অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-১২

1
2232

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১২
Writer:Shakif Arefin

__এই দিকে নীল এখনো আসছে না দেখে তাসু বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ টা এখনো আসছে না কেন..??তাসু নীলের বাসায় আসার প্রহর গুনছে কখন আসবে।সাথে ভয়ও হচ্ছে রাস্তায় কোন সমস্যা হলো না তো.??এরই মাঝে কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের আওয়াজে তাসু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নীল দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাহিরে।

__নীল কে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তাসু।তাসুর কাছে মনে হচ্ছে পুনরায় সে প্রিয় মানুষ টা কে ফিরে পেয়েছে। তাসু খেয়াল করে তার মানুষ টা কে বড্ড বেশি ক্লান্ত দেখাচ্ছে।তাসু বলে__ আসছেন আপনি..আজ এতো দেরি হলো যে..??

__নীল বলে__ হুম আজ অফিসে মিটিং ছিল তাই মিটিং শেষ করে আসতে দেরি হয়ে গেছে। তাসু বলে_ ওও।তাসু নীলের হাত থেকে অফিসের ব্যাগ টা নিয়ে নীলের পিছু পিছু তার রুমে যেতে লাগে।

__নীল রুমে গিয়ে তাসু কে বলে__ ভালো করে এক মগ কফি নিয়ে আসো।বড্ড ক্লান্ত লাগছে আর মাথা টাও ধরে আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তাসু বলে__আচ্ছা এখনই নিয়ে আসছি। তাসু যেতে গেলে নীল বলে___ এই দাঁড়াও দাঁড়াও,, তোমার তো সকালে হাত পুড়ে গেছে। তোমার কফি বানাতে হবে না।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি_ই ঠিক বানিয়ে নিতে পারবো।

__ তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে__ কি বলছেন এসব আপনি কফি বানাবেন মানে .?? আপনি মাত্র অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে আসছেন এখন আরাম করেন। আর আমার হাত এতো টা পুড়ে নাই যে আপনাকে কফি বানিয়ে খাওয়াতে পারবো না।আপনি ফ্রেশ হয়ে বসেন আমি নিয়ে কফি নিয়ে আসছি। নীল কিছু বলতে যাবে এর আগেই তাসু চলে যায় কফি বানাতে।

__তাসুর হাত টা বেশ ভালোই পুড়েছে। যার কারণে রাতের জন্য রান্না করতে তাসুর একটু কষ্টই হয়েছে। কফি বানাতে তাসুর তেমন কোন কষ্ট হবে না।তাসু কফি বানিয়ে নীলের রুমে যায়। নীলও সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে। নীল বলে__ তোমাকে তো বলেছিলাম কফি আমি বানিয়ে নিতে পারবো। তারপরও কেন এই হাত নিয়ে কফি বানাতে গেলে।তাসু বলে__ আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন আমার হাতের তেমন কিছুই হয়নি।

__তাসু বলে__ কফি টা খেয়ে নেন ক্লান্ত টা কেটে যাবে। নীল কফি টা হাতে নিয়ে টি টেবিলে রেখে দেয়। তাসু চলে যেতে গেলে নীল ডেকে বলে_ তাসু শুনো না..??তাসু পিছনে ফিরে বলে__ কিছু বলবেন..?? তাসু নীলের হাতে তাকিয়ে দেখে তার হাতে একটি ফুল। নীল অফিস থেকে বের হয়ে অনেক খুঁজাখুঁজির পর তার এই পছন্দের ফুল টা পেয়েছে। নীল হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে~ এটা তোমার জন্য।

__তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে__আমার জন্য ফুল মানে..?? আমি তো ফুল আনতে বলি নাই। নীল বলে__ হুম তুমি বলো নাই, কিন্তু আজ আমার প্রমোশন হয়েছে আর কাজ গুলো সবার পছন্দ হয়েছে তাই এটা তোমার জন্য এনেছি। তাসু নীলের প্রমোশনের কথা শুনে অনেক খুশি হয়।তাসু বলে__ আলহামদুলিল্লাহ,, বলেছিলাম না আপনার পরিশ্রম বিফলে যাবে না সব হয়ে যাবে।

নীল বলে__ ফুল টা নিবে না…??তাসু বলে__ফুল নিয়ে কি করবো। আপনি আপনার কাজে সফল হয়েছেন এতেই আমি অনেক খুশি। নীল বলে__ এই ফুল দিয়েই তো কতো মানুষ তাদের প্রিয় মানুষের কাছে তাদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করে। আমি না হয় আমার মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনুভূতি গুলো এই ফুল দিয়েই প্রকাশ করি।তাসু বুঝতে পারে নীল কি বোঝাতে যাচ্ছে। তাসু বলে__ আমি তো এখনো কারো প্রিয় মানুষ হতে পারি নাই। তাহলে আমাকে এই ফুল দিচ্ছেন কেন..?? নীলের কাছে হয়তো এই প্রশ্নের কোন উত্তর নাই।

__তাসু বলে__ কফি টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নেন।তাসু চলে যায়। মন খারাপ করে বসে পরে নীল। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এর কিছুক্ষণ পরই নীল তাসুর রুমে যায়। তাসু খাটে হেলান দিয়ে ছোট একটা উপন্যাসের বই পড়ছে। নীল কে দেখে তাসু বই টা রেখে নিজের ওড়না ঠিক করে বলে__ আপনি এখানে..?? নীল বলে__ কেন তোমার রুমে আসতে পারি না..??তাসু বলে__ হুম আপনার বাসা আপনি যে সময় খুশি আসতেই পারেন।

__তো কিছু বলতে আসছেন..?? খাবার খেতে দিবো..??নীল বলে__ না একটু পরে খাবো।নীল বলে__ আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার প্রমোশন হলে তুমি যা চাইবে তাই দিবো।কি চাই তোমার..??আজ যা চাইবে মুখ ফুটে বলে ফেলো।

__তাসু বলে__চাইছি তো কাল রাতে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি আপনার কাছে চাই না।নীল বলে __ তোমার পছন্দের কি চাই সেটা বলো।দামী দামী জামা কাপড় বা স্বর্ন গহনা।

__তাসু বলে __ এসবের কিছুই আমার চাই না।আমার পছন্দের যা চাই তা কাল কে বলেছিলাম তো..?এর চেয়ে দামী কিছুই চাই না।আপনি খেতে আসেন আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। নীল কে আর কিছু বলতে না দিয়ে তাসু রুম থেকে বের হয়ে যায়। যেই কথা গুলো তাসু বলে গেলো তা তাসুর অভিমানী কথা নাকি মনের কথা বলে গেলো নীল তার কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে এতোটুকু বুঝতে পারছে তাসু কথা গুলো অনেক কষ্ট পেয়েই বলছে।নীল এও ভেবে নিয়েছে তাসুর সাথে করা অন্যায় গুলোর জন্যে তাসুর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। আর তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা যায়।

__নীল খাবার টেবিলে বসে আছে। তাসু সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছে।নীল বলে__ তুমি খাবে না..??তুমিও আমার সাথে খেতে বসো..??তাসু বলে__আপনি খেয়ে যান আমি রাতে খাবো না।নীল বলে_ কেন শরীর খারাপ লাগতেছে..??তাসু বলে_ না না তেমন কিছুই না।খেতে ইচ্ছে করতেছে না তাই আর কি।নীল আর কিছু বলে নাই। খেয়ে চলে যায় রুমে।

__তাসু সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যাবে তখন নীল এসে বলে__ তাসু তুমি একটু আমার রুমে আসো তো।তাসু বলে__ আচ্ছা আপনি যান আমি এখনই আসছি। তাসু হাত মুখ মুছে নীলের রুমে যায়। তাসু বলে__ আপনি আমায় কিছু বলার জন্য ডেকে ছিলেন।নীল সোজাসাপটা তাসু কে বলে দেয়__ তুমি আজ এই রুমে ঘুমাবে।হঠাৎ এমন কথা শুনে তাসুর কলিজায় কামড়ে উঠে। কলিজার সব পানি নড়াচড়া শুরু করে দেয়।

