গল্পঃডিভোর্সের পরে পর্ব-০১

0
1866

গল্পঃডিভোর্সের_পরে

#পর্বঃ১

#লেখকঃরিয়াজ।

আজ তিন বছর হলো আয়ানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে। অবাক করা বিষয় হলো ৫ বছর সম্পর্ক করে আমাদের বিয়েটা হয়েছে। কিন্তু সেই বিয়ে আমরা এক বছর ও টিকিয়ে রাখতে পারলাম না।এক বছরের মাঁথায় আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।এই বিয়ের জন্য এই আয়ান কে পাওয়ার জন্য আমি যে কতো কিছু সহ্য করেছি কিন্তু শেষে কি হলো আমাদের এই বিয়ে সাথে আয়ানকে আমি এক বছর ও ধরে রাখতে পারলাম না।

বাবার বাড়িতে এসে উঠেছি সেই তিন বছর আগেই।প্রথম এক বছর একমাত্র ভাইটি অবিবাহিত ছিলো সেই এক বছর বেশ ভালোই ছিলাম।আমার তখন মনে হতো আয়ানের সাথে ডিভোর্স হয়ে বোধহয় ভালোই হয়েছে। কতো সুখেই না আছি আমি।

কিন্তু এক বছর পর আমার ভাইয়ের বিয়ে হলো।ভাই একটি সরকারি চাকুরী করতো বয়েসে আমার ৫ বছরের ছোট। প্রথম কয়েকদিন ভাইয়ের বউ আমার সাথে বেশ ভালোই ব্যাবহার করতো।কিন্তু যেদিন থেকে জানতে পারে আমার হাজবেন্ড আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে সেদিন থেকেই তার সুর পালটে যায়।উঠতে বসতে সে আমাকে হুকুম করা শুরু করে।

তার কাছে মনে হতো আমি সে বাড়ির চাকর।মানে আমি বাড়ির চাকরানি আর সে বাড়ির মেয়ে।প্রথম প্রথম আমার খুব খারাপ লাগতো।কিন্তু এরপর আম্মু বুঝাতো কি করবি তোর কপালের দোষেই তুই আজ এ বাড়িতে এসেছিস।এই বাড়িটাতো এখন তোর ভাইয়েরই।তাই তোর ভাই আর ভাইয়ের বউ যেটা বলে সেটাইতো শুনতে হবে।তোর বাবা পেনশনের যে টাকাটা পেয়েছে সেই সব টাকাই তো তোর বিয়ের জন্য খরচ হয়ে গিয়েছে।

এখন আমাদের খরচ, তোর খরচ সব তো তোর ভাই ই দিচ্ছে।তাই তোর ভাই আর তার বউ যা বলে তা কি আমাদের শুনতে হবে না?।আমার নিজের মায়ের মুখে এসব কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগে।আমি চাইলেও এখন ভাইয়ের বউয়ের কোনো কথার কোনো প্রতিবাদ করবো না।কারণ আমার জন্য যদি আমার ভাই আমার বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়।আর আমাকেও যদি ঘর থেকে বের করে দেয় তখন আমি কই যাবো কার কাছে যাবো।

এসব কথা ভেবে আমাকে যা বলতো আমি সব সহ্য করতাম।আমার নিজের বাবার বাড়িতে আমি চাকরানি হয়ে থাকতাম।আমি যে মেয়ে কোনো কাজ করতাম না।আমার বাবা মা আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাতো না।

আজ আমার বাবা মায়ের সেই মেয়েকে দিয়ে আমার বাবা মায়ের সামনেই আমার ভাইয়ের বউ আমাকে দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করায়,রান্না করায়,ভাসন মাজায়,ফ্লোর মুছা লাগে।আমার আব্বু আম্মু এসব দেখেও মান সম্মানের ভয়ে কিছু বলে না।

একদিন হয়েছে কি আমার ভাইয়ের বউ চেয়েছিলো আমাকে একটি অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করবে।ভাইয়ের বউয়ের ছোট বোন বাড়িতে আসলো।২ দিন থেকে সে চলে গেলো। সে যাওয়ার দুইদিন পর আমার ভাইয়ের বউ পুরো বাসা মাঁথায় তুলে ফেলেছে তার বাবার বাড়ি থেকে দেয়া চেইনটি সে পাচ্ছেনা।

আর সে সবাইকে বলছে তার সেই চেইন আমি চুরি করে বিক্রি করে ফেলছি।কারণ এই বাসায় আমি ছাড়া আর কেউ বাহিরে যায় না।আমার ভাই অফিস থেকে বাসায় আসলো।তাকেও তার বউ এই কাহিনি বুঝালো।আমার যেই ভাই কখনো আমাকে তুই তুগাড়ি করে বলেনি।

তার শ্বশুর বাড়ির সেই চেইনের জন্য আমার ছোট ভাই আমাকে মারতে এসেছিলো।তখন আমার বাবা আমার ভাইকে থামায়।আর বলে যদি আমার মেয়ে চেইন চুরি করে থাকে তাহলে আমি নিজে প্রয়োজনে চাকরি করে তোর বউকে চেইন কিনে দিবো।তারপরেও তুই আমার মেয়েকে কিছু বলিস না।আমি যে এসব আর সহ্য কর‍তে পারছি না।

এরপরদিন দুপুরে আমরা সবাই টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিলাম ঠিক সে সময় আমার ভাইয়ের শ্বাশুড়ি আসে সে এসে তার মেয়েকে বলে মা লিজা সরি আমার ভাইয়ের বউয়ের নাম বলা হয়নি তার নাম লিজা।

সে এসে বলছে মা লিজা তোর বোন বাড়িতে যাওয়ার সময় মনে হয় তোর চেইনটা ভুল করে নিয়ে গেছে।আমি সেই চেইনটি দিতে এসেছি।তাদের বাসা কাছেই ছিলো।চেইনটি দিয়ে সে সেখান থেকে চলে যায়।আমার ভাই খাওয়া শেষ করে তার রুমে
চলে যায় কারো সাথে কোনো কথা না বলে।তারপর সেই রুমে তার বউ লিজা যাওয়ার পর অনেক চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পাওয়া যায়।

মানে সেই চেইন নিয়ে আমার ভাই তার বউকে খুব জাড়ছে।এতে অবশ্য আমার খুশি হওয়ার কথা।কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না।কারণ আমার ভাইয়ের এই রাগ তার বউ লিজা আমার উপরে এসেই যেকোনো ভাবে জাড়বে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।

যেটা ভেবেছি সেটাই হয়েছে। আমার ভাই বাসা থেকে বের হওয়ার পর লিজা নানা ভাবে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে শুরু করে।আমার সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না।আচ্ছা গল্প বলতে বলতে গল্পের নায়িকার নামই বলা হয়নি। এতক্ষণ
ধরে যে গল্প বললেন তার নাম খাদিজা আক্তার মিম।এটি একটি আত্বজীবনীমূলক গল্প। ডিভোর্সের পর এক নারীর সাথে কি কি হতে পারে তার সবই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করবো এই গল্পের মাধ্যমে।

ঠিক আছে আবার গল্পে যাই।এভাবেই খুব কষ্টে আমার দিন যাচ্ছিলো। ১.৫ বছরের মাঁথায় আমার আব্বু আম্মু আমাকে না জানিয়ে আমার একটি বিয়ে ঠিক করে।আমি এর কিছুই জানতাম না।যেদিন ছেলে আসবে সেদিন সকালে আম্মু আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বল্লো মা তোকে না জানিয়ে আমরা একটি কাজ করেছি।আজকে একটি ছেলে আসবে তোকে দেখতে। ছেলের আগে একটি বিয়ে হয়েছে। আর তোর যে আগে একটি বিয়ে হয়েছে আমরা সেটি গোপন রেখেছি। আমি তখন বল্লাম মা ছেলেটির আগে একটি বিয়ে হয়েছে এটি জেনেও তাকে আমার বিয়ে করতে হবে আর আমার আগে একটি বিয়ে হয়েছে এটি জানলে কি সমস্যা সেটাইতো বুঝলাম না।

তখন আম্মু বল্লো মা আমাদের সমাজ পুরুষের ২’৩ বিয়ে মেনে নেয়।কিন্তু নারীর এক বিয়ের বেশি দুই বিয়ে কেউ মেনে নেয় না।আচ্ছা তুই রেডি হয়ে নে।কিছুক্ষণ পর ছেলের মা, আর বোন আসবে তোকে দেখতে। আর সাথে ছেলেও আসবে।

এরপর আমি না চাইতেও আম্মুর কথা রাখতে রেডি হয়ে যাই।আমি সেদিন দেখলাম আমার ভাইয়ের বউ অনেক খুশি।তার চেহারার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে সে আমাকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচে।যাই হোক দুপুরের দিকে ছেলে আসলো।ছেলেকে দেখে মনে হচ্ছে তার বয়স আমার বাবার চাইতেও বেশি।আমি কিছু না বলে চুপ করেই বসে ছিলাম।

কারণ আমার এখানে কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকার কথা।তো ছেলের পরিবার আর ছেলের আমাকে দেখে পছন্দ হয়।তারা সেদিনই আমার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে চায়।তো তখন আবার আমার ভাই বাসায় ছিলো না আব্বু বল্লো আচ্ছা আপনারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন আমার ছেলে আসুক।

আমার ছেলে যেটা বলবে সেটাই হবে।তখন আমার ভাইয়ের বউ বলছে বাবা আপনার ছেলেকে কেনো আসতে হবে আপনি আছন মা আছে আমি আছি আপনার ছেলে আসলে আমি তাকে বুঝিয়ে বলবো বাবা বল্লো না মা আমার ছেলে ছাড়া আমি একজনকে কি করে বিয়ের কথা পাকাপক্ত করে ফেলতি পারি।

মানে আমার ভাইয়ের বউয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে যে সে আমাকে যত দ্রুত পারে এ বাড়ি থেকে বিদায় করলেই পারে।এর কিছুক্ষণ পরেই আমার ভাই চলে আসলো।ভাই আসার পর ভাইয়ের চেহারার দিক দেখে মনে হচ্ছে সে ছেলেকে দেখে খুশি হতে পারেনি।কারণ সে খুব গরম গরম কথা বলছিলো।

বুঝতে পারছিলাম আমার ভাই ছেলেকে দেখে মোটেও পছন্দ করেনি।এতে করে আমার একটু ভালো লাগে।যাইহোক এরপর হঠাৎ দেখলাম আমার ভাইয়ের বউ ভাইকে রুমে ডেকে নিয়ে গেলো।রুম থেকে আসার পরেই আমার ভাইয়ের সুর পালটে গেলো।যেই ভাই এতক্ষণ খুব গরম গরম কথা বলছিলো সে ভাই রুম থেকে বের হওয়ার পরেই একদম শান্ত নরম গলায় ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলতে লাগলো।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে লিজা ওকে বুঝিয়েছে মানে ভাইয়ের বউ যাতে আমাকে তারাতাড়ি বাড়ি থেকে বিদায় করতে পারে।আমি যেই মেয়ে আয়ানকে বিয়ে করার আগে ৩৩ টা ছেলেকে রিজেক্ট করেছিলাম আজ সেই মেয়েই কিনা এক বয়স্ক ভুড়ি ওয়ালা ছেলে কে বিয়া করার কথা বলায় আমি নিশ্চুপ। আমার পরিবার যা বলছে আমি সব মেনে নিচ্ছিলাম।

কারণ আমি নিরুপায়।পরিস্থিতি মানুষকে আসলেই অনেক কিছু বুঝতে শেখায়।এরপর আমার ভাই ছেলের পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলে।আগামী শুক্রবার আমাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হবে সব কিছু ঠিকঠাক।

।।তো দেখতে দেখতে সব কিছু কমপ্লিট। আমার বিয়ে এর পরদিন। বিয়ের কেনাকাটাও কমপ্লিট।কিন্তু বিয়ের আগের দিন রাতে ছেলের পরিবার কল দিয়ে জানায় তারা তাদের ছেলেকে কোনো ২ বিয়ে করা মেয়ের সাথে দিবে না।সবাই বুঝে গেলো যে ছেলের পরিবার কোনো ভাবে জেনে গিয়েছে যে আমার আগে একটি বিয়ে হয়েছে।

এই কথা শুনে আমি যেনো অনেকটা আকাশ থেকে পড়লাম।যেই ছেলের আগে একটি বিয়ে হয়েছে সেই ছেলে আমার আগে একটি বিয়ে হয়েছে বলে আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে