এর বেশি ভালবাসা যায় না পর্ব-৭+৮

0
1136

<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>
..
পর্ব::(৭)

Written::Ar Limat

অনেকগুলি দিন কেটে গেলো। নেহাল আর রিয়ার সম্পর্ক সেদিনের পর থেকে আরো গভীর হয়েছে। রিয়া যেনো নেহাল কে এখন চোখে হারায়। রাজ রিয়ার সামনে এখন খুব কমই পরে,, রিয়ার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করে সে। সেদিকে রিয়ার ভ্রুক্ষেপ নেই।
.
বিকালে বাসায় ফিরে সোফায় বসেছে রিয়া, তখনই ওর বাবা এসে ওর পাশে বসলো..
– মা ভাত খেয়েছিস ?শুনলাম নাকি
সারাদিন কিছু খাসনি চল খাবি অমিই তোর খাইয়ে দেব
– নাহ আমি খাবোনা এখন
– কি হইসে মা তোর
– কিচু হয়নি
‘-নাহ আমার মনে হয় তোর কিছু হইসে -বলছি না , আমার কিছু হয়নি
অযথা আমাকে বিরক্ত করছো কেন
বেশ মেজাজ দেখিয়ে কথাগুলো বললো রিয়া। পাশ দিয়ে তার মা যাচ্ছিলো। ছেলের এমন কথা শুনে থমকে দাড়ালো সে। সাথে সাথে রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো সে..
– এইটা কেমন ধরনের কথা রিয়া। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা কি তুই ভুলে গেছিস? মানুষটা কি না দিয়েছে তোকে? তোর সব আবদার পুরন করেছে আর আজ তোর এই অবস্থা।
..
রিয়া আর কোনো প্রতিউত্তর দেয়নি। রেগে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো সে। রিয়ার বাবা মা বেশ অবাক। মেয়ের এইরকম আচরণ কখনো তারা দেখেনি।
.
রিয়া নিজের রুমে বালিশে হেলান দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মা বাবার সাথে এমন বিহেভ করলো কেন সেটা সে বুঝতে পারছে না। কখনো তো এমন হয়নি, তাহলে আজ কেন এইরকম বাজে ব্যবহার করলো সে। সেই তখন থেকে তার মন মেজাজ খারাপ তার.. যখন ভার্সিটি তে রাজ কে অন্য একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখেছে।
.
এইতো আজ সকালেই ক্লাস শেষে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে কথা বলছিলো নেহাল আর রিয়া। কথা বলার এক ফাকে রিয়ার চোখ গেলো রাজের ক্লাসের সামনের বাগানটার কাছে। বাগানের এই পাশে দাড়িয়ে আছে রাজ , আর একটা মেয়ে । অনেক্ষণ ধরে কথা বলছে তারা। কথা বলার একফাকে হুহু করে হেসে দিলো রাজ , সাথে মেয়েটিও। অবশ্য আকাশ আর রনিও ছিলো তাদের কাছেই। তবুও রিয়া সেটা মানতে পারছে না। বাইরের মেয়ের সাথে কেন এতো হাসাহাসি করতে হয়? আর এতো কথা বলারই বা কি আছে। মজাজটা তার তখনই খারাপ হয়ে গেছিলো। নেহাল কে সেখানে ফেলে একা একাই চলে এসেছিলো ভার্সিটি থেকে। নেহাল বার বার পিছন থেকে ডেকেছে, কিন্তু কোনো রেসপন্স পায়নি। মেজাজ ভালো করতে সারাদিন এখানে এখানে ঘুরে ফিরে বিকালে বাসায় ফিরেছে সে। তবুও তার মাথায় এখনো ঘুরছে সেই এককথাই।
এইসবই বসে বসে ভাবছিলো রিয়া। হটাৎ ই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো সে..
– আচ্ছা, ও একটা মেয়ের সাথে কথা বলুক, হাসাহাসি করুক .. বা আরো দশটা মেয়ের সাথে এমন করুক , তাতে আমার কি? আমি এতো জেলাস হচ্ছি কেন? আমার এতো খারাপ লাগছে কেন? তাহলে কি আমি ? না না.. এ তো অসম্ভব, এ হতে পারেনা। আমিতো নেহাল কে ভালোবাসি। এমনিতেই নেহাল সারাক্ষণ আমাকে হারানোর ভয়ে থাকে। কতোটা ভালোবাসা থাকলে এইরকম ভয় কাজ করে মনে সেটা ভাবা যায়?
..
এইসব হাবিজাবি চিন্তা করছিলো রিয়া। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো তার। ফোন টা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে ছাদে গেলো রিয়া। অনেক্ষণ কথা বললো নেহালের সাথে। সকালের এমন ব্যবহারের জন্য ক্ষমাও চাইলো সে। তবে নেহাল রিয়ার কাছে বায়না করেছে আগামীকাল কোথাও তার সাথে ঘুরতে যেতে হবে তাকে … তাহলেই সে খুশি হবে। যদিও রিয়ার ইচ্ছা ছিলো না, তবুও নেহাল কে খুশি করতে তার কথায় রাজি হয়ে গেলো সে।
..
পরেরদিন সারাদিন নেহাল আর রিয়া ঘুরলো । সারাদিন ঘুরাঘুরি করে নেহাল কে বিদায় দিয়ে নিজের গন্তব্যে আসতে যাবে তখনই কিছু একটা দেখে থমকে দাড়ালো রিয়া। চোখ থেকে তার রক্ত ঝরছে। রাগে নিজের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে রিয়ার। রাগ কন্ট্রোল করতে হাতের আঙ্গুলগুলো মুঠোবন্দি করলো সে। ..
তার হাতের বামপাশের একটা ক্যাফেতে রাজ বসে আছে। সাথে ওইদিনের মেয়েটাও আছে। আকাশ আর রনি ও আছে ওদের সাথে কিন্তু ওদের কথা ভাবার কোনো প্রয়োজন রিয়ার নেই। রাজ কেন বার বার ওই মেয়ের সাথে থাকবে। তাছাড়া ওই মেয়ে তো ওদের ভার্সিটির কেউ না। ভার্সিটির হলে অবশ্যই রিয়া তাকে চিনতো। কিন্তু নাহ..
ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে সেখানে গিয়েই উত্তম মাদ্ধম দিয়া দিতে।
নিজের রাগকে কোনো মতে নিয়ন্ত্রণে এনে বাসায় চলে গেলো রিয়া।
.
কয়েকটা দিন কেটে গেলো।
ভার্সিটির প্রাঙ্গনে বসে রিয়া, মিম আর রিমা বসে আড্ডা দিচ্ছে। নেহাল ভার্সিটি আসেনি আজ। একপর্যায়ে রিমা রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো..
– কিরে, আজ তোর নেহাল এলো না কেন?
– কোনো প্রব্লেম হয়েছে হয়তো…
– তোর জানতে ইচ্ছে করেনা, নেহাল কেন এলো না?
– ও কেন এলো না, ওটা ওর ব্যাপার। আমার কেন জানতে ইচ্ছে করবে?
– তুই না নেহাল কে ভালোবাসিস?
– আমিতো…. কিছু একটা বলতে গিয়েও আটকে গেলো রিয়া। সে কি আদৌ নেহাল কে ভালোবাসে?. যদি ভালোই বাসতো তাহলে তো নেহালের ব্যাপারে জানার ইন্টারেস্ট থাকতো তার। কিন্তু এইরকম তো কখনো হয়নি।
রিয়ার নিরবতা দেখে মিম বলে উঠলো..
– ও তো কখনো নেহাল কে ভালোই বাসেনি। ও তো শুধু রাজ কে কষ্ট দেওয়ার জন্যই নেহালের সাথে এইরকম প্রেমের অভিনয় করছে। আর ওই বা কেন,,,, নেহাল ও কখনও রিয়াকে ভালোবাসেনি। তবে হ্যাঁ … রিয়া বাবার টাকা পয়শা… বাড়ি গাড়ি… এইসব কে খুবই ভালোবেসেছে ছেলেটা ।
– মিমের কথায় রিয়া খুব রেগে গেলো। আচমকাই একটা চর এগিয়ে নিয়ে বলে উঠলো..
– আজ তুই যদি আমার বন্ধু না হতি, তাহলে বুঝতি এই রিয়া চৌধুরী কি জিনিস। নেহাত বন্ধু হওয়ার অজুহাতে বেচেঁ গেলি। নাহলে আজ আমার থেকে খারাপ আর কেউ হতোনা।
আর হ্যাঁ, আমাকে যা খুশি বল.. কিছু বলবো না। কিন্তু নেহাল কে নিয়ে যদি কখনো কিছু বলেছিস, সেদিন তোদের আর আমার সম্পর্ক আমি ভুলে যাবো। damm it…
– এতো রাগছিস কেন রিয়া। ওতো ভুল কিছু বলেনি। যেদিন তুই নেহাল কে প্রপোজ করেছিলি সেদিন নেহাল তো একবারের জন্যও বলেনি ও তোকে ভালোবাসে। ও একবারের জন্যও কিন্তু বলেনি তুই ভালো মনের মানুষ, তাই তোকে যে কোনো ছেলেই চাইবে। কিন্তু হ্যাঁ .. নেহাল অন্য কিছু বলেছে। ও বলেছে, তোর বাবার অনেক টাকা পয়শা, বাড়ি গাড়ি, বিজনেস আছে, তাই তোর সাথে ও প্রেম করবে। সেসব কি তুই শুনিসনি ?
রিয়া কিছুটা নড়ে চরে উঠলো। মিমের বলা কথাগুলো রিয়ার কানে বাজছে।
রিয়া কিছু বলছে না। ওদের কথার উত্তর না দিয়ে ভার্সিটির গেইটের দিকে তাকালো রিয়া। এমনিতেই রেগে আছে ও, তারউপর সেই মেয়েটা আবার এসেছে। meyeta ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে রাজ দের ক্লাসের দিকে এগুতে লাগলো। রিয়া নিজের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে হনহন করে মেয়েটার সামনে এসে পথ আটকিয়ে দাড়ালো..। মেয়েটা অবাক হয়ে আ
রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো..
– কে আপনি? আমার পথ আটকালেন কেন?
– আমি কে সেটা আপনার জানতে হবেনা। আপনি কে সেটা বলুন?..
– আমি আপনার কাছে নিজের পরিচয় দিতে বাধ্য নয়। তবুও যখন বলছেন তো বলি..
আমি রাজের …
এতোটুকু বলতেই রিয়া মেয়েটির মুখে দিলো একটা চড় । ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে রিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো।রিয়া বলতে লাগলো..
– তুই রাজের কে?. নতুন গার্লফ্রেন্ড তাইনা?
– কি বলছেন এইসব বাজে কথা?
– আমি বাজে কথা বলছি? বাজে তো তোর ওই রাজ , যেই আমাকে পেলোনা,,, এমনিই আরেকটা মেয়ে জুটিয়ে নিলো।ছিঃ
– দেখুন আপনি কিন্তু এইবার বাড়াবাড়ি বলছেন। কিছু না জেনে কারো ব্যাপারে এভাবে মন্তব্য করবেন না।
– আর কি জানার বাকি আছে শুনি? চল তোর ওই রাজের কাছ..
রিয়া মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে রাজের ক্লাসের সামনে নিয়ে গেলো। রাজ ক্লাসেই ছিলো। তখনই দেখতে পেলো রিয়া কেয়াকে কে টানতে টানতে নিয়ে আসছে। তারাতা‌ড়ি করে ক্লাস থেকে বের হয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালো রাজ । অবাক হয়ে কেয়াকে জিজ্ঞেস করলো..
– কি হয়েছে? ও আপনাকে এভাবে টেনে এনেছে কেন?
– ও কি বলবে? আমার কথা শুন 😡 তুই কেমন ছেলেরে ? নিজের প্রতি কন্ট্রোল নেই তোর? যেই আমাকে পেলি না, এমনি আরেকটা জুটিয়ে নিলি? এতোই চাহিদা তোর শরীরের? রাজ ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। আজকের রিয়া কে সম্পুর্ন অন্য রকম লাগছে তার কাছে। রিয়া রাজ কে অপছন্দ করে সেটা রাজ জানে, কিন্তু ও যে রাজকে এতোটা খারাপ ভাবে সেটা রাজের কল্পনার ও বাইরে। রাজ কিছুক্ষন ছলছল চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে কেয়ার দিকে তাকালো। বললো..
– আমাকে মাফ করবেন । আমার জন্য আজ আপনাকে এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
– না , ঠিক আছে। আকাশ কোথায় একটু ডেকে দাও
– ও তো আজ আসেনি। আন্টির শরীর নাকি কিছুটা খারাপ তাই। কেন, আপনাকে কিছু বলেনি?
– নাতো। আমিতো ওকে কল দিলাম। ফোন অফ বলছে।
– ওহ,. হয়তো চার্জ নেই ফোনে ।
– ওহ আচ্ছা.. তাহলে আসি।
– আচ্ছা… নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে কথাগুলো বলে ক্লাসে চলে গেলো রাজ ।
..
কেয়া রিয়ার দিকে ফিরে তাকালো.. । রিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এইখানে.. কেয়া বলতে লাগলো…
– কারো প্রতি যদি আপনার ভালোবাসা না! থাকে, তাহলে কারো প্রতি ঘৃণা করার অধিকার ও আপনার নেই। কথায় আছে, যে যেমন চরিত্রের, সবাইকে সে তার চরিত্রের মতোই ভাবে। শুধু শুধু ছেলেটি কে আপনি এতোগুলো অপবাদ দিলেন। কিন্তু দেখেন, সে কিন্তু আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে একটা টু শব্দও করলো না। কতোটা সহ্যশক্তি থাকলে এই ধরনের কথা হজম করা যায় ভেবে দেখেছেন? আপনার আর ওর ব্যাপারে আমি সবই জানি। আকাশ আমাকে বলেছে। আর হ্যাঁ .. আমি আকাশের ফিউচার ওয়াইফ … আকাশ আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ।তাই আকাশের সাথে দেখা করতে আসি। কিন্তু আকাশ আমার সাথে একা দেখা করতে চায় না। তাই রাজ আর রনিকে ও সাথে নিয়ে নেই। that’s it …
রিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো.. কাপা কাপা কন্ঠে কেয়া কে জিজ্ঞাসা করলো..
– তাহলে তখন যে আপনি বললেন আপনি রাজের …
– হ্যাঁ, তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম আমি রাজের বন্ধুর ওয়াইফ । কিন্তু আপনি তো আমার পুরো কথাটা শুনলেনই না।
– কিন্তু আপনি তো ডিরেক্টলী বলতে পারতেন, আপনি আকাশের ওয়াইফ ..
– হ্যাঁ, কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো রাজের কথা বললে আপনি তারাতা‌ড়িই চিনবেন। কারণ রাজ একদিন আপনাকে দেখিয়ে বলেছিলো আপনি ওর রিয়া আপু । যেদিন আপনি ওই ছেলেটির সাথে বসে ছিলেন। রাজের সাথে আমাকে দেখে রেগে গিয়ে চলে গিয়েছিলেন। আমরা সবটাই খেয়াল করেছিলাম, কিন্তু আপনাকে কিছু বুঝতে দেয়নি।
– রাজ আমাকে ওর রিয়া আপু বলেছে???. চূড়ান্ত অবাক হয়ে কেয়াকে জিজ্ঞাসা করলো রিয়া..
– হ্যাঁ, তাইতো বলেছে। কেন, আপনি কি সম্পর্কে ওর অন্যকিছু হোন?
– না.. মানে..
কেয়ার এইরকম কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রিয়া। কিছু বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে।
রিয়ার এইরকম অবস্থা দেখে কেয়া মুচকি হাসলো। তারপর রিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
..
রিয়া আগের জায়গায় পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছে। কিছুই ভাবতে পারছে না সে। যতোই চাচ্ছে ছেলেটাকে আর কোনো কষ্ট দিবে না, ততোই যেনো আরো বেশি কষ্ট দিয়ে দিচ্ছে সে।
কিছুই ভাবতে পারছে না সে। হটাৎ ই পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেলো… পিছনে ঘুরে দেখলো মিম আর রিমা দাড়িয়ে আছে। ওদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ….
– কিরে, তোরা ……………….

<<<<<<এর বেশি ভালবাসা যায় না>>>>>>

পর্ব::(৮)

Written::Ar Limat

– কিরে, তোরা এখানে কখন এলি?. অবাক হয়ে মিম আর রিমাকে জিজ্ঞাসা করলো রিয়া।

রিয়ার কথায় রিমা কিছুটা হাসলো। হেসে রিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো..
– এইবার শান্তি হয়েছে তো তোর?
– মানে? ভ্রু কুঁচকে রিমাকে জিজ্ঞাসা করলো রিয়া।
– মানে টা যে কি সেটা কি তুই বুঝছিস না, নাকি বুঝতে চাইছিস না?
– কি বলবি স্পষ্ট করে বল..
– যদি স্পষ্ট ভাবে জানতে চাস তাহলে সেই স্পষ্ট কথাটা হলো তুই রাজ কে ভালোবাসিস।
– কি বাজে কথা বলছিস?
– ও বাজে কথা বলছে না রিয়া, ও সত্যিই বলছে। মিম বলে উঠলো…
রিয়া অবাক চাহনিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থেকে বললো..
– তোরা জানিস আমি নেহাল কে ভালোবাসি, তারপরও মুর্খের মতো এইরকম কথা বলছিস?
– তুই কখনো নেহাল কে ভালোবাসিস নি আর বাসবিও না।।
.
আচ্ছা সে কথা বাদ, মেনেই নিলাম তুই রাজ কে ভালোবাসিস না, তাহলে ওই মেয়েটাকে রাজের পাশে দেখে ইনফ্যাক্ট আজ তো পাশেও দেখিস নি, just ওর ক্লাসের দিকে যেতে দেখেছিস তাতেই এতো জেলাস হয়ে ওই মেয়ের সাথে এতো বাজে বিহেভ করলি কেন?
– জানিনা, হয়তো আমার কাজিন, ওর সাথে আমার রক্তের টান আছে তাই করেছি এমন। খুবই আনমনা হয়ে বললো রিয়া। যদিও এই প্রশ্নটা রিয়ার মনের ভিতরেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
– একটা কথা কি জানিস, রক্তের সম্পর্কের চেয়ে আত্মার সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই এমন করতে হবে সেটা কিন্তু কোনো কথা না। আর তুই যদি ওকে just কাজিনই ভেবে থাকিস, তাহলে ওই মেয়েটা যখন বললো রাজ তোকে বলেছে তুই ওর মামাতো বোন তখন বোন কথাটা শুনে তুই অস্থির হয়ে গিয়েছিলি কেন? আর তখন তোর মুখটাই বা কেন অন্যরকম হয়ে গেছিলো, যেনো মনে হয়েছিলো তুই এই সম্বোধন টা আশা করিস নি?
রিয়া কিছু বললো না। সেও ভাবছে এমনটা হবার কারণ কি? ওর এইরকম আনমনা চেহারা দেখে রিমা বললো..
– যেটা হয়ে গেছে সেটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুন করে জীবন শুরু কর রিয়া, , সেটাই তোর জন্য মঙ্গল হবে।
– কি বলতে চাইছিস তুই? কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো রিয়া…।
– আমরা জানি তুই নেহাল কে ভালোবাসিস না, আর ও একটা বাজে ছেলে .. তোর টাকা পয়শার প্রতি ওর লোভ। তোর প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ওর নেই। এমনকি ওর প্রতিও তোর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। যদি থাকতো তাহলে আজ ও ভার্সিটি না আসাতে তুই এতো স্থির থাকতে পারতি না। কিন্তু তোর মধ্যে কোনো রিয়েক্ট আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই বলছি ওকে মন থেকে মুছে ফেল। যদিও তোর মনে ওই নেহাল কোনো দিন ছিলো না। তারপরও বলছি। And দেন, রাজকে নিয়ে লাইফ স্টার্ট কর।
.
মিম আর রিমার এমন কথায় রিয়া বেশ রেগে গেলো। তবে কোনো প্রতিবাদ না করে শান্ত গলায় বললো..
– আমি নেহাল কে ভালোবাসি কি বাসিনা, সেটা কোনো ফ্যাক্ট না.। তবে নেহাল আমাকে অনেক ভালোবাসে and আমাকে অনেক বিলিভ করে। ওকে আমি কষ্ট দিতে পারবো না। ওকে আমি ঠকাতে পারবো না কখনোই..
– মানলাম তুই ওকে ঠকাতে পারবি না, কিন্তু ও যে তোকে ঠকাচ্ছে?
– কি বলছিস এইসব?
– আমরা প্রথম থেকেই বলছি ওই ছেলে just তোর রূপ টাকা , পয়সা , বাড়ি গাড়ি, বড় বিজনেস এইসবেই আকৃষ্ট। তুই কেন সেটা বুঝতে পারছিস না? আর..
– আর কি?
– আর ওই ছেলেকে আমরা প্রায়ই দেখেছি তুই পাশে না থাকলেই কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলে।
– তাই নাকি? একটা ভালো রিলেশন কিভাবে নষ্ট করতে হয় সেটা দেখছি তোরা খুব ভালোই জানিস। তবে কি, তোদের এই ফাঁদে আমি কখনোই পা দিবো না।
রিয়া রেগে সেখান থেকে চলে গেলো। মিম আর রিমা তাকিয়ে দেখতে লাগলো তার যাওয়া।

………….
এ দিকে রনি আর তিশার মাঝে ভালো একটা রিলেশন চলছে ।।
ক্যাম্পাসের একটা গাছের নিচে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে বই দেখছিল তিশা। তিশা রনিকে ভালবেসে ফেলেছে । যদিও রনি তিশাকে ততটা কাছে টানেনা ।। মাঝে মাঝে আড্ডা বাজি করে দুজন ।।
সে যাইহোক .. তিশা গভীর মগ্নে ছিলো বই নিয়ে, এমন সময় তার পাশে কেউ একজন বসে তার চোখ দুইহাত দিয়ে ঢেকে দিলো। তিশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো..
– রনি..
রনি হাত ছেড়ে দিয়ে পাশে ফিরে বসে বললো..
– আচ্ছা, আমাকে না দেখেই তুমি কিভাবে বলতে পারো যে এটা আমিই..?
– তোমার গায়ের গন্ধ যে আমার খুব পরিচিত … সবার থেকে তোমার গায়ের স্মেল টাই আলাদা..
– মানে কি? আর কার কার গায়ের ঘ্রাণ শুকেছো তুমি? খানিকটা রেগে জিজ্ঞাসা করলো রনি..
– আহা রাগ করছো কেন? আমি এইসব মীন করে কথাটা বলিনি। তবে.. তুমি তো জানোই আমার আশেপাশে আরো কতো মানুষ আছে .. কই তাদের চলাফেরায় তো আমি তোমাকে খুজে পায়না। কিন্তু তোমাকে না দেখেও আমি বুঝতে পারি এটা তুমিই…
– হুম বুঝেছি…
যাইহোক, এভাবে এখানে বসে আছো কেন?
– এমনি…। তুমি এখানে এলে হটাৎ? রাজ কোথায়?
– ও আর কোথায় থাকবে, ক্লাসেই আছে। বেচারার ভাগ্য টাই খারাপ।
– কেন? আবার কি হলো?
– যা কপালে ছিলো তাই হয়েছে। কতো নিরীহ একটা ছেলে… ওই রিয়ার বাচ্চাকে ভালোবেসে জীবনে পাপ করেছিলো অনেক,,, সেটারই মাশুল দিতে হয় এখনো। কই ছেলেটা সব ভুলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইছে, কিন্তু নাহ, ওই রিয়ার সহ্যই হচ্ছে না সেটা। ওকে অপমান না করলে যেনো ওর পেটের ভাত হজম হয়না। বেশ অভিমানের সুরে কথাগুলো বললো রনি.. ।

তিশা একদৃষ্টিতে রনির দিকে তাকিয়ে আছে।
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
– তোমাকে দেখছি..
– আমাকে এভাবে দেখার কি হলো?
– তিশা কোনো উত্তর দিলো না। রনির দিকে তাকিয়ে যেনো কোনো ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছে সে। রনি বললো..
– কি ব্যাপার? কি এতো ভাবছো?
– ভাবছি, তোমাকে আরো আগে কেন ভালোবাসলাম না,,, এর আগেও তো তোমাকে অনেক দেখেছি, কিন্তু তখন তো তোমার প্রতি আমার তেমন কোনো ফিলিংস হয়নি। কিন্তু সেদিন কি এমন জাদু করলে আমায়? যে আমি এতো কাছে চলে এলাম তোমার?
– আমিও বুঝিনা, সেদিন তো আমি তেমন কিছুই করিনি, Just ওই অহংকারি রিয়া কে গুনে গুনে চারটা থাপ্পড় দিয়েছি, আর এতেই তুমি ফিদা হয়ে গেলে?
– হ্যাঁ .. জানিনা সেদিন আমার কি হয়েছিলো। তুমি যখন রিয়ার সাথে এইরকম করছিলে, আমি ক্যাম্পাসে বসে থেকে সবটাই দেখছিলাম। আমিতো জাস্ট অবাক,স্বয়ং রাজ যা করতে পারল না , তুমি সেটা করে দেখালে… । তোমার সেই সৎ সাহসিকতা সেদিন আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিলো। বিশ্বাস করো, সেদিন সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। শুধু তোমার মুখটাই আমার চোখে ভেসে উঠেছে। তাইতো দেরি না করে পরেরদিনই প্রোপোজ করে বসলাম তোমাকে। আর তুমিও এক্সেপ্ট করে নিলে। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছিলো সেদিন।
– তিশার কথা শুনে রনি একটা তৃপ্তির হাসি দিলো। যা দিয়ে তার ভালোবাসা জানান দিলো।

…………
বাসায় গিয়ে রিয়া নেহালকে কল দিলো। ফোন ওয়েটিং এ পেলো সে। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো তার। কয়েকবার কল দিয়েও ওয়েটিং এই পেলো। রাগে আর কোনো কল দিলোনা সে। কিছুক্ষন পর রিয়ার ফোনে রিং বেজে উঠলো। রিয়া ফোন টা কেটে দিয়ে নিজেই কল ব্যাক করলো..
– হ্যালো নেহাল..
– বলো রিয়া ..
– আজ আসো নি কেন ভার্সিটিতে?
– এমনি, ভালো লাগছিলো না, তাই..
– ওহ,, এতোক্ষন কার সাথে কথা বলছিলে? কখন থেকে কল দিয়ে শুধু ওয়েটিং পাচ্ছি..
– ওই ইয়ে মানে, মামার সাথে কথা বলছিলাম। কেন সন্দেহ করছো?
– আরে নাহ, সন্দেহ করবো কেন?
– তাইতো। আচ্ছা রিয়া একটা কথা বলবো, যদি কিছু মনে না করো?
– মনে করার কি আছে? বলো কি বলবে?
– রিয়া, আমার না কিছু টাকা লাগবে….
– কি করবে টাকা দিয়ে?
– তুমিতো জানোই আমার বাবা নেই, মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ডক্টর দেখানো লাগবে। তাই..
– আচ্ছা আর বলতে হবে না। কতো লাগবে সেটা বলো..
– বেশি না, এই হাজার পঞ্চাশেক হলেই হবে…
– এতো টাকা? ডক্টর দেখালে এতো টাকা লাগে? অবাক হয়ে বললো রিয়া।
নেহাল ভাল করেই জানে রিয়া কোটিপতির একমাত্র মেয়ে তার কাছে এটা কোন ব্যাপার না ।।
এখন আশপাশে খাবে পরে আসল জায়গায় মুখ বসাবে।।
– তোমার সমস্যা হলে থাক, অন্য কোথাও থেকে জোগাড় করে নিবো.. ন্যাকামো করে বললো নেহাল..।
– না ঠিকআছে, কখন আসবো টাকা নিয়ে?
– কাল ভার্সিটিতে দিলেই হবে।
– তোমার বাসার ঠিকানা দাও.. আমি নিয়ে আসছি..
– না না সমস্যা নেই। কাল হলেই চলবে।
– Ok ….
– হুম এখন রাখি
– ok bye.
– bye, love you সোনা… ফোন রেখে দিলো নেহাল। রিয়ার ফোন রাখার সাথে সাথেই আরেক জায়গায় কল দিলো সে.. ফোনের ওপাশ থেকে বললো..
– কি হলো.. রাজী করাতে পারলে?
– হ্যাঁ, .
– কতো চেয়েছো?
– পঞ্চাশ হাজার
– এতো কম কেন? ওদের তো অনেক টাকা।
– সেটাতো আমি জানিই। কিন্তু প্রথম বারই যদি বেশি চাই তাহলে কেমন না, এই পঞ্চাশ হাজার দিয়ে তো মাত্র স্টার্ট দিলাম। ধীরে ধীরে বাড়াবো..
– Ok baby ..
– হুম.. আচ্ছা এখন bye।
– bye
..
পরেরদিন নেহাল কে টাকাটা দিতেই ভার্সিটি থেকে চলে গেলো সে। মিম শুধু দেখলো। নেহাল যেতেই রিয়া কে বললো..
– কি ব্যাপার? এখনই টাকা নেওয়া শুরু করে দিয়েছে?
– ওর মা অসুস্থ, তাই নিয়েছে।
– ওর মা অসুস্থ? তুই কি পাগল হয়ে গেলি?
– এখানে পাগল হওয়ার কি আছে শুনি?
– আসলেই তুই অন্ধ হয়ে গেছিস। আরে ওর তো মা ই নেই। তাহলে অসুস্থ হবে কি করে?
রিয়া যেনো আকাশ থেকে পরলো। অবাক হয়ে বললো..
– এইসব কি বলছিস তুই? মা না থাকলে মাকে নিয়ে কেউ মিথ্যে বলে?
– মা যে নেই এমন না… মা আছে, তবে ওর কাছে নেই। স্বামীর সংসার রেখে পরকীয়া করে ধরা পরেছিলো। সেদিনই ওর বাবা ওর মাকে বের করে দিয়েছিলো। তারপর থেকে ওদের সাথে ওর মায়ের কোনো যোগাযোগ নেই।
– তুই এতোকিছু কিভাবে জানিস?
– ছোট্ট একটা শহরে থাকি, এইটা জানা কোনো ফ্যাক্ট না।
– তাহলে আমাকে তো কখনো বলিস নি এইসব?
– কি বলবো তোকে? তুই তো বলিস ওই ছেলেকে তুই ভালোবাসিস, আর ভালোবাসার মানুষের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যে তুই জানবি না সেটা আমার জানা ছিলো না।
রিয়া কিছু বললো না। তবে ওর চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।
মিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দিলো।

………..

রাজ রাতের আধারে একা একাই রুমের বারান্দায় বসে আছে। হাতে একটা কফিভর্তি মগ। কিছুক্ষন পর পর মগে চুমুক দিচ্ছে আর সামনে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোতে অন্ধকার রাতটাও বেশ অপরুপ লাগছে তার কাছে। খুব স্বপ্ন ছিলো,. এইরকম একটা চাদনি রাতে রিয়ার পাশে বসে ওর এক হাত জড়িয়ে ধরে জোৎস্না বিলাশ করবে। কিন্তু সবার সব আশা তো আর পুরন হয়না। কিছু কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আজ খুব জানতে ইচ্ছে করছে, ওর মধ্যে এমন কি নেই যা নেহালের মধ্যে আছে? ও কি রিয়ার যোগ্য না? টুপটুপ করে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো তার চোখ থেকে।
তবে হ্যা আর সহ্য করব না আমিও রিয়া চৌধুরিকে বুঝিয়ে দেব রাজ কি জিনিস,……………

To be Continue …..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে