অলকানন্দার নির্বাসন পর্ব-১৮+১৯

1
604

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

১৮.

চারদিকে বিভীষিকাময় রাত, আঁধার ভেদ করে ডাকছে কানাকুয়ো। থেমে থেমে হাঁকছে শেয়াল, নেকড়ের দল। মানুষরূপী এক ঝাঁক শেয়ালও চরিত্র ছেঁড়ার উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। কাঁদছে অলকানন্দা। শরীরের চামড়ায় ফুটে ওঠেছে খামচানোর চিহ্ন। জ্বলছে ভীষণ। কিন্তু বাহ্যিক জ্বলনের চেয়েও বেশি জ্বলছে অভ্যন্তরে। যে চরিত্র রক্ষা করার জন্য এত যুদ্ধ, এত হাহাকার – আজ সেই চরিত্র গড়াগড়ি খাচ্ছে ধূলোয়। কলঙ্কের ভার যে এত বেশি তা জানা ছিলো না ছোটো মেয়েটার।

চারপাশে মশাল জ্বলছে দাউ দাউ করে। মনে হচ্ছে অলকানন্দার মৃত চরিত্রের চিতা যেন পুড়ে হচ্ছে ছাঁই। গ্রামবাসীরা তাকে ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একজন গিয়েছেন বিহারিণী মহলে খবর পৌঁছাতে। অলকানন্দার চিত্ত বড়ো উৎকণ্ঠিত হলো। বাহিরের মানুষ তাকে অবিশ্বাস করছে সে মেনে নিবে কিন্তু যদি তার কাছের কেউ আঙ্গুল তুলে তার চরিত্রে, তবে বাঁচার উপায় যে নেই। গলায় কলসি বেঁধে ডুবে মরতে হবে তার। প্রায় মিনিট ত্রিশ পেরুতেই বিহারিণী মহলের প্রায় সকলেই উপস্থিত হলো। ফুলো ফুলো চোখ-মুখ তাদের। ঘুম থেকে ওঠেই বোধহয় ছুটে এসেছে। সুরবালা, লক্ষ্মী দেবী, নন্দন মশাই, কাকী শাশুড়ি, মনময়ূরী, পানকৌড়ি, প্রসাদ, ধ্রুবলাল, মনোহর, তরঙ্গিণীসহ দেহরক্ষীরাও ছুটে এসেছে। এই অবিশ্বাস্য ঘটনাই দেখার জন্য মূলত ছুটে আসা। প্রথমে গ্রামের কিছু সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হলেও ধীরে ধীরে মানুষ যেন বাড়তেই থাকল। খোলা মাঠে উজাড় হলো অলকানন্দার বাকি সম্মানটুকুও।

অলকানন্দার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে তরঙ্গিণী এগিয়ে আসতে নিলেই থামিয়ে দিলেন গ্রামবাসীদের একজন,
“খবরদার, আপনাদের মহলের একজনও এই মেয়েকে ছুঁতে পারবেন না।”

তরঙ্গিণী কথা বলতে চাইলেও থামিয়ে দেওয়া হল তাকে। বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুরবালা দেবী। অলকানন্দা আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মানুষটার দিকে। হাউমাউ করে কেঁদে বলল,
“মা, আপনি তো আমায় চেনেন। আমি কী এমনটা করতে পারি বলুন? আপনি বলুন না ওদের আমাকে…..”

অলকানন্দা কথা শেষ করার আগেই সুরবালা দেবী চোখ ঘুরিয়ে নিলেন। তার চোখে কিসের একটা ছোঁয়া পেল অলকানন্দা। ঘৃণা নাকি তাচ্ছিল্য ঠিক ঠাহর করতে পারল না সে। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষের এমন দৃষ্টিই ছোটো অলকানন্দার সকল আশা ভরসার বাঁধ ভেঙে দিল। তবুও, ফাঁসির আসামীও তো শেষ চেষ্টা করে বাঁচার, অলকানন্দা তো ছোটো একটা কিশোরী মাত্র। সে প্রসাদের দিকে তাকাল। আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলল,
“আপনি তো অন্তত মানেন আমি এমন না।”

“মানতাম। তাহলে আপনার এখানে আসার কারণ কী?”

প্রসাদের প্রশ্নের বাণেই যেন সকল উত্তর ছিল। খুব গোপনে ঘৃণার দৃষ্টি ফেলতেও ছাড়ল না মানুষটা। অলকানন্দা ভেতর থেকে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। ধপ করে বসে পড়ল মাটিতে। আশপাশ হাতড়েও কূল পেল না যেন সে। কাকে সে সবটা বলবে! যারা তার পরম প্রিয় মানুষ তারাই যে বড্ড নিষ্ঠুরতায় মুখ ফিরিয়ে নিল। কাকে বলবে সে তার পবিত্রতার গল্প!

অলকানন্দার যখন কূল বিহীন সমুদ্রে ভরাডুবি অবস্থা ঠিক তখন মুখ খুলল ধ্রুবলাল, পানকৌড়ির স্বামী,
“বৌঠান, আপনি এমনটা করার মানুষ নন আমরা জানি। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি..”

“চুপ একদম, চুপ। এই মা গীর হয়ে খবরদারী করতে হবে না আপনার। ওর চরিত্র খারাপ তা আগেই বুঝে ছিলাম। আজ এমন ভরা গ্রামে আমাদের সকল সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিলো। বে শ্যা একটা।”

ধ্রুবলালকে থামিয়ে ঘৃণার বাণ ছুঁড়ে মারল কৌড়ি। ধ্রুবলাল বুঝানোর চেষ্টা করলেন,
“না কৌড়ি, যে মানুষটার সাথে থেকেছ, এতদিন তাকে নিশ্চয় একটু হলেও চিনো। উনি মোটেও এমন না।”

“তাই নাকি? ওর নিজের শাশুড়িও দেখুন চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে আর আপনি কিনা গুণগান করছেন এত কিছু দেখার পরও! নাকি আপনাকেও ও সুখ দিয়েছিল যার জন্য…… ”

এবার কথা শেষ করতে পারল না কৌড়ি। গতানুগতিক সকল ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়ে গ্রামবাসীর সামনে সশব্দে তার গালে চড় বসালো তার সরল সোজা স্বামী ধ্রুবলাল। কৌড়ি বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি কখনো ধ্রুবলাল তার গায়ে হাত তুলবে। অথচ এটা বাস্তবে ঘটে গিয়েছে। ধ্রুবলাল পাষাণের মতন চড় বসিয়েছে তার গালে। কৌড়ি তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল,
“আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন!”

“হ্যাঁ তুলেছি। এটা আরও আগে করা উচিৎ ছিল। তাহলে তুমি একটা নারীকে আর নিজের স্বামীকে এতটা অপমান করার সাহস পেতে না। নিজের চরিত্র আগে ঠিক করো তারপর নাহয় অন্যকে নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করলে।”

কৌড়ির চোখ টলমল করে ওঠল। ভাবনাতীত ঘটনা গুলো বরাবরই মানতে আমাদের সময় লাগে। কৌড়ির ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো।

তন্মধ্যেই কোথা থেকে যেন অলকানন্দার বাবা নিতাই দাস ছুটে এলেন। সবাইকে উপেক্ষা করে মেয়েটার বামদিকে কোমড়ে দানবীয় এক লাথি মেরে বসলেন। আকস্মিক এমন আক্রমণে দিকশূন্য অলকানন্দা। আছড়ে পড়ল মাটির বুকে। নাক দিয়ে গলগল করে তার বেরিয়ে আসতে শুরু করল রক্ত। নিতাই দাস কেমন এক হিংস্রতায় মেয়েটার চুলের মুঠি টেনে ধরলেন। যেন পুরোনো আক্রোশ মেটাচ্ছে। চুলের মুঠি ধরে সে বার কয়েক মাটির মাঝে মেয়েটার কপাল বারি দিলেন। অলকানন্দা গগন কাঁপিয়ে হৃদয় বিদারক চিৎকার করে ওঠল। কিন্তু মায়া হলো না পাষণ্ড বাবার। সে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে বেধড়ক মারধর করতে লাগলেন। থেমে থেমে বলতে লাগলেন,
“তুই আমার মেয়ে হয়ে মান সম্মান খেলি। শেষমেশ কি-না বে শ্যা পাড়ায় আসলি! কীভাবে পারলি তুই, কীভাবে?”

ব্যাথায় চোখ-মুখে আঁধার দেখছে মেয়েটা। তবুও বাবার পা জড়িয়ে বলতে লাগল,
“বিশ্বাস করো, বাবা, আমি এমন না। তুমি তো তোমার মেয়েকে জানো তাই না? বাবা, ও বাবা, তুমি অন্তত বিশ্বাস করো আমায়। এমন ভাবে মেরো না গো বাবা। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ও বাবা, তুমি তোমার নন্দাকে বিশ্বাস করো না?”

“না, করিনা। সর্বনাশী, কলঙ্কিনী।”

অলকানন্দা নামের শক্ত কঠোর মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদছে। সে কান্নার কী করুণ স্বর! খোদার দরজা অব্দি হয়তো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সে শব্দ অথচ মনুষ্য জাতির হৃদয় গলছে না। মেয়েটা বাবার পা ধরে আহাজারি করতে করতে বলল,
“বাবা, ও বাবা, যেই নন্দার হাত ধরে মেলা ঘুরেছ, যে নন্দাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছ, সেই নন্দাকে তুমি বিশ্বাস করবে না বাবা? ওরা তো আমার কেউ না কিন্তু তুমি তো আমার বাবা, তুমি আমার প্রতি এত নির্দয় হইও না বাবা। তোমার নন্দা এত নিচু হতে পারে বলো? যেই নন্দাকে একদিন মা বলে ডেকেছ তাকে এত নিচু ভাবতে পারছ তুমি, বাবা? এমন পাষাণ বুঝি বাবারা হয়?”

নিতাই দাসের পাষাণ মন কী একটু গললো? হয়তো গললো, তাইতো আরেকটা লাথি দিতে গিয়েও থেমে গেলেন, পিছিয়ে এলেন দু’পা। তার মনুষ্যত্বহীন স্বত্তাটা বোধহয় একটু মানুষ হতে চাইল।

অলকানন্দার নাক-মুখ দিয়ে গল গল করে বেরুচ্ছে রক্ত। নির্বাক প্রতিটি মানুষ। গ্রামবাসী হৈহল্লা করে সুরবালাকে বললেন,
“এর বিচার কী হবে, জমিদার গিন্নি? আপনার ঘরের বধূর এহেন কর্মের বিচার কী হবে?”

সুরবালা দেবী যেন হুট করে কঠিন হয়ে গেলেন। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বললেন,
”আপনারা কি চান?”

“ওর বিচার আমরা করব।”

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুরবালা দেবী জবাব দিলেন না। গ্রামবাসী যেন নিশ্চুপতাকেই সম্মতি ধরে নিলেন। যখন পুরো জনস্রোত এক দিকে ধাবিত হচ্ছিল, স্রোতের বিপরীতে একজন কথা বললেন। অলকানন্দার আদর্শ শিক্ষক মুমিনুল ইসলাম,
“কিসের বিচার করবে তোমরা? আগে ওর কথাটা তো শোনো।”

গ্রামের স্বনামধন্য আদর্শ শিক্ষকের কথাও আজ বড্ড ফিঁকে হলো। একজন যুবক বয়সের ছেলে তেড়ে এসে বলল,
“কোনো কথা হবে না আজ। কেউ যদি ওর পক্ষে কথা বলে তবে তাকেও পিটিয়ে মারা হবে।”

যখন সকলে এক স্রোতে গা ভাসাচ্ছে তখন সকলকে অবাক করে দিয়ে মনোহরের পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ওর বিচার আমরা করব। আমাদের বাড়ির বউ, আমরা বুঝে নিব।”

অলকানন্দা তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল মনোহরের পানে। এটাই তো চেয়েছিল মানুষটা আর আজ ভালো সাজছে! কৃষ্ণা তাকে ঠকালো! এমন বাজে ভাবে!

মনোহরের কথা শুনলো না কেউ। গ্রামবাসীরা সমস্বরে বলে ওঠল,
“না না, এই বিচার আমরা করব। নাহয় আমাদের মেয়ে বউরাও খারাপ কাজ করতে দু-বার ভাববে না।”

সুরবালা দেবীও মনোহরের উদ্দেশ্যে বললেন, “ওদের হাতে ছেড়ে দেও সবটা।”

“কিন্তু বড়োমা, আপনি তো জানেন বৌঠান….”

“সব জানা সঠিক হয়না, মনোহর।”

নিজের শাশুড়ির এমন উক্তিতে আরেকবার আশাহত হলো অলকানন্দা। কীভাবে মানুষ টা এত পাষাণ হলো!

মুমিনুল ইসলাম আবার বলল,
“ওর কথা না শুনে কোনো বিচার হবে না।”

কেউ ধরল না বৃদ্ধ লোকটার কথা। বরং যুবক বয়সের ছেলেটা কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“বিচার তো হবেই, কী করবেন আপনি?”

মুমিনুল অবাক দৃষ্টিতে চাইল ছেলেটার পানে। এই ছেলেটা তার শিক্ষার্থী ছিল একসময় অথচ সে নিজের শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে একবার ভাবলও না! মুমিনুল ইসলামের আদর্শ জীবনে গভীর ভাবে যেন কালো দাগ কেটে গেল এই ঘটনা। সেও জেদি হয়ে বলল,
“এই বিচার হবে না, কী করবে দেখি।”

“তবে আপনাকেও মার খেতে হবে।”

ছেলেটার কণ্ঠে তেজ। মুমিনুল ইসলাম নিজের শিক্ষকতা পেশায় এমন কলঙ্ক মানতে না পেরে বলল,
“ঠিকাছে, আমিও দেখি কেমন মারো।”

কথাটা শেষ করেই সে যেই না অলকানন্দাকে মাটি থেকে ওঠাতে নিবে তার পিঠে বিকট শব্দ করে কেউ আঘাত করল। বৃদ্ধ মুমিনুল মুখ থুবড়ে পড়ল মাটিতে। ঝাপসা চোখে দেখল তার হাতের ছায়ায় মানুষ হওয়া অমানুষটাই তাকে আঘাত করেছে। মুমিনুলের জেদ তখন আর দৃঢ় হল। সে আবার ওঠে অলকানন্দাকে ধরতে নিলে তার শরীরে আবার আঘাত করা হলো। এবার একটা আঘাতে থামেনি ছেলে গুলো। পর পর কয়েকটা আঘাত করলো বৃদ্ধার শরীরে। এতদিনের নিজের গড়া আদর্শে এই বেত্রাঘাত মানতে পারলেন না মুমিনুল ইসলাম। ঝাপসা চোখে চেয়ে মৃদু স্বরে বললেন,
“আমি ব্যর্থ।”

আঘাত থামাতে গিয়ে অলকানন্দাও বিরাট বারি খেল মাথায়। মুহূর্তেই ঘটে গেল একটা রক্তারক্তি কাণ্ড। বিধ্বস্ত অলকানন্দার হাত ধরে টেনে নদীর পাড়ে নিয়ে যেতে লাগল সকলে। বৃদ্ধ মুমিনুল পড়ে রইল মাটিতে। তার চক্ষু বেয়ে গড়িয়ে পড়ল মুক্তোর মতন অশ্রু। যে অশ্রুরা ব্যর্থ, ভাষাহীন। অলকানন্দা নিজের বিধ্বস্ত শরীর নিয়েও বারংবার চিৎকার করতে করতে বলল,
“মাস্টারমশাইকে কেউ বাঁচাও, মানুষটা মরে যাবে। বাঁচাও কেউ তাকে।”

_

ভোর হতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে। একটু ক্ষত-বিক্ষত ভোর। অলকানন্দাকে বেঁধে রাখা হয়েছে নদীর কিনারায় বহু পুরানো বটগাছে। অলকানন্দার ভয়ানক পাপের শাস্তি ঠিক করা হয়েছে মৃত্যু দণ্ড। জীবিত অবস্থায় তার শরীরে আগুন জ্বালানো হবে, যেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত এইখানেই হয়ে যায়। খুব অবাক করা বিষয় হলো, বিহারিণী মহলের কেউ এখানে নেই। তাদের এখানেই আসার কথা কিন্তু কেউ এলো না। কেন এলো না এটা সকলের অজানা। হয়তো নিজেদের আপন মানুষের এমন শাস্তি তারা মানতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কী অলকানন্দা তাদের আপন!

নিতাই দাস দূরে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ। অলকানন্দার শরীরে শক্তি নেই। মৃত্যু সন্নিকটে জেনেও সে আর আহাজারি করছে না। আপন মানুষের প্রবল ঘৃণা যে মৃত্যুর থেকেও কষ্টকর ছিল, তা সে উপলব্ধি করে ফেলেছে। মৃত্যু যেখানে অনিবার্য সেখানে বাঁচতে চাওয়াটাও বৃথা। তাই আর কোনো রকমের বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছে সে প্রকাশ করবে না।

ভোরের আলো ফুটতেই সকলে তৈরী হয়ে গেলো। ভীড় বাড়ল দ্বিগুণ। যে মেয়েটার হাতে পুরো গ্রামবাসী ছিল, যাদের ভালো করার জন্য মেয়েটা ইংরেজি সাহেবদের সাথে অব্দি ঝামেলা করেছে অথচ সেই গ্রামবাসী তার মৃত্যু দেখতে কেমন উন্মুখ। আসলে এই ঘটনা একটা কারণ মাত্র, গ্রামবাসীদের মতের বিপরীতে গেলে কী হতে পারে তার শাস্তি, সেটাই বোধহয় আসল কারণ। অলকানন্দা হাসল। অদ্ভুত ভাবে মিস্টার স্টিফেনের সেই কথাটা তার কানে বাজছে, ‘রাজনীতিতে সত্যিই সে বড্ড কাচা’ নাহয় এমন করে পুড়তে হতো!

সেই কাঙ্খিত সময় চলে এলো। মৃদু মন্দ বাতাসে মশালের আগুন দুলছে, যে আগুন কিছুক্ষণের মাঝে পুড়িয়ে দিবে বাঁচতে চাওয়া একটি মেয়ের অস্তিত্ব। অলকানন্দা চোখ বন্ধ করল। চোখের উপর ভেসে এলো নবনীলের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। সে বিড়বিড় করে বলল,
“আমাদের আর দেখা হবে না, নবনীল। আপনার নির্বাসিত অলকানন্দার গল্প এখানেই শেষ।”

#চলবে

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

বিশেষ পর্ব:

ভোরটা বরাবরের মতন মিঠে নয়। আলো উঠেছে আকাশে কিন্তু রঙিন হয়নি এই সকাল। একটা দমবন্ধকর ভাব প্রকৃতিতে। ঝড় আসার আগ মুহূর্তে যেমন গুমোট থাকে প্রকৃতি ঠিক তেমন অবস্থা। হেমন্তকালে ঝড় সচারাচর আসার কথা না, কিন্তু কে জানে! অলকানন্দার দুঃখে হয়তো তারা বেশিই কাতর। অলকানন্দা নিভু নিভু চোখে দেখছে, তাকে জ্বালানোর আগেই মশালটা কেমন জ্বলছে! অলকানন্দা সে দিকেই তাকিয়ে আছে। সে তো একা আসতে চায়নি এখানে, ভেবেছিল নিজের শাশুড়িকে জানিয়েই আসবে, কিন্তু সুরবালা দেবী তো তাকে কথা বলার সুযোগই দেয়নি। তার উপর কৃষ্ণপ্রিয়ার আকুতি মিনতিতে কোনো খুঁত ছিল না। অলকানন্দা বুঝতেই পারেনি কারো ভালো করতে চাওয়াটা যে এত বড়ো অন্যায়।

অলকানন্দা ক্লান্ত হয়ে এলো। অস্ফুটস্বরে বলল,
“আমাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার হলে এখনই জ্বালাও, পরে যদি তোমরাই জ্বলে যাও!”

গ্রামবাসী অলকানন্দার চোখ-মুখে একটা তেজ দেখতে পেল। একজন হৈ হৈ করে বলল,
“হ্যাঁ, জ্বালিয়ে দে। গ্রামে যতক্ষণ এ পাপ থাকবে ততক্ষণই সমস্যা।”

সেই একজনের কথায় সম্মতি দিল আরও কয়েকজন। অতঃপর একটা লোক মশাল নিয়ে এগিয়ে এলো। তার হাত কাঁপছে না মোটেও। সে নির্দ্বিধায় আগুনটা অলকানন্দার হাতের কাছে নিয়েছে, কিছুটা আগুনের আঁচ হাতেও লেগেছে, কিন্তু পুরোটা লাগানোর আগেই সেখানে উপস্থিত হলো অলকানন্দার আশার আলো হয়ে ভিনদেশী সেই সাহেবরা। অ্যালেন তো বিস্মিত কণ্ঠে বলে ওঠল,
“হেই, স্টপ। হোয়াট আর ইউ ডুয়িং ম্যান?”

ইংরেজি সাহেবদের দেখেই থেমে গেল লোকটা। আমতা আমতা করে বলল,
“সাহেব, এই কাজে বাঁধা দিবেন না। এই মেয়েটা অনেক বড়ো পাপ করেছে।”

অ্যালেন প্রায় ছুটেই এলো অলকানন্দার ঝিমিয়ে আসা দেহটার দিকে। বিচলিত কণ্ঠে বলল,
“পাপ! কী পাপ? কী করিয়াছে উনি?”

গ্রামবাসী এবার প্রথম থেকে সবটা খুলে বলল সাহেবদের। অ্যালেনসহ মিস্টার স্টিফেন সকলেই মনযোগ দিয়ে শুনলো সবটা। কথা শেষ হতেই অ্যালেন ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“এই মেয়েটা এটা করিতে পারেনা কখনোই। এটা অসম্ভব। আপনাদের ভুল হইয়াছে।”

অ্যালেনের নরম কথার বিপরীতে গ্রামবাসী হুঙ্কার দিয়ে বলল,
“এটাই হয়েছে। আমরা হাতে-নাতে ধরেছি। আপনারা এখানে কোনো কথা না বললেই ভালো হবে, নয়তো….”

“নয়তো কী?” প্রশ্নটা ছুঁড়ে দু’কদম এগিয়ে এলো মিস্টার স্টিফেন। চোখ মুখ তার সবসময়ের মতনই রূঢ়। স্টিফেনের শক্ত প্রশ্নে আমতা-আমতা করে ওঠলো সকলে। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোক এগিয়ে এসে ক্ষীণ স্বরে বলল,
”আমাদের গ্রামে এমন অন্যায় কাজ হলে আমরা শাস্তি দিয়েই থাকি, সাহেব। আপনারা তো ভিনদেশী মানুষ, এসব কিছুই জানেন না। যদি না আমরা ওকে শাস্তি দেই তবে আমাদের ঘরের বউ মেয়েরাও অন্যায় করতে পিছ পা হবেনা।”

“ও, তাই নাকি! তা এই অলকানন্দা যখন ভালো কাজ করেছে তখন আপনার বাড়ির মেয়ে বউ তা দেখিয়া কতটুকু ভালো কাজ করিয়াছে শুনি?”

স্টিফেনের কথার জালে মোটামুটি সকলেই ফেঁসে গিয়েছে। কিন্তু তারা হারবার পাত্র না। টগবগে এক যুবক তো তেড়ে এসেই বলল,
“সাহেব, আমরা ওকে পুড়িয়েই ছাড়ব।”

ছেলেটার কথা শেষ হতেই স্টিফেনের শক্ত বুটের লাথি গিয়ে পড়ল ছেলেটার বুকে। যেটা না সামলাতে পেরে ছেলেটা মুখ থুবড়ে পড়ল। স্টিফেনের চোখ-মুখ আরও ভয়ঙ্কর হলো। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল,
“কে আগুন লাগাবে আসুন, আমিও দেখিব আজ উনার কথা না শুনিয়াই কীভাবে উনাকে আপনারা শাস্তি দেন।”

ছেলেটার এক লাথিই যেন গ্রামবাসীর উথাল-পাতাল করা থামিয়ে দিল নিমিষেই। কেউ আর সাহস পেল না কিছু বলার। অ্যালেন স্টিফেনের নির্দেশে এগিয়ে গেল অলকানন্দার কাছে। উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল,
“বিউটিফুল লেডি, শুনিতেছেন? আপনার কী সেন্স আছে এখনো?”

অলকানন্দা বহু কষ্টে উপর-নীচ মাথা নাড়াল। সেটা দেখেই অ্যালেন প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“আপনি এখানে কেন এসেছিলেন? কী কারণে? আপনি আমাদের বলিতে পারেন। ভয় পাইবেন না, আমরা আছি। বলুন আপনি।”

অলকানন্দা ভরসা পেল। নিভু নিভু চোখে অ্যালেনের দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, “আমার জা কৃষ্ণপ্রিয়াকে এখানে আনানোর ব্যবস্থা করুন। আমি সকল প্রশ্নের উত্তর দিব।”

অলকানন্দা কথাটা বলতে দেরি অথচ স্টিফেনের নির্দেশ দিতে দেরি নেই। সে তার সাথের একজনকে দ্রুত আদেশ দিল কৃষ্ণপ্রিয়াকে যে কোনো মূল্যে এখানে উপস্থিত করার জন্য। স্টিফেনের আদেশ পেতেই ছেলেটা ছুট লাগাল। গ্রামবাসী তখন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। স্টিফেন মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া ছেলেটার মুখে নির্দয়ের মতন আরেকটা লাথি মেরে এগিয়ে গেল অলকানন্দার দিকে। গ্রামবাসী এখন মোটামুটি ভীত। সাহেবদের ক্ষমতার কাছে যে তারা নেহাৎই তুচ্ছ সেটা তাদের ভালো করেই জানা আছে।

স্টিফেন অলকানন্দার কাছে এসেই তার দঁড়িটা খুলে দিল। ক্লান্ত শরীরে বিধ্বস্ত মেয়েটা বসে পড়ল সেই জায়গাতেই। স্টিফেন তার সাথে আসা আরেকটা ছেলেকে নির্দেশ দিয়ে জলও আনাল। অলকানন্দার নাক-মুখে শুকিয়ে আছে রক্তের স্তূপ। স্টিফেন জলটা অলকানন্দার দিকে এগিয়ে দিয়ে কঠিন কণ্ঠে বলল,
“ড্রিংক ইট।”

অলকানন্দার শরীর এত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে জলটুকু ধরার ক্ষমতাটুকু তার হচ্ছিল না। তবুও সে কম্পনরত হাতে জলটা ধরার চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থ হলো। স্টিফেন অলকানন্দার এত করুণ অবস্থা দেখে নিজেই জলের পাত্রটা অলকানন্দার ঠোঁটের সামনে ধরল। জলটা পেতেই সে গটগট করে পান করে ফেলল যেন কত বছরের পিপাসু মেয়েটা! যে কারোরই মায়া হবে এই বিধ্বস্ত অলকানন্দাকে দেখে।

অলকানন্দার শরীর ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তা দেখে অ্যালেন ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“উনাকে নিয়ে চলো স্টিফেন। উনি আর বেশিক্ষণ এমন করিয়া পড়িয়া থাকিলে বাঁচিবে না।”

গ্রামের মানুষ কথাটা শুনতেই নড়বড়ে মনে বাঁধা দিল। দু একজন সাহস করে বলল,
“ওর শাস্তি হবে, সাহেব।”

অ্যালেন ক্ষুব্ধ হলো ঠিকই কিন্তু তা প্রকাশ করার আগেই রণমুর্তি ধারণ করল স্টিফেন। তার সাথের বিশাল দেহযুক্ত ছেলে গুলোকে নির্দেশ করে বলল,
“ওদের দু’জনকে এখনই এই গাছের সাথে বাঁধো। আর এই সানশাইন আই মিন নন্দার শরীরে যত আঘাত আছে সব ওদের শরীরে ফেলো। তারপর ঠিক যতটুকু শাস্তি ওরা দিতে চেয়েছি ততটুকু শাস্তিই ওদের জন্য ধার্য করে। কুইক। গো।”

স্টিফেনের নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথেই ছেলেগুলোকে ধরে ফেলল স্টিফেনের দেহরক্ষীরা। কোনো বাঁধা নিষেধ মানল না। অলকানন্দা কিছু বলতে চাইল, হয়তো এ অবস্থাতেও গ্রামের মানুষদের ভালোটাই চাইতো কিন্তু স্টিফেনের ভয়ঙ্কর দৃষ্টির কাছে সে হার মেনে গেল। তন্মধ্যেই স্টিফেনের আরেক দেহরক্ষী ছুটে এলো যাকে পাঠানো হয়েছিল বিহারিণী মহলে। সে ছুটে এসে প্রায় হাঁপিয়ে ওঠা কণ্ঠে বলল,
“সাহেব, কৃষ্ণপ্রিয়া দেবীকে আনতে পারলাম না। কারণ সে বেঁচে নেই। আজ ভোরেই গলায় কলসি বেঁধে তাদের পেছনের বড়ো দিঘিটাতে ডুব দিয়েছে।”

#চলবে

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

১৯.

হেমন্তের আকাশে মেঘেদের রঙ বদল ঘটেছে। সাদা তুলোর মতন কোমল, নরম মেঘগুলো কালো, ঝাপসা, ধোঁয়াশা রূপ ধারণ করেছে। প্রকৃতিতে বাজছে ঝড়ের আগমনী ঢাক। হা হুতাশ শুরু করে দিয়েছে পশু পাখি। একটা এলোমেলো ভাব যেন! অলকানন্দার বিমূঢ় নয়ন। প্রাণ নেই তার সেই নয়ন যুগলে। সে মানতে পারছে না কৃষ্ণপ্রিয়ার বিদায়। যেই গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজের সকল কলঙ্ক মুছে ফেলতে পারতো হঠাৎ করে শুনলো সেই গঙ্গা ই নাকি পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। কে মুছাবে তবে তার কলঙ্ক? কে ঘুচাবে অপবিত্রতা? শেষ মুহূর্তে সে কী বাঁচতে চেয়েও বাঁচতে পারলো না! অলকানন্দার মাথা ঘুরে এলো। তার শরীর যেন আর সহায় দেয় না। মনে হয়, মরে গেলেই যেন সকল দুঃখের সমাপ্তি হবে। এত এলোমেলো জীবন, এত কালি মাখানো কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকাও যে দায় হয়ে যাবে!

অ্যালেন হয়তো বুঝে বঙ্গ নারীর সম্মান হারানোর যন্ত্রণার আকুলতা। সে ভরসা দিয়ে বলে,
“ডোন্ট ওরি। আমরা আছি।”

অলকানন্দা ভরসা পায় না। কৃষ্ণপ্রিয়ার আকস্মিক বিদায় ভাবায় তার চিত্ত। নিজে তো সতী হয়েই মারা গেল তবে সকল কলঙ্কের ভাগীদার কেন তাকে করে গেল? এতটা আক্রোশ তো মেয়েটার কখনো ছিল না। তবে এ কেমন নিষ্ঠুরতা! অলকানন্দার শ্বাস প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়। তার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, এই বেঁচে থাকায় কোনো মহত্ত্ব নেই কেবল ধিক্কার ছাড়া। স্টিফেন জোর গলায় তখন শব্দ তুলে,
“অলকানন্দা আমাদের সাথে যাবে।”

গ্রামবাসীর মনে একটা নিবিড় আক্রোশ থেকে থেকে যেন কঠোরতার হাঁক পারে। এমন করে তারা হেরে যেতে পারেনা। তাদের এক পাক্ষিক যুদ্ধে তারা যেন জয় দেখতে চায়। তাই জীবন-মরণ সংশয় নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলে,
“কী পরিচয়ে ও যাবে আপনাদের কাছে? রক্ষিতা?”

স্টিফেন ক্ষুব্ধ হয়। আরও কঠোর হয় তার বিচার প্রকৃতি। জনসম্মুখে এই ধিক্কার ছুড়ে মারা লোক গুলোর জিহ্বা কাটতে নেয় কিন্তু থামিয়ে দেয় অলকানন্দা। সেই নিভু নিভু কণ্ঠেই আবদার করে,
“ওরা সহজ সরল মানুষ, সাহেব, ওদের ছেড়ে দেন।”

স্টিফেন ভীষণ তাচ্ছিল্যে হাসে। কিন্তু শুনে না কারো বারণ। জনসম্মুখে নির্দয়ের ন্যায় কেটে ফেলে লোক গুলোর জিহ্বা। ওরা কী ভীষণ যন্ত্রণায় হাহাকার করে ওঠে। কাঁপে গ্রামবাসীর বুক। এমন নিষ্ঠুরতা দেখে তাদের দমও বন্ধ হয়ে আসে। অলকানন্দার ভীতু ভীতু নজর বন্ধ হয়ে আসে। কাঁপতে থাকে তার চিকন, সরু ঠোঁট গুলো। স্টিফেন সেদিকে তাকিয়ে গাম্ভীর্য নিয়ে বলে,
“আপনার প্রজারা হৃদয়হীন। এমন প্রজাদের জন্য মহৎ হওয়া অন্যায়। ভালো মানুষ হওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ভালোমানুষি ভালো নয়।”

অলকানন্দা গাছের সাথে নিবিড় ভাবে হেলান দিয়ে থাকে। কতক্ষণ সবটা একদম চুপচাপ থাকে। গ্রামবাসীর বুক কাঁপে। সাহেবদের সাথে যে তারা কোনো জোরই খাঁটাতে পারবে না সেটা তাদের ভালোই জানা। তারা আর চেষ্টাও করেনা কোনো শব্দ বলার। কিন্তু স্থানও ত্যাগ করেনা। তাদের একরোখা স্বভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা এর শেষটা দেখতে চায়। অলকানন্দাও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“সাহেব, মানীর অপমানের চেয়ে মৃত্যু উত্তম। আমার দেহে যা কলঙ্ক লেগেছে তা আর বাড়াতে চাইনা। এত অসম্মান নিয়ে যে বেঁচে থাকা দায়!”

অলকানন্দার এহেন সময়ে এমন ভাব উদয় দেখে অ্যালেন কিছুটা বিরক্ত হলো, বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“আপনি কী বাঁচিতে চান না?”

“চাই, তবে সম্মানের সাথে। যাদের একসময় এত ভালোবাসেছি, যাদের কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়েছি, তাদের চোখেই ঘৃণিত হয়ে বেঁচে থাকাটা অনেক কষ্টের সাহেব।”

“আপনি তাদের কাছ থেকে সত্যিই ভালোবাসা পেয়ে ছিলেন?”

স্টিফেনের রাশভারী কণ্ঠের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা অলকানন্দা। হতাশার শ্বাস বেড়িয়ে আসে তার বুক চিরে। সে নিজে নিজেই প্রশ্ন তুলে, সত্যিই কী ভালোবেসেছিল তারা!

যখন একটা সঠিক পদক্ষেপের আশায় সকলেই দিকভ্রষ্ট, ঠিক তখন অ্যালেন স্টিফেনকে গোপনে ডাকে। তাদের মাঝে যেন কী নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। অলকানন্দা সেদিকে না তাকিয়েই আশেপাশে খুঁজতে থাকে নিজের বাবাকে। বাবা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন তাকে দেখা যাচ্ছে না। কেন দেখা যাচ্ছে না? তবে কী বাবা কন্যার মৃত্যু দেখার সাহস করতে পারলেও বেঁচে থাকাটা দেখার সাহস করতে পারেনি? বাবা নামক শব্দটা আজ এত কলুষিত কেন! অলকানন্দার বুক ভার করে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। শরীরে ভোঁতা যন্ত্রণা হয়। কী অসহ্যকর সে যন্ত্রণা! অলকানন্দা মৃদু স্বরে ব্যাথায় শব্দ করে। মাথা থেকে পায়ের নখ অব্দি তার ব্যাথা। এত মার সে কখনোই খায়নি। এত আঘাত সে কখনো অনুভব করেনি। মনে মনে সে তেজস্বিনী রূপ ধারণ করে, একটা নিবিড় রাগে সে বিড়বিড় করে। আজ বেঁচে ফিরতে পারলে তার সবটুকু ভালো থাকা যারা কেড়েছে তাদের বেঁচে থাকাটা সে মুশকিল করে দিবে। এই পৃথিবী ভালোর মূল্য দিতে জানেনা।

অ্যালেন আর স্টিফেন বেশ অনেকক্ষণ কি নিয়ে কথা কাটাকাটি করে অবশেষে আবার সকলের মাঝে উপস্থিত হলো। সকলে বেশ আগ্রহ নিয়েই তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিশ্চয় কিছু একটা ফলাফল এখন ঘোষণা করা হবে। যেটা নির্ধারণ করবে অলকানন্দার ভাগ্যের চাঁকা। আর ঠিক তাই হলো। সকলের টান টান অপেক্ষাকে বিশ্রাম দিয়ে অ্যালেন উচ্চারণ করল শব্দযুগল,

“আপনারা উনাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাইতে দিবেন না কারণ আমরা উনাকে নিয়া গেলে উনার পরিচয় রক্ষিতা হইবে তাই তো? তবে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়াছি, স্টিফেনের সাথে আজই উনার বিবাহ কার্য সম্পাদন করিব। আর তারপরই তাকে আমরা আমাদের বাড়িতে নিয়া যাইব। এতে আপত্তি নেই, আই হোপ?”

এমন একটা সিদ্ধান্তের জন্য কেউই বোধহয় প্রস্তুত ছিল না। সকলের চোখে মুখে বিস্মিত ভাব দেখা দিল। স্বয়ং অলকানন্দাও যেন আকাশ থেকে পড়েছে। অ্যালেনের চোখ-মুখ কোমল থাকলেও স্টিফেন বরাবরের ন্যায় কঠোর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ-মুখে তার কিসের এক দাম্ভিকতা! গ্রামবাসীর মাঝেই খুব প্রবীণ একজক কিছুটা সাহস করেই বলল,
“অলকানন্দা তো বেধবা, তার উপর আপনারা ভিন্ন ধর্মের, জাতের। এ কী বিচার আপনাদের!”

সকলেই বৃদ্ধার প্রশ্নে মাথা নাড়ল। সত্যিই তো, বেধবা মেয়েদের তো বিয়ে হয়না। তার উপর আবার ভিন্ন জাত! এ কী অনাসৃষ্টি কাণ্ডকারখানা!

অ্যালেন দুই পকেটে তার দু’হাত গুঁজল। অলকানন্দার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
“হেই বিউটিফুল লেডি, আমি আপনাকে এক্সপ্লেইন করছি। প্রথমত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করিয়াছেন। এর আইনসম্মত সেটা, তাই এটাই আপনার কোনো বাঁধা নেই। দ্বিতীয়ত, স্টিফেনের বাবা ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর ওর মা বাঙালি এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী। আর সেই সূত্রে স্টিফেনের বড়ো হওয়াটা ছিল তার মায়ের ধর্মে, সংস্কৃতিতে। যার জন্য স্টিফেন বাংলা ভাষা এত ভালো ভাবে বলিতে পারে। স্টিফেন সনাতন ধর্মেই সকল নিয়ম কানুন করে। আপনার আর কোনো প্রশ্ন আছে?”

অলকানন্দা দিক শূন্য হলো। সে সুদর্শনকে হয়তো স্বামী হিসেবে মানেনি কিন্তু ছিল তো স্বামীই, এটা অস্বীকার করার জোঁ নেই। তাছাড়া শুধু অলকানন্দা কেন, এ সমাজের কোনো মেয়েই দ্বিতীয় বার বিয়ে করার কথা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনা, আর সেখানে এই ভিনদেশী পুরুষকে বিয়ে করতে হবে! এটা আদৌও সম্ভব! অলকানন্দা দুর্বল কণ্ঠে বলল,
“অসম্ভব।”

স্টিফেন কড়া চোখে চাইল অলকানন্দার পানে। অ্যালেন আশ্বাস দিল স্টিফেনকে খুব গোপনে। তারপর ধীরে অলকানন্দার কাছে গিয়ে বেশ বিজ্ঞ কণ্ঠে বলল,
“একটু বাঁচার জন্য মানুষ পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট কাজও করিতে রাজি হইয়া যায়, সেখানে তো এটা সামান্য বিয়ে। এই বিয়ে যদি আপনার মঙ্গল কামনাই করে তবে কেন করবেন না? কোনো কিছুই আমাদের জন্য অসম্ভব নহে। আমরা চেষ্টা করিলেই পারিব। আর, আজ আমরা যদি আপনাকে এখানেই রাখিয়া চলিয়া যাই তবে আপনার আর প্রাণে বাঁচা হইবে না। মানুষ নিজেকে বাঁচানোর জন্য কত কিছুই করে, আপনি কেন পারিবেন না?”

অ্যালেনের কথা যুক্তিযুক্ত কিন্তু তা হজম হলো না অলকানন্দার। সে বেশ সন্দেহবশত প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“আপনারা আমার এত ভালো করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? কী লাভ আপনাদের?”

“আপনি খুব সাহসী নারী আছেন। এমন একটা গোল্ড হারাইতে দিতে পারিনা। আপনার এতটুকু বয়স অথচ তেজ দেখিলে যে কেউ অবাক হইতে বাধ্য। আর সেই জন্যই আপনাকে বাঁচাইতে চাইতেছি। এখন আপনার নিজের নিজেকে হ্যাল্প করিতে হইবে। নাহয় আপনি কিন্তু বাঁচিতে পারিবেন না।”

অ্যালেনের কথা গুলো অলকানন্দার মস্তিষ্ক জুড়ে উথাল-পাতাল ঢেউ তুলল। সত্যিই তো! এ ছাড়া যে তার গতি নেই। এখানে সে থাকলে বাঁচতে পারবে না কিন্তু তাই বলে বিয়ে! অলকানন্দা স্টিফেনের দিকে চাইল। লোকটার চোখ-মুখ আগের মতনই শক্ত, কঠোর। চোখেদের নিজস্ব কোনো ভাষা নেই, কেমন প্রাণহীন তারা! এমন একটা মানুষকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া আদৌও যুক্তিযুক্ত!

#চলবে

#অলকানন্দার_নির্বাসন
#মম_সাহা

১৯ এর বিশেষ পর্ব:

হেমন্তের আকাশে আজ বোধ করি সকল নিয়ম অমান্য করেই অবাধ্য বর্ষণ লীলা ঘটতে শুরু করলো। যেই বর্ষণের আশীর্বাদে শীতল হলো গ্রাম থেকে শহর সবটুকু অঞ্চল। তুলোর মতন ভাসা ভাসা মেঘ গুলোকে আর দেখা গেল না। পাংশুটে এক রঙ গগন বক্ষ জুড়ে নৃত্য জুড়িল। অঘোষিত নিশ্চুপতা নিয়ে অলকানন্দা দাঁড়িয়ে রইলো নিজের সদ্য জন্মানো শ্বশুরবাড়িতে। তার পাশে অ্যালেন দাঁড়ানো, অথচ যাকে সে বিয়ে করেছে- মিস্টার স্টিফেন. সে লোকটার এক চুলও দেখা নেই। সাদা শাড়িতে বৈধব্যের চিহ্ন, আর সেই চিহ্ন ঘোচাতেই হয়তো তার কপালের লাল টকটকে সিঁদুরটা নিজের শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। অলকানন্দাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো বেশ অনেকটাক্ষণ। কার জন্য রাখা হলো, কেন রাখা হলো এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। তবুও সে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদার্থ কাকের মতন শূন্য চোখে দাঁড়িয়ে রইলো। তার হয়তো পেটের ক্ষিধে না, মনের ক্ষিধে। একটু বাঁচতে চাওয়ার ক্ষিধে।

কিন্তু অন্দরমহলে নতুন বউ এসেছে- কথাটা ছড়িয়ে যেতেই সকল ভীড় জমা হলো। সবই কর্মচারীদের ভীড়। নানান রকমের মানুষ। অ্যালেন শীতল কণ্ঠে বলল,
“এরা আমাদের সার্ভেন্ট। আসুন, দাঁড়িয়ে আছেন কেন বাহিরে?”

অ্যালেনের প্রশ্ন যেন গুরুতর অবাক হলো অলকানন্দা। চোখ-মুখ পিটপিট করে বলল,
“আপনিই তো দাঁড় করিয়ে রেখেছেন কিছু না বলে। আচ্ছা, বরণ হবে না?”

“বরণ!”

অ্যালেন যেন আকাশ থেকে পড়ল। ‘বরণ’ কথাটা সে এই জীবনে শুনেনি বোধহয়। তার চোখ-মুখ তা-ই বুঝালো। অলকানন্দা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। নতুন বউ হয়ে নিজের মুখে বরণের কথাটা বলাটা কী তার নির্লজ্জের মতন কর্মকান্ড হলো! তার কী উচিত হয়নি এটা বলা? অলকানন্দা যখন অপ্রত্যাশিত লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল তখন অ্যালেন ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

“লজ্জা পাচ্ছেন কেন!”

অলকানন্দা বুঝল, হয়তো বরণ নামক সংস্কৃতিটার সাথে পরিচিত নয় অ্যালেন। নাহয় জেনেও আবার সে জিনিসটা জানার কৌতূহল নিয়ে কখনোই মানুষটা প্রশ্ন করত না। অলকানন্দা খুব গোপনে হতাশার শ্বাস ফেলল। সেও কেমন বোকা! এত অসম্মানের পর কেউ তাকে কেবল বাঁচানোর জন্য বিয়ে নামক চুক্তি সম্পন্ন করল আর সে কি-না বরণও ভেবে ফেলেছে! কী বিলাসিতা!

অলকানন্দা যেই না বাড়ির ভিতরে চরণ যুগল ফেলতে নিবে ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন লাল টকটকে এক চকচকে শাড়ি পরে উপস্থিত হলো একটি মিষ্টি বউ। যার চোখের নিচে ইতিহাসে বিধ্বস্ত হওয়া কলুষিত অতীতের ন্যায় কাজল লেপ্টানো। কী গাঢ় তার অন্ধকার! মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য মরিচীকা হাসছে নিরীহ নয়ন জোড়ার কাজলে। যে ইতিহাস লুকায়িত, খুব আড়ালে রাখা। মানুষটার সিঁদুর কপাল জুড়ে লেপ্টানো, চুলের খোঁপায় সতেজ বেলীমালা গাঁথা। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মানুষটার সকল লেপটানো সাজেও কেমন যেন মুগ্ধতা। যেন সৃষ্টিকর্তার বড়ো কোমল এবং করুণ সৃষ্টি।

অলকানন্দার দৃষ্টি যখন মুগ্ধ, ঠিক তখনই মেয়েটা ছুটে এলো, কেমন অদ্ভুত এবং তাড়াহুড়ো কণ্ঠে কর্মচারী এক মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই তোরা উলু দে, শঙ্খ ফু দে। নতুন বউ এয়েছে (এসেছে) অথচ তোরা কিচ্ছুটি করিসনি! কেমন মেয়েছেলেরে তোরা? নতুন বউকে যে বরণ করতে হয় জানিস নে? সব গুলো অকাজের। তোদের রেখেছে কেন? আজই বিদেয় করবো তোদের।”

মুগ্ধ করা মেয়েটির কন্ঠ কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে আসছে। সে যে স্বাভাবিক নয় তা তার অদ্ভুত আচরণেই বেশ পরিলক্ষিত। অলকানন্দা বিস্মিত নয়ন জোড়া মেলে তাকিয়ে দেখছে সে মেয়েকে। এত সুন্দর মেয়ে! যেন বিধাতা বড়ো মায়া করে বানিয়েছে তাকে। অথচ মেয়েটার এমন অবস্থা কেন! তার কী মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না?

অলকানন্দার ভাবনার মাঝেই অ্যালেন উচ্চ এবং কর্কশ স্বরে বাড়িরই এক কর্মচারীকে ডাকল,
“দেবু, এই দেবু, তুমি কোথায় আছো? ও বাহিরে কী করিতেছে?”

অ্যালেনকে সচারাচর এত কর্কশ কণ্ঠে কথা বলতে দেখা যায় না। অলকানন্দা ভারী বিস্মিত হলো। তার মাঝেই এলোমেলো সেই নারীটা দূর দূর করে তেঁড়ে এসে বলল,
“এই, তুমি কিছু বুঝো বাপু আমাদের রীতিনীতির ব্যাপারে? একটা চড় দিবো বড়ো মানুষের মুখে মুখে কথা বলো। আমি তোমার বড়ো হই না? আর নতুন বউ এলে তো বরণ করতেই হয়। জানোনা তুমি? নতুন বউ, দাঁড়া দেখিনি, তোকে একটু বরণ করি।”

অ্যালেন হয়তো আবার ধমক দিতো কিন্তু তাকে থামিয়ে দিল অলকানন্দা। দুর্বল কণ্ঠে বলল,
“আহা, করুক না একটু বরণ।”

অ্যালেন কথা বলল না। ভেতরে চলে গেল গটগট পায়ে। হয়তো দেবু নামের মানুষটাকে খুঁজতেই। সেই অস্বাভাবিক বউটা এগিয়ে এলো। অলকানন্দা মেয়েটার দিকে তাকাল, বাইশ কিংবা তেইশ বছরের একটা মেয়ে হবে। অ্যালেনের থেকে কমপক্ষে আট নয় বছরের ছোটো হবে, কিন্তু তবুও মেয়েটা নিজেকে বড়ে দাবী করল। কিন্তু কেন? কে এই মেয়ে!

অলকানন্দার ভাবনার মাঝে চারপাশে শঙ্খধ্বনি বেজে উঠলো, মেয়েটা তার কাঁপা কাঁপা হাতে কী শূন্য চোখে বরণ করল অলকানন্দাকে। অলকানন্দার ঘোর লেগে এলো। কেমন এলোমেলো দৃষ্টি মানুষটার। মেয়েটা সাজানো বরণ ডালা হাতে রেখেই আহ্লাদী স্বরে বলল,
“এই নতুন বউ, পা রাখ দেখি এই দুধের থালাটায়। দেখি রাখ পা।”

অলকানন্দা তার পায়ের সামনে পেতে রাখে দুধ আলতা মেশানো থালাটার দিকে তাকাল। কতগুলো গোলাপ পাপড়ি ভাসছে সেখানে। অলকানন্দা সেখানে পা রাখতেই আৎকে উঠে গগন কাঁপিয়ে একটি চিৎকার দিলো। তার সামনের এতক্ষণ মুগ্ধতা দান করা মেয়েটা কেমন পাষাণ হয়ে ওঠল। বরণ ডালাটা ছুঁড়ে মারল অলকানন্দার দিকে। তার প্রদীপের আগুন গিয়ে অলকানন্দার সাদা থানে লালাভ অগ্নিরূপ ধারণ করল। মুহূর্তেই সবটা গোছানো এলোমেলো হয়ে গেল। চিৎকারে ছুটে এলো অ্যালেন। ঐ অস্বাভাবিক মেয়েটাকে ভয়ঙ্কর ভাবে হাসতে দেখে অ্যালেন আরও ক্ষুব্ধ হলো। মেয়েটাকে বেশ ধাক্কা দিয়ে ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলল,

“কী করলে এটা বিহারিণী! কী করলে!”

অলকানন্দার ভীত, উত্তেজিত মন থেমে গেল। সে অদ্ভুত কন্ঠে কেবল উচ্চারণ করল, “বিহারিণী!”

#চলবে

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে