শিশির বিন্দুর জীবন পর্ব-০৬

0
66

#শিশির_বিন্দুর_জীবন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৬

লোকটা আফরিনের কাজে হো হো করে হাসতে থাকে পাগলের মতো। তারপর পরক্ষণেই চোখ মুখ শক্ত করে বলল
-“তোমাকে তো আমার কাছেই আসতে হবে বেইবি। তুমি যাই বলো আর তাই বলো।”

———————-

আফরিন নাম্বাটাকে ব্লক করে চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইলো। বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল রান্না ঘরে। রান্না ঘরে ওর মা রান্না করছিল। আফরিন ওর মায়ের পাশে গিয়ে দাড়ালো। কাজে সাহায্য করে ওর মায়ের। কলিং বেল বাজতেই ছুটে যায় আফরিন। দরজা খুলেই মুচকি হেসে বলল
-” আসসালামু আলাইকুম,আব্বু।”

আফরিনের বাবা মুচকি হেসে আইসক্রিমের পেকেটটা মেয়ের হাতে দিয়ে রুমে চলে গেলেন। আফরিন ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে আইসক্রিমের পেকেটটা ফ্রিজে রেখে আসে। ঠান্ডা পানি নিয়ে এগিয়ে যায় বাবার দিকে। আফরিনের বাবা ইশরায় ওকে ওনার পাশে বসতে বললেন। আফরিনও ওর বাবার ‍পাশে বসলো। ওনি আফরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
-“মা,পরীক্ষাগুলো কেমন গেল?”

আফরিন ঠোঁটে হাসি নিয়েই বলল
-” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই হয়েছে আব্বু।”

আফরিনের কথা ওর বাবা ওকে আদর করে বললেন
-“যাও মা। রেস্ট নেও গিয়ে।”

আফরিন পানির খালি গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল
-“আচ্ছা আব্বু”

কিছুক্ষণ পর রাতের খাবার শেষে নিজের রুমে আসলো আফরিন। ফ্রেশ হয়ে চুলটা বেধে নিলো। লাইটটা অফ করে শুয়ে পরলো।

ফোনটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। আবারো অপরিচিত আরেকটি নাম্বার থেকে কল এসেছে। আফরিন ভ্রুকুচকে ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে রইলো। অপর পাশে এক পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো
-“আমি মেঘ তুমি বৃষ্টি
আমি রাত তুমি দিন
চলো না বিয়ে করি এক দিন”

আফরিন বিরক্ত নিয়ে দাঁত কিটমিট করে বলল
-” আপনার লজ্জা করে না”

লোকটা দাঁত দিয়ে ঠোঁট আকড়ে হেসে বলল
-“লজ্জা থাকলে কিভাবে হবে বলো তো।”

আফরিন বিরক্তি নিয়ে ফোন‍টা কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলো।

—————

সকাল নয়টার দিকে রাদ এলো ইশরাকে নিয়ে। রাদ অফিস থেকে যাওয়ার সময় আবার নিয়ে যাবে ইশরাকে তাই বলে চলে গেল।

আফরিন গিয়ে ফ্রিজ থেকে কালকে ওই আইসক্রিমের পেকেটটা বের করে রুমে গেল। আইসক্রিম দেখে ইশরার মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠলো।

আফরিনের মা ইশরার জন‍্য সুজি বানিয়ে নিয়ে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইশরা আর আফরিন আইসক্রিম খেয়ে মুখ মাখিয়ে বসে আছে।

আফরিনের মা সুজির বাটিটা পাশের টে‍বিলে রেখে বলল
-“কি অবস্থা করেছিস দুইজন মুখের দেখছিস।”

মায়ের কথা ফোন খুলে আফরিন দেখে নিজেই হেসে দিলো। ইশরাও হাসছে। আফরিনের মা কপালে হাত রেখে বললেন
-“তোর আর বুদ্ধি হলো না। ছোটই রয়ে গেলি তুই।”

আফরিন নিজের মায়ের কথা না শুনে ইশরাকে কাছে ডেকে বলল
-“আসো মামুনি আমরা কয়েকটা পিক তুলি।”

বলেই পিক তুলতে ব‍্যস্ত হয়ে গেল। আফরিনের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-“সুজিটা ওকে খাইয়ে দিস।”

বলেই ওনি ওনার কাজে চলে গেলো।

আফরিন ইশরাকে সুজিটা খাইয়ে দিলো। দুইজন মিলে চলে গেল শয়তানি করতে। টেবিল ফ‍্যানের সামনে দুইজন গিয়ে আ আ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বারান্দায় গেল। পাশের বাসার আন্টি সবজি কিনছে আর ঝগড়া করছে। দুইজন মিলে দুইজনের দিকে তাকিয়ে দুষ্টামি হাসি দিলো।

ইশরা ছুটে গেল রুমে সুজির বাটিটা নিয়ে আবার বারান্দায় গেল। আফরিন একটু সুজি নিয়ে ওই আন্টির গায়ে ফেলে দিলো। আন্টি উপরে তাকাবে তার আগেই দুইজন চুপ শুয়ে পরলো। আন্টি চেচিয়ে বলতে লাগল
-“কাকের কোনো আক্কেল নাই। আমার গায়ে শেষমেশ করে দিলো। তাও আবার পাতলা হাগা। আমার ভালো জামাটা নষ্ট করে দিলো আক্কেল ছাড়া কাক।”

আরো বকবক করতে লাগল। আফরিন আর ইশরা দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।

—————-

কেটে গেছে দুই মাস…
আজ আফরিনের এইচএসসি পরীক্ষা। এই দুইমাস রাত দিন এক করে পড়াশোনা করেছে আফরিন। একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে তার। তার বাবা তাকে পরীক্ষার হলে দিতে এসেছে। আফরিন ঢুকেই আরুশাকে দেখতে পেলো। আরুশা একাই কি যেন বকবক করছে।

আফরিন পিছন থেকে একটা গা‍ট্টা মারে। আরুশা রেগেমেগে কিছু বলতে নিবে তার আগেই আফরিনকে দেখে থেমে যায়। হুট করেই ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“দোস্ত কতদিন পর তোকে দেখলাম।”

দুইজন মিলে চলে গেল ক্লাসে। পরীক্ষা দিয়ে হাসিমুখেই দুইজন বের হলো। পরীক্ষাটা ভালোই হয়েছে।

আফরিন বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো। কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলো। ঘুম থেকে উঠে কফির মগ নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। ফোনটা বাজতে দেখে খানিকটা বিরক্ত হয়।

রুমে এসে ফোনটা ধরে তখনই অপর পাশ থেকে একটা নেশাক্ত কন্ঠ ভেসে এলো
-“কবে পাইবো বলো তোমারে। তোমারে ছাড়া এই হৃদয় আমার মরুর মতো শুকনো। তুমি যে আমার কাছে বর্ষাকালের বৃষ্টির চেও শীতল স্পর্শ।”

আফরিন কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার। কিন্তু কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে। আফরিন প্রশ্নবোধক কন্ঠে বলল
-“আপনি ওই লোকটা না। যে”

আফরিনের কথায় লোকটি মুচকি হেসে ওর কথার মাঝেই বলে উঠলো
-“এই তো বেইবি আমার কন্ঠ তুমি কেমন চিনে গেছো।”

আফরিন নাকে পাটা ফুলিয়ে বলল
-“আপনি তো ভারি অসহ‍্য আর লজ্জা ছাড়া মানুষ। আপনার দুইটা নাম্বার ব্লক দিছি তাও আপনি আবার ফোন দিচ্ছেন।”

লোকটা গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো
-“এতোদিন তো দেইনি। যাইহোক বাদ দেও পরীক্ষা কেমন দিলে।”

আফরিন কিছু না বলেই কেটে দিলো। লোকটা পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। সে ধপ করে শুয়ে পরলো। কানে এখনো আফরিনের রিনরিনে কন্ঠ বাজছে। লোকটা নিজের বুকে হাত দিয়ে বিরবির করে বলল
-“তুমি আমাকে চাও বা না চাও। তোমাকে আমার হতেই হবে। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”

—————

আফরিন চোখ বন্ধ করে কয়েকটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলল
-“নিজে বাঁচিনা নিজের টেনশনে। আর এগুলো ঝামেলা বিরক্তকর।”

এগুলো কথা ঝেড়ে ফেলে পড়তে বসলো।

—————-

রাদ উল্টো হয়ে শুয়ে ছিল। ইশরা ওর রুমে ছুটে এসে বলল
-“বাবাই, তুমি কি করছো?”

রাদ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইশরা টলটলে পানি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাদ হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে ইশরার কাছে গিয়ে ওকে কোলে নিলো। অস্থির হয়ে জিঙ্গাসা করলো
-“কি হয়েছে তোমার বাবাই। কান্না করছো কেন?”

ইশরা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
-“পিপি আমার সাথে কথা বলছে না। কথা না বলে শুধু কান্না করছে।”

ইশরার কথায় কপাল কুচকে এলো রাদের। রাদ ইশরাকে জিঙ্গাসা করলো
-“তোমার পিপি কোথায় এখন।”

ইশরা নাক টেনে বলল
-“পিপির রুমে বসে কান্না করছে।”

রাদ ফোনে কার্টুন দিয়ে ইশরাকে নিজের রুমে বসিয়ে দিয়ে রামিজার রুমে চলে গেল।

রামিজা চোখ নাক মুখ লাল করে ফেলেছে কান্না করে। রাদ ধীর পায়ে হেটে গিয়ে রামিজার কাধে হাত রাখলো। রামিজা চমকে পিছনে তাকাতেই রাদকে দেখতে পেলো। ওর কান্নার গতি যেন বেড়ে গেলো। রাদ নিজের কাছে আগলে নিলো রামিজাকে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
-“কি হয়েছে? কেউ কিছু বলছে তোকে?”

রামিজা নাক টানতে টানতে ‍বলল
-“বড় ভাবি আমাকে একটা কানের দুল গিফট করেছিল। আজকে আমি যখন স্কুল থেকে এসে আয়নার সামনে দাড়াই তখন আর খুজে পাচ্ছিনা।”

রাদ বুঝতে পারলো রামিজা কেন কান্না করছে। রাদ রামিজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল
-“পাগলী মেয়ে একটা। খুজে পাবি দেখিস। আর ভাইয়া ভাবি সব থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার তো আমাদের ইশরা। আর কান্না করিস না তো বাচ্চাটাও কান্না করে দিছে। তুই নাকি ওর সঙ্গে কথা বলছিস না। কথা না বলে শুধু কান্না করছিস।”

রামিজা চোখমুখ মুছে বলল
-“কোথায় ও”

রাদ মুচকি হেসে বলল
-“আমার রুমে কার্টুন দেখছে। কি জাদু করছিস একবার কথা বলিস নি তাই বাচ্চা কান্না করে বাঁচেনা।”

রামিজা দাঁত বের করে হেসে বলল
-“তুই বুঝবিনা। আসলে তোর বোঝার বয়সই হয় নি ছোট ভাইয়া।”

রাদ রামিজার মাথায় গাট্টা মেরে ‍বলল

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে