সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-০৫

0
123

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—৫

১২.
সকাল সকাল রুদ্র বেরিয়ে গেলো বিজয়কে তার প্রজেক্ট দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে।আজকে আর নিরা হলোনা তার পথের সাথি।রুদ্র অবশ্য মানা করেনি কিন্তু নিরা নিজেই মানা করে দিলো।সে আজ নিজের মতো করে ঘুরবে।

আজ শখের বসে হলুদ শাড়িতে নিজেকে ফুটিয়ে তুললো নিরা রঙ টা তার তেমন পছন্দ না তবুও আজ শখ হলো অপছন্দের জিনিসে নিজেকে রাঙাতে।শাড়িটা মিসেস রহমান দিয়েছে।ময়মনসিংহ এর যাত্রাই সে সঙ্গে করে তার পার্স ব্যতিত আর কিছু এনেছিলনা। হাত ভরে পড়লো হলুদ কাচের চুরি। কপালে ছোট কালো টিপ সচারাচর এই টিপ তার পড়া হয়ে উঠেনা।তবে আজ বেশ খুশি মনেই সে তা ধারণ করলো।পায়ের নুপুর জোড়া দেখে উঠে দাড়ালো সে আয়নায় খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেকে দেখেই বেরিয়ে পড়লো অজনা উদ্দেশ্য। সে জানেনা পথ জানেনা কিছু শুধু এক সরু রাস্তার পথে নিজের পা বারাতেই এক দমকা হাওয়াই তার সারা শরীরে এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে গেলো।

আরেকটু সামনে এগুতেই তার চোখ গেলো এক দল বাচ্চার দিকে।বাচ্চারা কাউকে ঘিরে খেলছে।গিটারের মধুর তালে বাচ্চাগুলোর উল্লাসের ছবি দেখে মহূর্তে নিরার ঠোঁটের হাসি চওড়া হলো।এক পা এক পা করে এগুতেই সামনে পড়লো এক সুদর্শন পুরুষ তাকে ঘিরেই বাচ্চাদের এই উল্লাস।হলুদ পাঞ্জাবীতে ঝাকড়া চুলে একদম হিমুর মতোই মনে হলো লোকটাকে তার কাছে।
আচ্ছা লোকটাও কি হিমুর মতো নিজের জীবনের প্রতি উদাস তার জীবনেও কি কোন রুপা আছে।

কতোশত প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরতেই তার মনে হলো কেউ তার হাত ধরে টানছে। নিরা নিচে তাকাতেই দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে তার হাত ধরে টানছে।অসম্ভব মায়া এই মুখটাই শরীরের নোংরা বস্ত্রের ভিরে উসকোখুসকো চুলের মাঝে এই সুন্দর চেহারাটা কেমন জ্বলজ্বল করছে।

নিরা বাচ্চাটার সামনে হাটুমুরে বসে বাচ্চাটার জামা পরিষ্কার করতে নিলেই বাচ্চাটা খিলখিল করে হেসে বলে উঠে।

—আপামনি পরিষ্কার করে লাভ নাই আবার ধুলাবালী ভইরা(ভরে) যাইবো(যাবো) থাকগে(থাক) আপনি উঠেন আপনার শাড়িতে ময়লা ভরবেনি।

নিরা উঠতেই এক পুরুষালী হাত দেখে থমকে গেলো মাথা উঠিয়ে লোকটার চেহারা দেখে মনে হলো এই লোকটাকে আগেও সে দেখেছে অনেকবার দেখেছে কিন্তু তার মনে পড়ছেনা। নামটা মনে করার চেষ্টা করতেই সামনে থেকে একটা নাম কানে এসে বারি খেলো তার

—হাই আমি ধ্রুব।

নামটা শ্রবণ হতেই নিরার বুঝতে বাকি রইলোনা এই ধ্রুব আর কেউ না ধ্রুব তারা ইউটিউব চানেলের সিঙ্গার। লাক্ষ লাক্ষ ফেন ফলোয়ার তার কতো মানুষ তার গানের সুরে পাগল। নিরাও যে তাদের ভীড়েই একজন তা মানতে তার কোন দ্বিধা নেই। কারণ আসলেই লোকটার গলা চমৎকার।

নিরাকে জবাব দিতে না দেখেই ধ্রুব পুনরায় হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই নিরার ধ্যান আসে।হচকচিয়ে বলে উঠে

—আমি নিরা তালুকদার।
—নাইস টু মিট ইউ। বাহ আপনি তো দেখি আমাকে কপি করেছেন বেশ দারুন ভাবে।

নিরা অবাক হলো। নিরাকে অবাক হতে দেখে ধ্রুব হাসলো। তার পরনের শাড়ির দিকে ইশারা করতেই নিরা বুঝলো সে তার শাড়ির দিকে ইঙ্গিত করছেন।

—হুম কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।
—একদম হিমু আর রুপা লাগছে।

কথাটা বলেই ধ্রুব হেসে দিলো।কিছুক্ষন আগেও লোকটাকে দেখে সে হিমুর উপাধি দিয়েছে। আর কাকতালীয় ভাবে সেও তাকে রুপার সাথে তুলনা করছে।

—আমি যতোদূর জানি আপনি ঢাকাতেই থাকেন তাই না গায়ক সাহেব।

ধ্রুব হাসলো ইউটিউবার হওয়ার সুবাদে যে তার পার্সোল জীবনটা অনেকটাই পাবলিক হয়ে গেছে তা সে জানে।

—জ্বি হঠাৎ এই কৃত্রিম ভীর থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই অজনা এই প্রকৃতির ভীড়ে চলে আসা হয়েছে।সেখানেই এই বাচ্চাদের সাথে দেখা হয়ে একদম নিজেকেও এদেরর সাথে মিলিয়ে আড্ডাই মেতে উঠেছিলাম কিন্তু আমি জানতাম না ময়মনসিংহেও আমার ফেন আছে।

নিরাও হাসলো ধ্রুবের কথা শুনে

—আমিও ঢাকার মেয়ে গায়ক সাহেব। আপনার মতোই প্রাকৃতির টানেই অজানাই ছুটে ছিলাম আর সে অজনা রাস্তা আমাকে এখানে এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে।

—তাহলে আমাদের মধ্যে বেশ মিল আছে তাইনাকি।
—তাইতো দেখছি গায়ক সাহেব।

বাচ্চাগুলো ইতিমধ্যে তাদের কে টেনে নিয়ে গেলো খোলা মাঠের মাঝে। বাচ্চা গুলো গোল করে ঘিরে রেখেছে তাদের। কোথায় থেকে একটা বাচ্চা অর্না যোগার করে আনলো। অপর একটি বাচ্চার চোখ বেধে দিলো সে। তার একমাত্র কারণ
হলো কানামাছি খেলবে।

বাচ্চাদের ভীরে কখন সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলো টেরই পেলো না কেউ।
বাচ্চাদের নিয়ে পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে আছে নিরা ধ্রুব।

—মিস নিরা চলুন কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। বাচ্চাদের ও মনে হয় খিদা লেগে গেছে।

খাওয়ার কথা শুনে নিরা তার হাত ঘরির দিকে তাকালো দুপুর দুইটা বেজে গেছে।জিহবায় কামড় দিয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো নিরা।

—মাফ করবেন ধ্রুব সাহেব আমাকে রওনা দিতে হবে কখন এতো সময় পেরিয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। ক্ষমা করবেন আমি আজ আসি ভাগ্যতে থাকলে পুনরায় কোন এক জায়গায় দেখা হবে।

কথাটা বলে আর দেরি করলোনা নিরা শাড়িটা একটু উচু করেই দৌড় দিলো।
ধ্রুব এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো অগুন্তিক এক নারীর দিকে। ভিজা আচল হাওয়ার তালে তালে দোল খাচ্ছে সাথে পায়েল আর চুরির রিনঝিনিয়ে বাজিয়ে তুলছে আলাদাই সুর ।কোমড় অব্দি খোলা চুলে যে ধ্রুবের বুকে দাগ কেটে গেছে তা ধ্রুবের চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে নিমিষেই।

হঠাৎ করে দেখাই হঠাৎ এক অনুভূতির নাম দেওয়ার সাহস হলোনা তার বুকের মাঝখানে ভালোলাগার এক হাওয়া নিয়েই বাচ্চাদের সাথে চলেগেলো অন্য পথে।কি অদ্ভুত একই জেলাই থেকেও যাদের কখনো দেখা হয়নি আজ অন্য জায়গায় এসে সে যে এতো সুন্দর কিছু মহূর্ত উপহার পাবে সে ভাবতেও পারেনি।নিজের ঝাকড়া চুল গুলোতে পুনরায় হাত বুলিয়ে পিছন ফিরে তাকালো ধ্রুব কিন্তু দেখা পেলো না তার মনে প্রথম দেখাই বাজিয়ে দেওয়া প্রেমের সুর তৈরি করা সুরঞ্জনার।

—আপনার সাথে নামটা খুব মানিয়ে গেলো নিরা “সুরঞ্জনা”। (ধ্রুব)

এখানেই কি শেষ হবে তাদের দেখা নাকি আরও বাকী তাদের সাক্ষাৎ। ধ্রুব কি আবার পাবে সুরঞ্জনার দেখা।নাকি তার মনের অনুভূতির সাথে সুরঞ্জনা নামটাও কোন এক কোনায় দেবে থাকবে।

১৩.
রুদ্র বাসায় আসতেই দেখে নিরা সেখানে নেই। অনেক অপেক্ষা করার পরেও যখন নিরা ফিরলনা তখন তার চিন্তা হলো। সে পুনরায় তার জেকেট পরে বেরিয়ে যেয়ে রাস্তাই দাড়াতেই তার চোখ গেলো ছুটে আসা এক যুবতীর দিকে দূর থেকেই তার চোখ আটকে গেলো হলুদ রাঙা হলদে মায়াবিনীর দিকে।

রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়েই হাফাতে শুরু করলো সে।

—ক্ষমা করবেন রুদ্র সাহেব আপনাকে মনে হয় চিন্তাই ফেলে দিলাম বাচ্চাদের সাথে কখন সময় চলে গেলো টের ই পেলাম না।

রুদ্র কিছুনা বলে গম্ভির মুখ নিয়েই বলে উঠলো

—এরপরে কখনো হলুদ পরে আমার সামনে আসবেন না মিস নিরা।

কথাটা বলেই হনহন করে ভিতরে চলে গেলো সে নিরা রুদ্রর কথার আগা মাথা বুঝলোনা। তাকে কি খারাপ লাগছে যার কারণে রুদ্র তাকে হলুদ পড়তে মানা করলো।

নিরা বেশিকিছু না ভেবে ভিতরে চলে গেলো।

১৪.
বৃষ্টির মাঝে বাস স্টেশানে দাঁড়িয়ে আছে নিরা রুদ্র। হঠাৎ এই ঝুম বৃষ্টির কারণ বুঝলোনা তাড়া অনেকক্ষন হওয়ার পরেও যখন বৃষ্টি থামার নাম না দেখে রুদ্র নিরাকে বলে উঠলো

—মিস নিরা আরেকটু সামনেই স্টেশান আপনি কি সেখানে যাবেন বৃষ্টি মনে হয়না থামবে আর এই বৃষ্টিতে বাস ও আসবেনা। আর স্টেশানে৷ গেলে ভিজার চান্স ও কম হবে বলেই আমার ধারণা।

নিরা সম্মতি জানাতেই দুইজনে হাটা ধরলো বৃষ্টির মাঝে হঠাৎ রুদ্র জিজ্ঞেস করে উঠলো

—সেদিন বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারণ কি ছিলো মিস নিরা আপনি কি কাউকে পছন্দ করেন।

নিরা হাসলো আকাশের দিকে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন পুনরায় হাটা ধরে রুদ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠলো

—হুম পছন্দ করি বড্ড পছন্দ করি এই প্রাকৃতি এই স্বাধীনতা আমার চার দেওয়াল পছন্দ না রুদ্র সাহেব কখনো আকাশে উড়ন্ত পাখিকে খাচায় খুশিমনে বন্দি হতে দেখেছেন। দেখেন নি।আমিও সে খোলা আকাশের পাখির মতো আমিও চায়না বন্দি হতে আর এই বিয়ে মানেই একটা খাচা তারমানে এই না আমি বিয়ে করবোনা অবশ্যই করবো কিন্তু যে আমাকে এই খোলা আকাশ দিবে উড়তে তাকে।আমি জানি ভালোমা,বাবাই(রুদ্রর বাবা মা) আমাকে কখনো বন্দি করবেনা কিন্তু তাও ভয় হয় সে ভয়ের জন্যই আপনাকে বিয়েতে অস্বিকার করেছিলাম রুদ্র সাহেব।

একদমে কথাগুলো বলে থামলো নিরা।রুদ্রর কোন ভাবাগতি নেই রুদ্রের মনে কি চলছে ঠিক বুঝলোনা নিরা সে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো

—আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ রুদ্র সাহেব

নিরার কথাটা শুনেই রুদ্র নিরার দিকে তাকালো হুট করে রুদ্রের এইভাবে তাকানোই হচকচিয়ে উঠলো নিরা

—শান্তশিষ্ট গম্ভির ম্যাচুয়ার,যে সংসার কে এক সুতাই বেধে রাখার ক্ষমতা রাখবে।অদ্ভুত হবে তার ব্যক্তিত্ব। যে নিজের কথা দ্বারা মানুষ কে আপন করে ফেলবে।

নিরা হাসলো

—একদম আমার বিপরিত।

নিরার কথায় হাটা বন্ধ করলো রুদ্র তার দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলে উঠলো

—ঠিক আমরা একে অন্যের বিপরিত আমাদের মাঝে কোন মিল নেই। আমাদের ইচ্ছা আকাঙ্খা চাহিদা চাওয়া পাওয়া স্বপ্ন সব ভিন্ন দুই মেরুর বাসিন্দা আমরা।

(তবুও কেন আপনাকে দেখলে আমার সব গুলিয়ে যায় সব বিপরীত কে একই দিকে আনার ইচ্ছা করে মন।এইটাকে শুধুই আমার ভুল ধারণা আবার ঢাকা চলে গেলে কি আমার মনে আপনার জন্য যা কিছু আছে সব মুছে যাবে। আচ্ছা আমিও যা ভাবি আপনিও কি তাই ভাবেন নাকি এই ব্যাপারেও আমরা ভিন্ন।)

মনের কথা গুলো আর মুখে এলো না তার হুট করেই তাদের সামনে,,,,

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে