সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
143

#সন্ধ্যা_আকাশের_সুখ_তারা
“নওশিন আদ্রিতা”
পর্ব সংখ্যা—১৬(সমাপ্ত)

৩৮.
সাত সকাল বেলাই কমোড় বেধে রান্না করতে লেগে গেছে নিরা। বিভিন্ন রকমের নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে রেখে পুনরায় কিচেনে চলে আসে ক্ষির বানাবে বলে।ভোরের দিকেই রুদ্রর থেকে জেনে নিয়েছে সবার পছন্দ সে হিসেবেই আজ তৈরি করেছে এই খাবারের আইটেম।

রান্না ঘর থেকে টেবিলের কাছে আসতেই নিসেস শিকদার নিরার দিকে এগিয়ে গেলেন নিজের আচল দিয়েই যত্ন করে মুছে দিলেন নিরার ঘেমে থাকা মুখটা

—কি অবস্থা করেছিস নিজের ঘেমে মানা করলাম কতো করে করিস না এতোসব কাজ। কিন্তু কে শুনে কার কথা।(শাসনের স্বরে)

—উফফ ভালোমা সামান্য রান্নাই তো ব্যাপার টা আমি কি নিজের বাড়িতে রান্নাও করতে পারিনা নাকি পর হ্যা(কাদো কাদো হয়ে)

—নাটক ভালোই শিখেছিস যা হাত মুখ ধুয়ে রুদ্রকে ডেকে নিয়ে আই বাকী কাজ আমি আর লিমা (রুদ্রর ফুফু) করে নিবো।

নিরা মাথা দুলিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে যেতেই তার চোখ আটকে গেলো ঘুমন্ত রুদ্রর দিকে ধূসর রাঙা চাদরে মুড়িয়ে থাকা প্রেমিক পুরুষ টাকে দেখে মনে পড়ে গেলো রুদ্রর বলা ভালোবাসার কথা গুলো রুদ্রর দেওয়া অবাধ্য ছোয়া গুলো।লজ্জায় রাঙ্গা মুখটা আচলে লুকিয়ে চলে গেলো ওয়াসরুমে নিরা নিজের আচারণে নিজেই অবাক নিরা তো এমন লজ্জাবতি ছিলোনা তার কথা বা কাজে লজ্জা টা তো কম পরিলক্ষিত হতো।

মাথা নিচু করে দাঁড়ায় আছে রুহানী।তার সামনে অভ্র বেত হাতে নিয়ে দাঁড়ায় আছে।রুহানী ভয়ে ঢোক গিলছে

—অভ্র ভাইয়া(আমতা আমতা করে)

—ভাইয়া??(শান্ত সুরে)

—নাহ মানে স্যার(তোতলে)
—স্যার??(রাগী চোখে)

রুহানীর অবস্থা এবার ছেড়ে দে স্বামি কেদে বাচি এদিকে অভ্রও রেগে আগুন একে তো ওর ফুফু ওকে এতো গুলা কথা শুনিয়ে দিলো আর সেও চুপচাপ শুনে নিলো যা তার একদম পছন্দ হয়নি।

—কি হলো কথা বলোনা কেন এমনি সময় তো খুব মুখ চলে আর যখন সে তোমাকে এতো কথা শুনাচ্ছিলো তখন মুখে তালা লাগানোর মানে কি আমাকে বুঝাও।

—তিনি আপনার ফুফু ছিলেন আমার ফুফু শাশুড়ী। আমাদের বয়সে বড় কিভাবে তাকে আমি।পালটা জবাব দিতাম।উনার অসম্মান হতোনা হ্যা মানছি আমার আমি অনেক রাগী বা শ*য়তান কিন্তু তাই বলে আমি কখনো কাউকে অপমান করবো ওতোটা বেদ্দব ও না।

রুহানীর কথায় শান্ত হলো অভ্র। রুহানীকে বুকে জড়ায়ে নিলো।

—সরি রাগ উঠে গেছিলো

—হু আপনাদের রাগ রাগ আর আমার রাগ। আপনি তো আমাকে ভালোওবাসেন না। এইজন্য আমাকে বকলেন।
(কাদো কাদো কন্ঠে)

—তোমাকে ভালোনা বাসলে আমি ভালোবাসার মানেও জানিনা তুমি আমার রুহ আমার সব। বুঝতে শিখার আগে থেকেই তোমার এই রাগী চেহারায় নিজেকে হারিয়েছি তোমার পাগলামিতে পাগল হয়েছি। তোমার_সন্ধ্যা_আকাশের_তারা হয়েছি নিজের অজান্তেই।ভালোবাসি পাগলিটা অনেক বেশিই ভালোবাসি।

—আমিও ভালোবাসি খুব খুব ভালোবাসি। (অভ্রর বুকে আরও নিবিড় ভাবে মুখ গুজে)

৩৯.
–এইযে শুনছেন উঠুন ভালোমা নিচে ডাকে

নিরার ডাকে রুদ্রর কোন হেলদোল দেখা গেলোনা। নিরা আরও জোড়ে ধাক্কা দিতেই এবার নড়ে চড়ে উঠলো

—উঠুন না রুদ্র আমাকে নিচেও তো যেতে হবে এই যে শুনছেন।

রুদ্র এবার চোখ মেলে তাকায়। নিরাকে টেনে নিজের বুকে টেনে নেই
—আরে কি করছেন ছাড়ুন নিচে এতো মানুষ উঠুন ফ্রেশ হন।

রুদ্র নিরার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবায়ে কিছুক্ষন ওইভাবেই পড়ে রইলো।নিরার রুদ্রর সাথে তাল মিলালো।অনেকক্ষন পর রুদ্র নিরাকে ছেড়ে নিরার কপালে গভীর এক চুমু একে বলে উঠলো

—ভালোবাসি বউ।

—ভালোবাসি।(রুদ্রর গালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে)

৪০.
মিস্টার শিকদার চিন্তিত ভঙিতে চেয়ারে বসে আছে মিস্টার শিকদারকে ওতো চিন্তিত দেখে উনার পাশে এসে বসলেন মিসেস শিকদার।

—কি হলো এমন চিন্তাই কেনো? কিছু হয়েছে?

—আমি রুদ্র আর নিরা মার বিয়ে নিয়ে চিন্তাই আছি ।

—কেনো।
—আমার মনে হয়না রুদ্র এই বিয়েতে খুশি
—এমন ধারণা হলো কেন তোমার রুদ্রত নিজেই বিয়েতে মত দিয়েছে
—হ্যা দিয়েছে কিন্তু কালকে তার আচারণ দেখলে না
—আরে বিয়ের প্রেশারে এতো হৈ-হুল্লোড় তার পছন্দ না যানোই ত সেজন্য হয়তো।
—তোমার কথায় যেনো সত্যি হয়।

হঠাৎ মিসেস শিকদার এর চোখ পড়ে সিড়ির দিকে খুশিতে নিজের স্বামির হাত বাড়ি মেরে ডাক দেয়

—ওইখানে দেখো।

হাতের ইশারা দিয়ে সিড়ির দিকে দেখায়ে। মিস্টার শিকদার দেখে তিনিও খুশি হয়ে গেলেন।
রুদ্র নিরাকে কোলে করে নিচে নামিয়ে আনছে। আসলে বের হওয়ার সময় নিরার পায়ে লেগে যায় যার কারণে রুদ্র তাকে কোলে তুলে নেই।
—এবার তো নামান আমরা এসে গেছি ভালোমা বাবাই দেখছে।
—দেখুক আমার বউ আমার কোলে তার বউকে সে কোলে নিয়ে রাখুক আমার তাতে আপত্তি নেই।
—ছি লজ্জা নাই

রুদ্র এবার নিরা লজ্জা পাওয়াই সজোড়ে হেসে উঠে।রুদ্রর এমন হাসিতে বাড়ির সবাই সিড়ির দিকে তাকায় সবার চোখ জেনো কৌটা থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম কারন কেউ রুদ্রকে এমন জোড়ে জোড়ে হাসতে দেখেনি।রুদ্রর চাচাতো ভাই এই মহূর্তের ছবি তুলে রেখে দেয়। হাস্যজ্বল রুদ্রর কোলে লজ্জাই লাল হয়ে থাকা নববধূকে দেখতে আসলেই দারুন লাগছে।

৪১.
৩০ বছর পরে,

স্টেশান বসে আছে এক বৃদ্ধা মহিলা। বয়স তার ৬০ উর্দ্ধে। চেহারায় স্পষ্ট বয়সের ছাপ।হাতে তার লাঠি। কুচকে যাওয়া চামড়ায় কারো অপেক্ষার ছাপ। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটে এক পুরুষালী বৃদ্ধর কন্ঠে

—নিরা

(হুম বৃদ্ধা নিরা)

রুদ্রর ডাক শুনে নিরা তার দিকে তাকাই ৬৭ বছরের বৃদ্ধ রুদ্রর চেহারার তেজ এখনো ওমন ই আছে যা দেখে এই বয়সে এসেও নিরা তার প্রেমে পড়তে ভুলেনা। রুদ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে গাল ফুলাই নিরা

—কি হলো তুমি বাড়ি ছেড়ে বাস স্টেশানে কি করছো হ্যা সে কখন থেকে খুজছি তোমাকে রাইসু(রুদ্রর একমাত্র ছেলের ছোট মেয়ে) আমাকে বললো “দিদা নাকি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে স্টেশানে বাড়ি বানাবে বলে ঠিক করেছে”। এইসব কোন ধারণের বাচ্চামো চলো বাড়ি চলো।

—যাবোনা আমি। তোমার জীবনে আমার ত দরকার ই নেই হু থাকবে কেন আমি তো এখন বুড়ি হয়ে গেছি না। এখন তো আমাকে ভালো লাগবেনা যাও তুমি যাবোনা আমি ওই বাড়ি থাকবো না তোমার সাথে করবোনা সংসার। (গাল ফুলিয়ে)

—আরে বাবা হয়েছি কি বলবা তো না বললে বুঝবো কিভাবে।
—হ্যা বুঝবা না তো আমাকে বুঝতে যাবা কেন।(গাল ফুলিয়ে)
—দেখো
—দেখান

রুদ্র চোখ বড় বড় করে তাকাই নিরার দিকে
—বুড়ো বয়সেও তোমার অসভ্যতামি কমলোনা নিরু।এখনো সে ৩০ বছর আগের ন্যায় আমাকে টিজ করছো।
—করবই তো আমার জামাই আমার বুড়ো আমার জিনিস আমি দেখবোনা আমার ইচ্ছা হলে সারাদিন পাঞ্জাবী ছাড়া রাখবো কার কি বলার আছে হ্যা।(রেগে)
—জ্বি মহারানী কারোর কিছু বলার নেই কিন্তু এখানে সবাই দেখছে। মানুষ কি বলবে বলো ত এই বয়সে এসেও এরা এইভাবে ঝগড়া করবে বাড়ি যায়ে যতো ঝগড়া করার করো চলো।

—নাহ আমি যাবোনা দেখুক লোকে তাদের ও জানা উচিত আমার জামাই এই ৩০ বছরেও তার ম্যারেজ ডে মনে রাখে না। (গাল ফুলিয়ে)

রুদ্র এবার জ্বিহবায় কামড় বসায় আসলেই তার মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী।৩০ টা বছর কিভাবে চোখের পোলকে পার হয়ে গেলো। এখনো মনে হয় এই বুড়ি একসময় যুবতী ছিলো যার প্রেমে মেতেছিলো তার মন।শান্ত রুদ্রকে অশান্ত করে ক্ষেন্ত হয়েছিলো সে। রুদ্র এদিকে ওদিকে তাকিয়ে টুপ করে নিরার গালে নিজের ঠোঁট ছোয়াই।নিরা লজ্জাই রুদ্রর বুকে মুখ লুকাই চোখে ভেসে উঠে ৩০ বছর আগে এই বাস স্টেশানে দেখা বৃদ্ধ কপোত-কপোতীর কথা।সেদিন হয়তো তিনিও এইভাবেই লজ্জাই রাঙ্গা হয়েছিলো এইভাবে হয়তো উনার স্বামির বুকে নিজের লাজুক মুখ লুকিয়েছিলেন।হঠাৎ ই নিরার কাণে রুদ্রর কথা ভেসে উঠে

—ভালোবাসি আমার সন্ধ্যা আকাশের সুখ তারা।

নিরার কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলো

—ভালোবাসি।

সমাপ্তি!!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে