ডিভোর্সের পরে পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
1340

#গল্পঃডিভোর্সের_পরে
পর্বঃশেষ
#লেখকঃরিয়াজ

মিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীলয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো নীলয় আমি আগে থেকেই জানতাম যে তোমার সেই স্কুল লাইফের ভালোবাসার মানুষ অন্য আর কেউ নয় সেটা ছিলাম আমি মিম।আমি এটাও যেনেও এতোদিন চুপ ছিলাম?কেনো চুপ ছিলাম জানো?

নীলয়ঃনা তুমি যেনেও কেনো চুপ ছিলা মিম?

মিমঃকারণ আমি চাইনা আমাদের এই সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যাক।আমরা যেভাবে আছি সারাজীবন এভাবেই থাকতে চাই।

নীলয়ঃকিন্তু তুমি জানলে কি করে?

মিমঃনাইমা যখন বেঁচে ছিলো তখন তোমার খোঁজে আমি একদিন তোমাদের বাসায় যাই।নাইমা আমাকে নিয়ে তোমার রুমে বসায়।সেদিন তুমি বাসায় ছিলা না।কি যেনো একটা কাজে গিয়েছিলা।তো আমি যখন তোমার রুমে বসে ছিলাম নাইমা চলে গিয়েছিলো চা বানাতে।তখন আমি বিছানার উপর যখন বসি তখন আমার মনে হয় আমি কিছু একটার উপর যেনো বসেছি।তারপর আমি বিছানা উলটে দেখলাম সেখানে একটি ডাইরি ছিলো। আর ডাইরির উপরেই লিখা ছিলো মিম।

ডাইরির উপরে মিম নামটা দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে যাই।এই ডাইরির উপরে আমার নাম লিখা কেনো?আমি প্রথম পৃষ্টা থেকে সব গুলো পৃষ্টা উলটে উলটে দেখতে থাকি।পুরো ডাইরিটা দেখে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা তোমার ডাইরি।আর তোমার সেই স্কুল লাইফের ভালোবাসার মানুষ অন্য আর কেউ নয়।সেটা ছিলাম আমি।

নীলয় অবাক দৃষ্টিতে মিমের দিকে রইলো।নীলয় মিম কে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ মিমের কাছে এসব কথা শুনে নীলয়ের একটু অন্যরোকম লাগছে।কারণ যেখানে মিম নীলয় কে সারাজীবন বন্ধু হিসেবে এই যেই সম্পর্কটি আছে সেই সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে চাইছে সেখানে নীলয় কিনা মিম কে ভালোবাসার কথা বলছে।

তবে মিম এখানে কোনো প্রকার না করেই খুব সুন্দর ভাবে নীলয় বুঝাচ্ছে দেখো নীলয় আমি সেই ছোট বেলা থেকেই কিন্তু তোমাকে আমার একটি ভালো বন্ধু ভেবে আসছি।আর আমি কিন্তু তোমার কাছে অনেক ঋনি।

কারণ আমি আজ যেই পজিশনে এসেছি তুমি না থাকলে এটা কখনোই সম্ভব হতো না।কিন্ত দেখো নীলয় আমি আমার হৃদয়ে আয়ান ব্যাতিত অন্য কোনো ছেলেকে জায়গা দিতে পারবো না।হয়তো আয়ানের সাথে আমার দেখা হয় না কথা হয় কিন্তু দেখা না হলেও কথা না হলেও আয়ানের প্রতি আমার ভালোবাসা কিন্তু এক বিন্দুও কমেনি।

আমরা হয়তো আর কখনো এক হতে পারবো না।তবে হ্যাঁ আয়ানের প্রতি আমার সেই শুরুতে যেমন ভালোবাসা ছিলো সারাজীবন ঠিক তেমনই ভালোবাসা থাকবে।(মূলত আমি এখানে বুঝাতে চাচ্ছি একজন মানুষকে ভালোবেসেই কিন্তু সারাজীবন কাঁটিয়ে দেয়া যায়)

মিম নীলয় কে আরও বলছে নীলয় আমি জানি তুমি আমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসো হয়তো তুমি আয়ানের চাইতেও বেশি ভালোবাসো আমাকে।কিন্তু নীলয় তুমি নিশ্চয় এটাও জানো যে সব কিছু জোর করে পাওয়া গেলেও ভালোবাসা কিন্তু জোর করে পাওয়া যায় না।

আর হ্যাঁ নীলয় তুমি এতোদিন ভেবে আসছিলা তুমি যদি তোমার ভালোবাসার কথা আমাকে জানাও তাহলে হয়তো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যাবে।তোমার এই ধারণাটি ভুল নীলয়।একজন মানুষ অন্যএকজন মানুষ কে ভালোবাসলে সকল সঙ্কোচ ভুলে যতো তারাতাড়ি সম্ভব সেই মানুষটিকে তার ভালোবাসার কথা বলে দেয়া উচিত।

তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আগে যেমন ছিলো আজ থেকে ২০ বছর পরেও আমাদের সম্পর্ক ঠিক আগের মতোই থাকবে।

নীলয়ঃতোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আয়ান কে এতোদিনে ভুলে গিয়েছো তাই আমি আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছে। তবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষ কে যে এতোবেশি ভালোবাসতে পারে সেটা আমার জানা ছিলো না।তোমার ভালোবাসা কে আমি স্যালুট জানাই।প্রতিটি মেয়েই যদি তোমার মতো করে চিন্তা করতো তাহলে আমাদের সমাজে কোনো নষ্ট ছেলে থাকতো না।

মিমঃআচ্ছা নীলয় শুনো আমি তোমার ভালো একজন ফ্রেন্ড হয়ে বলছি বলতে পারো তোমার লাইফের বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমি তোমাকে একটি সাজেশন দিচ্ছি তুমি দয়া করে আমাকে ভুলে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলো।আর আমি জানি তুমি আমার এই কথাটি রাখবে।তোমার বাসায় তোমার বৃদ্ধ বাবা মা আছে তুমি দয়া করে তাদেরকে কষ্ট দিও না।প্রয়োজনে আমি নিজে তোমাকে পাত্রী খুঁজে দিবো।এমন একটি মেয়েকে খুঁজে দিবো যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে।

নীলয়ঃআচ্ছা তুমি যেহেতু বলেছো অঅবশ্যই আমি বিয়ে করবো।

মিমঃআলহামদুল্লিহা আমি অনেক খুশি হয়েছি নীলয়।দোয়া তোমার আগামীর পথ চলা সুন্দর হোক।

এরপর মিম নীলয় কে বলে নীলয় তুমি তোমার টাকা পয়সা সব কিছুই আমাকে দিয়েছো আমাকে সাহায্য করেছো আমি আজকে এখানে আসতে পেরেছি একমাত্র তোমার জন্য তুমি নীলয় না থাকলে হয়তো আমার এর কিছুই হতো না।

আমি তোমাকে একটি জিনিস দিতে চাচ্ছি তুমি কিন্তু না করতে পারবে না।তুমি আমাকে বন্ধু ভেবেই কিন্তু আমার বিপদে আমার পাশে ছিলা।আর আমিও তোমার বন্ধু হয়ে তোমার বিপদে পাশে থাকতে চাই।

নীলয়ঃকি বলো।

মিমঃআমার যতো সম্পত্তি আছে যতো ব্যাবসা আছে তার সকল কিছুর ৫০% আমি তোমার নামে লিখে দিবো।
নীলয়ঃনা মিম এগুলো আমার কিছু লাগবে না।
মিমঃআমি কিন্তু শুরুতেই বলেছি আমি তোমার বন্ধু হয়ে সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই।

নাকি তুমি চাও না তোমার বন্ধু বানিয়ে আমাকে পাশে রাখতে?

নীলয়ঃআরেএ না ব্যাপার টা তেমন না।আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলবে তাই হবে।

এভাবে এখানেই তাদের সকল কথাবার্তা শেষ হয়।এর একসপ্তাহ পর নীলয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে কারণ নীলয়ের হাতে আর কোনো অপশন ছিলো না।বাসায় তার বৃদ্ধ বাবা মা।তার বাবা মাকে দেখার জন্য হলেও একটি মেয়ের প্রয়োজন ছিলো।নীলয় খুব সুন্দর ভাবেই স্ত্রীর সাথে দিন পার করতে থাকে।

এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় ২০ বছর কেঁটে যায়।২০ বছর পর আমরা দেখতে পাই মানে ২০ বছর পরের কথা বলছি ততদিনে নীলয়ের ২ টি বাচ্চা হয়েছে। আর নীলয় কিন্তু এখনো মিমের সাথেই মিমের একটি ভালো বন্ধু হয়ে রয়ে গিয়েছে। এরমাঝে মিমের অবস্থার এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। সে নিজে একটি বাড়ি বানিয়েছে।

সে বাড়িতে তার ভাই তার বাবা তার ভাইয়ের বউ ভাইয়ের ছেলে সবাই মিলে খুব ভালো দিন কাঁটাচ্ছিলো। মিমের ভাইয়ের লিজাও এর মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। লিজা এখন মিম কে তার আপন বোর বোনের মতোই দেখে।মিম এখন আর আগের মতো রেস্টুরেন্টে যায় না।মাঝে মাঝে মন চাইলে যায়।তো হঠাৎ একদিন মিম তার ভাইয়ের ছেলে কে নিয়ে তাদের রেস্টুরেন্টে যায়।

আএ ভাগ্যক্রমে সেদিন সেই রেস্টুরেন্টে আয়ান ও আসে।দুজনেই এখন বৃদ্ধ।দুজন একই রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসা ছিলো।আয়ান মিম কে দেখেই চিনে ফেলে।মিম কে দেখে আয়ান তার কাছে আসে জানতে চায় সে কেমন আছে।তার সাথে যে আছে সে কি তার ছেলে নাকি।তার মতোই দেখতে হয়েছে।

মিম বল্লো না সে আমার ভাইয়ের ছেলে।আর তোমার সাথে যে আছে সে কে সে কি তোমার মেয়ে?

আয়ানঃনা ও আমার বড় বোনের মেয়ে।

এই কথা শুনে দুজন দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।প্রথমে মিম আয়ান কে বল্লো তাহলে তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করোনি?

আয়ানঃএই হৃদয়ে মিম ব্যাতিত অন্য কাউকে স্থান দিতে পারবো না।তাই এখনো বিয়ে না করে মিমের দেয়া স্মৃতি গুলো কে সম্ভল করেই বেঁচে আছি।আর তুমি কেনো বিয়ে করলে না?

মিমঃএই হৃদয়ে আয়ান ব্যাতিত অন্য কাউকে স্থান দিতে পারবো না সেজন্য বিয়ে না করেই আছি।আয়ানের স্মৃতি গুলোকে সম্ভল করেই বেঁচে আছি।সেখানে থাকা দুটো ছেলে মেয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।তাদের দুজনের ভালোবাসা দেখে ছেলে মেয়ে দুটোর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।

একজনের সাথে আরেকজনের কতো বছর ধরে দেখা হয় না।কিন্তু কারো প্রতি কারো ভালোবাসা বিন্ধু মাত্রও কমেনি।একজন আরেকজন কে কি পরিমাণ ভালোবাসলে সেই মানুষের স্মৃতি সম্ভল করেই সারাজীবন কাঁটিয়ে দেয়া যায় সেটাই ভাবছে ছেলে মেয়ে দুটো।

এখানেই গল্পটি সমাপ্ত।