__তাসু একবার নীলের তাকায় আরেকবার নীলের বিছানার দিকে তাকায়। তাসু খুব চিন্তায় পরে যায়,, হঠাৎ করে মানুষ টার আবার কি হলো..??ভুতপ্রেতে ধরে নাই তো.?? আজ হঠাৎ করেই কেন আমাকে এই রুমে থাকতে বলছে। উনি আমার থেকে কি উদ্দেশ্য হাঁচিল করতে চায়। তাসু এক নজর নীলের চোখের দিকে তাকায়।নীলের চোখের ভাষা ঠিক তাসু বুঝতে পারছে না।নীলের চোখও যেন আজ অন্য কথা বলছে।

__তাসু বলে__ আমি তো প্রতিদিন ঐ রুমেই ঘুমাই তাহলে আজ কেন এই রুমে ঘুমাতে যাবো..??নীল বলে__ আমি বলছি তাই। তাসু বলে__ কিন্তু আমি তো ঐ রুমেই ঠিক আছি।নীল বলে__ ঐ রুমে ঠিক নেই। তুমি এই রুমেই ঘুমাবে এটাই ফাইনাল। আর আমার কথা অমান্য করলে আমি কি করতে পারি সেটা তুমি ভালো করেই জানো।মোড ভালো আছে রাগ উঠাবে না বলে দিলাম।

__তাসু কি বলবে তার কিছু মাথায় আসছে না।রাগ উঠে গেলে আবার অন্য কিছু করতে পারে। তাই তাসু মাথা নিচু করে বলে__ ঠিক আছে। আমি একটু পরে আসছি। এটা বলে তাসু চলে যায় নিয়ে নিজের রুমে। তাসু রুমে গিয়ে ভাবে আমাকে আবার মেরে ফেলার চিন্তা করতেছে না তো..??আমাকে তার পথ থেকে সরিয়ে মাহিরা আপু কে বিয়ে করবে না তো..??দূর আমি আবার এসব কি ভাবছি। যা আছে কপালে তাই হবে।এসব নিয়ে ভাবার কোন চিন্তা নাই। উনি যা বলছে সেটাই করি। আজ না হয় উনার রুমেই ঘুমাই।

__তাসু এসব ভাবতে ভাবতে রাত প্রায় এগারো টায় গুটি গুটি পা দিয়ে নীলের রুমের দরজার সামনে যায়। দরজা টা একটু খুলে উকি দিয়ে দেখে নীল সোফায় বসে ফোন টিপছে।এখনো নীল বসে আছে দেখে তাসু চমকে যায়। তাসুর এখন ইচ্ছে করছে নীল কে ইচ্ছে মতো বকাঝকা করতে। তাসু আসতে আসতে পায়ে হেটে খাটের এক পাশ হয়ে শুয়ে পরে। নীল একটু আড় চোখে তাসু কে দেখে।

__তাসু শুয়ে থেকে এখনো বুঝতে পারছে না কেন তাকে আজ এই রুমে থাকতে বললো।তাসু ভয়ে এপাশ ওপাশ করছে। কিন্তু তাসুর চোখে কেন না জানি ঘুম আসছে না।নীল তাসু কে দেখছে তাসু বারবার এপাশ ওপাশ করছে ঘুমানোরও চেষ্টা করছে। ঘুমাতে পারছে না।নীল ফোন টা চার্জে লাগিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে__ ঘুম আসছে না..??তাসু শুয়া থেকে উঠে বলে__ অনেক তো চেষ্টা করতেছি ঘুম তো আসছে না।

__নীল বলে__ তখন তোমায় ফুল দিতে চাইলাম ফুল টাও নিলে না।বললাম তোমার কি চাই সেটাও বললে না।আমার কাছ থেকে মুখ ফুটে কিছু চাইলে না কেন..? তাসু বলে__ আমার কিছুই চাই না। আর চাওয়ার ছিল সেটা চেয়েছি তো।এর চেয়ে বড় চাওয়ার মতো আমার কাছে আর কিছু নেই।

__নীল গিয়ে তাসুর পাশে বসে বলে__আজ যদি আমি তোমার কাছ থেকে কিছু চাই সেটা দিবে আমাকে..??

চলবে….

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে