সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৭

0
106

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৭

১৭.
বাশের নির্মিত ব্যলকানিতে ধোয়া উঠে এক কাপ চা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিরা। তার দৃষ্টি দূরে থাকা জঙ্গলের দিকে অদ্ভুত কিছু ডাক ভেসে আসছে সূদুর বন থেকে।অন্ধকারে আচ্ছন্ন বনটাতে চাঁদের আলোতে ভয়ংকর এর সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে হয়তো সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতেই শিয়াল আর নিশাচর পাখিগুলার এই উল্লাস।আজ স্বাভাবিক দিনের ন্যায় চাঁদ টা সাদা নয় বরং লালচে।চন্দ্রগ্রহণ যাকে বলে।এই চন্দ্রগ্রহণ টা বেশ লাগে নিরা তার মনে আছে ছোট থাকতে একবার সে এই চন্দ্রগ্রহণ এর রাতে গেছিলো “রুহানী সদন” তখন তার বয়স আনুমানিক ৬কিংবা ৭ হবে ঠিক মনে করতে পারলোনা সে। সে রাতে ছিলো রুদ্র আর রুহানীর জন্মদিন অদ্ভুত ভাবেই দুই ভাই বোনের জন্মদিন একই মাসে একই দিনেই। যেখানে তাদের বয়সের তফাৎ ৪ বছরের। লাল টকটকা শাড়িতে নিরা আর রুহানী নিজেকে সজ্জিত করেছিলো খুব উল্লাস নিয়ে।
কিন্তু সে উল্লাস বেশিক্ষন টিকেনি কারণ হিসেবে ছিলো রুদ্রর গম্ভির বানী
“খবরদার আমার বউ না হওয়া অব্দি এই লাল রঙ তুমি পড়বা না পড়লে তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবো আমি ”। ঠিক সেদিন থেকেই অদ্ভুত কারণে লাল রঙ টা তার পড়া হয়না সে নিজেও জানেনা কেন কিন্তু এই লাল রঙ যেনো এক প্রকার নিষিদ্ধ হয়ে গেছে তার কাছে।

ঠিক ছোট বেলা থেকে রুদ্রর এই গম্ভির স্বভাবের সাথে সে পরিচিত সেজন্যই সে ওই বাড়ির মুখো হতো কম। ছোট বেলা থেকেই রুদ্র তাকে বলে আসতো
“আমার বউ হবা তুমি সেজন্য আমার পছন্দ অপছন্দ গ্রহণ করবা বুঝলা”

—আচ্ছা রুদ্র সাহেব এর কি এখনো মনে আছে তার বলা কথা গুলো।নিশ্চয় নেই আর হয়তো থাকলেও তিনি বলবেন না কারণ আমি পারিনি তার মতো গম্ভির হতে তার পছন্দ অপছন্দ গুলো গ্রহন করতে।

মনে মনে কথা গুলো আপনমনে বলেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নিরার অজান্তেই।ছোট থেকেই নিরা চঞ্চল প্রানবন্ত কিন্তু রুদ্র ছিলো ছোটথেকেই গম্ভির আর চুপচাপ স্বভাবের। ছোট বেলাই কতোবার এইজন্য রুদ্রকে কামড়েছে তার হিসাব নেই নিরার কাছে।

হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে নিরা পাশে তাকাতেই চোখ পড়ে রুদ্রর বাম গালে থাকা কালো তিলের উপর। আপন মনেই হাত বারিয়ে ছুয়ে দিতে নিলেই রুদ্র মুখ ফিরায় যার কারণে হাত যায়ে ঠেকে রুদ্রর মসৃন ঠোঁটে।

অপ্রত্যাশিত ঘটনাই দুইজনেই চমকে উঠে।নিরা হাত না সরিয়েও ডেব ডেব করে তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে।রুদ্রও আহাম্মক ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে একই জায়গায় নড়াচড়া না করে। হঠাৎ শিয়ালের ডাকে ভয় পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নেই নিরা।

—আসলেএ আমি দুঃখিত আমি ওইভাবে আপনাকে ছুতে চায়নি।

নিরার নিচু কন্ঠে কথা বলেই সেখান থেকে চলে যায় পিছনে রয়ে যায় রুদ্রর অবাক চাহনী আর ধোয়া উঠা এক কাপ চা। রুদ্র কি ভেবে চা ঠোঁটে ঠেকাতে চেয়েও ঠেকাই না ।

—অপ্রিয়তমার হাতের স্পর্শ না হওয়াই তুলা থাক।কখনো অ টা উঠে গেলে নাহয় ফেরত দেওয়া যাবে আর না উঠলে প্রথম ও শেষ পাওয়া হিসেবে থেকে যাবে।কিছু না পাওয়াতেও যে পরম তৃপ্তি।

রুদ্র আজকাল নিজের কথার মানে নিজেই বুঝেনা। কি চলছে আসলে তার মনে কি ভাবছে সে নিজেও জানেনা। আদৌ কি সময় থাকতে বুঝবে সে নাকি তার বুঝতে খুব বেশিই দেরি হয়ে যাবে।

১৮.
রুহানীর দিকে অভ্র ঝুকতে নিলেই রুহানী অভ্রর বুকে ধাক্কা দেয়

—আপনি ভিষণ খারাপ মানুষ। আপনাকে জাস্ট আমার সহ্য হয়না ছোট থেকে আপনি আমাকে জ্বালিয়ে আসছেন। কেনো হ্যা।

—কথাটা তো তুমি ভুল বললা। ছোট থেকে তুমি আমাকে জ্বালিয়ে আসছো।কিন্তু আমাকে জ্বালাতে যেয়ে সে জ্বালার শিকার তুমিও হয়েছো। এখানে আমার দোষ ত নেই মিস রুহানী। উপস মিসেস অভ্র তালুকদার।(রুহানীর দিকে চোখ টিপ দিয়ে অভ্র বেরিয়ে যায়)

লজ্জাই রুহানীর গাল লাল হয়ে যায়।মনে পরে ছোট বেলাই করা তাদের বিয়ের কথা।
আসলে সেটা বিয়ে বলা চলেনা যেমন ছোট বেলাই সবার ই একটা পাতানো বর /বউ থাকে তারাও ঠিক তেমন ই বর বউ খেলতো। একদিন খেলতে খেলতে হঠাৎ অভ্র বলে উঠে

—এই শুনো তুমি আমার বউ কিন্তু দাদী বলেছে এইভাবে বউ হয়না

রুহানী ছোট ছোট চোখ তুলে অভ্রর দিকে তাকায়ে বলে উঠে
—তাহলে কিভাবে বর বউ হয় অভ্র ভাইয়া?

অভ্র কিছুটা ভেবে বলে উঠে
—উম কিজানি ওহ হ্যা কবুল কবুল বললে সত্যিকারে বিয়ে হয়

রুহানী খিলখিল করে হেসে বলে উঠে
—আরে শুধু এইটুকু আমি এখন ই বলছি কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল কবুল

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে শুরু করে।
অভ্র কিছু একটা ভেবে বলে উঠে

—আরে এইভাবে না আমি দেখেছিলাম টিভিতে আবার খালামনির বিয়েতে। ওইখানে বর বউ কে উদ্দেশ্য করে একটা লোক বলে আর তারা সেইটাতে সায় জানাই তারপর বলে কবুল।

—কিন্তু এখানে ত কেউ নেই তাহলে আমাদের কি বিয়ে হবেনা।

—আরে নাহ কেউ নাই ত কি হয়েছে আমি বলছি তুমি আমার সাথে রিপিট করো আচ্ছা
—আচ্ছা।
—আমি রুহানী শিকদার হাবিব শিকদার আর জামিলা শিকদারের একমাত্র মেয়ে
রুহুল তালুকদার এবং নিশিতা তালুকদারের একমাত্র বড় ছেলে অভ্র তালুকদারকে নিজের বর হিসেবে কবুল করলাম এবার বলো তিন কবুল

রুহানী অভ্রর কথামতো সব বলে উঠলে অভ্রও বলে উঠে।ব্যাস হয়ে যায় তাদের বিয়ে ছোট অবুঝ দুই বাচ্চা নিজের অজান্তেই বিয়ে করে ফেলে।রুহানীর আবছা আবছা মনে থাকলেও ব্যাপারটা যে অভ্রর স্পষ্ট মনে আছে ভাবতেই লজ্জাই আড়ষ্ট হয়ে গেলো রুহানী।

বৃষ্টি হওয়াই রুহানীকে বাসায় ফিরতে দিলেন না নিশিতা তালুকদার। যার কারণে রুহানীকে এই থেকে যেতে হলো।

১৯.
সাত সকাল বেলাই বেরিয়ে পড়লো রুদ্র আর নিরা। সালেমান হাইদার এগিয়ে দিতে চাইলেও রুদ্র নাকোচ করে দিয়েছিলো।রুদ্র দুইজনার টিকিট কেটে নিয়ে আসে। দুইটা পাশাপাশি সিট পায়নি এবার তারা কেউ একজন অনলাইনে আগে থেকেই একটা টিকিট বুক করে রাখাই দুইজন সামনাসামনি সিট পেয়েছে।কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই ঢাকাই যাওয়ার বাস এসে থামে তাদের সামনে। রুদ্র প্রথমে উঠে পড়ে নিরা উঠতে নিলেই পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে তার নাম ভেসে আসতেই পিছনে ফিরে তাকায়।
তাকাতেই নিরার ঠোঁটের হাসি চওড়া হয় ধ্রুবকে দেখে।

—আরে গায়ক সাহেব আপনি যে।
—আরোও একবার অপ্রত্যাশিত ভাবে তাহলে আমাদের সাক্ষাৎ হয়ে গেলো মিস নিরা।
—তাইতো দেখছি গায়ক সাহেব।
—চলুন উঠা যাক।

এতোক্ষন দুইজনার আলাপ চুপচাপ দেখছিলো রুদ্র কেন যেনো সহ্য হচ্ছিলোনা তার এই দুইজনার হাসি হাসি কথা গুলো।তার উপরে নিরার আবার ❝গায়ক সাহেব❞ ডাকটা তাকে আরও রাগিয়ে তুলছে। আর সে রাগকে আরও একধাপ বারিয়ে দিতেই
নিরা সিট পেয়েছিলো ধ্রুবের সাথে।

ব্যাস গম্ভির রুদ্রর মুখটা আরও গম্ভির হয়ে গেলো আর পিছ থেকে ভেসে আসতো লাগলো দুইজনার আড্ডার স্বর হঠাৎ করে নিরা আবদার করে উঠে

—গায়ক সাহেব একটা গান শুনায় দেন তাহলে সফর টা আরও ভালো কাটবে।
—গাইতে পারি এক শর্তে।
—সব শর্তে রাজি।
—আগে শুনেন তো।
—হুম।
—আপনাকেও আমার সাথে গাইতে হবে বলেন রাজি?

নিরা হাসলো আর সে হাসিকেই ধ্রুব সম্মতি হিসেবে ধরে গায়তে শুরু করলো।

আমি জানি না, কেন আমাকে.
ভিড়েতেও একা করে দিস।
আমি জানি না, কেন আমাকে.
এতটা নিজের করেছিস।
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে,
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে আজ তোর সাথে.
বারে বার…
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই…
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই.
তারা গুলো জ্বলেছে আবার…
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার
আমারই ঘরে তোকে রেখেছি লুকিয়ে,
চাহিদা সবই তোকে দিয়েছি বুঝিয়ে।
কতটা দূরে যাবি পালিয়ে পালিয়ে,
তোকে না পেলে আমি যাব হারিয়ে।
থাকি একপাশে আমি
আর একপাশে তুই
আমি তার থেকে আর বেশি চাই না কিছুই
তারাগুলো জ্বলেছে আবার…
মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার.

মন রয়েছে রয়েছে দেখ তোর হাতে
মন চলেছে চলেছে খালি তোর সাথে
মন থাকে না থাকে না আর ঘরেতে
যেই পড়েছে পড়েছে তোর ঝড়েতে…
বারেবার…

দুইজনার গানের গলাই বাসে থাকা সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে।গান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই করতালির আওয়াজে বাস ভরে উঠে।হঠাৎ কই থেকে ৩ ৪ জন মেয়ে এসে ধ্রুবকে চিনে ফেলাই নিরাকে রিকুয়েষ্ট করে সামনে রুদ্রর পাশে যেয়ে বসতে সে ধ্রুবের সাথে ছবি তুলবে। নিরা হেসে উঠে রুদ্রর পাশে যেয়ে বসে পরে কিন্তু রুদ্রর দিকে তাকাতেই চমকে উঠে নিরা কারন,,,,,

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে