চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০১

1
7417

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০১
লেখনীতে- আশিকা

” শার্টের উপরের তিন বোতাম খোলা রেখে আর হাটুর উপর শর্টস পড়ে দেশবাসীকে শরীর দেখিয়ে বেড়ানো ছাড়া আপনার আর কোন কাজ নেই তাই না!
খুক খুক করে কাশঁতে কাশঁতে অঙ্কন সামনে বসা অতি অভদ্র মেয়েটির দিকে এক পলক তাকায়। আর্টিফিসিয়াল লুকবিহীন খুবই সাধারণ মুখশ্রী হলেও আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। বিনা দ্বিধায় হাজার খানেক চেহারার মাঝেও অনন্য।খারাপ না দুঃসাহসটা বরং একটু বেশীই। হুট হাট মাথা গরম করাটা বোধ হয় তার ধাঁতে নেই। তাই পূর্বের ন্যায় মাথা ঠান্ডা রেখে শান্ত গলায় বললো,
” মানে?”
” মানে আপনি কি কালা ? যদি সেরকম হোন তাহলে বলবো শরীর দেখিয়ে বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষন করলেই স্মার্ট হওয়া যায় না! যদি তাই হতো তাহলে পশুরাই জগতের সর্বাপেক্ষা স্মার্ট হিসেবে গণ্য হতো।”
অঙ্কন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তার অতিমাত্রায় উত্তেজনায় চেয়ারটাও ক্যাৎ করে শব্দ করে উঠলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


চোয়াল শক্ত করে ধড়াম করে বলে দিলো,
” হুয়াট দ্যা হেল আর ইউ টকিং! মিট করার পূর্বে আমার প্রফেশন সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজ খবর নিয়ে আগানোটা আপনার নৈতিক দায়িত্ব ছিলো।
একাধারে মডেল এবং অভিনেতা হওয়ায় বিভিন্ন প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন সিচুয়েশনে নানাবিধ কস্টিউম ক্যারি করতে হয়। আর এটাকে এইভাবে অপমান করার কোন ভ্যালিড রিজন আপনার নেই।”
অনন্যা অতিমাত্রায় সুদর্শন হিরোর নাকের ডগায় রাগের লম্ফঝম্প দেখে মোটেও বিচলিত হলো না। বরং স্মিতহাস্যে বলে উঠলো,
” দাঁড়িয়ে পড়লেন যে! কথা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। আর আপনার সম্পর্কে নাড়ীনক্ষত্র জেনেই আপনার সামনে ফুল কনফিডেন্সে স্থির হয়ে বসে আছি। এনিওয়ে আপনি ভার্জিনতো! অবশ্য নেতিবাচক হওয়াটাই স্বাভাবিক। ”
” হুয়াট?” অঙ্কন ব্যাপারটা সামলে নেয়ার জন্য কয়েক সেকেন্ড দম নিলো।
” মানে আপনি এখন নিশ্চয়ই বলবেন, এজ অ্যা একটর এন্ড মডেল, আই হ্যাভ লস্ট মাই ভার্জিনিটি।” অনন্যা ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।
অঙ্কন চূড়ান্ত অভদ্র মেয়েটির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো,
” আপনার কি মনে হয় মিডিয়াতে আসা মানে ভার্জিনিটি লস! ইউ নো আমার চার চারটা মুভি হিট হয়েছে উইদাউট এনি একট্রেস। এডভেঞ্চার, থ্রিলার আমার পছন্দের ক্যাটাগরি। আপনাকে না দেখলে জানতামই না এরকম রিডিউকিউলাস টিপিক্যাল চিন্তা ভাবনা এখনো মানুষের মাথায় ঘুরে। হাউ ফানি!
বাই দ্যা ওয়ে আপনি ঠিক কি কারণে আমার সাথে ডেটে এসেছেন?”
” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এটা একটা নরমাল হ্যাংআউট ! নট অ্যা ডেট ক্লিয়ার! আর আপনি ঠিক যে কারণে এখানে এসেছেন আমিও সেইম কারণেই, মানে অনুরোধ ঢেকি গিলতে।”
অঙ্কন চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
” স্ট্রেঞ্জ! আপনি ভেবে বলছেন তো। অঙ্কন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে আপনাকে ফোর্স করা হয়েছে! ”
” নয়তো কি? আমার গুণধর মায়ের প্যানপ্যানানির ঠ্যালায় তার বান্ধবীর একমাত্র ছেলে সুপারস্টার হিরো অঙ্কন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে হলো। আমার ন্যাকাষষ্ঠি মা আপনার ডাই হার্ট ফ্যান। তবে বিশ্বাস করুন আই ক্যান’ট যাস্ট টলারেট ইউ এন্ড ইউর সো কল্ড সুপারহিট মুভিজ। আপনাদের এইসব ঝলমলে দুনিয়ার আতিশয্যে আমার এলার্জি। বিন্দুমাত্র আকর্ষন ও কাজ করেনা। এম আই ক্লিয়ার!”
অঙ্কন মুখ বুজে এতোক্ষণ সহ্য করে নিলেও এইবার তেতে উঠে বললো,
” আপনি কি নিজেকে মহাসুন্দরী ভাবেন? ইউ নো ইউ আর সো মাচ ক্ষ্যাত, আনস্মার্ট এন্ড ভেরি ভেরি টিপিক্যাল লাইক চৌদ্দসশ বছর আগের নানি কিংবা দাদি। আমার মায়ের রেফারেন্সের জোড়েই আপনি আমার সাথে দেখা করার সুযোগ পেলেন। নিজের সৌভাগ্যের কথা ভাবুন। নয়তো যে অঙ্কনকে একপলক দেখার জন্য শহরে লাইন পড়ে যায় সে আপনার মতো টিপিক্যাল এক নানির সাথে বসে আছে। কি সাংঘাতিক! ভাইরাল হলে প্রেস্টিজ কোথায় থাকবে ভাবতে পারছেন।”
” আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। আর হ্যাঁ আ’ম রিয়েলি সরি শতচেষ্টাতেই আপনার সো কল্ড লুতুপুতু বস্তাপঁচা ফ্যান হতে পারলাম না। তাই আমি অনন্যা আমার চিন্তাভাবনাগুলোও সবার থেকে অনন্য এটাই স্বাভাবিক।”
অঙ্কন দাঁতে দাঁত চেপে থাকলো। অনন্যা সেদিকে তাকিয়ে কোনরকম ভণিতা ছাড়া গড়গড় করে বললো,
“দেখুন আমি হায়ার স্টাডিজ এর জন্য ইউ এস এ যাবো প্লিজ আপনি অনীলা আন্টিকে বলে দিবেন আমাকে আপনার পছন্দ নয়। আপনাকে বিয়ে করা যাস্ট ইমপসিবল! কথা ক্লিয়ার!”
” ওয়েট ওয়েট ওয়েট আপনাকে বিয়ে করার জন্য কেউ মরে যাচ্ছে না। নিজেকে অতোটাও ইম্পোর্টেন্ট ভাবার কোন কারণ আপাতত দেখছিনা। ইনফ্যাক্ট অঙ্কন চৌধুরীর লাইফ পার্টনার হওয়ার কোন যোগ্যতাই আপনার আছে বলেতো মনে হয়না।
আপনার মতো অনুরোধে ঢেকি গিলতে আমাকেও
এই ব্যাস্ত শিডিউলে টাইম বের করতে হয়েছে। আয়েশা আন্টিকে আজকেই বলে দিবেন আমাকে আপনার পছন্দ নয়। ওকেই।”
” আপনার সেন্স অফ হিউমার এতো খারাপ সত্যিই আনবিলিভেবল! মা যদি আমার কথা শুনতো তাহলে নিশচয়ই আপনার সামনে সঙ সেজে বেকার টাইম ওয়েস্ট করতাম না। যা করার আপনি করবেন।”
” নিজের সমস্যা নিজে মেটান একদম আমাকে টানবেন না।” অঙ্কন এই পর্যায়ে রাগে অন্ধ হয়ে যায়। কত বড় স্পর্ধা বলে কিনা তার সাথে দেখা করায় টাইম ওয়েস্ট হয়েছে। সময় দেখায় সময়! অঙ্কন চৌধুরীকে সময় দেখাচ্ছে। যা নয় তাই বলে অপমান করলো। কত বড় দূঃসাহস। আজ মায়ের জন্য এই থার্ড ক্লাস মেয়ে তাকে এতগুলো কথা শোনালো।
” নিজের সমস্যা মানে কি? আপনি এখানে ইনভলড সো আপনি চাইলেও দায় এড়াতে পারেন না। ”
অঙ্কন চোখ মুখ অন্ধকার করে বসে থাকলো। অনন্যা কিছু একটা আন্দাজ করার মত ভাব করে আবার বলে উঠলো,
” আহারে! আপনি নিশ্চিত হজম করতে পারছেন না এই যে আমি আপনাকে একশত আশি ডিগ্রি কোণে ইগ্নোর করলাম। আপনার এতো ফ্যান ফলোয়ার, এতো ফ্যাম,ঝলমলে দুনিয়ার হাতছানিকে আমি এক তুড়ি মেরে কেমন উড়িয়ে দিলাম। কষ্ট পাবেন না প্লিজ আমি না শত চেষ্টাতেও ন্যাকাষষ্ঠি হতে পারছি না।”
” স্টপ দিজ ননসেন্স আর একটাও কথা না। আপনার মত এক আশিকাইল্যা নানির মুখে বাহবা শোনার জন্যে অঙ্কন চৌধুরী বসে নেই। প্লিজ গেট লস্ট এন্ড লিভ মি এলোন। আপনাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি বাকি জীবনেও আমার চোখের সামনে পড়বেন না। ক্লিয়ার!”
অঙ্কন ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকাতেই অনন্যা লাফিয়ে উঠে বললো,
” আপনি সিকিউরিটি ডাকবেন নাকি? এই না প্লিজ আমি উঠছি। আর যে কথাটা বললাম প্লিজ মাথায় রাখবেন।”
অঙ্কন উত্তর না দিয়ে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে সুরসুর করে উঠে চলে এলো।
অঙ্কন চলে যেতেই অনি, দীশা, নিনিত আর নেহা অনন্যাকে একদম মৌমাছির মত ছেঁকে ধরলো। অনন্যা বিস্মিত হয়ে বললো,
” তোরা?”
” অনার বাচ্চা অনা তুই কি জীবনেও মানুষ হবিনা। হাতের লক্ষি এভাবে কেউ পায়ে মাড়ায়?”
অনির কথা শোনে অনন্যা মুখ বাঁকিয়ে তাকায়।
” ওহ মাই গড, কি সুন্দর ঠোঁট! কেমন ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি! উফ্ মরণ ব্যাক ব্রাস করা হেয়ার। কি স্টাইল আমারতো ভীমড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। আমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাচ্ছি কেউ আমারে ধর।” নিনিতের ইচ্ছেবশত অকারণ শরীর মাথা ঘুরানো দেখে অনন্যা সজোরে এক ধাক্কা দেয়। পড়ে যেতে নিয়েও দীশাকে ধরে দাঁড়ায়। মুহুর্তেই দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠে,
” অনার বাচ্চা অনা। কান্দুরি তুই আমাকে ধাক্কা মারলি কেন?”
” খবরদার কান্দুরি বলবি না। আর তোরতো খুব মাথা ঘুরিয়ে পড়ার সখ হয়েছিলো আমি যাস্ট তোর সুখ পূরণ করার একটা চেষ্টা করছিলাম আরতো কিছু না।”
” অনা আর কান্দুরি বলবনা প্লিজ আমার সাথে অঙ্কনের একবার আলাপ করিয়ে দেনা রে প্লিজ। তোর পায়ে ধরি প্লিজ লাগে। ”
” কই এখনোতো পায়ে ধরিস নাই। আগে ধর তারপর ভাবা যাবে?”
নিনিত সত্যি সত্যি পা ধরার উপক্রম হতেই নেহা খপ করে তাকে ধরে ফেলে। তারপর ম্লান হেসে বললো,
” নিনিত তুই কি বেঅাক্কেল হয়ে গেছিস!”
” হ, অঙ্কনের জন্য ব্যাক্কল, গাধী, গর্দভ যা খুশি তাই হতে আমি রাজী।”
” অনন্যা, তুই আমাদের সবার ক্রাশকে এইভাবে অপমান করে একদম ঠিক করিসনি। এর উপযুক্ত শাস্তি তোরে কড়ায় গন্ডায় বুঝায়া দিবো।” দীশা মুখ অন্ধকার করে বললো।
” তার আগে তোরা বল আমার উপর স্পাইগিরী করতে তোদের কে পাঠিয়েছে? নিশচয়ই ন্যাকাষষ্ঠী আয়েশা আহমেদ পাঠিয়েছে তাই না। খবরদার মাকে যদি কিচ্ছু বলেছিস না তোদের একদম খেয়ে ফেলবো। নেক্সট সেমিস্টারে এর মজা তোরা বুঝবি এই বলে দিলাম।”
অনন্যার মুখে এই কথা শোনে বাকি সবাই ঢোক গিললো। ব্রিলিয়ান্ট অনন্যার হেল্প ছাড়া সেমিস্টার উৎরানো বড়ই দূরহ ব্যাপার। অন্তত নিজেদের স্বার্থের জন্য মুখে কুলুপ আটাঁটাই বোধ হয় শ্রেয়।

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে