অপূর্ণতা পর্ব-৫৭

0
1009

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৫৭

অদ্রিতার কথাগুলো শুনে বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো। অনেক খারাপ লাগলো কথাগুলো শুনে।অদ্রিতা আমাকে এই কথাগুলো বলবে তা ভাবতেই পারিনি।কথাগুলো ও কত স্বাভাবিক ভাবে বললো কিন্তু প্রতিটি কথা আমার বুকে তীরের মতো বিঁধছে।নিজেকে শান্ত করতে পারছি না।চোখে পানি এসে পড়েছে, তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললাম,”তুমি মনে করতে পারো তোমাকে বিয়ে করে আমি করুনা করেছি কিন্তু সত্যিটা তা নয়।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই তোমাকে বিয়ে করেছি ।আসলে তোমাকে নিজের করে নেওয়ায় লোভটা সামলাতে পারিনি।সত্যি বলতে কি আমি তোমার ভাগ্যে ছিলাম তাইতো এতকিছু হওয়ার পরেও আমি তোমাকে পেয়েছি।আমি জানি তোমার পক্ষে এখন হয়তো আমাকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।হয়তো আমাকে তুমি এখন নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। আমি তোমাকে কখনো জোর করবো না, একদিন তুমি নিজের মন থেকে আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে মেনে নিবে আমি ততোদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।জানো অপেক্ষা জিনিসটা করা অনেক বেদনাদায়ক। একদম অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করে না।তাই বলেকি এত বছর যখন তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন তোমাকে এত কাছে পেয়েও কেন পারবো না।এখন তো তুমি শুধুই আমার। আমাকে নিজের করে নিতে তুমি যত খুশি সময় নিতে পারো। কিন্তু আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা কখনো ভাববে না।অনেক কষ্টের পর তোমাকে নিজের করে পেয়েছি, এখন তোমাকে আমি আর হারাতে পারবো না।তোমাকে আমি সবসময় আগলে রাখবো।কখনো নিজের থেকে বিন্দু পরিমাণ দূরে যেতে দিবো না।তার জন্য তুমি আমাকে স্বার্থপর ভাবতে পারো। নিজের সুখের জন্য, ভালো থাকার জন্য না হয় আমি একটু স্বার্থপর হলাম।স্বামী – স্ত্রী হয়ে না থাকতে পারি একসাথে তো থাকতে পারবো।বন্ধু হয়ে তোমার পাশে সবসময় থাকবো এতেই আমি খুশি আমার আর কিছু চাই না।”

এইটুকু বলে নিলয় একটু থামে পরে আবার বলা শুরু করে,”আমি সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করি, তাই তোমাকে সরাসরিই কথা বলছি।তোমার অতীত, বর্তমান সবকিছু আমি জানি।তুমি কেমন তাও আমি জানি।আরিয়ানকে তুমি মন থেকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলে তাই হয়তো তাকে ভুলা সম্ভব নয়।কিন্তু আরিয়ান কখনো তোমাকে ভালোবাসেনি, স্ত্রী হিসেবে সম্মান পর্যন্ত করতে পারেনি।তাই ওর সাথে তোমার ডিভোর্সটা হয়ে ভালো হয়েছে। আরিয়ান হয়তো তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই তাকে নিজের করে পাওনি।তোমার ভাগ্যে আমি ছিলাম তাই এতকিছুর পরেও আজ তুমি আমার আছো।আমরা এখন লিগ্যাল
হ্যাসবেন্ড- ওয়াইফ। তাই আমাকে নিজের হ্যাসবেন্ড হিসেবে মেনে নেওয়াই হয়তো তোমার জন্য বেস্ট ডিসিশন হবে।আমি আর কি বলবো তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি আর শিক্ষিত। তাই একটু ভালো করে আমার কথাগুলো ভেবে দেখো।”আর কিছু না বলে নিলয় চলে যায়

সারাটা রাত ওনার বলা কথাগুলো ভেবেছি। ওনার বলা কোন কথায় ভুল নেই।ওনী প্রতিটি কথা ঠিক বলেছেন।আমি সব জানি, বুঝি।কিন্তু সব জেনে- বুঝেও নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছি না।পারছি না ওনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে। সব কিছু কি মেনে নেওয়া এতটাই সহজ। হয়তো না,আমার সময়ের প্রয়োজন।

,,,,,,অন্যদিকে,,,,,ইন নিউইয়র্ক,,,,,,

প্রায় একমাস হয়ে গেছে রাইশার সাথে নিউইয়র্কে এসেছি।এই এক মাসে আমার জীবনটা নরক করে তুলেছে ও।ঐদিনের পর থেকে রাইশা আমার সাথে চাকরের মতো ব্যবহার করে।যখন তখন যেভাবে খুশি অপমান করে। একেক দিন একেক পুরুষের সাথে রাত কাটায়।মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতেও নিয়ে আসে।আমি সব দেখেও কিছু বলতে পারি না।আমাকে মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করতে হয়। ভুলটা ওর না, ভুলটা তো ছিল আমার। ওকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করার ভুল।ওর কথা শুনে অদ্রিতাকে নিজের থেকে আলাদা করার ভুল।দিনের পর দিন তার ভালোবাসা, কেয়ারকে অবহেলা আর তুচ্ছ করার ভুল। তাকে অপমান,অত্যাচার করার ভুল। এইসবের শাস্তি তো আমাকে পেতেই হতো।সত্যিই তো রাইশা ঠিকই বলেছে আমার মতো মানুষ এইসবেরই যোগ্য।আমার সাথে যা হচ্ছে সব আমার পাপের ফল।এই এক মাসে আমি অনেক চেষ্টা করেছি এখান থেকে পালিয়ে যাবার কিন্তু পারিনি।কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি একদিন না একদিন আমি ঠিক এখান থেকে রেহায় পাবো।অদ্রিতার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো,আমার করা প্রতিটি অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইবো।তাকে আবার নিজের করে নিবো।আমার বিশ্বাস ও আমাকে ক্ষমা করে দিবে।

রাইশা কর্কশ কন্ঠে বলে,” সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি,আমার লেট হচ্ছে তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসো। আমি তো তোমার মতো বসে বসে অন্ন ধ্বংস করি না, আমাকে কাজে যেতে হবে।”

আরিয়ান দ্রুত এসে রাইশাকে খাবার বেড়ে দেয়।রাইশা খাবার মুখে দিয়ে থু করে ফেলে দেয় আর খাবারের প্লেট ছুড়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলে ছিঃ এটা কোন রান্না হয়েছে,ভালো করে রান্নাও করতে পারো না।এখন এইসব কিছু তুমি পরিষ্কার করবে আর আজকে তোমার খাওয়া বন্ধ এই বলে বাকি যা খাবার ছিল ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

আরিয়ান একটু রেগে বলে,”তোমার যখন আমাকে নিয়ে এতোই পবলেম তবে আমাকে এখানে কেন আটকে রেখেছো?আমাকে চলে যেতে দাও।এখানে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

রাইশা হেসে বলে,”তোমাকে এখানেই থাকতে হবে আমার সাথে। তোমার কোন রেহাই নেই। আর শেষবারের মতো বলছি আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলবে না।তবে তো বুঝতেই পারছো এতদিনে আমি কি করতে পারি। ”
আর কিছু না বলে রাইশা চলে যায়। আরিয়ান ফ্লোরে বসে পরে।আর পারছে না সে আর এইসব সহ্য করতে। এর থেকে মৃত্যুও হয়তো অনেক ভালো,,,,,,,

,,,,,,,,,,,,,,,,,
সময় বহমান তা কারো জন্য অপেক্ষা করে না।কেটে গেছে ৪ বছর।এই ৪ বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। তার সাথে বদলে গেছি আমি নিজেও।আমার জীবন থেকে সব ধূসর রং সরে গিয়ে সেখানে ঠাই করে নিয়েছে ভালোবাসার রঙিন রং। নিলয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পরেই বুঝেছি ভালোবাসার আসল মানে।শিখেছি জীবনে বেঁচে থাকার, ভালো থাকার উপায়।এই ৪ বছরে আমাদের সম্পর্কটা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে যদিও আমরা স্বামী- স্ত্রীর মতো থাকি না, তবুও ওনার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করি।ধীরে ধীরে ওনার প্রতি আমার মায়া কাজ করা শুরু করলো।আসলে একসাথে থাকতে থাকতে ওনী আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।ওনার বলা কথা ওনী রেখেছেন, কখনো আমাকে জোর করেনি।কখনো স্বামীর অধিকার নিয়ে আমার কাছে আসেনি।মাঝে মাঝে আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে যেতো আবার নিজেই নিজেকে কন্টোল করে নিতো।আমি সব বুঝেও কিছু বলতাম না।ওনার সাথে সম্পর্কটা বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে উঠেছে। নিরদ্বিধায় মনের সব কথা ওনার সাথে শেয়ার করেছি আর ওনীও আমার সাথে সব কথা শেয়ার করতেন।মাঝে মাঝে নিজের পছন্দের শাড়ি কিনে এনে আমাকে দিতেন।আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া,মাঝরাতে হাতে হাত রেখে রাস্তায় ঘুরতে যাওয়া, আইসক্লিম খাওয়া,ফুল কিনে আমার খোপায় গেঁথে দেওয়া ওনী আমার মন ভালো করতে করতো। আমার কাছেও ওনার এই ছোট ছোট জিনিস অনেক ভালো লাগতো। আমিও ইনজয় করতাম এইগুলো তাই কিছু বলতাম না।মানুষ ঠিকি বলে কায়া দেখলে মায়া বাড়ে। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে আমি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি কিনা তা জানি না কিন্তু ওনার প্রতি মায়া প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।যদিও জানি মায়া জিনিসটা খুব খারাপ তবুও নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি।এখন আমি নিজেই ওনার থেকে দুরে যেতে পারবো না।পারবো না তাকে ছাড়া থাকতে।

মা কান্ত হয়ে বলে,” দেখ অদ্রিতা দাদুভাই আমার কোন কথা শুনছে না।এবার তুই তাকে বুঝা।সকাল থেকে কিছুই খাচ্ছে না। বলে নাকি খাবে না।আমি বুড়ি হয়েগেছি তার সাথে দৌঁড়াদৌড়ি করে কি আর পারি বল?”

মার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।নীলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,”নীল এইসব কি শুনছি, দাদিকে কেন এতো জ্বালাছো?ভালো ছেলের মতো খেয়ে নাও দেখি।”
.
..

চলবে,,,,,,,,

( রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে