত

3
2047

হ্যাকারের_লুকোচুরি
#সিজন_২
#পর্ব_১৯_২০_ও_সমাপ্ত
লেখক_sharix_dhrubo

অন্যসব বাদ দিয়ে রাফি তার প্রয়োজন নিয়ে বসে পড়ে পিকাচুর সামনে,
রাফি – পিকাচু, আমার টাকার দরকার, প্রচুর টাকার দরকার।
পিকাচু – Feeding money ….. calculating…..
I can control most of the digital money of the world.
রাফি – না। সবার টাকা আমার প্রয়োজন নেই। আর অন্যের টাকায় বড়লোক হতেও চাইনা। এই বিপদ থেকে বাঁচতে আমার টাকার প্রয়োজন, এমন টাকা খুঁজে বের করো যে টাকা খোয়ালে কেউ খোঁজ করবে না।
পিকাচু – Accessing public record ….. Gathering account info……. calculating……..
You can still be a billionaire.
রাফি – পিকাচু, কি করেছো তুমি?
পিকাচু – মানুষ মারা যায়, কিন্তু তাদের ব্যাংক একাউন্ট ক্লোজ হয় না। যদি একাউন্ট হোল্ডারের নমিনি সহ কোন দাবিদার না থাকে তাহলে সেই টাকা ব্যাংকেই পড়ে থাকে। পিকাচু শুধু এই ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুঁজে বের করেছে যারা পাবলিক রেকর্ডে মৃত ঘোষিত হয়েছে এমনকি কোন দাবিদারও বেঁচে নেই।
রাফি ভেবে দেখলো এমন একাউন্টের টাকা নেয়া ঠিক হবে কি না! এতকাল ধরে মাফিয়া বয় একটা মাইটি ইমেজ ছিলো হোয়াইট হ্যাটসদের কাছে। শেষমেশ কিনা টাকা চুরি করা শুরু করলো রাফি!
পিকাচু – You can have it or not is upto you. Take it or leave it.
রাফি জানে যে তাকে সততার চরম মূল্য দিতে হবে, কারন যদি মাফিয়া গার্ল রাফির বাবা মা আর তোহাকে বন্দি করে ওই নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ও স্যাটেলাইট দখল নিয়ে দিতে বলে তাহলে রাফির হাতে কোন অপশনই থাকবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু একটা মাথায় এলো রাফির,
রাফি – ওয়েট ওয়েট ওয়েট…….. নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন ডিভাইস চুরি গেছে, সেটা নিশ্চই এক্টিভ ছিলো না! এক্টিভেশন ডিভাইস এক্টিভ করতে নিউক্লিয়ার লঞ্চ কোডের দরকার পড়বে। অথেনটিক লঞ্চকোড ছাড়া না এক্টিভেশন ডিভাইস কোন কাজে দেবে আর না ওই নিউক্লিয়ার বোমা। লঞ্চকোডের কোন কথা তো উল্লেখ করলো না মাফিয়া গার্ল!
রাফির কাছে এখন পুরো ব্যপারটা একটা সাজানো নাটক মনে হতে লাগলো আর কোন বড়সড় প্লানের জালে নিজেকে ফাঁসতে দেখলো।
নাহ যে কোন মূল্যেই হোক বাবা মা আর তোহা কে মাফিয়া গার্লের থাবা থেকে বাঁচাতেই হবে আর সাথে পিকাচুকেও দূরে রাখতে হবে মাফিয়া গার্ল থেকে।
রাফি – পিকাচু, আমার দেশে এমন পড়ে থাকা একাউন্ট থেকে কত টাকা বের করা সম্ভব?
পিকাচু – Calculating………
রাফি স্ক্রীনে ১০ সংখ্যার একটা এমাউন্ট দেখতে পায়।
রাফি – কিহ!!! এত টাকা! বেওয়ারিশভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে! আমি চাইলেই এই টাকা নিজের করে নিতে পারবো?
পিকাচু – Affirmative.
রাফি – এত টাকা দরকার নেইই আমার। বাবা মা আর তোহাকে সরিয়ে কোন নিরাপদ জায়গায় রাখতে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ব্যবহার করবো।
পিকাচু – Your wish is my command.
রাফি – পিকাচু, বাবা মা এবং তোহাকে রাখার মত কোন সেফহাউজের ব্যবস্থা করতে পারবে কি, মাফিয়া গার্লের রাডারের বাইরে!
পিকাচু – There is a lots of ways but none of them are recommended.
রাফি – আমার একটা সেফহাউজ লাগবে যেখানে আমার ফ্যামিলি নিরাপদ থাকবে মাফিয়া গার্লের নজরের বাইরে, এতটুকুই। আর কোন অতিরিক্ততা চাই না।
পিকাচু – তুমি কি তাদেরকে তোমার কাছে আনতে চাও?
রাফি – পিকাচু, তোমার হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারন কি? আর তাদেরকে আমার কাছে এনে কোথায় রাখবো!
পিকাচু – পিকাচু এক্টিভেট হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টোটাল এক্টিভিটিসের ৭০% ছিলো ফ্যামিলি রিলেটেড। পিকাচুর ক্যালকুলেশন বলে যদি তোমার ফ্যামিলি তোমার আশে পাশে থাকে তাহলে তোমার স্ট্রেস লেভেল ৪০% কমে যাবে এবং অন্যান্য কাজের ফোকাস ৫৬% বাড়তে পারে।
রাফি পিকাচুর এ্যনালাইসিস দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। হিউম্যান ইমোশন এবং এ্যাটাচমেন্টকে গানিতিক রুপে প্রেজেন্টেশন এর আগে কখনো দেখে নি রাফি। পিকাচুর আনফিনিশড কোডিং হয়তো রাফি করেছিলো কিন্তু সাইবার ওয়ার্ল্ডের কোটি কোটি মানুষের বিহেভিয়ার এ্যানালাইসিস করে পিকাচু এক একটি নতুন উপসংহার তৈরী করছে প্রতিনিয়ত। এখনো অনেককিছুই জানা বাকি পিকাচু সম্পর্কে।
রাফি – সেটা তো বুঝতে পারলাম কিন্তু বাবা মা আর তোহাকে কিভাবে আমার কাছে নিয়ে আসবো? তাদের পাসপোর্ট থাকলেও এই দেশের ভিসা তো নেই। তাহলে কিভাবে আসবে তারা?
পিকাচু – তারা যদি প্লানমাফিক চলে তাহলে আমি তাদেরকে এই লোকেশন পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারবো।
পিকাচু মনিটরে একটা জিপিএস লোকেশন শো করে যা আসলেই পৃথিবীর বৃহত্তম দেশের একটা শহরে পয়েন্ট করে আছে।
রাফি – ওখানে কি আছে? ওখানে আমার পরিবার নিরাপদ থাকবে কিভাবে?
পিকাচু – ওটা একটা পরিত্যাক্ত আর্মি বেস তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর এখানে তৎকালীন সময়কার এক অত্যাধুনিক বাংকার রয়েছে যেখানে তুমি এবং তোমার পরিবার সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকবে।
রাফি – কিন্তু তুমি তাদেরকে এখানে আনবে কিভাবে পিকাচু?
পিকাচু – Accessing global safehouse data……
তোমার বাবা মা যে বাড়িতে আছেন তার কাছাকাছি একটা বেসরকারী আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার জোনাল হেড অফিস রয়েছে, যেটা আসলে একটি দেশের গুপ্তচরদের সেফহাউজ। আমি তোমার বাবা মা এবং তোহা কে আন্তর্জাতিক মামলার স্বাক্ষী দেখিয়ে ওই সেফহাউজে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। পরবর্তীতে প্রোটোকল অনুযায়ী ওই সেফহাউজই তোমার বাবা মা এবং তোহার ডুপ্লিকেট পাসপোর্ট ভিসা বানিয়ে তাদের এই বৃহত্তম দেশে ডিপোর্ট করার ব্যবস্থা করে দেবে।
রাফির কিছুটা সম্মানে লাগে, শেষ পর্যন্ত বাবা মা আর তোহাকে চোরের মত দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে হবে! যা করেছে তা তো সব রাফিই করেছে, রাফির পরিবার তো কোনকিছুতেই জড়িত নেই, আর তাছাড়া কিছুদিন পর টাস্কফোর্সের নতুন রিপোর্ট অনুসারে রাফিকে হয়তো নির্দোষ ঘোষনা করে দেবে কোর্ট। এমন অবস্থায় অন্যের টাকা চুরি করে নিজের পরিবারকে আরো বেশী ছোট করে লুকিয়ে তাদেরকে এই বন্দি জীবন উপহার দিতে পারবে না রাফি।
রাফি – পিকাচু, প্লান ভালো তবে আমার এই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোন ইচ্ছা নেই, এখন সমস্যার কারনে আছি। সমস্যা না থাকলে আমি আমার দেশে ফিরে যাবো। বাবা মা এবং তোহাকে দেশ থেকে ওই প্রোসেসে নিয়ে আসার মত ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয় নি।
আচ্ছা বাবা মা কে গ্রামের বাড়ি রেখে আসার ব্যবস্থা করলে কেমন হবে, এত প্রযুক্তির কালো থাবা ও নেই আর রাফিদের বাপ দাদার ভিটা চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে সারা গ্রামে পরিচিত। সেখানে আইন আর সমাজের মাথা বলা হয় ওই চেয়ারম্যান বাড়ি। সেখানে কোন ঝামেলা করার ক্ষমতা মাফিয়া গার্লের হওয়ার কথা না। এছাড়াও আর কোন আইনী সমস্যা করতে যাবে না কেউ।
রাফির কাছে নিজের মা বাবা আর তোহাকে দেশের বাইরে নিয়ে আসার থেকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া বেশী নিরাপদ মনে হতে লাগলো।
রাফি – পিকাচু, মা বাবার কাছে থাকা ফোনের আপডেট জানাও,।
পিকাচু – Scanning ………..
পিকাচু মনিটরে মোবাইল ফোনের বর্তমান লোকেশন পিনপয়েন্ট করে দেখালো যা রান্নাঘরের কোন এক শেলফ এ শো করছে।
রাফি – পিকাচু, মাইক্রোফোন স্ক্যান করে দেখো আশেপাশে কেউ আছে কি না?
কারন রাফি জানে যে ঘরের ভেতর তার মা এর ফেবারিট প্লেস হলো রান্নাঘর। আর কিছু হোক আর না হোক, মা ঘুরেফিরে রান্নাঘরের দিকেই থাকে। আর বডিগার্ডদের যদি মা রান্না করেও খাওয়ায় তবুও তাদের কখনো রান্নাঘরের আশেপাশে ঘেষতেও দেবে না, এটা মায়ের মসজিদ বলা যায়।
পিকাচু – পিকাচু কিছু আওয়াজ ডিটেক্ট করছে যা রান্নাঘরের ভেতর থেকেই আসছে।
রাফি বুঝতে পারে মা হয়তো কিছু রান্না করছে।
রাফি – পিকাচু, তুমি কি মোবাইলটাতে আমার ভয়েস বাইপাস করে দিতে পারবে? রান্নাঘরের ভেতরে যেন মিনিমাম সাউন্ডে আমার ভয়েস শোনা যায়। সম্ভব?
পিকাচু – Difficult but not impossible…….
checking minimum distance ……..
Speaker adjusted.
Now you can talk.
রাফি – মা? ও মা?
পিকাচু – ঘরের অন্যান্য আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে, we got her attention.
কিছুক্ষণ চুপচাপ নীরবতা, কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রাফি আবার বলতে থাকে,
রাফি – মা? আমি ফাষ্টফুড প্যাকেটের ভেতর, তোমার রাফি।
পিকাচু মাইক্রোফোনে শোনে কে যেন খচমচ করে কাগজের প্যাকেট ছিড়ছে।
রাফি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো এই মুহূর্তের জন্য, বার বার উপওয়ালার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, যেন মা হয়, যেন মা হয়, যেন মা হয় বলতে বলতে।
খচমচ আওয়াজ বন্ধ হয় আর ওপাশ থেকে কন্ঠ ভেসে আসে।
মা – হ্যালো। কে?
ততক্ষণে পিকাচু স্পিকারের সাউন্ড এডজাষ্ট করে দিয়েছে।
রাফি – মা, আমি রাফি। সাবধানে, কেউ যেন না দেখে তোমাকে ফোনে কথা বলতে।
মা – কেন কি হয়েছে।
রাফি – মা এখন যা বলছি সেটা শোনো, কেমন আছি কিভাবে আছি কোথায় আছি তা পরে বলছি। এখন এমন এক জায়গায় গিয়ে কথা বলো যেখান থেকে কেউ তোমার কথা শুনতে বা তোমাকে কথা বলতে দেখবে না, আর হ্যাঁ কেউ যেন তোমার হাতে ফোন না দেখে।
মা – আচ্ছা, লাইনে থাক।
বলে চুপ হয়ে গেলেন মা। পিকাচু মনিটরে শো করে মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দার দিকে যাচ্ছেন।
মা – হ্যাঁ বল, কি হয়েছে! এত লুকোচুরি করছিস কেন! আর আলুভাজার ভেতরে তুই কি করছিস?
রাফি – তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো, এখন এত প্রশ্ন না করে আমার প্রশ্নের জবাব দাও, বডিগার্ডগুলো কোথায়?
মা – বাইরের গার্ডহাউজে থাকতে পারে, একজন আছে হয়তো ঘরের বাইরে। কেন কি হয়েছে?
রাফি – সবসময় ই কি এভাবে গার্ডহাউজে থাকে নাকি বাসার ভেতরেও আসে?
মা – আসে তো, নাস্তা করতে আসে আর খাওয়ার সময় আসে। ভালো ছেলে সব, ভদ্র।
রাফি – আর তোমার বৌমা কোথায়?
মা – আজ তো আসার কথা ছিলো। পিৎজা দেখে ভেবেছিলাম হয়তো এখনই আসবে কিন্তু এলো না তো, আর পিৎজা কি তুই পাঠিয়েছিস?
রাফি – তোমাদের সাথে কথা বলার জন্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না তো। তাহলে তোহা আজ আসবে?
মা – আজ না এলেও কাল ঠিকই চলে আসবে। ও যাওয়ার সময় বলেছিলো আজ কালকের ভেতর চলে আসবে।
রাফি – তাহলে তো খুবই ভালো। তোমাদের আর শহরে লুকিয়ে থাকতে হবে না। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরী হও।
মা – এই বুড়ো বয়সে আর কত ছুটাছুটি করাবি রে। এখন আবার গ্রামের বাড়ি! তোর বাবা তো মহা খুশি হবে যদি গ্রামের কথা শোনে।
রাফি – আপাতত বাবার সাথে গ্রামে যেয়ে কয়েকদিন ঘুরে আসো, ততদিনে এইদিকটা সামলে নিবো আমি। মোবাইলটা কাছাকাছি রেখো, কথা বলতে ইচ্ছা হলে লাষ্ট নাম্বার ডায়াল করলেই হবে। আর কোনভাবেই বডিগার্ডরা যেন না জানে।
মা – ঠিক আছে ঠিক আছে।
রাফি – তোমার ভালো ছেলে বডিগার্ডগুলো কি করে সন্ধ্যার দিকে?
মা – ওরেহ বাব্বা। সন্ধ্যায় তো পুরা মিলিটারি স্টাইলে টহল চলে, সারা বাড়ির আঙ্গিনা চোষে বেড়ায় তিনজন মিলে।
রাফি – তখন কেউ ঘরের ভেতর আসে না! তিনজনই বাইরে থাকে?
মা – তাই তো দেখি, বাইরেই ঘোরাঘুরি করতে থাকে ঘন্টাখানেক, তারপর খেতে আসে।
রাফি – আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি। আবারো বলছি, ফোনটা সাবধানে রেখো, বডিগার্ড থেকে দূরে।
মা – আমার তো কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিলি না, এটা তো বল যে তুই ভালো আছিস কি না?
রাফি – আলহামদুলিল্লাহ, তোমরা কেমন আছো?
মা – আছি ভালই, আলহামদুলিল্লাহ।
রাফি -তোমরা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো। সবকিছু রেডি করে রেখো। যত দ্রুত সম্ভব তোমাদের ওই বাসা থেকে বের করে গ্রামের বাড়ি নেয়ার ব্যবস্থা করবো। ভালো থেকো।
মা – তুইও ভালো থাক বাবা। জলদি ফিরে আয় মায়ের কাছে। (ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ)
রাফি – আরে মা, কাঁদে কেন! আমি ফিরে আসবো তো। সব ঠিক করার সময় তো দাও। রাখছি মা।
ওপাস থেকে রাফির মা ফোন রেখে দিলো। পিকাচুর নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোফোন থাকায় রাফি তখনো মায়ের ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। রাফির বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মায়ের কষ্ট দেখেতে পারে না সে মোটেই।
রাফি – পিকাচু, দেশের লোকাল টাইমের সাথে ম্যাচ করো, আগামীকাল বাবা মা কে বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। টাইম কাউন্ট করা শুরু করো। আগামীকালকে মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড টাইমেই বের করে গ্রামে পাঠিয়ে দেবো সরাসরি।
পিকাচু – You forget to mention Toha.
রাফি – তোহার জন্যই আগামীকাল সিলেক্ট করা, না হলে আজই বের করে নিয়ে আসতাম বাবা মা কে।
পিকাচু – Countdown started T minus 30 hours and 23 minutes for next day satellite blindspot.
রাফি হিসাব করে দেখে আগামী ৮ ঘন্টার ভেতর পিকাচু তার নিজের ট্যাক্টিকাল স্যাটেলাইটে আপলোড হওয়া শুরু করবে। তারপর আর রাফির এই সেফহাউজ থেকে বের হওয়া নিয়ে কোন পিছুটান থাকবে না।
ব্লাইন্ডস্পট টাইমে গার্ডদের এক্টিভিটিস ম্যাক্সিমাম থাকে। তাই বাড়ির সামনে বা ভেতরে একটা গ্যাঞ্জাম বাঁধিয়ে দিতে পারলে গার্ডদের এটেনশন টেনে নিয়ে আসা যাবে আর ওই ফাঁকে বাবা মা কে বের করে নিয়ে আসা যাবে। তখন পিকাচু ক্যামেরায় গ্লীচ করে দিতে পারবে।
রাফি ফোন দেয় রকিবকে।
রাফি – রকিব, তোদের ক্লাবের গ্যাং টা কি এখনো আছে?
রকিব – আছে মানে! পুরো তরতাজা। কি লাগবে বল।
রাফি – আগামীকাল সন্ধ্যা ৭ টার পর তোদের সবাইকে আমি এই ঠিকানায় দেখতে চাই, বলে পিকাচুর মাধ্যমে রকিবকে একটা জিপিএস লোকেশন পাঠায় যা ওই সেফ হাউজ থেকে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে।
রকিব – এ সবাইকে নিয়ে ওখানে যাওয়া তো ঝামেলা হয়ে যাবে।
রাফি – ৫ টা বড় মাইক্রো ভাড়া করবি আর দেখবি কোন গাড়িতে যেন জিপিএস সিস্টেম না থাকে। আমি সব খরচপাতি পাঠাচ্ছি। আর হ্যাঁ কাল লোকেশনে পৌছানো পর আমি না বলা পর্যন্ত কেউ গাড়ি থেকে বের হবি না।
রকিব – তারপর কি করতে হবে।
রাফি তখন রকিবের সাথে মিলে একটা প্লান বানায় বাবা মা কে ওই বাড়ি থেকে বের করার জন্য।
রাফি – ঠিক আছে দোস্ত, তাহলে ওই কথাই রইলো। তোর একাউন্ট চেক কর।
রাফি কীবোর্ডে হাত চালিয়ে কিছু একটা করলো।
রকিব – কি রে তুই আমার একাউন্ট নাম্বার পেলি কোথায়? আর এত টাকা কার জন্য পাঠিয়েছিস।
রাফি – তোদের সবার জন্য আর বাবা মা কে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে খরচপাতি তো আছেই। কাল ঠিকসময় পৌছে যাস।
রকিব – চিন্তা করিস না। যেভাবে প্লান করছি ওভাবেই হবে।
রাফি ফোন রেখে দেয়। রকিব আর ক্লাবের সবাই মিলে প্লানটা সফলভাবে খাটাতে পারলে বাবা মা কে বের করে নিয়ে আসা যাবে খুব সহজেই। এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।
রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে রাফি নিজের এক্সিট প্লান নিয়ে বসে। সার্ভারের পেছনে লুকিয়ে রাখা ম্যাপটা বের করে আনে। ম্যাপটা বেশ পুরাতন।
রাফি – পিকাচু, আমি স্ক্যানার একটা ম্যাপ দিচ্ছি, ম্যাপটা স্ক্যান করো আর লোকেশনটা এই শহরের ব্লুপ্রিন্টে এড করে নাও। আর স্যাটেলাইট দিয়ে স্ক্যান করে বলো আসলেই এমন কোন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল আছে কি না।
পিকাচু – scanning….. map acquired ….. Accessing satellite images …… synchronizing…….. blueprint updated. Underground tannel found.
রাফি দেখতে পার পিকাচু আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপটা স্যাটেলাইট ব্লুপ্রিন্ট ম্যাপের সাথে আপডেট করে নিয়েছে। আর স্যাটেলাইট স্ক্যানিং এ ট্যানেলের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
রাতটা কেটে যায় সব প্লান সাজাতে সাজাতে। অনেককিছু করতে হবে। অনেককিছু করা বাকী।

#পর্ব_২০_ও_সমাপ্ত

রাতটা কেটে যায় সব প্লান সাজাতে সাজাতে। অনেককিছু করতে হবে। অনেককিছু করা বাকী।
পিকাচু তৈরী হচ্ছে নিজেকে আপলোড করার জন্য। মনিটরের টাইমার শো করছে আর মাত্র ৫ মিনিটের ভেতরে পিকাচুর জন্য সিলেক্টেড স্যাটেলাইটটি এন্টেনা রেন্জে প্রবেশ করবে। পিকাচু স্যাটেলাইট স্টেশনের সার্ভারের একসেস নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লং রেন্জে থাকা স্যাটেলাইটটা রেন্জে আসার।
পিকাচু – ৫ মিনিটের ভেতর পিকাচু আপলোড শুরু করবে। আপলোডিং প্রোসেস শেষ না হওয়া অব্দি পিকাচু কোন কাজ করতে পারবে না। স্যাটেলাইটে আপলোড হবার পর পিকাচুকে একসেস করা যাবে।
রাফি কীবোর্ডে আংগুল চালায়, শুধুমাত্র একসেস কোড পিকাচুর মত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিরাপদ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। রাফি একসেস কোডের সাথে আরো কিছু সিকিউরিটি মেজার্স এড করে দেয় যেন একমাত্র রাফিই পিকাচুকে একসেস করতে পারে।
অবশেষে পিকাচু একসেস করা শুরু করলো স্যাটেলাইটটিকে, স্যাটেলাইটটি এমনভাবে স্টেল্থ মোডে ছিলো যে অন্য কোন স্যাটেলাইইট দিয়েও স্যাটেলাইটটিকে একসেস করা সম্ভব ছিলো না। পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে স্টেল্থ মোডড থেকে এক্টিভেট করে এবং কানেক্টিভিটি সেটিংস চেন্জ করে দেয়া শুরু করে এবং সাথে স্যাটেলাইটটির অর্বিটাল স্পিড ও ম্যাচ করে নেয়। কিছুক্ষণের ভেতর পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে পুরোপুরি নিজের মস্তিস্ক বানানোর জন্য তৈরী করে ফেললো। রাফি স্ক্রীনে একটি ডায়লগ বক্স দেখতে পায় যেখানে পিকাচু নিজেকে আপলোড করার জন্য রাফির অনুমতি চাইছে। রাফি কীবোর্ডে ইন্টার বাটন টি চেপে পিকাচুকে আপলোড হবার পার্মিশন দিয়ে দেয়। রাফি দেখতে পায় পিকাচু তার ডাটা এনালাইসিস আর মাফিয়া গার্লের সার্ভারে জমানো সকল ইনফো স্যাটেলাইটে আপলোড করা শুরু করে। একসাথে প্রচুর ডাটা আপলোড করতে থাকে পিকাচু আর স্ক্রীনে প্রোগ্রেস শো করতে থাকে ১%……২%…….৩%………
রাফি চাইলো তার মা বাবার সাথে কথা বলে কিন্তু পিকাচু আপলোডিং টাইমে সবকিছু আনএভেইলেবল করে রেখেছে।
রাফি আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপটা দেখে নিজের এক্সিট প্লান তৈরী করতে লাগলো। বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রাফিকে এই সেফহাউজ ত্যাগ করতে হবে। মাফিয়া গার্ল ক্ষোভে রাফিকে জিম্মি ও করতে পারে। আর এমন একটা দেশে জিম্মি থাকা মানে রাফিকে একটা জ্যান্ত পুতুল বনে যেতে হবে। সুযোগ থাকতে থাকতে বের হয়ে যাওয়া ভালো।
রাফি বেসমেন্ট থেকে বের হয়ে আসে, রাতে ঘুম হয় নি ঠিক কিন্তু খিদে টা সহ্যের বাইরে চলে গেছে, রান্নাঘরে বসে নিজের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে চিবোতে থাকে রাফি। মা বাবা আর তোহাকে তো না হয় গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সেফ রাখতে পারলো কিন্তু নিজে কোথায় যাবে রাফি? এই দেশের কিছুই তো চেনে না রাফি, মাফিয়া গার্ল থেকে তো না হয় বাঁচলো রাফি কিন্তু এই শহর থেকে কিংবা এই দেশের ভেতরে এমন কেউ নেই যে রাফিকে সাহায্য করবে। খাবার চিবাতে চিবাতে এসব চিন্তা করতে থাকে রাফি, হঠাৎ ই মআে পড়লো যাবার আগে রুহী রাফিকে একটা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট দিয়ে গিয়েছিলো যাতে রাফির নাম পরিচয় জাতীয়তা সবকিছুই পরিবর্তন করা রয়েছে। মনে পড়তেই রাফি দোতলার দিকে নজর দেয়। পাসপোর্ট নিজের রুমে জ্যাকেটের পকেটে রাখা। রুহী পাসপোর্টটা দেয়ার পর রাফি সেটা ওর জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিয়েছিলো যা এখন রাফির রুমে কোথাও পড়ে আছে। রাফি খাবার চিবোতে চিবোতে রুমে চলে যায়। জ্যাকেটটা খাটের উপরই পড়ে আছে। রাফি জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে পাসপোর্টটা পায়। রাফি দরজা দিয়ে উঁকি মারে যে দুই বডিগার্ডের কেউ রাফিকে ফলো করছে কি না। কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা লক করে দিয়ে রাফি রুমে ফিরে আসে। নিজের ব্যাকপ্যাকটা গুছানোই ছিলো, ল্যাগেজ থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাকপ্যাকে ভরে নিলো। সবকিছু গোছাতে গিয়ে রাফির নজরে আসে রুহীর দেয়া মিনি কম্পিউটার raspberry pi3। কম্পিউটারটা কাজে লাগবে ভেবে রাফি সেটাকেও ব্যাগে ভরে নেয়। সবকিছু গুছিয়ে রুমের কোনায় রেখে আবারো দরজার কাছে গেলো রাফি। দরজা খুলে দেখতে লাগলো আবারো। কি ব্যপার, মার্ক আর জ্যাকের কোন সাড়াশব্দ নেই যে। রাফি তাদের রুমে গিয়ে দরজায় নক করে। দরজা লক করা কিন্তু ভেতরে কোন সাড়াশব্দ নেই। রাফি ভাবতে লাগলো কোথায় যেতে পারে এরা দুইজন। হঠাৎ উপরে আওয়াজ পায় রাফি, তিন তলাতে কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে রাফি। আরে! তিনতলাতে তো অস্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার কন্ট্রোলরুম বানিয়েছিলো দুইজনে, মাফিয়া গার্লের জন্য, রাফি ভুলেই গিয়েছিলো এই বাড়ির সবকিছুই সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে আর সিস্টেম বাইপাস করা ছিলো। মানে রাফি তার ব্যাকপ্যাক নিয়ে নীচে নামতে পারবে না আর। মাফিয়া গার্লের ক্যামেরায় তো ধরা পড়বেই সাথে মার্ক আর জ্যাক তো আছেই। রাফি ভাবতে পারে না কি করবে, অগত্যা ব্যাগ থেকে শুধু পাসপোর্টটা বের করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। মিনি কম্পিউটার আর ইউজ করা গেলো না। রুম থেকে বের হয়ে উপরে তিনতলায় পৌছালো রাফি, গিয়ে দেখে মার্ক আর জ্যাক দুইজনে মিলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্ক্রীন রেখে দরজার দিকে সরাসরি রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে মাথা ঢোকাতেইই রাফির সাথে দুজনেরই চখাচখি হয়ে গেলো।
মার্ক – (ইংরেজিতে, সন্দেহভরা চোখে) কি করছিলে তুমি?
রাফি – কি করবো? কিছুই না। অনেকক্ষণ ধরে তোমাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তোমাদের খুজতে বের হয়েছিলাম। এখন দেখি তোমরা দুজনেই এখানে।
জ্যাক – ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দরজা বন্ধ করলে কেন? কি প্লান করছো সত্যি করে বলো!
রাফির হার্টবিট বেড়ে যায়, এখনই এই দুইজনের চোখে ধুলো দিতে না পারলে মাফিয়া গার্লের চোখকে ফাঁকি দেবে কিভাবে।
রাফি – কি আর প্লান করবো, কাপড় বদলানোর জন্য দরজা লাগিয়েছিলাম। কাপড় বদলাতে কোন প্লানের প্রয়োজন পড়ে নাকি?
মার্ক জ্যাক দুইজনই চেয়ার ছেড়ে রাফির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর এমনভাবে তাঁকিয়ে রইলো যেন ধরে ফেলেছে রাফির সব চালাকি।
রাফি মনে মনে জিকির করতে লাগলো, এই মুহূর্তে ধরা পড়লে সব প্লান ভন্ডুল হয়ে যাবে, আর মা বাবাকেও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
রাফির সামনে এসে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনে রাফির দুই কাঁধে হাত রাখে। তারপর দুইজন কপাল কুঁচকে রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে, আর রাফি নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। দুইজনের সাথে হাতাহাতি তে তো পেরে উঠবে না রাফি তাই বিকল্প কিভাবে দুইজনকে আটকানো যায় সাই প্লান খুঁজতে থাকে রাফি।
মার্ক – তুমি কিছুই করছিলে না!
রাফি – কি করবো, বললাম ই তো, কাপড় বদল করলাম।
জ্যাক তখন মার্কের দিকে তাকিয়ে অন্যভাষায় কথা বলা শুরু করলো, মার্ক ও একইভাবে জ্যাকের কথার জবাব দিতে থাকলো। রাফি কথার আগামাথা কিছু না বোঝায় একবার মার্কের দিকে আর একবার জ্যাকের দিকে ঘাড় ঘোরাতে লাগলো।
রাফি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,
রাফি – কি সমস্যা কি! দুইজনে মিলে কি শুরু করছো! আমাকে এভাবে জেরা করার মানে কি?
রাফির আওয়াজ শুনে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনেই চুপ হয়ে গেলো। নিজেদের মধ্যে চখাচখি করতে করতে দুইজনই হো হো করে হেঁসে উঠলো।
মার্ক – (জ্যাকের উদ্দেশ্যে) বলেছিলাম না তোকে?
জ্যাক – বলেছিলে তবে এতটা মজা পাবো তা বুঝি নি।
আবারো অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে দুইজন। মাঝে রাফি কিছু না বুঝেই দাড়িয়ে থাকে ঠায়। মার্ক হাঁসতে থাকায় জ্যাক মুখ খোলে।
জ্যাক – (রাফির উদ্দেশ্যে) দেখো সিরিয়াসলি নিয়ো না, আমরা মজা করছিলাম।
মার্ক – (হাঁসতে হাঁসতে) আমি জ্যাককে বলেছিলাম যে তোমাকে ভড়কে দিতে পারবো কিন্তু জ্যাক মানতে নারাজ ছিলো। এখন তোমাকে ভড়কে যেতে দেখে……… ( আবারো অট্টহাসি)
রাফি একদিক দিয়ে হাপ ছেড়ে বাঁচলো যে দুইজনের কেউ কিছু ধরতে পারে নি। রাফি ভাবলো এই সুযোগে একটু আধিপত্য খাটিয়ে নেয়া যাক, পরক্ষণেই মাথায় এলো যে যদি আধিপত্য খাটাতে গিয়ে দুইজনকেই চটিয়ে দেই তাহলে এরা দুইজনই রাফির সব প্লান গড়বড় করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই মজার তালে মজা নিতে থাকে রাফি।
রাফি – (হাঁসতে হাঁসতে) ভড়কে যাবো না! তোমাদের দুইজনের মত বডিবিল্ডার যদি অকারনেও আমাকে প্যাদায় তাহলেও তো আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না, তাইনা?
তিন জনই উচ্চস্বরে হাঁসতে থাকে। রাফি আরো কিছুক্ষণ জোক্স মেরে চলে আসে তিন তলা থেকে। আর ওই রুমেই থেকে যায় মার্ক আর জ্যাক। যেহেতু সার্ভেইল্যান্স এখনো এক্টিভ রয়েছে তাই ব্যাকপ্যাক রুম থেকে বের না করে শুধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে বেজমেন্টে চলে আসে রাফি। টেনশনে রাফির প্রেশার বেড়ে তালগাছ ছুঁইছুঁই করছে। তারপরও দুইগ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করে রাফি। কিচ্ছু হয় নি, সব ঠিক আছে।
শান্ত হয়ে রাফি মনিটরের দিকে তাকায়, আপলোড প্রায় ৮০% হয়ে গেছে। আপলোড হলে রাফির একটা কাজ তো শেষ হবে। পিকাচু তার নলেজ হান্ট শেষ করলে মোটামুটি একটা ইন্টেলিজেন্ট পার্টনার পাওয়া যাবে ভেবে খুশি হয় রাফি।
জ্যাকেটটা চেয়ারের উপর রেখে বসে পরে রাফি মনিটরের সামনে। আর ১৮ ঘন্টা বাকী।
১০ ঘন্টা পর,
পিকচু স্যাটেলাইটে আপলোড হয়ে গেছে অনেক আগেই, knowledge hunt ও প্রায় শেষের দিকে, স্যাটেলাইটটিকে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে পিকাচু। এরই মধ্যে মহাকাশে থাকা সকল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের একসেস বাইপাস করে নিয়েছে পিকাচু স্যাটেলাইট। এই মুহূর্তে রাফি যেখানে অবস্থান করছে সেই বরাবর এসে নিজে অর্বিটাল স্পিড কমিয়ে আর্থ রোটেশনের সাথে ম্যাচ করে সেখানেই অবস্থান করছে। রাফি অপেক্ষা করছে পিকাচুর knowledge hunt শেষ হওয়ার পর সার্ভারে রিকানেক্ট হওয়ার জন্য।
অবশেষে,
পিকাচু – knowledge hunt is over, pikachu is live.
রাফি সার্ভার থেকে পিকাচুকে রিকানেক্ট করে স্যাটেলাইটটি রিস্টার্ট করে। সবকিছু ঠিকঠাক রান করার জন্য পিকাচুর স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হওয়া জরুরী। রাফির সার্ভার থেকে পিকাচু লগআউট হয়ে যায়।
পিকাচু স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হতে ৫ মিনিট সময় লাগবে। রাফি অপেক্ষা করতে থাকে। পিকাচুকে তৈরীর সময় রাফি বেশ কিছু ইউনিক সেটিংস ইনস্টল করেছিলো যার ভেতর অন্যতম ছিলো কোন কারনে রাফি পিকাচু থেকে ৫ মিনিটের বেশী ডিসকানেক্ট থাকে তাহলে পিকাচু নিজে থেকে রাস্তা বের করে নেবে রাফির সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য। রাফি সেটিংসটার ট্রায়াল এখনই দিতে চাইলো। মনিটরে একসেস কোড ইনপুট দিলেই হয়ে যেত কিন্তু রাফি চাইছে পিকাচু রাফিকে খুজে বের করুক। কিছুক্ষণ পর রাফির ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন সোর্স থেকে ফোন এলো, মাফিয়া গার্ল! রাফি ফোনটা রিসিভ করে,
রাফি – হ্যালো।
– (কার্টুন ভয়েসে) Hi, I am pikachu, I found you.
রাফি – পিকাচু, তুমি আমাকে খুঁজে নিয়েছো?
পিকাচু – এটা আমার সিস্টেম সেটিংসের টপ প্রায়রিটি। You are the key of my existence, Rafiul Islam.
রাফি – Well done pikachu.
পিকাচু – পিকাচু তার ক্রিয়েটরের সাথে যে কোন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কানেক্ট হতে পারবে যদি তা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে থাকে।
রাফি – খুবই ভালো। তাহলে পরবর্তী প্লানের দিকে এগোনো যাক?
পিকাচু – পিকা পিকা।

আর মাত্র কিছুক্ষণের ভেতরেই মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ডস্পটে প্রবেশ করবে। রাফি তার মা বাবাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে যে কিছুক্ষণ পর কি হতে চলেছে, মা বাবা ও সেইভাবে তৈরী হয়ে আছে। এদিকে রাফির বন্ধুবান্ধব সব জায়গামত পৌছে রাফির ফোনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরই মাঝে পিকাচু ট্রাফিক ক্যামেরায় কিছু একটা ডিটেক্ট করলো।
পিকাচু – ফেসিয়াল রিকগনিশন বলছে, তোমার ওয়াইফ তোহা বাড়িটির দিকে ট্যাক্সিতে করে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভালই হবে ভেবে রাফি ফ্রেন্ডদের ওয়েট করতে বলে তোহা বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
মাফিয়ে গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড হয়ে গেলে রাফি তার বন্ধুদের প্লান অনুয়ায়ী কাজ করতে বলে। রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক দুইভাগে ভাগ হয়ে বাড়িটার দিকে ছুটে যেতে থাকলো, এমনভাবে যেন দুই দলের ভেতর মারামারি বেঁধে গেছে। ২৫-৩০ জন একসাথে ছুটে যেতে থাকলো বাড়িটার দিকে। রাফি বাড়ির আসেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় গ্লিচ তৈরী করে দিলো যেন মাফিয়া গার্ল কিছু দেখতে না পারে। এদিকে বন্ধুদের একদল বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর ঢুকে পড়ে আর এমন ভাব করতে থাকে যেন তাদেরকে কেউ ধাওয়া করেছে আর তারা আত্বরক্ষার জন্য বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। বডিগার্ডগুলো কিছু করতে যাবে তার আগেই অন্য পক্ষের বন্ধুগুলো সব হুড়মুড় করা বাউন্ডারীর ভিতরে চলে আসে আর দুই পক্ষের মধ্যে গ্যাঞ্জাম বেধে যায়। বিষয়টা এমন লাগলেও তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিলো বডিগার্ডদেরকে গ্যাঞ্জামের মাঝে ফেলে দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দেয়া।
এই সুযোগে রাফির মা বাবা তোহাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং রকিব তাদেরকে একটা গাড়িতে তুলে দেয় গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। রাফির কথা মত রাফির মা শুধুমাত্র রাফির দেয়া ফোনটা ছাড়া বাদবাকি সব ফোন বন্ধ করে ফেলতে বলেছিলো যেন চাইলেও মাফিয়া গার্ল তাদের ট্রাক করতে না পারে। নিরাপদে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক ওইখান থেকে সটকে পড়ে এবং বডিগার্ডরা নাস্তানাবুদ হয়ে বাউন্ডারির ভেতর গড়াগড়ি খায়। বডিগার্ডগুলো একটু স্বাভাবিক হলে পকেটে হাত দিয়ে দেখে তাদের মোবাইল মানিব্যাগ সব লুট করে দিয়েছে ছেলেপেলের দলটা।
রাফির বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার পর রাফিরও বের হওয়ার সময় হয়েছে। হয়তো কোন না কোন ভাবে মাফিয়া গার্লের কাছে খবর পৌঁছেই যাবে এই ঘটনা তাই দেরী না করে জ্যাকেটটা গায় দিয়ে বেসমেন্ট থেকে বের হয় রাফি, মোববাইলের মাধ্যমে পিকাচুর সাথে কানেক্ট থেকে পিকাচুকে এক্সিট প্লান বানাতে বলে।
পিকাচু সাজেশন দেয় আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল থেকে বাইরের সিচুয়েশন কন্ট্রোল করা পিকাচুর কাছে সহজ হবে। পিকাচু ঘরের ভেতরের ক্যামেরাগুলোর ফিড হ্যাক করে রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয় আর রাফিকে জানায় মার্ত এবং জ্যাক সিসিটিভি কন্ট্রোলরুমে বসে আছে। রাফি আর এক মুহূর্ত দেরী না করে সরাসরি বাসার মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।
রাফি – পিকাচু, এই গোলকধাঁধা থেকে বের করো আমায়।
পিকাচু – পিকা পিকা।
পিকাচু রাফিকে গাইড করতে থাকে এবং শেষমেশ গোলকধাঁধা থেকে বের হয় রাফি। আশেপাশে থাকা সব সিসিটিভি ক্যামেরাতে পিকাচু রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয়। রাফিও মেইন রাস্তায় চলে আসে। এখন তো সবচেয়ে বড় পরিক্ষা। অপরিচিত দেশে অপরিচিত ডিরেকশনে মানুষের কাছে লিফট চাওয়া। রাফি পিকাচু কে দিয়ে আগেই বেনামে বিমানের টিকিট কেটে নিয়েছিলো। গন্তব্য নিজের দেশ।
রাফিকে পিকাচু এয়ারপোর্টের রাস্তা দেখিয়ে দিলে রাফি সেই বরাবর লিফট চাইতে থাকে। অবশেষে একটা গাড়ি দাঁড়ালেও ইংরেজি না বোঝায় চলে যেতে চাইলো। রাফি তখন পিকাচুকে ফোনলাইনে ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিলে ড্রাইভারের সাথে পিকাচু লোকাল ভাষায় কথা বলে। কথা শেষ হলে ড্রাইভার রাফিকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। রাফিও স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
গাড়ি চলতে থাকে এয়ারপোর্টের দিকে। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে মা বাবার সাথে কানেক্ট করে।
রাফি – হ্যালো।
বাবা – হ্যালো, রাফি? কিরে কেমন আছিস?
রাফি – এইতো বাবা ভালো, তোমরা কেমন আছো? কোথায় আছো?
বাবা – এইতো ভালই আছি। আমাদের পাড়ার রকিব ছেলেটা একটা মাইক্রোতে তুলে দিলো। তোর মা বললো গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাবে নাকি।এদিকে তোহা মা ও চলে এসেছিলো বাসায়, তাই ওকেও সাথে নিয়ে নিলাম।
রাফি – যাক সবাই তাহলে একসাথে বের হয়ে গেছো। আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা – তুই কোথায়? তোকে কখন দেখতে পাবো?
রাফি – এইতো বাবা খুব জলদি। আর একটা জিনিস, এই ফোন ছাড়া আর কোন ডিভাইস অন রেখো না।
বাবা – হ্যা হ্যা তোর মা এর আদেশ হয়েছে। সব বন্ধ। তুই জলদি ফিরে আয়।
রাফি – এখন আর কথা বলবো না। সামনাসামনি এসে কথা হবে ইনশাআল্লাহ সবার সাথে। আল্লাহ হাফেজ।
বাবা – আল্লাহ হাফেজ।
রাফি ফোন কেটে দিলে পিকাচু এ্যালবার্টা দেয়,
রাফি – কি হয়েছে?
পিকাচু – মার্ক এবং জ্যাক বাসা থেকে বের হয়ে তোমাকে খুঁজছে। হয়তো কোনভাবে এ্যালার্ট পেয়ে গেছে।
রাফি – ইসসস, ভুলেই গিয়েছিলাম যে ঘরের মেইন গেট খুললে একটা সাইলেন্ট এ্যালার্ম ট্রিগার হয় যার মাধ্যমে কিছু না দেখলেও টের পাওয়া যায় যে মেইন গেট ওপেন হয়েছে।
পিকাচু – সমস্যা নেই। ওরা এখনো মেইন রোডে পৌছায় নি। তুমি অনেকখানি এগিয়ে আছো।
রাফির ভেতর অস্থিরতা কাজ করতে থাকে।
রাফি – পিকাচু, মাফিয়া গার্ল যেন আমাকে ফোন দিয়ে ট্রেস করতে না পারে। মাফিয়া গার্লকে ব্লক করে রাখো।
পিকাচু – পিকা পিকা।
এয়ারপোর্টে পৌছে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ হয়ে সোজা কাউন্টারে পৌছে যায় রাফি, পিকাচুর কেটে রাখা টিকিটটা ইশ্যু করে নিয়ে ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে থাকে রাফি। বিমানে উঠলেই পৌছে যাবে বাড়িতে। আবার আতংকিত ও হয়। যদি মাফিয়া গার্ল চায় তো মাঝপথেই বিমান নামিয়ে দেবে সে। মোটামুটি বিমানে উঠে যাত্রা শুরু করা পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চললো। বিমান আকাশে উড়লো কোন ঝামেলা ছাড়াই। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক সিকিউর করে রাখে যাতে করে মাফিয়া গার্ল কোন ঝামেলা না করতে পারে।
দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষ করে রাফি অবশেষে নিজ দেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হয় আসে রাফি, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এসে দেখে রকিব অপেক্ষা করছে রাফির জন্য। গাড়িতে উঠে সরাসরি রওনা দিলো গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রাফি গ্রামের বাড়ি পৌছালে সবাই যার পর নাই অবাক আর খুশি হয়। রাফি যে এভাবে হঠাৎ করে চলে আসবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
রাফির মা বাবা তো একপ্রকার ছুটে গিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে। রাফিও তার মা বাবাকে আকড়ে ধরে, দীর্ঘদিন পর আবার মা বাবার বুকে ফিরে আসতে পেরে। তোহা দূরে দাড়িয়ে রাফির ফিরে আসা দেখছে। অবশেষে নিজের মানুষদের মাঝে ফিরে আসতে পেরে রাফি যারপরনাই খুশি হলেও নিজের মাথা থেকে মাফিয়া গার্লকে বের করতে পারে না। হয়তো মাফিয়া গার্লের জাল থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে রাফি আর তার পরিবার কিন্তু রাফির মন এখনো শান্ত নয়, মনে হতে থাকে বিপদ যেন এখনো কাটেনি। বাবা মা কে ছেড়ে রাফি তোহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কথা বলার জন্য, তোহার কাছে পৌছানোর আগেই পিকাচু এ্যালবার্টা দেয় রাফিকে। রাফি ফোন হাতে নিয়ে দেখে কে বা কারা যেন নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড চুরি করে নিয়েছে।
রাফির কপাল কুঁচকে যায়। কি! নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড ও চুরি হয়েছে! রাফির মাথা ঘুরে যায়। মাফিয়া গার্ল তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিলো! তাহলে মাফিয়া গার্ল যা বলেছিলো সব সত্যি!!!
.
অসুস্থতার মাঝে লেখা তাই ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে