মন ফড়িং  ২২

2
3915
মন ফড়িং  ২২.
– ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যও তো আমি নই, অদ্রি!
অদ্রি মুচকি হেসে বললো
– হাসালেন!
– আমি কি জোক করছি আপনার সাথে?
– না
– তাহলে হাসলেন যে?
– আপনার মতো পুরুষকে সবাই পেতে চাইবে।
– পেতে চাইবে, ভালোবাসতে চাইবেনা।
অদ্রিকে সামনে দাঁড় করিয়ে নিদ্র ওর দুই হাতের কব্জিতে অদ্রির মুখখানা নিয়ে বললো
– ভালোবাসতে যোগ্যতা লাগেনা, অদ্রি। কীভাবে যেন হয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের মধ্যেই দানা বাঁধতে শুরু করে। আর যখন বুঝতে পারা যায় তখন নিজের সাথে যুদ্ধ বেঁধে যায়। সেই যুদ্ধে কোনো সময় মন জিতে যায় আবার কোনো সময় মস্তিষ্ক। অদ্রি, ভালোবাসতে যোগ্যতা লাগেনা। কিন্তু টিকিয়ে রাখতে যোগ্যতা লাগে।
– আমার সেই যোগ্যতা টুকুন নেই।
– আছে, একটু বেশিই আছে। এজন্যই তো ফিরে আসা।
– আমার বিশ্রী অতীত টাকে আপনি মেনে নিতে পারবেন?
– আরে আপনি বলছেন টা কী? আমার কাছে আপনার অতীত বলতে কিছুই নাই। আপনার বর্তমান, ভবিষ্যৎ টাই সব।
নিদ্রের বামহাতের কনুই থেকে কিছুটা নিচে চামড়া উঠে সাদা মাংস বের হয়ে আছে।শিউরে উঠে বললো
– আপনার হাতে কী হয়েছে? সাদা মাংস কীভাবে বের হয়ে আছে।
নিদ্র হাতের ওই অংশটা দেখে হেসে বললো
– তেমন কিছুই না।
– চামড়া উঠে গিয়ে সাদা অংশ বের হয়ে আছে, এটা তেমন কিছুই না?
অদ্রির রাগ মিশ্রিত কথায় নিদ্র হেসে বললো
– আচ্ছা অনেক কিছু ঠিকাছে?
– না ঠিক নেই।
– ঠিক আছে। ছুলে যাওয়ার পর আমি জার্মানি লতার রস লাগিয়ে ছিলাম।
– কীভাবে কাটলো?
– রাস্তায় বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম। একটা কথা বলি অদ্রি?
– হ্যাঁ বলুন।
– একটু জড়িয়ে ধরি?
– তবে সাবধান আমার হাতে যেন ব্যথা না লাগে আর আপনার হাতও সাবধান।
– শুধু সাবধান আর সাবধান….
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিদ্র বলতে শুরু করলো
– পাশ দিয়ে বাচ্চাদের দল যাচ্ছে। ওদের প্ল্যান ছিলো কদম ফুল পাড়ার। আমিও ওদের পিছুপিছু গেলাম। গিয়ে দেখি ৫-৬ টা মাঝারি ধরনের কদম গাছ। আর কদম গাছ ভরা ফুল। আপনি অদ্রি অবাক হতেন দেখলে। এমনিতেই তো কদম ফুল অসম্ভব সুন্দর। সবুজ পাতার মাঝে হলুদ সাদা ফুল। তার উপর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যেকটা ফুলে পানির ফোটা লেগে আছে। আমি লোভ সামলাতে না পেরে বাচ্চাদের একজনকে বললাম মানে লিডার যে তাকে বললাম, ” আমাকে ফুল পেড়ে দিতে পারবে?
পুচকে লিডারটা কি বললো জানেন?
অদ্রি বললো
– না তো। কী বললো?
– বললো, ” দেওয়ন যায় তবে শর্ত আছে। আমি বললাম – কী শর্ত?
– পার পিচ ১০০ করে দিবেন।
কিন্তু তখন আমার কাছে কোনো টাকা নেই। কীভাবে দিবো? অনেক বার বললাম আগে ফুল দাও, আমি বাসা থেকে টাকা এনে দিবো। রাজিই হলো না।
অদ্রি বললো
– তারপর আপনি নিজেই ফুলগুলো পাড়ার জন্য গাছে উঠলেন। তাই তো?
– তাছাড়া উপায় কী?
– ফুলগুলো তো পরেও আনা যেত তাই না?
– যেত কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো বৃষ্টি থাকা অবস্থায় ভেজা কদম ফুল দিয়ে আপনার দিনটা একটু অন্যরকম করতে চেয়েছিলাম।
– অন্যরকম করতে গিয়ে নিজের তো বারোটা বাজিয়ে এসেছেন। সেই খেয়াল আছে?
– আমি পুরুষ মানুষ ; এতো সহজে ঘায়েল হইনা।
– গাছের ডাল ভেঙে পড়ে গেলে কী হতো?
– আমি মোটেও অতোটা ভারী না। ফুলগুলো নিয়ে নামার পর খেয়াল করলাম যাচ্ছেতাই ভাবে ছুলে গেছে।
– জার্মানি লতা কীভাবে চিনলেন?
– গতবার রশীদ চাচা চিনিয়ে দিয়েছিলো।
– একটা কথা বলি রাগ করবেন না তো?
– হ্যাঁ, বলুন।
– লিলি আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার রুমে গিয়েছিল। একটু ব্যাগপত্র চেক করে দেখবেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
– লিলি?
– হ্যাঁ, লিলি।
– ও এমন কেনো করবে?
– আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছে। ভালো ব্যবহার তো দূরে থাক, ঝাড়ি ছাড়া কথা বলেনা।
– হতেও পারে। আমার সাথে এখনো তেমন কথা হয়নি।
– নিদ্র এখন ছাড়ুন। কেউ চলে আসলে বিপদে পাড়বো।
– চলুন বিয়ে করে ফেলি। তাহলে কেউ দেখে ফেললেও সমস্যায় পড়তে হবেনা।
– বিয়ে এতো সোজা বিষয় না।
– সোজাই তো। কবুল বললাম শেষ।
– পরিবারের সম্মতির প্রয়োজন হয়।
– আমার দাদী আর বাবা। দাদীকে বোঝানো সহজ আর বাবা একজন আধপাগলা মানুষ। সমস্যার কিছু দেখছিনা।
– নিদ্র আমি বিধবা মহিলা। সমাজ জানে আমার পরোকীয়ার কারণে আমার স্বামী সুইসাইড করেছে। আমি একজন সমাজ থেকে বিতাড়িত নারী। এখানে একটু ঠাই পাওয়ার জন্য রীতিমতো পালিয়ে আসা। আমি আপনাকে বোঝাতে পারবোনা নিদ্র।
– আমিই আগেই বলেছি আপনার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার দাদী বা বাবা কেউই এতো কিছু জানবে না। যতটুকু জানানোর আমি জানাবো। আপনি চুপ থাকবেন। আমি বলেছিই তো আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়েই আমার মাথাব্যথা।
– আপনি এর আগে কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছেন?
নিদ্র চেয়ারে বসে পড়ে বললো
– নাহ, প্রথম।
– তাহলে তো আপনি ভুল করছেন। প্রথম প্রেম সবসময় ভুল মানুষের সাথেই হয়।
– এ কদিন তো একবারও বললেন না। আজকে প্রথম প্রেম শুনেই বললেন। আর এই লজিকে তো তাহলে আপনিও পড়েন। আপনিও ভুল মানুষের সাথেই প্রেম করছেন।
– না, আপনার সাথে কথায় আমি পারবোনা।
– তো বিয়েটা কবে করছি আমরা?
– রশীদ চাচার মেয়ের বিয়েটা হোক তারপর?
– বেশি দেরি হয়ে যায়না?
– আপনি কি জানেন আপনি এখনো বেশ ছোটো?
– বেশি ছোটো কই? ২২ বছর বয়স আমার।
– আপনি আমার থেকে ২ বছরের ছোটো নিদ্র। বাচ্চা মানুষ আমার কাছে।
– সে যাইহোক, অল্পবয়সে বিয়ে করার মজাই আলাদা।
– চা খাবেন নাকি কফি?
– চা তো আমি খাই না।
– তাহলে কফি খাবেন?
– কফিও তো আমি খাইনা।
– গতবার তো দেখলাম দুটোই খান।
– অদ্রি চা, কফি কেউই খায় না ; পান করে।
– চা পান করবো। তবে আমি আর আপনি।
রিতা বুঝতে পারছেন না, অদ্রি কেনো ছেলেটাকে কোনো কিছুতে নিষেধ করছেনা। আর ছেলেটার প্রসঙ্গ তুললেই কেমন যেন নরম হয়ে যায় অদ্রি। অদ্রির মাঝে কিছু একটা পরিবর্তন আসছে।
আসমা জামানকে তার ভালো লাগছেনা। এসেই সবকিছুতে নজরদারি করছে। এটা করো, ওটা করো যেন নিজেরই বাড়ি। আবার নতুন বুদ্ধি বের করেছে, মাটির রান্নাঘর বানানোর। আর অদ্রিও বোকার মতো রাজি হয়ে গেলো। মাটির চুলায় এই বৃষ্টির দিনে রান্না করা খুব কষ্টের। আর যদি লাকড়ি ভেজা থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
অদ্রিকে দেখে আসমা জামান প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এই বাসার
মালিক  একজন অল্পবয়সী মেয়ে হবে ভাবতেও পারেননি। মেয়েটার মধ্যে না আছে অহংকার না আছে নিজেকে বড় করে উপস্থাপন করার মানসিকতা নেই।
আসমা জামান মেয়েটার নাম শুনে কেমন চেনা চেনা লাগছিলো। কোথাও নামটা শুনেছে সে কিন্তু মনে পড়ছেনা। মেয়েটা নিজ হাতেই তাকে চা এনে খাওয়ালো। ডান হাতে ব্যথা থাকা সত্ত্বেও বাম হাত দিয়েই কাজটা করলো। আরেকটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছে মেয়েটার মুচকি হাসিটা খুব সুন্দর। এমন সুন্দর হাসি অনেকদিন পর সে দেখলো।
নাজমুল সাহেব ছেলের প্রেমে পড়ার আভাস পেয়ে বেশ হেসেছিলেন। ছেলেটাও তার মতো প্রেমে পড়েছে। কেমন উদাসী উদাসী চেহারা হয়ে গেছে। আর নিচেই নামছেনা খুব একটা। সে খেয়াল করেছে। একটু চোখে চোখে রাখতে হবে। ছেলের প্রেমে পড়ার পর কী কী কাণ্ড ঘটিয়ে বসে সব জানতে হবে। অবশ্য এখন যা যা কাণ্ড ঘটাবে সবই মজার ব্যাপার হবে। মেয়েটাকে তার খারাপ লাগেনি। খুব সোজাসাপ্টা মেয়ে আর খুবই সাধারণ।
নিদ্রের চোখে এই সাধারণ বিষয়টাই অসাধারণ হয়ে ধরা পড়েছে বলেই প্রেমে পড়েছে। নিদ্র কি জানে তার লুকিয়ে রাখা প্রেম ওর বাবা জেনে ফেলেছে?
ওর হুশ আছে নাকি? প্রেমে পাগল প্রায় অবস্থা।
হাতে কেটে গেছে সেদিকে খেয়াল নেই। দু হাত ভরে কদম নিয়ে হাজির। আস্ত পাগল।
চলবে…..!
© Maria Kabir

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে