খেলাঘর.পর্ব-২৬

1
2290

খেলাঘর.পর্ব-২৬
লেখা-সুলতানা ইতি

এলো মেলো পা ফেলে হাটছে মিথিলা উদ্দেশ্য হীন ভাবে
এভাবে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর মিথিলা বাসায় ফিরে এলো

মিসেস আয়মন মিথিলা কে দেখেই হাসি মুখে জিজ্ঞাস করলো
– কিরে কেমন দেখলি ইভুর অফিস

মিথিলা- ভালো

মিসেস আয়মন- তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো, কি হয়েছে বল

মিথিলা – কিছু হয়নি, আমি একটু আসছি

মিথিলা রুমে চলে এলো
নাহ এই বাড়িতে আমি আর এক মুহুর্ত থাকবো না,আমাকে ছোট করে কথা বলছে তো বলছে আমার মৃত বাবা কে অপমান করছে হায়রে মানুষ গিরগিটির মতো রঙ বদলায়,এদের আসল রুপ ছিনতে সময় লেগে যায়,ইভান যে এমন করবে ভাবতে ও পারিনি,
তার শিক্ষা এতো খারাপ ছিঃ

মিথিলা ভিড় ভিড় করছে আর নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে,চোখ আটকে যায় চশমার বাক্সে ইহানের কথা মনে পড়ে যায়,ইহানের শেষ কথা ছিলো আমি কখনো শুখি হতে পারবো না,ইহানের কথা ফলে গেছে,, আজ বুঝতে পারছি ইহান কতো টা কষ্ট পেয়েছে সেদিন,
‘ ক্ষমা করে দিস আমায় ইহান’

মিথিলা সব গুছিয়ে বেরিয়ে এলো
মিসেস আয়মন অবাক হয়ে বল্লো- কিরে কোথায় যাচ্ছিস ব্যাগ প্যাক নিয়ে

মিথিলা- সেটা আপনার ছেলে আসলে তার কাছে জিজ্ঞাস করবেন,তবে এখন আমি এই টুকু ই বলবো,,আমার এখানে থাকার ছেয়ে আমার অসুস্থ মা,,আর অসহায় ভাই বোনের পাশে থাকা খুব জরুরী, আশা করি আপনি আর কোন প্রশ্ন করবেন না আমায়

মিসেস আয়মন- মা কি হয়েছে বলো,তোমার শ্বশুর এখন দেশে নেই,এই সুযোগে ইভান কি কিছু করেছে

মিথিলা- বললাম না আপনার কোন কথা উওর দিবো না,তবে হা আপনার বিদেশ ফিরত ছেলের সাথে আমার মতো সাধা সিধে মেয়ের বিয়ে না দিলে আজ দুটি জীবন অনেক সুখের হতো
এই বলে মিথিলা মিসেস আয়মন কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়

মিসেস আয়মন- কি হলো এটা
ছেলেটা আবার কি করেছে, আমি এখন ই কল দিচ্ছি ওকে
কল রিসিভ হলো সাথে সাথেই

মিসেস আয়মন- ইভান তুই কোথায় এখন ই বাসায় আসবি

ইভান- কি হয়েছে আম্মু?

মিসেস আয়মন- তুই আয় তার পর বলছি

মিসেস আয়মন কল অফ করে দিয়ে অফিসের রিসেপসেনিষ্ট কে ফোন দেয়
রিসেপসেনিষ্ট জারা
– হ্যালো

মিসেস আয়মন- মিসেস আয়মন আতাহার চৌধুরী বলছি

জারা- বলুন ম্যাম

মিসেস আয়মন- অফিসের খবর কি, ইভান অফিস দেখাশুনা করছে তো?

জারা- হ্যা ম্যাম স্যারের পি এ, খুব এক্টিভ,স্যার কে সব কাজে হেল্প করে

মিসেস আয়মন অবাক হলো কিন্তু তা ছেপে গিয়ে বল্লো
– ও হা তাই তো,আচ্ছা ইভানের পি এ, এর নামটা যেন কি,আসলে মনে পড়ছে না এই মুহুর্তে

জারা- নায়া চৌধুরী

মিসেস আয়মনের মন টা কেপে উঠে,তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– ঠিক আছে আমি রাখছি
মিসেস আয়মন কল অফ করে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো,তা হলে মিথিলার এমন ভাবে যাওয়ার কারন এটাই, আচ্ছা কি দেখেছিলো মিথিলা অফিসে গিয়ে, যে জন্য ওকে এ ভাবে চলে যেতে হয়েছে, ছেলে টা কে শুদরাতে পারিনি

বাইরে গাড়ির হর্ন শুনা গেলো, ইভান এসেছে
মিসেস আয়মন উঠে দাড়ালো

ইভান- আম্মু আর্জেন্ট কল করে ডেকেছো কিছু হয়েছে

মিসেস আয়মন শান্ত আর স্বাভাবিক কন্ঠে বল্লো
– মিথিলা চলে গেছে

ইভান কথা টা শুনেই মায়ের দিকে তাকায় আবার চোখ নামিয়ে নেয়

মিসেস আয়মন- তুই কিছু বলবি না, ছুপ করে থাকবি

ইভান – আ- মি কি. কি বলবো

মিসেস আয়মন- সত্যি ই তো তুই কি বলবি তোর তো এখন খুশি হওয়ার কথা,নায়ার সাথে তোর দিন গুলি নির্ভেজাল কাটবে

ইভান- আম্মু

-ঠাসসসসসসসস,মিসেস আয়মন ইভান কে চড় মারে,এই শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছি তোকে আজকের এই দিন দেখার জন্য,
আজ থেকে আমি ভাববো আমার কোন সন্তান নেই বেরিয়ে যা,,আর কখনো তুই এ বাড়িতে পা রাখবি না

মিসেস আয়মন ইভান কে টেনে বের করে দরজা বন্ধ করে দিলো

ইভান- আম্মু আমার কথা শুনো

মিসেস আয়মন- তোর কোন কথা শুনবো না,
ইভান কিছুক্ষন দরজা ধাক্কায়ে বিরক্ত হয়ে বাড়ির বাইরে চলে এলো
ছোট লোকের মেয়ে তোর সাহস হয় কি করে আমার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আমার আম্মুর কাছে আমাকে দোষী করার,, খুব গেছিস না ভেবেছিস তোকে ফিরিয়ে আনবো কখনো না,,

ইভান নায়ার কাছে ফিরে এলো
নায়া- ডার্লিং তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো কি হয়েছে বলো আমায়

ইভান সব কথা নায়া কে বলে,শুনে নায়া মনে মনে পিচাশি হাসি হাসে (খুব কাজে দিয়েছে আমার মেসেজ টা নইলে ওকে ঘাড় থেকে নামানো ই যেতো না)ডার্লিং মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে আমি আছি তো তোমার পাশে

ইভান নায়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে
– এখন তুমি আমার বেছে থাকার সম্বল নায়া

নায়া- আমি অলওয়েজ তোমারি আছি জান

মিথিলা বাড়িতে এসে কাউকে দেখতে ফেলো না অসুস্থ মা শুয়ে আছে বিছানায় কোন কথা তার মুখে নেই শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে ছেয়ে আছে

মিথিলার আজ আর কান্না আসছে না,কেনো যেন মনে হচ্ছে চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে
মিথিলা মায়ের পাশে বসে আছে, নির্ঝরিণী কোথায়? মাকে এ ভাবে একা ফেলে কোথায় গেছে সে

বেশ কিছু সময় পর নির্ঝরিণী আসে

মিথিলা- কোথায় গিয়েছিস মাকে একা ফেলে

নির্ঝরিণী – এ ছাড়া কোন উপায় ছিলো না ঘরে চাল ডাল সব ফুরিয়ে গেছে মায়ের ওষুধ ও শেষ

পাশের বাসার আন্টি বলেছে উনার সাথে ব্যাগ বানিয়ে দিলে কিছু টাকা দিবে তাই গিয়েছি সেখানে

মিথিলা ছেয়ে আছে নির্ঝরিণীর দিকে ছোট বোন আমার এতো কষ্ট করছে কতো ই বা আর বয়স হয়েছে এতো তাড়া তাড়ি বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছে

নির্ঝরিণী – এ ভাবে ছেয়ে আছো কেনো আপি,তুমি এসেছো আমি খুশি হয়েছি দুলা ভাই আসলে আর ও খুশি হতাম

মিথিলা- আসবে না দুলা ভাই

নির্ঝরিণী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বল্লো
– কেনো?

মিথিলা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বল্লো,
কিছু না,

নির্ঝরিণী আর কথা বাড়ালো না
– আপু তোমার তো কাল পরীক্ষা যাও তুমি গিয়ে পড়তে বসো আমি মাকে ওষুধ খাইয়ে রান্না বসাচ্ছি

মিথিলা – হুম ঠিক বলে ছিস আমি তা হলে যাই
অনেক রাত জেগে মিথিলা পড়ছে, বিয়ে সংসার সব কিছুর ঝামেলায় পড়া টা পিছিয়ে গেছে,

হঠ্যাৎ মায়ের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো মিথিলা কান খাড়া করে শুনলো হুম নির্ঝরিণীর কান্নার আওয়াজ মিথিলার বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে মায়ের রুমে আসে,

মা অসাড় হয়ে পড়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার শরিরে আর প্রান নেই

নির্ঝরিণী এসে মিথিলা কে ঝড়িয়ে ধরে কাঁদছে
মিথিলা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আল্লাহ কি করে এতো টা নিষ্টুর হলো,বাবা কে নিয়ে গেছে মা কে কেনো রাখলো না আমাদের জন্য, কি নিয়ে বাছবো আমরা,,

প্রায় রাত দুটোতে আয়ান বাড়ি আসে, বাড়িতে এসে আয়ান আবার মাকে হারানোর সংবাদ পেয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়, পাড়া প্রতিবেশিরা সবাই ততক্ষনে চলে আসে কেউ আয়ানের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে,

পরদিন সকাল আট টা বাজেই দাপনের ব্যাবস্থা করা হয় কেননা দশটায় মিথিলার পরীক্ষা,
ইভান কে খবর দেয়া হয়েছে সে আসেনি,,
জিমি এসে মায়ের লাশের পাশে বসে আছে কাঁদছে সে, তার কি হবে সে কার কাছে এসে কষ্টের কথা বলবে

নির্ঝরিণী – জিমি আপু বলো তো আমাদের কি হবে এবার বাবা মা দুজনেই আমাদের একা করে চলে গেলো কেনো
জিমি নির্ঝরিণী কে ঝড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাঁদছে

দূরে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে তার চোখে আজ খরা নদীর বুকে চর উঠে গেছে তাই তো মিথিলার চোখের পানি ও শুকিয়ে গেছে

সকাল আট টায় দাপনের কাজ সম্পূর্ণ হয়
মিথিলা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে

প্রতিবেশী মুরুব্বীরা মিথিলা কে আজকের পরীক্ষা না দিতে বলছে,গুরু মরা মাথার উপরে আজ যেন বাড়ির বাইরে না বের হয়

মিথিলা শান্ত আর গম্ভীর কন্ঠে বল্লো
– আমাদের চার ভাই বোনের ভাগ্যে এই কষ্ট টা ই লিখা আছে এটা হবেই তাই বলে পরীক্ষা না দিয়ে ঘরে বসে কাঁদলে এর সমাধান হবে না,আমার ছোট ভাই বোন দের কথা ভাবতে হবে,আশা করি আপনাদের আর কিছু বলতে হবে না মিথিলা বেরিয়ে যায়

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

1 মন্তব্য

  1. Allah ja koren kollaner Jonnyi are mistake hochey amader. Because we don’t care about Haram and halal because if we follow halal and Haram then we can leave peacefully and. Allah make halal and Haram what ever it is but it’s only the good and peace for us but we are un careful and we do mistake we do sins and we do the wrong but. And all the time Allah bless us and we think why Allah do this and this but when the time has come to know the truth then we can fell were the criminal and we do the wrong and we do the mistakes even that also happens. But Allah bless us on that time also but we can’t understand that and we never try to get understand that but what ever Allah do is for ours good and for ours peace but we can’t understand and we can’t understand try to get understand but the truth is Allah always give us blessed but we don’t understand so don’t say why Allah do this and this but actually Allah do the right and good for us but we cant understand but what ever it is don’t say ever again why Allah do this to me and how can Allah do this to me. Remember Allah is your creator your Malik and all of ours lord and what ever Allah do it’s only for ours good.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে