সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৬

0
114

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৬

১৫.
নিরা আর রুদ্রর কথার মাঝেই কিছু গ্রামবাসী তাদের দিকে এগিয়ে আসে। বয়স্ক লোকদের তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দুইজন একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।রুদ্র কথার মাঝে নিরার খুব কাছে চলে এসেছিলো। বয়স্ক লোকরা এগিয়ে এসে তাদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—এই তোমরা কে। আর এখানে কেনো।

রুদ্র এগিয়ে এসে বিনয়ী ভাবে বলে উঠলো
—জ্বি আমরা এখানে কাজের উদ্দেশ্য এসেছিলাম আজ ফিরছি কিন্তু বাস না আসায় ট্রেনের খোজে যাচ্ছিলাম।

অপরজন বলে উঠলো
—আজকে কোন ট্রেন বা বাস এই গ্রাম দিয়ে যাবেনা ভারি বর্ষনের জন্য বাস আটকে গেছে আর রেললাইনে মোটা গাছ ভেংগে পড়েছে ঝড়ের কারণে। আপনাদের জন্যেও এই মহূর্তে বাহিরে থাকা উচিৎ না।

রুদ্র আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই সালেমান হাইদার নামক এক বয়স্ক বলে উঠলেন
—পাশের মাইয়া ডা কেডা(পাশের মেয়েটা কে)

রুদ্র নিরার দিকে তাকালো নিরাও এতোক্ষন রুদ্রর দিকে চেয়ে ছিলো তার উত্তরের আশাই। রুদ্রকে উত্তর দিতে না দেখে তারা পরস্পরের মাঝে বলে উঠে

—আমার তো মনে হচ্ছে দুইজনে এখানে অন্য মতলবে এসেছে।
—আমার ও মজিদের কথা ঠিক মনে হচ্ছে।নাহলে কাজের উদ্দেশ্য এসেছে এখানে মেয়ের কি কাজ থাকবে। আর দেখোনাই কতো কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলো আমাদের দেখেই তো আলাদা হইলো।

সালেমান হাইদার দুইজনার কথা শুনে বলে উঠলো
—দেখো এটা আর আমাদের যুগ নেই এখন ছেলে মেয়ে উভয় কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ায়।

জাহিদ হোসেন নামক লোকটি বলে উঠে
—তা যাই বলেন কিন্তু এদের হাবভাব আমার ভালো ঠেকছে না।

সালেমান হাইদার এবার কড়া গলায় বলে উঠলেন
—এইভাবে কারো জীবন নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।

সালেমান হাইদার এবার রুদ্র নিরার উদ্দেশ্য বলে উঠে
—আজকের রাতে তোমরা আমাদের বাসায় থাকো। এই বৃষ্টিতে তোমরা বেরুতে পারবা না আর যুবতী মেয়ে নিয়ে এই রাতের বেলা বাহিরে থাকাটা সুবিধার নই।

রুদ্র দ্বিমত করলোনা কারন তাদের কথাটা ফেলে দেওয়ার নই।যেহেতু ট্রেন ও পাবেনা তাই এটাই ভালো উপায় হবে বলেই মনে করলো। নিরাও মাথা নিচু করেই হাটা ধরলো।

বাশের এক বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিরা রুদ্র।নিরা হা হয়ে বাসাটা দেখছে বাশের যে এতো সুন্দর বাড়ি হয় তা নিরা এই প্রথম দেখলো।এর আগেও দেখেছে কিন্তু এতোটা সুন্দর দেখেনি।এ যেনো বাশের তৈরি রাজপ্রাসাদ এর মতো। নিরা আর রুদ্রকে নিয়ে সালেমান নিজের বাসার ভিতরে যেয়ে তার বউকে ডাক দিলো

—রিহানা বউ দেখো বাসায় মেহমান এসেছে।বের হও দ্রুত।

সালেমান হাইদার এর কথায় বেরিয়ে এলো একজন বৃদ্ধা।বৃদ্ধার দিকে চোখ যেতেই নিরা কিছু মহূর্তের মাঝেই চিনে ফেললো বাস স্টেশানে দেখা সে বৃদ্ধ কপত–কপতী জোড়া। নিরা হাসলো আসলেই পৃথিবী ছোট।

—এরা কারা গো এভাবে ভিজে আছে কেন।
—এরা শহর থেকে এসেছিলো কাজে কিন্তু বৃষ্টির জন্য আটকা পড়ে গেছে তুমি এক কাজ করো নাতনিডারে তোমার একটা শাড়ি দিয়ে দেও।

বৃদ্ধা হেসে নিরার হাত ধরে নিয়ে গেলো। রুদ্র তাকিয়ে রইলো নিরার যাওয়া দেখে।রুদ্রর চাহনী দেখে সালেমান হাইদার হেসে রুদ্রর কাধ জড়িয়ে ধরলো

—কি ব্যাপার দাদুভাই নাতনিরে পছন্দ করো নাকি।

রুদ্র আনমনেই বলে উঠলো
—জানিনা এইটা পছন্দ নাকি অন্যকিছু কিন্তু সে পাশে থাকলে সে সামনে থাকলে কেমন এক ঘোর কাজ করে।বুকের ঠিক বামসাইডাই স্পন্দন গুলোর গতিবেগ বেরে যায়।তাকে আমার পছন্দ করা বারণ হওয়ার স্বর্তেও তার ভাবনা আমার মস্তিষ্ক জুরে ছড়িয়ে রয়েছে।তার কালো রেশমী চুলের ছন্দ তার হাসি মাখা মুখ তার বাচ্চাদের মতো প্রানচ্ছল হয়ে ঘুরা সব কেমন একটা,,,,

রুদ্রর হুশ ফিরে সে এতোক্ষন কি বলছিলো পাশে তাকাতেই দেখে দাদু তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে।রুদ্র হচকচিয়ে উঠে। আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই সালেমান হাইদার বলে উঠেন

—বুঝসি দাদুভাই আর কিছু বলতে হবেনা। তোমার এই নাম না জানা অনুভূতির নাম গুলো খুব শীগ্রই যেনে যাবা। কিন্তু দাদুভাই বেশি দেরি করোনা জানোই তো শাহজাহানের তৈরি তাজমহল সবাই দেখলেও মমতাজ কিন্তু দেখেনি দাদুভাই। শাহজানের এই আক্ষেপ তার শেষ নিশ্বাস অব্দি ছিলো।

রুদ্র কিছু বললোনা নিজের মনে আওড়ালো
—এতো সম্ভব না দাদু তার প্রতি আমার কোন অনুভূতি সাজে না।

রুদ্র সালেমান এর দেওয়া জিন্স আর পাঞ্জাবী পড়ে বেরিয়ে এলো।এইটা নেওয়া হয়েছিলো সালেমান এর নাতির জন্য যার এইবার আসার কথা ছিলো কিন্তু সে আসেনি যার দরুন পোষাকটা রুদ্রের পরনে।

রুদ্র পাঞ্জাবীর হাত গুটাতে গুটাতে তার চোখ পড়ে নিরার দিকে। বাঙ্গালী স্টাইলে শাড়ি পড়ে চুল ছাড়া অবস্থায় বেশ লাগছে নিরাকে হালকা বেগুনী রঙের শাড়িটা দারুন ভাবে মানিয়ে গেছে নিরার সাথে।

—আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গুলো ভঙনের কি অদ্ভুত পরিকল্পনা এটেছে এই মেয়ে।

রুদ্রর দিকে তাকাতেই নিরা কিছু মহূর্তের জন্য থমকালো।উজ্জ্বল শ্যামা পুরুষের শরীরে কালো পাঞ্জাবী দারুন ভাবে মানিয়েছে।পাঞ্জাবীটা একটু টাইট হওয়াই পেশি গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।মায়া মায়া চেহারার সুদর্শন পুরুষ টিকে দেখে আবার ও বলে উঠলো
—পুরুষের জন্য মায়া না উহু মৌটেও না। মায়া মায়া পুরুষকে দেখলে যেকোন মেয়ে পাগল হতে রাজি হবে বিনা স্বর্তে তখন যে সুদর্শন পুরুষ রা পাত্তা পাবেনা এটা যে অন্যায় ঘোর অন্যায়।

নিরা আর রুদ্রর মনোভব হয়তো বৃদ্ধা বুঝতে পারলেন তার চোখে থাকা কাজল নিয়ে লাগিয়ে দিলেন দুইজনার কানের পিঠে।

১৬.
সোফার উপরে গাল ফুলিয়ে বসে আছে রুহানী এই গাল ফুলানোর একমাত্র কারণ হলো সামনে বসে থাকা মাইশা আর অভ্র।রুহানী ভেবেছিলো আজকে হয়তো মাইশা বৃষ্টির জন্য আসবেনা কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে দিতে মাইশা আজকে ঠিকই এসেছে তাও শাড়ি পড়ে পাতলা শাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে যার দরুন শরীরের ভাজ স্পষ্ট পরিলক্ষিত। অভ্র তাই তার শার্ট মাইশাকে দিয়েছে।কিছুক্ষন পর পর ই মাইশা সেটাই নিজের নাকে লাগিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস নিচ্ছে যা রুহানীর রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

রুহানীর মন চাচ্ছে দুইজনার মাথা একেঅন্যের সাথে ঠুকে দিতে।রুহানী দাতে দাত চেপে উঠে গেলো অভ্রর ওয়াসরুমে।আজ বাড়িতে বাবাই থাকাই সবাইকে নিয়ে অভ্র নিজের ঘরেই পড়াচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসতেই ঠোঁটের কোণাই হাসি ফুটে উঠলো

—খুব শখ না চান্দু মেয়েদের সাথে ৩২ পাটি দাত বের করে হাসাহাসি করার এবার দেখাচ্ছি মজা। পড়ানোর নামে ভন্ডামি হু রুহানী থাকতে তা সম্ভব নহে।

রুহানী বের হতে নিতেই অভ্রর বুকের সাথে বাড়ি খাই
—উফ এই গন্ডারের মতো দেওয়াল আসলো কই থেকে মাথার জিবন টাই ত্যানা ত্যানা সব হইসে ওই অভ্র লুচুটার জন্য উগান্ডার বাসিন্দা লাল হনুমান টিকটিকির চাচা বিড়ালের চাচাতো মামা,ইদুরের খালা,জলহস্তি কোথাকারা

—তারপর?

অভ্রর কথা শুনে রুহানী ভয়ে ঢোক গিলে মাথা তুলতেই তার চোখ চরকগাছ যাকে দেওয়াল ভেবে এতোক্ষন এতো সুন্দর সুন্দর উপমা দিচ্ছিলো সে যে অভ্র বুঝতে পেরেই তার বর্তমান অবস্থা
“ছেড়ে দে অভ্র কেদে বাচি” টাইপ

অভ্র রুহানীকে চুপ থাকতে দেখে তার দিকে এক পা এক পা করে এগুতে এগুতে বলে উঠলো

—কি হলো চুপ হয়ে গেলা যে তারপর বলো আর কি কি উপাধী দেওয়া যায় আমাকে।
—উপাধী আরে কিসের উপাধী ওহ হ্যা আপনি ভালো আপনি কত মহান একজন মানুষ আ আপনি আপনি(আমতা আমতা করে)
—হ্যা আমি তারপর??

রুহানী মুখের উপর অভ্রর নিশ্বাস পড়তেই রুহানীর তালগোল পেকে যেতে শুরু করলো।।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে