অপূর্ণতা পর্ব-৩২

0
961

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৩২

আরিয়ানও বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।অদ্রিতার পিছনে দাঁড়িয়ে তার চুলের মাতাল করা ঘ্রান নিতে থাকে,,,,,,

অদ্রিতার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সেতো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।তার পিছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সে তা বুঝতেই পারছে না।আরিয়ান ঘোর লাগা চোখে তাকে দেখছে। হঠাৎই সে পিছন থেকে অদ্রিতাকে জরিয়ে ধরে,তার চুলে নিজের মুখ গুজে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় অদ্রিতা অবাকের চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছে যায়।রুমে তো সে আর আরিয়ান ছাড়া অন্য কেউ নেই।তবে কি ওনি আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরলেন?আরিয়ান এমন একটি কাজ করতে পারে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সে অদ্রিতার পিঠ থেকে চুল সরিয়ে হাত দিয়ে পিঠে সাইড করতে থাকে। আরিয়ানের প্রতিটি স্পর্শে অদ্রিতা শিহরিত হয়ে উঠছে।তার হার্ট খবু জোরে বিট করতে লাগলো।মনে হচ্ছে যে কোন সময় বেরিয়ে আসবে।কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে নিজের ভিতরে আবার ভয়ও করছে।তার পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না। তাই আরিয়ান থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। তাকে ধাঁক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতে চায়, কিন্তু আরিয়ান উল্টো তার আরও কাছে চলে আসে,,,,,,

এইবার সে আরও ভয় পেয়ে যায়।তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। তবুও বলে,কি..ক..করছেন তা কি? ছাড়েন আমাকে।আরিয়ান তার হাতে এক টান দিয়ে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়, তার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে, হুশ,একদম কথা বলবে না নেশাক্ত কন্ঠে বলে আরিয়ান। আরিয়ানের কন্ঠে অদ্ভুত এক মাদকতা জড়িয়ে আছে।অদ্রিতার মন কোন ভাবেই তা উপক্ষা করতে পারছে না। তার সারা শরীরে হীম শীতল করা অনুভূতি হচ্ছে। আরিয়ানের কথা শুনে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।আরিয়ান আবারও তাকে নিজের দিকে ফিরায়। অদ্রিতা ভয়ে ভয়েই আরিয়ানের দিকে তাকায়।তার চোখের দিকে তাকাতেই সে দেখতে পায় আরিয়ান অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন জানি অন্যরকম নেশাক্ত চোখে তাকে দেখছে।আরিয়ানের এই চাওয়াতে তার আরও বেশি অস্বস্তি লাগছে। তার হার্ট আরও অনেক জোরে জোরে বিট করতে লাগলো আবার ভয়ও করছে বেশ।আরিয়ানকে কখনো তার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে নি। তাই আবারও আরিয়ান থেকে দূরে যাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে।এতে তার মুখের উপর চুল এসে পরে।আরিয়ান হাত দিয়ে তার চুল সরিয়ে কানের পিছে গুজে দিয়ে তার গাড়ে মুখ ঢুবায়।অদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান তার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নেয়।এক হাতে অদ্রিতার কুমোরে ধরে অন্য হাতে তাকে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে।

অদ্রিতা তাকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু তাকে এক চুলও নড়াতে পারলো না।কিছুক্ষন পরে আরিয়ান নিজেই তাকে ছেড়ে দেয়।অদ্রিতার দম যেন এতক্ষনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ছাড়া পেয়েই সে হাপাতে লাগলো।সে দৌঁড়ে সেখান থেকে পালাতে চাইলে আরিয়ান তাকে নিজের কোলে নিয়ে নেয়।অদ্রিতা তার কোল থেকে নামার জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে কিন্তু না পেরে চুপ করে আরিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে পরে লজ্জায় নিচের দিকে তাকায়,,,,,,

আরিয়ান তাকে বিছনায় এনে শুয়িয়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।ঘোর লাগা চোখে তাকে দেখতে থাকে। অদ্রিতার খেয়াল হতেই সে বিছানা থেকে দ্রুত উঠে যেতে নেয় কিন্তু আরিয়ান অদ্রিতার হাতে একটান দিয়ে তাকে নিজের আরও অনেক কাছে নিয়ে আসে।অদ্রিতা বুঝতে পারে আরিয়ানের থেকে দূরে যাওয়া এখন তার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই সেও আর কিছু বলে না। দুইজনেই হারিয়ে যায় ভালোবাসার অন্য এক জগতে।

সকালে আজানের শব্দে অদ্রিতার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলতেই নিজেকে আরিয়ানের বুকে দেখতে পায়।আরিয়ান তাকে দুইহাতে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।এমন করে জরিয়ে ধরে আছে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই যেন সে পালিয়ে যাবে।অদ্রিতা কতক্ষন আরিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কপালে হাল্কা করে ঠোঁট ছোঁয়ায়, আস্তে করে আরিয়ানের হাত ছাড়িয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রাতের কথা ভাবতেই লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যায়।আজ সে পরিপূর্ণ ভাবে আরিয়ানের স্ত্রী হওয়ার অধিকারও মর্যাদা পেয়েছে। আজ সে অনেক খুশি কারণ আজ পূর্ণতা পেয়েছে তার ভালোবাসা, তার সম্পর্ক, তার জীবন।

সত্যিই কি সকল #অপূর্ণতা মুছে গেছে অদ্রিতার জীবন থেকে! সত্যিই কি পূর্ণতা পেতে চলেছে অদ্রিতার জীবন! নাকি এই সুখটুকু ক্ষনস্থায়ী।তার জন্য অপেক্ষা করছে আরও অনেক বড় ঝড়, যা শেষ করে দিবে সব কিছু।

ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নামাজ পরে নেয়।নামাজ পরা শেষ হলে আরিয়ানের দিকে তাকায়, সে এখন ঘুম থেকে উঠে নি।আরিয়ানের দিকে তাকাতেই লজ্জায় সে চোখ সরিয়ে নেয়।সাথে সাথেই রুম থেকে বের হয়ে বাগানে চলে যায়। আজ সে অনেক খুশি।কিছুক্ষন বাগানে থেকে পরে রান্নাঘরে চলে আসে রান্না করতে।সে রান্না করছে আর রাতের কথা ভেবে লজ্জা পাচ্ছে আর এই ভেবে তার খুব ভালো লাগছে আরিয়ান তাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাই একা একাই মুচকি হাসছে।

তার শ্বাশুড়ি অনেকক্ষন ধরে রান্নাঘরে এসেছে কিন্তু সেদিকে অদ্রিতার কোন খেয়ালই নেই। সে তো নিজের চিন্তা আর অনূভুতির থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

তার শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে থেকে এই বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তাই তিনি তাকে পিছন থেকে ডাক দেন।

হঠাৎই পিছন থেকে কারো কথা শুনে অদ্রিতা চমকে যায় আর ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে পিছনে তাকায়।,তাকিয়েই তার শ্বাশুড়িকে দেখতে পেয়ে বলে,মা তুমি।কিছু লাগবে?

অদ্রিতার শ্বাশুড়ি মুচকি হেসে বলে,না,,,তুই ঠিক আছোট্ তো?আজ তোর কি হয়েছে?একা একাই লজ্জা পাচ্ছিস্ আর মুচকি হাসচ্ছিস্! কোন কারণ তো নিশ্চয়ই আছে?

অদ্রিতা লজ্জা পেয়ে বলে, কিছু হয়নি তো।এমনি আজ অনেক ভালো লাগছে।

তিনি একটু হেসে মজা করে বলে, ভালো,,, তো নাতি- নাতনির মুখ কবে দেখছি।

লজ্জায় অদ্রিতার পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।সে কোন রকম বলে তুমিও না,কি যে বলো? সে এখান থেকে যাওয়ার জন্য কারণ খুঁজতে থাকে আর পেয়েও যায়। মা,,, রান্না শেষ। আমি খাবারগুলো টেবিলে রেখে আসছি।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে খাবার নিয়ে চলে যায়।

অদ্রিতার শ্বাশুড়ি মুচকি হেসে বলে,পাগলি মেয়ে একটা। মায়ের কাছেও এত লজ্জা পায়।

অন্যদিকে আরিয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। রাতের কথা মনে পড়তেই এখন তার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। এমন একটি কাজ সে কি করে করতে পারে!
.
..

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে