শিশির বিন্দুর জীবন পর্ব-০৫

0
71

#শিশির_বিন্দুর_জীবন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫

রাদ রাতে বাসায় আসতেই রাবেয়া বেগম বললেন
-“কি অবস্থা করেছিস ভিজে। ঠান্ডা জ্বর আসলে কি হবে বল দেখি!”

রাদ কিছু বলতে নিবে তার আগেই সে হাঁচি দিতে শুরু করে। রাবেয়া বেগম কড়া চোখে তাকাতেই রাদ বোকামার্কা হাসি দেয়। রাবেয়া বেগম কোমরে হাত রেখে বলল
-“যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার টেবিলে দিচ্ছি আমি।”

রাদ নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হতেই দেখে রামিজা আর ইশরা বসে আছে বেডে উপর। রাদ মুচকি হাসি দিয়ে ইশরার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই পরপর হাঁচি পড়তে থাকে। রাদ কথাই ‍বলতে পারছেনা। রামিজা হুট করেই হেসে দিলো হো হো করে। রামিজার হাসি দেখে ইশরাও হেসে দিলো।

রাদ চোখ গরম করে রামিজাকে কিছু বলতে নিবে তার আগে আবারো হাঁচি পরে। এতে ওর হাসি আরো বেশি বেড়ে যায়। রাদ রামিজার মাথায় গাট্টা মারে।

রাবেয়া বেগম ওদের হাসির শব্দ শুনে এই কান্ড দেখে রুমে এসে বলল
-“হয়েছে হাসাহাসি। এবার সবাই চলো খাবার খেতে।”

বলেই রাদের দিকে একটা বাটি নিয়ে এগিয়ে আসে। রামিজা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
-“ছোট ভাইয়া খাও খাও আদার রস।”

রামিজার কথায় রাদ দাঁত কিটমিট করে ওর দিকে তাকায়। নাকমুখ কুচ করে আদার রসটা খায় সে।

——————-

আফরিন এর টেস্ট পরীক্ষা শেষ আজ। আফরিন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বর্ষাকাল হওয়ায় সারাদিনই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তেই আছে। আফরিন আর আরুশা দাড়িয়ে আছে কলেজের সামনের একটি দোকানের ছাউনিতে। আফরিনের মুখে হাসি ঝুলে আছে। আরুশা টিপস খাচ্ছে আর বকবক করছে।

একটা গাড়ি ওদের সামনে দাড়াতেই কপাল কুচকে যায় আরুশার। আরুশা আফরিনকে গুতা দিয়ে বলল
-“দেখ তো গাড়িটা চিনিস নাকি রে।”

আফরিন ঘুরে তাকাতেই রাদকে গাড়ির ভিতরের গ্লাস নামাতে দেখে। আফরিন খানিকটা অবাক হয়। মনে মনে বলে
-“এই লোক আবার এখন এখানে কি করছে।”

রাদ হাত ‍বের করে চিৎকার করে বলল
-“আফরিন তোমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে গাড়িতে আসো। এই বৃষ্টিতে এখন রিক্সা পাবেনা। আমি তোমাদের বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি আসো।”

আরুশা কপাল কুচকে বলল
-“কেরে এই গোলাপি মহিষ!”

আফরিন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিনে কন্ঠে বলল
-“ওনি রাহাত ভাইয়ের ছোট ভাই।”

রাদ আবারো চেচিয়ে বলে উঠলো
-“কি হলো আসো। এতো ফরমালিটি করতে হবে না। ইশরাও আছে আমার সঙ্গে।”

ইশরার কথা শুনে আফরিন আর না করতে পারলো না। বাচ্চাটাকে কত দিন দেখে না। আদর করে দেয়না। আফরিন এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে আরুশার হাত ধরে। গাড়ির পিছনের দরজা খুলে দুইজন উঠে বসে। ইশরা রামিজার কোলে বসে ছিল রাদের পাশের সিটে। আফরিনকে দেখে লাফ দিয়ে ওর কোলে আসে। আফরিন কয়েকটা চুমু বসিয়ে দেয় ইশরার কপালে।

রামিজা পিছনে ঘুরে বলল
-“আপু আজকেই তোমার পরীক্ষা শেষ না।”

আফরিন হাসিমুখে ইশরার হাত নিয়ে খেলতে খেলতে বলল
-“হুম আজকেই শেষ”

রামিজা দাঁত বের করে বলল
-“তাহলে চলো একসঙ্গে খাবার খেয়ে আসি। আমরা আজকে ছোট ভাইয়ার জন্মদিনের ট্রিট খেতে বেড়িয়েছি। রাস্তায় তোমাকে দেখতে পেয়ে তোমাকে তুলে নিতে বললাম।”

আফরিন আরুশার দিকে তাকিয়ে আবার রামিজার দিকে তাকিয়ে বলল
-“কিন্তু আমাদের বাসায় তো জানানো হয় নি। আজ নয় পরে একদিন না হয়।”

আফরিনের কথার মাঝখানেই রাদ লুকিং গ্লাসে আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলল
-“তোমার ফ্রেন্ডকে বাসায় জানিয়ে দিতে বলো। আর আম্মুকে বলছি আম্মু আন্টিকে বলে দিবে। সমস্যা হবে না।

আফরিন কিছু বলতে নিবে তখনই রাদ বাম হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-“আমি আর কোনো না শুনতে চাইনা।”

আরুশা দাঁত বের করে রাদকে বলল
-“শুভ জন্মদিন ভাইয়া। আমার খাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আম্মুকে ‍বললেও কিছু বলবেনা। সমস্যা নেই আপনি নিয়ে চলুন।”

আফরিন আরুশাকে গুতা দেয়। আরুশার কান্ডে ঠোঁট টিপে হাসে রাদ। রামিজা তো জোরেই হেসে দেয়। রামিজার হাসিতে ইশরাও হাসে। ইশরাকে হাসতে দেখে আফরিনও হেসে দেয়।

বৃষ্টি থেমে এসেছে। সবাই বসে খেয়ে নিলো। আফরিনের জামায় কিছুটা ময়লা লাগায়। সে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। আফরিন জামাটা ঝাড়তে ঝাড়তে বের হতে নিতেই কেউ একজন ওর পথ আটকিয়ে ধরেছে। আফরিন মুখ তুলে তাকাতেই লোকটা তার সকল দাঁত বের করে বলল
-“সোনা মামুনি চলো আমরা ঘুরে আসি একটু।”

বলেই আফরিনের হাত চেপে ধরলো। আফরিন রক্তবর্ণ চোখ করে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল
-“হাতটা ছাড়ুন”

লোকটা আরো জোরে করে ধরায় আফরিন দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল
-“কি বললাম বুঝলেন না হাতটা ছাড়ুন।”

রাদ দূর থেকে দেখে এগিয়ে আসতে নেয়। তখনই আফরিন লোকটির গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আফরিন লোকটিকে আঙ্গুল নাচিয়ে বলল
-“বলছিলাম না হাতটা ছাড়তে।”

লোকটা আগুন চোখে আফরিনের দিকে তাকিয়ে হাত আগাতেই আফরিন লোকটা হাত মুচড়ে ধরে। লোকটি ব‍্যথায় আর্তনাদ করে উঠে। আফরিন দাঁত পিশে বলল
-“মেয়ে মানুষ দেখলেই লালসায় চোখ ভরে উঠে। ভুলে যাস না মেয়েরা মায়ের জাত সকল কষ্ট সহ‍্য করতে পারে। এমনকি নিজের আত্মরক্ষায় যা তা করতে পারে। তাই এরপর থেকে মেয়েদের দেখলে হিসাব করে চলবি। মনে রাখিস নারীরা দূর্বল না।”

বলেই লোকটির হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দেয়। লোকটি ব‍্যথায় কুকরে যায়। আফরিন সামনের দিকে চোখ রাখতেই রাদের অবাক করা দৃষ্টি নজরে পরে। এতে আফরিনের কপাল কুচকে যায়। আফরিন তুরি মেরে রাদের উদ্দেশ্যে বলে
-“আপনার আবার কি হলো ভাইয়া। হা করে আছেন কেন! মুখে কিছু ঢুকে যাবে তো।”

রাদ তাড়াতাড়ি করে মুখ বন্ধ করে অবাক করা কন্ঠে বলল
-“তুমি যে এতো সাহসি জানতাম না তো। আবার দেখছি মারামারিও পারো।”

আফরিন স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠলো
-“ও এই কথা। আমি ভাবলাম কি না।”

রাদ আরো অবাক হয়ে বলল
-“আমি ভেবেছিলাম তুমি চুপচাপ,শান্ত মেয়ে। আর এখন দেখছি।”

আফরিন চোখ ছোট ছোট করে রাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-“তো সেটা তো আপনার সমস্যা ভাইয়া। আমি কি জানি।”

বলেই আফরিন চলে ইশরাদের কাছে। রাদ অবাক হয়ে আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ওদের কাছে যায়।

সবাই বেড়িয়ে পড়ে ওখান থেকে আরুশা একা যেতে চাইলে রাদ না করে। ও নিজে গিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। আফরিন ইশরাকে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে রাদ বলে কাল দিয়ে যাবে। এতে কিছুটা মন খারাপ হয় আফরিনের। আফরিন মন খারাপ করে বাসায় আসতেই ওর মা এগিয়ে এসে বলল
-“কিরে তোর মন খারাপ কেন! কি হয়েছে?”

আফরিন মুখ ফুলিয়ে বলল
-“আমি রাদ ভাইয়াকে বললাম ইশরাকে আমি এখানে নিয়ে আসি। ওনি আনতে দিলেন না। বললেন কাল দিয়ে যাবে।”

আফরিনের মা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বললেন
-“ও এই কারণে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস। এতে তো তোরই ভালো হলো। তোর উপর দিয়ে তো অনেকটা চাপ গেল এই কয়েকদিন। আজ একটু রেস্ট নে। কাল তো দিয়ে যাবে বলছে।”

আফরিন কি যেন ভেবে কিছু না বলেই চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলো। ঘুমটা দরকার ছিলো তার। পরীক্ষার চাপে কয়েকদিন একদম ঘুম হয়নি। অনেকটা ফ্রেশ লাগছে।

বিছানা থেকে উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে কফির মগটা নিয়ে বারান্দায় গেল। কিছুক্ষণ আগেই ওর মা দিয়ে গেছে। বাহিরে সতেজ সবুজ পরিবেশ উপভোগ করতে করতে কফিটা খেলো সে। আজ মনটা খুব ফুরফুরে লাগছে।

রুমে এসে ফোনটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠলো। আফরিনের কপাল কুচকে গেলো অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসছে। দুইবার বেজে থেমে গেলো। আফরিন তৃতীয় বারের বার কলটা রিসিভ করলো। অপরপাশ থেকে একটা গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো
-“কি হলো জান। এতো দেড়ি করে কেন কলটা ধরলা বলো তো। তা আমার জানটা কি করে?”

আফরিন ভ্রুকুচকে প্রশ্নবোধক কন্ঠে বলল
-“কে আপনি! আর কি বলছেন এগুলো! মাথা ঠিক আছে আপনার।”

লোকটা হাসলো। লোকটা নিজের হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বলল
-“ইয়েস বেইবি, আমি একদম ঠিক আছি। আর আমি কে তা না পরেই জানবে। আপাতত বলো তো কি করছো?”

আফরিন নিজের রাগকে কন্টোল করে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-“আপনি একটু নাম্বারটা চেক করে দেখেন। আপনি ভুল নাম্বারে কল করেছেন।”

আফরিনের কথায় লোকটা হো হো করে হাসলো। তারপর বলল
-“নো বেইবি, আমি একদম ঠিক নাম্বারে ঠিক জনের সাথে জেনে শুনেই কথা বলছি।”

আফরিন এবার রাগ কন্টোল করতে না পেরে রেগেই বলে উঠলো
-“ফাজলামি পেয়েছেন।”

বলেই খট করে কল কেটে দিলো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে