স্বপ্নীল ৬৪, ৬৫,৬৬

0
1272

স্বপ্নীল
৬৪, ৬৫,৬৬
সমদ্র বাসায় এসে দেখে রোদ ড্রয়িং রুমের সোফায় শুয়ে আছে।রোদের কাছে যেয়ে রোদকে কোলে তুলে নেয়।রোদের এই মাত্র চোখটা লেগে এসেছে।সমুদ্র স্পর্শই জেগে গেল।দুহাত দিয়ে সমুদ্র গলা জড়িয়ে ধরেছে।সমুদ্র বলল,
-” আমার কোলে উঠার জন্য ঘুমের ভান করে শুয়েছিলে। ”
-” তা না।তোমার জামা কাপড় ভিজা কেন? ”
রুমের এসে রোদকে নামিয়ে দেই।সে বলল,
-” অনেক কাহিনি আছে পরে বলব।এখন যাই ফ্রেশ হয়ে আসি।”
সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে এসে রোদকে নিয়ে ছাদে যায়। রোদকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।রোদ বলল,
-” এবার বলো।”
সমুদ্র সব কাহিনি বলে।রোদশুনে হাসতে থাকে।মুগ্ধ হয়ে রোদের হাসি দেখতে থাকে সমুদ্র।কোনোর রকম হাসি থামিয়ে বলল,
-” বেশ করেছে তাঁরা।তোমার একটা ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।”
-” আজকে রাত আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। এই জন্য তাদের কথা মেনে নিতে বাধ্যই হয়েছি,নইলে তাঁরা আমায় কিছুতেই ছাড়তো না।”
-” সব বুঝলাম।বাট আজকে রাত তোমার কাছে স্পেশাল কেন? ”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।রোদের চুলে নাক ডুবায়।ঘাড়ে চুমু খায়।কানে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-” ভালোবাসি তোমায় রোদ -বৃষ্টি -ঝড়।”
রোদ চমকে যায় এই কথা শুনে।ঘাড় ঘুরিয়ে সমুদ্র দিকে তাকায়।সে বলল,
-” কী বললে তুমি।”
এটা বলে দাঁড়িয়ে যায়।সমুদ্র দাঁড়িয়ে যায়।রোদের হাত টেনে কাছে এনে বলল,
-” ভালোবাসি।”
রোদের বিশ্বাস হচ্ছে না সমুদ্র এটা বলছে।এই একটা শব্দ শোনার জন্য সমুদ্র পিছনে কত ছুটেছে।সমুদ্র নামে মিথ্য বদনাম দিয়েছে।চোখে পানি চলে আসে।সমুদ্র রোদের চোখে পানি মুচে দিয়ে বলল,
-” কান্না করছো কেন? ”
রোদ কিছু না বলে সমুদ্র কে জড়িয়ে ধরে।পাগললের মত বিলাপ করে বলল,
-” ভালোবাসি তোমায়।খুব ভালোবাসি।নিজের থেকে ভালোবাসি।তোমার মুখ থেকে অনাঙ্ক্ষিত শব্দ শুনে খুশিতে চোখের পানি চলে আসে।এটা সুখের কান্না।”
-” আমায় ক্ষমা করে দাও রোদ।তোমাকে আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
-” ক্ষমা তুমি আমার করে দাও।আমি তোমার নামে মিথ্যেই বদনাম রটিয়েছি।তোমার মান-সম্মান নষ্ট করেছি।”
সমুদ্র দুহাতের আঁজলা দিয়ে রোদের মুখটা উপর তুলে বলল,
-” ভুলে যাও রোদ। তোমার জীবনে সেই কালো অধ্যায় ভুলে যাও। গতবছরে এই দিনে তোমার সব স্বপ্ন আমি ভেঙে দিয়েছি।আজকে মনে করবে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটেনিই।সবার জীবনে যেভাবে স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ে হয়।সেই ভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে।আজকে আমরা দুজন অতীতের গ্লানি মুচে দিয়ে নতুন অধ্যায় সূচনা করব।”
-” ভুলে যাবো।তুমি ও ভুলে যেও।”
-” হুম।
সমুদ্র কোলে মাথা রেখেই শুয়ে আছে রোদ।সমুদ্র বলল,
-” রোদ!
-” হুম।”
-” আজকে আমাদের বিবাহ বার্ষিক।”
-” হুম।”
-” তাহলে সেই অনুযায় আজকে আমাদের বাসর রাত।”
-“বাসর রাত মানু্ষের জীবনে একবারেই আসে।আমাদের জীবনে সেটা এসেছে এবং চলে গেছে।”
-” সেই বাসর রাতে আমাদের জন্য স্পেশাল কিছুই ছিল না।কিন্তু আমরা চাইলে আজকে
মনে রাখার মতো কিছুতে করতে পারিই।”
রোদ সুরু চোখে তাকিয়ে বলল,
-” আমি বুঝিছি, আপনার স্পেশাল বলতে কী বুঝিয়েছেন।আজকে সে সব কিছুই হবে না।আজকে আমরা এখানে বসে গল্প করব।
সমুদ্র মন খারাপ করে বলল,
-” ওহ!”
-“আচ্ছা, তুমি কখনো থেকেই আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো।”
এটা বলে উঠে বসে রোদ।সমুদ্র সামনাসামনি বসে বলল,
-” বলো।”
সমুদ্র রোদের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বলল,
-” আজকে তোমাকে সব বলব।”
এটা বলে রোদকে জড়িয়ে ধরে।রোদের কাঁধে থুতনি রেখে সমুদ্র বলল,
-” তোমাকে আমি অনেকদিন আগেই থেকেই ভালোবাসতাম।”
-” তাহলে আমায় সব সময় ইগনোর করতেন কেন? বাজে ব্যবহার করতেন কেন? ”
-” তোমার মনে আছে কী না আমি জানি।তোমাকে আমি তোমার কাজিন রেহানে সাথে একবার মিশতেই মানা করেছিলাম।কিন্তু তুমি আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানের সাথে আরো বেশি বেশি মিশতে। তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে মিশবেই সেটা আমি মেনে নিতেই পারতাম না।আমরা বন্ধুরা ছাড়া তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার গা জ্বলে যেত।সেইদিন তোমার উপরে খুব রাগ হয়েছিল।তোমার এই সব আচারণ কারণেই কখনো আমার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করিনি।তুমি কথা বলতে আসলে আমার গা জ্বলে উঠত।”
-” আমি তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানে সাথে কথা বলতাম।কারণ আমি দেখতে চাইতাম,আমার প্রতি তোমার কোনো ফিলিং আছে কী না। যখন দেখলাম তুমি এই বিষয় কোনো জেলাস ফিল করতে না।তখন আমার খুব রাগ হতো।তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রেহানের সাথে মিশতাম বেশি।”
-” ভালো করেছো।এই জন্য তোমাকে আমার সহ্য হতো না।”
-” শয়তান ছেলে।”
-“তোমার এই চাল -চলন আমার ভালো লাগত না।তোমার এই ছেঁড়া শার্ট -প্যান্ট পড়া।স্লিপলেস টি-শার্ট পড়া।এই জামা কাপড়ে পড়লে তোমার শরীর বুঝা যেত।তুমি কী জানো। তোমার এই বুকের তিলটা কতবার দেখিছি আমি!এবার ভাবো, আমি যদি অনেকবার দেখি তাহলে যারা তোমার সাথে বেশি মিশতো।তাঁরা কতবার দেখেছে।তোমাকে আমি ভালোবাসতাম।তোমার সব জিনিস দেখার অধিকার আমার ছিল। কিন্তু তোমার এই চাল-চলন আমার ভালোলাগতো না বলেই। তোমাকে আমার কাছে অসহ্য লাগত।”
তিলের কথা শুনে রোদ তার বুকের দিকে তাকায়।শাড়ি ঠিক করে দেই। সমুদ্র হেসে দেই রোদের কান্ডই।রোদ সমুদ্র কানে লতিতে চুমু খেয়ে বলল,
-” তোমাকে কখনো সরাসরি বলি নাই তোমার জামা কাপড় নিয়ে।তোমাকে আমি কথার ছলে অনেকবার বলিছি শাড়ি পড়া কথা।জিন্স, শার্ট পড়ার জন্য তোমাকে বাজেই ভাবে অপমান করিছি।কিন্তু অপমান কেন করতাম তুমি বুঝতেই না।তোমার এই মোটা মাথা সেটাই ঢুকতো না।
-” সুন্দর করে একটু বললে কী হতো।পরে কিন্তু আমি নিয়মিত শাড়ি পড়িছিলাম।তখন কিন্তু কথা শুনাইছেন।”
-” তোমাকে কথা শুনাইনি।তোমার প্রশংসা করেছিলাম।
-” এ্যাঁ!এটা কেমন প্রশংসা ছিল।ওইটারে যদি প্রশংসা বলে তাহলে প্রশংসা কী বলবে?”
-” তুমি জানো না তোমার সমুদ্র একজন ইউনিক পার্সেন। দেখোনা আমার সব কিছুই ইউনিক,তাই আমার প্রশংসা ইউনিক ছিল।”
-” আইছে আমার ইউনিক পার্সেন।”
-” জানো রোদ তুমি একটা ভালো কাজ করেছো? ”
-” কী”

-” এই যে আমায় বাধ্য করেছো বিয়ে করতে।নইলে কোনো দিন আমি তোমাকে বিয়েই করতাম না।”
-” কেন? ”
-” তোমার চাল-চলন আমার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। তোমার ওই ছেলেদের সাথে মিশায়।ছেলেরা তোমার রুপের প্রশংসা করত।
তোমার রুপের প্রশংসা যদি কেউ করতো আমার মাথা আগুন জলে উঠত।তখন তোমার উপরে আমার রাগ উঠত।অন্য কেউ কেন তোমার প্রশংসা করবে।এসব মানতেই পারতাম না।তাই ভেবেছি তোমার ভালোবাসা কখনো আমি গ্রহন করব না।এটাই থাকবে তোমার শাস্তি।তাই তো তোমার ভালোবাসা বুঝে ও না বুঝার ভান ক
করে থাকতাম। তুমি জোর করেছো বিধায় আজ আমরা এক হতে পেরেছি। নইলে কোনোদিন তোমাকে আমি বিয়ে করতাম না।”
রোদ উঠে দাঁড়ায়। সে বলল,
-“ছেলেদের সাথে মিশতাম শুধু আমার বন্ধুদের সাথে।অন্য কারো সাথে না।”
-” রেহান।”
-” রেহান আমার কাজিন।ওর সাথেই কথা বলতেই হতো।
-” তুমি কী জানো? রেহান তোমার ভালোবাসত।”
-” না। রেহান আমায় ভালোবাসলে আমায় কী যায় আসে।আমি তোমায় ভালোবাসতাম।
-” কিন্তু আমায় যায় আসে।”
-” ও তোমার ভালোবাসত।তোমায় অন্য নজরে দেখত।আর তোমার ওই ছেলের সাথে কিসের এতঘেঁষাঘেঁষি ছিল।”
রোদ সমুদ্র দিকে তাকায়।সমুদ্র চেহারা বদলে যাচ্ছে।রোদ বলল,
-” আমি তোমায় ভালোবাসি সমুদ্র।আমি জানতাম না রেহানে মনে এমন কিছু ছিল। আজকে প্রথম তোমার মুখে শুনিছি।আমি আর কোনোদিন রেহানের সাথে কথা বলব না। আই প্রমিজ।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে নিচে যাবো।”
সমুদ্র আর কোনো কথা বলল না।মুচকি হেসে রোদকে কোলে করে রুমে নিয়ে যায়।রোদ রুমে যেয়ে দেখে।ফুলে ফুলে সাজিয়ে রেখেছে রুমটা।পিছন ঘুরে বলল,
-” তুমি করেছে এটা।”
সমুদ্র দরজা আটকিয়ে বলল।
-” হুম।আজকে আমাদের ফুলসজ্জা রাত।ফুল না হলে কী চলে।”
রোদ লজ্জা পায়।শাড়ি আঁচল মাথা তুলে নেয়।বিয়ে রাতে সমুদ্রকে সালাম করতে পারিনি।সালাম করতেই নিচু হতেই সমুদ্র ধরে ফেলে,
-” আরে কী করছো?”
-” সালাম করছি।”
-” তোমার স্থান পায়ে না। তোমার স্থান বুকে।এরকম কাজ কখনো করবে না।”
জড়িয়ে ধরে সমুদ্রকে।পকেট থেকে আংটি বের করে পড়িয়ে দেই।রোদের কপালে চুমু একে দেই।আজকে তাদের মধ্যেই ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে।

★★★
সোলোমান মির্জা স্বপ্ন মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে।তিনি জানিয়েছেন সোলোমান মির্জাকে।তাদের পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে আসতে।এখন ঘরোয়া ভাবেই আংটি বদল করিয়ে রাখবেন স্বপ্ন আব্বু বিদেশ থেকেই ফিরলে।

সবাই ঢাকা চলে আসে।শুধু সোহা আসিনি।সোহার দেখভাল করার জন্য তামিম রয়ে গেছে।সোহার ডেট গনিয়ে আসছে।তৃণ আর প্রাচ্য চলে আসে তাদের বাসায়।স্বপ্ন মা, স্বপ্ন আসে সমুদ্রের বাসায়।নীলকে দেখে যায়। আংটি বদলের ডেট ফিক্সড করে যায়।

ঘরোয়াভাবেই আংটি বদল যখন হবে।তখনই বাড়িতে কিছুটা ডেকেরেশন করে সবাই।নিকট আত্নীয়ের ডাকা হয়।স্বপ্ন, স্বপ্ন মা আগে দিয়ে চলে আসে।স্বপ্ন ভাবা সোহাগ উদ্দীনের কিছু জরুরী কাজ পড়েছে। তাই তিনি বলেছেন কাজ সেড়েই যথা সময় চলে আসবেন।
স্বপ্নকে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখেই ধূসর বলল,
-” খুজে লাভ নেই।সে এখন সাঁজতে ব্যস্ত।কিছুক্ষনের মধ্যই চলে আসবে।তখন মন ভরে দেখে নিলেই চলবে।”
ধূসরের কথায় স্বপ্ন মুচকি হাসে।কিছুক্ষনের মধ্যেই ড্রয়িং রুমে নীলকে প্রাচ্য আর রোদ নিয়ে আসে।স্বপ্ন চোখ তুলে তাকায়।লাল একটা শাড়ি পড়েছে নীল।খুব সুন্দর লাগছে।নীল স্বপ্ন দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।স্বপ্ন হেসে দেই।নীলকে স্বপ্ন পাশে বসায়।হাত বাড়িয়ে স্বপ্ন নীলের হাত ছোঁয়।নীল লজ্জায় হাত ছাড়িয়ে নেয়।স্বপ্ন বলল,
-” হাত ছাড়িয়ে নিলে কেন? ”
-” এখানে বড়রা সবাই আছে।দেখে ফেললে কী বলবে?”
-” তুমি দেখতে পাচ্ছো না বড়রা কথা বলতে ব্যস্ত।”
ফিসফাস করে তাদের কথোপকথন চলতে থাকে।সোহাগী বেগম স্বপ্নের মায়ের উদ্দেশ্যি বললেন,
-” আফা,আপনার স্বামী আসবে কখন।অনেক্ষণ তো হলো।”
স্বপ্ন মা স্বপ্নকে বলল,
-” স্বপ্ন,তোমার বাবাকে ফোন করো।জিজ্ঞেস করো কতদূর এসেছে।”
স্বপ্ন পকেট ফোন বের করে সোহাগ কে ফোন দেই।ফোন ধরেই স্বপ্ন বলল,
-” আব্বু, তুমি এখন আসছো কেন? ”
-” তোমার দেওয়া ঠিকানা আমি এসে গেছি।গেইটের বাইরে আছি।”
-” আমি আসছি আব্বু।”
স্বপ্ন বাইরে গিয়ে তার আব্বুকে এগিয়ে নিয়ে আসে।ড্রয়িং আসতেই স্বপ্ন বলল,
-” এই তো আমার আব্বু।”
মির্জা বাড়ির সবাই শাহেদকে দেখে অবাক হয়।শাহেদ মির্জাবাড়ির সবাইকে দেখে অবাক হয়।কতবছর পর তাদের দেখা হয়েছে।

কাউছার স্বর্ণা।
স্বপ্নীল
৬৫

শাহেদ দেখেই শামিম মির্জা বলল,
-” তুই কোন সাহসে আমাদের বাড়িতে পা রেখেছিস।”
উপস্থিত ছোটোরা কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না।সমুদ্র
বলল,
-” বড় আব্বু।তোমরা কী পূর্বপরিচিত। ”
সোহাগের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বলল,
-” হুম!”
-” তাহলে তো ভালোই।”
সমুদ্র কথার প্রত্তুতর নীলের আব্বু কিছুই বলল না।তিনি তার বাবা সোলোমান মির্জা দিকে তাকায়।সোলোমান মির্জা লাঠি ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।তিনি শাহেদের
সামনে এসে দুটো চড় মারে।সবাই হতভম্ব! স্বপ্নের মা উঠে দাঁড়ায়।স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না কী হচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড পরে সে বুঝে উঠতে পারে।সে বলল,
-” দাদু এই আপনি কী করেছেন?”
নীল আর্তনাদ করে বলল,
-” দাদু।”
সোলোমান মির্জা সেই দিকে খেয়াল না করে তিনি শাহেদ
কে বলল,” একবার তুই আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস।তখন তোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে।ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।এখন আবার তোর ছেলে আমার নাতনির পিছনে লেলিয়ে দিয়ে আমার নাতনীর জীবন নষ্ট করার জন্য।দ্বিতীয়বার সেই ভুল আমরা করব না।”
দাদু বলা ‘ আমার মেয়ে’ এই কথাটা তাদের সব কাজিন মনে মনে আওড়াতে থাকে।দাদার মেয়ে মানে তো তাদের ফুফু।কিন্তু ছোট থেকে জেনে এসেছে তাঁরা।তাদের কোনো ফুফু নেই।তাদের দাদুর তিনছেলে।তাহলে দাদু কেন ‘ আমার মেয়ে ‘ বলছে।আর দাদু কেন-ই বা এসব বলছে।
সমুদ্র বলল,
-” দাদু তুমি এসব কী বলছো?”
শাহেদ সোলোমার মির্জাকে বলল,
-” কাকা আপনি আমায় ২০ বছর আগেই ভুল বুঝেছেন,এখন ও।আমি জানতামই না স্বপ্ন যে মেয়েকে ভালোবাসে।সেই মেয়েটা আপনার নাতনি।”
স্বপ্ন বুঝতে পাচ্ছে না একটা কথাও।সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে।শামিম এসে বলল,
-” ভুল তো আমরা করেছি।তোর মত শয়তান কে বিশ্বাস করে।তোর জন্য আমার বোনকে হারিয়েছি।”
-” সে কথা ২০ বছর আগেই আমি তোদের কে বলছি।এখন আর সেই কথা বলতে চাইনা।এখানে আমরা যেই কাজে এসেছি।সেই কাজ সেড়ে ফেলতে চাই।”
-” তুই কী করে ভাবলি।স্বপ্ন তোর ছেলে জেনেই।তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব।”
-” ওদের কী দোষ।অতীত টেনে এনে ওদের জীবন কেন দুর্বিষহ করতে চাইছিস।”
নীল বলল,
-” বাবা আমি স্বপ্নকে আমি ভালোবাসি।এসব তুমি কী বলছ?”
শামিম নীলকে ধমক দিয়ে বলল,
-” চুপ কর বেয়াদব মেয়ে।”
নীল কান্না করতে থাকে।কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে এসব।সে স্বপ্নের দিকে তাকায়।স্বপ্নের চোখ অশ্রু।শামিম চিৎকার করে বলল,
-” এই মুহূর্তে তোর পরিবার কে নিয়ে বেরিয়ে যাবি।তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না।”
স্বপ্ন এসে বলল,
-” আংকেল আপনি এসব কী বলছেন? জানি না আমার আব্বুর সাথে আপনাদের কী নিয়ে জামেলা হয়েছে।তাতে আমার আর নীলের কী দোষ?কেন আপনারা আমাদের দুজনকে আলাদা করতে চাচ্ছেন?”
-” দোষ তোমার একটাই।তুমি ওই লোকটার ছেলে।আজকে থেকে তোমার সাথে নীলের কোনো সম্পর্ক নেই।কোনো যোগাযোগ করবে না।আর যদি শুনি তুমি নীলের সাথে যোগাযোগ করেছো তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
নীল কান্না করতে করতে দাদুর কাছে এসে বলল,
-” আব্বু এসব কী বলছে, দাদু।তুমি কিছু বলো?”
-” তোমার আব্বু যেই সিন্ধান্ত নিয়েছে সেটা ঠিক।”
নীল ছুটে যায় ছোট চাচ্চুর কাছে।সে বলল,
-” ছোট আব্বু, তুমি বাবাকে থামাও।আমি স্বপ্নকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
তামিমের আব্বু কী বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।এক দিকে বোনের হত্যকারী।অন্য দিকে তাদের আদুরে মেয়ের ভালোবাসা।ছোট আব্বুকে কিছু বলছেনা দেখে সমুদ্র কাছে সে বলল,
-” ভাইয়া তুমি কিছু বলো।”
সমুদ্র বলল,
-” বড় আব্বু কী হচ্ছে? তোমরা স্বপ্ন বা আংকেল এভাবে অপমান করতে পারো না।”
সোলোমান মির্জা ধমকিয়ে বলল,
-” ছোট ছোটর কত থাকো।যেটা জানো না। সেটা নিয়ে কথা বলবে না।”
নীলের আব্বু দারোয়ানকে ডাকতে থাকে।তার আগেই স্বপ্নরা বেরিয়ে যায়।নীল কান্না করতে করতে রুমে চলে আসে।সবাই নীলের পিছনে ছুটে।প্রাচ্য নীলের মাথা হাত বুলিয়ে বলল,
-” সব ঠিক হয়ে যাবে।একটু সময় দে।”
নীল ঝাপটে ধরে বলল,
-” সবাই কেন স্বপ্ন পরিবারকে এভাবে অপমান করল।”
রোদ বলল,
-” হয়তো দু ‘পরিবারে মধ্যেই দ্বন্দ্ব আছে।”
সমুদ্র বলল,
-” দাদু তার মেয়ের কথা বলছে।কিন্তু আমরা সবাই জানি দাদু কোনো মেয়ে ছিল না।তাহলে এই কথা কেন বললো।”
-প্রাচ্য বলল,
-” কিছু একটা রহস্য আছে ভাইয়া।যা আমরা কেউ জানি না।”
-” সেটাই জানতে হবে।”
নীলের মাথায় হাত দিয়ে সমুদ্র বলল,
-” তোর এই ভাইয়া থাকতে তোকে চোখের পানি ফেলতে হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
★★★
-” স্বপ্ন ফ্যামিলিকে এইভাবে ডেকে এনে অপমান করার মানে কী, দাদু।” সমুদ্র বলল।
নীলের আব্বু বলল,
-” এর আগেই যদি জানতাম।স্বপ্ন ওই শয়তানটার ছেলে তাহলে এই পর্যন্ত কখনো আগাতো না।”
প্রাচ্য বলল,
-” দাদু,তোমাদের সাথে স্বপ্নদের পরিবারে সাথে কী নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল?”
সমুদ্র বলল,
-” সবচেয়ে বড় কথা।দাদু তোমার মেয়ে মানে কী? আমরা জানি আমাদের কোনো ফুফু নেই।”
নীল বাদে সবাই এক এক করে প্রশ্ন করতে থাকে।
স্বপ্ন তার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তাকে জানতে হবে মির্জা বাড়ির সাথে তার বাবার কী সম্পর্ক ছিল।তার বাবার গায়ে হাত তুলেছে।বাবা কিছুই বলিনি কেন?
-” আমি জানতে চাই বাবা। তুমি মির্জা পরিবার কে কিভাবে চিনো।তোমার গায়ে কেন তাঁরা হাত তুলেছে?আর তুমি চুপ করে সব কিছু মেনে নিলে কেন? ”
শাহেদ চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকায়।নিজের অতীত এত দিন পর সামনে আসবে ভাবতেই পারেনি।
শামিম বলল,
-” তোমাদের জানার যখন এতই ইচ্ছা তাহলে তোমাদের সবাই কে বলব!শাহেদ ছিল আমার বন্ধু।জানের দোস্ত ছিল।ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে মানুষ হয়েছে
এটা বলে তিনি একটু থামেন,”শিখা ছিল আমাদের তিনভাইয়ের আদরের ছোটবোন।সবাই চোখের মনি ছিল শিখা।শিখা ভালোবাসতো শাহেদেকে।কিন্তু শাহেদ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে? সেটা শিখা মানতে না পেরে আত্নহত্যা করে।”
এটা বলে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।হাতের উল্ট পিঠে দিয়ে চোখের পানি মুচে।সমুদ্র বলল,
-” এতে শাহেদ আংকেল কী দোষ? দোষ তোর সব আমাদের শিখা ফুফুর ছিল?”
-” দোষ যাই হোক! শাহেদের কারণেই আমাদের শিখা মারা গেছে। শিখার খুনির ছেলের কাছে কিছুতেই আমার মেয়ে বিয়ে দিব না।”
শামিম সোলোমান মির্জার দিকে তাকিয়ে বলল,
-” বাবা আমরা কালকেই বাড়ির যাবো।বাড়িতে গিয়ে নীলের বিয়ে সিফাতে সাথে দিব।তুমি সিফাতে বাবার সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।!”
এটা বলে তিনি হনহন করে হেঁটে চলে যায়।পিছন ফিরে তাকায় নিয়ে।নীল তার দাদুর পায়ের কাছে এসে বলল,
-” আমি স্বপ্নকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না,দাদু। ”
সোলোমান মির্জা লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যায়।
শাহেদ বলল,
-” মির্জা পরিবারে সবাই আমাকে শিখার খুনি ভাবে।যেদিন শিখা মারা যায়। সেদিন মির্জা বাড়ির সবাই আমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেই।সেদিন তোমার আম্মুকে নিয়ে মির্জা বাড়ি ছেড়ে এসেছি।আজ পর্যন্ত নিজের দেশের বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
স্বপ্ন বলল,
-” শিখা ফুফু যখন তোমায় ভালোবাসত তাহলে তুমি বিয়ে করলে কেন? ”
-” কারণ আমি জানতাম না শিখা আমায় ভালোবাসত!জানলে ও কিছু করার থাকতো না।আমি তোমার আম্মুকে ভালোবাসতাম।”
স্বপ্ন তার বাবার সামনে হাটু গেঁথে বসে বলল,
-” বাবা তোমার অতীত যে আমার ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আমি নীলকে ছাড়া থাকতে পারব না।”
-” আমি যেয়ে তোর ভালোবাসা তাদের কাছে ভিক্ষা চাইব।”
★★★
নীল রুমে দরজা আটকিয়ে কান্না করতে থাকে।রুমের সব জিনিস ভেঙে ফেলে।নিজের মাথার চুল সব টেনে ছিঁড়ে ফেলে। ফ্লোরে শুয়ে পড়ে কান্ত হয়ে।তখনই স্বপ্ন ফোন আসে।নীল ফোন ধরে কান্না করে বলতে থাকে,
-” স্বপ্ন এই কী হয়ে গেল?”
নীল কান্না শব্দ শুনে স্বপ্ন বুকে এসে লাগল। স্বপ্ন নীলকে বলল,
-” সব ঠিক হয়ে যাবে নীল।
-” কিচ্ছু ঠিক হবে না স্বপ্ন।কালকেই আমরা গ্রামে চলে যাব।বাবা গ্রামে যেয়ে আমায় বিয়ে দিয়ে দেব।আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।”
-” আমি থাকতে তোমায় অন্য কেউ বিয়ে করতে পারবে না।”
-” আমায় খুব ভয় লাগছে স্বপ্ন।তোমাকে যদি আমি হারিয়ে ফেলি।তোমাকে হারিয়ে ফেললে আমি বাঁচব না।”
স্বপ্ন বলতে ইচ্ছা করছে নীলকে, “তুমি আমার অক্সিজেনে।মানুষ যেমন অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না।তেমনি আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।” কিন্তু সে বলতে পারিনি।এসব বললে নীলে আরও ভেঙে পড়বে।সে নীলকে শান্তনা দিতে থাকে।

পরেদিন সকাল বেলা শাহেদ আসে মির্জা পরিবারে কাছে। কিন্তু মির্জা পরিবার সবাই তাকে অপমান করে।শাহেদ আকুতিমিনুতি করে বলল,
-” ২০ বছর আগে যা হয়ে গেছে।তা টেনে এনে কেন বাচ্চাদের জীবন নষ্ট করবি।স্বপ্নের কাছ থেকে নীলকে আলাদা করিস না শামিম।তাহলে আমার স্বপ্ন মরেই যাবে।”
শামিম বলল,
-” তোর জন্য আমার কলিজার টুকরা বোন মরেছে।তুই বুঝিস নি বোন হারানো কষ্ট।কিন্তু এবার যখন তোর ছেলে ভালোবাসা হারিয়ে ধুকে ধুকে মরবে।তখনই বুঝবি আপন মানু্ষ হারিয়ে ফেলার কষ্ট ।”
-” আমি তোর পায়ে পড়ি, শামিম।তুই ওদের আলাদা করিস না।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।”
কিন্তু শামিম শুনতে নারাজ।শাহেদকে অপমান করে বের করে দেই।বাবার কাছে সব শুনে স্বপ্ন ভেঙে পড়ে যায়।কি করবে বুঝতে পাচ্ছে না? নীলকে ছাড়া সে বাঁচবে না।

কাউছার স্বর্ণা
স্বপ্ন বাবা নাম সোহাগ দিয়েছিলাম।কিন্তু আমা র মনে ছিলো না নীলের চাচির নাম সোহাগী দিয়েছি।তাই নাম চেঞ্জ করছি।
স্বপ্নীল
৬৬

সবাই গ্রামে চলে যায়।সোলোমান মির্জা বাড়িতে আসার সাথে সাথেই সিফাতের আব্বুকে খবর দেই।তাঁরা বিয়ে ঠিক করে ফেলে।নীল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে দাদুর কাছে এসে বলল,
-” দাদু আমি এই বিয়ে করতে পারব না।তুমি যদি আমাকে মরে যেত বলে তাহলে তাই করব।কিন্তু তুমি আমায় বিয়ে করতে বলো না।”
-” তোকে বিয়ে করতে হবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।”
-” দাদু তোমরা এত নিষ্টুর হয়ো না। একটু দয়া করে দাদু।”
-” নীল এখন তুমি তোমার রুমে যাও।”
-” তোমার কষ্ট হচ্ছে না, দাদু।এই দেখো তোমার কদম ফুল কান্না করছে।তাঁর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।তার বুক ফেঁটে যাচ্ছে।তোমার কী একটু কষ্ট হচ্ছে না।তোমার কদম ফুলের চোখের পানি দেখে।”
-” হচ্ছে না।তুই এখন যা।”
-” সারাজীবন তোমরা আমার সব অন্যায় আবদার মেনে এসেছো।এবার না হয়, আমার এই অন্যায় আবদার মেনে নাও।”
-” তোমার এই অন্যায় আবদার মেনে এসেছি বলেই।তুমি মাথা চড়ে বসেছো।একবার বিয়ে থেকে পালিয়ে যেয়ে আমার মান -সম্মান ডুবিয়েছো।”
এটা বলে তিনি বের হয়ে যায়।ড্রয়িং এসে সোফার কুশন সব ফেলে দেই।ফুলদানি সব ছুড়ে ফেলে দেই।ডায়নিং টেবিলের ক্লথ টেনে ফেলে দেই।গ্লাস গুলো ভেঙে ফ্লোরে পড়ে যায়। পাগলে মত ছুটতে থাকে।আর কিছু না পেয়ে ড্রয়িংরুমের মেজেতে হাটু মুড়ে বসে চিৎকার দিয়ে বলল,” আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি! স্বপ্নকে আমি ভালোবাসি।”
নিজের হাত দিয়ে চুল, গাল খামচে ধরে। তামিম, সমুদ্র দুজন নীলের চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসে।বোনের এই অবস্থা দেখে ছুটে আসে।দুজন দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরে।এতক্ষন তাঁরা দুজন সবাইকে বুঝিয়েছে যাতে নীলের বিয়ে না দেই।কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনেনি।তাদের একগাধা বকাঝকা তার বিনিময় শুনতে হয়েছে
সমুদ্র বলল,
-” নীল শান্ত হো।”
-” ভাইয়া! তুমি সবাইকে বলো।আমি বিয়ে করব না।আমি স্বপ্নকে ভালোবাসি।স্বপ্নকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”
রোকেয়া নীলের কান্না দেখছে দূর থেকে।তার মেয়ে কান্না করছে। কষ্ট যেন তা বুকে বিঁধছে।স্বামীক্ব অনেক বুঝিয়েছে কোনো লাভ হয়নি।তিনি দেখেছেন শিখার মৃত্যুতে তার স্বামী কতটা কেঁদেছেন।শিখার মৃত্যু সময় পাগল হয়ে গিয়েছিল।বোনটাকে কত ভালোবাসতেন। নিজের মেয়েকে ও ভালোবাসে। তিনি মনে করেন শাহেদ তার বোনের খুনি।বোনের খুনি ছেলের কাছে মেয়ের বিয়ে দিয়ে বোনেকে অশ্রদ্ধা, অপমান করা হবে।কিছুতেই ওই পরিবারে সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে না।সেই পরিবারে কারণের আজ তার বোন তাদের মাঝে নেই।শিখা যেমন ভালোবাসা হারিয়ে মরে গেছে।তিনি চান শাহেদের ছেলের ভালোবাসা হারিয়ে কোনো করুণ পরিণত হয়।
এক প্রকার জেদ মাথা চেপে গেছে।তাই রোকেয়া হাজার বোঝানোর চেষ্টা করে লাভ হয়নি।স্বামী তার কথা বোঝার চেষ্টা করেনি।তার স্বামীর একটা কথা, স্বপ্নের কাছে তিনি মরে গেলে বিয়ে দিবেন না,নীলকে।’
নীল জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সমুদ্র কোলে তুলে নীলকে রুমে নিয়ে যায়।নীলের যখন জ্ঞান ফিরিয়ে তখন সে স্বপ্নকে ফোন করে বলল,
-” স্বপ্ন আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, আব্বু।আমি কিছুতেই বিয়ে করব না।”
এই কথা শুনে স্বপ্নের পায়ের তলের মাটি সরে গেছে। এত দ্রুত এত কিছু!নীল তার হবে না সেটা ভাবতেই পাচ্ছে না।নীলকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন বুনেছে সে।নীলকে নিয়ে স্বপ্নের রঙিন আকাশে উড়বে।কিছুতে হবে না।না! নীল শুধু তার।চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে।নীল বলল,
-” স্বপ্ন, কথা বল!”
-” নীল আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
-” আমি তোমাকে ছাড়া ভাবতেই পারিনা।স্বপ্ন ছাড়া নীলের জীবন বৃথা।”
একটু থেমে বলল,
-” স্বপ্ন আমরা পালাবো,নইলে কেউ আমাদের এক হতে দিবে না।আমায় সিফাতে সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে! তুমি চলে আসো আমায় নিতে।আমি,,!”
তার আগেই সোলোমান মির্জা নীলের হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়।ফোন আঁচড়ে ফ্লোরে ভেঙে ফেলে।নীল চিৎকার করে বলল,
-” দাদু!”
সঙ্গে সঙ্গে নীলের গালে চড় পড়ে।শামিম মেরেছে মেয়েকে।নীল গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-” তুমি আমায় মারলে বাবা।”
-” এই চড় তোমায় আরো আগে দেওয়া উচিত ছিল।”
সোলোমান মির্জা শামিম কে বলল,
-” তুই এখান থেকে যা।আমি নীলের সাথে কথা বলছি।”
শামিম চলে যায়।নীলের হাত ধরে সোলোমান মির্জা তার পাশে বসায়।তিনি বললেন,
-” সিফাতের সাথে যখন তোমার বিয়ে ঠিক হয় প্রথমবার।তখন তুমি পালিয়ে যাও।কিছুদিন পর তুমি বাড়িতে এসেছিলে।”
এটুকু বলে তিনি থামেন।নীল ভাবছে তার দাদু সেই পুরানো কথাগুলো কেন বলছে? তিনি বললেন,
-” তুমি ভাবছ তো কেন এই কথা গুলো বলছি।”
নীল হকচকিয়ে যায়।তিনি আবার বললেন,
-” তখন তুমি আমার মাথা হাত দিয়ে বলছিলে।পরে বার তুমি এমন কোনো কাজ করবে না যাতে আমরা ওখুশি হই।আমি যা বলব। তুমি তাই মেনে নিবে।তুমি ভুলে গেছো সেই কথা!”
নীল অশ্রুসিক্ত চোখে দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল,” না,ভুল-ই নেই আমি।”
-” তাহলে কেন তুমি এখন আবার পালিয়ে যাওয়া কথা ভাবছ।একবার পালিয়ে তুমি আমাদের এতদিনে মান সম্মান ধুলে মিশিয়ে দিয়েছো।আমার মাথা ছুয়ে যে কথা তুমি দিয়েছো।আশা করি, তুমি যদি তোমার এই দাদুকে ভালোবেসে থাকো, তোমার এই পরিবারকে ভালোবেসে থাকো।তাহলে আমাকে দেওয়া কথা তুমি রাখবে।
আর এই বিয়ে করবে।পালানো কথা মুখে আনবে না।”
এটা বলে তিনি বেরিয়ে যান।নীল কান্না করতে থাকে।ছোট থেকে সে সবার অবাধ্য ছিল।কিন্তু এই পরিবার, এই দাদু তার সব মেনে নিয়েছে হাসি মুখে। না, চাইতে সবাই সব কিছু চোখের সামনে হাজির করেছে।তার জন্য গ্রামে কত মানুষ তার দাদুকে অপমান করেছে।বিয়ে থেকে পালিয়ে যেয়ে সম্মান নষ্ট করেছে।সবাই সব সময় সে দুঃখ দিয়েছে।সুখ কখনো দিতে পারেনি।তাই সে ঠিক করেছে। এই বিয়ে সে করবে।এই বিয়ে করলে যদি অন্তত সবাইকে খুশি হয়,তাহলে সে করবে।।কোনোদিন কেউ তার কোনো কাজে খুশি হইনি।এবার না হয় অন্তত তাই করবে।দাদুর কথা রাখবে সে।ভুলে যাবে তার ভালোবাসা।

হঠাৎ করে লাইন কেটে যায়।তারপর স্বপ্ন কল ব্যাক করে।কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে। স্বপ্ন মন বলছে। নীলের সাথে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে।স্বপ্ন তার বাবার কাছে দৌড়িয়ে যায়।শাহেদ ছেলেকেকে এই এভাবে আসতে দেখে ঘাবড়ে যায়।তিনি বললেন,
-” কী হয়েছে স্বপ্ন!”
-” বাবা ওরা আমার নীলের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আমাকে আটকাতেই হবে এই বিয়ে।আমি এখন মির্জা বাড়িতে যাবো।”
এটা বলে স্বপ্ন আর একমুহূর্ত দাঁড়ানি।ছূটে চলে যায়।গাড়ি স্টার্ট দেই।তার গন্তব্য মির্জা বাড়ি।শাহেদ ছেলের পিছন পিছন অন্য গাড়ি করে আসে।স্বপ্ন ড্রাইভিং করছে আর নীলের সাথে কাটানো স্মৃতির কথা মনে পড়ছে। নীল ছাড়া সে অসম্পূর্ন।
বুকের ভিতরে জ্বালা করছে।দাউ দাউ করে জ্বলছে স্বপ্ন বুক।কী যেন হারিয়ে যাচ্ছে? না নীলকে হারাতে দিবে না।নীল যদি কারো বউ হয়।তাহলে একমাত্র তার বউ হবে।

-” নীল! নীল তুমি কোথায়? তোমার স্বপ্ন চলে এসেছে তোমার কাছে, নীল।”
মির্জা বাড়ির ড্রয়িংরুম দাঁড়িয়ে চিৎকার করে স্বপ্ন বলতে থাকে।তখনই বাড়ি সবাই নিচে উপস্থিত হয়।শাহেদ এসে পড়ে। নীল স্বপ্ন’র ডাক শুনে দৌড়িয়ে আসে।তখন পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় শামিম।তিনি বললেন,
-” যা বলিছি মনে আছে তো।”
নীল বাবার দিকে তাকায়।মাথা কাত করে জানায় মনে আছে তার।স্বপ্ন এগিয়ে এসে নীলের হাত ধরে বলল,
-” তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে এসেছি।চলো।”
নীল হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” আমি কোথাও যাবো না।”
স্বপ্ন ঘুরে নীলের দিকে তাকায়।নীল বহু কষ্ট বলল,
-” আমি যাবো না।তুমি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”
স্বপ্ন রেগে উঠে বলল,
-” যাবে না বললেই হলো।তুমি চলো আমার সাথে।তোমার পরিবারে কেউ আটকাতে পারবে না!”
-” কেন আমি তোমার সাথে যাবো। কে হয় তুমি?”
-” আমি তোমার ভালোবাসা নীল।এই সব তুমি কি বলছো।”
-” ভুল করেছি তোমাকে ভালোবেসে।আগে তোমার পরিচয় জানতে পারিনি।এখন তোমার পরিচয় আমি জেনেছি।তুমি আমার ফুফির খুনি ছেলে। তা জেনে আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখব।তুমি ভাবলে কী করে?”
স্বপ্ন অবাক হচ্ছে। খুব অবাক হচ্ছে। সে বলল,
-” নীল তুমি কয়েক ঘন্টা আগে তুমি আমায় বলছিলে।তুমি আমায় ছাড়া বাঁচবে না।আমি এসে যেন তোমায় নিয়ে যাই।আর এখন তুমি এসব কেন বলছো? তোমার পরিবার তোমাকে বাধ্য করেছে তাই।”
-” আমার পরিবার কেন আমায় বাধ্য করবে? তারা আমায় জোর করেনি।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তুমি চলে যাও।”
এটা বলে নীল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে।এতক্ষন গলায় যেন কাটা আটকে ছিল।চোখের অশ্রু যেন বহু কষ্টে আটকিয়েছে।এখন যেন কাঁদছে।মন-প্রান উজার করে কাঁদছে।
শামিম বলল,
-” এবার আমার বাড়ি থেকে বের হও।”
স্বপ্ন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শাহেদ এসে বলল,
-” কেন এমন করছিস শামিম?আমার অন্যায়ের শাস্তি আমায় দেই।তারপর আমার ছেলে এভাবে শাস্তি দিস না।তোর কাছে আমার ছেলের ভালোবাসা ভিক্ষা চাই।নীলকে তুই আমায় দিয়ে দেই।”
শামিম স্বপ্নকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” দু’দিন পর আমায় মেয়ের বিয়ে।আমি চাইনা তাতে কোনো হট্রগোল হোক।আর হট্রগোল করতে চাইলে তাকে আমি জানে মেরে ফেলব।”
★★★
-” তুই বিয়ে করতে রাজি হইছিস।কোন মুখে।” প্রাচ্য বলল।নীল তার মুখে কঠিন একটা ভাব এনে বলল,
-” তোমরা কী করে ভাবলে! আমার ফুফুর খুনির ছেলে কে ভালোবাসব। এসব জেনে ও।”
প্রাচ্য বলল,
-” ফুফুকে তো শাহেদ আংকেল গলা টিপে হত্যা করেনি।ফুফু নিজ ইচ্ছায় আত্নহত্যা করেছে।এখানে শাহেদ আংকেলের কোনো দোষ নেই।”
-” ফুফির আত্নহত্যার কারণ কিন্তু স্বপ্নের বাবাই ছিল।”
-” এই কথা যদি ধরেনি।তাহলে এখানে স্বপ্ন’র কী দোষ? স্বপ্নকে ভালোবেসে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করবি কেন? ”
-” আমার ইচ্ছা হইছে তাই করছি।তোমরা এখন যাও! ”
তৃণ এগিয়ে এসে বলল,
-” নীল তুমি স্বপ্নকে ভালোভাবে একবার দেখেছো।এই কয়দিনে নিজের কী হাল করেছে।তুমি এভাবে ওকে ছেড়ে চলে গেলে।স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।”
-” যাক, তাতে আমার কী?দয়া করে সবাই বের হও। কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।”
সবাই বের হয়ে যায়।নীল বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে কান্না করতে থাকে।কী করবে সে? দাদুর কথা রাখতে হলে তার ভালোবাসা জলাঞ্জলি দিতে হবে।

কাউছার স্বর্ণা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে