অপূর্ণতা পর্ব-৫৬

0
1045

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৬

নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”আপনি আমার মায়ের মতোন,তাই আপনার যা বলার তা নিরদ্বিধায় বলতে পারেন।আমার থেকে অনুমতি নেওয়ার বা এত সংকোচ করার কোন দরকার নেই।”

অদ্রিতার মা ইসস্তত করে বলে,”জানি না এই কথাটা তোমাকে বলা আমার ঠিক হবে কি না। তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাববে। যদি স্বার্থপর ভাবো তবুও আমি কিছু মনে করবো না,নিজের মেয়ের ভালোর জন্য না হয় একটু স্বার্থপর হবো। আজকাল তোমার মতো ছেলে পাওয়া যায় না যারা এভাবে অন্যের বিপদের হেল্প করে, তাদের পাশে থাকে। তুমি আমার মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়েছো বলেই আমার মেয়েটা এত দ্রুত নিজেকে সামলিয়ে নিতে পেরেছে।তার জন্য আমরা তোমার কাছে ঋণী। আমরা তোমার মতো ধনী নই।আমরা মধ্যবিত্ত, আমাদের সমাজ নিয়ে চলতে হয়। আমাদের টাকা না থাকতে পারে আমাদের কাছে মানসম্মান আছে।আমি জানি তুমি অদ্রিতার ভালো চাও তাই তার খোঁজ খবর নিতে ছোঁটে আসো।কিন্তু এভাবে যখন তখন আমাদের বাড়িতে তোমার আসা লোকে ভালো চোখে দেখবে না।লোকে অদ্রিতাকে খারাপ ভাববে।এই কয়দিনে তোমার আমাদের বাড়িতে আসা নিয়েই লোকে নানা বাজে কথা বলা শুরু করে দিছে।অনেকে তো তার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা পর্যন্ত বলেছে।তাই তুমি যদি সারাজীবনের জন্য আমার মেয়েটা দায়িত্ব নিতে তবে তোমার এবাড়িতে আসা নিয়ে আর কোন কথা হতো না।আমার কথাটা হয়তো অনেকটা স্বার্থপরদের কথার মতো শুনাচ্ছে কিন্তু আমি বাধ্য হয়ে তোমাকে এই কথাটা বলেছি।আমি যে নিরুপাই। ”

নিলয় ওনার কথা সম্পূর্ণ বুঝতে না পেরে কিছুটা বিস্মিত হয়। পরে শান্ত স্বরে বলে,”আমি সারাজীবনের জন্য অদ্রিতার পাশে থাকবো একজন ভালো বন্ধু হয়ে যেমনটা আজ আছি।কিন্তু আপনার বলা কথাটির মানে বুঝছি না।আর লোকের কথা ভাবার কোন দরকার নাই।মানুষের কাজই হলো অন্যের সমালোচনা করা আর যারা এমন করে আমাদের উচিত সাথে সাথেই তাদের কথার প্রতিবাদ করা তবে দ্বিতীয়বার তারা সাহস পাবে না কিছু বলার। ”

অদ্রিতার মা শান্ত স্বরে বলে,” তুমি যা বলছো তা হয়তো ঠিক।কিন্তু প্রতিবাদ করে কয়জনের মুখই বা বন্ধ করা যাবে।আমি কোন ভনিতা না করে সহজ ভাষায় বলছি, তুমি কি অদ্রিতাকে বিয়ে করতে পারবে,পারবে সারা জীবনের জন্য তার ভালো থাকার দায়িত্ব নিতে?তুমি অদ্রিতার সম্পর্কে সব কিছু জানো। আমি তোমাকে জোর করছি না। ”

নিলয় সহজ হয়ে বলে,” অদ্রিতা কি রাজি হবে আমাকে বিয়ে করতে?এতসব কিছু হওয়ার পরে সে কখনো আবার বিয়ে করতে চাইবে না।বিয়ে মতো পবিত্র সম্পর্ক থেকে হয়তো তার বিশ্বাসটাই উঠে গেছে তাই সে যদি রাজি থাকে তবে আমার কোন আপত্তি নেই।আমি রাজি এই বিয়েটে।”

অদ্রিতার মা গম্ভীর স্বরে বলে,”যদি নিজের মন থেকে তাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারো তবেই হ্যাঁ বলো।আমি চাই না একবার মেয়েটা যে কষ্ট পেয়েছে আবার সেই একই কষ্ট পাক।তাই হ্যাঁ বলার আগে আর একবার ভেবে দেখো।”

নিলয় ভরসা দিয়ে বলে,” আমি অনেক ভেবেই হ্যাঁ বলেছি।আমি আগে থেকেই অদ্রিতাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি তার ভিতরের নিষ্পাপ মনকে। আমি কখনো এইকথা আপনাকে বলতাম না কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হলাম, নাহলে হয়তো আপনার মনের সংসয় কাটতো না।তবুও অদ্রিতার মতামতটা এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সে যদি রাজি থাকে তবেই এই বিয়েটা হবে। না হলে এখন যে-ভাবে আছি সেভাবেই আমি তার পাশে থাকবো।”

অদ্রিতার মা খুশি হয়ে বলে,”হুমম,তাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।”

নিলয় শান্ত কন্ঠে বলে,”আপনি তাকে জোর করবেন না।”

অদ্রিতার মা ছোট করে বলে,”হুমম,তুমি এখানে বসো আমি আসছি।”আর কিছু না বলে তিনি অদ্রিতার রুমের দিকে যায়,গিয়ে দরজার নক করতেই অদ্রিতা দরজা খুলে দিয়ে বলে মা তুমি,ভিতরে আসো।ওনী ভিতরে ঢুকেই বলে,”তোকে আমার কিছু বলার আছে।”

অদ্রিতা স্বাভাবিক স্বরে বলে,”হুমম,বলো।”

অদ্রিতার মা কিছুটা ইসস্তত করে বলে,” আমি জানি এখন আমি যা বলবো তার জন্য তুই আমায় ভুল বুঝবি কিন্তু বিশ্বাস কর,আমি যা বলবো তোর ভালোর জন্যই বলবো।”

অদ্রিতা তার মার দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,” আমি জানি তুমি আমার ভালো চাও আর কোন মাই তার সন্তানের খারাপ চাইতে পারে না।এখন বলো।”

অদ্রিতার মা কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে,”আগে কথা দে আমি যা বলবো তুই রাখবি,তবে বলবো?নাহলে থাক বলবো না।”আমি জানি এখন তুই আমায় ভুল বুঝবি কিন্তু একদিন ঠিকি বুঝবি আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি।

অদ্রিতা তার মার হাত ধরে ভরসা দিয়ে বলে,” আচ্ছা রাখবো,আমি তো তোমাদের সব কথা শুনেছি এটাও শুনবো।”

অদ্রিতার মা ইসস্তত করে বলে,”নিলয় অনেক ভালো ছেলে। তোকে অনেক ভালোবাসে। তুই ওকে বিয়ে করে নে,বল তুই আমার এই কথাটা রাখবি?”

অদ্রিতা গম্ভীর স্বরে বলে,” তা হয় না।আমার পক্ষে এখন কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।কারো জীবনের সাথে আমি আর আমার নিজের জীবন জড়াতে চাই না।আমাকে মাফ করো আমি বিয়েটা করতে পারবো না।”

অদ্রিতার মা কন্ঠে দূঢ়তা এনে বলে,”তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস্ আমি যা বলবো তুই তা করবি।এখন যদি কথার খেলাপ করোস্ তবে আমার এই মুখ আর কখনো দেখতে পারবি না।এখন ভেবে দেখ কি করবি?”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীরর্যতা রেখেই বলে,” মা তুমি এ কি বলছো?”

অদ্রিতার মা কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “আমি অন্য কিছু শুনতে চাই না,এখন বল রাজি কি না?”

অদ্রিতা রাগে গম্ভীর স্বরে বলে,” আমার সিদ্ধান্তের সত্যিই কি কোন মূল্য আছে এখানে?তুমি যা ভালো মনে করবে তাই করো।”

অদ্রিতার মা করুন দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”এমন করে কেন বলছিস্?”

অদ্রিতা কন্ঠে গম্ভীরর্যতা রেখেই বলে,”আমি আর কিছু বলতে চাই না আমাকে একা ছেড়ে দাও,প্লিজ।”

আমি জানি আমার এই সিদ্ধান্তে তুই এখন কষ্ট পাচ্ছিস, আমাকে ভুল বুঝছিস্। যে ছেলে তোর জীবনের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, সে সারা জীবন এভাবে তোর পাশে থাকবে তা আমার বিশ্বাস। নিলয়ের সাথে তুই অনেক সুখী হবি, তোর সুখের জন্য এইটুকু তো আমি করতেই পারি।আমাকে ক্ষমা করে দিস্ মনে মনে এই কথাগুলো বলে তিনি একবার করুণ দৃষ্টিতে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে চলে যান।

কিছুদিন পরে,,,,,,,,,,

নিজের অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বউ সেজে বাসরঘরে বসে আছি আমি।কিন্তু আমার মনে তা নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। আমার সব অনুভূতি মরে গেছে।বিয়েটা খুব সাদাসিধা ভাবেই হয়েছে। কিছু আত্মীয়-স্বজন আর পাড়াপ্রতিবেশিদের বলা হয়েছিল।বিয়েটা যারা এসেছে বেশির ভাগই আমাকে কথা শুনিয়েছে,তাদের বলা কথা গুলো এখনো আমার কানে বাজছে,,,,,,

,,,,,,,,, কিছুক্ষন আগে,,,,,,

বউ সেজে রুমে বসে আছি,বর এসেছে শুনে আমাকে একা রেখেই সবাই বর দেখতে চলে গেছে,তখনি কতগুলো মহিলা এসে বলা শুরু করে।

,,,এমনেতেই যেই কালো তার উপর ডিভোর্সী এমন মেয়ে কি করে এমন ধনী আর সুন্দর বর পেলো তাই ভাবছি।সত্যিই মেয়েটার ভাগ্য অনেক ভালো বলতে হয়।

,,,, অন্য একজন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,”হুমম,ভাগ্য ভালো না হলে কি এমন বর পায়।গিয়ে দেখো কোন ভাবে হয়তো ছেলেটাকে ফাঁসিয়েছে।বাধ্য করেছে বিয়ে করতে নয়তো যে রুপ,এরুপে তো এমন ছেলের চাকর হওয়ার ও যোগ্যতা রাখে না।”

,,,,,হুমম,একদম ঠিক বলছেন। কালো হলে কি হবে বড়লোক ছেলেদের কি করে বস হয় তা ভালো করেই জানে,,,,,

,,,,শুনেছি আগের স্বামীও নাকি অনেক সুন্দর আর ধনী ছিল,কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেনি। ডিভোর্স হয়ে গেছে,,,,

,,,,,পারবে কি করে এইসব মেয়েদের কাজই তো এটা বড়লোক ছেলে দেখে ফাঁসানো।এদের চরিত্র আছে নাকি?

ওনাদের সবার কথাগুলো আমার বুকে তীরের মতো বিঁধছে।এইজন্যই আমি কাউকে বিয়ে করতে চাইনি।আগে অনেক বাজে কথা শুনেছি এখন ছলনাময়ী আর চরিত্রহীনা উপাধিও পেয়ে গেছি।আমি আর শুনতে পারছি না।

আপনাদের এখানে ইনবাইট করা হয়েছে আমার আপুর জন্য দোয়া করার জন্য। সে ভবিষ্যতে যেন ভালো থাকে এই দোয়া করবেন আর তা যদি না পারেন তবে চুপচাপ খেয়ে চলে যাবেন। কোন বাজে কথা বলবেন না।নিজেদের মতো সবাইকে মনে করবেন না।কি মনে করেন আপনাদের খবর জানি না,আপনার মেয়ে কয়দিন আগে একজন ছেলে নিয়ে পালিয়েছে।মহিলাটির মাথা নিচু হয়ে গেছে।আর হে আপনি, আমার আপুর অনেক সুন্দর একটা মন আছে আর সেই মনকে ভালোবেসেই নিলয় চৌধুরী তাকে বিয়ে করেছে।কাউকে ফাঁসানোর আমার আপুর কোন প্রয়োজন নেই তা তো আপনার সুন্দরী বউমাই ভালো পারে নয়তো একটা ছেলে রেখে কি করে একটা মা নিজের ছেলের টিচারের সাথে পালাতে পারে।আমার তো ভাবতেই লজ্জা লাগছে।মাথা নিচু করে মহিলাটি চলে গেলো।কি বললে আমার আপু ডিভোর্সি, হ্যাঁ ডিভোর্সি কিন্তু চরিত্রহীনা নয় আপনাদের সুন্দরী মেয়ে আর বউমাদের মতো। এখন এখান থেকে চলে যান কিছু খেয়ে বিদায় হন।আপুর রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছি, ওনাদের কথা গুলো শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না।রাগে আমার সারা শরীর রিরি করছে এখনো। কথাগুলোর প্রতিবাদ বলতে পেরেছি তাই একটু শান্তি পাচ্ছি।

অদ্রিতা ধমক দিয়ে বলে,”রোহিত চুপ কর।গুরুজনদের সাথে এভাবে কথা বলতে হয় না।”

,,,,ছোট হয়ে বড়দের মুখে মুখে কথা বলছে।এখনো ভদ্রতা শিখেনি।মা- বাবার আদরে বেয়াদব তৈরি হয়েছে।পাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো।

রোহিত গম্ভীর স্বরে বলে,” আপনারা সবাই মিলে যখন একটা মেয়েকে অপমান করছেন, বাজে কথা বলছেন তা কিছু না।আমি প্রতিবাদ করছি বলে আমি বেয়াদব হয়ে গেলাম।উচিত কথা বললে যদি বেয়াদব হতে হয় তবে তাতে আমি রাজি আছি,এখন আপনারা আসতে পারেন।”

ওনারা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেলেন,,,,

কি দরকার ছিলো এইসব বলার।আমি এইসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি,,,

রোহিত অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,” দরকার ছিলো আপু।”

দরজা খোলার আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হলাম। নিলয় ভাইয়াকে আসতে দেখেই আমার অস্বস্তি হচ্ছে। মনে মনে ওনার উপরে অনেক রাগ হচ্ছে। ওনী এসেই আমার সামনে বসে,ধীরে ধীরে আমার হাত ধরলেন। আমি ওনার হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলাম,”আমি এই বিয়েটা মানি না।আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।আমি কখনো মন থেকে আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।
আমার থেকে আপনি কিছু আশা করবেন না।আপনাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো পরে আপনি আপনার মতোন করে নিজের জীবন কাঁটাতে পারবেন।
আপনার যোগ্য কাউকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন।
আমি আর কিছু বলতে চাই না।”

অদ্রিতার কথাগুলো শুনে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব হতে লাগলো।অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।অদ্রিতা আমাকে এই কথাগুলো বলবে তা আমি ভাবতেই পারিনি,,,,,
.
..

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে