অবহেলিত ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
2205

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১৩
Writer:Shakif Arefin

নীল গিয়ে তাসুর পাশে বসে বলে__আজ যদি আমি তোমার কাছে কিছু চাই তাহলে সেটা কি তুমি দিবে আমাকে…??তাসু বলে__এমন কিছু চাইয়েন না যা আমি দিতে পারবো না।আর যদি আপনার সুখের জন্য আমার জীবনটা চান তাহলে খুব সহজেই দিয়ে দিবো।তবুও আমার থেকে এমন কিছু চাইয়েন না যা আমার আয়ত্তের বাহিরে।

__নীল বলে__ তোমার জীবন চাইবো না। কারণ এই জীবন টাই তো আমার। কথাটা শুনে তাসু আঁতকে উঠে। একটু নড়েচড়ে তাসু বলে__ মানে…??নীল বলে__ যদি বলি এখন থেকে তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য চাই। তখন কি বলবে তুমি..??

__নীলের কাছ থেকে এমন কথা কখনো আশা করেনি তাসু।ভাবতেও পারে নি নীল তার থেকে এমন জিনিস টা চেয়ে বসবে।নীলের এই কথা টা তাসুর পরো জীবন থেকে অনেক দূরে ছিল যা তাসুর ধারণাতেই কোন দিন ছিল না।যেই মূহুর্ত টা প্রত্যেক নারীই আশা করে তার প্রাণ প্রিয় স্বামী থেকে। সেই মূহুর্ত টা যে এটা হবে জানা ছিল না তাসুর। আর মূহুর্তটা যে আজকের রাত টা হবে তাও জানা ছিল না। আর জানা_ই বা থাকবে কি করে তাসু তো নীলের অবহেলায় সেই মূহুর্তটার কথা মন থেকে হারিয়েই ফেলেছে অনেক আগে।

__নীলের হঠাৎ করে এই চাওয়া টা কি আদৌ সঠিক নাকি পুরোটাই আবেগের বসে বলছে বুঝতে পারছে না তাসু। তাসু ভাবতে থাকে __এই জন্যই তাহলে আজ আমাকে এই রুমে থাকতে বলছে।তাসু চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। তাসুর হাত পা পুরো শরীর আসতে আসতে ঠান্ডা হয়ে আসছে।নীল আবার উঠে গিয়ে দরজা টা হালকা করে লাগিয়ে দেয়।

__তাসু নীলের আরেকটা কাজ দেখে আরো চমকে যায়। নীল রুমের লাইট টা বন্ধ করে দেয়। তাসু ভয়ে লাইট টা অন করতে গেলে নীল খপ করে হাত ধরে নেয়।নীল তাসুর হাত ধরেই বুঝতে পারে যে তাসুর হাত পা পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। নীল বোঝে যায় এই মূহুর্ত টা তাসু কে খুব ভয় পাওয়াচ্ছে। কিন্তু তাসু মুখে কিছুই বলছে না।

__নীল বলে__ প্লিজ লাইট টা বন্ধ থাকুক। তাসু নিচু স্বরে বলে__ খুব অন্ধকার তো..??নীল বলে__ এতো ভয় পাচ্ছো কেন..?? ড্রীম লাইট জ্বলছে তো..??তাসু নিরব স্তব্ধ হয়ে গেছে কোন কথা বলছে না।নীল তাসুর গালে ধরে বলে~খুব ভয় পাচ্ছো তাই না৷?? তাসু বলে__ নাহ্ কেন ভয় পাবো…??নীল বলে__ আচ্ছা বসো এখানে।

__নীল তাসুর হাত ধরে নিয়ে তাসু কে একেবারে বিছানার মাঝ খানে নিয়ে বসায়।তাসু তখন একদম চুপচাপ মাথা নিচু করে বিছানার মাঝ খানে বসে থাকে।নীল বলে__ তুমি আমার ফুল টা নিতে চাইলে না কেন..?? কারণ টা কি জানতে পারি..?? তাসু কিছুই বলছে না মাথা নিচু করেই রাখলো।নীল বলে__কি বলো..? কেন নিলে না ফুল টা..??তাসু তখনও চুপ করে রইলো। নীল বলে__ আরে বলো না..? তাসু তখন মাথা টা কিছু তুলে বলে __ কি…??

__ নীল বলে__ আমি যে ফুল টা দিতে চাইলাম তখন তুমি হাতে নিলে না কেন..?? তাসু বলে__ আমার ইচ্ছে ছিল না তাই। আর ঐ ফুলে আমার এলার্জি আছে এই জন্য। নীল বলে__ ওও আচ্ছা।

__এরপর এই ভাবেই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে নীল আর তাসু। নীল কি বলবে তাসুকে,, কোথা থেকে কথা বলা শুরু করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তাসু কে নিয়ে দীর্ঘ পথ তার পারি দিতে হবে। চুপচাপ থাকলে যে তার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে।এইদিকে তাসুও একদম চুপচাপ বসে আছে। নড়াচড়ার শব্দ টা পর্যন্ত তো শুনা যাচ্ছে না।তাসুরও যে কিছু বলার নেই। তাসুর সব কথা কেন যেন গলা পর্যন্ত এসেও আটকে আছে। মুখ খুলে যেন কিছু বলতেই পারছে না।

__তাসু কে চুপ থাকতে দেখে নীল নিজেই তাসুর কান অবদি মুখ নিয়ে বলে __আমি যদি তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার বুকে আটকিয়ে রাখতে চাই তাহলে তোমার কিছু বলার আছে…??সব সময় আদর্শ স্বামী হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকেই আমার চাই। তাসু তখনও চুপ হয়ে আছে কিছুই বলছে না।তাসুর বুকের ভিতর টা তখন ধুকপুক শুরু করে দিছে।

__নীল বলে__কি হলো কিছু বলছো না যে.??আজ কি চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিছো নাকি..??তাসু নিচে তাকিয়েই বলে__ শুনতেছি তো….??নীল বলে__ শুনলে যে তার উত্তর দিতে হয় তা তো জানো।তাসু বলে __ আপনার এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই আমার কাছে। নীল বলে__ কেন…?? তাসু বলে__ এই প্রশ্নের উত্তর সেই দিন_ই মরে গেছে যেই দিন তাসু তার স্বামীর কাছ থেকে অবহেলা আর মার থাপ্পড় খেয়েছে। অন্য মেয়ের কথা শুনে যখন তাসুর স্বামী এসে তাসু কে মারতে শুরু করে পদে পদে অপমান লাঞ্চিত করে তখনই তাসুর কাছ থেকে এই উত্তর মরে গেছে।কোন দিন না জানি তাসু নিজেই একদিন মরে যায়,, কে বলতে পারে তাই না…??

__তাসু ভারি শান্ত গলায় কথা গুলো বলে গেছে। আর নীল শান্ত মস্তিষ্কে কথা গুলো শুনে যাচ্ছে। আজ নীল শুনবে তাসুর সব কথা তাসুর মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা কষ্ট গুলো নীল শুনতে চায়। তাসুর সব মনের কথা নীল কে আজ বলতে হবে। নীলও যে শুনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তাই নীল তাসু কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে। তারপর..??

__তাসু স্বস্তির একটু শ্বাস নিয়ে বলে__ তার আর পর নেই।এরপর তাসু নিজেই একদিন মরে যাবে।কথা টা শুনে নীলের ভিতর টা কেমন কামড়ে উঠে। নীল বলে__তুমি ভালো নেই তাই না..?তাসু এবার নীলের দিকে তাকিয়ে বলে__ কে বললো আমি ভালো নেই। খুব ভালো আছি আমি। স্বামী থাকতেও কোন দিন ভালোবাসা পাইনি।পেয়েছি শুধু নিয়ম করে মার থাপ্পড় আর অবহেলা। সাথে বোনাস হিসেবে পেয়েছি স্বামীর ভালোবাসা মানুষের চড় আবার তার মিথ্যে কথা শুনে স্বামীর মার।এসব সহ্য করে আমি বেশ ভালো আছি। স্বামীর কাছে থাকতে আর খেতে তো পারি..?? আলহামদুলিল্লাহ এই টুকুই যথেষ্ট।

__নীল বলে__ এরপর..?? তাসু বলে __আর কিছুই না। রাত অনেক হয়েছে ঘুমাতে হবে।রুমে যাবো আপনি ঘুমিয়ে পরেন।নীল তাসুর কথায় বেশ বুঝতে পারে তাসু তার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইছে।তবে কেন না জানি আজ নীল তাসুর প্রতি খুব আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।নীলের আজ তাসু কে কাছে চাই।তা যে ভাবেই হোক বা যে করেই হোক।

__ তাসুর বাম হাতটা নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নেয় নীল। নীল বলে__ আজ যদি তোমার সাথে এই রুমে ঘুমাতে চাই তাহলে..??তাসু বলে__ কিন্তু আমি ঘুমাতে চাই না।তাসু এটা বলে__ উঠে চলে যেতে নিলে নীল শক্ত করে তাসুর হাত ধরে নেয়।

__নীল বলে__ উঠে চলে যাচ্ছো কেন…?? আমি তোমাকে যেতে বলছি..?? বসো এখানে। তাসু বলে__রাত অনেক হলো যে..??আপনার কাল অফিস আছে তো।নীল বলে__ অফিস আছে তো কি হয়েছে..?? আমার অফিসের কাজ কি তুমি করতে যাবে..?? তাসু বলে__ নাহ্..।

__নীল বলে__তাহলে আমার অফিস নিয়ে তোমার এতো পেরেশান কেন..?? নাকি থাকতে চাইছো না আমার কাছে..?? কোনটা শুনি…??তাসু সোজাসাপটা বলে দেয় __ কি জানি,, জানা নেই। নীল বলে__তোমার মন কে জিজ্ঞাসা করো।তাসু বলে__মনের দরজায় অনেক আগেই তালা লেগে গেছে। খুলার মতো কোন চাবি নাই।

__তাসু উঠে চলে যেতে গেলে নীল কোন কথা না বাড়িয়ে তাসুকে কোলে তুলে নেয়। তাসু নীলের কাজ দেখে আজ বেশ আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বার নীল কে না করে কিন্তু নীল আজ কোন কথাই শুনছে না।তাসু কে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। এরপর নীল তাসুর বুকের উপর থেকে ওড়না টা সরিয়ে দেয়। এই কাজ টা দেখে তাসু আরো বড় আশ্চর্য হয়ে। তাসু তার দুই হাত দিয়ে বুকটা ঢেকে নেয়। ওড়না টা সরিয়ে নীল অপলক চোখে তাসুর মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

__তাসুর চোখের কোণায় পানি জমে গেছে। পানি গুলো তাসুর চোখে বালির মতো চিকচিক করছে।গভীর নিরবতায় চেয়ে আছে শান্ত চোখ দুটি তাসুর দিকে চোখের দিকে। এ যেন এক মায়াবী রাজ কন্যা।এরই মাঝে তাসু একটা ঢোক গিলে।নীল তাসুর দিকে একটু ঝুকে যায়। এরপর নিজেই তাসুর কানের কাছে এসে বলে তাসু গালে হাত রেখে বলে__আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই আমি তোমার শহরে ।তোমার মাঝে আমি বিচরণ করতে চাই। স্বাদ নিতে চাই আমি তোমার ঘ্রানের।বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকে চাই আর কিছুই চাই না,, শুধু তোমাকে চাই আমার জীবনে।

__নীলের কথা গুলো শুনে তাসু কিছুই বলছে না।মনে হচ্ছে মুখ টাও আজ তার কথা মানছে না।চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গাল বেয়ে পরছে।এরপর নীল তাসু কে উপুর করে শুয়ে দেয়। জামার চেইনে হাত দিবে তখনই নীলের নজর যায় তাসুর ঘাড়ের নিচে ধবধবে সাদা পিঠের দিকে।ঘাড়ের নিচের অংশে অনেক গুলো কালো লম্বা দাগ হয়ে আছে। নীল পিঠে হাত লাগাতেই তাসু শিহরিত হয়ে উঠে। নীল ড্রীম লাইটের আলোতে দাগ গুলো আবছা দেখতে পাচ্ছে।নীল বেশ অবাক হয়ে যায় দাগ গুলো দেখে। নীল বলে__ এই গুলো কিসের দাগ…??তাসু কথা টা শুনে বেশ বড় শক খায়।তাসু বলে_ আমার থেকে ভালো আপনার জানার কথা।

__নীলও তাসুর কথা টা বুঝে নেয়। কারণ নীল তাসু কে বহুবার পিঠে বেত দিয়ে চামড়ার বেল দিয়ে পিটিয়ে ছিল। তাই নীল সব কিছু দেখার জন্য উঠে গিয়ে লাইট টা অন করে আসে।এই ফাকে তাসু উঠে গিয়ে নিজের ওড়না টা দিয়ে নিজেকে আবৃত করে নেয়। এই দিকে নীল এসে তাসুর দাগ গুলো দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু তাসু বারবার মানা করছে।

__তাসু জোর করছে দেখে নীল নিজেই তাসুর পিঠের দিকে ঘুরিয়ে যায়। ওড়না টা সরিয়ে দাগ গুলো দেখে নীল অবাক হয়ে যায়। এলোমেলো দাগ গুলো কালো হয়ে আছে।নীল বলে__ এই দাগ গুলো তো আগে দেখি নাই..? তাসু বলে__ কখনো দেখার চেষ্টা করেন নাই।নীল বলে__আমাকে আগে কখনো বলো নাই কেন..?? তাসু বলে__ আচ্ছা এসব বাদ দেন,,কাল তো আপনার অফিস আছে লেট করা ভালো হবে না। ঘুমিয়ে যান।নীল রেগে বলে~এই কথা টা আরেক বার বললে এমন থাপ্পড় দিবো না বুঝবে তখন।

__তাসু বলে__আপনার মার সহ্য করার মতো ক্ষমতা আর শক্তি দুটোই আছে আমার। এরপর নীল তাসু কে উপুর করে শুয়ে দেয়। পিছন থেকে নীল তাসুর জামার চেইনে হাত দিতেই তাসু আবার ঝট করে উঠে বসে যায়। নীল বলে__ কি হলো এমন করে উঠে গেলে কেনো..??তাসু ভয়ে ভয়ে বলে- আপনি এমন করতেছেন কেন..?নীল বলে__ আমি আবার কি করলাম..?? তাসু বলে__ জামার চেইন খুলেন যে…??নীল বলে__যাকে আমি এতো মেরেছি,, পশুর মতো মেরে দাগ করে ফেলেছি। সে কখনো কোন প্রতিবাদ করে নি।তাই সেই মেয়ের মারের চিহ্ন গুলো আজ দেখতে চাইছি।

__নীলের কথায় স্তব্ধ হয়ে যায় তাসু।চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে তাসু।নীল পুনরায় শুয়ে দেয় তাসু কে।তাসু দেয়ালের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নীল পুনরায় তাসুর জামার চেইন টা খুলে দেয়। এই অবস্থায় তাসু না পারছে নীল কে বাঁধা দিতে, না পারছে উঠে যেতে, না পারছে শুয়ে থাকতে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে