ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ২

0
5177

#ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

পরদিন ক্লাসে যেতে একটু লেট হয়ে গেল।
গিয়ে দেখি শুভ্র স্যার অলরেডি ক্লাসে।
আজ স্যার একটা হোয়াইট কালারের সার্ট ইন করে পরেছে।
সেদিন মনে হচ্ছিলো সার্টের আকাশি কালারটাতেই তাকে বেশি মানায়।
আজও মনে হচ্ছে সার্টের এই রংটাই তার জন্য পারফেক্ট।
আমি হালকা কাশি দিয়ে আস্তে করে বললাম,স্যার আসব?
স্যার হ্যাঁ বললে সামনের বেঞ্চ ক্রস করে পিছনের দিকে যাচ্ছিলাম।
ঠিক করেছি আর সামনে বসবো না।

বুঝতে পারলাম তমা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে।কিন্তু একটু আগাতেই তমা ওর মাইক আলা গলা দিয়ে আমায় ডেকে বলল,এই আনিশা এখানে বোস,ওখানে কোথায় যাচ্ছিস।

স্যারও আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে তাই আর উপায় না পেয়ে সামনেই বসলাম।
হঠাৎ স্যার আমায় বলল মিস.আনিশা কাল কি পড়া ছিল?
সাথে সাথে পুরো ক্লাসে হাসির বন্যা বয়ে গেল।

তার কারণ হল এই,আমার নাম আনিশা নয়।
আমার নাম সুপ্তি।আনিশা বলে আমায় শুধু তমা ডাকে।
আমার চেহারা দেখতে নাকি ওর কোন হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকার মত লাগে।তাই সিরিয়ালে নায়িকার যে নাম আমায় ও তাই
বলেই ডাকে।আর এই কথা ক্লাসের সবাই জানে।

বেচারা স্যার নিশ্চয়ই কারো নাম না জানার কারণে একটু আগে তমার মুখে এই নাম শুনে আমায় ডেকেছিল!
তমা স্যারকে হাসতে হাসতে বলল,স্যার ওর নাম তো সুপ্তি।আনিশা না।এটা একটা সিরিয়ালের নায়িকার নাম,ওকে শুধু আমিই এই নামে আদর করে ডাকি।

সামনে তাকিয়ে দেখলাম স্যার বেশ লজ্জা পেয়েছে।তা দেখে আমিও একটু মুচকি হাসি দিলাম।

আজও আমি পুরো ক্লাসে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।
আর স্যার যখন বেড়িয়ে যাচ্ছিল তখন বেহায়া চোখ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

এখন অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে ক্লাসের সব মেয়েরা হা করে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে আর একমাত্র আমি কোনোদিকে নড়াচড়া না করে একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।
মনকে কোনো ভাবেই স্যারকে নিয়ে অন্য কিছু না ভাবার জন্য মানাতে পারছি না।

আমার এই অবস্থা তমাও বুঝতে পারল আর
আমাকে বলল,জিবনে প্রথম কোনো ছেলেকে পছন্দ করলি।তা আবার মানতে চাইছিস না কেনো।
আমি তো এটাই বুঝি না এত ইয়াং,হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখে তুই স্যার স্যার ফিলিংস আনিস কিভাবে।

এভাবেই দিন চলতে লাগল,শুভ্র স্যারের পুরো ক্লাস জুড়ে আমার বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা আর বের হওয়ার সময় এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকা নিয়ে।

স্যার বেশ শান্ত,ভদ্র আর লাজুক টাইপের।
ক্লাসের সব মেয়েরা স্যারকে ইমপ্রস করার জন্য পড়া ঠিকমতো পড়ে আসে।শুধু আমি বাদে।আমিই শুধু পড়া ঠিকমতো পারি না।

কি করে পারব!আমি তো মনকে বোঝাতে বোঝাতেই ক্লান্ত যে আমি স্যারকে ঐ নজরে পছন্দ করিনা টিচার হিসেবে করি।

একদিন স্যার আমায় ডেকে বলল,মিস.সুপ্তি  পড়ালেখায় আরেকটু মনোযোগ দিন।
আর একমাস পরই তো টেস্ট পরীক্ষা।আমি সেদিন যথেষ্ট লজ্জিত হয়েছিলাম।
কিছু কিছু ন্যাকা মেয়েগুলো অযথাই স্যারের সাথে ঢং করে হেসে হেসে কথা বলতে থাকে।তখন আমার গা একদম জ্বলে যায়।

অবশেষে আমি মানতে বাধ্য হলাম,আমি স্যারকে পছন্দ করি আর ঐ নজরেই করি।
আমার এই মেনে নেওয়ায় সব থেকে বেশি খুশি হল তমা।তার কথা যে সত্যি হয়েছে।

একদিন স্যার হঠাৎ করে আমার সামনে এসে বলল,ক্লাসের সবাই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে দিয়েছে,আপনি দেন নি কেনো?
আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।
কিসের অ্যাসাইনমেন্ট,কিসের জমা?
আমি তো কিছুই জানি না।

তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,স্যার কিসের অ্যাসাইনমেন্ট?
স্যারও যেনো আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ল,কিন্তু রেগে।
আমায় খুব কর্কশ ভাবেই বলল,প্রতিদিন ক্লাসে এসেও আপনি অ্যাসাইনমেন্টের কথাই জানেন না।
আপনার মনোযোগ কোথায় থাকে?
আজ পুরো ক্লাস আপনি দাড়িয়ে থাকবেন।
স্ট্যান্ড আপ।
আর হ্যাঁ, কালকের মধ্যে আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা চাই।

আর কি করার,আমি দাড়িয়ে রইলাম।
ক্লাসের সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো যেনো আমি মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেলেছি।

আর হবেই না কেনো যেই স্যার কারো উপর একটু বিরক্তও হয় না সেই স্যারকে আমার ওপর এভাবে রাগতে দেখে সবার অবাক হওয়ারই কথা।

আমার চোখ ছলছল করে উঠল।বড্ড অভিমান হলো,কিন্তু কার উপর জানি না।

ক্লাস শেষে আমি তমাকে খোঁচা দিয়ে বললাম,
আমাকে বলিস নি কেনো অ্যাসাইনমেন্টের কথা?
তমা বলল,আমি কি জানি তুই খেয়ালই করিস নি।স্যার তো কয়বারই ক্লাসে বলল।
তুই তো দেখি ভালো হারিয়ে গেছিস স্যারের মধ্যে!

সারারাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিট করলাম।
পরদিন কলেজে গিয়ে শুভ্র স্যারের কেবিনে যাচ্ছিলাম তমাকে নিয়ে।
উদ্দেশ্য অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া।
দেখলাম স্যারও মাত্রই কেবিন থেকে বেরোলো তাই সেখানেই স্যারের দিকে না তাকিয়েই তার হাতে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে চুপচাপ চলে আসছিলাম।

হঠাৎ পিছন থেকে স্যার  মিস.সুপ্তি বলে ডেকে উঠল।আমি ফিরে তাকাতেই স্যার বলল,
আমি মনে হয় আপনার সাথে কাল একটু বেশিই
রুড হয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু আপনার কি কোনো প্রবলেম হয়েছে?
সবসময় দেখি পুরো ক্লাসে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে 
থাকেন আর যখন আমি বের হতে নেই তখন  আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।আমাকে কি কিছু বলতে চান?

আমি খুবই চমকে গেলাম স্যারের কথা শুনে।
স্যার কি করে পিছন থেকে বুঝলো যে আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি।

চমকানোর মধ্যেই আমি কিছু না ভেবেই হুট করে বলে ফেললাম,জীবনে প্রথম কোনো ছেলেকে পছন্দ হলো তাও আবার স্যারকে।
কিন্তু স্যারের প্রতি যেনো সেই ধরণের পছন্দ আর না বাড়ে তাই তো বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি আর বের হওয়ার সময় তাকিয়ে থাকার উপর আমার কোনো হাত নেই।সেটা কিভাবে যেনো হয়ে যায়।

পৃথিবীর কিছু অদ্ভুত ছাত্রীরই স্যারদের প্রতি ঐ..ঐ পছন্দ হয়ে যায়।আর আমি মনে হয় সেই অদ্ভুতদের মধ্যে একজন হয়ে গেছি।

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম।তার পরই হুশ হল এগুলো কি বললাম।কথার কোনো আগামাথা কিছুই নাই।আস্তে আস্তে মাথা তুলে সামনের দিকে দেখলাম যে স্যার………..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে