ভদ্র স্যার♥রাগী বর

1
6616

Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ১

কলেজে পৌছে ক্লাসে গিয়ে বসতেই আমার বেস্টু
তমা আমাকে আনিশা আনিশা বলে ডেকে খোঁচানো শুরু করে দিল।
সাথে সাথে আমার ভুরু কুঁচকে গেলো একরাশ বিরক্তি নিয়ে।
এমনিতেই মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছি।এখনো চোখে ঘুম ঘুম ভাব।তারউপর পুরো ক্লাসে থমথম ভাব কারণ এবারের ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের প্রি টেস্ট পরীক্ষায় আমাদের পুরো ব্যাচ খারাপ রেজাল্ট করেছে।প্রিন্সিপাল স্যার সেই খ্যাপা খেপেছে।দু মাস পরই টেস্ট পরীক্ষা।সেই টেনশনও আছে।
আর এই গাধী টা সেই কখন থেকে খোঁচা দিয়েই যাচ্ছে।মানুষ কাউকে ডাকার হলে আস্তে খোঁচা  দিয়ে ডাকে কিন্তু না তমা এমনভাবে খোঁচাবে যে হাত ব্যাথা বানিয়ে ছারবে।

আমি বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে বললাম কি?
তমা ব্যাঙের মতো লাফিয়ে বলা শুরু করল,জানিস কলেজে নতুন ইয়াং গেস্ট টিচার এসেছে।
শুনেছি খুবই মেধাবী স্টুডেন্ট ছিলো।এই বছরই মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে।
আর এখন আমাদের কলেজে গেস্ট টিচার হিসেবে জয়েন করছে।আর প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের জন্যই তাকে এই ক্লাসে স্পেশাল ভাবে নিয়োগ দিয়েছে।

আর তার থেকেও ইম্পর্টেন্ট কথা হলো এই স্যার দেখতে একদম বলিউডের নায়কের মতো।আমি তো দেখেই ক্রাশ খাইছি।
তুইও দেখলে পাগল হয়ে যাবি।

আমি বললাম,থাক আমার আর পাগল হওয়া লাগবে না।
সামনের বেঞ্চেই তো আমরা বসা তুই তোর নতুন ক্রাশকে দেখতে থাক আর পাগল হতে থাক।
আমি সবসময়ই সামনের বেঞ্চে বসি।

যেখানে কলেজে উঠলে সবাই পিছনের বেঞ্চেই বেশি বসতে চায়।কিন্তু আমার সামনে না বসলে একদম ভালো লাগে না।তা বলে আমি যে মেধাবী ছাত্রী তা কিন্তু বলা যাবে না।
ছাত্রী আমি মোটামুটি পর্যায়েরই।তবে সবসময় স্পষ্ট কথা বলি।
আমার পাশের এই তমাও সবসময় ফাস্ট বেঞ্চে বসে।হ্যান্ডসাম স্যারদের ভালো ভাবে দেখার জন্য।কলেজের বেশিরভাগ টিচারই তার ক্রাশ লিস্টে আছে।

তমার সাথে আমার পরিচয় এই কলেজে উঠার পরেই হয়েছে ফাস্ট বেঞ্চে বসতে বসতে।
তবে এই দেড়বছরেই আমরা একে অপরের বেস্টু হয়ে গেছি।
তমা যেমন স্যার দের উপর ক্রাশ খেতেই থাকে তেমনি আমি কারো উপরই ক্রাশ খাই নি আর স্যার দের উপর তো একদমই না।
কারণ আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি শিক্ষকরা বাবা মার মতই।তাদের দিকে সবসময় সম্মানের নজরে তাকাতে হয়।এই নজরে তো একদমই না।সে যতই ইয়াং টিচার হোক।
টিচার মানে তো টিচারই!

একবার এই কলেজেরই এক টিচার আমায় প্রোপোজ করে বসে।আমি তো হতবাক!
তবে তাকেও আমি এই কথাগুলো শুনিয়ে না করে দেই।

সবাই বলে আমার চেহারা নাকি খুব মিষ্টি।তবে গায়ের রং ফকফকা ফর্সা না।একটু চাপা।

সেই কারণে আমার আত্মীয় স্বজনের কম হা হুতাশ আমার শুনতে হয় নি।তবে আমার এইসব কথা কোনো গায়ে লাগে না।
ফকফকা ফর্সা না হয়েও কিন্তু আমি জিবনে অনেক প্রপোজাল পেয়ে গেছি।তবে কোনোটাই একসেপ্ট করিনি।এই
ছেলেদের আমি ঠিক একটা বিশ্বাস করতে পারি না।আজ একটা তো কাল আরেকটা…উফফ, এর থেকে একা একাই বেশ আছি।ভাবছি বিয়েটাও পারলে করবো না।

আমার ভাবনার ছেদ ঘটালো একটি ছেলে,হঠাৎ করে আমাদের ক্লাসে এসে।
ছেলেটিকে দেখে আমার কি যেন হয়ে গেল।ছেলেটির পরনে হালকা আকাশি রংয়ের সার্ট ইন করে পরা।শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা।সাথে কালো রংয়ের প্যান্ট।হাতে কালো রঙের ঘড়ি।

সাধারণত ফকফকা ফর্সা ছেলেদের আমার ভালো লাগে না।কেমন যেনো মেয়ে মেয়ে ভাব আসে।
কিন্তু এই ছেলেটাকে কি যে ভালো লাগছে!
যেনো এতেই সে পারফেক্ট।চেহারায় এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা।চুলগুলোও কি সুন্দর।লম্বাও ঠিকঠাক।একটা মানুষের ভেতর সবকিছু এত পারফেক্ট কি করে হয়!

আমি যেন কোথাও হারিয়ে গেছি।ক্লাসের সবাই যে দাড়িয়ে রয়েছে সেদিকে আমার খেয়াল নেই।আর তমার খোঁচানোও আমাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে পারছে না।

আমি শুধু দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে হালকা ভুরু কুঁচকে তাকালো।
আর সাথেসাথে প্রিন্সিপাল স্যার এসে আমাকে এক ধমক লাগালো,
“এই মেয়ে ক্লাসে টিচার আসলে দাড়াতে হয় জানো না।”
বুঝতে পারলাম এই আমাদের নতুন টিচার।এবার আমি বেশ হকচকিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দাড়য়ে বললাম,
স্যরি স্যার,সে যে স্যার আমি বুঝতে পারি নি।

সামনে একপলক তাকিয়ে দেখলাম,ছেলেটি মানে আমাদের নতুন স্যার একটু লজ্জা পেয়ে আমার দিকে তাকালো আর যেই আমার সাথে একটু চোখাচোখি হল সাথে সাথে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিল।

প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে বসতে বলে সবার উদ্দেশ্যে বলা শুরু করল,ইনি হলেন এই কলেজের নতুন টিচার মি.শুভ্র আহমেদ।
তোমাদের নতুন ক্লাস টিচার।

তারপর নতুন স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন,এই
সবকয়টা একেকটা গর্ধভ।
শুভ্র,এদেরকে একটু ঠিকমতো দেখো।এই বলে প্রিন্সিপাল বেরিয়ে গেল।

সাথে সাথেই তমা আমায় খোঁচা দিয়ে বলল,কি হুশ উরে গেল তো।

আমিও শান্ত মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।

শুভ্র স্যার পড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
আমি সেই যে মাথা নিচু করেছি।পুরো ক্লাসে আর সামনে তাকাই নি।কারণ স্যারকে বাবা মার মতো সম্মানের চোখে না দেখে আবার অন্য নজরে না দেখে ফেলি সেই ভয়ে।
কারণ স্যার তো স্যারই!
মনকে বারবার এই বোঝাচ্ছি।ক্লাস শেষের ঘন্টা পরলে স্যার যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন আরেকবার তাকালাম।পিছন থেকে দেখতেও কি সুন্দর লাগে তাকে।

আচ্ছা,আমি কি তমার মতো ক্রাশ খেয়েছি?ক্রাশ কথাটা আমার ভালো লাগে না।
তাই আমি এর নাম দিলাম মুগ্ধতা।আর মনকে এটাও বোঝালাম,
যে সুন্দর কিছু দেখলে তো মানুষ মুগ্ধ হবেই।স্যার সুন্দর তাই আমি মুগ্ধ হয়েছি ব্যাস,আর কিছু না।
আর অন্য কোনো চিন্তা না।বাবা মার পরই শিক্ষকের অবস্থান।

পাশ থেকে তমা আমায় খোঁচা দিয়ে বলল,এই আনিশা,স্যারের পেট দেখেছিস?কি সুন্দর মিশানো।একদমই ভুড়ি নেই।নিশ্চয়ই জিম করে।
আমি আবারো ভুরু কুঁচকে বললাম,তুই কি স্যারদের পেটও খেয়াল করে দেখিস।
তমা আবার লাফিয়ে বলল,আরে সামনে এত সুন্দর স্যার থাকলে দেখবো না কেনো।তোরও তো পছন্দ হয়েছে।
আমি ওকে চুপ থাক বলে বাসায় চলে আসলাম।কিছু ভালো লাগছে না।মনকে ঠিকমতো বোঝাতে হবে।

পরদিন ক্লাসে যেতে একটু লেট হয়ে গেল।গিয়ে দেখি শুভ্র স্যার……

চলবে..

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে